১
মিলন বলল, “ওরা আবার ফিরে আসার চেষ্টা করছে।”
“কারা?” অতীন জিজ্ঞেস করল। মিলনই ভিডিও কল করেছিল। দেখল মোবাইল ফোনের স্ক্রিনের দিকে নজর নেই, অতীন অন্য দিকে তাকিয়ে আছে। তার চশমার কাচে নীল রঙের চৌকো চৌকো আলো। মনে হয় সামনে ল্যাপটপ খোলা রয়েছে, মিলনের সঙ্গে ফোনে কথা বলছে কিন্তু মন দিচ্ছে না। আশ্চর্য কিছু নয়, ল্যাপটপ মুখে করে সারাদিন বসে থাকাটাই অতীনের কাজ। মিলন গলায় খানিকটা অভিমান নিয়ে বলল, “জানিস না কারা?”
অতীন বলল, “বাপি, বাবলা, পুকান… যাদের সাত বছর আগে ঘাড়ধাক্কা দিয়ে গ্রামের বাইরে বার করে দিয়েছিলি?”
অনেকদিন গাঁ-ছাড়া, তবু অতীন কিছু ভোলেনি। ছোটবেলার কথা ভোলা সহজ নয়। মিলন বলল, “গত বুধবার দল বেঁধে বিডিও অফিসে মনোনয়নপত্র জমা করতে আসছিল। আমরা তৈরি ছিলাম। আগেও অনেকবার গ্রামে ঢোকার চেষ্টা করেছে, পারেনি। এবার আটঘাট বেঁধে এসেছিল।”
“সে কী রে? এখনও কোমরে বল আছে ওদের?” অতীন যেন আশ্চর্য হল। মিলন বলল, “পঞ্চায়েত নির্বাচনের আগে ওরা হরেকৃষ্ণদাদের পার্টির সঙ্গে জোট করেছে। হরেকৃষ্ণদার ভাগ্নি-জামাই দাঁড়াচ্ছে। হরেকৃষ্ণদাও ছিল সঙ্গে। আটকাতেই বোমাবাজি শুরু করে দিল।”
“তোরা ছেড়ে দিলি?”
“প্রশ্নই ওঠে না। ওরা ভেবেছে কী? ফুল-চন্দন-বেলপাতা দিয়ে পুজো করে ঘরে তুলব? মালমশলা আমাদের হাতেও কিছু কম নেই। হারামিগুলোকে খালপার করে দিয়ে এসেছি।”
“তা হলে আর কী? মিটেই গেল।”
“এত সহজে কি আর মেটে? নির্মলকে মনে আছে? বীথির ভাই… ছেলেটা এখনও জেলা হাসপাতালে পড়ে আছে। গলায় স্প্লিনটার ঢুকে রক্তারক্তি কাণ্ড।”
“ইশ… বেশি বয়স নয় তো ছেলেটার!”
“ক্লাস ইলেভেন-এ পড়ে। আজকাল হাসপাতালগুলোও হয়েছে সেরকম। শালা, একবার ঢুকলে বেরোবার গ্যারান্টি নেই। নির্মলের আনসান কিছু হলে আমরাও ছেড়ে দেব না। ওদের গর্তে ঢুকে লাশ ফেলে দিয়ে আসব।”
“কেমন আছে নির্মল? হাসপাতালে গিয়েছিলি?”
“কুত্তার জান… লড়ছে। অক্সিজেন চলছে। দু’বোতল রক্ত দিতে হয়েছে। সন্ধেবেলা বীথিকে নিয়ে হাসপাতাল গিয়েছিলাম। কান্নাকাটি করছিল। ওকে বাড়ি পৌঁছে দিয়ে এসে তোকে ফোন করছি।”
“টাকাপয়সার দরকার হলে আমাকে জানাস কিন্তু।”
“আপাতত মালবিকাদি ব্যবস্থা করে দিয়েছে। পরে দরকার হলে তোকে বলব।”
“এবার শুনলাম মালবিকাদি টিকিট পেয়েছে। নিরুপমদা দাঁড়াচ্ছে না?”
মিলন জবাব দেওয়ার আগেই ফোনটা কেটে গেল। গ্রামে গঞ্জে কখন টাওয়ার থাকবে আর কখন যাবে বলতে গেলে স্বয়ং ঈশ্বরকেও হাত গুনতে হবে, মরণশীল মানুষ তো কোন ছার। মিলনের আরও অনেক কথা বলার ছিল। পঞ্চায়েত নির্বাচনের দিন এগিয়ে আসছে। আর সপ্তাহ দেড়েক। শুয়োরের বাচ্চাগুলো ঘোঁট পাকাচ্ছে। তাদের রুখতে হলে যথাযথ প্রস্তুতি নেওয়া দরকার। মিলনের মাথায় কিছু মতলব এসেছে। তার সবগুলো অহিংস নিরামিষ গোত্রের নয়। কিন্তু অতীনের সঙ্গে পরামর্শ না করে কোনও কাজ করা উচিত হবে না। অতীন ঠান্ডা মাথার ছেলে। পেশায় সেফোলজিস্ট, নির্বাচন বিশেষজ্ঞ। ভোটের আগে তার কাজ বাড়ে। আপাতত সে যাকে বলে স্বনিযুক্ত ফ্রিল্যান্সার, সাদা বাংলায় বেকার। মিলন বলেছিল, “কোলকাতায় বসে টাইম পাস না করে গ্রামে ফিরে আয়। আমাদের উপকার হবে।”
ফোনের উলটো দিকে অতীন হেসেছিল। বলেছিল, “কোলকাতা ছেড়ে গেলে পাগলিটাকে কে দেখবে?”
