নতুন এলাকায় আমরা উঠে আসার কয়েকদিনের মধ্যেই আমি লক্ষ করি আমাদের বাসার ঠিক সামনে, অন্যপাশের পার্কটির এক নির্জন বেঞ্চে একজন বৃদ্ধ লোক বসে থাকেন। বসে কাজ করতে থাকলে প্রায় ঘন্টাখানেক পরে পরেই ঘড়ি একটা সংকেত দিত, অনেকক্ষণ বসা হয়ে গেছে, এইবার একটু হেঁটে আসুন। সেই সংকেতকে সম্মান দিতে, এবং প্রতিদিনের আট হাজার স্টেপ হাঁটার লক্ষ্যকে সামনে রেখে আমি দিনে কয়েকবার বের হতাম হাঁটতে। পার্কটি দুই চক্কর দিয়ে আবার ফিরে আসতাম।
যতবার হাঁটতে গিয়েছি, ততবার লোকটাকে ঠিক একই জায়গায় বসে থাকতে দেখেছি। তাঁর শাদা লম্বা চুল ঘাড় পর্যন্ত, বেশভূষা পরিষ্কার। মাথায় হ্যাট, পরনে থাকত ধূসর রঙের এক কোট, এবং শাদা শার্ট, কালো প্যান্ট। তাঁর জুতার রং ছিল চোখে লাগার মত লাল। তাঁকে দেখতাম পত্রিকা পড়ছেন, বা কোন বই পড়ছেন আর সিগার খাচ্ছেন। হঠাৎ হঠাৎ তিনি উঠে গিয়ে রাস্তার পাশের ক্যাফে থেকে নিয়ে আসতেন কফি।
তাঁকে দেখে আমার একটা আগ্রহ জন্মাল। আমার ধারণা হয়েছিল, তিনি একজন নিঃসঙ্গ মানুষ। তাঁর প্রতিদিনের এইভাবে বসে থাকা ও পড়া দেখে মনে হচ্ছে, তিনি ঠিকঠাক নিয়ম মেনে চলা লোক, এবং জ্ঞানী। এরকম লোকজনই আমার ভালো লাগে, এদের কাছ থেকে অনেক কিছু শেখা যায়।
আমি একদিন তাঁর সাথে পরিচিত হতে গেলাম। নাম জিজ্ঞেস করলে তিনি বললেন তাঁর নাম ঈশ্বর।
আমি বললাম, আমি এখানে নতুন এসেছি, আমি ও আমার স্ত্রী। এই পার্কের অন্যপাশের বাসাটাতে থাকি। আপনাকে প্রায়ই এখানে বসে থাকতে দেখি তাই ভাবলাম পরিচিত হই। আপনি কি প্রতিদিনই এখানে আসেন?
তিনি বললেন, হ্যাঁ, প্রতিদিনই আসি।
আমি কথা জমাতে তাঁর পাশে বসতে বসতে বললাম, আমি একটা হেজ ফান্ডে কোয়ান্ট হিশেবে কাজ করছি। আপনি নিশ্চয়ই রিটায়ার্ড?
তিনি বললেন, হ্যাঁ, ত্রিশ বছর আগে কাজ ছেড়েছি।
আমার আগ্রহ জন্মাল জানতে কাজটা কী। জিজ্ঞেস করলাম, কিছু মনে না করলে, জানতে পারি কি আপনি কী কাজ করতেন?
তিনি বললেন, তেমন কিছু না।
অর্থাৎ তিনি বলতে চাইছেন না। ফলে আমি আর জিজ্ঞেস করলাম না, সেটা অভদ্র দেখাবে। আরো কিছুক্ষণ পার্ক ও এলাকা বিষয়ে দু’-চারটা কথা বলে সেদিন চলে আসলাম। কিন্তু আমার মনে আগ্রহটা বাড়তেই থাকল, লোকটা কেন বললেন না তিনি কী কাজ করতেন। হয়ত এখানে কোন রহস্য আছে, এটা আমাকে জানতেই হবে।
হাঁটতে বের হলে প্রতিদিনই তাঁর সাথে কিছুক্ষণ আলাপ আলোচনা করে আসতাম। তিনি হাসিমুখে আমার সাথে কথা বলতেন। আমার মনে হতে লাগল তিনি আমার এ সঙ্গ পছন্দ করছেন। তাঁর পরিবার বলতে কেউ নেই। একা একাই থাকেন। প্রতিদিন সকালে ঘুম থেকে উঠে এখানে পার্কে এসে বসে থাকেন। পত্রিকা পড়েন, যে বইটা সাথে নিয়ে আসেন ওইটা পড়েন। চিন্তা করেন। বাসায় ফিরে যান সন্ধ্যাবেলায়। দিনে তিনি কফি ছাড়া আর কিছুই খান না সাধারণত।
আমি তাঁকে একবার জিজ্ঞেস করলাম, এই যে সারাদিন শুধু বসেই থাকেন, এতে কি আপনি বিরক্ত হন না?
