• Parabaas
    Parabaas : পরবাস : বাংলা ভাষা, সাহিত্য ও সংস্কৃতি
  • পরবাস | সংখ্যা ১০০ | অক্টোবর ২০২৫ | রম্যরচনা
    Share
  • মধুপুরের পাঁচালি: ওরা থাকে এপারে : সমরেন্দ্র নারায়ণ রায়
    ওরা থাকে এপারে | আধেক

    গোপাল—মাস্টারমশাই ও মাস্টারমশাই ইদিকে দ্যাখো।

    মাস্টারমশাই—কি রে ব্যাটা, কি বলছিস

    গোপাল—এইটা কি গো মাস্টারমশাই

    মাস্টারমশাই—ওটা পাকা রুইয়ের খামি, ওই বড় কাঁটাটা আবার চিবোতে বসে যাস না, বুঝলি তো, বড়লোকের ব্যাপার সব

    গোপাল—ঠিক আছে গো, তাহলে এই হলো রুই মাছ

    মাস্টারমশাই—আরে এই ঢাবুয়া তুই আবার ওখানে কি খুঁজছিস, ওই বড় টুকরোটা খেয়ে ফ্যাল, ওটাকে বলে বিলিতি ফ্রাই, ভালো জিনিস

    ঢাথুয়া—তুমি একটু নেবে গো, নাও না, কিছুই তো নাওনি

    মাস্টারমশাই—ব্যাটার সব দিকে নজর, নে নে হাত চালা

    কানু—ভাইটা থাকলে এখন এ সব খেতে পেতো, হঠাৎ মরে গেল কেন বলো তো

    মাস্টারমশাই—এই হেট্ হেট্ আঃ কুকুর দুটো গর গর করছে কামড়ে টামড়ে না দেয় আবার, ইদিকে সরে আয় কানু

    কানু—আচ্ছা মাস্টারমশাই এত সব খাচ্ছি শরীর খারাপ হবে না তো

    মাস্টারমশাই—আর তোকে পাকামি করতে হবে না আমি রয়েছি কি করতে

    রামলাল—মস্টার্জী মস্টার্জী বংগালী ভোজে দাল হয় না

    মাস্টারমশাই—হবে না কেন রেমো, খুব হয়, আজ তো দেখছি না

    রামলাল—আর মাংস?

    মাস্টারমশাই—এটা বিয়ে বাড়ি তো, বিয়ে বাড়িতে মাংস হয়‌ না রে, আরেক দিন না হয় মাংস খাবো আমরা

    গোপাল—বুদ্ধি করে বুড়ী দিদির কাজকোলটা আনলে হতো, না রে কানু, ওদের জন্য কিছু নিয়ে যেতো

    কানু—দূর ওটা ফাটা, বরং লুঙ্গি দাদুর সেই ডেকচিটা

    গোপাল—ওরে, সেটা তো দাদুর লাশের সঙ্গেই পুলিশ নিয়ে গেল

    কানু—আরে বকুলদি ওদের মগটা মাস্টামশায়ের কাছে দিয়েছে

    মাস্টারমশাই—এই তোরা চুপ করে খেয়ে নে, এবার দারোয়ানটা এদিকে এসে পড়বে


    ***

    দারোয়ান শামসের সিং—এই সালা বদমাশ লোগ চোট্টা কহিঁকা, লাঠি দেখতা হ্যায়, মারেগা সবকো

    ম্যানেজার গাঙুলি—চেঁচামেচি কিসের শামসের সিং, কি হচ্ছে ওখানে

    দারোয়ান—বোলিয়ে মৎ মেঞ্জার বাবু, ইন লোগ থোড়া কুছ খানে কে বাদ মহলসে চোরি করতা, ইসি লিয়ে ভাগা রহা হুঁ, ফজীর মে ফিন আসতে বোলবো কি

    মাস্টারমশাই—গাঙুলি কাকা না, ক্ষেমীর বিয়ের ন্যাড়াযুগ্যি চলছে শুনে এদের নিয়ে এসেছিলাম, নিজেই নেমন্তন্ন করে আর কি, নতুন রেলপুলের ওধার থেকে, আমরা চোর মোটেও নই, এই তোরা সব চল এবার, পালা পালা

    ম্যানেজার—গাঙুলি কাকা, ক্ষেমী, এ সব কি বলছিস, এই তুই কে রে, ও হো হো, এই শামসের ওকে ধর রে, ওকে নিয়ে আয়


    ***

    ম্যানেজার—হুজুর আমার কোনো ভুল হচ্ছে না, আমি প্রথমটা ঠিক ধরতে পারিনি, আঁধার, অত দাড়ি গোঁফ, গলার আওয়াজও পাল্টে গেছে

    বাবু—তাহলে তুমি ধরলে কি করে হে গাঙুলি

    ম্যানেজার—ওই যে গাঙুলি কাকা বললো, তারপর ক্ষেমঙ্করী-মায়ের বিয়ের কথা তুললো, তখন ভালো করে ঠাহর করে দেখলাম যে

    বাবু—আজ আট বছর পুলিশ তাকে খুঁজে পায়নি, আর আজ... তোমাদের নতুন গিন্নীমাকে একটা খবর দাও, সেও খুবই ভালোবাসে ব্যাটাকে

    ম্যানেজার—শামসেরটা নিয়ে আসুক ওকে, তারপর না হয

    বাবু—তাহলে এখানেই বসো ততক্ষণ, সেই যে আমার কাছে থাপ্পড় খেয়ে

    ম্যানেজার—ছোট্ট ছেলে মাকে যেতে দেখলো, আট বছর বয়সে ছোট বোনকে সামলে নতুন মাকেও, অবিশ্যি এখনকার এই গিন্নী মা দুজনকেই একদম নিজের করে নিয়েছেন


    ***

    ম্যানেজার—কি হে তোমরা ফিরে এলে, সে কোথায়

    দারোয়ান—সব খতম মেঞ্জারবাবু, রামপুরহাটের লতুন গাড়িটো আসছিলো, আর চোট্টা সর্দার পালাবে বলে বাচ্চা চোট্টা গুলানকে লাইন পার করাচ্ছিলো, লিজেউ পার হয়েছিলো

    বাবু—তার পর, তার পর কি হলো

    দারোয়ান—হুজূর কি একটা গিলাস না মগ এদিকে পড়ে ছিলো, ওইটা লিতে সর্দারটা ফিরেছে, আর সোজা ইঞ্জনটার সামনে

    ম্যানেজার—অ্যাঁ

    বাবু—নীলমাধব, ফিরিয়েও ফেরালে না, এ কি করলে তুমি



    অলংকরণ (Artwork) : অনন্যা দাশ
  • ওরা থাকে এপারে | আধেক
  • মন্তব্য জমা দিন / Make a comment
  • (?)
  • মন্তব্য পড়ুন / Read comments