সকাল আটটা বাজছে, এইবার দু'নম্বর বাস আসার সময় হলো। রোজকার মতো নিজের চায়ের দোকানে নড়েচড়ে বসে সত্যেন। এমনিতে এই বাসটায় লোক বেশি হয় না, এলেও এই শীতের সকালে বাস থেকে নেমেই সবাই জোরকদমে হাঁটা লাগায় যে যার নিজের কাজের ধান্দায়। বাসে ওঠার আগেই লোকে চা-টা খেয়ে গা গরম করে বাসে ওঠে, নামার পরে আর চায়ের দোকান খোঁজার সময় কই? তখন তো কেবল 'পা চালা পা চালা' রব সবার শরীরে। এর চেয়ে ভোর ছ'টায় এখান থেকে যে বাসটা ছাড়ে, সেটা থেকে অনেক বেশি প্যাসেঞ্জার পায় সত্যেন, ওর চায়ের দোকানের খদ্দের হিসেবে। ভোর ভোর দশ-বিশ টাকা বউনি হয়, সত্যেন, আর ওর দোকানের পাশে লোটাকম্বল বউ-বাচ্চা নিয়ে সংসার গুছিয়ে বসা মুনির বাপ, দুজনেরই।
অবশ্য, মুনির বাপ তখন বউনির টাকা গোনার অবস্থায় থাকে না। আগের রাতের নেশার খোয়ারি কাটেনি তখনও। কোনও কোনও রাতে আবার তাকে গ্রাস করে নারীদেহের নেশা, সে দেহ তার ধরমপত্নী মোতির, যে মোতি সারাদিন ধরে এই বাসস্ট্যান্ড চত্বরের যত ভ্যাট ঘেঁটে খাবার খুঁজে বেড়ায়, এলাকার কুকুরগুলো যাকে দেখলেই তেড়ে আসে দাঁত খিঁচিয়ে। খাবারের ভাগীদার কিনা! মোতির সারা গায়ে চিটধরা ময়লা। তবে গায়ে খোসপাঁচড়া থাকুক, আর মাথার জটে উকুনই বাসা বাঁধুক, মেয়েছেলে তো বটে! তার কাছে কোথায় লাগে তরল গরল! তেষ্টা মিটে গেলে অবশ্য নেশা চড়ার জন্য দুজনে দুজনকে তেড়ে গালাগাল দেয়, আবার ওই গালাগালই সম্ভবত গিঁটটাকে আরও পোক্ত করে। নইলে আলেকালে কোনও রস উথলানো ছেলেছোকরার দল মুনির মাকে কোলেরটাকে দুধ খাওয়াতে দেখে দুয়েকটা বেফাঁস ডায়লগ ছুঁড়ে দিলে মুনির বাপ তাদের তেড়ে মারতে ছোটে কেন? ওই হঠাৎ চড়ে যাওয়া নেশারই ফসল হলো মুনি, তার বোন চুনি আর ছেঁড়া কাঁথায় শুয়ে না জানি কিসের স্বপ্ন দেখা কচি ছেলে ছোটকা। কি ভাগ্যে তিনটেরই মুখে বাপের মুখ কেটে বসানো, তাই মুনির মায়ের চরিত্রে কোনওরকম প্রশ্নের দাগ পড়ার সম্ভাবনা থাকে না।
মুনির এখন বছর সাতেক বয়স, চুনি চারের ঘরে, ছোটকা তো একেবারে গুঁড়ো। এই তিনটেকে সারাদিন সামলে রেখে পেট ভরানোর জোগাড় করা কি চাট্টিখানি কথা! ভাত দেওয়ার কথা যার, সে তো একদিন লোকের পায়খানা পরিষ্কার করে দু'পয়সা হাতে পেলেই মাল গিলে বেহুঁশ হয়ে পড়ে থাকে, পরের দু'তিনদিন লাথ মেরে রাস্তায় নামালেও কাজ ধরতে যায় না। সব হয়রানি মোতিকেই পোহাতে হয়। মুনির মায়ের একেকদিন রাতে ঘুম ধরতে ধরতেই পুব আকাশে রং লেগে যায়। তাই ছ'টার বাস এসে দাঁড়ানোর আওয়াজ পেলে মুনিটাকেই ঠেলে উঠিয়ে সত্যেনের দোকানে