পাগলি মানে বিতস্তা, অতীনের লিভ-ইন পার্টনার। তাকে নাকি অতীন নিজে হাতে করে খাইয়ে না দিলে সে খাবার মুখে তোলে না। বিতস্তা একটা মাল্টিন্যাশনালে চাকরি করে। অনেক রাত পর্যন্ত বিদেশি সহকর্মীদের সঙ্গে মিটিং করে আর দিনের বেলা পড়ে পড়ে ঘুমোয়। অতীনই রান্নাবান্না করে, ঘর গুছিয়ে রাখে। অতীন বলেছিল, “আমি তো আছিই। সমস্যায় পড়লে ফোনে যোগাযোগ করিস।”
এক পশলা বৃষ্টি নামল। মিলন এতক্ষণ বারান্দার রেলিঙে ভর দিয়ে দাঁড়িয়ে ছিল। রাত হয়েছে। টানা বারান্দার লাগোয়া ঘরগুলোয় আলো নিভে গেছে। বয়স্ক মানুষ সব, ছোটকা, মেজো পিসিমা… ছেলেমেয়েরা সবাই গ্রাম ছেড়ে শহরে চলে গেছে। কেউ কেউ বিদেশে। মিলনই যে কেন যেতে পারল না! ছাট আসছে, সরে এসে দরজা ঠেলে নিজের ঘরে ঢুকল মিলন। একটা ম্যাড়মেড়ে হলুদ এলইডি আলো কোনা-ঘুপচির অন্ধকার যেন আরও বাড়িয়ে দিয়েছে। বাড়িটা পুরনো, বর্ষাকালে দেওয়াল থেকে ভিজে গন্ধ ওড়ে। মাথার মধ্যে একটা যন্ত্রণা চিড়িক দিচ্ছে। ঘুম দরকার, অথচ দুশ্চিন্তাগুলো কিছুতেই ঘুমোতে দেয় না। সারারাত উপদ্রব করে, জাগিয়ে রাখে। এসময় কেউ যদি পাশে বসে মাথায় হাত বুলিয়ে দিত! মা যেমন দিত। বীথিকে বারো শরিকের এই বাড়িতে এনে তোলা যায় না। মেয়েটা কষ্ট পাবে। স্যাঁতসেঁতে বিছানায় শুয়ে পায়ের কাছে গুটিয়ে রাখা চাদরটা গায়ের ওপর টানল মিলন। মনে হল এই মুহূর্তে শীত তাড়ানোর সেটাই সব থেকে সহজ উপায়।
২
মোবাইলটা বাজছে, ওই যে সবুজ বনবীথিকা/ দূর দিগন্তের সীমানায়/ ছোট্ট নদীটির ওই বাঁকে/ মোর প্রিয় হোথায় থাকে... বীথি কলার টিউন সেট করে দিয়েছিল। গানের প্রথম লাইনেই ওর নাম আছে। বলেছিল “যখনই ফোন আসবে আমার কথা মনে পড়বে।”
মিলন বলেছিল, “তুমি তো ফোন করো কালেভদ্রে। আমিই দিনের মধ্যে দশবার ফোন করে তোমায় বিরক্ত করি।”
“তাতে কী? অন্য কেউ ফোন করলেও...” বীথি কথা শেষ করেনি। ওদের মধ্যে না শেষ করা কত কথাই যে জমে থাকে। মিলন কচলে কচলে চোখ থেকে ঘুমের আঠা মুছল। জানলার দিকে তাকিয়ে দেখল দিনের আলো ফোটেনি ভাল করে। এসময় আবার কে ফোন করছে? নির্মলের কিছু হল? হাসপাতাল থেকে নয় তো? তাড়াতাড়ি ফোনটা তুলে দেখল মালবিকাদি। জিজ্ঞেস করল, “কী হয়েছে?”
“এক্ষুণি আসতে পারবি একবার?” মালবিকাদির গলায় উদ্বেগ, “বাজারের মধ্যে নাকি বোমা পাওয়া গেছে…”
“সে কী?” ঘুম ছুটে গেলো মিলনের। লাফ দিয়ে উঠে বলল, “আসছি… তুমি কোথায়?”
