• Parabaas
    Parabaas : পরবাস : বাংলা ভাষা, সাহিত্য ও সংস্কৃতি
  • পরবাস | সংখ্যা ৭০ | মার্চ ২০১৮ | গল্প
    Share
  • বিসর্জন : সিদ্ধার্থ মুখোপাধ্যায়


    কটু আগেই সিঁদুর-খেলা শেষ হয়েছে। প্রতিমার মুখের নাগাল পেতে প্রতিবারের মত এবারও সিঁড়ি লাগানো হয়েছিল। তাতে চড়ে সধবা মহিলারা মা দুর্গার মাথায় সিঁদুর দিয়েছেন। ঠোঁটে সন্দেশ ছুঁইয়েছেন। নেমে এসে একে অন্যের নোয়ায় আঙ্গুল ছুঁইয়ে কপালে-গালে সিঁদুরের টান দিয়েছেন। নর্থ ক্যালকাটার এই মহল্লাটায় ভারতবর্ষের সব স্টেটের মানুষ মিলেমিশে থাকে। পুজোর সময় একজোট হয়ে হই-হুল্লোড় করে। পিতাজী চল্লিশ বছর আগে পূর্ণিয়া থেকে এখানে এসে বসে গিয়েছিলেন। বড়বাজারে মুদিখানার দোকান দিয়ে শুরু। আহিস্তা আহিস্তা মশলাপাতির হোলসেল, ইম্পোর্ট-এক্সপোর্ট... এখন মহল্লার মান্যগণ্য মাতব্বর। এবার তিনিই পুজোর প্রেসিডেন্ট। মণ্ডপসজ্জা থেকে শুরু করে পুজোর ভোগ রান্না তিনি নিজে দাঁড়িয়ে তদারকি করেছেন। কোনো গাফিলতিই তাঁর নজর এড়ায় না।

    ঠিকঠাক চলছিল সব। ছেলেরা মণ্ডপ থেকে মূর্তি নামিয়ে লরিতে তোলার সময় অঘটনটা ঘটল। সবাই মিলে বাঁশের চাড় দিয়ে ঠাকুর তুলছিল। হঠাৎ একদিকে হেলে গেল। ল্যাম্পপোস্টে ধাক্কা লেগে প্রতিমার একখানা হাত ভেঙ্গে গেল। আমি একতলার জানলায় দাঁড়িয়ে দেখছিলাম। জানলার ঠিক নিচে ফুটপাথে ভিড় করে লোকজন দাঁড়িয়ে ছিল। সকলে হই হই করে উঠল। দয়াল কাকা গলা তুলে বলল, অমঙ্গল, অমঙ্গল। সবাই তাকে গালমন্দ করে থামাল। মায়ের যাত্রার সময় কু গাইতে নেই। ছেলেরা কোনোমতে টাল সামলাল। ভাইয়া লরির মাথায় সিঁড়ি লাগিয়ে উঠে গিয়ে হাতটা দড়ি দিয়ে চালচিত্রর সঙ্গে ভালো করে বেঁধে দিল। তাও সেটা আধ-খ্যাঁচড়া হয়ে ঝুলে রইল। লরি চালু হলে ইঞ্জিনের ঝাঁকুনিতে অল্প অল্প দুলতে লাগল।

    আমরা সারাটা রাস্তা লরিতে, ঠাকুরের পায়ের কাছে বসে এলাম। ছেলেরা ব্যান্ড পার্টির সঙ্গে নাচতে নাচতে। ব্যান্ডে হিন্দী গান বাজছে। দূরে হাওড়া ব্রিজ, গঙ্গার ঘাটে সন্ধে নামছে। আমাদের আগে আরও দুটো ঠাকুর বিসর্জন হল। তারপর আমাদের পালা। পুলিস আর ভলান্টিয়াররা মিলে বাঁশি বাজিয়ে ভিড় কন্ট্রোল করছে। ভাইয়া, ইন্দর সবাই মিলে ঠাকুর নামাচ্ছে। এই সময়টা বড় কষ্ট হয়, বুক টন টন করে। গত চার পাঁচ দিনের মজা আর মনে থাকে না। এবার পুজোর সময় খুব ঘুরেছি ইন্দরের সঙ্গে। ঠাকুর দেখেছি, ময়দানে ফুচকা খেয়েছি। একদিন ভিক্টোরিয়া গিয়ে বসেছিলাম। বাড়িতে জানে না।

