• Parabaas
    Parabaas : পরবাস : বাংলা ভাষা, সাহিত্য ও সংস্কৃতি
  • পরবাস | সংখ্যা ৩৭ | মার্চ ২০০৬ | গল্প
    Share
  • হাসিল : ঋতব্রত মিত্র

    -- না, এখনই করুন । এই আমি শুলুম ।

    প্যালা তো পাল্টি খেয়ে প্রায় পড়োপড়ো । ধাঁ করে কোনোমতে টেবিলের কোণ খিমচে ধরে লজ্জা লজ্জা মুখ করে বললো, ধ্যাৎ কী-ই যে বলেন : এভাবে করা যায় নাকি ?

    -- ইশ্‌ শ শ, আমাদের বুঝি আপনি আজ্ঞের সম্পর্ক ?
    -- হ্যাঁ, হ্যাঁ, তা তো বটেই, তা তো বটেই ।
    -- কী হ্যাঁ-হ্যাঁ ?
    -- না, না, মানে আপ্‌.. সরি তু-তুমি যেটা চাও সেটাতেই হ্যাঁ বলতে যাচ্ছিলুম ।

    -- তাহলে করো না শিগ্গির ।
    -- কিন্তু ডাক্তারকে দিয়ে তো আগে ফর্মে সই করাতে হবে, বীণামাসি -- ফিমেল অ্যাটেনডেন্ট -- তাকে পাশে থাকতে হবে । নইলে ইসিজি করবো কী করে ?

    -- কিন্তু আমার যে বাঁদিকে ? ব্যথা করছে !
    -- মাই ঘড ! জিভের তলায় একটা সরবিট্রেট দিয়ে দিই ?
    -- হাউ সুইট ! তুমিই আমার হৃদয়-হাসপাতালের একমাত্র ডাক্তার ।

    -- নট আ ডক্টর ম্যাম, সিম্পলি টেকনিসিয়ান । আ পুওর ই.সি.জি. টেকনিসিয়ান । সরকারি হাসপাতালের কর্মচারী, নরনারায়ণের সেবক ।

    অত্যন্ত বিগলিত ভাবে ভুল শুধরে দিতে যাচ্ছিল, কিন্তু পারলো না ।

    রামথাপ্পড় পড়লো পিঠে ।
    -- কী রে প্যালা -- এই রোববারে কে এল শুনি ? বিশ্রী দেবী না গাজোল নাকি অর্ধশতাব্দী ?

    -- বাসী মুখটা শুধুমুদু খারাপ করাস না ছেনো ।

    হতভম্ব ভাবটা কাটিয়ে প্যালা তড়াক করে উঠে বসে ।
    -- তুই এবারেও ভেস্তে দিলি । নাহয় আর মিনিট দশেক পরেই ঘুমটা ভাঙাতিস ।

    -- কার বুকে ই.সি.জি. লিড বসালি বললি না তো ?
    -- সুযোগটা দিলি কই বাপ ? গত দশবছরে তোর স্বভাবে কী পরিবর্তন মাইরি । যতোটা ছিলিস ঠিক ততোটাই স্বার্থপর রয়ে গেলি, একটুও পাল্টালি না !

    প্যালা মুখটা তোম্বা করে বলে,-- স্টার ফার কেউ না । আজ এসেছিল হাসি । মিস হাসিরাশি দেবী ওরফে ব্রততী । তোর আদি অন্ত অকৃত্রিম পাড়াতুতো বোন । কাজ প্রায় সেরে এনেছিলাম । কিন্তু তুই লাস্ট মোমেন্টে সব ভেস্তে দিলি ।

    -- আমি ভেস্তে দিলাম । সাতসকালে আর গুল মারিস না প্যালা । আজ অব্দি প্রপোজ করে উঠতে পারলি না । এদিকে শুনছি হাসির বিয়ের কথা চলছে । তুই কথা বলার সময় মুখটা এমন হাঁড়িচাচার মতো করে রাখিস না --- ছেনো মুখে বিজ্ঞ বিজ্ঞ ভাব আনে -- ওভাবে কি আর মেয়ে পটানো যায় ? ওতে বড়জোর ঐ স্বপ্নদোষ পর্যন্ত হয় ।

    -- দোষ কী রে ? বল গুণ । এমন লাগাতার স্বপ্নভাগ্য কজনের হয় বল দিকি ? একটা কথা শুনে রাখ ছেনো, আমি কথায় কথায় হ্যা হ্যা করে হাসতে পারি না -- ওটাই আমার স্বভাব ।

    -- তো ? স্বভাবের সঙ্গে কম্প্রোমাইজ কর । নইলে তোর পাখি উড়ে গেল বলে ...