“রাস্তায়। পাঁচ মিনিটে পৌঁছোচ্ছি। তুই পারলে বিজনকেও একটা খবর দিস। যদি আসতে পারে।”
তড়িঘড়ি তৈরি হয়ে বেরিয়েও বাজারে পৌঁছতে পৌঁছতে আধ ঘণ্টা লেগে গেল মিলনের। মেঘ করে আছে, যে কোনও মুহূর্তে বৃষ্টি নামবে। বাজারে ঢোকার মুখেই রতনদার চায়ের দোকান। তার সামনেই একটা ছোটখাটো ভিড় জমে আছে। মোটরবাইকটা রাস্তার ধারে দাঁড় করিয়ে তাড়াতাড়ি সেদিকে পা চালাল মিলন। পুলিশ এসেছে। মালবিকাদির সঙ্গে কথা বলছে। মিলনকে দেখে মালবিকাদি চোখের ইশারায় ডাকল। মিলন ভিড় ঠেলে এগোল। রতনদার দোকানের সামনে একটা কাঠের বেঞ্চ পাতা থাকে হামেশাই। তার পাশেই একটা মুখখোলা চটের বস্তা। বস্তাটার পেটটা বেশ ফোলা।
পুলিশও কাছে যেতে সাহস পাচ্ছে না। জায়গাটাকে ঘিরে রেখেছে। বোধহয় অন্য লোক ডেকেছে, যারা এইসব বোম-টোম নিয়ে ঘাঁটাঘাঁটি করে। অপেক্ষা করছে তাদের জন্য। মালবিকাদি ফিসফিস করে জানাল, রতনের দোকানে যে বাচ্চাটা কাজ করে, গোপাল… রাত্তিরে দোকানেই শোয়, ভোরবেলা পেচ্ছাপ করতে উঠেছিল। দেখে একটা ছেলে বস্তাটা নামাচ্ছে। অন্য আর একটা ছেলে বাইকে স্টার্ট দিয়ে বসেছিল। ওকে দেখে বস্তা ছেড়ে দু’জনে পালায়। মিলন জিজ্ঞেস করল, “গোপাল দু’জনের মধ্যে কাউকে চিনতে পেরেছে?”
“বলছিল যে ছেলেটা বস্তা নামাচ্ছিল তাকে দেখে ওর মনে হয়েছিল বাদল। লেংচে লেংচে হাঁটছিল। বাদলের পায়ে পোলিও আছে, জানিস তো। তবে অন্ধকার ছিল, বৃষ্টি পড়ছিল। তাছাড়া বাচ্চাছেলের কথার ওপর কত আর ভরসা করা যায়? দুটো ছেলেরই মুখে রুমাল বাঁধা ছিল।”
বাদল মানে? বাদল তো পার্টির ছেলে। নিরুপমদার ল্যাংবোট। মিলন অবাক হল।
পিঠে কার টোকা পড়ল। ঘাড় ফিরিয়ে দেখল বিজন। কালি পড়া তিজেল হাঁড়ির মত মুখ করে দাঁড়িয়ে আছে। কখন নিঃশব্দে পিছনে এসে দাঁড়িয়েছে, কে জানে! গলা নামিয়ে বলল, “বাদলকে ফোন করেছিলাম। ফোন স্যুইচ অফ। মিলনদা, ডালমে জরুর কুছ কালা হ্যায়!”
নিরুপমদা টিকিট পায়নি বলে তলায় তলায় খচরামি করছে নাকি? ঘরের শত্রু বিভীষণ? এমনিতেই অবশ্য মালটা দু’নম্বরি। গত কয়েক বছর বেধড়ক পার্টি ফান্ডের পয়সা ঝেড়েছে। রিলিফের টাকা, একশ দিনের কাজের টাকা… সব জায়গায় নির্লজ্জের মত খামচি মেরেছে। নামে বেনামে জমি, প্রাসাদের মত একখানা বাড়ি, শোনা যায় টাউনে নাকি একটা মেয়েছেলেও পুষে রেখেছে। ওপর মহলে খবর পৌঁছে দেওয়ার লোকের অভাব নেই। এমনিতেই রাজ্যের শাসক দল চুরি-চাকারি নিয়ে জেরবার। একদিকে মিডিয়া খবর করার জন্য হাঁ করে বসে আছে, শালারা যে থালায় খাবে তাতেই হাগবে, অন্যদিকে কেন্দ্র মুখিয়ে রয়েছে, সুযোগ পেলেই এজেন্সি লেলিয়ে দেবে। এবার সেই জন্যই বোধহয় নিরুপমদার নাম কাটা গেছে। মালবিকাদির স্বভাব একদম উল্টো। লোকজনের বিপদে আপদে পাশে গিয়ে দাঁড়ায়। সাধ্যমত করে। ভোটে জিতে এলে মনে হয় না স্বভাব বদলাবে।
মিলন ভিড়ের বাইরে বেরিয়ে এসে বিজনের সঙ্গে কথা বলছিল। বিজন বলছিল, “নিরুপমদা কিন্তু আসেনি, দেখেছ?”
