• Parabaas
    Parabaas : পরবাস : বাংলা ভাষা, সাহিত্য ও সংস্কৃতি
  • পরবাস | সংখ্যা ৯৮ | এপ্রিল ২০২৫ | গল্প
    Share
  • সে মরে নাই : অনিরুদ্ধ সেন

    অনিতা চৌধুরী তাঁর মুম্বই উপকণ্ঠের ফ্ল্যাটের লিভিং রুমে বসে টিভি দেখছিলেন। অনিতা এক বিখ্যাত ভারতীয় কম্পানির সিনিয়র এক্সিকিউটিভ। রবিবারের অলস মধ্যাহ্নেই তাঁর যেটুকু অবসর। পেশাগত সাফল্যকে তাড়া করতে গিয়ে ঘর-সংসার করা হয়ে ওঠেনি। একা একা চ্যানেল সার্ফ করতে করতেও অবশ্য তিনি নিউজ ও বিজনেস নিউজই বেশি দেখছিলেন।

    কলিং বেল বাজল। আই হোলে উঁকি মেরে দেখলেন, এক মহিলা। ধীরেসুস্থে দরজা খুলে অনিতা চমকে উঠলেন।

    “কে আপনি?”

    “আকাশ থেকে পড়লি মনে হচ্ছে? ওরে, আমি সুনন্দা!”

    অনেকক্ষণ ভালো করে দেখে অনিতা বললেন, “দেখতে সুনন্দার মতো, ওর হাবভাবটাও বেশ রপ্ত করেছেন। কিন্তু আপনি কে?”

    “উঃ, তোর এই আপনি-আজ্ঞেটা আর নেওয়া যাচ্ছে না। তা, বসতে বলবি না?”

    তীক্ষ্ণদৃষ্টিতে আগন্তুকের দিকে তাকিয়ে অনিতা বললেন, “বেশ – এসেছেন যখন, বসুন।”

    ***

    “দরজায় দেখছি তালা দিলি। আজকাল কি খুব চোর-ডাকাতের ভয়?”

    “না, না। আসলে, আমার সেলফ লকটা ক'দিন ধরে কাজ করছে না। মেইনটেনেন্সে খবর দিয়েছি, কিন্তু বাবুদের কি সহজে সময় হয়? অগত্যা ভেতরে থাকলে ভেতরে তালা, বেরিয়ে গেলে বাইরে।”

    “বুঝলাম। তা, কেমন আছিস?”

    “বাজে কথা ছেড়ে খুলে বলুন, কেন এসেছেন?”

    “কেন আবার? এলাম পুরোনো বন্ধুর সঙ্গে দেখা করতে। ভেবেছিলাম তুই খুব খুশি হবি। কিন্তু এখন দেখছি –”

    “আপনি সুনন্দা হলে খুবই খুশি হতাম। কিন্তু তা তো হবার নয়।”

    “কেন?”

    “কারণ, সুনন্দা নেই। আজ থেকে বছর পাঁচেক আগে সে এক দুর্ঘটনায় মারা গেছে।”

    ***

    কিছুক্ষণ নিস্তব্ধতা। তারপর আগন্তুক বললেন, “কে কী রটাল আর তাই মেনে নিলি? কাকে কান নিয়ে গেছে বললে কাকের পেছনে ছুটলি?”

    “পাঁচ বছর আগে আমি নিজের চোখে সুনন্দাকে মরে যেতে দেখেছি।”

    “তাই নাকি? কীভাবে?”

    আগন্তুকের শাণিত চোখে কৌতুক না কৌতূহল, বোঝা শক্ত। কিছুক্ষণ দ্বিধার পর অনিতা শুরু করলেন, “আমরা একসঙ্গে মহাবলেশ্বরে বেড়াতে গিয়েছিলাম। ও প্রকৃতির শোভায় মুগ্ধ হয়ে মোবাইলে একের পর এক ফটো তুলছিল। সন্ধ্যা ঘনাচ্ছিল, কুয়াশা নামছিল। সেখানে আর কেউ ছিল না। আমার ভয় করছিল। ওকে বলছিলাম চলে আসতে। ও যেখানে দাঁড়িয়েছিল, তার একটু পেছনেই অতল খাদ। বার বার বলছিলাম সাবধান হতে কিন্তু ও হাসিমুখে হাত নেড়ে আমাকে অভয় দিচ্ছিল। তারপর – তারপর বোধহয় একটা সেলফি তুলতে গিয়ে হঠাৎ বেসামাল হয়ে –”

    অনিতা আর বলতে পারলেন না, দুহাতে মুখ ঢাকলেন।

    “বুঝতে পারছি, তোর বলতেও কষ্ট হচ্ছে।” আগন্তুক সান্ত্বনার ভঙ্গীতে বললেন, “কিন্তু প্রিয় বন্ধুকে ওভাবে পড়ে যেতে দেখে তুই কি ছুটে গিয়ে দেখেছিলি সে সত্যিই তলিয়ে গিয়েছে, না কোনোমতে সামলে নিয়েছে?”

