অঞ্জলি : আমি সম্প্রতি আপনার লেখা তিনটি নাটিকা (Three Plays ) গ্রন্থের ভূমিকাটি ফিরে পড়লাম ; দেখলাম রামানুজনের অনেক কিছু চিন্তাভাবনা এসে ছায়া ফেলেছে আপনার লেখায় !
[ নাট্যকার গিরীশ কারনাড (১৯৩৮) ব্যাঙ্গালোরে ২০০৪ সালের জুন মাসে প্রদত্ত এই দীর্ঘ সাক্ষাত্কারে অন্তরঙ্গ স্মৃতিচারণা করেছেন সতীর্থ কবি ও সাহিত্যিক এ কে রামানুজনের (১৯২৯-৯৩) বিষয়ে । মূল ইংরেজি ভাষার সাক্ষাত্কারটি নিয়েছিলেন অঞ্জলি নেরলেকার । বাংলা অনুবাদ করেছেন অংকুর সাহা । ]
যযাতি, তুঘলক, অগ্নি মাত্তু মালে, নাগমণ্ডল, টিপু সুলতানের স্বপ্ন ইত্যাদি ডাকসাইটে নাটকের রচয়িতা গিরীশ কারনাড । সম্প্রতি তাঁর প্রযোজনা ও নির্দেশনায় মঞ্চস্থ হয়েছে স্বরচিত একাঙ্ক নাটক, একরাশ ভাঙা প্রতিবিম্ব (A Heap of Broken Images) । ষাটের দশকে তিনি অর্জন করেছিলেন রোড্স্ স্কলারশিপ, তারপর সৃজনশীল শিল্পী হিসেবে তিনি ভূষিত হয়েছেন ভারতবর্ষের সেরা সেরা সম্মানে -- ১৯৭৪ সালে পদ্মশ্রী, ১৯৯৪ সালে পদ্মভূষণ এবং ২০০২ সালে দেশের সেরা সাহিত্যিকের পুরষ্কার - জ্ঞানপীঠ । পেয়েছেন নানান গুরুত্বপূর্ণ পদ : সঙ্গীত নাটক অ্যাকাডেমির চেয়ারম্যান (১৯৮৮-৯৩), ফিল্ম অ্যাণ্ড টিভি ইনস্টিটিউট অফ ইণ্ডিয়ার ডিরেক্টার (১৯৭৪,৭৫), ফুলব্রাইট বৃত্তিধারী হিসেবে চিকাগো বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক নাট্যকার (১৯৮৭,৮৮) এবং সম্প্রতি লণ্ডনের ভারতীয় হাইকমিশানের নেহরু সেন্টারের ডিরেক্টার (২০০০-০৩)।
১৯৯৩ সালে চিকাগোর এক হাসপাতালে আহত হাঁটুতে অস্ত্রোপচারের জন্য ভর্তি হয়েছিলেন আত্তিপাট কৃষ্ণস্বামী রামানুজন -- সেখানেই তাঁর মৃত্যু হয় ১৩ই জুলাই । তারপর দশ বছর কেটে গিয়েছে । অনেকগুলি কবিতা ও অনুবাদগ্রন্থের রচয়িতা তিনি -- কন্নড় ও ইংরেজি দুই ভাষাতেই গদ্য ও পদ্যের গ্রন্থ রয়েছে তাঁর । এ ছাড়া প্রাচীন তামিল কাব্যের এবং কন্নড় লোককথার ইংরেজি অনুবাদ করেছেন তিনি । ভারতবর্ষে রামানুজন কবি ও অনুবাদক হিসেবে বহুপঠিত এবং সম্মানিত । সম্প্রতি পশ্চিমেও এই ইন্দো-মার্কিন কবির (তিনি নিজেকে বর্ণনা করেন "ইন্দো-মার্কিন" শব্দের মধ্যবর্তী "হাইফেন" বলে) জনপ্রিয়তা বাড়ছে এবং পাঠক সমাজের দৃষ্টিগোচর হয়েছেন তিনি । দুদেশে তাঁর পরিচয় দুরকমের -- তাঁর মাতৃভূমি, কর্নাটক রাজ্যে তিনি পৃথিবী খ্যাত অনুবাদক অভিধায় খ্যাতিমান, কন্নড় ভাষায় লেখা তাঁর কবিতা বিশেষ পাত্তা পায় না সেখানে; ইওরোপে এবং মার্কিন দেশে তিনি অনুবাদক এবং ইংরেজি ভাষার শক্তিমান কবি পরিচয়ে খ্যাত ।
রামানুজনের বিষয়ে কথা বলতে গিয়ে গিরীশ কারনাড তাঁর কৃতিত্বের সপ্রশংস উল্লেখ করেছেন অন্তত দুবার এবং বলেছেন এই স্বল্পজীবনে তাঁর বিস্তৃত কর্মকাণ্ডের কথা । বেশিরভাগ লোকের পক্ষে অস্বাভাবিক কথা নয়, কিন্তু গিরীশের মত সুপরিচিত, উচ্চ-প্রশংসিত ও সম্মানিত নাট্যকার/ চলচ্চিত্রকার/ পরিচালক/ অভিনেতা/ প্রশাসক ও রাজনৈতিক কর্মীর মুখে বক্তব্যটি অন্যরকম মাত্রা পায় ।
নাট্যকার হিসেবে গিরীশ কারনাড রামানুজনের সঙ্গে সমানতালে পা ফেলে এগিয়েছেন দ্বিভাষিক সৃজনশীলতায়, ভারতের অতীত ইতিহাস ও পুরাণ থেকে কাহিনি সংগ্রহে, উদারপন্থী সামাজিক ও রাজনৈতিক বিশ্বাসে এবং ঈশ্বর ও ধর্মের অবিশ্বাসে । সাক্ষাত্কারের সময় এই সমকক্ষতার কথায় এসে তিনি ইতস্তত করেছিলেন খানিক । রামানুজনের ব্যক্তিগত জীবন ও কর্মজীবনের অন্তরঙ্গ আলোচনার পরে তিনি নাটকীয়তার সঙ্গে বলে ওঠেন, "সৃজনশীলতায়, বুদ্ধিমত্তায় এবং কেতাবী বিষয়ে আমি চলেছিলাম রামানুজনের সমান্তরাল ।" বলেই সঙ্গে সঙ্গে যোগ করেন, "আশা করি এই কথাগুলো বলার সময় আমাকে দাম্ভিক বলে মনে হচ্ছে না । যা বলতে চাইছি তা হল, আমরা একই পথে চলেছি অনেকদিন ধরে, তার কারণ আমি অনুসরণ করেছি তাঁর পথ । লোককথায়, ভক্তিগীতিতে, গ্রাম্য শ্রুতিকথনে এমনকী টিপু সুলতানের বিষয়ে তাঁর অসীম উত্সাহ অনুপ্রেরণা যুগিয়েছে আমাকে, সাহায্য করেছে প্রচুর ।" সবচেয়ে বড় কথা, তিনি অল্প কয়েকজন মানুষের একজন, যিনি রামানুজনকে ভারতবর্ষ ও আমেরিকা দুদেশেই কাজ করতে দেখেছেন এবং তাঁরই মত কন্নড় এবং ইংরেজি দুই ভাষার শক্তিমান লেখক ।
গিরীশ : ও, হ্যাঁ, এক কথায় বলতে গেলে, তিনি ছিলেন আমার গুরু । অনেক আইডিয়াই আমি ধার নিয়েছি তাঁর থেকে ।
অঞ্জলি : একথা বলা কি যুক্তিসঙ্গত হবে যে রামানুজনের জলধারায় সিঞ্চিত হয়েছেন আপনি আর তিনি তাঁর চিন্তাভাবনায় পুষ্টি যুগিয়েছেন আপনাকে ? আমার মনে হয় এটা যতটা না ধার করা, তার চেয়েও বেশি একই প্রজন্মের ওতপ্রোতভাবে জড়িত লেখকদের মিলেমিশে কাজ করা । আপনি কি বলেন ?