    ইন্দররা আমাদের পাড়াতেই থাকে। ও চেন্নাইতে ইঞ্জিনিয়ারিং করছে। পুজোর সময় এক উইকের ছুটি নিয়ে এসেছিল। ইন্দররা অন্য কাস্ট। পিতাজী কিছুতেই মানবেন না। ওরা সবাই মিলে মূর্তি তুলে জলে ভাসিয়ে দিচ্ছে। বাঁশ দিয়ে ঠেলছে। হাত-ভাঙ্গা মূর্তি গঙ্গার ঘোলা জলে ডুবে যাচ্ছে। ক’টা ন্যাংটো ছেলে জলে লাফ দিল। জরির মুকুট, হাতের গয়না খুলে নেবার জন্য। একটা মেয়েকেও দেখলাম মনে হল। ফ্রক গুটিয়ে কোমরের কাছে বাঁধা, জলে ঝাঁপ দিল। ইন্দরকে দেখতে পাচ্ছি না। ও কোথায়? হায় রাম! ইন্দরকে সবাই মিলে জলের মধ্যে ঠেসে ধরছে। ইন্দরের মাথা ফেটে রক্ত পড়ছে। ভাইয়া আর ভাইয়ার বন্ধুরা ইন্দরকে ঘিরে ধরেছে। খুব মারছে ওকে। ভিড়ের মধ্যে কেউ দেখছে না। আমি ঘাটের সিঁড়ি দিয়ে দৌড়ে নামতে গেলাম। শেওলায় আমার পা পিছলে গেল। চেঁচিয়ে বললাম, ‘উসে মত মারো ভাইয়া, মত মারো...।’

    ভাইয়া পিছন ফিরে তাকাল। ওর চোখ জ্বলছে। বলল, ‘হট যা, মুনিয়া।’ আমার মাথা ফাটিয়ে দেবার জন্য হাতের বাঁশটা তুলল। আমি আটকাবার জন্য হাত তুললাম। পাশ থেকে কে ভাইয়ার হাত চেপে ধরল। আমি কাঁদতে কাঁদতে ভিজে সিঁড়ির ওপর বসে পড়লাম। ইন্দরকে আর দেখতে পাচ্ছি না। ও মনে হয় জলে ভেসে গেছে। বা চালচিত্রর নিচে চাপা পড়েছে। ভাইয়া এসে আমায় তুলল। টানতে টানতে নিয়ে গিয়ে একটা ট্যাক্সির পিছনের দরজা খুলে ভিতরের অন্ধকারে ছুঁড়ে দিল। পিতাজী এই ট্যাক্সিটা করেই প্রশেসনের পিছে পিছে এসেছিলেন। উল্টো দিকের জানলার ধারে পিতাজী বসেছিলেন। ওনার হাঁটুতে বাত, বেশি চলাফেরা করতে পারেন না। বিসর্জনের সময় নামেননি। জানলা দিয়ে আসা আলোয় দেখলাম তিনি পানের বাটা থেকে একখানা পান বের করে খেলেন। সঙ্গে এক চিমটে জর্দা। আমার মাথাটা বুকে টেনে নিয়ে বললেন, ‘রো মত বেটি, সব ঠিক হো যায়েগা, মেরি আচ্ছি বিটিয়া!’


    ন্দর তলিয়ে যাচ্ছিল। জলের নিচে ঘোলাটে অন্ধকার। বুকে চাপ চাপ ব্যথা, শ্বাস নিতে পারছে না। কোথায় যেন পড়েছিল, জলে ডুবে যাবার সময় ফুসফুস বডিতে অক্সিজেন সাপ্লাই কাট করে দেয়। ইন্দর জানে মাথায় অক্সিজেনের অভাব হলে যত রাজ্যের উদ্ঘট কথা মনে আসে। এই মুহূর্তে বাবার কথা মনে পড়ছে ইন্দরের। বাবা বলত, কষ্ট সহ্য করার অভ্যেস কর ইন্দর। যে কোনো কষ্ট একবার সহ্য হয়ে গেলে আর কষ্ট বলে মনে হয় না। যেমন দেখ না, ছোটবেলায় আমার খুব খিদে পেত। এখন আর একদম পায় না। তোকে একটা কায়দা শেখাই। যখনই কষ্ট হবে মনটাকে অন্যদিকে ঘুরিয়ে দিবি। মন ঘোরানোর সব থেকে ভাল উপায় কি জানিস? বই পড়া। র‍্যাক থেকে হ্যান্স এন্ডারসনের ফেয়ারি টেলটা নিয়ে আয়। তোকে পড়ে শোনাই।

    ইন্দরের জামার কলার ধরে কেউ টান দিল। ইন্দর ঘাড় ঘুরিয়ে দেখল এক মারমেড। ইন্দর একটু অবাক হল। মারমেডরা কি নদীতে থাকে? ইন্দর যতদূর জানে তারা লোনাজলের জীব। সমুদ্রের নিচে তাদের বসবাস। ঢেউয়ের মাথায় চড়ে দল বেঁধে দোল দোল দুলুনি করতে করতে তারা লো ফ্রিকোয়েন্সিতে গান গায়। হয়তো পথ হারিয়ে এসে পড়েছে। দিনের আলোয় ফেরার পথ চিনতে পারছে না। রাতে আকাশে তারা উঠলে সেই দেখে ফিরে যাবে। কলারে টান বাড়ছে। ফুসফুসের ওপর চাপ কমছে। মারমেড-টারমেড নয়, ইন্দর বোধহয় মরে যাচ্ছে। মরে গেলে তো আর কোনো ফীলিং থাকে না। মৃত্যুর আগে মানুষ অমন হ্যালুসিনেট করে। আন সান দেখে।