“খবর পায়নি হয়তো,” মিলন বলল।
“কী যে বলো! পুরো গ্রাম জেনে গেল আর নিরুপমদা…” বিজন মাথা নাড়ল।
“নিরুপমদা নেই, কাল রাত্তিরে টাউনে গিয়েছিল, ফেরেনি,” মালবিকাদির গলা পেল মিলন। মালবিকাদিও ভিড়ের থেকে সরে এসেছে। কাছে এসে বলল, “এখানে দাঁড়িয়ে থেকে লাভ নেই। পুলিশ নিজের কাজ করবে। মিলন, আমাকে একটু বাড়িতে নামিয়ে দিয়ে যেতে পারবি?”
“এসেছিলে কী করে, অত সকালে?” মিলন বাইকটা স্ট্যান্ড থেকে নামাতে নামাতে জিজ্ঞেস করল। মালবিকাদি বলল, “ইরফানের ভ্যানরিক্সায়। দেখছি না তো তাকে, চলে গেছে মনে হয়, ভাড়া-টাড়া নিয়ে…”
মালবিকাদি একদিকে পা ঝুলিয়ে বসল বাইকের পিলিয়নে। আলগা করে হাত রাখল মিলনের কাঁধের ওপর। মিলন বাইকে স্টার্ট দিল।
৩
এক কামরার পার্টি অফিসটা কানায় কানায় ভর্তি। অধিকাংশ ছেলেমেয়ে মেঝেয় মাদুরের ওপর গা ঘেঁষাঘেঁষি করে বসে আছে। দরজার কাছে ভিড় করে দাঁড়িয়ে আছে কিছু ছেলে। মালবিকাদি জরুরি মিটিং ডেকেছিল। যথারীতি নিরুপমদা অনুপস্থিত। মালবিকাদি হাল্কা হলুদ খোলের লালপাড় শাড়ি পরে একটা টেবিলে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। হাত তুলে সবাইকে চুপ করতে বলল। গলা তুলে বলল, “তোমরা সবাই বুঝতেই পারছ পরিস্থিতি ভাল নয়। বহিরাগতরা বিনা বাধায় গ্রামে ঢুকে যাচ্ছে। তার কারণ পুলিশ ঠুঁটো জগন্নাথ হয়ে বসে আছে। পুলিশের এই নিষ্ক্রিয়তার বিরুদ্ধে আমরা বিক্ষোভ প্রদর্শন করব। আজ বিকেল ঠিক সাড়ে পাঁচটায় থানার সামনে সবাই চলে আসবে। এর একটা বিহিত হওয়া দরকার।”
মিলনের মনে পড়ে গেল অতীন সাবধান করেছিল, “হঠকারীর মত কোনও কাজ করিস না।”
মিলন মানতে চায়নি, “ওরা যা খুশি তাই করে যাবে আর আমরা হাত গুটিয়ে বসে থাকব?” সকালে মালবিকাদিকে নামিয়ে দিয়ে বাড়িতে ঢুকতেই পরিমলদার জেরার মুখে পড়েছিল মিলন, “ভোরবেলা উঠে কোথায় চরতে গিয়েছিলে?”
জমিজমা যখন ছিল, পরিমলদা মুনিষ খাটত। সেসব ঝামেলা কবেই চুকেবুকে গেছে। কিন্তু পরিমলদা রয়ে গেছে, পরিবারের একজন হয়ে। বর্তমানে সে এই বাড়িতে বসবাস করা মানুষগুলোর স্বঘোষিত গার্জেন। পরিমলদা আছে বলেই এখনও দু’বেলা খাওয়া-দাওয়া জুটছে। তাকে চটালে বিপদ। পরিমলদার ট্যারাবেঁকা প্রশ্নের উত্তরে মিলন এক কাপ চায়ের আবদার করে নিজের ঘরে ঢুকেছিল। বেলা বাড়ছে। ইতিমধ্যে এক ঝলক বৃষ্টি হয়ে আকাশ পরিষ্কার হয়ে গেছে। ভাবল অতীনকে একবার ফোন করে দেখে পায় কি না। দুটো রিং হতেই অতীন ধরেছিল। গত রাতের আলোচনার খেই ধরে মিলন বলেছিল, “কিছু একটা বুদ্ধি বার কর। ওদের এখনই না আটকাতে পারলে কপালে দুঃখ আছে। পুরো এলাকাটাই আস্তে আস্তে বেদখল হয়ে যাবে।”
অতীন মিলনকে থামিয়ে দিয়ে বলেছিল, “শোন, চারদিকে হাওয়া গরম। আগ বাড়িয়ে কিছু করতে গেলে কিন্তু ফেঁসে যাবি। খবর আছে রাজ্যের বাইরে থেকে টাকা আসছে। সরাসরি ওদের হাতে পৌঁছে যাচ্ছে। সাপ্লাই লাইনটা আগে কাটা দরকার। মালবিকাদির ফোন নম্বরটা আমায় দিস, কথা বলব। পুলিশ কী করছে?”