গিরীশ : আমি কিন্তু সরাসরি ধার নিয়েছি ওনার থেকে । অনেক সময় আমি ছেঁকে নিয়েছি তাঁর আইডিয়া আর লিখেছি তাকে কেন্দ্র করে । রামানুজন বলতেন যে একজনের আইডিয়া অন্যজনের হাতে সৃজনী বাস্তবতায় পরিণত হওয়া দেখে তিনি আনন্দ পান । সেই অন্যজন এক্ষেত্রে আমি । আদতে তিনি ছিলেন আপাদমস্তক এক শিক্ষক । তিনি বলে যেতেন, আমি মন দিয়ে শুনতাম । শুনতে শুনতে আসে হঠাৎ আলোর ঝলকানি, আমি নিজেকে বলি, "চমত্কার আইডিয়া ! আমি এইভাবে তাকে কাজে লাগাতে পারি !"
অঞ্জলি : আপনাদের প্রথম আলাপ কবে হয়েছিল, বলবেন ?
গিরীশ : ১৯৫৫ সালে রামানুজনের সঙ্গে আমার পরিচয় । তখন আমি সদ্য হায়ার সেকেণ্ডারি পাশ করে ধারওয়াড় শহরে কর্নাটক কলেজে ঢুকেছি । ১৯৫৪ থেকে ১৯৫৮ আমি সেখানে ছিলাম, গণিতে বি এ পড়তাম । বিষয় হিসেবে গণিত আমার একেবারেই ভাল লাগত না, কিন্তু ফার্স্ট ক্লাস পেলে বিদেশে যাবার জন্যে স্কলারশিপ পাবার সম্ভাবনা ছিল । আমার মধ্যবিত্ত বাবা-মার হাতে সেরকম রেস্ত ছিল না । তাই কষ্ট করে চার বছর অংক নিয়ে লড়েছিলাম । কলেজের শেষ বছরে অবশ্য বুঝতে পারলাম বিশুদ্ধ গণিত কি রকম প্রাণবন্ত বিষয় ।
রামানুজনের কথায় ফিরে আসি । যখন আমি কর্নাটক কলেজের ছাত্র, তিনি তখন প্রায় পঞ্চাশ মাইল দূরে বেলগাঁও শহরে লিংগরাজ কলেজে ইংরেজির লেকচারার । তখনকার দিনে এই দুটো কলেজকে কর্নাটক বিশ্ববিদ্যালয়ের অক্সফোর্ড এবং কেমব্রিজ বলে ভাবা হত । তাদের মধ্যে ভীষণ রেষারেষি - লেখাপড়ায়, খেলাধুলোয় এবং পাঠক্রম বহির্ভূত সাংস্কৃতিক কাজকর্মে । তখনকার দিনে পঞ্চাশ মাইল অনেকটা দূরত্ব । তাই আমাদের দেখাসাক্ষাৎ হত কালেভদ্রে - আন্ত: কলেজ বিতর্ক বা অন্যান্য প্রতিযোগিতা বা ত্রক্রীড়া অনুষ্ঠানে । আমি ছিলাম ডিবেটে আমাদের কলেজের সেরা, তাই লিংগরাজ কলেজের আমার সমতুল্য ছাত্রছাত্রীদের সঙ্গে তর্কযুদ্ধ লেগেই থাকতো ।
অঞ্জলি : মানে, রামানুজনের সঙ্গে ?
গিরীশ : না, না, তাঁর ছাত্রছাত্রীদের সঙ্গে; তবে অধ্যাপক হিসেবে তিনি অনেক সময় ছাত্রছাত্রীদের সঙ্গ নিতেন এবং লেখাপড়ার বাইরে ছাত্রছাত্রীদের সাংস্কৃতিক কার্যকলাপে প্রবল উত্সাহ ছিল তাঁর । আমি তখন নতুন আইডিয়ার জন্যে, বুদ্ধিবৃত্তির শিকড়ে জল দেবার জন্যে হন্যে হয়ে ঘুরছি । বয়েস তখন কত হবে, ১৭ হয়ত । আমি একজন গুরু খুঁজছিলাম, যিনি আমাকে পথ দেখাবেন ; নীরস কলেজ সিলেবাসের বাইরের বৃহৎ জগতে হাত ধরে নিয়ে যাবেন আমাকে । সেই সময়ে দুজন মানুষের প্রভাব আমার জীবনে খুব গুরুত্বপূর্ণ - একজন বেলগাঁও এর রামানুজন, এবং অন্যজন কে জে শাহ, তিনি ভিটগেনস্টাইন এর ছাত্র এবং দর্শনশাস্ত্র পড়াতেন কর্নাটক বিশ্ববিদ্যালয়ে । আমি সাহিত্য বা দর্শন কোনটারই কেতাবী ছাত্র নয়, কিন্তু সুযোগ পেলেই এঁদের দুজনের সঙ্গ ছাড়তাম না । তখনকার দিনে দর্শন বললেই লোকে ভাবত প্রাচীন ভারতীয় দর্শনের এস রাধাকৃষ্ণন কৃত বিশদীকরণ । অধ্যাপক শাহই প্রথম আমার সামনে বিশ্লেষণমূলক দর্শনশাস্ত্রের দরজা খুলে দেন । পরবর্তী জীবনে অবশ্য তিনি নাট্যশাস্ত্র, অর্থশাস্ত্র এবং অন্যান্য সংস্কৃত পুঁথিতে বিভোর থাকতেন । আর রামানুজন তো যে কোনও বিষয়েই সমান পারদর্শী । তাঁর কাছে ক্লাসঘর এবং বাইরের জগতের তফাৎ ছিল না বিশেষ । এলিঅট, হাক্সলি, ইয়েটস ও পাউণ্ডকে নিয়ে সশব্দে আলোচনা করতাম আমরা -- এইসব লেখক যেন আমাদের সমসাময়িক, ইয়ারবন্ধু, কুলুঙ্গিতে তুলে রাখা দেবতা নন । খুব উত্তেজক ছিল সেই সময় । একটা উদাহরণ দিই; একদিন কোনও এক সংবাদপত্রের প্রবন্ধে প্রকাশিত হল অল্ডাস হাক্সলির উপন্যাসগুলিতে প্রকট যৌনতার দৃশ্যগুলির কথা, তাঁর রচনায় নাকি বিষয়টির প্রতি তুমুল বিতৃষ্ণাই প্রকাশ পায় । তাই আমি রামানুজনকে বললাম একদিন, "শুনেছি, হাক্সলির নাকি যৌনতায় অরুচি হয়েছে ।" আমি চাইছিলাম তাঁকে বোঝাতে, আমি কত জানি । রামানুজন কিন্তু আমার মন্তব্যটি সিরিয়াস ভাবে নিলেন আর বললেন, "তাই নাকি ? আমার কিন্তু তা মনে হয় না দেখা যাক ।" এই তিনি হাক্সলির খানদুই বই নিয়ে এলেন এবং আমায় কিছু যৌনতা সম্পৃক্ত অংশ পড়ে শোনালেন । "কি মনে হয় তোমার ? আমি তো বলব যে ব্যাপারটা এখানে বেশ পরিষ্কার - তিনি বিষয়টি উপভোগই করতেন ।" বুঝলে না, এইধরনের প্রশ্ন ও উত্তর ।
অঞ্জলি : ধরে নিচ্ছি তখনকার দিনে এমন কথাবার্তা নিয়মিত ঘটতো না ? ঘটনাটি কি খুবই বিরল ?