তিনি বললেন, না। বিরক্ত কেন হব, এটা তো ভালোই।
আমাদের আলাপ আলোচনা নিয়মিত হবার প্রায় মাস খানেক পরে আমি আবার তাঁকে জিজ্ঞেস করলাম তাঁর কাজটা কী ছিল সেই বিষয়ে। তিনি হেসে বললেন, আমি খেয়াল করেছি শুরু থেকেই এ ব্যাপারে তোমার আগ্রহ। দিনে দিনে তোমার আগ্রহটা বেড়েছে।
উল্লেখ্য, ইতিমধ্যে তিনি আমাকে তুমি করে বলা শুরু করেছেন। আমিই তাঁকে অনুরোধ করেছিলাম।
তিনি বললেন, আমি ত্রিশ বছর আগে, পেশায় ছিলাম এক জাদুকর।
আমি হাসিমুখে বললাম, এটা তখন বললেন না কেন? নাকি আমার ভেতরে আগ্রহ জন্মাতে চাইলেন?
তিনি বললেন, হয়ত, কিন্তু একটা ব্যাপার আছে এখানে। তুমি যেরকম ভাবছো, খেলা দেখানোর ম্যাজিশিয়ান, এরকম না। আমি ছিলাম সত্যিকারের জাদুকর।
আমি বললাম, সত্যিকারের বলতে একেবারে আদি ও অকৃত্রিম জাদুর কথা বলছেন? মানে সত্যি সত্যি আপনি মানুষ অদৃশ্য করে দিতে পারেন ইত্যাদি?
তিনি বললেন, হ্যাঁ। কোন খেলা না, চালাকি না, সত্যিকারের জাদু।
আমি হাসলাম, বললাম, বিজ্ঞান, যুক্তি ও গণিত আমার নিত্যদিনের সঙ্গী। আমাকে অন্তত আপনি এটা বিশ্বাস করাতে পারবেন না। সত্যিকারের জাদু বলে কিছু হয় না। কিন্তু আমি এটা মানি যে, ভালো ম্যাজিক কৌশল একটা চমৎকার আর্ট হতে পারে।
তিনি বললেন, তা তো খেলার শিল্প। কিন্তু আমি যেটা বলছি, সেটা শিল্পের ঊর্ধ্বে। সত্যিকারের জাদু।
আমি তাঁর চোখের দিকে তাকালাম তখন, তাঁর ঘোলাটে চোখদুটি জ্বলজ্বল করছে। তিনি সিরিয়াস ভঙ্গিতেই কথা বলছেন। এই প্রথমবারের মত লোকটাকে আমার কিছুটা অস্বাভাবিক লাগল। আমার স্ত্রী মিনা আমাকে বার বার নিষেধ করেছে, এভাবে অপরিচিত এই বৃদ্ধ লোকের সাথে খাতির জমানো তার পছন্দের না। লোকটার চোখ দুটি দেখে আমার মিনার কথাগুলি মনে হলো।
আমি বললাম, ঠিক আছে, আমি আপনার কথা বিশ্বাস করব যদি কোন একটা জাদু আমাকে দেখাতে পারেন। এই সামনের গাছটাকে অদৃশ্য করে দেখান তো।
তিনি হাসলেন, তোমাকে তো বলেছি যে আমি ত্রিশ বছর আগেই সব ছেড়ে দিয়েছি।
আমি বললাম, এটা কিন্তু আপনার চালাকি। আপনি সত্যিকার জাদুকর হলে অবশ্যই এই গাছকে নিমেষে অদৃশ্য করে ফেলতেন।
তিনি হাসলেন। কিছু আর বললেন না। আমি তাঁকে তখন বলতে থাকলাম জাদুবিদ্যার ইতিহাস সম্পর্কে। এই বিষয়ে আমার জ্ঞান যে একেবারে কম না তা তাঁকে জানিয়ে দেয়া উচিত বলে মনে হলো। গাইড ফর দা পারপ্লেক্সড থেকে শুরু করে এগ্রিপ্পার অকাল্ট, যা যা জানতাম সব সারমর্মে বিবৃত করলাম। তিনি হাসিমুখেই শুনলেন, কোন বিতর্ক করলেন না।