“পুলিশ আর কী করবে? বসে বসে মজা দেখছে। শুধু টাকা? লোকজন ঢুকছে দেদার, অস্ত্র-শস্ত্র, গোলাবারুদও। আজ কী হয়েছে জানিস? সকাল সকাল বাজারের মধ্যে কারা এক বস্তা বোম নামিয়ে রেখে গেছে।”
“মালগুলো ফালতু ঝামেলা পাকানোর চেষ্টা করছে। ফাঁদে পা দিস না মিলন। কয়েকটা দিন চুপচাপ বসে থাক। ভোট মিটে গেলে…”
“ভোট মিটে গেলে কি ধুঁধুল চুষব?”
অতীন জবাব দেয়নি। দরজায় শব্দ পেয়ে মিলন দেখেছিল পরিমলদা চা-জলখাবার নিয়ে ঘরে ঢুকছে। কানে ফোন গোঁজা দেখে পরিমলদা অসন্তুষ্ট চোখে তাকিয়েছিল। চলভাষ যন্ত্রটা তার দু’চক্ষের বিষ। তার ধারণা ওই যন্ত্রটার জন্যই মানুষ পরিবার-পরিজনেদের সঙ্গে কথা বলা বন্ধ করে দিয়েছে। মিলন অতীনকে বলেছিল, “রাত্তিরে আবার কথা বলব। এখন রাখছি রে।”
পরিমলদা জলখাবারের প্লেটটা নামিয়ে রেখে চলে যাচ্ছিল। হাতে গড়া রুটি আর সাদা আলুর চচ্চড়ি। মিলন কৃতজ্ঞ দৃষ্টিতে তার দিকে তাকিয়ে বলেছিল, “থ্যাঙ্ক ইউ পরিমলদা। তুমি না থাকলে যে কী হত!”
পরিমলদা দরজা দিয়ে বেরিয়ে যেতে যেতে বলেছিল, “অত গ্যাস দিতে হবে না। পারলে ফেরার সময় সবজি বাজারটা করে এনো।”
পাছে ভুলে যায় পরে, মিলন অতীনকে চটজলদি মালবিকাদির নম্বরটা মেসেজ করে দিয়েছিল। আজ কি বাজার বসবে? কে জানে! পুলিশ যতক্ষণ না ক্লিয়ারেন্স দিচ্ছে বাজার চত্বরে কেউ ঢুকতে পারবে বলে মনে হয় না। অন্যমনস্ক হয়ে জলখাবারের রুটি ছিঁড়ছিল মিলন। তখনই ফোনটা আবার বেজে উঠেছিল। মালবিকাদি জানিয়েছিল, এগারোটা নাগাদ চলে আয়, পার্ট অফিসে...
ছেলেমেয়েগুলো হাত তুলে স্লোগান দিচ্ছে, মালবিকাদিকে সমর্থন জানাচ্ছে। তাদের চোখেমুখে রাগ আর অস্থিরতা। মিলন বুঝতে পারছিল না, এই মুহূর্তে বিক্ষোভ-টিক্ষোভ দেখানো ঠিক হবে কি না। বিশেষ করে যখন নিরুপমদা সিনে নেই। হাজার হোক সরকারিভাবে সে-ই এখনও পঞ্চায়েতের দায়িত্বে আছে। হয়তো জেনেবুঝেই গা ঢাকা দিয়েছে। ঘাপটি মেরে বসে কী ফন্দি আঁটছে টের পাওয়া মুশকিল। কিন্তু ছেলেমেয়েগুলো যেরকম খেপে আছে বাধা দিলে হিতে বিপরীত হবে। মালবিকাদি বলল, “মনে রাখবে আমাদের প্রতিবাদ সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে। আইনের বিরুদ্ধে নয়। তাই এই বিক্ষোভ শান্তিপূর্ণ হওয়া জরুরি। তোমরা কোনওভাবেই হিংসার আশ্রয় নেবে না।”