গিরীশ : হে ভগবান, হ্যাঁ, খুবই বিরল । এবং খুবই স্বস্তিদায়ক । এমন একজন মানুষ পাওয়া যাঁর কাছে ইংরেজি একটা ভাষাই, আকাশের নক্ষত্র বা স্বর্গের দেবতা নয়, সেটা এমনিতেই আশাতিরিক্ত ব্যাপার । কিন্তু সাহিত্য ছাড়াও তিনি আরও নানান বিষয়ের অনুরাগী ছিলেন । তিনি ম্যাজিক দেখাতে পারতেন । আড্ডা জামানোর নানা জমাটি খেলা খেলতে ভালবাসতেন । তাঁকে অতি সহজেই নিমন্ত্রণ করা যেত কোনও বাচ্চার জন্মদিনের পার্টিতে এসে ম্যাজিক শো করতে । শিশুসুলভ অনেক দক্ষতাও ছিল তাঁর । চলতি ভাষার বাগধারা, ধাঁধা, হেঁয়ালি, কুইজ -- এসব ছিল তাঁর ভীষণ প্রিয় । কাটাকুটি খেলতে ভালবাসতেন তিনি, সেই খেলায় তোমার যখন দান আসবে তুমি দুটো চিহ্নের যেটা ইচ্ছে দিয়ে খেলতে পারো । আমি অনেকবার চেষ্টা করেও হারাতে পারিনি তাঁকে । তিনি রেডিওর জন্যে নাটকও লিখতেন । মহীশুরে থাকার সময় তিনি কোরাভানজি (Koravanji) নামে একটি কমিক পত্রিকায় লিখতেন । যে ব্যাপারটায় তিনি তখন আমাদের সবচেয়ে ধাঁধায় ফেলেছিলেন সেটা হল কর্নাটক বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্যে রচিত তাঁর একটি গ্রন্থ, নাম প্রবাদ.... (Proverbs)
অঞ্জলি : আপনি কি গাডেগালু-র (Gaadegalu) কথা বলছেন ?
গিরীশ : হ্যাঁ, গাডেগালু । বইটি এখনও বাজারে পাওয়া যায় এবং একটি ক্ল্যাসিক হয়ে দাঁড়িয়েছে । এর থেকে চুরি করে অনেকগুলি জাল সংস্করণও বেরিয়েছে । তখনকার দিনে অনেকে ভাবত এটা তাঁর পাগলামি, তাই না, এক ইংরেজির অধ্যাপক - তিনি কিনা ধাঁধা আর প্রবাদের সামাজিক তাত্পর্য নিয়ে খামোখা সময় নষ্ট করছেন ।
অঞ্জলি : এবং তাও কন্নড় ভাষায়, ইংরেজিতে নয় !
গিরীশ : হ্যাঁ, কথাটা ঠিক । তিনি মানুষের মুখে মুখে ফেরা কাহিনি সংগ্রহ করছিলেন, আমারও কেমন বেখাপ্পা লেগেছিল জিনিষটা । এছাড়াও তিনি অনুবাদ করছিলেন একাদশ শতাব্দীর বীরশৈব চরমপন্থীদের কবিদের "বচন" নামক স্বল্প দৈর্ঘ্যের কবিতাগুলি । নিষ্ঠাবান লিংগায়ত গোষ্ঠীর লোকজন ছাড়া আর কেউই সেসব কবিতার বিশেষ খোঁজখবর রাখতেন না । কন্নড় ভাষার অধ্যাপকদের নজর ছিল কেবল মহাকাব্যের দিকে, বুঝতেই পারছো, সুযোগ পেলেই "কন্নড় মিল্টন", "কন্নড় হোমার" আদি বিশেষণের ব্যবহার চলত । কিন্তু রামানুজন "বচন" গুলিকে কবিতা হিসেবে ভালবেসেছিলেন বলেই শুরু করেছিলেন অনুবাদ । এর ফলেই তাঁকে পুরোপুরি দখল করে ফেলেন এজরা পাউণ্ড । তাঁর অনুবাদ ধারণা গড়ে উঠেছিল পাউণ্ডের রচনা থেকেই । মনে আছে, চিনে ভাষা থেকে পাউণ্ডের অনুবাদ পড়ে শোনাতেন । "একেবারে প্রথম শ্রেণীর হতে হবে", তিনি বলতেন, "প্রথম শ্রেণীর ছাড়া আর কিছু নিয়ে সময় নষ্ট করার প্রয়োজন নেই ।" তাঁর আরেকটি প্রবচন ছিল, "অন্য কারুর অতি উত্তম রচনাকে আত্মস্থ করার একটা উপায় হল অনুবাদ । ঈর্ষায় অনুবাদের জন্ম ।"
অঞ্জলি : রামানুজন কি তাহলে সমকালের তুলনায় এগিয়ে থাকা মানুষ ছিলেন ? ভাবছি, তখনকার দিনে ভারতবর্ষে কজন লোক পাউণ্ডকে ওভাবে গুলে খেয়েছিলেন ।
গিরীশ : আমার জানাশোনার মধ্যে তিনি একমাত্র পাউণ্ডে নিমজ্জিত মানুষ । আর ইয়েট্সের পরের দিকের কবিতারও তাই - তিনি সেসব আগাগোড়া জানতেন । ইংরেজির অন্য অধ্যাপকেরা, যেমন ভি কে গোকক বা শংকর মোকাশি-পুনেকার, তাঁদের বিশেষ পছন্দের কবি ছিলেন শেলি-- যৌন ভাবনায় আচ্ছন্ন ইয়েটসের পরবর্তী কালের কবিতা অস্বস্তিতে ফেলত তাঁদের ; তাঁরা বরং ইয়েটসের প্রথম জীবনের রোমান্টিক কবিতার অনুরাগী ছিলেন । এবং তাঁরা নিজেরাও বেশ অখাদ্য কবিতা লিখতেন । গোকক যেমন একটা কবিতা লিখেছিলেন যার শুরু, হা: হা:....., পড়ে সঙ্গে সঙ্গে ভুলে যাওয়াই ভাল ! আমি প্রথমবার কবিতাটি পড়ে বিশ্বাসই করতে পারিনি এত বাজে, বিশ্বাস হয়নি এরকম অগামার্কা লেখা সম্ভব । কবিতাটি তিলককে নিয়ে লেখা । প্রথম স্তবকটি হল (উঠে দাঁড়িয়ে বীরদর্পে আবৃত্তি শুরু করলেন)
মারাঠা বীর যোদ্ধাঅঞ্জলি : অনেকটা সরোজিনী নাইডুর কবিতার মতন !
