আজ খুব বৃষ্টি হয়েছে। তা হওয়ার খুব দরকার ছিল। কটা দিন যা গরম পড়েছিল, যথাসময়ে এই জলীয় বাষ্প শহরে না ঢুকে পড়লে কি হত কে জানে! দুপুরের দিকে তার মধ্যে সবার অলক্ষ্যে তিলোত্তমা ছাদে গিয়েছিল। আজকাল বৃষ্টিতে বড় একটা ভেজা হয়ে ওঠেনা। অথচ ছোটবেলায় মেঘ করে এলেই সে একছুটে চলে যেত তাদের আহিরীটোলার পুরোনো বাড়িটার ছাদে। তখন তাকে আটকায় কে!
আজ ভিজতে ভিজতে আহিরীটোলার বাড়ির কথাই মনে পড়ছিল বারবার। এমন সময় বেল বাজার শব্দ। কাকান বাড়ি ফিরেছে। আজকে ও সুপারভাইজারের সাথে দেখা করতে গিয়েছিল, তাই অনেকক্ষণ বাড়ি ছিল না। বেলের আওয়াজ শুনেই নীচে নেমে এল তিলোত্তমা। মা ঘুমোচ্ছিল; এখন উঠলে একবার অন্ততঃ তার খোঁজ নিয়ে দেখবেই। বৃষ্টিতে ভিজেছে জানলে অশান্তি হবে একচোট। দোতলায় নেমে নিঃসাড়ে নিজের ঘরে ঢুকতে যাচ্ছিল সে। শেষ রক্ষা হল না অবশ্য। দরজা খুলতে মা নীচে নেমেছিল; তাকে দেখতে পেয়ে গিয়েছে।
“মিঙ্কু, তুই তো জেগে, তাহলে কেন — একি, ভিজেছিস নাকি তুই? নেমে আয়!”
তিলোত্তমা ছাড়া পাওয়ার একটা চেষ্টা করল, “জামাটা বদলে আসছি।”
“এক্ষুণি নেমে আয় বললাম না?” মায়ের গলায় রাগ। তিলোত্তমা নিঃশ্বাস ফেলে নেমে এল। কাকান ততক্ষণে ভেজা ছাতাটা মেলে দিয়ে জুতো খুলে শু-র্যা কে তুলে রেখেছে। মুখ দেখে কিছু বোঝার উপায় নেই।
“মিঙ্কু, তোকে না কতবার বলা হয়েছে বৃষ্টির মধ্যে নাচতে নাচতে বাইরে না বেরোতে?”
“ইচ্ছে করে ভিজিনি। ছাদে দাঁড়িয়েছিলাম, বৃষ্টি এসে গেল।”
“কথাটা সত্যি, না মিথ্যে?”
“তোমার যা ইচ্ছে, তাই।”
“আশ্চর্য তো! মুখে মুখে তর্ক করছিস আমার সঙ্গে?”
“খামকা বাজে প্রশ্ন করলে এরকমই উত্তর পাবে, তুমি নিজেও সেটা ভাল করে জানো।”
তিলোত্তমা মাকে ভয় পায় না। বরং একটু করুণাই করে মনে মনে। ওর আসল যুদ্ধটা অন্য জায়গায়। সে জানে, মায়ের বিশেষ কিছুই করণীয় নেই তার বিরুদ্ধে, এক বাবাকে নালিশ করা ছাড়া। এখনও যেমন, কী জবাব দেবে ভেবে না পেয়ে অসহায় দৃষ্টিতে কাকানের দিকে তাকাল।
কাকান এতক্ষণ দাঁড়িয়ে মজা দেখছিল যেন। এখন মৃদু হেসে বলল, “উফ্, বৌদি, এত উত্তেজিত হচ্ছ কেন? বৃষ্টিতে একটু ভিজেছে বৈ তো নয়! গরম জলে চান করে নিক, তাহলেই হবে।”
“জানিস তো বুবাই, ওর বাবা জানলে —”
“তুমি আবার এটা মেজদাকে রিপোর্ট করার কথা ভাবছ নাকি!”
মা অপ্রস্তুত হয়ে বলল, “না, রিপোর্ট করার তো কিছু নেই, আমি শুধু বলছি যে ...”
“কিচ্ছু বলতে হবে না,” কাকান বাচ্চা মেয়েকে ভোলানোর ভঙ্গিতে বলল, “তুমি যাও তো, রেস্ট নিচ্ছিলে, তাই নাও গিয়ে। মিঙ্কুকে তো তোমার চিনতে বাকি নেই, তোমার একটা কথা ও শোনে?”