পাঠিয়ে দেয়। সত্যেন লোক ভালো, মোতি বা মুনি মাঝেসাঝে গিয়ে দাঁড়ালে নগদ না দিতে পারুক বাসী টোকো পাঁউরুটি দেয়, দোকানের খদ্দেরদের কাছে গিয়ে হাত পাতলে অন্য দোকানীদের মতো কুকুর-খেদানো করে তাড়ায় না, তাই বা কম কিসে? সবচেয়ে বড় কথা, আজ অ্যাদ্দিন হল সত্যেনের দোকানের পড়শি হয়ে আছে, কেউ বলবে না সত্যেন কোনওদিন মোতির বুকের দিকে তাকিয়েছে। উল্টে মুনির বাপ হুঁশে থাকলে ইদানীং তাকে সাবধান করে মেয়েটাকে নিয়ে। যদিও চার বছর মোটে বয়েস, ওর কিই বা আছে সাবধান হওয়ার মতো, তবুও দিনকাল নাকি ভালো নয়, সত্যেন পইপই করে মুনির বাপকে বলেছে চুনিকে যেন ওর মা কাছছাড়া না করে।
সব দেখেশুনে মানুষটাকে মোতির খারাপ লাগে না। ও চেয়েছিল ব'লেকয়ে মুনিটাকে সত্যেনের দোকানে ঢুকিয়ে দিতে। কিন্তু মুনির বাপের কাজের ঝকমারিটাই কাল হলো, লোকের গু-মুত ঘাঁটে লোকটা, রাস্তার ধারের নোংরা ভ্যাট পরিষ্কার করে, তার ছেলেকে কি ব'লে সত্যেন নিজের দোকানে কাজ দেয়? খদ্দেরদের জাতধর্ম খুইয়ে শেষে কি নরকে যাবে সে? তাই মুনির বাপের সঙ্গে তার রফা হয়েছিল, সকাল থেকে রাত অব্দি তার দোকানে মুনি ভিক্ষে করতে পারবে, কেবল তার উনুন বাসনকোসন ছুঁয়ে না দিলেই হলো।
তাই-ই সই। মুনির বাপ মা এতেই আহ্লাদে আটখানা। মুনিকে ছোট ছেলে পেয়ে অনেক খদ্দের আবার হাতে নগদ দেয় না, লেড়ো বিস্কুট একখানা, কি একখানা খটখটে কেক কিনে হাতে ধরায়। মুনির বাপ তা দেখে খিস্তি করে বটে, মোতির কিন্তু বেশ লাগে। আহা, কচি ছেলে, দিনভর দোকানের পাশটায় ঠায় দাঁড়িয়ে দেখে, লোকে এসে গরম চায়ে বিস্কুট ডুবিয়ে তারিয়ে তারিয়ে খাচ্ছে, চা শেষ হয়ে গেলে ভাঁড়টা ছুঁড়ে ফেলে ঠোঁটের ওপর লেগে থাকা বিস্কুটের গুঁড়ো আর চায়ের সরটা মুছে ফেলে পয়সা মিটিয়ে বাস ধরতে দৌড়ুচ্ছে, মুনিটার বুঝি লোভ লাগে না অমন করে চা বিস্কুট খেতে? মোতিরই মাঝেমাঝে জিভে জল চলে আসে, সুড়ুৎ করে জল গিলে নিয়ে কোনওমতে সামলায়, আর ও তো কচি ছেলে একটা! মোতি মনে মনে বিস্কুট কেক খাওয়ানো খদ্দেরদের দুহাত তুলে আশীর্বাদ করে, ওর আশীর্বাদ আদৌ কারও কাজে লাগে কিনা জানা নেই অবশ্য, অত কথা ভাবার মতো মনও নেই তার।