    “সামলানোর কোনো সুযোগ ছিল না।”

    “বলছিস, ঘন কুয়াশা। তার মধ্যে ঠিক দেখতে পেয়েছিলি? নাকি –”

    “আমি সামান্য পেছনেই দাঁড়িয়ে ছিলাম।”

    “হুম। তারপর কী করলি?” আগন্তুকের তীক্ষ্ণদৃষ্টি অনিতাকে মাপছে।

    “সঠিক বলতে পারব না। আমি প্রবল ট্রমায় ছিলাম, শরীর-মন কাজ করছিল না। যখন সম্বিত ফিরল, ছুটতে ছুটতে হোটেলে ফিরে রুমে গিয়ে কিছুক্ষণ ঠকঠকিয়ে কাঁপলাম। তারপর কোনোমতে বেরিয়ে এসে খোঁজখবর করে এলাকার পুলিশ স্টেশনে ব্যাপারটা রিপোর্ট করলাম।”

    “তারা কো-অপারেট করল?”

    “মোটামুটি। প্রথমেই তারা ডাক্তার ডেকে ট্র্যাঙ্কুইলাইজার ইঞ্জেকশন দিয়ে আমাকে কিছুটা ধাতস্থ করল। তারপর আমার স্টেটমেন্ট রেকর্ড করে বলল, ‘ম্যাডাম, আমরা দেখছি আপনার বন্ধু কোনোভাবে বেঁচে গিয়েছেন কিনা। তবে আশা কম। এমনকি আমাদের আশঙ্কা সত্যি হলেও বডিটা ঐ গভীর খাদ ও জঙ্গলের মধ্য থেকে উদ্ধার করা যাবে কিনা সন্দেহ’।”

    “পেয়েছিল বডি?”

    “না।”

    “তাহলে কি তারা তোর কথায় বিশ্বাস করে আমাকে মৃত ঘোষণা করেছিল?”

    “না। সুনন্দা রায় মহাবলেশ্বর পুলিশের খাতায় আজও ‘মিসিং’।”

    “তাহলে তুই কীসের ভিত্তিতে দাবি করছিস সুনন্দা মানে আমি মিসিং নই, মৃত?”

    আগন্তুকের সন্ধানী দৃষ্টির থেকে চোখ সরিয়ে নিয়ে অনিতা বললেন, “যদি ধরে নিই সুনন্দা কোনো অলৌকিক উপায়ে বেঁচে গেছে, তবে সে ফিরে এল না কেন? শেষ অবধিও সে আমার পেয়িং গেস্ট ছিল। আমার ফ্ল্যাটে, এমনকি মহাবলেশ্বরের হোটেলেও তার জিনিস পড়ে ছিল। সেসব নিতেও এল না কেন?”

    “কেন, তার উত্তর অর্থাৎ গল্পের শেষটা তো একমাত্র সুনন্দার, মানে আমার কাছেই আছে। কিন্তু সেটা বিশ্বাসযোগ্য তখনই হবে, যখন তুই আমাকে সুনন্দা বলে মেনে নিবি। আমি সুনন্দা কিনা তুই যাচাই করে দেখতে পারিস। বল, কী প্রমাণ চাস।”

    অনিতা সতর্ক দৃষ্টিতে তাকিয়ে বললেন, “সুনন্দার সঙ্গে আমার কী সম্পর্ক ছিল, বলুন তো?”