মা হাল ছেড়ে দেবার ভঙ্গিতে বলল, “সে আর আমি জানি না! তুইই বোঝা তোর আদরের ভাইঝিকে, আমি আর পারি না বলে বলে। এখন যদি ঠাণ্ডা বসে জ্বর বাধে, তাহলে সেটা কার ঘাড়ে পড়বে? আর তোর হিট্লার দাদাকেই বা কে কৈফিয়ৎ দেবে?” বলতে বলতে মা চলে গেল। কাকান মাকে শুনিয়ে মধুর হাসল একটু। তারপর তিলোত্তমার দিকে ঘুরে তাকাল।
তিলোত্তমার এতক্ষণে হুঁশ হল যে তার সারা গা ভিজে, চুল দিয়ে তখনও জল ঝরে পড়ছে। জামাটা গায়ের সাথে সেঁটে গেছে একদম। কাকানের চোখে চোখ পড়তে তার ভিতরটা কেঁপে উঠল। কোনও ভুল নেই; সেই সর্বগ্রাসী দৃষ্টি নিয়ে এক-পা এক-পা করে এগিয়ে আসছে। হঠাৎ করে সে টের পেল, অজগরের দৃষ্টির মুখে পড়া খরগোসের মতোই চলৎশক্তিহীন হয়ে পড়েছে। প্রাণপণ চেষ্টা করেও এক পা নড়তে পারছে না, গলা দিয়ে আওয়াজ বেরোচ্ছে না। শুধু প্রচণ্ড একটা বুদ্ধি লোপ করে দেওয়া ত্রাস তাকে একটু একটু করে গিলে খেয়ে ফেলছে ... তিলোত্তমার দম বন্ধ হয়ে এল, মনে হল যেন গভীর জলের মধ্যে তলিয়ে যাচ্ছে সে।
এমন সময় দরজায় প্রচণ্ড জোরে ধাক্কা পড়ল, এবং পর পর চারটে বেল।
তিলোত্তমার হৃৎপিণ্ডটা যেন প্রচণ্ড বেগে ছুটতে ছুটতে ধপ্ করে বসে পড়েছে। কাকান চমকে উঠে দরজার দিকে ফিরল। উপর থেকে মা আওয়াজ দিল, “এই, তোরা কেউ নীচে? দরজাটা খুলে দে না!”
কাকান দাঁতে দাঁত চেপে একবার নিষ্ফল আক্রোশে তাকাল তিলোত্তমার দিকে, শিকার ফস্কে গেলে বাঘ যেমন তাকায়। ও বুঝতে পেরেছে এমন সুযোগ দ্বিতীয়বার আসা মুশকিল। আচমকা আওয়াজে তিলোত্তমার হতবুদ্ধি দশাটা কেটে গিয়েছিল। সে নিমেষের মধ্যে নিজের ঘরে ঢুকে দরজা বন্ধ করে দিল।
শুকনো জামাকাপড় পরে নিজেকে একটু সুস্থ মনে হল, কিন্তু এখনও যেন শরীরে এক বিন্দু শক্তি নেই। সাক্ষাৎ মৃত্যুর হাত থেকে বেঁচে গেছে সে। আগে কখনও কাকান দিনের বেলায় এইরকম বাড়াবাড়ি করবার সাহস পায়নি। ওকে প্রথমবার এতটা হিংস্র আর বীভৎস মনে হল। সে বুঝতে পারছিল, কাকান ভিতরে ভিতরে ক্ষেপে উঠেছে। একদিন যদি প্রকাশ্যেই ...?
নিজের অসহায়তাটা এমনভাবে কুরে কুরে খাচ্ছে তিলোত্তমাকে, যে দেওয়ালে মাথা ঠুকতে ইচ্ছে হয় তার। কতবার ছাদে উঠে কি মনে হয়নি, শেষবারের মতো একটা ঝাঁপ দিতে? সব জ্বালা জুড়োত। কিন্তু না, তিলোত্তমা হারবে না। প্রথম দিন থেকেই সে স্থির করে রেখেছিল, এর শেষ দেখে ছাড়বে।
মাথাটা একটু পরিষ্কার হতে কলিং বেলের কথা খেয়াল হল। ভাগ্যিস বেলটা ঠিক সময়ে বেজেছিল, না হলে হয়তো শেষরক্ষা হত না। সে কথা মনে হতেই কেঁপে উঠল তিলোত্তমা। ... কিন্তু অসময়ে কে এল এখন? বাবা তো রাতের আগে বাড়ি ফেরে না। হয়তো কাকানের সাথেই কেউ দেখা করতে এসেছে। এমন সময়ে তার ঘরের দরজায় ধাক্কা পড়ল! তিলোত্তমা চমকে উঠে বসল।
“মিঙ্কু, তোর হল?” মায়ের গলা।
তিলোত্তমা ধাতস্থ হয়ে দরজা খুলে বলল, “কী বলছ?”
“তোর কাকানের কে এক বন্ধু তো ভিজে কাক হয়ে ঢুকেছে। অসময়ে আর কী খাওয়াব, একটু ম্যাকারনি চিজ বানিয়ে দিলাম। খাবারটা মাইক্রোওয়েভে বসানো আছে, ওর সঙ্গে ফ্রিজ থেকে কোকাকোলা নিয়ে বুবাইয়ের ঘরে দিয়ে আয় তো।”
“আমাকে যেতে বলছ কেন?”
