• Parabaas
    Parabaas : পরবাস : বাংলা ভাষা, সাহিত্য ও সংস্কৃতি
  • পরবাস | সংখ্যা ৯৮ | এপ্রিল ২০২৫ | গ্রন্থ-সমালোচনা
    Share
  • ‘মৃত্যু, দুই-তিন পয়সার খেলা’ : অমিত মণ্ডল

    প্রেম ও মৃত্যুর কবিতা; — ভাস্কর চক্রবর্তী; প্রচ্ছদ - সৌরভ মিত্র; প্রকাশক- আখরকথা; হাওড়া ৭১১৩০৩; প্রথম প্রকাশ- ডিসেম্বর ২০২৪; ISBN: 978-93-91851-48-4

    আমি কবি ভাস্কর চক্রবর্তীকে দেখিনি। স্বাভাবিকভাবেই পরিচয়ের প্রশ্ন ওঠে না। আমি কেন দেখলাম না তাঁকে? কিছু কিছু প্রশ্নের উত্তর মেঘের কাছে উড়ে যায় অথচ ‘শীতকাল কবে আসবে সুপর্ণা’ সেই কবে থেকে আমার সঙ্গে আছে। আমার সঙ্গে ঘুমোয়, জাগে, পড়ার টেবিলে হলুদ পলাশের মতো বন্ধু হয়ে ওঠে। আমার সঙ্গে কেন পরিচয় হোলো না ভাস্কর চক্রবর্তীর তার উত্তর আমি খুঁজি না বরং বারান্দায় এসে দাঁড়াই। সিগারেটের মুখে দেশলাইয়ের আগুন জ্বালাই। দেখি পাশের বাড়ির ভাঙা পাঁচিলের গায়ে শ্যাওলার কালচে আস্তরণ, কাঠবেড়ালির ছুটোছুটি। আমি জেনেছি ভাস্করদার সিগারেটের ব্র্যান্ড ফিলটার উইলস। মাঝে মধ্যে চারমিনার। মনে মনে ভাবি ভাস্করদার সঙ্গে দেখা হলে এক প্যাকেট ফিলটার উইলস অফার করতে পারতাম! ভাস্করদা আমার থেকে এমন কিছু সিনিওর নন। তিনি পয়তাল্লিশে, আমি ছাপান্নোয়— মাত্র এগারো বছর। ভাস্কর চক্রবর্তীর সঙ্গে আমার পরিচয় ছিল না এটা জলের মতো, বাতাসের মতো, আগুনের মতো সত্যি। তাঁর কথা শুনেছি অরণি বসুর কাছ থেকে। অরণি বসু— ভাস্করদার বন্ধু cum ভাই। অরণিদার কাছে তাঁর কথা ফুরোয় না, যেমন ফুরোয় না মণীন্দ্র গুপ্ত, দেবারতি মিত্র, মাণিক চক্রবর্তী, তারাপদ রায়, শৈবাল ঘোষ, শামসের আনোয়ার ও আরও অনেকের।

    ভাস্কর চক্রবর্তীকে না দেখলেও আমি চিনি বাসবী চক্রবর্তী, প্রৈতি চক্রবর্তীকে— তাঁর স্ত্রী ও একমাত্র কন্যা। কোথায় দেখলাম তাঁদের? বাংলা আকাদেমির সভাঘরে। ২৩ জুলাই। ২৩ জুলাই কেন? সেদিন কবির প্রয়াণের দিন। ‘কে কাকে মৃত্যুর দিকে কেন যে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দেয়’— এর উত্তর কারোর জানা নেই। বুকভরা অভিমান নিয়ে ভাস্করদা লিখলেন, ‘চলে যেতে হয় বলে চলে যাচ্ছি, নাহলে তো আরেকটু থাকতাম।’ ভাস্করদার কলম থেকে রাত্রির নিঃশ্বাসের মতো উঠে এসেছিল সেই অসামান্য পঙক্তি ‘দুই দীর্ঘশ্বাসের মধ্যিখানে মৃত্যু আমি তোমাকে জন্মাতে দেখেছি।’ জীবন ও মৃত্যুকে মুখোমুখি দাঁড় করিয়ে দিয়েছিলেন তিনি। মাঝখানে শুধু কুয়াশা, জোনাকির আলো, শীতের বৃষ্টি। ২৩ জুলাই তিলধারণের জায়গা ছিলনা বাংলা আকাদেমির সভাঘরে। তরুণ কবিদের মুখে তখন কবিতার স্বেদ ও শোণিত। একজন কবিকে ভালোবাসার অনির্বাণ শিখায় নিজেদের পুড়িয়ে নিচ্ছিল। চোখে মুখে রক্তিম বিস্ফোরণের উত্তাপ। একে ভালোবাসা ছাড়া আর কিই বা বলা যায়!

