• Parabaas
    Parabaas : পরবাস : বাংলা ভাষা, সাহিত্য ও সংস্কৃতি
  • পরবাস | সংখ্যা ৯৬ | অক্টোবর ২০২৪ | ভ্রমণকাহিনি, প্রকৃতি, বাকিসব
    Share
  • পশ্চিমবঙ্গের চূড়ায় পাঁচজন : রাহুল মজুমদার



    শবরীর প্রতীক্ষার কি অবসান হবে? আশায় বুক বেঁধে ভোর ভোরই হোটেলের কাচের দরজা ঠেলে বাইরে বেরিয়ে ২ ডিগ্রির থাপ্পড় ছাড়া কিছুই জুটল না; তবে, এতদিনের অভিজ্ঞতা কানের কাছে বলে গেল, বেলা আরেকটু বাড়া অবধি অপেক্ষা কর— ধৈর্যং রহু।

    তা, তার জন্য ব্রেকফাস্ট অবধি অপেক্ষা করতে হলো— আপাদমস্তক মুড়ি দেওয়া মেঘের লেপ সরিয়ে তিনি দেখা দিলেন — মাথা কুম্ভকর্ণ থেকে পা পান্ডিম ছাড়িয়ে শায়িত বুদ্ধের সশরীরে দর্শন হলো। গোটা সন্দকফু জুড়ে তখন শীৎকারের শব্দব্রহ্ম। ৫ ডিগ্রির শীত এখন কারোরই গায়ে লাগছে না— চতুর্দিকে এখন খচ্ খচাক্ শব্দের ডিস্কো ডান্স। ঘননীল আকাশ উৎসাহ যোগাল খানিক বাঁদিকে গিয়ে বড়দা এভারেস্টের পরিবারকে চাক্ষুষ করার। এ দৃশ্য ছেড়ে নড়া যায়! কিন্তু, উপায় নেই গোলাম হোসেন, আজ যে ধোতরে যেতে হবে। গাড়ির হর্ন ক্রমশ অধৈর্য হয়ে উঠছে।

    অতএব সাড়ে আটটায় সন্দকফুকে টা টা বলতেই হলো। কালপোখরি পেরোনোর সময় তাকে মিনিট চারেক সেলাম জানালাম। হুড়মুড়িয়ে গৈরিবাসে নেমে কফি সেবনের নামে খানিকক্ষণ রোদ পোয়ানো গেল। তুমলিংয়ের শিখর লজের ঘরে ঢোকার সময়ও সুয্যিঠাকুর টংয়ে চড়ে উঠতে পারেননি। চড়ে বসল মেঘদৈত্যকুল। কিছুক্ষণের মধ্যেই তুমলিংয়ে মেঘের পর্দা টাঙানো হয়ে গেল।

    নেহাৎ নীলা আর পার্বতীদিদির 'বাড়ির আদর' ছিল, নইলে নির্ঘাত সকলে 'মেঘ-পিওনের ব্যাগের ভিতর মন খারাপের দিস্তা' গাইতে বসত। মেঘেদের সঙ্গে লুকোচুরি খেলেই কেটে গেল দিনটা। বিকেলের দিকে দু দিকের 'টিলা বাওন' খেলায় কাটল। সূর্যাস্তের পর কে জানে কোন টনিক খেয়ে মেঘেরা শক্তি বাড়িয়ে ফেলে সকলকে ঘরবন্দী করে দিল।

    পরদিন সকালে উঠে দেখা গেল, মেঘেরা পিকনিকে যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে। মাঝেমধ্যে দু এক টুকরো রোদ বুড়ি ছুঁয়ে যাচ্ছে।

    জমিয়ে ব্রেকফাস্ট করে ধীরেসুস্থে তুমলিং ছাড়লাম নীলাকে 'আবার আসব' প্রতিশ্রুতি দিয়ে। মেঘমার গুমবাকে বুড়িছোঁয়া ছুঁয়ে নিচপানে দে ছুট। ছুটতে ছুটতে একেবারে মানেভঞ্জ্যাং-এ পৌঁছে তবে নিঃশ্বাস ফেলল গাড়ি। ধোতরে যাওয়ার গাড়ির ব্যবস্থার ফাঁকে 'চায়ে চুমুক' এপিসোড হলো। এবার চমৎকার রাস্তা ধরে রোদ ছায়া গাছপালার সঙ্গে গল্প করতে করতে দুপ্পুরবেলা ছোট্ট মিষ্টি ধোতরে এসে গেল। প্রায় নিস্তব্ধ ধোতরের দুপুর। কারোরই কোনও উঁকিঝুঁকি নেই, এমনকী কাঞ্চনজঙ্ঘারও না। বিকেলে হাঁটতে হাঁটতে তিরিশ জনের ভিড়ের বাজার পেরিয়ে কিছুদূর যেতেই ধোতরে ফুরিয়ে গেল। আরও কিছুক্ষণ গাছেদের ফাঁকফোকর দিয়ে ঘুরেফিরে রোদের রং লালচে হতে ফিরতি পথ ধরে হোটেলে এসেই চা-পকোড়ার সদগতিতে মনোনিবেশ করা গেল। শেষবেলার রাঙা আলোকে সরিয়ে ধোতরে তার নীলচে কালো আলোয়ানটা জড়িয়ে নিল। সেটার কোথাও কোথাও বাড়িগুলো থেকে ছিটকে আসা আলোর ফুল বসানো।

    রাতে খাওয়া শেষ হতেই একরাশ আলস্য এসে ঝুলোঝুলি করতে লাগল ঘুমের দেশের টিকিট কাটতে।



    অলংকরণ (Artwork) : স্কেচঃ লেখক
  • পর্ব ১ | পর্ব ২ | পর্ব ৩
  • মন্তব্য জমা দিন / Make a comment
  • (?)
  • মন্তব্য পড়ুন / Read comments