“উফ্, আবার শুরু হল! তোর বাবা ফোন করেছিল, কোন্ এক ক্লায়েন্ট-এর ইন্কাম ট্যাক্স ফাইলের কপি স্টাডিতে ফেলে গেছে। এক্ষুণি তাই নিয়ে আমাকে তার অফিস দৌড়তে হবে, এই বৃষ্টির মধ্যে আবার গাড়ি বার করো রে — এত শর্ট নোটিসে তো আর ড্রাইভারকে ডাকতে পারব না! তার ওপর তোর বাবার কিছু অসীম ধৈর্য নেই। তুই যাবি? প্রত্যেক কথা নিয়ে অশান্তি ভাল লাগে না।”
মা আর কথা বাড়তে না দিয়ে সত্যি সত্যি বেরিয়ে গেল। তিলোত্তমা হতভম্বের মতো দাঁড়িয়ে রইল কিছুক্ষণ। কাকান কি জানে, মা চলে গেছে? তার অবস্থাটা এই মুহূর্তে ঠিক কতটা বিপজ্জনক, সে ঠাওর করে উঠতে পারল না। তবে এই বৃষ্টির মধ্যে যে অন্য কোথাও বেরিয়ে যাবে, তার উপায়ও নেই। তাদের বাড়িটা এমন এক নির্জন জায়গার মাঝে; আর আশেপাশে যে ক’জন প্রতিবেশী থাকেন, তাদের সাথে এমন কোনও ঘনিষ্ঠতা নেই যে হুট্ বলতে অসময়ে তাদের বাড়ি চলে যাবে। কিছু করার নেই; তার কোথাও যাওয়া হবে না এখন। মাথাটা শুধু ঠাণ্ডা রাখা দরকার।
তিলোত্তমা খাবারের ট্রে হাতে কাকানের ঘরের দরজায় নক্ করল। ভিতর থেকে ‘খোলা আছে’ আওয়াজ আসতে, একটু সময় নিয়ে দরজা ঠেলে ভিতরে ঢুকল। দেখল, অসময়ের অতিথি কাকানেরই বয়সী আরেকটি ছেলে, আপাততঃ পরনে কাকানের দেওয়া টি-শার্ট আর বারমুডা, যদিও তা বেশ আঁটশাট হয়েছে। চেয়ারে মেলে দেওয়া পাঞ্জাবি-পাজামা পাখার হাওয়ায় শুকোচ্ছে। তিলোত্তমা ঢুকতে কাকান স্পষ্টতঃ অবাক হয়েছে তা বোঝা গেল, কিন্তু সে বেশ সহজ গলায় বলল, “ও, তুই? আমি ভাবলাম বৌদি বুঝি। তা ওটা আমাকে দে, আমি —”
কাকান উঠে দাঁড়িয়েছিল, অবশ্য তিলোত্তমা তার আগেই ট্রেটা বিছানার পাশের টেবিলে নামিয়ে রাখল। যত তাড়াতাড়ি সম্ভব বেরোনো দরকার। কাকান এখানে একা নয় বটে, কিন্তু এই অন্য লোকটাকেই বা বিশ্বাস কি? ওরকম জঘন্য চরিত্রের একটা মানুষের বন্ধুরা যে সাধুপুরুষ হবে, সে কথা ভাবাই বোকামি। কাজ সেরে একটি কথাও না বলে বেরিয়ে যাচ্ছিল, কিন্তু কাকান যে এত সহজে ছাড়বে না, তা আগেই বোঝা উচিৎ ছিল। সে হাসিমুখে ডাকল, “পালাচ্ছিস যে, কী রাজকার্যটা করছিস? আমার বন্ধুর সাথে আলাপ করে যা!”