    মারমেডের ছায়া-শরীর জল কেটে কেটে ইন্দরকে নদীর পাড়ে টেনে নিয়ে এল। জলে ভেসে থাকার সময় ইন্দরের হালকা লাগছিল। ডাঙায় ওঠার পর মনে হল শরীরটা সীসের মত ভারি। সারা শরীর গঙ্গামাটিতে মাখামাখি হয়ে গেছে। পাড়ে তুলে মারমেডও ইন্দরের পাশে ধপাস করে শুয়ে পড়ল। জায়গাটা আঘাটা। অন্ধকার, মানুষজন নেই। ইন্দরের হাত পা নাড়ানোর ক্ষমতা চলে গেছে। সে আদৌ বেঁচে আছে কি মরে গেছে সেটা নিয়ে নিঃসন্দেহ হতে পারছে না। কোনমতে চোখ খুলে দেখল একটা লঞ্চ গঙ্গা পার হচ্ছে। মৃত্যুর পরেও কি লোকে লঞ্চে নদী পারাপার করে? মারমেড এতক্ষণে উঠে বসেছে, তার গায়ে ধাক্কা দিচ্ছে। কিছু জিজ্ঞেস করছে, ইন্দরের মাথায় ঢুকছে না। ইন্দর চোখ নামিয়ে দেখার চেষ্টা করল মারমেডের কোমরের নিচটা মাছের লেজের মত কিনা। আশ্চর্য হয়ে দেখল লেজ টেজ নয়, মানুষের মত পা।

    মেয়েটার নাম সুন্দরী। সুন্দরীর বাপ মা ঝাড়খণ্ড থেকে রুজিরুটির খোঁজ করতে করতে কলকাতায় এসে গঙ্গা কিনারে ঝোপড়া বেঁধেছে। বাপ সোহাগ করে মেয়ের নাম রেখেছিল বটে! সে কোন বাপ মা আর নিজের সন্তানকে অসুন্দর দেখে? দুবেলা পেটে ভাত জোটে না, অথচ বয়সের তুলনায় বাড়ন্ত চেহারা। সুন্দরী যখন জলে নামে তখন চোখ ফেরানো যায় না। মনে হয় একটা শুশুক। জলেই জন্মেছে। ইন্দরকে টানতে টানতে নিজেদের ঝোপড়ায় এনে ফেলল সুন্দরী। পুজো বলে গত ক’দিন কাজ বন্ধ। সুন্দরীর মা কৌটো-বাটা ঝেড়ে দুমুঠো চাল ফোটাচ্ছিল। সুন্দরীর বাপ চুল্লু গিলে ফিরে ভাত না পেলে মাথা গরম করে। মাঝখান থেকে সুন্দরী একটা উটকো ঝামেলা নিয়ে ঘরে ঢুকল। যত দিন যাচ্ছে মেয়েটা ধিঙ্গি হচ্ছে। সুন্দরীর মা সুন্দরীর গালে ঠাস করে একটা চড় বসিয়ে দিল। কিন্তু ছেলেটাকে ফেলে দিতে পারল না। হাজার হোক মায়ের মন।


    মুনিয়া একটা ছেলের সঙ্গে পার্ক স্ট্রীটের ফুটপাথ দিয়ে হেঁটে যাচ্ছে। ইন্দর দূর থেকে দেখতে পাচ্ছে মুনিয়ার চোখে মুখে বিষণ্ণতা। ছেলেটার সঙ্গে তাল মিলিয়ে হাঁটতে পারছে না। মাঝে মাঝে পিছিয়ে পড়ছে। একবার হোঁচট খেয়ে পড়তে পড়তে সামলে নিল। ছেলেটা দাঁড়িয়ে পড়ছে। সামান্য বিরক্ত। ছেলেটাকে ইন্দর চেনে না। তবে আন্দাজ করতে পারে। মুনিয়া বলেছিল, ওর বিয়ের জন্যে বিদেশ থেকে সম্বন্ধ আসছে। ইন্দরকে তাড়া লাগিয়েছিল যা করার তাড়াতাড়ি করার জন্য। ইন্দরের সবে থার্ড ইয়ার। মুনিয়াকে বলেছিল, আর একটা বছর কোনোমতে কাটিয়ে দিতে। দুজনে একটা দামী রেস্তোরাঁয় ঢুকল। এখন সকাল সাড়ে বারো, ভিড় কম। ইন্দরও ঢুকল। ওদের থেকে খানিকটা দূরে কোণের দিকে একটা টেবিলে গিয়ে বসল। এখান থেকে ওদের বেশ দেখা যাবে। আলোছায়ায় ইন্দরকে ওরা ভালো করে দেখতে পাবে না। মুনিয়া মাথা নিচু করে বসে আছে। কোনোদিকে তাকাচ্ছে না।

