• Parabaas
    Parabaas : পরবাস : বাংলা ভাষা, সাহিত্য ও সংস্কৃতি
  • পরবাস | সংখ্যা ৯৮ | এপ্রিল ২০২৫ | গল্প
    Share
  • বাঁদরের উৎপাত : শিবানী ভট্টাচার্য দে

    সকালবেলাই দেখা গেল গেটের কাছে একটা মরা বাঁদর পড়ে আছে।

    সোহিনী হতভম্ব। আটটা বাজে, সে স্কুলে যাবে, তাই স্কুটি বের করে ঝেড়েঝুড়ে গেট-এর তালা খুলতে এসেছিল। সে মাকে ডাকল। সুনয়নাও দেখলেন, আহা রে, কী করে যে মরল ! তারপরই চিন্তায় পড়লেন। এটাকে কী করতে হবে এখন! বাড়ির ময়লা যারা নিয়ে যায় তারা নিশ্চয় এতবড় মরা বাঁদর নেবে না।

    সোহিনী একটু ভেবে বলল, পুরসভাতে খবর দিলে তারা হয়তো এটাকে নিয়ে যাবার ব্যবস্থা করবে।

    বাড়ির গেটের কাছেই দাঁড়িয়ে মা-মেয়েতে কথা হচ্ছিল, গেট খোলা দেখে রাস্তা দিয়ে যাওয়া পড়শিদের কেউ কেউ কৌতূহলী হয়ে উঁকি দিলেন -- মরেছে একটা? আরে, এটা তো পালের গোদা হুলোটা। ভালই হয়েছে, যা জ্বালাচ্ছিল বচ্ছর ধরে। পথচলতি আরো দু-চার জন পড়শি এসে একই অভিমত প্রকাশ করলেন।

    সত্যি, পাড়ায় বছর খানেক ধরে কোত্থেকে যে এসেছে এই বাঁদরের পাল, খুব জ্বালাচ্ছে। ছোট শহর, মহানগর থেকে বেশ দূরে, কিছু কুলীন কিছু গোত্রহীন বড় গাছ এখানে এখনো অবশিষ্ট আছে। তাই বোধ হয় বাঁদরেরা জায়গাটিকে তাদের বাসোপযোগী বলে মনে করেছে। তারা গাছের ফল, ফুল, পাতা, ডগা খাচ্ছে, ভাঙছে, একটু ফাঁক পেলেই বাড়ির ভেতরে ঢুকে খাবার জিনিষ অবধি তুলে নিয়ে যাচ্ছে। তাড়াতে গেলে উলটে তেড়ে আসছে, এবং মাঝেমাঝেই দু-চারজনকে আঁচড়ে কামড়েও দিয়েছে। একাধিক শহরবাসীকে অ্যান্টি-র‍্যাবিস নিতে হয়েছে, মানুষ অতিষ্ঠ। বনবিভাগকে খবর দিলেও ওরা কখনো দু-একটাকে পাকড়াও করে নিয়ে যায়, বাঁদরের পালকে বন্দী করে নিয়ে যাওয়া অসম্ভব। আশেপাশে কেন, দূরদূরান্তেও বন নেই যে বন্য পশু থাকবে।

    সেই বাঁদরেরা আজ সকালে অদৃশ্য, এবং সুনয়না মিত্রের বাড়ির ভেতরে গেটের কাছে সম্ভবত সেই পালের গোদা হুলোটা শরীরে ক’টা ক্ষত নিয়ে মরে পড়ে আছে।

    কাল সন্ধের দিকে বাঁদরগুলোর খুব জোর ক্যাঁচরম্যাচোর শুনছিলাম, মনে হয় নিজেদের মধ্যে মারামারি করে মরেছে -- আরেকজন পড়শি বললেন। ভালই হল, সর্দার মরাতে বাকিগুলো পালিয়েছে।

    পুরসভায় ফোন করে দাও, তারা এসে এটাকে সরিয়ে নেবে, প্রথম পড়শি সোহিনীকে কললেন।

    সোহিনী বলল, হ্যাঁ জেঠু, ফোন করব, এখন তো তাদের অফিস খোলেনি।

    আরেকজন বললেন, বাড়িতে বন্যপ্রাণী মরেছে, থানায় খবর দাও আগে। তারাই বনবিভাগে খবর দেবে। নইলে কেস হতে পারে।

    ঘণ্টাখানেকের মধ্যেই খবর পুরো পাড়ায় ছড়িয়ে পড়ল। আরো দু-চারজন স্ত্রীপুরুষ নির্বিশেষে প্রতিবেশী দেখতে এলেন।

    তারপর এলাকার মহাবীর সঙ্ঘের কয়েকজন সদস্য এসে উপস্থিত হল। এরা দেশসেবক পার্টির সমর্থক, মোটামুটি চেনা মুখ, তবে কথাবার্তা ও চালচলনে এরা কিছু আলাদা, তাই আলাপ নেই। রঘু, সেই ক্লাবের একজন কর্মকর্তা, নীতেশ এবং সুশান্ত্‌, তার দুই সাকরেদ, তাদের সবার কপালে এই সকালবেলাই লম্বা লাল তিলক। রঘু ধমকের সুরে বলল, হনুমানজিকে কেনো মেরে ফেললেন? জান না, হনুমানজী অবধ্য?