তিলোত্তমার সমস্ত অন্তরাত্মা চাইছিল বেরিয়ে যেতে। কিন্তু চলে গেলে শুধু অভদ্রতাই হবে না, কাকানকে অনাবশ্যক আরও চটানো হবে। তার ফল কখনোই ভাল হবে না। তিলোত্তমার অপেক্ষা এখনও অনেক বাকি।
এতক্ষণ সে অতিথিকে ভাল করে খেয়াল করে দেখেনি। এক কথায় ভীষণ সুপুরুষ ছেলে। কাকানই প্রায় ছ’ফুট লম্বা, কিন্তু এ তাকেও আধ হাত ছাড়িয়ে গিয়েছে। দোহারা গড়ন, শ্যামলা রঙ, একমাথা ঘন কালো চুল, চওড়া কপাল, চোখ দিয়ে বুদ্ধির আভা ঠিকরে বেরোচ্ছে। লম্বাটে মুখের গড়ন, ঠোঁটদুটো যেন দৃঢ়ভাবে বদ্ধ। চোয়ালের হাড়দুটো বেশ প্রকট, চিবুকের মাঝে একটা গভীর খাঁজ। সব মিলিয়ে টের পাওয়া যায় লোকটার প্রবল ব্যক্তিত্ব।
তিলোত্তমা বাহ্যিক সৌন্দর্যকে ভাল চোখে দেখে না। কোনও সুন্দর চেহারার মানুষ দেখলে অকারণেই ভয় আর সন্দেহ হতে থাকে। কিন্তু আজ হঠাৎ সে কিছুটা আশ্চর্যভাবে টের পেল যে প্রথমবার কাকানের কোনো বন্ধুকে তার ভয় করল না। তার কারণ কি এই ব্যক্তিত্বের প্রভাব? হতেও পারে। সে লক্ষ্য করল, অতিথি খুব শান্তভাবে চেয়ে আছে তার দিকে। সেই দৃষ্টির মধ্যে কোনও দুরভিসন্ধির আভাস নেই, এমনকি, তিলোত্তমা যে স্বাভাবিক মুগ্ধতা প্রায় সব ছেলের চোখে দেখে অভ্যস্ত, তারও লেশমাত্র নেই। বরং তার ধীর চাহনিতে এমন কিছু আছে যা আশ্বস্ত করে, অভয় দিয়ে যায়। বহুকাল পর সাক্ষাৎ বাঘের ডেরায় বসেও তিলোত্তমার হঠাৎই এক মুহূর্তের জন্য নিরাপদ বোধ হল! তবু অসতর্ক হল না সে। শুকনোভাবে বলল, “নমস্কার।”
ছেলেটা সহজভাবে হাত তুলে নমস্কারের ভঙ্গি করল। কাকান বলল, “মিঙ্কু আমার মেজদার মেয়ে।”
ছেলেটা এবার একটু অবাক হয়েই কাকানের দিকে তাকাল। অবশ্য এটা নতুন কিছু নয়। কাকান বাড়ির ছোট ছেলে, তাদের মধ্যে বয়সের ফারাক এমনিতেই কম। তার উপরে তিলোত্তমার চেহারা বয়সের তুলনায় অনেক বেশি পরিণত। দুজনের মুখের আদলেও খানিকটা মিল আছে। প্রথম নজরে তাদের ভাই-বোন বলেই মনে হয়। তিলোত্তমা খেয়াল করে দেখেছে, অন্যদের এই বিস্ময়টা কাকান বেশ উপভোগ করে থাকে।
“কি হল?” কাকান মুচ্কি হেসে জিজ্ঞেস করল।
“না, আমি আসলে ভাবলাম ...”
“কি ভেবেছিলি? বোন? সবাই তাই ভাবে। ওর সঙ্গে আমার বয়সের তফাৎ এতটাই কম, যে আমি কাকুগিরি করতেই পারি না একদম! উই আর মোর লাইক ফ্রেন্ড্স,” কাকান হাসতে হাসতে তিলোত্তমার দিকে তাকাল।
প্রতি মুহূর্তে রাগ বাড়ছিল। সত্যি, কাকানের বাইরের মুখোশটা কি চমৎকার! কথায় বার্তায় নিমেষের মধ্যে লোকজনকে মুগ্ধ করে ফেলে। আর ওর চেহারা দেখলে বোধহয় হলিউডও লুফে নেবে। কিন্তু ওর মনের ভিতরটা যে কতটা পৈশাচিক তার পরিচয় তো কম পেতে হয়নি তাকে! ইচ্ছে করছিল এই লোকটার সামনে কাকানের মুখোশটা টেনে ছিন্নভিন্ন করে দেয়। তবু বাইরে যতটা সম্ভব স্বাভাবিক স্বরে বলল, “কাকান আপনাকে যতটা বলছে আমি ততটা বড় নই। আমি সবে টুয়েল্ভ ক্লাসে উঠেছি।”
ছেলেটা মাথা নাড়ল, “আপনাকে দেখে অবশ্য তার চেয়ে বড় মনে হয়।”
কাকান এবারে নিজেই একটু অবাক হয়ে বলল, “এই, তোরা পরস্পরকে ‘আপনি-আজ্ঞে’ করছিস কেন রে?”
ছেলেটা হেসে জিজ্ঞেস করল, “অসুবিধেটা কী?”