আটটার বাসটা এসে স্ট্যাণ্ডে দাঁড়াতেই চার পাঁচটা ছেলেমেয়ের দলটাকে বাস থেকে নামতে দেখল সত্যেন। গত কয়েকদিন ধরেই দেখছে, বাসস্ট্যান্ড চত্বরে ঘুরঘুর করছে ছেলেমেয়েগুলো, কোনওদিন দলবেঁধে, কোনওদিন জোড়ায় জোড়ায়। কিন্তু এরা ঠিক আর পাঁচটা জোড়ার মতো নয়, টিউশনি কেটে প্রেম করতে আসা ধরনের লাগে না ঠিক এদের। পরশু এসে এরা মুনির সঙ্গে অনেকক্ষণ আলাপ ঝালাচ্ছিল, দোকানে কাজ করতে করতে কান খাড়া করে শুনছিল সত্যেন। মুনিরা ক'ভাইবোন, বাপ মা কি করে, কোথায় বাড়ি, বাড়িতে কে কে আছে, ইস্কুলে পড়ে কিনা, এইসব মামুলি প্রশ্ন। 'বাড়ি কোথায়' শুনে সত্যেন আর মুনি দুজনেই হেসে ফেলেছিল। শালা হাঘরের বাচ্চা, বাপের জম্মে ভেবেছে কখনও, কেউ শুধোবে, "বাড়ি কোথায়?" আর ইস্কুলে পড়ার কথা শুনে তো ছেলেটা ভিরমি খাওয়ার জোগাড়! শেষটায় সত্যেনই গলা খাঁকারি দিয়ে ছেলেমেয়েগুলোকে কাছে ডাকে।
"ছেলেটাকে নিয়ে শুধুমুধু মস্করা করছেন কেন দাদাভাই? ওকে দেখে মনে হচ্ছে ও ইস্কুলে যায়?"
"না, মানে, আমরা একটা সার্ভে করছিলাম দাদা, এই চত্বরে এর মতো বাচ্চা ক'টা আছে বলতে পারবেন?"
"না, পারব না, পারলেও বলব না। বাপের পয়সায় শখের সমাজসেবা করতে নেমেছেন তো? আমার কাছে হিসেব নিয়ে আমাকেই বলবেন এন্ডিগেন্ডিগুলোকে জুটিয়ে আনতে, তারপর একদিন বিরিয়ানি খাইয়ে হাওয়া হয়ে যাবেন, হতচ্ছাড়াগুলো সম্বচ্ছর আমায় জ্বালিয়ে খাবে! জানা আছে সব ইয়ের বাচ্ছাদের, কিচ্ছু পারব না, যান, ভাগুন এখান থেকে।"
সত্যেনের আগুনে মেজাজ দেখে দলটা ধীরে ধীরে চলে গিয়েছিল। মুনি তার জ্ঞানে চায়ে
দাদাকে এমন রাগতে দেখেনি, সেও খানিকক্ষণ হতভম্ব হয়ে থেকে আবার নিজের কাজে মন দিয়েছিল।
দলটাকে আজ আবার হাজির হতে দেখে সত্যেনের মনটা তেতো হয়ে গেল। আজ সকাল সকাল খিস্তাখিস্তি হয়ে যাবে মনে হচ্ছে। আরে! ছেলেমেয়েগুলোর হাতে ওগুলো কি? এক বাণ্ডিল খাতা বই কিসব বয়ে আনছে না? একজনের হাতে আবার কালো চৌকোনা মতো কি একটা রয়েছে। চেনা লাগে জিনিসটা। ভালো করে দেখে সত্যেন চিনতে পারে, ইস্কুলে টাঙানো থাকে যে ব্ল্যাকবোর্ড, সেইরকমই একটা জিনিস, সাইজে ছোট।
"ওইপাশের গলিটা থেকে আরও চারটে বাচ্চাকে ধরে আনছে দেখছি, কি হুজ্জোতি বাধাবে কে জানে!" মনে মনে বড্ড বিরক্ত হয় সত্যেন। তবুও কৌতূহল বড় বেয়াড়া বালাই, দেখব না দেখব না করেও সত্যেন তার চায়ের দোকান থেকে গলা বাড়িয়ে ছেলেমেয়েগুলোর কাণ্ডকারখানা দেখতে থাকে।
ওদিকে ছেলেমেয়েগুলো ততক্ষণে ফুটপাতের একদিকে একটু ঝাঁটপাট দিয়ে শুকনো পাতাগুলো জড়ো করে একধারে সরিয়ে খানিকটা জায়গা পরিষ্কার করে ফেলেছে। মুনিদের পলিথিন ঘেরা ঝোপড়ির পাশেই জায়গাটা, ঝোপড়ির মধ্যে থেকে গুটিগুটি পায়ে চুনি আর হামাগুড়ি দেওয়া ছোটকা বেরিয়ে এসে রগড়টা দেখতে থাকে। মুনির মা গিয়েছিল বড়রাস্তা পেরিয়ে একটা গুমটির আড়ালে নর্দমার ধারে, সকালের কাজ সারতে, দোকানটা বেলা এগারোটার আগে খোলে না, তাই সকাল সকাল কাজ সেরে আসতে সুবিধে হয়। সেও এসে এসব হট্টগোল দেখে থমকে যায়। মুনিকে ঠেলে সত্যেনের দোকানে পাঠানোর জন্য হাঁকড়ানি দেবে বলেও মুখ খোলা হয় না আর।