    তারা আসতেই পড়শিরা একে একে কেটে পড়ল, কেউ বা একটু তফাত থেকে দেখতে লাগল।

    আমরা মেরেছি? এমনিই সারাদিন বাঁদরের ভয়ে দরজা বন্ধ করে থাকি। সুনয়না বললেন।

    সুশান্ত বলল, আপনারা না মারলে আপনার বাড়ি এসে এমনি এমনি মরে গেছে? গায়ে জখম রয়েছে। কই, আর কারো বাড়িতে তো বাঁদর মরে না? কেউ মারে না। আজ পর্যন্ত কেউ মেরে ফেলেওনি, সবার বাড়িতেই হনুমানজি এটা সেটা নিয়ে খেয়ে থাকেন। আর আপনারা হনুমানজিকে মেরে ফেললেন— তার গলা এবার আরো চড়া।

    কী বলছ তোমরা, এই একটু আগে দেখলাম বাঁদরটা মরে পড়ে আছে। আমরা মারিনি, তবু বারবার এককথা বলছ কেন? সোহিনী বলল।

    বাঁদর বাঁদর বোলছ কেন? হনুমানজি বলো। ধমকে বলল রঘু।

    এটা তো হনুমান নয়, বাঁদরই। তোমরাও তো বলছ।

    তক্কো কোরবে না। হনুমান্‌জিকে মেরে আবার তক্কো!

    সুনয়না সোহিনীকে চুপ করতে ইশারা করলেন। সোহিনীর রাগে গা জ্বলে যাচ্ছিল।

    যা হোক, কাকি, শুন। হনুমানজিকে এখন গোর দিতে হোবে। টাকা দিতে হোবে পাঁচ হাজার। রঘু বলল।

    পাঁচ হাজার টাকা! পাগল! তোমাদের কিছু করতে হবে না, আমরা থানায় খবর দেব, ওরা যা করার করবে।

    থানা কী কোরবে? পুরসভাকে বোলবে, তারা নিয়ে ভাগাড়ে ফেলে দেবে। হনুমানজি ভগ্‌ওয়ান, তাঁকে নিয়ম সে গোর দিতে হোবে। টাকা দাও, আমরা যা করার কোরব, আমরা কেলাবের ছেলেরা -- সুনয়নাকে আবার বলল তারা।

    আমরাই লোক ডেকে বাগানে গোর দেব’খন। এত টাকা কোত্থেকে দেব? কেন দেব? সুনয়নাদের বাড়ির পেছন দিকটায় সামান্য বাগান রয়েছে।

    তাহলে এখন তিনহাজার দাও, বাকি সন্ধেবেলা দেবে।

    হনুমান মরেছে আমাদের বাড়িতে, আমাদের সমস্যা, আমরা দেখব, তোমাদের টাকা দিতে হবে কেন? সোহিনী বলল, জবরদস্তি নাকি?

    তোমাদের বাড়িতে হনুমানজিকে মেরে ফেলা হোয়েছে। তোমাদের আরো কিছু করতে হোবে না। যা করার আমরাই কোরব, রঘু কড়া গলায় বলল। চল্‌ রে, বলে তারা সবাই বেরিয়ে গেল।

    সোহিনীর স্কুলে যেতে হবে, দেরি হয়ে যাচ্ছে । নটায় স্কুল। সেও বেরিয়ে গেল। মাকে বলে গেল, টাকা দিও না। স্কুল থেকে থানাতে ফোন করে দেব।

    আধ ঘণ্টার মধ্যেই শাবল বেলচা নিয়ে রঘুর দল ফিরে এল। তারা গেটের সামনেই, পাকা রাস্তা আর বাড়ির মাঝখানের অংশে মাটিতে গর্ত খুঁড়তে লাগল।