    -- মাথায় একটা প্ল্যান এসেছে কাল রাত্তিরে ।
    -- কী প্ল্যান ?
    -- একটা জরুরী কাজে হেল্প্‌ করবি ?
    -- কী কাজ ? গুল মেরে আবার বলে বসিস না -- নার্ভাস লাগছে, সঙ্গে চ' ; হাসি আজ ডেট দিয়েছে ।

    -- হাসি নয়, হাসির গল্প প্রতিযোগিতা ।
    প্যালা স্যাঁৎ করে ছয় বাই বারো সেন্টিমিটারের একটা লম্বাটে বিজ্ঞাপনের কাটিং বালিশের তলা থেকে বার করে আনে । কাউকে বলিস না ।

    -- ব্যাপক । পাঁচ হাজার শব্দের মধ্যে ... আর সেরা গল্পের জন্য পাঁচ হাজার ! মানে পার শব্দ এক টাকা, উফ্‌ ... কিন্তু তুই তো জিন্দেগীতে এক লাইন শুদ্ধসার্থক প্রেমপত্রও লিখিসনি । তাছাড়া -- ছেনো চিন্তিত ভাবে বলে -- সেই স্কুল থেকেই দেখে আসছি তোকে, সবসময় গোমড়া মুখে ঘুরিস ।

    -- আর ঘুরবো না । কাজে বসবো । তিনদিনের মধ্যে হাসির গল্পটা লিখে ফেলেই পোস্ট করতে হবে । অ্যাডটা অনেক দেরীতে নজরে এল । হাতে আর একদম সময় নেই, বুঝলি ? প্রাইজটা যদি একবার বাগাতে পারি, টাকাটা কোন ব্যাপারই না -- প্যালা খপ করে ছেনোর জামার কলার চেপে ধরে -- হাসি কি আমায় ছুঁড়ে ফেলে দিতে পারবে, বল ?

    -- এত ফাস্ট কি গল্পটা নামাতে পারবি বস্‌ ? বিশেষ করে যেখানে হাসির গল্পের মতো একটা সিরিয়াস ব্যাপার ... এনি ওয়ে, আমি তোকে কীভাবে হেল্প্‌ করতে পারি ?

    -- সেটাই তো বলতে চাচ্ছি । দেশের বাড়ি যাবো আজ দুপুরে । তোকেও নেব সঙ্গে । দিনেদ্দিনই ফিরে আসবো, বুঝলি ?

    -- হঠাৎ গ্রামে কেন ? গেঁয়োরসিকতা শহুরে মার্কেটে চলবে না রে ।
    -- এভাবে আণ্ডার এস্টিমেট করিস না ছেনো । আমার আল্টিমেট টার্গেট হচ্ছে লোকায়ত ধেনোর সঙ্গে বিদেশী মদের একটা জবরদস্ত ককটেল । জিভে সুরুত করে শব্দ তোলে প্যালা । -- জিনিসটা কী রকম বল তো ? গ্লোবাল মার্কেটে মেড ইন ইণ্ডিয়া লেখা ঝাঁচক্চকে পলিপ্যাকে পেপসির ঝাঁঝওয়ালা দিশি ঘোলের সরবত । ঢেপসিরা দেয় সিপ্‌ ঘোলের বোতলে/ তাই দেখে ঘুঘু ঘোলা জলে মাছ তোলে । বুঝলি কিছু ?