    এদিকে দেখলেও মুনিয়া ওকে চিনতে পারবে বলে মনে হয় না। ইন্দরের কপালে চারটে সেলাই পড়েছে। চওড়া স্টিকিং প্লাস্টার লাগানো। বাঁ চোখটা অস্বাভাবিক ফুলে আছে। থুত্‌নির কাটা দাগটা এখনও সম্পূর্ণ মেলায় নি। ওয়েটার এসে জিজ্ঞেস করল কী চাই। ইন্দরের খিদে পাচ্ছিল। সকালে ব্রেকফাস্ট না করেই বেরিয়েছে। মনে মনে হিসেব করল পকেটে কত ক্যাশ পড়ে আছে। ইন্দর আপাতত ক্রেডিট কার্ড ব্যবহার করছে না। এটিএম থেকেও টাকা তুলছে না। আরও ক’দিন যাক। পুলিস ট্র্যাক করতে পারে। বিশ্বজিতের কাছ থেকে হাজার তিনেক টাকা ধার নিয়েছে। ওর কাছেই আছে, ওর হস্টেলের ঘরে। এখন ওদের পুজোর ছুটি চলছে। হোস্টেল ফাঁকা। বিশ্বজিৎ থেকে গেছে, পড়াশুনো করার জন্য। ওর সেকেন্ড ইয়ারের একটা সাপ্লি ক্লীয়ার করা বাকী। একজাম পুজোর পর কলেজ খুলেই। সবার কাছে ইন্দর আপাতত নিরুদ্দেশ, পুলিস ওর বডি পায়নি। কিন্তু খোঁজা বন্ধ করেনি। মুনিয়ার বাবা আগ্রহ নিয়ে পুলিস লাগিয়েছেন। আহা, পাড়ার ছেলে! জলে ঠাকুর ফেলার সময় মাথায় চোট লেগে ভেসে গেছে।

    ইন্দর ভাসানের রাতটা সুন্দরীদের ঝোপড়ায় ছিল। পরের দিন ভোর ভোর বেরিয়ে একটা ট্যাক্সি ধরে বিশ্বজিৎদের হোস্টেলে এসে উঠেছিল। গায়ে ধুম জ্বর। যন্ত্রণায় মাথা ভোঁ ভোঁ করছিল। পা টলছিল। তবু বেরিয়েছিল। জানত ওরা খোঁজ পেলে এবার আর জিন্দা ছাড়বে না। সুন্দরীর মায়ের শাড়ি ছিঁড়ে বাঁধা পট্টিটা রক্তে ভিজে উঠছিল। সুন্দরী সঙ্গে এসেছিল, একা ছাড়েনি। ফিরে যাবার সময় বলে গেছে মাঝে মাঝে খোঁজ নিয়ে যাবে। বিশ্বজিৎ ইন্দরকে দেখে আঁতকে উঠেছিল। লোকাল ডাক্তারের কাছে নিয়ে গিয়েছিল। বয়স্ক ডাক্তার, বেশি জিজ্ঞাসাবাদ করেননি। হোস্টেলের ছেলেদের এমন একটু আধটু চোট লেগেই থাকে।

    ইন্দর যে কেন মুনিয়ার পিছু নিয়েছে, নিজেই জানে না। কেবলই মনে হচ্ছিল ওরা মুনিয়ারও ক্ষতি করার চেষ্টা করবে। ছেলেটা মুনিয়াকে কিছু বোঝাবার চেষ্টা করছে। মুনিয়া কোনো জবাব দিচ্ছে না। ছেলেটা এবার মুনিয়ার হাত চেপে ধরল। মুনিয়া হাত ছাড়িয়ে নিতে চেষ্টা করছে, পারছে না। ইন্দর কি উঠে গিয়ে ছেলেটার গালে একটা চড় কষাবে? তাহলে অবশ্য ইন্দর যে বেঁচে আছে সেটা সবাই জেনে যাবে। যা হয় হোক, ইন্দর উঠতে যাচ্ছিল। দেখল একটা ওয়েটার ট্রের ওপর স্যুপ বোল সাজিয়ে মুনিয়াদের টেবিলের দিকে যাচ্ছে। স্যুপ দেখে ছেলেটা মুনিয়ার হাত ছেড়ে দিল। বোল টেনে নিয়ে স্যুপে নুন মরিচ ছড়াতে লাগল। মুনিয়া মাথা নিচু করে স্যুপে চামচ ঘোরাচ্ছে। ইন্দরের মনে হল এই ছেলেটার সঙ্গে বিয়ে হলে মুনিয়া বেশি দিন বাঁচবে না।