পাগড়ি মাথায় স্থিত
বাঁচালেন দেশটাকে যখন
সে ছিল প্রায় মৃত !
রামানুজনের ক্ষেত্রে একটা প্রধান তফাৎ হল যে তিনি যা পড়তেন তা সবই তাঁর নিজের লেখালিখির সঙ্গে জড়িত । যখন ডম মোরেস তাঁর প্রথম কাব্যগ্রন্থ সূত্রপাত ( দ্য বিগিনিং ) এর জন্যে হথর্নডন পুরস্কার পেলেন, রামানুজন ওই গ্রন্থ থেকে তাঁর কবিতা পড়ে শুনিয়েছিলেন আমায় এবং খুব সন্তর্পণে তাঁর লেখা থেকে কিছু শব্দবন্ধ ও ভাষাব্যবহার তুলে ধরে আমায় বলেছিলেন কোনও ভারতীয় কবির পক্ষে এভাবে লেখা অসম্ভব । "এ হল মাতৃভাষার থেকে শব্দ নির্বাচন", তিনি বলেছিলেন ।
আমার মনে আছে, একবার তিনি বলেছিলেন যে ভারতবর্ষে থাকলে তিনি ইংরেজি ভাষায় লেখা শুরু করতেন না এবং সেটা প্রবাসে বাস করেই করা সম্ভব । তোমায় কিন্তু উপলব্ধি করতে হবে যে আমি সেটা ৫০ এর দশকের কথা বলছি, যখন এই বসবাসের সিদ্ধান্তটা হাল্কাভাবে নিতেন না কেউ । তখন পৃথিবী ছিল সাত সমুদ্র দিয়ে ঘেরা আর যোগাযোগের একমাত্র উপায় ছিল জাহাজ । বোম্বাই থেকে ডোভার যেতে লাগত সাড়ে তিন হপ্তা । আমি যখন অক্সফোর্ডে পড়তে গেলাম, আমার পরিবারের সবাই এসেছিল জাহাজঘাটায়, আর কী কান্না, যেন মৃত্যু ঘটেছে আমার । পশ্চিম ছিল তখন অনেক অনেক দূরে ।
অঞ্জলি : ইংরেজিতে লেখার জন্যে প্রবাসে যেতে হবে এমন কথা ভাবলেন কেন তিনি ?
গিরীশ : তিনি বিশ্বাস করতেন, এফ আর লিভিসের একটি শব্দ ধার করে বলা যায়, যদি না একটি ভাষায় "অন্তর্মুখীনতা" উপলব্ধি করা সম্ভব না হয়, যেভাবে মাতৃভাষাকে ব্যবহার করা যায়, তা হলে পুরোপুরি জমাট বাঁধবে না কোনও লেখা । হয়ে যাবে সেকেলে এবং বাস্তবজীবনের সঙ্গে সম্পর্করহিত । আবার যেসব ভারতীয় কবিরা তখন ইংরেজি ভাষায় লিখতেন, তাঁদের কথায় ফিরে আসি - তাঁদের মূল সমস্যাটা হল যে তাঁরা যেসব ইংরেজের কাছে ইংরেজি ভাষায় শিক্ষা নিয়েছেন, তাঁরা এদেশে এসেছিলেন এমন এক ভাষা শেখাতে যা প্রশাসনের মাধ্যম কিন্তু সৃজনশীল সাহিত্যকর্মের বাহন নয় । তাঁরা এমন এক প্রজন্মের সদস্য যে, যদিও বা রোমান্টিক ও ভিক্টোরিয় কবিদের লক্ষণরেখা পার হয়ে তাঁরা বেরোতে পারেন, তা হলেও তাঁদের নজর পড়বে রুপার্ট ব্রুক বা তাঁর সতীর্থদের ওপর । এবং তাঁদের পক্ষ নিয়ে অন্তত: একটা কথা উল্লেখ করা উচিত -- তাঁদের অনেকেই তরুণ ভারতীয়দের নিরস্ত করেছেন ইংরেজি ভাষায় লেখার থেকে এবং নিপুণভাবে তাদের চালিত করেছেন মাতৃভাষার দিকে । তাঁরা দেখেই বুঝেছিলেন কিরকম বাজে মাল বেরুতে পারে এদের কলম থেকে ।
সত্যি কথা বলতে কি সরোজিনী নাইডু তাঁর প্রজন্মের কবিদের ভেতর সবচেয়ে সংবেদনশীল । তাঁর ভাই হরীন্দ্রনাথ চট্টোপাধ্যায়, সমসাময়িক আরও অনেকের মতই প্রচণ্ড রদ্দি লিখতেন । আর তুমি তো জানোই, রবীন্দ্রনাথ নিজে পশ্চিমে তাঁর লেখার গুরুতর সমালোচনা হওয়া সত্ত্বেও ইংরেজিতে লেখা চালিয়ে যান । সমালোচকদের বাক্যবাণ তাঁকে অবশ্যই পীড়িত করেছে, কিন্তু ইংরেজিতে লেখা তিনি বন্ধ করেননি ।
রামানুজনই প্রথম ভারতীয় কবি যিনি ইংরেজিতে কবিতা লেখার সমস্যাটি অনুধাবন করেছেন । এই বিপদের চিন্তাটা সবসময়েই তাঁর মাথায় ছিল কারণ তামিল বা কন্নড় সাহিত্যের তুলনায় ইংরেজি সাহিত্যের সঙ্গে তাঁর সম্পর্ক ছিল তুলনামূলকভাবে বেশি ঘনিষ্ঠ ও ব্যক্তিগত ।
অঞ্জলি : রামানুজনের তামিল ভাষায় দখল খুব একটা সুবিধের ছিল কি ?