    -- কিন্তু তুই নিজেই না ঘোল খেয়ে যাস ।
    -- সেজন্যেই তো এবারটা কোন রিস্ক নিচ্ছি না । প্যালা গলার স্বরটা নামিয়ে আনে,-- দেশের বাড়িতে সাধনমামা থাকে না, তুই হয়তো নাম শুনে থাকবি, স্কুলে পড়ায় আর ফি বচ্ছর পূজোয় ছোটদের পত্রিকায় এন্তার হাসির গল্প লেখে -- সেই মামার টেবিল হাতড়ে একটা যুতসই গল্প সটকে আনবো । তারপর স্রেফ একটু অ্যাডাল্ট মাল-মশলা মিশিয়ে দেব । ব্যাস্‌, তুই তো জানিসই -- প্রেমে আর যুদ্ধে ... তবে একটা কথা -- প্ল্যানটা তোর কাছে অনেক বিশ্বাস নিয়ে খোলসা করলাম । কারুর কাছে যেন লিক্‌ করিস না ।

    -- ঠিক হ্যায় । লেকিন মামা জানলে কি ভাগ্নেকে সাহায্য করতো না ?
    -- আরে নিজের বোনাই যেখানে হেল্প করে না সেখানে মামা কোন ছার ! মিতাকে যদি পায়ে ধরেও বলি, একটা হাসির গল্প লিখে দে না, দেবে ? হাজার গণ্ডা প্রশ্ন ছুঁড়বে, কেন, কী হবে, শেষমেশ বালকের ক বাদ দিয়ে দেবে ...। রিস্ক্‌ নেবো না রে হাতে মাত্র তিনদিন সময় । তাছাড়া দু:খের গল্প হলে দু'দিনে লিখে ফেলতাম । কিন্তু হাসিটা আমার ঠিক আসে না, বুঝলি ?

    -- বুঝলাম । দু:খের গল্প তুই হাসতে হাসতে লিখতে পারিস । আচ্ছা, তুই বড়ো.দের হাসির গল্প কিছু পড়েছিস আগে ?

    -- বহুৎ খুব । শুনেছি আরো বেশি । অল্প বয়সের প্রেমে ক্যাচাল, বুড়ো বয়সের প্রেমে ক্যাচাল, পরকীয়ার ঝঞ্ঝাট, গ্রামের লোক শহরে গিয়ে কিম্বা শহরের লোক গ্রামে এসে নাস্তানাবুদ, চোরপুলিশের কিস্সা, তারপর ধর ... পলিটিক্সের বাম্বু -- সেসব অবশ্য ব্যঙ্গের হল বলতে পারিস । কেস যতই জণ্ডিস ততই ফুর্তি, প'ড়ে মজা ।

    -- আর ? লোকে তো অতি দু:খের হাসিও হাসে কখনো-সখনো ?
    -- সেসব তো বড়মাপের লেখকদের কলমের খেল । আমার অত অ্যাম্বিশন নেই ব্রাদার । টাকাটা না পাই নিদেনপক্ষে এমনি ছাপেও যদি তাহলেও তো হাসির হাতে ছাপার অক্ষরে নিজের নামটা ধরিয়ে দিতে পারবো ।

    -- ধরিয়ে দিয়ে কী বলবি ? হাসি, তোমায় ভালবাসি ?
    -- মরিয়া হয়ে স্ট্রেটকাট বলেও ফেলতে পারি । তুই-ই তো জানালি ওর কিসব দেখা-ফেকা চলছে । --প্যালার দীর্ঘশ্বাস পড়ে । -- মেয়েটার খুব গুমোর, বুঝলি না ? আর্টস্‌ নিয়ে পড়ছে তো । আমি কমার্স ট্রাই করেছিলুম, নাহয় সাহিত্যটা একটু কমই বুঝি, কিন্তু পাত্র হিসেবে কি এতই ফেলনা ? দেশের বাড়িতে বহুৎ পাবলিক আমায় ডাক্তার সরকার ডাকে জানিস ?

    -- তোমার বন্ধুকে খামোখা দু:খ পেতে বারণ করো গো শ্রীনাথদা । আমিই না হয় হাসিদির কাছে দাদার হয়ে সওয়াল করে আসবো । --মিতা দরজার পর্দা সরিয়ে ঘরের মধ্যে ঢুকে এল এবার -- উঁহুঁহুঁ, চুলের মুঠি ধরার চেষ্টা করিস না দাদা । প্ল্যান ফাঁস করে দেব তোদের ।

    -- লক্ষ্মীসোনা বোনটি আমার ...
    -- এই তো সুর পাল্টেছিস । শোন তোদের আমি হেল্প্‌ করতে পারি ...
    -- কীভাবে ? কীভাবে ?
    -- তোরা লালিমা পালের নাম শুনেছিস ?
    -- কোনো লালিমা পালকে চেনে না তোর দাদা । চেনে শুধু ওয়ান অ্যাণ্ড ওন্লি ওয়ান হাসি ... উম্ম্‌ ...