কাকান আমতা-আমতা করে বলল, “না, মানে — অসুবিধের তো কিছু নেই! ইট সাউন্ড্স ফানি, দ্যাট্স অল।”
অতিথি সে কথার উত্তর না দিয়ে তিলোত্তমাকে জিজ্ঞেস করল, “আপনার নামটা তো জানতে পারলাম না? আই মীন, ভাল নামটা।”
“তিলোত্তমা দত্ত।”
“আই সী। আমার নাম ধৃতিমান রায়চৌধুরী।”
তিলোত্তমা কী বলবে ভেবে পেল না। তার দিকে তাকিয়ে ছেলেটা একবারও হাসেনি, একটাও বাড়তি কথা বলেনি, ঘনিষ্ঠ হবার কোনোরকম চেষ্টাই করেনি। তিলোত্তমা এর আগে কখনও কাউকে এতটা নিস্পৃহ দেখেনি। কাকানের সব বন্ধুই তার সঙ্গে আলাপ করার জন্য ব্যস্ত হয়েছিল, যদিও দাদার মেয়ে শুনে আর বেশি বাড়াবাড়ি করতে সাহস পায়নি। কিন্তু এই ছেলেটার ব্যবহার তো তেমন নয়! এটাও কি অভিনয়? তিলোত্তমা আশ্বস্ত হবে, না চিন্তিত হবে, বুঝে উঠতে পারল না।
“মিঙ্কু, দাঁড়িয়ে রইলি কেন? বোস্ না, আড্ডা মারি,” কাকান বন্ধুসুলভ গলায় বলল। ঠিক এই ভয়টাই তিলোত্তমা করছিল। একজন অপরিচিত লোক আর কাকানের সঙ্গে বসে গল্প করা আর যাই হোক, তার পক্ষে সম্ভব নয়। বিশেষ করে কিছুক্ষণ আগে বাইরের ঘরে যা ঘটে গেছে। কিন্তু প্রস্তাবটা এড়ানো যায় কি করে?
“আমার মনে হয় আপনি বোর হবেন,” ছেলেটার গলার আওয়াজে তিলোত্তমা চমকে উঠে দেখল, তার মুখের অভিব্যক্তির কোনো পরিবর্তন নেই, কিন্তু চোখের দৃষ্টি হঠাৎ আশ্চর্যরকম তীক্ষ্ণ হয়ে উঠেছে। তিলোত্তমার গায়ে কাঁটা দিয়ে উঠল। কেমন মানুষ এ?
কাকান প্রতিবাদ করে উঠল, “খামকা বোর হতে যাবে কেন? আমরা কি বুড়ো, না পলিটিশিয়ান, যে বোর হবে?”
ছেলেটার কিছু ক্ষমতা আছে। কাকানের দিকে এমনভাবে তাকাল, যাতে করে স্বয়ং প্রধানমন্ত্রীর মুখও হয়তো বন্ধ হয়ে যায়।
“ওঁকে আটকাচ্ছিস কেন শুধু শুধু? ওঁর নিজের কতরকম কাজ থাকতে পারে। আর তোর যা সব আলোচনার বিষয়, তা উনি না শুনলেই মঙ্গল। নিজের কাকুর সম্পর্কে ধারণা খারাপ হয়ে যেতে পারে।” কাকান চোখ গরম করল, “ভাল হচ্ছে না কিন্তু ধৃতি —”
“জাস্ট কিডিং,” এই বলে তিলোত্তমার দিকে তাকাল সে, “অফ কোর্স আপনি চাইলে থাকতে পারেন। বাট য়ু মাসন্ট ফীল অবলাইজ্ড।”
তিলোত্তমা এই সুযোগটা ছাড়ল না। বলল, “আপনি ঠিকই বুঝেছেন। কাল সোমবার, আমার একগাদা হোমওয়ার্ক বাকি। বসতে পারলাম না বলে সরি। পরে একদিন না হয়...”
“নিশ্চয়ই।”
ঘরে ঢুকে চিন্তাটা আরও বাড়ছিল। কাকানের বন্ধু যে তার অনিচ্ছেটা টের পেয়েছে, তা তিলোত্তমার বুঝতে অসুবিধা হল না। বলতে গেলে একরকম নিজের থেকেই তো তাকে ঘর থেকে বার করে দিল! কিন্তু এর আগে কাকানের কোনও বন্ধু কখনো তার ইচ্ছে-অনিচ্ছে নিয়ে মাথা ঘামায়নি। তার সেই একাগ্র দৃষ্টির কথা আরও একবার মনে এল। ভারি অদ্ভুত সে চাহনি; স্বচ্ছ, পরিষ্কার, শুধুমাত্র একটু জিজ্ঞাসা ছাড়া আর তো কিছু ছিল না তার ভিতর।
খানিকক্ষণ পর বাইরে কাকানের গলা পাওয়া গেল, “মিঙ্কু, কি করছিস? ধৃতিমান চলে যাচ্ছে।”
মা ফিরে আসার আগেই চলে যাচ্ছে? তিলোত্তমা হতাশ হল। আজকে যেন একটার পর একটা অঘটন ঘটেই চলেছে! দীর্ঘঃশ্বাস ফেলে দরজা খুলল সে। অতিথি যাবার আগে তাকে আরেকবার দেখে রাখাও দরকার। বেরিয়ে এসে দেখল, কাকানের মুখে চোরা বিরক্তি। তার বন্ধু অবশ্য নির্বিকার।
“এত সময় লাগে নাকি দরজা খুলতে?”