    আগন্তুক তাচ্ছিল্যের হাসি হেসে বললেন, “আমি আর তুই একই কম্পানিতে জুনিয়র ম্যানেজমেন্টে ছিলাম। তুই যখন মালাডে এই ফ্ল্যাট নিলি, আমাকে বললি তোর সঙ্গে শেয়ার করতে। তাতে তোর কিছুটা আর্থিক সাশ্রয়ও হয় আবার দুই নিঃসঙ্গ মহিলা অন্তত পরস্পরের সাহচর্য পায়।

    ভালোই চলছিল। তোর সঙ্গে আমার অফিসের বাইরেও একটা সুন্দর বন্ধুত্বের সম্পর্ক গড়ে উঠেছিল। কিন্তু তারপর ঝড় এল। কম্পানির বোর্ডরুম ট্রাবল, তার থেকে কম্পানি স্প্লিট। তুই রয়ে গেলি অরিজিনালে, আমি স্প্লিট গ্রুপে। আমাদের বন্ধুত্বে ছেদ না পড়লেও অপ্রত্যক্ষভাবে এই ভাঙন আমাদের সম্পর্কের মধ্যে এক কালো ছায়া ফেলল। একই ছাদের তলায়, কথাবার্তাও বলছি, কিন্তু তেমন মন খুলে নয়। কখন কম্পানির সিক্রেট বেফাঁস হয়ে যায় কে জানে!”

    অনিতা তীব্র দৃষ্টিতে তাকিয়ে বললেন, “এসব তো – বলতে গেলে, বাইরের খবর। মনে হয় কেউ সাজিয়ে গুছিয়ে দিয়েছে, মুখস্থ বলে গেলেন। ভেতরের খবর কিছু ছাড়ুন, যা শুধু সুনন্দা আর আমি জানতাম।”

    মৃদু হেসে আগন্তুক বললেন, “তোর ঘরে মাসিমার মানে তোর মা'র ফটোফ্রেমে রাখা ফটোটার পেছনে একটা শুকনো প্রসাদী ফুল আছে। তুই কোনো জরুরি কাজে যাবার আগে ওটা বের করে কপালে ছোঁয়াতিস।”

    অনিতার চোখে ক'ফোঁটা জল। অস্ফুটস্বরে বললেন, “কীভাবে জানলেন?”

    “এখন তো বুঝলি, আমি সুনন্দা?”

    “না, আমি এখনো বিশ্বাস করি না।”

    “বেশ, এবার করবি। তুই তো বললি, সুনন্দা তার মোবাইলে সেলফি তুলছিল। সেই মোবাইলটা পুলিশ পেয়েছিল?”

    “কী করে পাবে? সেটা তো সুনন্দার সঙ্গেই নিচে তলিয়ে গেছে।”

    “দ্যাখ, চিনতে পারছিস?” আগন্তুক মৃদু হেসে একটা মোবাইল বের করে টেবিলে রাখলেন।

    অনিতার চোখ বিস্ফারিত হয়ে উঠল। “পেরেছিস চিনতে!” আগন্তুক বললেন, “একটু সময়ের দাগ লেগেছে, তাছাড়া একই রকম আছে। তোর নিশ্চয়ই মনে আছে স্প্লিট হওয়ার পর আমরা পরস্পরকে পুরো বিশ্বাস করতাম না দেখে বাড়তি সিকিউরিটি হিসেবে নিজেদের মোবাইলে পাসওয়ার্ডের বদলে বায়োমেট্রিক ভেরিফিকেশন লাগিয়েছিলাম। দ্যাখ।”

    আগন্তুক নিজের আঙুল নির্দিষ্ট জায়গায় রেখে সামান্য চাপ দিতেই মোবাইলের লকটা খুলে গেল।

    “আমার এখন নতুন মোবাইল-ট্যাবলেট আছে। তবু আমি এটা রেখে দিয়েছি, স্মৃতি হিসেবে।”

    আগন্তুক এবার মোবাইলে একটা ফোটো অ্যালবাম স্ক্রল করতে লাগলেন। “এই দ্যাখ তুই আর আমি, কম্পানি ব্রেক আপের আগে। এই দ্যাখ, তার পরেরও কত আনন্দঘন মুহূর্তের ছবি। আর এবার দ্যাখ, আমাদের মহাবলেশ্বর সফরের সব ছবি। এই যে আমি পাহাড়ের কিনারায় দাঁড়িয়ে, এই যে তুই আসছিস –”

    “থামুন, থামুন!” অনিতা উন্মাদের মতো চেঁচিয়ে উঠলেন, “আপনি কে জানি না, কিন্তু কীভাবে যেন সব জেনে গেছেন। আপনার উদ্দেশ্য সফল। আমি আর নিতে পারছি না। আমি কনফেস করছি – সুনন্দা সেদিন নিজের থেকে পড়ে যায়নি, আমি তাকে ধাক্কা মেরে ফেলে দিয়েছিলাম। আপনি তো সুনন্দার বোন বা অন্য কোনো লুক-অ্যালাইক আর আপনাকে নিশ্চয়ই পুলিশ সব শিখিয়ে পড়িয়ে পাঠিয়েছে। নিন, এবার ফোন করে তাদের আসতে বলুন, আমার কনফেশনটা রেকর্ড করে নিক। পাঁচ বছর ধরে বন্ধুহত্যার পাপবোধ আমাকে দগ্ধে দগ্ধে মারছে। আমি আর সইতে পারছি না। এখন শুধু একটা অনুরোধ, আপনারা বিচারের প্রহসন না করে আমাকে চট করে ফাঁসিতে লটকে দিন নয়তো এনকাউন্টার করে দিন। আমি আর বাঁচতে চাই না।”