ওদের ঝোপড়ির পাশ দিয়ে হাঁটতে হলে যারা নাকে রুমাল চেপে ছাড়া হাঁটতে পারে না, তাদের মতোই কয়েকটা ছেলে আর মেয়ে ওদের ঝোপড়ির পাশে ফুটপাতে চটের বস্তা পাতছে, কালোমতো কি একটা দামড়া জিনিস কাঠের ঠেকনো দিয়ে দাঁড় করিয়ে রাখছে, তাতে আবার খড়ি দিয়ে ঢপের চপ চাট্টি লিখছেও, ওর হতকুচ্ছিত ভিখিরী ছেলে মুনি, রেলগেট বস্তির চোরেদের বাচ্চা কালুয়া লালুয়া লছমিদের হাত ধরে এনে বস্তার ওপরে বসিয়ে দিচ্ছে, তাদের হাতে নতুন বই ধরাচ্ছে, এসব দেখে মোতির মুখে মাছি ঢোকার মতো হাঁ হয়ে যায়। ওই অত্ত বই, আহা, মোতিকে দিলে মোতি কতগুলো ঠোঙা বানাতে পারতো! ভাবতে ভাবতে কৌতূহলের ঝোঁকেই সে পায়ে পায়ে এগিয়ে গিয়ে মুনির পাশে দাঁড়ায়। মুনির হাতের বইয়ে সে যে কতরকমের ছবি, মোতি বাপের জম্মে ও জিনিস দেখেনি। আর কি চকচকে ছবি! পাতায় পাতায় টসটসে আম, থোকাথোকা আঙুর, পাকা কলা, লাল বাদাম ছড়ানো কেক, আর, ভাবলেও গা কেমন করে মোতির, শেষের দিকে একটা পাতায় একথালা গরম ভাতের ছবি।
"হেই দিদি, এই বইগুলান কাছে রাখলে ভাত পাবো মোরা? এই এমন একথালা গরম ভাত?" উত্তেজনায় কাছে দাঁড়ানো পাতলা মতো মেয়েটাকে জিজ্ঞেস করেই ফেলে মোতি। মেয়েটা উত্তরে কি বলে কানে ঢোকে না, তার মনে ততক্ষণে নেশা ছড়িয়েছে ওই ধোঁয়াওঠা গরম ভাতের থালার ছবিটা। সেই থালাটাকে ঘিরে গোল হয়ে বসে আছে তার মুনি চুনি ছোটকা, সে এক এক গরাস করে খাইয়ে দিচ্ছে ছেলেমেয়েদের, নিজেও টুকটুক মুখ চালাচ্ছে, মুনির বাপও হাত লাগাচ্ছে, তবুও থালার ভাত ফুরোচ্ছে না, সাদা ফুরফুরে ভাতের যেন বান ডেকেছে থালার ওপর।
পাশ থেকে মুনির ঠেলায় মোতির চটকা ভাঙল। ছেলে বইটা চাইছে। বইটা দিয়ে মুনির পাশেই বসে পড়ল ওর মা, ততক্ষণে কোলে এসে জুটেছে চুনি আর ছোটকা। তিন ছেলেমেয়েকে ছুঁয়ে থেকে মোতি দেখতে থাকে বই নিয়ে আসা মেয়েগুলোর কাণ্ডকারখানা। কাঠের দামড়া দেওয়ালের মতো জিনিসটাকে খাড়া করে রেখেছে, সেখানে ঘ্যাসঘ্যাস করে কি যেন লিখছে, সুর করে গলা উঁচিয়ে কি জানি বলছে, কখনও বা ছবি আঁকছে, এই যেমন এখন আঁকছে বাড়ির ছবি। ছবিটা দেখতেই মোতির মনে উঁকি দিয়ে যায় বানে ভেসে যাওয়ার আগে তাদের চালাঘরটার ছবি, সাতসকালে গোবরজলে নিকোনো উঠোন, দাওয়ায় উপুড় করে রাখা বাসনকোসন, সব দেখতে পায় মোতি। এক্কেবারে সত্যির মতো লাগে যেন!