    প্তাহ খানেক পরে পাড়ায় ঢুকল ইন্দর। প্যান্ডেলের তেরপল খোলা হয়ে গেছে। কিন্তু সুহাস ডেকরেটর এখনও বাঁশগুলো খুলে নিয়ে যেতে পারেনি। সন্ধে পার হয়ে রাত নামছে। আকাশ কালো করে মেঘ জমেছে। হাওয়ায় রিম ঝিম বৃষ্টি। গলির মধ্যে ট্যাক্সি যেতে চায় না। মুনিয়ারা বিবেকানন্দ রোডের ওপর ট্যাক্সি ছেড়ে দিয়ে গলিতে ঢুকেছে আধ ঘন্টাটাক আগে। ইন্দর আরও কিছু দূর এগিয়ে ট্যাক্সি থামিয়ে নেমে পড়েছিল। গলির মুখে রামকৃষ্ণদার পান-বিড়ি-সিগারেটের গুমটি। মুখের ওপর ভাঁজ করা রুমাল চাপা দিয়ে একটা সিগারেট কিনে ধরাল। রামকৃষ্ণদা ইন্দরের দিকে না তাকিয়েই দেশলাইটা এগিয়ে দিল। এক বুক ধোঁয়া নিয়ে একটু পাশে সরে দাঁড়িয়ে ইন্দর অপেক্ষা করতে লাগল। মিনিট দশেকের মধ্যেই মুনিয়ার সঙ্গের ছেলেটা ফিরে এল। একটা সল্টলেকের মিনি ঢিকোতে ঢিকোতে সামনে দিয়ে যাচ্ছিল। সেটাকে হাত দেখিয়ে দাঁড় করিয়ে উঠে পড়ল। ছেলেটা চলে যাবার পর ইন্দর হাঁটতে হাঁটতে গলিতে ঢুকল।

    এমনিতেই স্ট্রীট লাইটগুলোর মরণদশা। কোনটা জ্বলে কোনটা জ্বলে না। তার ওপর বর্ষার রাত। রাস্তায় লোক চলাচল কম। হাতের ফোল্ডিং ছাতাটা খুলে মুখের সামনে ধরে ইন্দর এগোল। ইন্দরদের বাড়িটা সিঁড়ি দিয়ে উঠে দোতলায়। নিচের তলাটা ভাড়া দেওয়া। ভাড়াটেরা পুজোর ছুটিতে বেড়াতে গেছে। গোটা বাড়িটা অন্ধকার। দোতলায় একটা ঘরে খালি টিমটিম করে বাল্ব জ্বলছে। ওই ঘরটায় চাচা চাচী থাকে। চাচা আর্থরাইটিসে বিছানা-বন্দী। চাচীজীই খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে রান্নাবান্না, বাজারহাট, ওষুধের দোকান করে। ইন্দরের বাবা মা অনেক দিন আগেই গত হয়েছেন। বাবা গুছনো মানুষ ছিলেন। ইন্দরের পড়াশুনোর ব্যবস্থা করে গিয়েছিলেন। টাকা পয়সা যা রেখে গিয়েছিলেন তাতে ইন্দরের ইঞ্জিনিয়ারিং শেষ করতে অসুবিধে হবে না। বাকী আত্মীয়স্বজনরা কেউ কলকাতায় থাকে না, বিহার-ইউপিতে ছড়িয়ে ছিটিয়ে। তারা নিজেদের নিয়েই ব্যস্ত। ইন্দর ঘরে ফেরেনি বলে খোঁজ নেবার দ্বিতীয় লোক নেই। ইন্দর নিজের বাড়ি পেরিয়ে মুনিয়াদের বাড়ির সামনে এসে দাঁড়াল। মুনিয়া বলছিল ওদের বাড়িটা শিগগিরই রিডেভেলপমেন্টে যাবে। সাততলা ফ্ল্যাটবাড়ি বানানো হবে। প্ল্যান স্যাংশান হয়ে গেছে। ওরা তখন ওদের লেক গার্ডেন্সের ফ্ল্যাটে উঠে যাবে।

    মুনিয়াদের বাড়ির উল্টোদিকে সমাদ্দার নিবাসের রোয়াকটা হরেন পাগল আর তার কুকুর ভুলোর পার্মানেন্ট অ্যাড্রেস। বাড়ির বর্তমান মালিক দ্বিজপদ সমাদ্দার অনিচ্ছা সত্ত্বেও মেনে নিয়েছে। হরেনকে তাড়ালেও রাত্তিরে চুপিচুপি এসে শুয়ে পড়ে। হরেন শীত গ্রীষ্ম বর্ষা খালি গায়ে ঘোরে। পরিধানে কেবল থান কাপড়ের ল্যাঙট। খুব শীত পড়লে দু হাত ভাঁজ করে বুকের ওপর রেখে দৌড়ে গিয়ে মদনের চায়ের দোকানের সামনে দাঁড়ায়। মদন দুখানা লেড়ো বিস্কুট আর কুল্লাড়ে চা দেয়। হরেন আর ভুলো ভাগ করে বিস্কুট আর চা খেয়ে শীত তাড়ায়। রোয়াকের সামনে গিয়ে দাঁড়াতেই ভুলো ভুক ভুক করে ডেকে উঠল। মানুষে না চিনলেও কুকুর ঠিক চিনতে পারে। ইন্দর ভুলোর গলা চুলকে দিল। ভুলো চুপ করে গেল। হরেন একবার ইন্দরের দিকে নিস্পৃহ দৃষ্টিতে তাকাল। কিছু বলল না। ইন্দর দেখল মুনিয়াদের বাড়ির সদর দরজা খুলে একটা ছায়ামূর্তি বেরোল। ওড়নায় মাথা ঢাকা। কিন্তু ইন্দরের চিনতে অসুবিধে হল না। নিঃসাড় দ্রুত পায়ে হেঁটে গলি পেরিয়ে যাবার আগেই ইন্দর তার পিছু নিল।