    ***

    অনিতাকে আত্মস্থ হতে সময় দিয়ে আগন্তুক বললেন, “ওরে, লুক-অ্যালাইক নই, আমিই তোর সুনন্দা। আমার কোনো বোন-ফোনও নেই। আর যে অপরাধ তুই করিসনি তার শাস্তি কেন পাবি? ভিডিওর শেষটা এখন একটু সাহস করে দ্যাখ। ঐ যে – তুই শূন্যে কাউকে ধাক্কা মারার ভান করে তারপর ঘুরে চলে যাচ্ছিস! অবাক হয়ে আমি তাই ভিডিও বন্ধ করে তোর পিছু নিয়েছিলাম। কাছে গিয়ে দেখি, তোর তখন রুদ্রমূর্তি। চোখ লাল, দাঁতে দাঁত পিষছিস আর বিড়বিড় করছিস, ‘দিয়েছি, দিয়েছি বিচটাকে শেষ করে! আমার আশ্রয়ে থেকে আমারই ওপর স্পাইং করা – এখন থাকুক পড়ে পাহাড়ের নিচে, শেয়াল-শকুনে ছিঁড়ে খাবে।’ ”

    “তার মানে আমি তোকে সত্যিই ফেলে দিইনি, শুধু ওরকম ভেবেছিলাম?”

    “ঠিক তাই। প্রচণ্ড ঘাবড়ে গেলেও আমার ব্যাপারটা বুঝতে দেরি হয়নি, কারণ আগেও আমি তোকে অমন রূপে দেখেছিলাম। আসলে, তুই একটা সাইকোসিসে ভুগছিলি। তুই মানুষটা খুব ভালো। কিন্তু মাঝে মাঝেই দেখেছি, অত্যধিক চাপে পড়লে তুই হঠাৎ অন্যরকম হয়ে যেতিস। তখন তোর ভেতর থেকে একটা হিংস্র মূর্তি, হয়তো তোর অল্টার-ইগো, বেরিয়ে আসত। কিন্তু ঐ কিছুক্ষণ, তারপর আবার তুই স্বাভাবিক হয়ে যেতিস। তখন হয়তো ঐ ডিলিউশনের সময় কী ভেবেছিলি বা করেছিলি সেটা তোর মনে থাকত না।

    উচিত ছিল তোকে সাইকিয়াট্রিস্ট দেখানো। কিন্তু কখনো সাহস করে বলতে পারিনি, হয়তো তুই তেড়ে আসবি, 'আমাকে পাগল বানাতে চাইছিস?’

    তবে সেদিন আমি ভীষণ ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম। তোর অবচেতনে কোনোভাবে ঢুকে গেছে আমি তোর শত্রু আর তুই মনে মনে আমাকে খুন করতে চাইছিস! আদতে অবশ্য তেমন কিছু করিসনি, শুধু সাময়িক ডিলিউশনে ওটা ভাবছিলি, একটু পরে সেটা ভুলেও যাওয়ার কথা। কিন্তু যদি ভবিষ্যতে কিছু করে বসিস?

    চটজলদি সিদ্ধান্ত নিলাম, আমাকে তোর কাছ থেকে পালাতে হবে। হোটেল অবধি যাওয়ার সাহস হল না – কে জানে, যদি তোর কাছে পিস্তল-টিস্তল থাকে? তাই তোর ঘোর কাটার আগেই নিঃশব্দে সরে পড়লাম। মোবাইল আর ওয়ালেট সঙ্গে ছিল। মুম্বইয়ের বাসের টিকিট কেটে সে রাতেই বাড়ি ফিরে এলাম।”

    “এসেছিলি? কই, আমি তো টের পাইনি।”

    “তুই ফেরার আগেই আলগোছে কিছু নিতান্ত প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র নিয়ে আবার বেরিয়ে গিয়েছিলাম।”

    অনিতার চোখ জলে ভরে গেল। বললেন, “সত্যি, সত্যি বলছিস তুই সুনন্দা? আমি তোকে খুন করিনি?”