তিলোত্তমা জবাব দেওয়ার আগেই ছেলেটা বলে উঠল, “শৌর্য্য, আমি তোকে বলেছিলাম কিনা ওঁকে ডিস্টার্ব না করতে?”
“ডিস্টার্ব আবার কি? বাড়ি থেকে একটা লোক বেরোচ্ছে —”
“সে কোন লেভেলের ভি.আই.পি, যে তাকে এগিয়ে দিতে পাঁচটা লোক লাগবে? বিশেষ করে আমি যখন তোর সঙ্গে দেখা করতে এসেছি, ওঁর সঙ্গে নয়।”
তিলোত্তমা সতর্কভাবে বলার চেষ্টা করল, “না না, তা তো ঠিকই। আমিই আসলে —”
“হোমওয়ার্ক করছিলেন, তার মধ্যে বিরক্ত করার কোনো দরকার ছিল না। যাক্গে, আমি চললাম। আশা করি আবার দেখা হবে।”
“হ্যাঁ, অবশ্যই। আবার আসবেন।”
“আসব।”
ধৃতিমানের চলে যাওয়াটুকু দেখে নিয়েই দরজা বন্ধ করে দিল তিলোত্তমা। অবশ্য একটু পরেই দরজা ঠেলার শব্দ হল।
“চলে যাও বলছি!” তিলোত্তমা চাপা হিংস্র গলায় বলে উঠল। ওপার থেকে কর্কশ হাসির আওয়াজ এল একটা।
“ক’দিনে খুব তেজ বেড়েছে দেখছি! ওই তেজ কমানোর ওষুধ আমার জানা। তোর কি হাল আমি করি, জাস্ট দেখে যা!”
কাকানের পায়ের শব্দ মিলিয়ে যাওয়া পর্যন্ত দাঁড়িয়ে রইল তিলোত্তমা। তারপর ফিরে এসে বিছানায় শুয়ে পড়ল। ভীষণ, ভীষণ ক্লান্ত লাগছে।
মৃণালিনীকে বড্ড অন্যমনষ্ক দেখাচ্ছিল আজ। অন্য দিন হলে টিফিনের সময় তার ফূর্তি দেখে কে! এক পিরিয়ড আগের থেকে খোঁজ করতে শুরু করে কে কী টিফিন এনেছে। আজ ও যে কী খাচ্ছে তাই ভাল করে দেখছে না।
“পলের ডালপুরি-আলুর-দমটা তোফা হয়েছে,” নীরা খেতে খেতে বলে।
“হুঁ ... ” মৃণালিনী অন্যমনষ্কভাবে উত্তর দিল।
“কি ব্যাপার বল্ তো লিনী?” শরণ্যা সন্দিগ্ধভাবে প্রশ্ন করে, “আমি আজকে চকলেট পুডিং এনেছি, আর তুই ছুঁয়েও দেখলি না?”
“ও ... দেখিনি বুঝি? দে ...”
তিলোত্তমা হঠাৎ খাওয়া থামিয়ে বলল, “লিনী, সত্যি করে বল্ তো, কী করেছিস তুই?”
মৃণালিনী রীতিমতো ঘাবড়ে গিয়ে বলল, “ক্-কি করেছি মানে?”
তিলোত্তমা নির্বিকারভাবে বলল, “মানে খুবই সোজা। মৃণালিনী সরকারকে আমরা দেড় বছর হল চিনি। নীরা চক্রবর্তী চেনে প্রায় সতেরো বছর। এই সময়ের মধ্যে মাথায় আকাশ ভেঙে পড়লেও আমরা কেউই তাঁকে বিচলিত হতে দেখিনি। এমনকি, ক্লাস ইলেভেনের থার্ড টার্মের পরীক্ষা এক সপ্তাহ এগিয়ে আসা সত্ত্বেও তিনি দুটো নির্দোষ গাল দিয়েই ক্ষান্ত হয়েছিলেন। বিশেষতঃ টিফিন-ব্রেকের মতো গুরুত্বপূর্ণ সময়েও যখন আপনার মুখে এ হেন অশান্তির ছায়া, তখন ধরে নিতে বাধ্য হব যে আপনার সাংঘাতিক কিছু একটা ঘটেছে।”
নীরা বাগাড়ম্বরের ধার দিয়ে না গিয়ে বলল, “তিল্লী একেবারে খাঁটি কথা বলেছে। তোর মধ্যে এই চেঞ্জটা আমিও ক’দিন ধরে লক্ষ্য করছি। আর তুই যে ভাবছিস যে আমাদের কটা খিস্তি মেরে এবারেও পার পেয়ে যাবি, সেটা কিন্তু হচ্ছে না।”
মৃণালিনী ব্যাজার হয়ে বলল, “কী যে হয়েছে সে কি ছাই আমিই বুঝতে পারছি!”
উপলা তার টিফিনবক্সটা নিশ্চিন্তমনে নীরার হাতে সঁপে দিয়ে চেয়ারে পা দোলাতে দোলাতে বই পড়ছিল। এতক্ষণে চোখ তুলে তাকিয়ে বলল, “এই, খাবারটা শেষ করেছিস তো?”