    পৃথিবীর পথে হাঁটতে হাঁটতে একদিন ভাস্কর চক্রবর্তী থেমে গেলেন। সেই ২০০৫-এ। বরানগরের অলিগলি কি তাঁকে মনে রেখেছে? একদিন মানুষটা এই পথ দিয়েই হাঁটতেন। ‘রাস্তার ধারের চায়ের দোকানে বসে বাচ্ছা কুকুরগুলোকে বিস্কুট’ খাওয়াতেন। তারপর হয়তো চলে যেতেন গঙ্গার দিকে। সেই আপনি, ‘চমৎকার ছিমছাম ফিটফাট সদ্যশেভড আপনি’— তুষার রায়ের প্রিয় প্রাণাধিক ভাস্কর। জীবৎকালে কোনো বড় পুরস্কার না পাওয়া, প্রয়াণে প্রাতিষ্ঠানিক গান-স্যালুটের অনেক ঊর্ধ্বে, মাথার টুপিটা সামনে বাড়িয়ে অনন্তকাল আমাদের মধ্যে থাকবেন। থাকবেন তরুণ কবিদের বুকের মধ্যে। তিনি ছাড়া আর কেই বা লিখতে পারবেন, ‘মন্দিরে থুতু ছিটিয়ে দিলেও মানুষের কিছুমাত্র ক্ষতি হয় না’, ‘ঘড়ির আঘাতে আজ রাত্রিবেলা ঈশ্বরের কাশি ভেসে আসে।’ অরণি বসুর চিরকাল মনে থাকবে ভাস্করদার সঙ্গে ঠাকুরপুকুর হাসপাতালে তাঁর শেষ সাক্ষাৎ, মনে পড়বে সেই উজ্জীবনের নিভৃত মন্ত্র, ‘উলুখড় বার কর, অরণি। আর আমি কিন্তু লিখব।’

    ভাস্কর চক্রবর্তীর মৃত্যুর অব্যবহিত পর কালীকৃষ্ণ গুহ ও গৌতম চৌধুরী প্রকাশ করলেন একটি দশ পাতার ফোল্ডার—‘হে জীবন’। ফোল্ডারের ওপরে উৎকীর্ণ ভাস্করদার হস্তাক্ষরে মুদ্রিত, ‘বাস্তবতার মায়া কথাটা আজ প্রথম থেকেই আমাকে টানছিল। এর ভেতরেই আমরা। এর ভেতরেই আমাদের ভালোবাসা। অসহায়তা। আনন্দ’। বুঝতে পারি কী নিবিড় অনুভবের মধ্যে দিয়ে হেঁটে চলেছেন ভাস্করদা। তিনি গভীর ছায়ার মধ্যে দিয়ে হাঁটছেন, বিস্তীর্ণ শালবনের মধ্যে দিয়ে হাঁটছেন, গম্ভীর মেঘের ভেতর দিয়ে হাঁটছেন। জানছেন নীরবতার ভাষা। নীরবতার সঙ্গে একাকীত্বের আবাল্য বন্ধুত্বের কথা। তিনি যখন তাঁর প্রিয় বন্ধু দেবাশিস বন্দ্যপাধ্যায়কে চিঠিতে লেখেন ‘অশান্তি আর নিঃসঙ্গতা আপাতত আমাকে গ্রাস করছে।’ তখন বুঝতে অসুবিধা হয় না এক তমস নিঃসঙ্গতার কুহরে আচ্ছন্ন ভাস্কর। তিনি বেঁচে থাকতেন জীবনের বিষ আত্মসাৎ করে এবং সেই যাপনের অন্য নাম নিঃসঙ্গতা। তাই বলে ওঠেন, ‘একলা থাকতে থাকতে, থাকতে থাকতে/ আমার গায়ে শ্যাওলা গজিয়ে উঠবে একদিন/ পোড়ো বাড়ির মতো আমি অদ্ভুত দাঁড়িয়ে থাকবো একদিন গম্ভীর জঙ্গলের মধ্যে।’ বাড়ির বারান্দায় দাঁড়িয়ে তিনি অনুভব করেন ‘রাত্রিবেলার এই বৃষ্টিবাতাসে আজ চেয়ে দেখি/ একা হয়ে গেছি।/ একা একা একা একা একা হয়ে গেছি/ ঝিঁঝিঁ পোকারাও সব ছুটি নিয়ে বেড়াতে গিয়েছে।’ ভাস্করদার হাতে কিন্তু ভালোবাসার লন্ঠন। দুহাতে আঁকড়ে ধরে জীবনকে ভালবেসেছেন। কেন একা থাকবেন ভাস্করদা? পাশে পাশে চলেছেন বাসবীদি। দুজনেই জেনেছেন, ‘সব কিছু নষ্ট, তবু/ এখনো হৃদয় পারে/ হৃদয়ের কাছাকাছি যেতে।’ ভাস্করদা মনে মনে আওড়াচ্ছেন আর হয়তো বাসবীদি শুনছেন ‘মেঘের ভেতরে অ্যাতো মেঘ ছিলো/ কোনোদিন বুঝেছিলে তুমি?/ হয়তো আগামীকাল/ দুজনে দুদিকে চলে যাবো।/ কিন্তু আজ? আজ এই শান্ত স্থির বিকেলবেলায়/ এসো গান শুনি।’ জীবনকে খাদের একেবারে পাশে নিয়ে গিয়েও টেনে আনেন, কেউ যেন বলিয়ে নেন, ‘ভালোবাসা মৃতসঞ্জীবনী’, ‘বলো: ভালোবাসা, বলো: জীবন আলোসমান,/ হাতে হাত রাখা।’

