• Parabaas
    Parabaas : পরবাস : বাংলা ভাষা, সাহিত্য ও সংস্কৃতি
  • পরবাস | সংখ্যা ৫৩ | ফেব্রুয়ারি ২০১৩ | কবিতা
    Share
  • নির্বাচিত অসমীয়া কবিতা : কমল কুমার তাঁতী
    translated from Assamese to Bengali by অমিতাভ


    মনে কি পড়ে অরুন্ধতী

    বর্ষার রাতে তোমার কবিকে মনে কি পড়ে
    অরুন্ধতী?
    সিক্ত ভোর ভুলিয়ে দেয়
    তোমার খোঁপার মায়ালী গন্ধ
    মনে কি পড়ে
    অরুন্ধতী?

    জোছনায় মেঘে, স্নেহে বিষাদে, অধরা কবিতা
    আমাদের মধ্যকার ভাঙা স্বপ্নের অতনু বাধা
    মনে কি পড়ে
    অরুন্ধতী?

    মনে কি পড়ে অরুন্ধতী
    দুর্বাদলে মুক্তো-আভা
    চুলের মেঘে মিহি আঙুলের বহুল চাঁদ
    (জোয়ারের জন্য সাগর ছিল না!)
    বরফের মতো শীতল পরশে
    সে যে কি শান্তি
    অরুন্ধতী!

    অরুন্ধতী,
    বাহু আকাশ পার হয়ে আসা
    ঝোড়ো-পাখীর একলহমার নীড়
    বহু স্বপ্ন পার হয়ে আসা
    কাঁচা ঘুমের ভীড়ের মাঝে
    সেই একটি মাত্র জাগর রাত—
    মনে কি পড়ে
    অরুন্ধতী?

    বর্ষার রাত মনে কি পড়ে
    অরুন্ধতী?


    আঁধার রাতের এলিজি

    এখানে মানুষ নেই।
    একা একা আমি আঁধার পথে
                      নিজেকে খুঁজে পাইনা।
    ... আমি কোন অতীতের অশরীরী অনুভূতি
    ভবিষ্যতের স্বপ্নে উতলা

    জিপসি কল্পনা আমার উড়ে যায় কালের লাগাম ছিঁড়ে
    চিন্তার বিলাস আমায় বলতে চায়
    হারানো দিনের এক গোপন কাহিনিঃ
            আমরা নাকি ফিরে ফিরে আসি
            যুগে যুগে রূপে রূপে
            সলনির সেতুর বুকুরে
            পৃথিবীর আঁশে আঁশে
            পাকে পাকে বিজড়িত
            আমাদের স্থিতির শিকড় ......

    এই রাত, আঁধারে
                    সেই মহারহস্যের আমি নাকি প্রকাশ-প্রতিভূ;
                    সাবিত্রী পৃথিবী এই আমাদের আপন।

                    স্বীকার করতে পারিনে যে।
                    আমরা শুধু হারিয়ে গেলাম পৃথিবীর পথে পথে
                    আমাদের অঙ্গে তার নেই কোনো অঙ্গীকার
    সময়ের পদধ্বনি আমাদের স্নায়ুতে মোরা
                              শুনেছি অবিরাম
    মৃত্যুর ঘড়িতে বাজে আমাদের আত্মার ধ্বনি
                              সময়ের বুক ছিঁড়ে-ছিঁড়ে—
    বুঝিনি কিছুই
                    ......বুঝবার আছে নাকি কিছু?
    নিজের দামেই মোরা পারলাম না নিজেকে কিনতে।

    দোকানের আরশিতে...সে কি আমি?
             নিজেকে লাগলো আমার ভারী সুন্দর
                     দুচোখে শেলির আগুন
             (যাযাবর মানুষের প্রথম পরিচয়
                     নিজের স্বপ্নের সাথে ......সৃষ্টির স্বপ্নের)
    হাসলো আরশি।
    (এই হাসি দেখিনি আগে)
                    ......এক মুহূর্তের জন্য বর্তমান স্থির হয়ে যায়
    স্নায়ুতে স্নায়ুতে মোর বাজে
                    কত মৃত সভ্যতার
                              কংকালের
                              হাড়ের
                              কড়ড়ত
                    মৃত শতাব্দীর দেহ
                          উঠে আসে
                    কালের কবর থেকে
                            ভিড়ের ভিতরে আমি ডুবে যাই...ডুবে যাই
                                    ভেঙে-চুরে শেষ হয়ে যাই—
                                    আমি নেই। আমি আর নেই।
    আরশিটি আবারো হাসলে।
             এবারে বুঝলাম; বললে আমাকে:
    "তুমি আছো, তাই তুমি খুব বেশি ভাবো
                    আমার হাসি তাইতো দেখলে"

    "চলে যাও—চলে যাও
    তোমার তো আছে পথ জটিল তর্কের মতো
             সেই পথে চলে যাও
             ভিড় করোনা।
    আমার আছে পাণ্ডুলিপি অনেক হাসির
             অনেকের তরে"

    "তুমি যাও......
             নইলে আমার এই হাসি ওরা তো পড়বে না
                              তোমার পরে এসে
                              পৃথিবীর পথে পথে
                              চলে যাবে যে-সব মানুষ।
    "তুমি যাও চলে যাও
    তোমার পুতুল হয়ে ওরা তো পারে না সাজাতে জীবনের যাদুঘর
    তুমি যাও......তুমি যাও চলে যাও......'

    চলে আসি
    আরশিতে ফিরে চাই......সাহস হলো না।
    "চলে যাও"
    গীর্জার ঘড়িটি বললে: রাত এগারোটা।

    সারাংশ:
    স্নায়ুতে শিরায় জ্বলে আমাদের মৃত্যুর জ্বালা
    তাহাদের মৃত্যুর বেদনা
    আমাদের আগে আর আমাদের পরে
    পৃথিবীর পথে সে-সব মানুষ
    খুঁজেছিল খুঁজে যাবে, অর্থ জীবনের।


    অলংকরণ (Artwork) : অলংকরণঃ সঞ্চারী মুখার্জী
  • এই লেখাটি পুরোনো ফরম্যাটে দেখুন
  • মন্তব্য জমা দিন / Make a comment
  • (?)
  • মন্তব্য পড়ুন / Read comments