গিরীশ : সেটা আমি সঠিক বলতে পারব না । প্রথম দিকে খুব সম্ভবত সুবিধের ছিল না । যদিও তামিল তাঁর মাতৃভাষা, এই ভাষার সঙ্গে তাঁর সম্পর্কে অনেক ফাঁক রয়েছে বলে সন্দেহ হয় । তামিলনাড়ু রাজ্যে অনেকেই দাবি করেন রামানুজন তামিল একেবারেই জানতেন না । পশ্চিমে আবার বিশ্ববিদ্যালয়গুলিতে খোঁজ নিলে দেখা যাবে যে শৈশব থেকে তামিল ভাষায় তাঁর স্বচ্ছন্দ বিচরণ এবং সাহিত্যে শিক্ষার কথা সবাই জানে । আমি যতদূর জানি এই দুই মেরুর দুটো ধারণার কোনটাই সঠিক নয় । বাড়িতে শৈশব থেকেই তাঁর তামিলজ্ঞান ছিল চলনসই, মাতৃভাষার যেমন হয়, কিন্তু তামিল সাহিত্যে তাঁর নিবিষ্ট, আকন্ঠ নিমজ্জন ঘটেছে চিকাগোতে আসার পরে । আমি তাঁর জন্যে সহানুভূতি বোধ করি । আমার স্কুলের শিক্ষা প্রথম থেকেই কন্নড় ভাষায়, কিন্তু স্বপ্ন ছিল ইংরেজিতে সাহিত্য রচনা এবং তাই সেই ভাষায় আমার দখল বাড়াতে সমানে লড়ে গেছি কৈশোর থেকেই । আবার যখন যযাতি লিখতে শুরু করি, অনর্গল বেরিয়ে আসে কন্নড় ভাষা । রামানুজনের অবস্থাটা ছিল অনেকটা আমার মতনই । ভাল কথা, তোমার সুযোগ ঘটেছিল কি তাঁর সঙ্গে পরিচয় করার ?
অঞ্জলি : না, দু:খের বিষয়, তা হয়নি । আমি আমেরিকায় আসি তাঁর মৃত্যুর বেশ কয়েক বছর পরে ।
গিরীশ : তাহলে আরও বিশদ করে তাঁর কথা বলি । আমার ছেলেমেয়েরা তাকে কুত্সিত বলে ভাবতো । আর কলেজে আমরা তাঁর মেয়েলি স্বভাব নিয়ে বলাবলি করতাম । তাঁর কন্ঠস্বর ছিল উঁচু তারে বাঁধা আর হঠাৎ কেউ তাঁকে ছুঁলে চমকে উঠতেন । তিনি এইভাবে আঙুল তুলে একটা কিছু দেখাবেন (আঙুলের বিনম্র, পেলব ভঙ্গি করে দেখালেন) বা আলতো করে তুলে ধরবেন একটা বই (আবার ভঙ্গি করে দেখালেন) । আমরা যারা তাঁর পেছন পেছন ঘুরে বেড়াতাম, এই ছিল আমাদের পর্যবেক্ষণ । বুদ্ধির দীপ্তিতে তিনি ছিলেন অনেক উঁচুতে, কিন্তু এক হীনমন্যতার চিন্তা, এক মানসিক নিরাপত্তার অভাব কুরে কুরে খেত তাঁকে ; আর নার্ভাস প্রকৃতির মানুষ ছিলেন তিনি - কলেজের ছাত্রদের চোখে এগুলোই ধরা পড়ত তাঁর "দোষ" হিসেবে । কিন্তু, আসল কথাটা কি - তরুণী ছাত্রীদের চোখে একেবারেই ধরা পড়ত না তাঁর মেয়েলি স্বভাব । তুমি কি মারিয়া কুটো কে চেন ? যিনি গ্রাহাম গ্রিনকে নিয়ে বই লিখেছেন একটা ; আরও একটি চমত্কার বই গোয়ার ওপর । মারিয়া আমাদের সঙ্গেই কলেজে পড়তেন এবং রামানুজনকে ভালই চিনতেন । তিনি বলেন, "পুরো মিথ্যে কথা ! যেভাবে তিনি মেয়েদের দিকে তাকাতেন, সেই চোখের চাওয়াতেই বোঝা যাবে তাঁর পৌরুষ । ছাত্রীদের সঙ্গে তাঁর আচরণে কোন আড়ষ্টতা বা ইনহিবিশান ছিল না । বরং তার ব্যক্তিত্বে ছিল কামনা বাসনার প্রাচুর্য ।"
অঞ্জলি : এই কামনা বাসনা তো তাঁর কবিতাতেও দেখা যায় !
গিরীশ : আমি প্রথমে সেটা খেয়াল করিনি, আমার কাছে সবচেয়ে আকর্ষণীয় ছিল তাঁর বুদ্ধিমত্তা... তাঁর কোমল প্রবৃত্তিগুলির পিছনে যে নিহিত, লুকানো শক্তি তাকে বুঝতে পেরেছি অনেক পরে । অনেক সময় তিনি ভীষণ কঠোর, বিশেষ করে নিজের ওপর । মূল কথাটা হল - তিনি সব মিলিয়ে একজন মানুষ - জটিলতা এবং অন্তর্দ্বন্দ্বের মিশ্রণে খুবই চিত্তাকর্ষক এবং উদ্দীপক ; বিশেষ করে এমন এক শিক্ষাব্যবস্থায় যার মূল লক্ষ্য হল ছাত্রছাত্রীদের কোনও একটা জীবিকার জন্যে প্রস্তুত করা । তাঁর কবিতা যে ইলাসট্রেটেড উইকলি অফ ইণ্ডিয়া পত্রিকায় ছাপা হত, তা দেখেই আমি মুগ্ধ ।
কবিতা কেমন হওয়া উচিত সে বিষয়ে তাঁর একটি যথাযথ ধারণা ছিল । কাউকে "আবেগপ্রবণ", "কোমল" বা "উচ্ছ্বাসবহুল" অবস্থায় দেখলে তিনি সহ্য করতে পারতেন না । ঘৃণা করতেন মর্মস্পর্শী বক্তৃতা বা নাটুকে অভিনয়কে । "কবিতা ঘরের তাপমাত্রাতেই কার্যকরী হওয়া উচিত" - তিনি তর্কের ছলে বলতেন । তাঁর বিশেষ আকর্ষণ ছিল ছোট, মুচমুচে, পরিমিত কবিতা (যেমন, সঙ্গম, বচন বা ইয়েটস) । তিনি ছিলেন যুক্তিবাদী এবং জোর গলায় বলতেন নিজের রচনার সমালোচনাকে আবেগহীনভাবে গ্রহণ করা উচিত । অবশ্য এমনও হয়েছে যে অন্যায়, কঠোর সমালোচনা দেখে তিনি রেগে আগুন হয়েছেন । তিনি কবিতায় কঠোর পরিশ্রমের পক্ষপাতী ছিলেন । "কবিতাকে হতে হবে বিজ্ঞানসম্মত !", "বিশেষণ দেখলেই কেটে বাদ দাও", "প্রথম খসড়া মানে যাত্রার শুরু-যত তাড়াতাড়ি পার ছেড়ে পালাও" । বলাই বাহুল্য যে ইংরেজি সাহিত্যের নব্য সমালোচকদের তিনি অসম্ভব শ্রদ্ধা করতেন এবং খুব জোর দিয়ে আমাকে বলেন ক্লিনথ ব্রুকস ও রবাট পেন ওয়ারেন রচিত কবিতা বোঝার উপায় ( আণ্ডারস্ট্যাণ্ডিং পোয়েট্রি ) গ্রন্থটি মন দিয়ে পড়তে । স্বীকার করতে আপত্তি নেই যে গ্রন্থটি পড়ার পর আমার জীবনে আসে বিরাট পরিবর্তন । পরবর্তী কালে চিকাগোতে তিনি পরিকাঠামোতত্ত্বের (Structuralism) দ্বারা বিশেষভাবে প্রভাবিত হন ।
অঞ্জলি : উনি তা হলে কোনওমতেই গজদন্ত মিনারবাসী বুদ্ধিজীবী ছিলেন না ?