নীরা টিফিনবক্সটা উপলার দিকে ঠেলে দিয়ে বলল, “এই নে, আমি আর পারছি না।”
“‘আর পারছি না’ মানে?” উপলা মহা ব্যস্ত হয়ে বলে, “বলি টিফিনটা শেষ করবে কে? শেষমেশ কি ওই কমার্স সেকশানের ছেলেগুলোকে ধরে খাওয়াতে হবে নাকি? জানিস তোরা, টিফিন খাইনি দেখলে বড়জেঠি বকে বকে মাথা খেয়ে ফেলে আমার — অ্যাই লিনী, ব্যাপারটা কী? টিফিন খাচ্ছিস না কেন ইডিয়ট?”
তিলোত্তমা বলল, “লিনীর ক্ষিদে নেই।”
উপলা খাবি খেয়ে বলল, “ক্ষিদে — নেই? লিনীর — ক্ষিদে — নেই?”
“না। শুধু তোরটা কেন? রনের অত সাধের চকলেট পুডিং পর্যন্ত ও মুখেই তোলেনি।”
উপলা হাঁ হয়ে মৃণালিনীকে জিজ্ঞেস করল, “তোর অসুখ করেছে?”
মৃণালিনী খানিকক্ষণ উপলাকে চোখ দিয়ে ভস্ম করার বৃথা চেষ্টা করে তারপর হঠাৎ নিঃশ্বাস ফেলল, “সত্যিই আমার কিছু একটা হয়েছে। ঘুম না হয় আমার এমনিই হয় না, কিন্তু ক্ষিদে —”
“ক্ষিদের সঙ্গে ঘুমও চলে গেছে?” নীরা চোখ বড় করে বলে, “এ তো মারাত্মক জটিল কেস বলে মনে হচ্ছে।”
তিলোত্তমা বলল, “আর কী কী হচ্ছে একটু শুনি?”
মৃণালিনী বিড়বিড় করে বলল, “আমাকে বোধহয় ওই ডাক্তারই দেখাতে হবে শেষ অবধি। ক’দিন ধরেই লক্ষ্য করছি, আমার ইমোশানাল মিটারের কাঁটা একদম এলোপাথাড়ি হয়ে গেছে। ভোল্টেজ ফ্লাক্চুয়েট করার মতো ব্যাপার। কথায় কথায় হাসি পাচ্ছে, খুশি-খুশি লাগছে, আবার পরের মুহূর্তেই রাগে বিশ্ব-সংসারকে —”
“কুপিয়ে দিতে ইচ্ছে করছে, কেমন?” নীরা মাথা নেড়ে বলে, “সারাজীবন যে জিনিসটার ভয় করেছিলাম, সেটাই হল। তোর রাঁচি যাওয়ার দিন এল বলে।”
“আঃ, থাম্ না নীরা,” তিলোত্তমা বলে, “তোর আর কী কী হচ্ছে বল্ তো লিনী।”
“আর তো কিছু — ওঃ, হ্যাঁ,” মৃণালিনী মাথা চুলকে বলল, “ইয়ে, মাথাটা একটু ঘুরছে।” “মাথা ঘুরছে!” সবাই সমস্বরে বলে উঠল।
“মাথা অবশ্য একবারই ঘুরেছে। আগের দিন টিউশানে যাবার সময় ভীষণ বৃষ্টি নামল, তাই শিল্দার বাড়ির বারান্দায় দাঁড়িয়েছিলাম —”
“শিল্দাটা আবার কে?” উপলা অবাক হয়ে বলে, “আর এই সব অদ্ভুত-অদ্ভুত নামগুলো আমদানি করেই বা কোত্থেকে?”
নীরা উত্তর দেয়, “ওর পুরো নাম শিলাদিত্য গাঙ্গুলী।”
“তুই জানলি কি করে?” শরণ্যা পালটা প্রশ্ন করে।
“আমরা জন্ম থেকে একই পাড়ায় থাকি উজবুক!” নীরা খিঁচিয়ে উঠল।
“তোরা গোলমাল করা বন্ধ করবি?” তিলোত্তমা বিরক্ত হয়ে ধমক দেয়, “লিনী, বলে যা তো!”
মৃণালিনী গলা খাঁকরে বলতে লাগল, “হ্যাঁ, তো বারান্দায় দাঁড়িয়েছিলাম, এমন সময় শিল্দা দরজা খুলে আমাকে দেখতে পেয়ে ডাকল। যেই আমি পিছন ফিরে তাকিয়েছি, অমনি মাথাটা ঘুরে গেল।”
তিলোত্তমা খানিকক্ষণ একদৃষ্টে মৃণালিনীর দিকে তাকিয়ে রইল। তারপর বলল, “শিল্দাকে দেখেই কি মাথা ঘুরল?”