    ও কী করছ? গেটের সামনে খুঁড়ছ কেন? সুনয়না বললেন।

    জবাব না দিয়ে তারা খুঁড়তে লাগল। এই, কী করছ তোমরা? সুনয়না আবার বললেন।

    দেখতে পাচ্ছ না? হনুমান্‌জি থাকবেন এখানে।

    আমাদের গেটের সামনে তা বলে? আমরা গেট খুলব কী করে? বন্ধ কর এসব।

    তোমরা তো দুজন লোক। তোমাদের জন্য জায়গা ছাড়লাম তো।

    হাতে হাতে বেশ খানিকটা খুঁড়ে অল্প সময়ের মধ্যেই তারা তিন ফুট মত লম্বা গর্ত করল, গভীরতা বড়জোর একফুট। এরই মধ্যে ছোট ঠেলা করে দুজন আধলা গোটা মিলিয়ে ইট ক’খানা, খানিকটা বালি ও সিমেণ্ট নিয়ে এসেছে। ছেলেগুলোর ইট বালি সিমেণ্টের ব্যবসা, ক্লাব হবার পর পাড়ার লোককে তাদের কাছ থেকেই ইট বালি সিমেণ্ট নিতে হয়, নইলে কেউ দেওয়াল গাঁথতে পারে না।

    তারা গর্তে বাঁদরটাকে রেখে মাটি দিয়ে বুজিয়ে দিল, ইঁট-সিমেণ্ট দিয়ে গর্তের ধার খানিকটা উঁচু করে দিল। উপরে আধলা ইট বিছিয়ে সোহিনীদের দেওয়াল ঘেঁষে একটা ছ’ফিট লম্বা বাঁশের কঞ্চি পুঁতে দিল, সেটাতে টাঙানো হনুমানজির লাল ধ্বজা। গেটের একটা পাল্লা এখন খোলাই যাবে না, একদিক দিয়েই যাতায়াত করতে হবে।

    হয়ে যাবার পর আবার তারা সুনয়নার কাছে টাকা চাইল। কাকি, দাও, তিনহাজার টাকা।

    কেন? তোমাদের কে বলল ওখানে ওটা গোর দিতে? আমাদের রাস্তা আটকে দিয়েছ, আবার টাকা?

    বাড়িতে থাকতে হবে তো? মেয়ে আছে, মনে রাখবে। রাতবিরেতে সাবধান। শুরুতে পাঁচহাজার দিয়ে দিলে আমরা আর কোথাও নিয়ে গোর দিতাম, সেখানেহি থান বানিয়ে দিতাম। তোমরা টাকাটা দিলে না। আমরা অপ্‌না খরচে গোর দিয়েছি, জায়গাটা বাঁধিয়ে দিয়েছি, নইলে তোমরাই মাড়িয়ে যাবে হনুমানজিকে। মহল্লেকা পাপ হোবে। তোমাদের কাজ করে দিয়েছি। দাও তিন হাজার। শুধু আমাদের ইট বালি সিমেণ্টের দাম ও নিজেদের লেবার চার্জ। হনুমানজির নামে বাড়তি কুছু নিচ্ছি না।

    ভয় পেয়ে সুনয়না টাকা দিলেন। সোহিনী স্কুল থেকে এখনো ফেরেনি। মেয়েটার জন্য বড্ড ভয় লাগে।

    সুনয়না থানায় দুপুরের দিকে একবার ফোন করেছেন, কিন্তু কোনো রেস্পন্স নেই। ওরা চলে যাবার পর আবার করেছেন, ফোন বেজেই গেল, কেউ ওঠাল না। বিকেলে আবার করতে কী ব্যাপার জিগ্যেস করল, মেয়েকে থ্রেট দেওয়া হয়েছে শুনে ঠিকানা নিল, দেখছি, বলে কেটে দিল।

    পরদিন সকালে থানা থেকে দুজন পুলিশ এল। সুনয়না তাদের সব কথা বললেন, দেখালেন, তারা আনমনার মত এদিক ওদিক দেখতে দেখতে শুনল কী না বোঝা গেল না। কিছু একটা নোট করল, মোবাইলে ছবি তুলল, তারপর চলে গেল।

    দুপুরের দিকে পুরসভার লোক এল। সুনয়না দেখিয়ে দিলেন, এখানে গোর দিয়েছে, ইটের তলায় বাঁদরটাকে রেখেছে। এটা ভেঙ্গে দিতে হবে, আমার বাড়ির গেট আটকে দিয়েছে।

    দেখুন, ওদের সঙ্গে কথা বলে মিটিয়ে নিন। এখানে থান হয়ে গেছে, আমরা থানে হাত দেব না। ধর্মীয় ব্যাপারে আঘাত হয়ে যাবে। ক্যাচাল হলে সামলাবে কে? আমাদের উপর থেকে নির্দেশ আছে, ধর্মীয় কোনো বিবাদে জড়ানো মানা।

    বাড়ির রাস্তা বন্ধ করে, চলাচলের পথের উপর মন্দির বানাবে, আপনারা কিছু করবেন না?