আমি কাজ শেষ করে প্রতিদিন দুই ঘণ্টা ঘুমাই। ঘুম থেকে সেদিন উঠলাম সন্ধ্যা নয়টায়। কফি নিয়ে বসেছি টেবিলে, এবং দিনের ওই কথাবার্তার রেশ ধরে একটু জাদুবিদ্যার বইগুলি আবার পড়তে ইচ্ছা হচ্ছিল। বুকশেলফ-এর এক কোনা থেকে বের করে আনলাম শামস আল মা'রিফ। বইটা খুলে আমি রীতিমত চমকে গেলাম। আমি মাঝের একটা পাতা খুলেছিলাম, দেখলাম সেখানে একটা শাদা কাগজে লেখা, এটাই আমার জাদু। এবার কি বিশ্বাস হলো? নিচে আজকের তারিখ দেয়া।
প্রাথমিক ভাবে আমার মাথা কাজ করছিল না। এখানে কী হলো, এই কাগজ তো আমি এখানে রাখার প্রশ্নই আসে না। আমি লজিক্যালি ভাবার চেষ্টা করলাম। এই কাগজ এখানে এসেছে মানে নিশ্চয়ই কেউ একজন রেখে গেছে। বাসায় আমি ও আমার স্ত্রী, দুইজন থাকি। তাহলে এই কাজ আমার স্ত্রীই করেছে, আর কারো পক্ষে করা সম্ভব না।
আমি আমার স্ত্রীকে কাঁপা কাঁপা গলায় ডাকতে ডাকতে গেলাম বসার ঘরে। সে কার সাথে জানি মোবাইলে কথা বলছিল। আমি জিজ্ঞেস করলাম, তুমি এই বইয়ে কোন কাগজ রেখেছ?
মিনা আমার কথায় বিরক্ত হলো। বলল, আমি কেন কাগজ রাখতে যাব? তোমার বুকশেলফে আমি হাতই দিইনি।
আমি তার হাতে কাগজখানা ধরিয়ে দিয়ে বললাম, এই কাগজ তুমি রাখনি?
সে কাগজ একবার হাতে নিল, দেখল, ও বলল, ধুর! আমি এটা কেন রাখতে যাব? যাও তো, আমাকে কথা বলতে দাও।
আমি আমার কক্ষে ফিরে আসলাম। আবার চিন্তা করতে বসলাম ঠাণ্ডা মাথায়। মিনা কখনো আমার সাথে মিথ্যা বলে না। সে সত্যি বলেছে তা আমি বুঝতে পারছি। আর যদি রেখেও থাকে, তাহলে, এই বই যে আমি নেব তা সে কীভাবে জানবে? তখন তাকে সব বইতে রাখতে হবে। যদি ওই লোকটার সাথে তার পরিচয় থাকে, এবং কোন প্র্যাংক করার জন্য করে থাকে, তাহলে, ওই লোকটা তাকে বলতে পারে, ম্যাজিকের বইগুলাতে রাখতে। কারণ, যেহেতু ম্যাজিক নিয়ে আজ কথা হয়েছে তাহলে আমি ম্যাজিকের বই খুলতে পারি, এটা একটা ভালো অনুমান। আমি তৎক্ষণাৎ লাফিয়ে উঠে আমার বুকশেলফে থাকা ম্যাজিকের বইগুলা বের করতে লাগলাম। ওয়ে অব হার্মিস, নস্টিক স্ক্রিপচারস, ন্যাক্রোমানচার'স ম্যানুয়াল, পিকাট্রিক্স ইত্যাদি যা যা ছিল, সব খুলে দেখলাম। কোনটাতে কোন কাগজ পেলাম না। তাহলে কীভাবে যে কাগজটি রেখেছে সে জানতে পারল আমি শামস আল মা'রিফই খুলব!
