মা হটকেশ্বরীর আশীর্বাদ নিয়ে গাড়ি এবার রোহড়ুমুখী হলো। কখনও পাহাড়ের ছায়ায়, কখনও রোদ মেখে এক ঘন্টার আগেই গাড়ি এসে দাঁড়াল রোহড়ুর HPTDC-র 'দ্য চানশাল'-এর গাড়িবারান্দার ছায়ায়। চেনা বুড়োবুড়িকে সে সাদরে বুকে টেনে নিল। এবারও ঘর মিলল দোতলায়। 'আরামগাহ' বোধহয় একেই বলে। ব্যালকনি থেকে নজর চালিয়ে বোঝা গেল, আড়ে না হলেও বহরে অনেকটাই বেড়েছে। আরও আধুনিক হয়েছে, বাড়িঘর, দোকানপাট বেড়েছে অনেকগুণ। ব্যালকনি থেকে আগে বীরভদ্র সিং পার্ক আর রোহড়ু নালা চোখে পড়ত, এখন দোকানপাটে নজর আটকে যায়। রোদের জোর কমতে বুড়ো বেরোল এই আধুনিক রোহড়ুর সঙ্গে গা ঘষাঘষি করার চেষ্টায় — রোহড়ু এখন ভরপুর শহর; পুরোনো চেনাদের মধ্যে বীরভদ্র সিং পার্ক — দেখে বুড়োর মনে হলো, এখন তার যত্নআত্তি তেমন হয় না; সবকিছুই আছে, অথচ সবই কেমন মলিন। শহরের গাড়ি মানুষের ভীড়ে ভরা ব্যস্ত পথ ধরে বেশিক্ষণ চলতে মন চাইল না — বুড়ো ফিরে এলো রিসর্টে। ব্যালকনি থেকেই রোহড়ু বেশি মোহময়, স্নিগ্ধ।
রোহড়ু থেকে লরোট
রাত কাটতেই বুড়োবুড়ির মন চনমন করে উঠল– আজ নতুন পথে সফর। ব্রেকফাস্ট সেরে গাড়ির সীটে গ্যাঁট হয়ে বসে বুড়োবুড়ি গাড়ির জানালার বাইরে চোখ চালাল। পাব্বর নদীকে ডানদিকে রেখে রোহড়ু শহরের ভীড়কে পিছনে ফেলে এগিয়ে চলল গাড়ি নদীর উজানে। পাব্বরের উচ্ছল নাচন ছাড়া নতুন বা আকর্ষণীয় তেমন কিছু নেই। চলতে চলতে এসে পড়ল টিক্করি। আগে এই টিক্করি থেকেই ট্রেকারদের পায়ে হাঁটার শুরুয়াত হতো।
দুপুরের খাওয়া দাওয়া সেরে টেরাসে রোদ পোয়াতে পোয়াতে দৃষ্টি ছড়িয়ে দিলে সে আপেল, পাইন অরণ্যের মাঝে মাঝে একটা দুটো বাড়ির রঙীন ছাত ছুঁয়ে দিগন্তে হারিয়ে যায়।
বুড়োবুড়িকে আনন্দে ভরপুর দেখে সুয্যিঠাকুর নরম আলোয় চরাচর রাঙিয়ে পশ্চিম আকাশ ধরে অস্তাচলের দিকে নেমে চললেন।