    কটু এগিয়ে খারাপ পাড়া। একা একা এত রাতে কোথায় যাচ্ছে মুনিয়া? বাস থেকে নেমে হন হন করে হাঁটছে। তাল রাখা যাচ্ছে না। সর্বনাশ করেছে! ইন্দর বুঝল মুনিয়া কোথায় যাচ্ছে। বোকা মেয়ে! পুলিশের কিছু করার হলে তারা অনেক আগেই করত। লাল বাড়ির গেট দিয়ে ঢোকার ঠিক আগে ইন্দর মুনিয়ার ঘাড়ে টোকা দিল। মুনিয়া সভয়ে পিছন ফিরল। ইন্দরকে দেখে মনে হল ভূত দেখেছে। মাথা-টাথা ঘুরে ফুটপাতের ওপরই বসে পড়ল। ইন্দর সামলে নেবার জন্য খানিকটা সময় দিল মুনিয়াকে। বেশিক্ষণ দাঁড়ানো যাবে না। দু একজন পাশ দিয়ে যেতে যেতে নজর করে গেল। ইন্দর মুনিয়ার হাত ধরে তুলল।

    ‘কোথায় যাচ্ছিলি, মুনিয়া? বাড়ি ফিরে যা।’

    মুনিয়া ঘাড় নাড়ল। তার চোখ জলে থৈ থৈ করছে। সে বাড়ি ফিরবে না।

    মহা মুশকিলে পড়া গেল। বিশ্বজিতের হোস্টেলে যাওয়া যাবে না। জানাজানি হয়ে যাবে। অন্য কোনো বন্ধু-বান্ধবের বাড়ি গেলেও ধরা পড়ার সম্ভাবনা প্রবল। আজকের রাতটা সুন্দরীদের ঝোপড়ায় থেকে গেলে কেমন হয়? কাল সকালে ভেবে দেখা যাবে। ইন্দর হাত দেখিয়ে একটা পথ চলতি ট্যাক্সি দাঁড় করাল। ভাগ্যক্রমে সুন্দরীদের আস্তানা ট্যাক্সিচালকের ঘরে ফেরার রাস্তার ধারেই আসবে। ট্যাক্সি থামার আগে পর্যন্ত পুরো রাস্তাটা মুনিয়া ইন্দরের হাত জোরে চেপে ধরে বসে রইল। কোনোদিন সে আর ইন্দরের হাত ছাড়বে না।

    সুন্দরীদের ঝোপড়ার দরজাটা খোলাই ছিল। একটু ঠেলা দিতেই খুলে গেল। ভিতরে হুক-আপ করে টানা তারে একটা ঝুল পড়া বাল্ব জ্বলছে। সুন্দরী একটা থালা পেতে ছাতু মাখছিল। ওদের দুজনকে দেখে চমকে উঠল। তার চোখে মুখে একটা আতঙ্ক ফুটে উঠল। সুন্দরীর মা হাঁউমাঁউ করে কেঁদে উঠল। সুন্দরী কোনোমতে মাকে থামিয়ে দুজনকে ভিতরে টেনে এনে খাটিয়ার ওপর বসাল। ইন্দর জিজ্ঞেস করল, ‘কী হয়েছে রে?’

    সুন্দরী বলল, পুলিশ এসেছিল, সঙ্গে গুণ্ডা টাইপের জনা কয়েক। সুন্দরীর বাপকে বাইরে টেনে নিয়ে গিয়ে জিজ্ঞেস-পত্তর করেছে। দু-চারটে চড় থাপ্পড়ও কষিয়েছে। কোত্থেকে খবর পেয়েছে কে জানে? হয়তো আশপাশের লোকজন দেখে থাকবে একটা জখমী ছোকরা এক রাতের জন্যে এসে ছিল। বলে গেছে আবার আসবে। এর মধ্যে ইন্দরের খোঁজ পেলে যেন সঙ্গে সঙ্গে ফোন করে জানায়। দুটো ফোন নম্বর ছেড়ে গেছে। মুনিয়া ফোন নম্বর লেখা কাগজটা হাতে নিয়ে দেখল একটা ওদের বাড়ির ল্যান্ড-লাইন নম্বর, অন্যটা বড়ে ভাইয়ার মোবাইল। সুন্দরী বলল, ‘ওরা নিশ্চয়ই লক্ষ্য রাখছে। হামারা ইঁহা মত রোকো, ইন্দর ভাইয়া। চলে যাও, আভ্‌ভি!’

