প্রায় চোদ্দ ব্ছর পথ চলে এসে ‘পরবাস’-এর পায়ে নতুন পয়জার! বা, টুপিতে নতুন পালক!
এবারের ‘পরবাস’-এর পাতায় হরফের রকমফের সুধী পাঠকের নজর এড়ায়নি, আশা করি। হ্যাঁ, আমরা এই নতুন ইউনিকোড-ভিত্তিক হরফের প্রসঙ্গেই বলছি, এই সংখ্যা থেকে যাতে আমাদের উত্তরণ।
প্রকৃতপক্ষে, আন্তর্জালে বাংলা হরফের বিবর্তনের ইতিহাস বলতে গেলে পরবাসের পাতায় পাতায় পাওয়া যাবে। যখন পরবাস প্রথম বাংলা আন্তর্জাল-পত্রিকা হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে, তখন আন্তর্জালে বাংলা হরফে কোনো লেখা পড়তে গেলে যে বিশেষ ফন্ট-এ লেখাটি হয়েছে সেটি আলাদাভাবে নিজের কম্প্যুটারে লাগিয়ে নেওয়া ছাড়া উপায় ছিল না। সবাইয়ের কাছে যাতে বিনা আয়াসে পৌঁছে দেওয়া যায়, সে-জন্যে পরবাস একটি বিশেষ পদ্ধতি কাজে লাগায়। পরে যখন dynamic font চালু হয় তখন 'পরবাসী'দেরই তৈরি বাংলা ওয়ার্ড প্রোসেসর 'পরবাস-অক্ষর' ব্যবহার করে বিগত প্রায় দশ বছর ‘পরবাস’ পত্রিকা ছাপা হয়ে আসছে। আমরা পরবাস-অক্ষর প্রথম থেকেই বিনামূল্যে পরবাসের পাতা থেকে বিতরণ করে আসছি। গত এক যুগে সারা বিশ্বে ‘হরফ’/ ‘বাংলা হরফ’ নিয়ে কাজ কম হয়নি, যার ফলে এই ইউনিকোড-ভিত্তিক যে-কোনো বাংলা ফন্টেই আজ সবাইয়ের কাছে পৌঁছনো যাবে, পাঠককে আর আলাদাভাবে কিছু করতে হবে না। তাই, যুগের সঙ্গে তাল মেলাতে ‘পরবাস-অক্ষর’-এর প্রতি আমাদের স্বাভাবিক আকর্ষণ উহ্য রেখেও আমরা ইউনিকোড-এ উত্তীর্ণ হলাম, যাতে আরও আরও পাঠকের কাছে আমরা পৌছুতে পারি, আরও আরও পাঠক সহজে আমাদের চিঠি লিখতে পারেন। এই পদক্ষেপ আমাদের পাঠককুল বরণ করে নেবেন, এই আশা।
সময়ের নিগড়ে পত্রিকার কোথাও হাত-পা বাধাঁ। এই যেমন দেখুন না, ২০১১ পড়তে-না-পড়তেই, ৩রা জানুয়ারি, চলে গেছেন সর্বজনশ্রদ্ধেয়া শ্রীমতী সুচিত্রা মিত্র। বহু পূর্বে উনি ‘পরবাস’-কে এক দীর্ঘ সাক্ষাৎকার দিয়েছিলেন। সেটা যে কত অসাধারণ ছিল,তার প্রমাণ, সুচিত্রাদির প্রয়াণের পরে কলকাতার এক মুখ্য সংবাদপত্র 'প্রতিদিন' বেশ কিছুদিন ধরে, কিস্তিতে কিস্তিতে, সেই সাক্ষাৎকার, 'এক বিকেলের আড্ডা', পুনরায় ছাপলো তাদের পৃষ্ঠায়, এবং আমাদের কোনো অনুমতি ছাড়াই। শুধু তাই নয়, প্রায়-হুবহু ছাপলেও সাক্ষাৎকারে 'পরবাস' কথাটিকে তাঁরা বেশ সযত্নে ছেঁটে দিয়েছেন, এবং একদম শেষে আমাদের সাক্ষাৎকারিদের নামগুলিও দেননি! ‘পরবাস’ নিঃশুল্ক ই-পত্রিকা বটেই। কিন্তু প্রকাশনা জগতের একটা সাধারণ সৌজন্য তো আছেই। ‘প্রতিদিন’-এর এ’হেন কাজের নিন্দা করতে বাধ্য হচ্ছি।
আর চলে গেছেন বিশিষ্ট সাহিত্যিক সুভাষ ঘোষাল। পরবাসে তাঁর গল্প দুই বোনের গল্প, প্রবন্ধ নদীর পানি, লক্ষ্মীর পা, এবং একটি ধারাবাহিকভাবে প্রকাশিত উপন্যাস বর্ণবাসী প্রকাশ হয়েছে।
পাঠককে আমরা সুচিত্রা মিত্রর সেই সাক্ষাৎকার ও সুভাষ ঘোষালের এই লেখাগুলি পুনঃপাঠ করে তাঁদের জীবন ও সাহিত্যকর্মের পরিচয়ের সুযোগ দিতে পেরে ধন্য বোধ করছি।