তার মানে মালবিকাদিও আন্দাজ করেছে ওসকানোর চেষ্টা চলছে। নাকি অতীন ইতিমধ্যে কথা বলেছে মালবিকাদির সঙ্গে? বক্তব্য শেষ করে মালবিকাদি আঁচল দিয়ে ঠোঁটের ওপরের ঘাম মুছে নিল। ভদ্রমহিলাকে যত দেখে ততই আশ্চর্য হয় মিলন। অফুরন্ত প্রাণশক্তি। কত বয়স হবে মালবিকাদির? চল্লিশ পেরিয়েছে কি? দেখে মনে হয় না। মালবিকাদির স্বামী একটু বুড়োটে ধরনের, ক্যানিং-এর একটা প্রাথমিক স্কুলের হেডমাস্টার। বারুইপুরে বাড়ি ভাড়া নিয়ে থাকে। সপ্তাহান্তে বাড়ি আসে। মালবিকাদি একা হাতে সংসার সামলায়। দলের কাজ করে। ছেলেপুলে হয়নি। সেই জন্যই বোধহয় পারে।
“কী রে, রামগরুড়ের ছানার মত মুখ করে দাঁড়িয়ে রইলি কেন?” মিলন ফিরে তাকিয়ে দেখল মালবিকাদির চোখে কৌতুক। ছেলেমেয়েগুলো পার্টি অফিস ছেড়ে বেরিয়ে যাচ্ছে। আস্তে আস্তে খালি হয়ে যাচ্ছে ঘরটা। সামান্য অস্বস্তি হচ্ছিল মিলনের। কোথাও যেন কিছু একটা গোলমাল হচ্ছে। কিন্তু সেটা যে কী, ঠিক আন্দাজ করতে পারছে না। মাথা নাড়ল মিলন, “নাহ্, কিছু না…”
৪
বিজন আসেনি। বীথির সঙ্গে হাসপাতালে গেছে। মিলনই বলেছিল যেতে। সন্ধেবেলা অনেকটা রাস্তা একা ফিরতে হয়। ইরফানের ভ্যানরিক্সার পাটা থেকে রঙিন পতাকাগুলো হাতে হাতে তুলে দিচ্ছিল মিলন। থানার সামনেই একটা বটগাছ। অনেকখানি খোলা জায়গা। বেশ ভাল জমায়েত হয়েছে। কিছু অচেনা মুখও চোখে পড়েছিল। হয়তো পাশের গ্রাম থেকে এসেছে। দূর থেকেও বোঝা যায় আজ থানায় পুলিশ মোতায়েন বেশি। গ্রামের থানা, সাধারণত দু’-চারজনেই কাজ চলে যায়। ওরা যে আসবে সেই খবরটা কি কোনও ভাবে লিক হয়ে গেছে? আশ্চর্য নয়। কে যে কখন কোনদিকে পালটি খাচ্ছে বোঝা দুষ্কর।
স্লোগানের ডেসিবেল বাড়ছিল। ভিড় ঘন হচ্ছে দেখে কয়েকজন বন্দুকধারী বাউন্ডারি ওয়ালের লোহার গেট খুলে বাইরে এসে দাঁড়িয়েছিল। ভিড়টা থানার দিকে এগোচ্ছে। মিলন দেখল মালবিকাদি সামনে সামনে হেঁটে যাচ্ছে। থানার সামনে পুলিশি তৎপরতা বাড়ছিল। ভিড়টা গেটের হাত দশেকের মধ্যে পৌঁছতেই প্রথম বিস্ফোরণটা হল। ভিড়ের থেকে হাতবোমাটা উড়ে গিয়ে থানার সামনে পড়ল।
ধোঁয়া, ধুলো, পুলিশের ছুটোছুটি, চিৎকারের মধ্যে ভিড়টা থতমত খেয়ে দাঁড়িয়ে পড়ল। বোমা-টোমা আদৌ পরিকল্পনার মধ্যে ছিল না। মালবিকাদি ঘুরে দাঁড়িয়ে যখন সবাইকে শান্ত থাকতে অনুরোধ করছিল, তখন দ্বিতীয় বোমাটা উড়ল। এবারের বিস্ফোরণটা হল থানার বাউন্ডারি ওয়ালের ভিতরে। মালবিকাদি বার বার বারণ করেছিল। তা সত্ত্বেও কারা বোমা ছুড়ছে? হরেকৃষ্ণদা লোক লাগিয়েছে? নাকি নিরুপমদা? শয়তানগুলো কখন যে চুপিসারে ভিড়ের মধ্যে ঢুকে পড়েছে টের পাওয়া যায়নি। এখন আর তাদের খুঁজে বার করার উপায় নেই।
এক রাউন্ড ফায়ারিং-এর শব্দ হল। মিলন দেখল একদল পুলিশ থানা থেকে বেরিয়ে এসেছে। তাদের বন্দুকের নলগুলো আপাতত আকাশের দিকে তাক করে রাখা। মিলন জানে দরকার পড়লে সেগুলো নিচের দিকে নামাতে তারা দ্বিধা করবে না। পঞ্চায়েত ইলেকশনের আগে গ্রামে গঞ্জে দু’-একটা সাধারণ মানুষ মরলে কারও কিছু যায় আসে না।