মৃণালিনী সাবধানী গলায় বলল, “বোধহয়।”
তিলোত্তমা ঠিক জেরা করার ভঙ্গিতে বলল, “আচ্ছা তোর কি এই দিনের আগে কোনো গণ্ডগোল হয়েছিল?”
“না। ওইদিন থেকেই তো এইসব শুরু হল।”
“বটে? এর পর কি হল?”
“কিসের পর?”
“আরে শিল্দাকে দেখে মাথা ঘুরল, তারপর?”
“তারপর বৃষ্টি পড়ছে বলে আমাকে ভিতরে আসতে বলল, আমিও গেলাম। তার ঠিক পরেই ...”
“তারপরেই মিটারের কাঁটা গোলমাল করতে লাগল, কেমন?” তিলোত্তমা হঠাৎ ফিক্ফিকিয়ে হেসে উঠল। মৃণালিনী বেশ বিপন্নভাবে বলল, “হাসছিস কেন?”
নীরাও যেন হঠাৎ করে কিছু একটা বুঝে চোখ গোল গোল করে বলল, “ওরে তিল্লী, আর য়ু থিংকিং —”
তিলোত্তমা ওর কথা শেষ করতে না দিয়ে বলল, “একদম তাই।”
“কী তাই?” মৃণালিনী ভীষণ ঘাবড়েছে এতক্ষণে। উপলারও বোধোদয় হয়েছে মনে হল। ভয়ংকর জোরে মাথা নেড়ে বলল, “হতে পারেনা। হতে পারেনা। অসম্ভব।”
একমাত্র শরণ্যা বোকার মতো বলল, “এটা কত নম্বর সাংকেতিক ভাষা রে? আমি বুঝতে পারছি না কেন?”
“কারণ তুই গাধা!” নীরা খ্যাঁক করে উঠল।
“সত্যি তো, কী বুঝব?” মৃণালিনী কাঁদো-কাঁদো।
নীরা অধৈর্য্যের মতো হাত নেড়ে বলল, “দুধের শিশু সব! বেশ, আমিই বলছি, তুই শিল্দার প্রেমে পড়ে হাবুডুবু খাচ্ছিস, এবার পরিষ্কার হয়েছে?”
কথাটা এতটা স্পষ্ট যে সবাই একটু থতমত খেয়ে গেল। মৃণালিনী বার কয়েক কিছু বলার জন্য খাবি খাওয়ার মতো মুখভঙ্গি করে তারপর হঠাৎ গুম্ মেরে গেল।
শরণ্যা বলল, “নীরা, বাজে কথা বলিস না —”
“আমি বাজে কথা বলছি? তোর ঘটে কোনও বুদ্ধি নেই গাড়ল?” নীরা ভীষণ উত্তেজিত।
উপলা শরণ্যার কথায় সায় দিয়ে বলল, “রন্ তো ঠিকই বলছে রে বাবা! লিনী কি করে —”
“কেন? লিনী কি মানুষ নয়?”
“না, মানে হ্যাঁ, কিন্তু —”
“কোনও কিন্তু নয়,” নীরা বজ্রের মতো অটল, “তোদের যদি বুঝবার সামান্য ক্ষমতাটুকু থাকত, তাহলে সিম্টম শুনেই বুঝতে পারতি।”
“কিন্তু আমারও তো ইয়ে হয়েছিল, কই, আমার সিম্টমগুলো তো এমন ছিল না!” উপলা নাছোড়বান্দা। “এক্জ্যাক্টলি, আমারও না,” শরণ্যা বলে।
“আরে সবার সিমটম কি আর একরকম হয় —” তিলোত্তমা বোঝানোর চেষ্টা করে।
“তাহলে তোরাই বা এত শিওর হচ্ছিস কি করে?” শরণ্যা আর উপলা একসঙ্গে বলে ওঠে।
“শোন্ বে,” নীরা হঠাৎ ধাঁই করে টেবিলে এক চাপড় মারল, “এই মেয়েটাকে জন্ম থেকে দেখে আসছি, বুঝলি? ও যে কি জিনিস, আমার খুব ভাল করে জানা আছে। হঠাৎ করে বাইবেলের মতো ‘ঝিন্দের বন্দী’ পড়তে লেগে গেল, এর মানে? কথা নেই বার্তা নেই, ডায়েটিং করা আরম্ভ করল — কেন? সেদিন ওর বাড়ি গিয়ে দেখি যত রাজ্যের ইংরেজি রোম্যান্টিক সিনেমার ডি.ভি.ডি জোগাড় করা হয়েছে — কী কারণ? আমাকে জোর করে ‘রোমান হলিডে’ দেখতে বসিয়ে নিজে ফ্যাঁচ ফ্যাঁচ করে কেঁদে গেল আধ ঘন্টা ধরে — বলি এ সব হচ্ছেটা কি? আমি তাও কিছু বিশ্বাস করতাম না, যদি না — ” এই পর্যন্ত বলে নীরা হঠাৎ থেমে গেল।