    ওই জায়গাটা তো আপনাদের চৌহদ্দির বাইরে। তা ছাড়া, ক্যাচাল হলে আমরা সামলাতে পারব না।

    তারা চলে গেল।

    সোহিনী স্কুলে গিয়ে তার কলিগদের বলেছিল ব্যাপারটা। দুয়েকজন দীর্ঘশ্বাস ছাড়ল, বলল, সত্যি, কিছুই করার নেই। এইসব গুণ্ডামি সবাই দেখে, জানে, কিন্তু কেউ প্রটেস্ট করে না, পুলিশও ধরে না। বলে আবার দীর্ঘশ্বাস ছাড়ল।

    কেউ বলল, পুলিশে বলেছ? কেউ জিগ্যেস করল, পুরসভাকে জানিয়েছ? কেউ বলল, বনবিভাগকে বলা উচিত ছিল। যখন শুনল, সবই করা হয়েছে, তখন বলল, তাহলে তো অপেক্ষা করতে হবে, ওরা কী করে দেখতে হবে।

    কিছুই হল না। বরং থানে এসে কারা যেন ফুল বাতাসা দিতে এবং মোমবাতি জ্বালাতে শুরু করল।

    পরের দিনও সোহিনীকে স্কুলে কেউ কেউ জিগ্যেস করল, পুলিশ এসেছিল? কী বলল?

    কিছুই হয়নি জেনে বলল, তাহলে শাসকদলের নেতাটেতা কারো সঙ্গে জানাশোনা নেই? সের’ম কাউকে ধরতে পারতে। আজকাল দাদা না ধরলে কোনো কাজ হয় না, জানো তো।

    পুলিশ, বনবিভাগ, পুরসভা কেউ কাজ করবে না, বলতে হবে শাসনযন্ত্রের বাইরে থাকা লোককে! কাকেই বা বলবে সোহিনী! হঠাৎ মনে পড়ল, বছর দুয়েক আগে তার বাবার কোভিড হলে সে সময় হাসপাতালে নিয়ে যেতে একটা ছেলে সাহায্য করেছিল। সে ছিল চেয়ারপার্টির কর্মী। যদিও দলের নাম মাতৃভূমি দল, তারাই শাসকের চেয়ারে আছে, এবং তাদের দলীয় প্রতীক চেয়ার, তাই তাদের সবাই চেয়ারপার্টি বলে। ছেলেটা দলের একজন ছোটখাটো নেতা। ছেলেটার পুরো নাম সোহিনী জানে না, কোথায় থাকে তাও জানা নেই, তার সঙ্গীরা তাকে প্রসূনদা বলে ডাকছিল। সেই সময়টায় এখানকার ক্লাব শাসকদলের সমর্থক জনসেবী যুবসঙ্ঘের পক্ষ থেকে সেবামূলক কাজে যুক্ত হয়ে সে এদিকে এসেছিল। সোহিনীর বাবা অসুস্থ হয়ে পড়ার পর ছেলেটি খবর পায় এবং অ্যাম্বুলেন্স পেতে সাহায্য করে। কোভিড হাসপাতালেও সে ফোন করেছিল, তাই বাবার জন্য বেড পেতে সুবিধা হয়েছিল। ছেলেটি নিজের ফোন নম্বর দিয়েছিল, সোহিনীর কাছে আছে। তবে বাবা হাসপাতাল থেকে আর বাড়ি ফেরেননি। তখনো শেষকৃত্যের ব্যাপারে ছেলেটি সহায়তা করেছিল, এবং কিছুদিন পরে রাস্তায় দেখা হলে কোনো অসুবিধা হচ্ছে কী না জিগ্যেস করেছিল, এবং হলে তাকে জানাতে বলেছিল।

    সোহিনী কাউকে বিব্রত করতে চায় না, খানিকটা সঙ্কোচের সঙ্গেই তাকে ফোন করল। প্রসূন সব শুনে বলল, ঠিক আছে, বিকেলে এসে দেখে যাব।

    বিকেলে এসে সে দেখে গেল। সুনয়না তাকে ভিতরে ডেকে চা খাওয়ালেন। যাবার সময় সে বলে গেল, চিন্তা করবেন না। ঠিক করে দেব সব। এই হনুমান-পার্টির বড্ড বাড় বেড়েছে। মহাবীরসঙ্ঘের সভ্যদের সমষ্টিগত ডাকনাম হয়েছে হনুমান পার্টি, কারণ তাদের ক্লাবের মাথায় হনুমানজির ধ্বজা ওড়ে।