কেউ কিছু বুঝে ওঠার আগেই লাঠিচার্জ শুরু হয়ে গেল। লোকজন ছত্রভঙ্গ হয়ে এদিক ওদিক দৌড়চ্ছে। কিছু মানুষ ধাক্কা খেয়ে মাটিতে হুমড়ি খেয়ে পড়ল, বাকিরা তাদের শরীর মাড়িয়ে দৌড়ল। ধোঁয়ায় চোখ জ্বালা করছিল মিলনের। খুঁজছিল মালবিকাদি কোথায় গেল। দেখল মালবিকাদি উবু হয়ে বসে পড়েছে মাটিতে। ধাক্কা সামলে ভিড় ঠেলে এগোল মিলন। কাছাকাছি পৌঁছে মালবিকাদির কাঁধে হাত রাখল। মুখ তুলে তাকাল মালবিকাদি, বলল, “গোড়ালি মচকে গেছে রে। উঠে দাঁড়াতে পারছি না।”
মিলন নিচু হয়ে বলল, “আমি ধরছি, ওঠো।”
মিলনের হাতে ভর দিয়ে ওঠার চেষ্টা করল মালবিকাদি। পারল না। অস্ফুট কাতরোক্তি করে আবার বসে পড়ল। হাতে বেশি সময় নেই। মিলন দেখল পুলিশগুলো বিপজ্জনক দূরত্বের মধ্যে চলে এসেছে। ঝুঁকে পড়ে মালবিকাদিকে পাঁজাকোলা করে তুলল। পুলিশ এলোপাথাড়ি লাঠি চালাচ্ছে। এড়িয়ে যাওয়া মুশকিল। মালবিকাদি দু’হাত দিয়ে মিলনের গলা জড়িয়ে ধরেছে। একজন পূর্ণবয়স্ক মানুষের ওজন বয়ে নিয়ে দ্রুত চলা সহজ নয়। পিঠে লাঠির ঘা পড়ল একটা। ইরফানের গলা পেল মিলন, “তাড়াতাড়ি ভ্যানে ওঠো মিলনদা।”
ভ্যানরিক্সা নিয়ে পাশে এসে দাঁড়িয়েছে ইরফান। এক ঝটকায় মালবিকাদিকে তুলে লাফ দিয়ে ইরফানের ভ্যানরিক্সায় চড়ে বসল মিলন। ভারী বুটের শব্দ কানে আসছে। পুলিশগুলো পিছু ছাড়ছে না। মিলন নিজের শরীর দিয়ে মালবিকাদির শরীর আড়াল করে রইল। ঘাড়ে কোমরে লাঠির বাড়ি পড়ছে। মিলন চেঁচিয়ে বলল, “চল ইরফান।”
খানাখন্দ এড়িয়ে, পলাতক মানুষজনদের পাশ কাটিয়ে ঝড়ের বেগে ভ্যান-রিক্সা চালাল ইরফান। যেন পক্ষীরাজ ঘোড়া চালাচ্ছে। ধরে কার সাধ্য! বিশৃঙ্খলা পার হয়ে রিক্সা বড় রাস্তায় উঠতে স্বস্তির নিশ্বাস ফেলল মিলন। মালবিকাদিকে ছেড়ে সোজা হয়ে বসল। মালবিকাদিও শাড়ি-টাড়ি সামলে উঠে বসল। মিলন দেখল মালবিকাদির চোখে কৃতজ্ঞতা। মিলনের দিকে তাকিয়ে বলল, “দেখি, মনে হচ্ছে তোর ভুরুর ওপরটা কেটে গেছে।”
মিলন কপালে হাত চালিয়ে চোখের সামনে এনে দেখল রক্ত। কখন ফেটেছে বুঝতে পারেনি। পকেট থেকে রুমাল বার করে রক্ত মুছল। আজ কী যে হচ্ছে! একটু আগে হাতে মালবিকাদির শরীর লেগে ছিল, এখন রক্ত।
মালবিকাদির বাড়ির সামনে ইরফান ভ্যান-রিক্সা থামাল। মিলনের কাঁধে ভর দিয়ে রিক্সা থেকে নামল মালবিকাদি। খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে হাঁটছিল। মিলন জিজ্ঞেস করল, “পারবে নিজে নিজে যেতে?"