গিরীশ : না, উনি মানুষের সঙ্গ ভালবাসতেন । অমানুষিক পরিশ্রম করতে পারতেন । নিজের গবেষণা সম্পর্কে তাঁর কঠোরতার সীমা ছিল না । তবে দিনগত পাপক্ষয়ের জন্যে তাঁকে নির্ভর করতে হত অন্যের ওপর । সব সময় কাউকে থাকতে হবে তাঁর সঙ্গে, তাঁর অবলম্বন । এবং অনেক সময় সীমা ছাড়িয়ে যাবে তাঁর দাবিদাওয়া । ১৯৫৮ সালে যখন তিনি মার্কিন ভিসার জন্যে দরখাস্ত করতে বোম্বাই এসেছিলেন, তাঁর বেলগাঁও এর প্রাক্তন ছাত্রদের জীবন অতিষ্ঠ করে তুলেছিলেন কয়েকদিন । তিনি তাদের বোম্বাই এর হস্টেলে তাদের সঙ্গে ছিলেন, তার আবদার ছিল যে প্রতি মুহূর্তে তাঁর ফাইফরমাস শোনার জন্যে কাউকে তাঁর সঙ্গে থাকতে হবে এবং সব জায়গায় কাউকে তাঁর সঙ্গে যেতে হবে । বুঝতে পারি তাঁর স্ত্রী মলির জীবনও খুব একটা সহজ ছিল না ।
আমি অবশ্য তাঁর এই নাছোড়বান্দা চাহিদার ব্যপারটা খুব বেশি খেয়াল করিনি তখন ; আমি ছিলাম তাঁর গুণমুগ্ধ - তিনি দুহাত ভরে যা দিতেন তাতেই ঢেকে যেত ছোটখাট ভুলত্রুটি ।
আমার মনে আছে একবার তিনি হুবলি স্টেশান থেকে ট্রেন ধরবেন । ধারওয়াড় থেকে হুবলি বারো মাইল দূর, তিনি ধরে বসলেন আমায় যেতে হবে তাঁর সঙ্গে - আমি এককথায় রাজি । প্ল্যাটফর্মে অপেক্ষারত, আমি জিজ্ঞেস করলাম, "কবিতার আঙ্গিক বলতে কি বোঝায় ?" -- আর কি, শুরু হল তাঁর অবিস্মরণীয় বাচনভঙ্গিতে শব্দের স্রোত, "জানো তো, কবিতায় আঙ্গিক বলে আলাদা করে দেখিয়ে দেবার মত কিছু নেই...." কথা বলতে বলতে আমরা হাঁটি প্ল্যাটফর্মের এপ্রান্ত থেকে ওপ্রান্ত, একটানা ট্রেন আসা পর্যন্ত - একই বিষয় নিয়ে তিনি বলে গেলেন অবিশ্রান্ত, পুরো ইওরোপের সাহিত্যের কথা, আরও নানান খুঁটিনাটি, এবং নিজের কবিতার কথাও বাদ পড়ল না । তিনি নিজের কবিতার শৈলি আলোচনা ও ব্যাখ্যা করতে পছন্দ করতেন - কবিতায় যেসব পরিকাঠামো অথবা ছন্দের সুসঙ্গতি ব্যবহার করেছেন তিনি, এইসব এই ধরনের হঠাৎ শুরু হওয়া, অপরিকল্পিত আলোচনা থেকে আমি শিখেছি প্রচুর, যদিও প্রথাসিদ্ধভাবে কোনওদিনই আমি তাঁর ছাত্র ছিলাম না । একসঙ্গে দীর্ঘ পদচারণা, কফির দোকানে বসে আলোচনা, তাঁর টিকিটের বা ট্রেনের রিজার্ভেশানের জন্যে লাইনে দাঁড়িয়ে, আমার চোখের সামনে তাঁকে দেখতাম একজন বুদ্ধিদীপ্ত শিক্ষক থেকে পূর্ণতাপ্রাপ্ত কবি, ভাবুক, দার্শনিক ও অনুবাদকে পরিণত হতে । তাঁর সঙ্গে থেকে আমার এই সুবিধেটা হয়েছিল, নিজের জগতে তিনি ছিলেন প্রবাদপ্রতিম ।
অঞ্জলি : তা হলে সেই অর্থে তিনি ছিলেন সত্যিকারের আধুনিক ?
গিরীশ : পুরোপুরি ! এবং চাইতেন সাহিত্যের মূল ধারাটিতে মিশে যেতে । মনে আছে আমার ছাত্রজীবনে কর্ণাটক কলেজে একটা কনফারেন্স হয়েছিল- ১৯৫৭ বা ৫৮ সালের নিখিলভারত ইংরেজি শিক্ষক সম্মেলন । মিসেস স্টক নামে এক ব্রিটিশ মহিলা, তিনি কলকাতায় ইংরেজি পড়াতেন এবং ইংরেজি শিক্ষণ বিষয়ে বইপত্তর লিখেছিলেন, সেই সম্মেলনে যোগ দেন । তাঁর বক্তৃতায় তিনি বলেন যে যেসব ভারতীয় কবিরা ইংরেজি ভাষায় কবিতা লেখেন, তাদের বাচনভঙ্গিতে এমন একটা ছন্দ এসে পড়ে, যা একেবারেই ইংরেজির নয় । রামানুজন তাঁকে তাঁর নিজের লেখা কবিতা দেখান - মিসেস স্টক চমত্কৃত হয়েছিলেন তাঁর কবিতা পড়ে । তিনি সবাইকে বলে বেড়াতেন - এক তরুণ উদীয়মান কবির দেখা মিলেছে । এবং কথাটা ছড়িয়ে পড়ে - আমার মনে আছে পাঞ্জাবের একজন ইংরেজির অধ্যাপকের সঙ্গে রামানুজনকে তাঁর নিজের কবিতা নিবিষ্টমনে আলোচনা করতে শুনেছিলাম - মিসেস স্টক সেই অধ্যাপকের কাছে রামানুজনের কবিতার সুখ্যাতি করেছেন । এটা পুরোপুরি তাঁদের দুজনের ব্যক্তিগত কথাবার্তা - আমি বাইরে জানালার ধারে অন্ধকারে দাঁড়িয়ে সবটাই লুকিয়ে-চুরিয়ে শুনেছিলাম [হাসি] । ১৯৫৯ সালে তিনি ফুলব্রাইট বৃত্তি নিয়ে ইণ্ডিয়ানায় যাবার সুযোগ পেলেন - তাঁর বয়েস তখন তিরিশ ছুঁয়েছে । আমেরিকায় তাঁর পরিবেশটি পেলেন মনের মত । পরিবারের চিন্তা বা অর্থনৈতিক চিন্তা মাথায় না রেখে তিনি প্রাণপণে ঝাঁপিয়ে পড়লেন তাঁর গবেষণার কাজে । এর ফলও ফললো ভাল । মিল্টন সিঙ্গার তাঁকে চিকাগোতে ডেকে নিলেন । এখন পেছন ফিরে তাকালে মনে হয় রামানুজনের সব প্রিয় বিষয়গুলি একই মোহনায় এসে মেশে চিকাগোতে - বাগধারা নিয়ে তাঁর কাজকর্ম, শ্রুতিকাহিনিতে তাঁর গভীর আগ্রহ, নারীদের লেখা কবিতা নিয়ে তাঁর গবেষণা, ভক্তিমূলক ও তামিল কবিতার অনুবাদ - সবকিছু, এটা খুব সৌভাগ্যের ব্যাপার । শেষে সব বিষয়গুলিকে এক নকশি কাঁথায় বুনে দেন তিনি, যাকে বলে ভারতীয় সংস্কৃতির সম্পূর্ণ তত্ত্ব । অবিশ্বাস্য !