    মুনিয়া দেখল, একটা অচেনা অজানা মেয়ে তাদের নিরাপত্তার জন্য আকুলি বিকুলি করছে। আর ছোট থেকে যাদের আপন বলে জেনে এসেছে তারা কত সহজেই তাকে ছেঁটে ফেলতে রাজি। কতই বা বয়স মেয়েটার! তার থেকে বছর দুয়েকের ছোটই হবে। অভাবের মধ্যে থেকে থেকে লড়াই করা অভ্যেস করে ফেলেছে। এই মেয়েটার জন্যেই ইন্দর এখনও বেঁচে আছে। গড়নে পেটনে মুনিয়ার মতই। কিন্তু মুনিয়া কি পারত ইন্দরকে জল থেকে ডাঙায় তুলে আনতে? সে তো সাঁতারই জানে না। মুনিয়া কৃতজ্ঞতায় সুন্দরীর হাত চেপে ধরল, ‘তুমি না থাকলে যে কী হত!’

    মুনিয়া আর ইন্দরদুটো মুড়ির মোয়া আর দু-গ্লাস জল খেয়ে বেরিয়ে পড়ল। সুন্দরী মতলব দিল, নদীর পাড় ধরে খানিক দূর গিয়ে তবে রাস্তায় ওঠো। ওরা যদি কাউকে মোতায়েন করে গিয়ে থাকে তার নজর এড়িয়ে যাওয়া যাবে। সুন্দরীও সঙ্গে এল, খানিক দূর এগিয়ে দেবার জন্যে। সুন্দরীদের ঝোপড়ার পিছনে খানিকটা ঘাস জমি, ঝোপ ঝাড়, তারপর নদীর নরম মাটি। ইন্দর ভাবছিল, হাওড়া থেকে ট্রেন না নেওয়াই ভাল। হাওড়া ষ্টেশনে কেউ ওঁত পেতে বসে থাকবে না তার গ্যারান্টি কী? কোনোভাবে বাস-টাস ধরে খড়গপুর পৌঁছে সেখান থেকে করমণ্ডল ধরা বেটার। ওরা নদীর কাছাকাছি নেমে এসেছিল। হঠাৎ শুনল মাথার ওপর গলার আওয়াজ। ঘাড় ফিরিয়ে দেখল টর্চের আলো, এদিক ওদিক শিকার খুঁজছে। সুন্দরী হিস হিস করে বলল, ‘ভাগো ভাইয়া!’


    ইন্দর মুনিয়ার হাত ধরে অন্ধকার মাড়িয়ে ছুটল।


    দন্তর ভারপ্রাপ্ত অফিসার বললেন, ‘এই ঘটনার এক সপ্তাহ পর নদীর ধারে একটা মেয়ের পচা-গলা কাদামাটি মাখা লাশ পাওয়া যায়। চোখ মুখ বিকৃত, মাছে, জলজ জীবে খুবলে খেয়েছে। গলার হার, হাতের আংটি দেখে বাড়ির লোক শনাক্ত করে – মুনিয়া। পোস্ট-মর্টেম করে মাথায় আঘাতের চিহ্ন পাওয়া যায়। মিসিং কমপ্লেন ছিল, পুলিশ অ্যাক্সিডেন্টাল ডেথ রেজিস্টার করে।’

    গোয়েন্দা বিভাগের প্রধান বললেন, ‘তাহলে আর কী? সব তো চুকে বুকে গেছে।’

    তদন্তকারী অফিসারটি বয়সে নব্য যুবা। উদ্যোগী এবং বুদ্ধিমান। শুকনো হেসে বললেন, ‘মুনিয়ার বাবা, মানে রাজিন্দার সিংজী রুলিং পার্টির হয়ে বিধানসভা নির্বাচনে দাঁড়িয়েছিলেন। উনি চাননি মিডিয়া উছাল-কুঁদ করে। কেঁচো খুঁড়তে সাপ বেরোলেই ঝামেলা! সম্ভবত সেই কারণেই ফাইলটা হোল্ডে চলে যায়।’

    গোয়ান্দা প্রধান বললেন, ‘রাজিন্দার সিং ইলেকশান হেরেছিল না?’

    ‘হ্যাঁ, জামানত বাজেয়াপ্ত হতে হতে বেঁচে গিয়েছিল।’

    গোয়েন্দা প্রধান এবার একটু কিন্তু কিন্তু করে বললেন, ‘নতুন সরকার চায় সব পুরোন ফাইলগুলো বন্ধ করে দিতে। বোঝেনই তো...। তা, এই ফাইলটা বন্ধ করতে অসুবিধে কোথায়?’

    ‘স্যার, আপনাকে এতক্ষণ যা শোনালাম তা হল তদন্তর ভিত্তিতে ঘটনার রিকন্সট্রাকশান... পুনর্গঠন। এর মধ্যে কিছু ভুলচুকও থাকতে পারে।’

    গোয়েন্দা প্রধান ভাবলেন, এত ভাল গল্প বানিয়েছে, ছোকরা নিশ্চয়ই বাংলায় এমএ। কেন যে এরা পুলিশের চাকরি করতে আসে? ভুরু কুঁচকে জিজ্ঞেস করলেন, ‘মানে?’

    তদন্তকারী অফিসার বললেন, ‘যেমন, মেয়েটা মুনিয়া না হয়ে সুন্দরীও তো হতে পারে? লাশটাকে চেনার আদৌ কোনো উপায় ছিল না। নেহাত মুনিয়ার বাড়ির লোকে শনাক্ত করেছিল, তাই...।’

    ‘গলার হার, হাতের আংটি...?’