আমার মাথা কাজ করছিল না। রীতিমত মাথার চুল ধরে টানছি এমন অবস্থায় আমার চোখ গেল আমার টেবিলের ড্রয়ারের দিকে। এটা বিশেষ ভাবে বানানো, ইন্টারনেটের সাথে কানেক্টেড এবং কেবলমাত্র আমার ফিঙ্গারপ্রিন্টেই খোলে। এখানে আমি কিছু দরকারি জিনিশ, বিটকয়েন কোল্ড ওয়ালেট রাখি। আমার মনে হতে লাগল, এটার ভেতরে কিছু একটা ঘটছে, কেমন যেন ফুঁস ফুঁস শব্দ আসছে ভেতর থেকে। আমি ফিঙ্গারপ্রিন্ট দিয়ে ড্রয়ার খুললাম। খুলে দেখলাম খুব ছোট চারকোনা একটা আয়না সেখানে। আয়নাতে স্ক্রিনের মত লেখা ভেসে উঠল, স্ত্রীকে জ্বালাতন কোরো না। সে রাখে নাই। তুমি সত্যিকার জাদু দেখতে চেয়েছিলে, তাই দেখালাম।
আমার মাথা দিয়ে তখন যেন ধোঁয়া বের হচ্ছিল। কী করব বুঝতে পারছিলাম না। মিনাকে কিছু বলব না ঠিক করলাম। হয়ত প্যানিক করবে, অথবা আমাকে উন্মাদ ভাববে। দুইটাই অশান্তির কারণ হবে।
সে রাতে আমার প্রায় ঘুম হলো না বললেই চলে। রাতে ঘুম না হওয়ায় চোখ ফুলে গেল সকালে। অফিস থেকে ছুটি নিলাম ফিলিং আন্ডার দ্য ওয়েদারের অজুহাত দেখিয়ে। সেদিন ঈশ্বর ভদ্রলোক আসার আগে আগেই আমি গিয়ে তাঁর বেঞ্চে বসে রইলাম। তিনি এসে আমাকে দেখে হাসলেন। বললেন, কী কেমন ঘুম হলো আজকে?
আমি তাঁর দিকে আজ তাকাচ্ছিলাম ভয়মিশ্রিত সমীহ নিয়ে। বললাম, এটা আপনি কীভাবে করলেন? আমি বিশ্বাসই করতে পারছি না।
তিনি বসতে বসতে বললেন, শান্ত হও। এ আর এমন কী। তবে অনেক অনেক দিন পরে কোন জাদু দেখালাম। খারাপ লাগছে, নিজে যে প্রতিজ্ঞা করেছিলাম তা ভেঙে ফেললাম, অবশ্য মজার জন্য করেছি। সিরিয়াস জাদু তো আর করিনি? তুমি কী বলো?
আমি বললাম, আমার বিশ্বাসই হচ্ছে না। আপনি এটা কীভাবে করতে পারলেন?
তিনি কফিতে চুমুক দিতে দিতে বললেন, দেখো, তুমি বিশ্বাস করো আর নাই করো, আমি আর কোন কিছু তোমাকে দেখাতে পারব না, সেদিন তুমি জাদুবিদ্যা নিয়ে যে পণ্ডিতি কথাবার্তা সব বলে গেলে, তাতে আমারও ইগোতে লেগে গিয়েছিল। তাই ভাবলাম তোমার সাথে একটু মজা করি।
ওইদিন আমি অনেকক্ষণ তাঁর সাথে এই বিষয়ে কথা বললাম। তিনি তাঁর জাদু দেখানো সময়কালের কথা তেমন কিছুই শেয়ার করতে চান না। বার বার বলেন, আমি প্রতিজ্ঞা করেছিলাম, এসব আর কখনোই করব না।
আমি বললাম, আমি আপনার কাছ থেকে শিখতে চাই, আমাকে শেখান প্লিজ। এর জন্য যা করতে হয় তা করব।
তিনি হাসলেন। বললেন, কিছু কিছু জ্ঞান একটা অভিশাপ বন্ধু, তুমি বুঝতে পারছ না।
আমি বললাম, আপনি কি ওই ফস্টাস আর শয়তানের প্রসঙ্গ ধরে বলছেন, যে শয়তানের কাছে আত্মা বিক্রি করেছিল?
