২১.১০.১০ বেলা পাঁচটা -
২২.১০.১০ সকাল ছ-টা দশ -
সকাল দশটা চল্লিশ -
ঠিক দুক্কুরবেলা -
বেলা বারোটা দশ -
C1 থুড়ি সীওয়ান, নাকি See One ! স্টেশন পেরোতেই নদী নামক সোঁতা । তার এপারে মা দুগ্গা শ-খানেক ভকত নিয়ে হাজির হয়েছেন জলপথে হিমালয়ে শিবালয়ে ফিরবেন বলে । আর ও-পারে হাফ ডজন কবর ঘেঁষে ডজন দুয়েক রঙীন ফুলের মতো বাচ্চা অবাক চোখে মায়ের যাওয়া দেখছে ।
ভোর হলো, চোখ খোলো, ধেড়েখোকা ওঠো রে - আজ কোজাগরী লক্ষ্মীপূর্ণিমা । আজ নৈনিতাল । আজ নয়নাদেবীর সরোবরতীরে রাত্রিবাস !
অবশেষে কাঠগোদাম । রেললাইন পাহাড়ের গায়ে পৌঁছে থমকে গেছে । বাতাসে ঠাণ্ডার ছোঁয়া । বাঘের পেট থেকে মুক্তি । পবননন্দনে সওয়ার ।
নৈনিতাল, ৬৯৩০ ফুট । পুরাণে এর নাম নাকি ত্রিরিখি (ত্রিঋষি) সরোবর । অত্রি, পুলস্ত্য আর পুলহ ঋষি মানসসরোবর তীর্থযাত্রার পথে এখানে এসে তৃষ্ণার্ত হয়ে পড়েন । মানসসরোবরের অগাধ জলরাশির কথা স্মরণ করতেই সেই সরোবরের অংশে মুহূর্তে সৃষ্ট হয় সরোবর । তৃষ্ণা নিবারণ করেন ঋষিরা । দক্ষযজ্ঞে সতীর দেহত্যাগের পর শিবের প্রলয়নাচনের সময় বিষ্ণুর চক্রে খণ্ডবিখণ্ড সতীর নয়ন দুটি এই সরোবরে পড়ে আর তার রং সবুজাভ নীল রংয়ের হয়ে যায় । সরোবরের নাম হয় নৈনিতাল ।
প্রিপেড রিকশার শহরে
দুপুর দুটো -
নেমে এলাম লেকের কিনারায় । সার বেঁধে সব বিহারের নৌকো, নৌকোবিহারের জন্য । কেউ শিকারা, কেউ হাস্যবদন ড্রাগন, কেউ রঙীন হাঁস, জলের বুকে ভাসছে । তাদের ঘিরে আসল রাজহাঁসের দল ঘুরঘুর করছে । চড়ে বসলাম এক শিকারায়, শুরু হলো নৌকাবিলাস । গহীন জলের বুকে বৈঠার ছলাৎ ছলাৎ শব্দ । তল্লিতাল ছুঁয়ে নানান মন্দিরের দর্শন করতে করতে মাঝপথ থেকে মল্লিতালকে সেলাম জানিয়ে আবার তীরের বাছারা তীরে ।
তিনটে বত্রিশ -
পৌনে ছ-টা -
নৈনিতালে সপরিবারে ব্যোমকেশ `বক্শি দর্শন' সেরে রিকশাস্ট্যাণ্ডে ।
ছ-টা দশ -
লাইনে দাঁড়িয়ে প্রিপেড রিকশাবাহিত হয়ে হোটেলের গাড়ি - হোটেলের গাড়িতে ব্যাক টু দ্য প্যাভিলিয়ন ।
`রাত' সাড়ে সাতটা -
আলোর মালায় সেজে নৈনিতাল নৈনিতালে মুখ দেখছে । আকাশ থেকে মেঘের ফাঁকে পূর্ণচন্দ্র আর তারার দল সেই আলোর সাজ দেখছে । মাঝে মধ্যে বাজির আলো তারা হবার চেষ্টা চালাচ্ছে ।
তালে তালে
২৩.১০.১০ সকাল সাতটা -
নৈনিতাল সবে আড়মোড়া ভাঙছে । পাখিরা ওড়াউড়ি শুরু করেছে । বাচ্চারা স্কুলে যেতে শুরু করেছে । আরও ভোরে মসজিদের আজানের সুর ভাসছিল নৈনিতালের আকাশে । তারই আহ্বানে, নাকি নৈনি দেবীর মন্দিরের ঘন্টাধ্বনি শুনে জানি না, আকাশে ভিড় করেছে কালো মেঘেরা । পুব আকাশে অবশ্য তাদের দৌরাত্ম্য তেমন নেই । পূষণের পুণ্যকিরণের ছোঁয়া এখনও না পেলেও, তাঁর আলোকে উদ্ভাসিত চরাচর । পবনদেবের শীতল চামর ব্যজনের হাত থেকে বাঁচতে ব্যালকনি থেকে ঘরে প্রত্যাবর্তন । এখন বক্ষজুড়ে তৃষ্ণা - গরম চায়ের তরে ।
সন্ধ্যা সাড়ে ছ-টা -
এর পর সারথি মোহিতের দৌলতে মোহিত হয়ে দেখলাম নির্জন চড়াইপথে গাড়ির নৈনিতালের টংয়ে চড়া । সে কী পথ ! পিলে চমকে দেয় । ঘাড় তুলে আর ঘাড় গুঁজড়ে গাড়ির গতায়াত । তবে, উপর থেকে দৃশ্যাবলী অপরূপ । নৈনিতাল যেন পাকা আমটি ! নৈনিতালের বিখ্যাত প্রাচীন সব বাড়িঘর, স্কুল কলেজ, গির্জার দূরবীন-দর্শন হলো ।
শেষমেশ পূণ্যার্জন । নয়না দেবীর মন্দির দেখে নয়ন সার্থক হলো । ঢোকার মুখে এক ঘন্টা - যে আসছে, বাজিয়ে যাচ্ছে । আমরাও বাজালাম - ঢং ঢং । আমাদের ঢং দেখে হনুমানজী হতবাক ।
তাঁকে ওই অবস্থায় ছেড়ে আমরা ফিরলাম হোটেলে ।
রাত দশটা -
ঘুম আয়, ঘুম আয়, আয় ঘুম .........
কাল মুক্তেশ্বর ।
(ক্রমশ:)
(পরবাস ৪৭, জানুয়ারি, ২০১১)