    দুদিন পেরোলো কোনো ঘটনা ছাড়াই। তৃতীয়দিনে দুজন লোক এল সোহিনীদের বাড়ি। সুনয়নার সঙ্গে তারা দেখা করতে চায়। তারা প্রোমোটার, সুনয়না যদি রাজি থাকেন তাহলে তারা এই বাড়ি ভেঙ্গে চারতলা ফ্ল্যাট বানাবে। সুনয়নারা দু’খানা ফ্ল্যাট পাবেন, গ্যারেজ, দু’লাখ নগদ টাকাও। দুজন মহিলা একা একা এতবড় বাড়িতে থাকা মোটেই নিরাপদ নয়, মেণ্টেনেন্স করাও ঝকমারি। এই হনুমানজির থান সবে শুরু হয়েছে, এরপর এখানে ভিড় বাড়তে থাকবে, একটা বাড়ির কাছে এসব খুবই ঝামেলার হয়ে দাঁড়াবে। তাই বাড়ি যদি তাদের হাতে তুলে দেওয়া হয়, তাহলে তারাই তাঁদের আপাতত থাকবার জায়গা ঠিক করে দেবে, মালপত্র শিফ্‌ট করার ব্যবস্থা থেকে শুরু করে ফ্ল্যাট হয়ে গেলে ফিরিয়ে আনা অবধি।

    সুনয়না বললেন, না না, আমার এই বাড়ি ফ্ল্যাট করার মোটে ইচ্ছে নেই। বাড়ির কন্ডিশন ভাল, ছোটখাট রিপেয়ারিং দরকারমত করে নেওয়া যায়। আমরা এখানে তিরিশ বছর ধরে আছি, আমার মেয়ের জন্ম এখানে। আমার স্বামী তিলে তিলে টাকা জমিয়ে কষ্ট করে এই বাড়ি তৈরি করেছিলেন, এই বাড়ি আমি কী করে ছেড়ে দেব? এ বাড়িতে আমরা ভালই আছি, চারদিকের লোকজনের সঙ্গে পরিচয় আছে, পাড়াটা আমার ভাল লাগে।

    ওই মহাবীর ক্লাব ঝামেলা করে না?

    ওটা তো এই ক’বছর থেকে হয়েছে। এই সেদিনকার ঝামেলাটা ছাড়া এদ্দিন ঠিকই ছিল। প্রসূন বলেছে সে এই ঝামেলার কথা উপরে বলবে, ওরা কিছু একটা ব্যবস্থা করবে।

    প্রসূন বলেছে? তাহলে তো ঠিক আছে। আচ্ছা, তবুও যদি কখনো বাড়ি সম্পর্কে মত বদলান, আমাদের আগে জানাবেন। আমরা যথাসাধ্য আপনাকে খুশি করে দেব।

    তারা তাদের কার্ড দিয়ে গেল।

    বাড়ি বিক্রির প্রস্তাব যে সুনয়নার কাছে নতুন এসেছে তা নয়। ওই মহাবীর সঙ্ঘের রঘুর দাদা কিষনও প্রোমোটার, তাঁর স্বামী মারা যাবার মাসছয়েক পরে সেও একদিন তাঁকে বলেছিল বাড়িটা তার হাতে দিলে সে ফ্ল্যাট বানিয়ে দেবে। তাঁর রাজি হবার প্রশ্ন তখনো ছিল না, এখনো নয়।

    ক’দিন পর প্রসূন এল। সে আজকাল সোহিনীকে মাঝে মাঝে ফোন করে, খোঁজ খবর নেয়। রঘুর দল সোহিনীকে বিরক্ত করে না। হনুমান্‌জির নতুন থানে সকালবেলা কোনো এক ফাঁকে গ্রিলের দরজা খুলে, পুরুত এসে একমিনিটে ফুলজল ছিটিয়ে দরজা বন্ধ করে চলে যায়। সন্ধ্যার দিকেও একটু খোলে, মোমবাতি জ্বালানো হয়, পথচলতি লোকজন সেদিকে তাকিয়ে কপালে হাত ঠেকায় ভক্তিভরে। আহা, ঠাকুর তো। সুনয়নার নিজের মনেও একটু ভয়ভক্তি সংক্রমিত হয়, হনুমান্‌জির থান বাড়ির লাগোয়া। তবে বিতর্কিত বলে ইচ্ছে করলেও প্রদীপ জ্বালতে যান না।

    প্রসূন যেন ভুলেই গেছে এই থান সরানোর কথা। গেটের সমস্যা যেন কোনো সমস্যাই নয়। সোহিনী মনে করালে সে বলে, ও হয়ে যাবে’খন। তারপর হালকা চালে হেসে হেসে বলে, তোমরা তো এখনি তো গাড়ি কিনছ না, যে ওখান দিয়ে বেরোবে। যাতায়াতের রাস্তা তো আছেই। আসলে জানো তো, সামনেই পুরসভার নির্বাচন আছে। এখন কোনো থানে হাত দেওয়া রিস্কি, মানুষজন আজকাল খুব ধার্মিক হয়ে ওঠেছে, সুরথদা বলে দিয়েছেন। বিশ্বাস রাখো, নির্বাচন হলে তো আমরাই আসছি, তখন ওই থানসুদ্ধ মহাবীর ক্লাবটাকেই মায়ের ভোগে পাঠাব।