    ভাস্কর চক্রবর্তী জানেন, সবকিছু ছেড়ে চলে যেতে হবে একদিন। কিন্তু যতদিন আছেন তার মূর্ছনা সেতারের মতো বাজে। শুধু থাকার মুহূর্তটুকুর অনুভব আকণ্ঠ পান করতে চান। অনায়াসে নিজের মধ্যে তৈরি হয়ে যায় সেই অনিবার্য বর্ণমালা ‘ছেড়ে যেতে হবে এইসব বাড়িঘর,/ রাস্তার চায়ের গুমটি—/ সাধের কবিতালেখা ছেড়ে/ চলে যেতে হবে।/ তবু একবারো তুমি আজ কেঁপে উঠবে না!/ ছেড়ে যেতে হবে যাবো,/ এতদিন তবু তো ছিলাম।’ পাখিরা পাতার আড়ালে আশ্রয় খোঁজে। তাঁর কাছে কবিতা ছিল একটা আশ্রয়। শান্ত বটগাছ। তাঁর কবিতা যেন নম্র পুষ্করিণীতে হাঁসেরা ভেসে বেড়ায়। অশ্বত্থের ছায়া দীর্ঘ হয়। উঠে আসে কত স্মৃতি— ‘এই সেই ঘর যেখানে তোমার গন্ধ এখনো ভেসে আছে।/ সবকিছুই আজ রূপকথা বলে মনে হয়।/ … স্মৃতি হচ্ছে সাপের কামড় যা দিনে-দিনে বিষিয়ে ওঠে।/ জীবনের যেখানটায় ফাঁকা / সেখানে তুমি যত্নে বেড়ে উঠছো প্রতিদিন। / ওগো পাখির পালক, সাদা-নীল সবুজ বাতাসে/ তুমি কবে উড়ে এসে আবার পড়ে থাকবে আমার বুকের ওপর?’