অঞ্জলি : আপনি উল্লেখ করেছেন মানবী কবিতা বিষয়ে রামানুজনের গভীর আগ্রহের কথা এবং তাঁর কবিতার বিষয়ে সবচেয়ে আশ্চর্যজনক ব্যাপারটা হল, তিনি নিজে পুরুষ হওয়া সত্ত্বেও তাঁর কবিতায় নারী এত প্রাণবন্ত ও জীবন্ত । খুবই দুর্লভ ঘটনা - আমি অরুণ কোলাতকারের কবিতায় দেখেছি কিন্তু অন্য কারুর রচনায় বিশেষ চোখে পড়েনি ।
গিরীশ : খুব সত্যি কথা, আমার মতে এর কারণ বেশিরভাগ কবিরই শৈশব কেটেছে বৃহৎ একান্নবর্তী পরিবারে । নিজের এবং খুড়তুতো -জ্যাঠাতুতো বোনেদের সঙ্গে একসাথে বেড়ে উঠলে তাদের মানসিকতায় এক ধরনের সংবেদনশীলতা আসে । কিন্তু বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই সবচাইতে বেশি প্রভাব পড়ে মায়ের এবং তখন, রামানুজনের মতন, তারা বিবাহ করে দৃঢ়সংকল্প, ব্যক্তিত্বময়ী মহিলাদের । যেমন মলি এক অসম্ভব দৃঢ়চেতা মানুষ, অস্বীকার করার উপায় নেই । রামানুজনের ক্ষেত্রে তাঁর স্বভাবসুলভ পেলবতা তাকে নারীদের সঙ্গে বিশেষ সম্পর্ক সৃষ্টিতে সাহায্য করেছে ।
ফিরে আসি তাঁর সাহিত্যের কথায় - রামানুজন আমাদের বুঝতে সাহায্য করেছিলেন যে সমসাময়িক ভারতীয় কবিরা ইংরেজি ভাষায় যে কবিতা লিখছেন তা কৃত্রিম, অসার, ভুয়া, বলতে গেলে, মৃত । যে দুজন ভারতীয় কবি এক্ষেত্রে নতুন জমি গড়লেন নতুন কৃষিকাজের জন্যে, তাঁরা হলেন নিসিম এজেকিয়েল এবং মোরেস । রামানুজন অবশ্য কবিতার জগতে এসে উপস্থিত হলেন খানিকটা পরে । জান তো, একভাবে বলতে গেলে, আমিই তাঁকে আবিষ্কার করি ।
অঞ্জলি : তাই ! কি ভাবে ?
আমার কাছে এক বিরাট সাফল্য মনে হল সেটা । আমি কাজ শুরু করেছি অ্যাসিস্ট্যান্ট ম্যানেজার হিসেবে, কিন্তু জেনারেল ম্যানেজারের মাথার ওপরে গিয়ে লণ্ডন আপিসে পাণ্ডুলিপি পাঠিয়ে স্বীকৃতি পাওয়া একটা বিশাল বিজয়ের অনুভূতি । এইভাবে স্বচ্ছন্দ পথিক ( দ্য স্ট্রাইডার্স ) বইটির প্রকাশ ঘটলো । আর জানো তো, রামানুজন একটি চিঠিতে আমাকে লিখেছিলেন যে তাঁর জীবনে অল্প কয়েকটি সুখের ঘটনার মধ্যে বইটির প্রকাশ অন্যতম । সব মিলিয়ে তিনি এক অসুখী, বিষণ্ণ মানুষ আর তার বেশিরভাগ কারণই মনে হয় পরিবারগত ।
দ্য স্ট্রাইডার্স গ্রন্থটি পোয়েট্রি বুক সোসাইটির সাদর প্রশংসা পায় । খুব আনন্দ হয় আমার এবং হকিন্সকে জিজ্ঞেস করি প্রেসের কাছে সংবাদটির ঘোষণা করা হবে কি না । তাঁর উত্তর, "আমার মনে হয় দরকার নেই । প্রেস বা সাংবাদিকদের আগ্রহ থাকলে তাঁরা নিজেরাই খুঁজে নেবেন ।" তাঁরা কিভাবে সেটা করবেন, তা নিয়ে কোনও ধারণাই ছিল না আমার । ফলে প্রেসকে জানানো হল না এবং ভারতবর্ষে কেউই জানলো না বইটির কথা ; কোনও কাগজে বা পত্র-পত্রিকায় আলোচনার সুযোগ হল না বইটি নিয়ে । রামানুজনের সুনাম ছড়াতে শুরু করে যখন পেংগুইন প্রকাশ করে তাঁর শিব প্রসঙ্গে ( স্পীকিং অব্ শিব ) গ্রন্থটি ।
এখানে উল্লেখ করা দরকার তাঁর মায়ের কথা । মলি আমাকে বলেছেন যে দ্য স্ট্রাইডার্স যখন বেরুলো তিনি এক কপি বই নিয়ে মার কাছে গেলেন, "আম্মা, দ্যাখো আমার প্রথম বই !" তিনি একবারের জন্যে তাকিয়ে দেখলেন মাত্র এবং দু:খিত স্বরে বললেন, "তোকে নিয়ে হৈ চৈ করে সবাই, কিন্তু তোর বড়দাদাকে কেউ পাত্তা দেয় না কেন সে কথাই ভেবে মরি ।" তা হলে বোঝো ব্যাপার । ওনার মার সঙ্গে আমার প্রথম দেখা আরও অনেক পরে, যখন তিনি আর মলি মাদ্রাজে বাস করতেন । আমার মতে দুজনে তার জীবনের গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ । মা এবং মলি ।
অঞ্জলি : বিশেষ করে রামানুজন আর তাঁর মায়ের ইডিপাস প্রভাবিত সম্পর্কের বিষয়ে আমি আগ্রহী । আপনি কি মনে করেন যে তাঁর কবিতায় ছড়ানো ঘরে ফেরার আকাঙ্খা, এই সর্বগ্রাসী নসট্যালজিয়া যে আমরা দেখতে পাই, তার এভাবে ব্যাখ্যা করা সম্ভব ? এমনকি হতে পারে যে এর কারণ রামানুজম দেশে তাঁর মার সঙ্গে থাকতে পারেন না ?