    সোহিনী সেই কথাই তার মাকে বলে। আধখানা গেট দিয়েই তাদের যাতায়াত অভ্যাস হয়ে গেছে।

    আচ্ছা, সোহিনী, তুমি কী আজ বিকেলে ফ্রি আছ? আজ সময় আছে, চলো, বিকেলে লেকে যাই। প্রসূন একদিন ফোনে কল করে ট্যাক্সি পাঠিয়ে দিয়েছে, নির্দিষ্ট জায়গায় অপেক্ষা করেছে, দুজনে একটা রেস্টুরেণ্টে ঢুকেছে। তারপর বেরিয়ে একটা বেঞ্চিতে পাশাপাশি বসে গল্প করেছে বেশ কিছুক্ষণ, পার্কে হেঁটেছে। কোনো অন্যায় স্পর্শ করেনি, সামান্য হাত ধরা ছাড়া। সোহিনীর মনে হয়েছে সে নির্ভরযোগ্য।

    তার নিজের কথাও বলেছে। সে বাংলায় এমএ, অল্পস্বল্প লেখালেখি করে, আগে ট্যুইশান করত, এখন আর করে না, কারণ পার্টির কাজের পর সময় হয় না। এখন শাসকদলের সর্বক্ষণের কর্মী। সামনের পুরভোটে টিকিট পাবার আশা আছে, তবে সেরকম হলে তার কাজের চাপ আরো বেড়ে যাবে। তার লেখা দু-একটা পিস সোহিনীকে পড়তে দিয়েছিল, সেগুলোতে জনগণের আশা-আকাঙ্ক্ষা পূরণের কথাই তুলে ধরা হয়েছে। তার বাড়ি সোহিনীদের বাড়ির গলি থেকে দুটো রাস্তা পেরিয়ে তৃতীয় গলিতে। খুব বেশিবছর হয়নি এলাকায়, পুরোনো বাড়ি কিনে সংস্কার করে নিয়েছে। তার বাবা ব্যবসায়ী, শহরের বড় বাজারে তেতলা কাপড়ের দোকান, শাড়ি, ছেলে, মেয়ে ও শিশুদের রেডিমেড, হোসিয়ারি, সবকিছুর আলাদা আলাদা কাউণ্টার, বেশ বড় প্রতিষ্ঠান, তাছাড়া পোশাক ও হোসিয়ারির কারখানাও আছে। তার কাকার আছে প্রোমোটিং-এর ব্যবসা। সে নিজে পুরো কলেজ ও ইউনিভার্সিটি লাইফ হস্টেলে ছিল, তখনই শাসক দলে জয়েন করেছিল। এ পাড়াটার এদিকটা অতটা চিনত না, করোনার সময়ে দলের বিধিবদ্ধ সমাজসেবায় নেমে বেশ পরিচিতি বেড়েছে। এবার পুরভোটে দাঁড়ালে সবদিক চেনা হয়ে যাবে।

    পু্রভোটের আগের ক’মাস থেকেই শহরের নালা সাফাই, রাস্তা মেরামত, প্রয়োজনমত বিদ্যুতের লাইন টেনে দেওয়া, নতুন আলো লাগানো এইসব নাগরিক পরিষেবা জোর কদমে দেওয়া হচ্ছে। নতুন প্রার্থীর উৎসাহ খুব। লোকে বলাবলি করছে, ছেলেটা খাটছে খুব। এ আমাদের ওয়ার্ডে এলে ভালই হবে। পুরোনো কাউন্সিলরের তেমন রেকর্ড ভাল ছিল না, তায় তিনি বয়স্ক এবং অসুস্থ। তাই পার্টি হাইকম্যাণ্ড যখন তাঁর নামে তেমন উৎসাহ দেখাচ্ছিল না, তিনি বিনা আপত্তিতেই পুরভোট থেকে সরে দাঁড়িয়েছেন।

    নির্বাচন হল, যেমন ভাবা গিয়েছিল, মাতৃভূমি দল বিরাটসংখ্যক ভোটে জিতল, প্রসূনও জিতল। দেশসেবক পার্টি হেরে ভুত। সোহিনী নির্বাচনের মাসদুই আগে থেকেই তার সাক্ষাৎ পায়নি, সে কাজে ব্যস্ত ছিল। এখনো তার সময় কম, নতুন পুরসভার কাউন্সিলর পদে শপথগ্রহণ, নতুন কাজের দায়িত্ব, না-জানা কত কাজ-- সোহিনী অনেক চেষ্টার পর রাতের দিকে ফোনে পেয়ে তাকে অভিনন্দন জানাল। ব্যস্ততার জন্য দুচার কথার পর প্রসূন ফোন ছাড়ল।