    ভাস্করদার ফাঁকা রাস্তা দিয়ে অনেকদূর হেঁটে যেতে ইচ্ছে করে। তারপর ফিরে আসেন ঘরে। ফিরে তো আসতেই হয়। টেবিলে বসে লিখতে শুরু করেন, ‘ফিরে আসি আবার আমার ঘরে/ মনে পড়ে তোমাকে শুধুই।/ এখন অনেক রাত—/ আমার ভ্রমণ শুধু তোমার দু-চোখে/ থেমে যায়।/ জানি না এখন তুমি কার ঘর আলো করে আছো—/ আমারও সামান্য ঘরে আলো আজ/ তোমার মুখের।’ এই প্রেম অনিঃশেষ আলো জ্বেলে রাখে। একটা অদ্ভুত মায়াবী ঘ্রাণ ছড়িয়ে যায়। ভাস্কর চক্রবর্তী লিখছেন, ‘শুধু আমার ঘরে সামান্য একটা আলো জ্বলছে—/ আমি তোমার মুখ দেখতে পাচ্ছি,/ তোমার নিঃশ্বাস শুনতে পাচ্ছি/ ভোর হয়ে আসছে।’

    রবীন্দ্রনাথ বলেছিলেন দাম্পত্যটা একটা আর্ট। প্রতিদিন একে নতুন করে সৃষ্টি করা চাই। ভাস্কর সেই আর্টের ডানায় জুড়ে দেন ধূসর পালক। বাস্তব রঙিন জামা গায়ে রোয়াকে বসে পা দোলায়। তাঁর ক্যানভাসে ফুটে ওঠে গার্হস্থ্যের অতি চেনা কোলাজ, ‘প্রেমিকেরা একদিন স্বামী হয়। স্বামীরা তারপর আর/ প্রেমিক থাকে না।/ অথচ ওমলেট খায়। ফিশফ্রাই খায়/ দু-তিন চারপাক রাস্তায় ঘুরে এসে/ বিড়ি খায়।/ আরো একটু রাত হলে ন্যাংটো ছবি দেখে।/ প্রেমিকারা? তারা বা কোথায় যায়?— তারা তো স্ত্রী হয়, আর/ পেটে বাচ্ছা ধরে।/ কথাগুলো কোথায় হারিয়ে যায়। রান্নাঘরে আলো জ্বলে ওঠে।’ ভাস্কর চক্রবর্তীর কবিতা আমাদের জীবনের অন্তর্গত বিপন্নতাকে টেনে বের করে আনে। তাঁর কবিতা একজন সম্পূর্ণ আধুনিক মানুষের কবিতা। তিনি সময়ের কথা বলছেন সময়ের দিকে তাকিয়েই।

    সত্তর-একাত্তর সাল। পশ্চিমবঙ্গে নকশাল আন্দোলন। বরানগর তো তখন নকশালদের ডেন। ভাস্করদা তখন পঁচিশ বছরের তরুণ। দিনবদলের স্বপ্নে তিনি কি মাতোয়ারা ছিলেন? হয়তো ছিলেন কিংবা ছিলেন না। কিন্তু দেখেছিলেন কত তরুণের লাশ হয়ে যাওয়া, চিলেকোঠার প্রায়ন্ধকার ঘরে ঝলসে উঠলো তাঁর কলম, ‘কালো কালির ওপর/ লাল কালির মর্মান্তিক কাটাকুটি।/ ব্যাপারটা কিছুই নয়।/ ব্যাপারটা সত্যি তেমন কিছু নয়।/ যদি-না মনে পড়ে/ কালো একটা ছেলে/ রক্তাক্ত। ধানক্ষেতে শেষঘুমে ঘুমিয়ে আছে।’ কিংবা ‘চোখগুলো দেখেছিলো/ একদিন এ-পাড়া ও-পাড়া।/ রক্ত রক্ত রক্ত রক্ত শুধু।/ এখন সমস্ত শান্ত, তবু/ দু-একটা কাটামুণ্ডু নড়েচড়ে ওঠে।’