এভাবেই চলতে থাকে মুনি -চুনি -লালুয়া -কালুয়ার সাক্ষর হওয়ার ওয়ার্কশপ, সেইসঙ্গে চলতে থাকে মুনির মায়ের সিনেমা দেখার মহোৎসব। আস্তাকুঁড় ঘেঁটে খাবার জোগাড় করা মেয়েমানুষ মোতি সাতসকালে ফুটপাতের ইস্কুলে বসে ব্ল্যাকবোর্ডে আঁকা টিনের চালার ঘর, গাছপাকা আম, ফুলগাছের টবের ছবিগুলো ভারি মন দিয়ে দেখতে থাকে। ছবিগুলোর হাত ধরে সার বেঁধে তার সামনে আসতে থাকে তার ফেলে আসা হাঁড়িকুড়িজড়ানো সংসার, সন্ধের আলোজ্বলা তুলসীমঞ্চ, পৌষের ভোরে নদীতে ডুব দিয়ে সূর্যপ্রণামের অভ্যেস, একটার পর একটা ছবি। শীতসকালের ঝিমধরা রোদ গায়ে মেখে সে দেখতে থাকে হেঁটে যাওয়া ছবিদের, রোদ্দুরে সেঁকা কল্পনায় ডানা মেলে এক আশ্চর্য চলচ্চিত্র। সেখানে আস্তাকুঁড়ে খাবার খোঁজার যুদ্ধে প্রতিদ্বন্দ্বী কুকুর নেই, চায়ের দোকানের পাশে দাঁড়িয়ে হাত পাতা নেই, ছেলেমেয়েদের মুখে খাবার তুলে দেওয়ার দায় নেই, আছে কেবল অপার শান্তি আর স্বপ্নমাখা অতীত, যে অতীত ভেসে গেছে বন্যায়, চাপা পড়ে রয়েছে মোতির স্মৃতি বিস্মৃতির গহীনে।
সেই অতীতকে কোঁচড়ে বেঁধে রাখবে বলে মোতি একটা কাণ্ড করে বসে। পেটকাপড়ে লুকিয়ে একখানা ছবির বই নিয়ে ঢুকে পড়ে ঝোপড়ির ভেতরে। জীবনে প্রথমবার চুরি করলো, ধরা পড়ার ভয়ে বুক দুরদুর করে ঠিকই, কিন্তু ওই যে, থালার ধোঁয়া ওঠা ভাত, পাকা টসটসে আম, উনুনের ধোঁয়ায় ঝাপসা হয়ে আসা চালাঘর, বইয়ের মধ্যে থেকে তাকে ডাকছিল! তাদের ডাক এড়াতে পারে, এমন সাধ্য কী? কুকুরে মানুষে তফাৎ ভুলতে বসা মোতির হাতের কাছে আজ পৌঁছে গেছে বিনোদনের এক নতুন মাধ্যম! এবার থেকে ইচ্ছে হলেই সে মুখ গুঁজে দেবে রঙিন ছবিওয়ালা বইটার পাতায় পাতায়, ব্যস, এক চুটকিতে সামনে হাজির হবে সুখস্বপ্নের চলচ্চিত্রেরা।