তিনি বললেন, না। তা নয়। এটা একটা ভুল গল্প এমনিতেই। দেখো, শয়তান মানুষের আত্মা নিয়ে করবেটা কী! এটা কখনোই ওই গল্পের পয়েন্ট না। গল্পের মূল পয়েন্ট হচ্ছে, কিছু কিছু জ্ঞান নিয়ে আসে ক্ষমতা, এবং সেই ক্ষমতায় মানুষ নিজেই শয়তান হয়ে উঠে।
আমি বললাম, আমি আপনার কথা বুঝতে পারছি। আপনার যে মাপের ক্ষমতা আছে, অনেক কিছুই আপনি করতে পারবেন। কিন্তু ভেবে দেখুন, খারাপ জিনিশ যেমন করতে পারবেন, তেমন ভালো জিনিশও করতে পারবেন। আপনি যদি আমাকে সাথে রেখে শেখান, আমি প্রতিজ্ঞা করছি, আমি শুধু মানুষের ভালোর জন্যই ব্যবহার করব…
আমাদের সামনের রাস্তা দিয়ে একটা স্কুলবাস যাচ্ছিল ছাত্রছাত্রীদের নিয়ে। ভদ্রলোক ওটার দিকে তাকিয়ে আমার হাত ধরে আমার কথা বলা থামালেন। শান্তভাবে বললেন, দেখো, স্কুলবাসটা যাচ্ছে।
আমি তাঁর কথামতো ঐদিকে তাকালাম। স্কুলবাস আমাদের দৃষ্টিসীমা অতিক্রম করে চলে গেল।
ভদ্রলোক তাঁর হাতঘড়িটা দেখলেন। বললেন, আর পাঁচ মিনিট পরে, সামনের তিন রোড এগিয়ে যাবার পরে এই বাসটা দূর্ঘটনায় পতিত হবে। অনেক হতাহত হবে।
ঠিক পাঁচ মিনিটের মধ্যে আমি হইচই দেখতে পেলাম। একটু এগিয়ে গিয়ে শুনে আসলাম, বাসটা সত্যি সত্যি অ্যাক্সিডেন্ট করেছে।
আমি বেঞ্চিতে ফিরে এসে দেখলাম ভদ্রলোক আরেক কাপ কফি নিয়ে বসেছেন, আজ সাথে ডোনাটও আছে একটা। আমি ব্যস্ত হয়ে তাঁকে গিয়ে জিজ্ঞেস করলাম, আপনি এটা কী করলেন? আপনি চাইলে তো এই বাসকে আটকাতে পারতেন। নিষ্পাপ বাচ্চারা বেঁচে যেত। কেন থামালেন না? আপনি কি থামাতে পারতেন না?
তিনি আমার দিকে তাকিয়ে বললেন, হ্যাঁ, পারতাম। কিন্তু তাতে, ঘটনাগুলার ক্রম ভেঙে যেত। এবং এর ফল হিশাবে আরো দশটা বড় দুর্ঘটনা ঘটত এই শহরে বিশ বছরের ব্যবধানে, শুধুমাত্র এই ঘটনাকে ঘটতে না দেয়ার জন্য। আমি শুধু এটা আজ ঘটবে তাই জানতাম না, এটা না ঘটলে এর ফল হিশাবে কী কী ঘটবে তাও জানতাম। ফলে এখানে আমার করার কিছুই ছিল না। তুমি যেটাকে ভালো কাজ হিশাবে দেখছ, সেটা না করাই আমার কাছে বেটার কাজ। বুঝতে পারছো কি?
আমি বললাম, তাহলে...কীভাবে কী হচ্ছে?
তিনি বললেন, কী হচ্ছে? বসো, কফি খাও।
তিনি আমার জন্যও একটা ক্যাফে মকা নিয়ে এসেছেন।
আমি বললাম, আমার আসলে অদ্ভুত লাগছে। মনে হচ্ছে কিছুই বুঝতে পারছি না। আপনি এত কিছু জানেন, এত ক্ষমতা রাখেন কিন্তু কিছুই করছেন না!
ঈশ্বর বললেন, হ্যাঁ। আমি জানি, এইজন্যই কিছু করতে পারছি না। আমি জানি যে, আমি যদি কাজটা করি, কোন একটা খারাপ জিনিশ আটকে দিই, সেটা এর চাইতে বড় খারাপ নিয়ে আসবে ঘটনার ধারাক্রমে। সব কিছু পরস্পর সম্পর্কিত একটা সিস্টেমে চলে বন্ধু। স্পিনোজার গডের এই ধরণীতলে যারা প্রকৃত জানে, তারা বসেই থাকে, কিছু করে না। তাদের জন্য এই জানাটা, এই ক্ষমতাটা, তুমি মহান আশীর্বাদ বলবে না কঠিন অভিশাপ হিশেবে দেখবে তা একান্তই তোমার বিবেচনা।