মালবিকাদি ঘাড় নাড়ল। বলল, “ভিতরে আয় মিলন, কাটা জায়গাটায় ড্রেসিং করে দিই।”
মালবিকাদির বাড়িতে আগেও এসেছে মিলন। ছিমছাম সুচারু করে সাজানো। বাইরের ঘরে সোফা সেট, বইয়ের র্যাক। একপাশে পড়ার টেবিলের ওপর ফুলদানি। মিলনকে বসিয়ে রেখে ভিতরে ঢুকল মালবিকাদি। ফিরে এল যখন মিলন দেখল শাড়ি ছেড়ে একটা হাল্কা নাইটি পরে এসেছে মালবিকাদি। চোখেমুখে জলও দিয়ে এসেছে। কানের পাশের ঢেউ তোলা চুলে জলের ফোঁটা ঝুলে আছে। প্রসাধনহীন মুখটার একটা অদ্ভুত আকর্ষণ আছে।
পাশে বসে হাতের ডেটলের বোতলের মুখ খুলে তুলোর ওপর ঢেলে থুপে থুপে মিলনের ভুরুর ওপর লাগিয়ে দিচ্ছিল মালবিকাদি। ডেটলের গন্ধ, খুব কাছে বসা মালবিকাদির শরীর থেকে উঠে আসা ভিজে মাটির গন্ধ মিলে মিশে মিলনের শরীরের মধ্যে একটা অন্যরকম রসায়নিক বিক্রিয়া ঘটছিল। অনুঘটকের কাজ করছিল একটা অধিকারবোধ। নিজেকে বিপন্ন করে কোনও নারীকে নিরাপত্তার আড়াল দিলে সেই অধিকারবোধ আসা বোধহয় স্বাভাবিক। মিলন মালবিকাদির গালে আলতো করে হাত ছুঁইয়ে বলল, “তোমার কিছু একটা হয়ে গেলে কে দেখত মালবিকাদি?”
শুশ্রূষা করতে করতে মালবিকাদির হাত থমকে গেল। অল্প হেসে বলল, “ধ্যুর বোকা ছেলে, আমার আবার কী হবে?”
কথাটার মধ্যে কী ছিল, মিলনের চোখে জল এল। মালবিকাদি লক্ষ করছিল, মিলনের মাথাটা নিজের বুকের মধ্যে টেনে নিল। নাইটির বুকের বোতামে ঘষা লেগে মিলনের ভুরুর ওপরের ক্ষততে জ্বালা করে উঠল। কিন্তু অন্য সব ব্যথা-বেদনা ছাপিয়ে আর একটা তীব্র একটা জৈব অনুভূতি উঠে আসছিল কোমরের নিচে থেকে। মিলন আটকাতে পারছিল না। সে বুঝতে পারছিল মালবিকাদি খুব ধীরে ধীরে অথচ নিশ্চিত ভাবে তার শরীর দখল করে নিচ্ছে। তার বাধা দেওয়ার কোনও ক্ষমতাই নেই।
৫
আগের বার পঞ্চায়েত নির্বাচনে নিরুপমদা জিতেছিল তিনশ ভোটে। এবার মালবিকাদি জিতল তিন হাজার চারশ সাতান্ন ভোটে। ইরফান, বিজন… সবাই আবির-টাবির মেখে, থানার সামনের মাঠেই খুব নাচানাচি করল। এমনকি পরিমলদাও পাকা চুলে আবির মেখে উল্লাসে যোগ দিল। দু’দিন আগেই নির্মল ফিরে এসেছে হাসপাতাল থেকে। বীথি তার পরিচর্যা নিয়ে ব্যস্ত। সে-ই কেবল এল না। তবে অতীন এসেছিল, কোলকাতা থেকে বিতস্তাকে নিয়ে, এক রাতের জন্য। মিলনদের বাড়িতেই ছিল। শহরের মেয়ে, গ্রাম দেখে বিতস্তা খুব খুশি। রাত্তিরে নিজের ঘরটা ওদের ছেড়ে দিয়ে বৈঠকখানায় তক্তাপোশের ওপর শুল মিলন। পরের দিন ফিরে যাওয়ার আগে অতীন মালবিকাদির সঙ্গে দেখা করে গেল। মিলনও সঙ্গে গিয়েছিল। কথাবার্তা শুনে মনে হল অতীনের সঙ্গে মালবিকাদির ভালই যোগাযোগ আছে।
নিরুপমদার পচাগলা বডিটা পাওয়া গেল মল্লিকদের কলাবাগানে, কাউন্টিং শেষ হওয়ার এক সপ্তাহ পরে। কাঁদি না পাকলে কে আর কলাবাগানে বেড়াতে যায়! ক’দিন ধরে রাত্তিরের দিকে তুমুল কুকুর চেঁচাচ্ছিল, তাই মল্লিকদের বড় ছেলে দেখতে গিয়েছিল। পুলিশ খবর পেয়ে এসে বডি তুলে নিয়ে গেল। মিলনরা নিরুপমদার স্মরণে শহীদ মিছিল বার করল। আজকাল যেমন হয়েছে… সন্ধেবেলা, মোমবাতি জ্বালিয়ে। মোমবাতির সাপ্লাই কম পড়ে গেল। অনেকে মোমবাতি না পেয়ে ক্ষুব্ধ হল। মালবিকাদি ভাষণ দিতে উঠে বলল, গ্রামের স্বার্থে নিরুপমদার এই বলিদান আমরা কোনওদিন ভুলব না। তাঁর দেখানো পথ ধরে আমরা এগিয়ে চলব। নিরুপমদা অমর রহে।