গিরীশ : কিন্তু, তুমি কি জানো, তাঁর কবিতায় যত মামা-কাকা-মাসি-পিসির দঙ্গল - এঁরা কিন্তু পুরোপুরি কাল্পনিক । মলি এ কথা আমায় সরাসরি না হলেও আকার ইঙ্গিতে বলেছেন । তাঁর রচনায় বিস্তৃত একান্নবর্তী পরিবারের কথা ভাবতে গেলে মলির মতে তিনি ঠকিয়েছেন পাঠকের দলকে ।
অঞ্জলি : কিন্তু তাঁর রচনা কি কোনও ভাবেই তাঁর নিজের বাসস্থান বা পরিবারের সঙ্গে যুক্ত ? এই যে আজীবন প্রবাস ?
গিরীশ : হয়ত এমনও হতে পারে, ঘর না থাকা, ঘরে সুখী জীবন যাপন করতে ব্যর্থ হওয়া । আমি তা নিয়ে বেশি কিছু বলতে যাব না । তাঁর জীবনের কোনও কোনও সমস্যা সহজে অন্য মানুষের চোখে ধরা দেয় না - অন্তত: আমার চোখে । একটা উদাহরণ, মানসিক বিশ্লেষণে তাঁর ছিল গভীর আগ্রহ । পাগলের মত ঘুরেছেন সাইকো অ্যানালিসিসের এক স্কুল থেকে অন্য স্কুলে, কিন্তু "উপশমের উপক্রম হলেই তখন হাল ছেড়ে দিয়েছেন", মলির উক্তিতে । কিসের উপশম ? সেটা আমি কোনওদিনই ধরতে পারিনি । তিনি মলির কথা সব সময় বলে যেতেন কিন্তু শৈশবের কথা কখনও নয় । মহীশূরে, তাঁর বাবা ছিলেন অংকের শিক্ষক, প্রাসাদোপম এক বাড়িতে তাঁদের আস্তানা, তাঁর নিজের ব্যবহারের জন্যেই বড়সড় একটা ঘর । তাই বেলগাঁওতে এসে একটা ছোট বাড়িতে তাঁদের বিশাল পরিবারের হাত পা ছড়িয়ে বাঁচার অবকাশ ছিল না । দুই বোন, তিন ভাই আর মা । পরিবারটির অর্থনৈতিক অবস্থা সংকটময়, ইংরেজির এক তরুণ অধ্যাপক, কৃষ্ণমূর্তি, রামানুজনের ছোটবোন সরোজাকে বিয়ে করতে চাইলেন । ঝকমকে উজ্জ্বল এক যুবক, ভবিষ্যত ভাল, এবং ব্রাহ্মণ । কিন্তু প্রচণ্ড আপত্তি মায়ের দিক থেকে - ব্রাহ্মণ হলেও সঠিক জাতগোত্রের উঁচুদরের ব্রাহ্মণ নয়, তাঁর মতে - এর সঙ্গে তোমার বোনের বিয়ে দিতে পার না তুমি । শেষ পর্যন্ত বিয়েটা অবশ্য হল । সব পরিবারেই এরকম ঘটনা ঘটে থাকে - আমার উচিত হবে না তার গায়ে আরও রঙ চড়ানো । তবে মাদ্রাজে, রামানুজন আর মলির সংসারে তাঁর মা কিন্তু এসে থেকেছেন, অথচ মলি ধর্মে সিরিয়ান খ্রিষ্টান ।
গিরীশ : হ্যাঁ আর তাই নিয়ে আমার গর্বের শেষ নেই । দেখ, যখন আমি অক্সফোর্ডে যাই, আমি সেখানে যোগ দিই অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটি প্রেস সংস্থাটিতে । একদিন শুনতে পেলাম তাঁরা একটি নতুন কাব্যগ্রন্থের সিরিজ প্রকাশ করতে চলেছেন, নাম "অক্সফোর্ড কবিদল", সম্পাদক জন স্টলওয়ার্দি নিজেও কবি । আমি যখন দেশে ফিরে এলাম, রামানুজনকে লিখলাম তাঁর কবিতার পাণ্ডুলিপি পাঠাতে ; তিনি পাঠালে আমি তা সংকলন করে ফরোয়ার্ড করে দিলাম লণ্ডনে অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটি প্রেসের আপিসে । যখন কমপোজ হয়ে এল, আমি সেগুলি নিয়ে দেখা করলাম জেনারেল ম্যানেজারের সঙ্গে । তিনি জাতে ইংরেজ, নাম রয় হকিন্স, যিনি বলতে গেলে, সংস্থাটির ভারতীয় শাখাটিকে শৈশব থেকে গড়ে তুলেছেন ; ভারতীয় প্রকাশনার জগতে তিনি তখন পথিকৃতের মতন সম্মানীত । লণ্ডনে পাঠানোর আগে আমি কবিতাগুলি তাঁকে দেখিয়ে তাঁর মতামত চাইলাম । তিনি বললেন, "তুমি এগুলোকে কবিতা বলছ কেন জানি না । দেখে মনে হচ্ছে গদ্যকে লাইন ভেঙে লিখে, এক জায়গা থেকে কেটে অন্য জায়গায় সেঁটে দিয়ে পদ্য বানানো হয়েছে ।" আমি উত্তরে বললাম, "খুবই দু:খিত, কিন্তু আমি একেবারেই একমত হতে পারছি না আপনার সঙ্গে," তখনকার দিনে বড়বাবুর সঙ্গে এইভাবে কথা বলে অবাধ্যতার প্রকাশ করা অকল্পনীয় ছিল । তিনি উত্তর দিলেন, "তা হলে এই কবিতাগুলি ভারতীয় শাখার আনুষ্ঠানিক সুপারিশ হিসেবে পাঠানো চলবে না ; কিন্তু তুমি যদি তোমার ব্যক্তিগত সুপারিশ সহ পাঠাতে চাও তাতে আমার আপত্তি নেই । আমি রাজি হলাম, অবশ্যই । টাইপ করা কবিতাগুলি জাহাজডাকে গেল, বিমানডাকে নয়, কারণ কোম্পানির প্রথাগত সুপারিশ ছিল না । স্টলওয়ার্দি কিন্তু খুব খুশি হলেন, বললেন রামানুজন এখনই বেশ শক্তিমান কবি এবং ভবিষ্যতে কালজয়ী কবি হবার সম্ভাবনা রয়েছে ।
আরেকটি ইন্টারেস্টিং তথ্য - রামানুজন শিকাগো বিশ্ববিদ্যালয়ের দক্ষিণ এশীয় সাহিত্য বিভাগে অধ্যাপনার কাজে স্থায়িত্ব বা tenure লাভ করেন মূলত: এই গ্রন্থটির জন্যে । কর্তৃপক্ষ উত্সাহী ছিলেন তাঁকে tenure দিতে কিন্তু একটাই অসুবিধে - তাঁর কোনও গুরুত্বপূর্ণ গবেষণাপত্র তখনও প্রকাশিত হয়নি । যখন দ্য স্ট্রাইডার্স বেরুলো, তখন বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ সিদ্ধান্ত করলেন, এতেই চলবে । বুঝতেই পারছো তখনকার দিনের মার্কিন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকতার জগত ছিল অনেকটাই আলাদা ।
The original interview in English has been published in the South Asian Review; Vol. XXVI, No. 2, 2005, pp 217-236.
ছবি : http://www.kamat.org
(পরবাস, মার্চ, ২০০৬)