    “নিজের চোখেই তো দেখলি! তবুও যদি বিশ্বাস না হয় –”

    “তুই একবার ফোন করেও জানাতে পারলি না –”

    “আমিই বা কী করে বুঝব বল তুই ঐ ডিলিউশনটাকে না ভুলে মনের মধ্যে বয়ে বেড়াচ্ছিস?”

    অনিতা অভিমানভরে বললেন, “তা এতদিন পর আজ যে বড় এলি?”

    “কে জানে, জীবন অনিত্য!” সুনন্দা উদাস স্বরে বললেন, “ভাবলাম, একবার দেখা করে যাই। এখন মনে হচ্ছে, ভাগ্যিস এসেছিলাম। তুই কিন্তু ASAP সাইকিয়াট্রিস্টের কাছে যাবি আর সব খুলে বলবি।”

    অনিতা ঘাড় নাড়লেন। তারপর ধরা গলায় বললেন, “কী বলব ভাই – পারলে আমায় মাফ করে দিস।”

    “আরে দূর, দূর, এখন ওসব ছাড়। এত বছর যে মিথ্যে গ্লানি মনে বয়ে বেড়িয়েছিস সেটা ভুলে শান্তিতে কাজ কর, দেশের মুখ উজ্জ্বল কর।”

    “এই দ্যাখ, নিজের কথা বলতে বলতে ভুলে গেছিলাম – তুই তো তোর পুরোনো কম্পানিতেও ফিরে যাসনি। তাহলে অ্যাদ্দিন করছিলি কী?”

    “ঐ, ঘষতে ঘষতে শেষে কোনোমতে একটা ফিনটেক কম্পানিতে একটা সিনিয়র পজিশনে –”

    “দাঁড়া, দাঁড়া!” অনিতা চোখ বিস্ফারিত করে বললেন, “এশিয়ান ফিনটেকের স্পোর্টস কারে হিল্লিদিল্লি করে বেড়ানো ড্যাশিং ডেপুটি চিফ এস রয় – তুই-ই কি সেই?”

    “ছিলাম।” উদাস স্বরে সুনন্দা বললেন।

    “মানে? তাহলে কি একটা বড় জাম্প পেয়ে অন্য কোথাও যাচ্ছিস?”

    “এতই যখন জানলি, একটু অপেক্ষা কর, বাকিটাও জানতে পারবি। তুই তো টিভিতে নিউজ-টিউজ দেখিস, ওতেই কখনো পেয়ে যাবি।”

    “আরে ঝেড়ে কাশ না, দুজনে মিলে একটা ছোট্ট সেলিব্রেশন করে ফেলি। তুই বরং আজ রাতটা থেকে যা। নাইট ড্রেস নিয়ে ভাবিস না, আমার ওয়ার্ডরোবে যথেষ্ট স্পেয়ার আছে।”

    “না, রে। আমার কাজ শেষ, এবার পালাব। অনেক দূর যেতে হবে।”

    “যাবি?” অনিতা হতাশ হয়ে বললেন, “নিশ্চয়ই কোনো বড় পার্টি-ফার্টি আছে? ঠিক আছে, অন্তত একটু কফি খেয়ে যা।”

    ***

    কিছুক্ষণ বাদে অনিতা কিচেন থেকে টি-পট ও প্লেট নিয়ে এসে হাঁক দিলেন, “দ্যাখ, তোর ফেভারিট ক্যাপুচিনো আর চিজ অমলেট করে এনেছি। ভয় করিস না, বিষ মেশানো নেই। তোর সামনেই আমিও শেয়ার করব।”

    কিন্তু কোথায় সে? অনিতা চেয়ে দেখলেন, সুনন্দা সামনে নেই। এদিক-ওদিক তাকালেন, ডাকলেন, টয়লেট-ব্যালকনি-ঘর – সে কোথাও নেই।

    “চলে গেল!” অনিতা দীর্ঘশ্বাস ছাড়লেন। তারপর তার ভ্রু কুঞ্চিত হল, “গেল কীভাবে? দরজায় তো তালা!”

    হঠাৎ এক অশুভ সম্ভাবনা তাঁর মগজে ঝিলিক মারল। কাঁপা কাঁপা হাতে টিভি নিউজ খুললেন। সেখানে তখন দেখাচ্ছে, “কয়েক ঘণ্টা আগে এক ভয়াবহ কার ক্র্যাশে –”



    অলংকরণ (Artwork) : রাহুল মজুমদার
  • মন্তব্য জমা দিন / Make a comment
  • (?)
  • মন্তব্য পড়ুন / Read comments