    -- তুমি শুনেছো, শ্রীনাথদা ? লালিমা পাল - পুং ?
    -- পুং ? একটা চিনচিনে গন্ধ পাচ্ছি মনে হচ্ছে ? হিন্দিচিনি ভাইবোন গোছের কিছু মিন্‌ করছিস ?

    -- দূর ব্যাঙ । তোমাদের পড়ার দৌড় দেখছিলাম । শোনো, সাধনমামার পাকা হাতের গল্প যদি গাপ করতে পারো -- আর ছাপাও হয় সেটা তবু হাসিদি কস্মিনকালেও বিশ্বাস করবে না ওটা দাদার লেখা বলে ।

    -- হাসির কিন্তু খালি এই ইস্যুটা নিয়ে পল্লবকে এতটা ইগ্নোর করার মানেই হয় না ।

    -- কেন হয় না ? হাসিদি সেদিন কি সুন্দর রবীন্দ্রসঙ্গীত গাইলো, তারপর যেই দাদাকে বলেছে রবীন্দ্রনাথের ছোটগল্প সব পড়েছো ? -- দাদা ঝটিতি বলে কিনা -- হ্যাঁ পড়েছি -- চারুলতা -- কি সুন্দর ।

    -- হ্যাঁ বলেছি, বেশ করেছি । না হয় পড়িনি, বইটা দেখেছি তো । আর হাসির মায়ের যেদিন বুকে ব্যথা শুরু হল মাঝরাতে সেদিন হাসপাতালে দৌড়ঝাঁপ করে ভর্তি করালো কে শুনি ? এ শর্মা না থাকলে বেড পেতো ? অকৃতজ্ঞ, নিষ্ঠুর, কলিকালে অনেস্টির কোনো দাম নেই ।

    -- থাম প্যালা । তুই বলতো মিতা, কী যেন হেল্প্‌ করতে পারিস বলছিলি ?

    -- ওমা কি কাণ্ড ! দ্যাখো, আসল কথাটাই বলতে ভুলে যাচ্ছি । গত পরশু কথায় কথায় হাসিদি বলে, ও নাকি শিব্রামের বিশাল ভক্ত ।

    -- অ্যাঁ, ছেনো ...
    -- আচ্ছা, শান্ত হয়ে বোস না দাদা । চিরটাকাল তো আমার সঙ্গে পিটোপিঠি ঝগড়া করেই গেলি, দ্যাখ অ্যাড্টা আমিও দেখেছি আর হাসিদির কথা শোনার পর একটা গল্পও লিখেছি । মজার, সেটাই তোর নামে পাঠিয়ে দিতে পারি ।

    -- উফ্‌ মিতা ! আকন্ঠ কৃতজ্ঞতায় যেন ডুবে যায় প্যালা ।
    -- প্রতিযোগিতা বানান বল তো দাদা ?
    -- কেন ? প-এ র ফলা ত-এ হ্রস্ব ই অন্ত:স্থ য-এ ও কার গ-এ দীর্ঘ ঈ কার ...

    -- থাক থাক, দীর্ঘজীবী হয়ে তোকেও কিন্তু আমাদের একটা কাজ করে দিতে হবে । কোনরকম বাগড়া দিলে চলবে না ।

    মিতা--শ্রীনাথ দুজনেই হাসিতে ঝিকিয়ে ওঠে ।

    -- ভদ্রলোকের এক কথা । আমি নিজে বাবা-মাকে রাজি করাবো । আজকাল ওসব গোত্র-ফোত্র কেউ মানে নাকি ? দেখি, কেমন গল্প লিখেছিস ?

    -- উঁহু । গল্পটা আমি কাউকে না দেখিয়েই পাঠিয়ে দিচ্ছি । যদি ছাপা হয় ...

