• Parabaas
    Parabaas : পরবাস : বাংলা ভাষা, সাহিত্য ও সংস্কৃতি
  • পরবাস | সংখ্যা ৯৯ | জুলাই ২০২৫ | ভ্রমণকাহিনি, প্রকৃতি, বাকিসব
    Share
  • চানশাল ঘাটীতে বুড়োবুড়ি (২) : রাহুল মজুমদার
    পর্ব ১ | পর্ব ২



    হাটকোঠি থেকে রোহড়ু

    মা হটকেশ্বরীর আশীর্বাদ নিয়ে গাড়ি এবার রোহড়ুমুখী হলো। কখনও পাহাড়ের ছায়ায়, কখনও রোদ মেখে এক ঘন্টার আগেই গাড়ি এসে দাঁড়াল রোহড়ুর HPTDC-র 'দ্য চানশাল'-এর গাড়িবারান্দার ছায়ায়। চেনা বুড়োবুড়িকে সে সাদরে বুকে টেনে নিল। এবারও ঘর মিলল দোতলায়। 'আরামগাহ' বোধহয় একেই বলে। ব্যালকনি থেকে নজর চালিয়ে বোঝা গেল, আড়ে না হলেও বহরে অনেকটাই বেড়েছে। আরও আধুনিক হয়েছে, বাড়িঘর, দোকানপাট বেড়েছে অনেকগুণ। ব্যালকনি থেকে আগে বীরভদ্র সিং পার্ক আর রোহড়ু নালা চোখে পড়ত, এখন দোকানপাটে নজর আটকে যায়। রোদের জোর কমতে বুড়ো বেরোল এই আধুনিক রোহড়ুর সঙ্গে গা ঘষাঘষি করার চেষ্টায় — রোহড়ু এখন ভরপুর শহর; পুরোনো চেনাদের মধ্যে বীরভদ্র সিং পার্ক — দেখে বুড়োর মনে হলো, এখন তার যত্নআত্তি তেমন হয় না; সবকিছুই আছে, অথচ সবই কেমন মলিন। শহরের গাড়ি মানুষের ভীড়ে ভরা ব্যস্ত পথ ধরে বেশিক্ষণ চলতে মন চাইল না — বুড়ো ফিরে এলো রিসর্টে। ব্যালকনি থেকেই রোহড়ু বেশি মোহময়, স্নিগ্ধ।

    রোহড়ু থেকে লরোট

    রাত কাটতেই বুড়োবুড়ির মন চনমন করে উঠল– আজ নতুন পথে সফর। ব্রেকফাস্ট সেরে গাড়ির সীটে গ্যাঁট হয়ে বসে বুড়োবুড়ি গাড়ির জানালার বাইরে চোখ চালাল। পাব্বর নদীকে ডানদিকে রেখে রোহড়ু শহরের ভীড়কে পিছনে ফেলে এগিয়ে চলল গাড়ি নদীর উজানে। পাব্বরের উচ্ছল নাচন ছাড়া নতুন বা আকর্ষণীয় তেমন কিছু নেই। চলতে চলতে এসে পড়ল টিক্করি। আগে এই টিক্করি থেকেই ট্রেকারদের পায়ে হাঁটার শুরুয়াত হতো।


    বড় রাস্তাকে টা টা জানিয়ে ডাইনে মোচড় মেরে পাকা পুলে চড়ে গাড়ি নদীর পাড় বদলাল। নতুন পথ অনেকটাই সরু। শুরুতেই চড়াইয়ের চলন। তবে একটাই ভালো ব্যাপার — পথ এখন গাছেদের স্নেহচ্ছায়ায় ঢাকা। আঁকাবাঁকা পিচঢালা পথে যত্নের অল্প অভাব হলেও মোটমাট পথের আপ্যায়ন বেশ ভালো। প্রতিটা বাঁকে উচ্চতা বাড়ছে, গরম কমছে। মাঝেমধ্যে ছোট ছোট গ্রাম দেখা দিয়ে যাচ্ছে। গাছের ফাঁক দিয়ে সূর্যের আলো উঁকি দিয়ে যাচ্ছে। এভাবেই একসময় পথ পিচ ছেড়ে মাটির পোশাক পরল; এসে পড়ল এ পথের সবথেকে পরিচিত গ্রাম শিলাদেশ। এই দুপুরে লোকজনের দেখা পাওয়া মুশকিল। দু একজনকে পেয়ে জানা গেল, আমাদের গন্তব্য লরোট গ্রাম এখান থেকে কিলোমিটার তিন চারেক ওপরে। ধুলোভরা পথ এখন বেশ চড়াই। লরোট গ্রামের এলাকায় পৌঁছে রিসর্টে ফোন করে জানা গেল আমাদের রিসর্ট আরও দু-আড়াই কিলোমিটার ওপরে। পথের দু-ধারে এখন পাইনবনের পাহারা। উদ্বেগ না থাকলে নির্ঘাত পাইন আর আপেল বাগানে মুগ্ধ হতো বুড়োবুড়ি। 'এস এস এস চানশাল রিট্রীট'-এ যখন পৌঁছল বুড়োবুড়ি, সূর্য তখন মধ্যগগন পেরোচ্ছেন। গাড়ি থেকে নামতে সব বিরক্তি মুহূর্তে উধাও।পাইন ফারে ঘেরা, আপেল বাগানে ভরা জায়গাটা আশ্চর্য রকমের শান্ত আর ঠান্ডা। মানুষজনও সরল, আন্তরিক। ঋষভেরও এখানে প্রথম আসা। সে-ও খুশি।

    দুপুরের খাওয়া দাওয়া সেরে টেরাসে রোদ পোয়াতে পোয়াতে দৃষ্টি ছড়িয়ে দিলে সে আপেল, পাইন অরণ্যের মাঝে মাঝে একটা দুটো বাড়ির রঙীন ছাত ছুঁয়ে দিগন্তে হারিয়ে যায়।

    বুড়োবুড়িকে আনন্দে ভরপুর দেখে সুয্যিঠাকুর নরম আলোয় চরাচর রাঙিয়ে পশ্চিম আকাশ ধরে অস্তাচলের দিকে নেমে চললেন।



    অলংকরণ (Artwork) : স্কেচঃ লেখক
  • পর্ব ১ | পর্ব ২
  • মন্তব্য জমা দিন / Make a comment
  • (?)
  • মন্তব্য পড়ুন / Read comments