    ‘এমনও তো হতে পারে যে ইন্দরকে বাঁচিয়ে দেবার জন্য কৃতজ্ঞতাবশত ওগুলো মুনিয়া সুন্দরীকে দিয়ে এসেছিল। বিশদে বললে নিজের গলা আর হাত থেকে খুলে সুন্দরীর গলা আর হাতে পরিয়ে দিয়ে এসেছিল।’

    গোয়েন্দা প্রধান এবার ঝুঁকে বসলেন, ‘হুঁ... সুন্দরীর বাবা মাকে ইন্টারোগেট করেছিলেন?’

    ‘সুযোগ পাইনি স্যার। ওই ঘটনার পর থেকেই তারা বেপাত্তা। শুনেছি দেশে ফিরে গেছে। কিন্তু ঠিকানা দিতে পারেনি কেউ।’

    ‘ইন্দরের খোঁজ পাননি?’

    ‘পেয়েছিলাম। ইন্দর ওর চেন্নাইয়ের ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজে ফিরে গিয়েছিল। ওর নামে কোনো কমপ্লেন ছিল না, এমনকি মিসিং ডায়েরিও না।’

    ‘এখন ইন্দর কী করছে?’

    ‘ইঞ্জিনিয়ারিং পাস করে ইন্দর ব্যাঙ্গালোরে একটা সফটওয়ার কোম্পানীতে চাকরি নিয়েছে। বিয়ে-থা করে সংসার পেতেছে।’

    গোয়েন্দা প্রধান বললেন, ‘ইন্টারেস্টিং, ইন্দর বিয়ে করেছে... ওয়াইফের নাম জানেন?’

    তদন্তকারী অফিসার বললেন, ‘স্যার আমি ব্যাঙ্গালোর গিয়েছিলাম। লোকাল ম্যারেজ রেজিস্ট্রারের অফিসে গিয়ে ওদের বিয়ের রেজিস্ট্রেশান সার্টিফিকেট চেক করেছি। ইন্দরের বৌয়ের নাম সুন্দরী... সুন্দরী মুর্মু...।’

    গোয়েন্দা প্রধান বাধা দিয়ে বললেন, ‘এক মিনিট, তাহলে আর সন্দেহের অবকাশ কোথায়?’

    তদন্তকারী অফিসার বললেন, ‘ফাইলে সুন্দরীর ছবি নেই। পুলিস সুন্দরীর ফটো তুলে রাখার কথা ভাবেনি। আমার কাছে মুনিয়ার একটা প্রোফাইল ছবি ছিল। বিয়ের পর মেয়েদের চেহারায় একটা পরিবর্তন আসে। তার ওপর শহর বদলালে সাজ-পোষাক, হেয়ারকাট, রঙ-ঢং সবই বদলায়। কলকাতার সালোয়ার কামিজ ব্যাঙ্গালোরে গিয়ে জিনস টি-শার্ট পরে। হলপ করে বলতে পারব না মুনিয়াই কিনা। একদিন ফলো করে গিয়ে দেখলাম, ইন্দরের বৌ একটা সুইমিং ক্লাবে গিয়ে সাঁতারের কোচিং নিচ্ছে। যে মেয়ে ইন্দরকে জল থেকে টেনে পাড়ে তুলেছিল সে সাঁতার শিখছে... ব্যাপারটা আশ্চর্য না?’

    গোয়েন্দা দপ্তরের প্রধান অনেকক্ষণ চুপ করে বসে রইলেন। মৃত মেয়েটির কথা ভেবে তাঁর মন খারাপ হয়ে গেল। খোলা জানলার দিকে তাকিয়ে নিজের মনে বললেন, ‘মিছিমিছি একটা জীবন নষ্ট হল।’

    তদন্তকারী অফিসারটি জিজ্ঞেস করলেন, ‘আমায় কিছু বললেন স্যার?’

    গোয়েন্দা প্রধান সম্বিৎ ফিরে পেলেন। গম্ভীর গলায় বললেন, ‘দেখুন, আমি এতে আশ্চর্যর কিছু দেখছি না। মেয়েটা ভালো সাঁতার কাটত... হয়তো কোনো স্পেশাল ট্রেনিং নেবার জন্য কোচিং নিচ্ছিল। আপনার বোঝার ভুল হয়েছে। আপনি বরং ফাইলটা বন্ধই করে দিন। দরকার হলে আমার সই নিয়ে নেবেন।’

    তদন্তকারী অফিসার একটু বোধ হয় মনঃক্ষুণ্ণ হলেন। বললেন, ‘আপনি যা বলবেন... স্যার...।’



    অলংকরণ (Artwork) : অলংকরণ: রাহুল মজুমদার
  • এই লেখাটি পুরোনো ফরম্যাটে দেখুন
  • মন্তব্য জমা দিন / Make a comment
  • (?)
  • মন্তব্য পড়ুন / Read comments