    ভোট জেতার প্রাথমিক উত্তেজনা এবং তার পরের আনুষঙ্গিক কৃত্য শেষ হলে সে একদিন সোহিনীকে তার অফিসে ডাকল। নতুন অফিসে বড় একখানা অর্ধচন্দ্রাকৃতি টেবিলের ওপাশে সে বসে আছে। টেবিলের এপাশে খান চারেক চেয়ার। দুজন লোক কিছু কথা বলছিল, সোহিনী ঢুকতে তারা বেরিয়ে গেল। সোহিনী একটু ঘাবড়ে গেছে। প্রসূনকে একসময় বেশ আপন মনে হয়েছিল, এখন যেন কেমন দূর। তাকে কেন ডাকল?

    প্রসূন মৃদু হেসে বলল, ভাল আছ তো সোহিনী? কাকিমা ভাল?

    সোহিনী আড়ষ্টভাবে বলল, ভালই।

    চা খাবে?

    না।

    একটু খাও, অফিসে প্রথম এলে, বলে কাউকে ফোন করে চা দিতে বলল।

    কেন ডাকলে?

    সোহিনীর মুখের দিকে হাসিমুখে তাকিয়ে প্রসূন বলল, কিছু দরকারি কথা আলোচনার জন্য ডেকেছি।

    সোহিনীর বুক ঢিপ ঢিপ করতে লাগল। চা এল, প্রসূন এক কাপ সোহিনীর দিকে এগিয়ে নিজে এক কাপ নিল। দুজনেই চায়ে চুমুক দিল।

    একটা কথা বলব সোহিনী, কাকিমার সংগে আলোচনা করে ঠিক করে নিও। তোমাদের ভালোর জন্যই বলছি, অন্যরকম ভেবো না। দুজনের জন্য তোমাদের এই বড় বাড়িটা একটু বেমানানই। এটা প্রোমোটিং-এর জন্যে দিলে ভাল হবে। তোমাদের মা-মেয়ের জন্য দুখানা বেশ বড় বড় ফ্ল্যাটই পেয়ে যাবে, যে ফ্লোরে তোমরা চাও। ইচ্ছে করলে একখানা ফ্ল্যাট বিক্রি করতে বা ভাড়াটে বসাতেও পার। প্লাস নগদ টাকাও দেওয়া হবে অন্তত তিন লাখ, বেশিও হতে পারে, সেটা অবশ্য প্রোমোটিং-এর খরচের ফাইনাল এস্টিমেট করার পর ঠিক করা হবে। তোমাদের কোনো ঝামেলা থাকবে না, বিল্ডিংএর কাজ হবার সময়টা শিফট করতে হবে, সেটাও প্রোমোটার নিজের দায়িত্বে করে দেবে, ফ্ল্যাটে ফেরার সময়ও তোমাদের শিফট করিয়ে দেবে, কোনো অসুবিধে হবে না, ভাড়াও লাগবে না। ফ্ল্যাটে বাড়ি মেন্টেনেন্সের বিশাল খরচা নেই, উটকো ঝামেলা থাকবে না, সিকিওরিটি থাকবে। ফ্ল্যাট হয়ে গেলে ওই হনুমানের থানও থাকবে না। মহাবীর ক্লাবটাও ওদিকের রাস্তা থেকে তুলে দেব।

    এজন্য ডাকলে আমাকে? এর আগে দুজন প্রোমোটার আমাদের প্রস্তাব দিয়েছিল আমরা রাজি হইনি, হব না। আমাদের বাড়ি কী করব আমরা নিজেরা বুঝব, কেন কেউ না কেউ উপদেশ দিয়ে যাচ্ছে বুঝি না।

    প্রসূন বলল, দেখো, মেয়েদের বিপদ থাকে, জানোই তো। সবসময় সেফ সাইডে থাকা উচিত, তাই তোমাকে বলা।

    তুমিও মহাবীর সঙ্ঘের গুন্ডাদের মতই কথা বলছ দেখছি।

    ছিঃ সোহিনী। একথা বলতে পারলে? আমি তোমাদের মঙ্গল চাই বলেই বলছি। কাউন্সিলর হিসেবে তো বটেই। তাছাড়া আমি তো তোমার বন্ধু।

    আমিও তাই ভেবেছিলাম, কিন্তু এখন আর ভাবতে পারছি না। এখন তা হলে উঠলাম।

    সোহিনী বাড়িতে ফিরল। সুনয়না তার মুখের ভাব দেখে বুঝলেন, কিছু একটা হয়েছে। সোহিনী মাকে বলল, অনেক কথা বলার আছে, মা। ফ্রেশ হয়ে এসে বলছি।

