• Parabaas
    Parabaas : পরবাস : বাংলা ভাষা, সাহিত্য ও সংস্কৃতি
  • পরবাস | সংখ্যা ৪৭ | জানুয়ারি ২০১১ | কবিতা
    Share
  • তিনটি কবিতা : তোফায়েল তফাজ্জল

    ॥ হরিণী সকাল ॥


    আমার কথার ফাল্গুনী বাতাসে, সৃজনশীলতায়
    অন্যে দোলনায় চড়ার দোল পাক বা না পাক
    থ হয়ে দাঁড়িয়ে থেকে ইতিউতি চেয়ে
    খেয়ালিনী পায়রা হয়ে নীলাকাশে উড়ে
    ডিগবাজি খেলায় মাতুক - না মাতুক
    খেলতে খেলতে নামুক সবুজ বিছানায় - না নামুক
    কিংবা হাঁস হয়ে জলে ভেসে
    পাটল পালকে ঠোঁট ঘষে
    ক্লান্তি দূরীভূত ছাপ ফুটিয়ে তুলুক - না তুলুক
    বন্ধুত্বের উসকে দেয়া মোমের আগুনে
    শ্যামা পোকা হয়ে আত্মহুতি দিতে ঝাপিয়ে পড়ুক - না পড়ুক
    তেমন কিছুই আসে যায় না আমার
    যদি আশ্চর্যবোধক চিহ্নে থাকা বিন্দু সমানও
    নাড়া টের পাও মনে
    প্রিয়কে পাওয়ার ইচ্ছে মার্বেলের মতো হয় গর্তমুখী - বুঝবো
    সন্মোহনী শক্তি আমার কথায়, আমার এ হাতে,
    সহসাই গোলাপ বাগানে ঢুকতে দেখবো এক হরিণী সকাল ।


    ॥ হাতের পাঁচ শিরোনামে ॥


    প্রেমে কি চরিত্র নষ্টের মন্ত্রণা থাকে - কাঁটা খাই,
    ছোরা-গোপনতা ? সুযোগ পেলেই যা দেখিয়ে কেড়ে নেয়া হয়
    বাগানের ফোটা ফুল, ঝোপের আশ্রয়ে বড় হতে থাকা ফল,
    বয়সের খনিজ সম্পদ ?
    শুধু কি এটুকু ? ঘুঘু ফাঁদে পা বাড়ালে
    কোথায় যে নামতে হয় - এতো নিচে !
    বিকৃত মুহূর্তগুলো মোবাইল ক্যামেরায় বন্দী করে রাখে
    ঘুমন্ত হাতের পাঁচ শিরোনামে - সম্পর্ক ঘাটতিতে
    বের করে থলের বেড়াল
    হাতের নাগালে, লোকালয়ে, পথে, চা-ষ্টলে ফুটপাতে
    ছাড়ে সেই রঙ্গরস,
    বাঁক বদলাতেই শত হাতে -
    কুলীনের অমূল্য অর্জন এভাবে খোয়ায়, হাঁড়ি ভাঙে হাটে ।

    যা সবার কাছে কলঙ্কের কালি, গুড়ে ধূলিবালি
    তা নাকি আজকাল মামুলি মামুলি ঠেকে,
    প্রেমে নাকি এ-ও এক ধাপ, পারি দিতে
    পায়ে চাই বসন্তের বল, মন ঢাল ।
    একই বারান্দায় দু'কোণে দাঁড়িয়ে মা-মেয়ের ফিল্লিং মারাও
    হালে নাকি পাচ্ছে পানি ;
    এখন আর সে বড়শি প্রেমে
    যুগ জবাই জরুরি নয় - জায়গা বা সময় বুঝে
    টোপ ফেললেই ঠোক্কর, যোগাসনে না বসতেই সিদ্ধি ।
    মনে রেখো, সংসারীকে অবোঝ বানিয়ে
    যে বা যারাই পা রাখে রঙধনুর বাঁকে
    শিকারীর শিকার তারাই;
    ছাড়া ছাগলের মুখে নষ্ট হয় ক্ষেতের সবুজ, সোনাধন ।


    ॥ প্রিয়তমাস্রোতে ॥


    বসন্তের সকাল বেলার সূর্যালোকে দৃষ্টিকাড়া
    অপরূপ সৌন্দর্যের প্রিয়তমাস্রোতে
    ভেসে যেতে বাধ্য
    জালে ছাঁকা শত সুন্দরীর
    পাশে এসে দাঁড়ানোর দু:স্বপ্ন ধৃষ্টতা ।
    পানের গড়নে মুখানন, দু'টি কচিভার চোখ,
    সদ্য কলিফোটা গোলাপের নম্রঠোঁট
    যে ঠোঁটের মুচকি হাসি কিংবা কথায় শ্রোতাকে ছুঁতে
    দাঁতে খেলে রহস্যের খেলা
    যে খেলায় বড় অসহায়
    চপলা পরীও ;
    সর্ষেফুল দেখে প্রতিযোগিনীর চোখ ।
    দর্শকের আনন্দ-পাপড়িরা
    প্রজাপতি হয়ে ওড়ে - গল্পের বিষয় হয়ে ওঠে
    ভক্তদের কাছে । নক্ষত্রের জ্যোতি দেখে
    বিদুষীর মাথায়ও নাকি ঘোরে চক্কর চড়ক ।

    সময় সুযোগ বুঝে তার মারা চোখ
    ডুবুরির কাছে মুক্তোদানা,
    খোলে কতো অজানা জগৎ ।
    দু'কদম এসে দু'বাহু বাড়িয়ে দিলে
    প্রিয়ের পা দলতে পারে ব্যাঘ্রভয়,
    ছুঁতে পারে অসীম আকাশ ।

    সজনীর ধন সেরেজোখে নয়, কেজি দরে নয়
    স্বর্ণের নিক্তিতে রতি রতি মাপতে হয়
    দর্শনেই পাই প্রাণ, প্রেরণা যেহেতু ।
    চুঙ্গি বেয়ে নিচে পড়া একফোঁটা খেজুরের রস অবিকল
    হাঁবোধক শব্দসায়
    মিলে গেলে
    মিলিয়ন বিলিয়ন মুদ্রা
    তাচ্ছিল্যের স্তরে পড়ে গড়াগড়ি খায়,
    হীরে মতি পান্নারাও
    পায়ে পড়ে লহমায় ।
    তাকে কাছে পাওয়া বিশেষ মুহূর্তগুলো
    বুলবুল বাগানে গাওয়া প্রেমোদীপ্ত গান
    বহুদিন বেঁচে থাকতে বহুবার প্রণোদনা প্যাকেজ সমান ।


    (পরবাস-৪৭, জানুয়ারি, ২০১১)

  • এই লেখাটি পুরোনো ফরম্যাটে দেখুন
  • মন্তব্য জমা দিন / Make a comment
  • (?)
  • মন্তব্য পড়ুন / Read comments