    -- যদি ছাপা না-ও হয়, তাহলেও তোদের বিয়ে হবেই । তেমন হলে সারাজীবন আইবুড়ো থেকেও আমি নিজে রেজিস্ট্রির সময় তোর তরফে সই করবো রে মিতা ।



    পাক্কা পৌনে দুমাস বাদে রবিবারের খবরের কাগজ হাতে পড়তেই প্যালার চোয়াল ঝুলে গেল । তার গল্পটা মনোনীতই হয়নি, প্রাইজ পাওয়া দূরস্থান ! এসবই সম্পাদকের কুটিল চক্রান্ত, চূড়ান্ত বিশ্বাসঘাতকতা ! কী ক্ষতি তোদের হত বাপু গল্পটা ছাপালে ? তার ন্যাংটোবেলারও আগে থেকে এ বাড়িতে এই কাগজখানা হররোজ নেওয়া হয়ে চলেছে ।

    কোথাকার কে পারমিতা -- তায় বেটি পদবীর ধার ধারে না -- ড্যাং ড্যাং করে পাঁচহাজারি মনসবদারি লুটে নিল চোখের সামনে ।

    বিমর্ষবদনে প্যালা গল্পটা পড়তে শুরু করে দিল । ছ্যা, ছ্যা ।
    বিয়ের ফুল, কি নামের ছিরি ! ভ্যাদভেদে প্রেমের গপ্পো একপাতা ।
    এঁদো বাঙালির ছেঁদো কলমে এর চাইতে ভালো আর কী-ই বা বেরোবে ?
    অ্যাঁ ? "এই গল্পের নায়ক শ্রীমান পল্লব আর নায়িকা শ্রীমতী ব্রততী" ? কিমাশ্চর্য !

    অত:পর গল্পের ঘোড়া টগবগিয়ে ছুটতে থাকে । কিভাবে পাড়ার এক বিয়েবাড়িতে পল্লব আর ব্রততীর প্রথম দেখা, কিভাবে খাওয়ার পর হাত ধুতে গিয়ে পা পিছলে পড়ে পল্লব মহিলামহলে হাসির খোরাক, পরে শ্রীনাথের বদান্যতায় ব্রততীর সঙ্গে খুচরো আলাপ, অচিরে বোনের হাত মারফত নিরামিষ চিঠি চালাচালি, ক'দিন বাদে একধাপ উঠে কলেজ কেটে ম্যাটিনি শো-এ গোল্লাছুটের সিনেমা, তারপর একদিন সন্ধেবেলা পার্কে বসে চুমু খাওয়ার চেষ্টা করতেই সজোরে একটা থাপ্পড় খেলো পল্লবচন্দ্র ।

    -- ডাহা মিথ্যে কথা, আমি স্রেফ হাতদুটো ধরেছিলাম --
    প্যালা দমবন্ধ করে পড়ে যেতে থাকে ।
    তারপর মুখদর্শন বন্ধ কিছুদিন, ত্রক্রমে মানভঞ্জন, আবার অভিমান -- এভাবে বছর দুয়েক ধরে গেছো মেয়েটা তাকে ঘুরিয়ে ফিরিয়ে নাস্তানাবুদ করে, সদ্য পাওয়া মাসমাইনের পুরোটা হরেক কিসিমে সাবড়ে দিব্যি এক নধরকান্তি এন আর আই পাকড়ে চকিতে সাগরপার -- রীতিমতো তরিবৎ বিবরণ !

    -- ছি, ছি, ছি ছি: মিতা ছি: -- এইভাবে দাগা দিলি গোবেচারা দাদার মনে ? নামটা পর্যন্ত পাল্টালি না ?

    ফলিডল না গলায় দড়ি না রেললাইন -- চোখের জল মুছে ভাবতে চেষ্টা করছে প্যালারাম ।

    আর তক্ষুনি মিতা নাচতে নাচতে ঘরে ঢুকলো । ওয়াও, হাসিদির ছদ্মনামে লেখা গল্পটাই প্রাইজ পাচ্ছে । আমরা সবাই মিলে দীঘা যাবো পিকনিক করতে ।

    পেছন পেছন ঢুকলো শ্রীনাথ ।
    -- যাই বল, প্যালা, তোর হাসির গল্প লেখাটা ভরাডুবি হলেও আদপে হাসি কিন্তু ...

    -- হাসিল ।


    দরজার বাইরে থেকেই মিতার হবু-বৌদি হাসতে হাসতে ভারি মিষ্টি একটা ভেংচি কাটলো ।

    (পরবাস, মার্চ, ২০০৬)

  • এই লেখাটি পুরোনো ফরম্যাটে দেখুন
  • মন্তব্য জমা দিন / Make a comment
  • (?)