    এবারের, ২০২৫-এর আন্তর্জাতিক কলকাতা বইমেলায় তরুণ প্রকাশক শুভঙ্কর মাঝি তাঁর ‘আখরকথা’ প্রকাশনা থেকে বের করলো ভাস্কর চক্রবর্তীর কবিতাগুচ্ছের এক অনন্য সংকলন ‘প্রেম ও মৃত্যুর কবিতা’। বাসবী চক্রবর্তী ‘ভূমিকার বদলে’ লিখলেন, ‘ভাস্করের কবিতায় মৃত্যু যে তেরছা আলো ফেলে, তার অদূরে দাঁড়িয়ে থাকেন প্রেমিক ভাস্কর। মৃত্যু জীবনের অনিবার্য পরিণতি, আর সে মৃত্যুকে কবি মেনে নিয়েছিলেন যুবক হিসাবে পরিণত হয়ে ওঠার দিনগুলি থেকে। কিশোর বয়েস থেকেই তিনি শুনতে পেয়েছিলেন গঙ্গাভিমুখী শ্মশানযাত্রীর কণ্ঠে হরিধ্বনি। প্রায় তখন থেকেই এক মৃত্যুবোধ তাঁকে আষ্টেপৃষ্টে জড়িয়ে ধরেছিল নিবিড় মমতায়.’ ওই গ্রন্থের ভূমিকায় অরণি বসু ভাস্কর চক্রবর্তীকে ‘বাংলা কবিতার রাজকুমার’ বলে উল্লেখ করেছেন। তিনি লিখেছেন, ‘তিনি (ভাস্কর চক্রবর্তী) একজন প্রকৃত কবির জীবনই যাপন করেছেন আজীবন। জীবনানন্দের মতোই তাঁর কবিতা পাঠককে সহজেই সংক্রামিত করে তোলে। তাঁর প্রয়াণের দু-দশক পরেও তাঁর কবিতার পাঠক ক্রমবর্ধমান।’ তাঁর কবিতার পঙক্তিতে পঙক্তিতে ছড়িয়ে আছে মৃত্যুবোধ, মৃত্যুকথা—‘দেখি, আমার সমস্ত লেখালেখির ভেতর মৃত্যু তার ছায়া ফেলে দাঁড়িয়ে আছে’, ‘আমার শেষ কবিতা আমি লিখে রাখবো আমার মৃতদেহের পাশে বসে’, ‘আমার শবযাত্রা আস্তে আস্তে এগিয়ে চলেছে শ্মশানের দিকে আর আমি/ তার পেছন পেছন হাঁটছি’। কোনো পিছুটান নেই। কোনো কিছুর প্রতি আকর্ষণ নেই যেন আর। তাই তো কি অনায়াসেই লিখতে পেরেছেন ‘যখনই মৃত্যুর কথা মনে পড়ে, ইচ্ছে করে, সিগারেট ধরাই’ কিংবা ‘যে আগুনে পুড়বো আমি, সে আগুন, কিছুটা আলাদা করে/ বইয়ের পাতার মধ্যে সরিয়ে রেখেছি—’ কিংবা ‘শেষ হলো সময়। এবং আমার জীবন।/ —তেমন কিছু আফশোষ নেই আর।/ যদিও দু-চারটে সামান্য কাজ বাকি ছিলো—/ যেমন, ও পাড়ার সন্ত্রস্ত ছেলেটিকে একটু ভরসা দিয়ে আসা—‘ভয় কিসের?’/ যেমন, চিঠি লেখা নতুন বন্ধুকে/ ‘ভূতের বাড়িতে, বেড়াতে আসুন একদিন।’

    ‘আমি মরছি, আর আমার চারপাশে কেউ নেই’— লিখেছেন ভাস্কর চক্রবর্তী। আলো নিভে আসে। চরাচর শূন্য। শূন্যতা অনিবার্য পরিণতি নয়। জীবন জুড়ে আবার ছড়িয়ে পড়ে রঙমশালের ঝরনা। জীবনের আলো। জীবনকেই প্রাণপণে ভালোবাসতে চেয়েছিলেন ভাস্কর চক্রবর্তী। তাঁর কলম থেকে উৎসারিত হয়, ‘মেয়েটির মুখের আলো আমার মুখে এসে ছড়িয়ে পড়েছে/ মেয়েটির বাগান, ঝাউ, ছোট্ট ঘর/ মিশে গ্যাছে আমার জীবন আর আমার ছোট্ট ঘরে।’ তিনি নেই তবু বাংলা কবিতায় তাঁর উপস্থিতি নরম ভোর ও সন্ধেতারার মতোই অবিচল। কবিতা ও ভাস্কর চক্রবর্তী সমার্থক। এক গভীর জীবনবোধের নাম ভাস্কর চক্রবর্তী। জীবনের মায়ায় ভাসিয়ে নিয়ে যান তাঁর ভালোবাসার ছোট্ট ডিঙিটাকে।

  • মন্তব্য জমা দিন / Make a comment
  • (?)
  • মন্তব্য পড়ুন / Read comments