    খুব ক্লান্ত লাগছিল তার। চান করে আটপৌরে জামা পরে সে খাবার ঘরে এল। সুনয়না চা করে রেখেছিলেন, চা খেতে খেতে সোহিনী আদ্যোপান্ত বলল। সুনয়না বললেন, এতদিন ভেবেছিলাম, মহাবীর সঙ্ঘের গুণ্ডা, প্রমোটার এদের হাত থেকে বাঁচতে, প্রসূন সাহায্য করবে। এখন দেখছি উলটো। এ তো ক্ষমতাবান, শাসকদলের লোক। এর হাত থেকে রক্ষা পাওয়া দুরূহ।

    আমার মনে হয় জানো মা, এই আগে যে প্রোমোটার এসেছিল, এই হনুমানকাণ্ডের তিন চারদিন পর, সে এরই লোক। আমাদের বাড়ি দেখে প্রসূনই সেই প্রোমোটারকে পাঠিয়েছিল, দুটোর শর্ত প্রায় এক।

    ঠিকই বলছিস। কী ভেবেছিলাম, আর কী বেরোলো!

    কী ডিসিশন নেবে তাহলে?

    বাড়িটা ছেড়েই দিতে হবে, দেখছি। এ রকম করে পারা যাবে না। তোকে একা চলতে হয়, আমাকে একা থাকতে হয় সারাদিন--

    কিন্তু বাড়ি ছাড়ব কেন বলো তো? আমাদের বাড়ি, বাবার পরিশ্রমের বাড়ি, ছেড়ে কেন ফ্ল্যাটে যাব?

    ওদের শর্ত না মানলে আমাদের একঘরে হয়ে থাকতে হবে। শাসকদলকে কেউ চটাতে সাহস পাবে না। ডাকলে কাউকে পাব না। উলটে বিপদে পড়ব।

    এখন আর পাচ্ছিই বা কোথায়? যবে থেকে বাঁদর মরল, ঝামেলা হল, তবে থেকে পাড়াপড়শি কেউ জিগ্যেস করে না। এলেই যদি আমরা সাহায্য চাই এই ভয়ে, সোহিনী বলল। তবে, মা, দেখা যাক আর কিছুদিন। বাড়ি ছাড়ব না এখনই। দেখা যাক।

    থানটা ধীরে ধীরে ছোট একটা মন্দির হয়ে গেছে। দেওয়াল খানিকটা উঁচু হয়েছে, আপাতত মাথায় তেকোনা টিনের ছাউনি। ভেতরে ক’খানা টালি বিছিয়ে তার উপর হনুমানজির বাঁধানো ছবি। আজকাল একজন পূজারি রোজ দুবেলা পুজো করে যায় পাঁচ মিনিট সময় ধরে। মঙ্গলবার একটু বেশি সময় ধরে হয়। চালিসা পাঠ হয়, কিছু ভক্তসমাগম হয়। দানবাক্স বসেছে, প্রণামী টাকাপয়সা পড়ে বেশ। রাতে সেই বাক্স খুলে টাকা তুলতে রঘুরা আসে। অন্যদিক থেকে শাসক পার্টির সমর্থক জনসেবক সঙ্ঘের কয়েকজনও আসে বখরা নিতে। মহাবীর সঙ্ঘের গাঁইগুই সত্ত্বেও এদের কর্তৃত্ব অস্বীকার করার উপায় নেই। মহাবীর সঙ্ঘ যেহেতু এই মন্দিরের মূল ভিত গড়েছিল, তারাই নিজেদের হকদার ভাবত, অন্যদিকে এটা কাউন্সিলর প্রসূনের এলাকার অধীন হওয়ায় সেও তার অনুগামীদের নিজের বখরা আদায় করতে ওখানে পাঠাতে শুরু করেছিল। এক-এক দিন দুদলে টাকার পরিমাণ নিয়ে তর্কাতর্কি হত। একদিন খুবই ঝামেলা হয়ে গেল। মহাবীর সঙ্ঘের রুমে টাকা গোনার সময়ে কাউন্সিলারের অনুগামী জনসেবক সঙ্ঘের সভ্যরা টাকা হাপিস করে দেওয়ার অভিযোগ ওঠাল রঘুদের বিরুদ্ধে, দুপক্ষে তর্কাতর্কি গালাগালি থেকে মারপিট লেগে গেল। রঘুরা কাউন্সিলারের অনুগামী হিরনকে এমন পেটাল যে তাকে হাসপাতালে ভর্তি করতে হল, আর হিরনের সাকরেদরা সেখান থেকে বেরিয়ে মাঝরাতে মহাবীর সঙ্ঘের চত্বরে এবং মন্দিরের দেওয়ালে পর পর দুতিন খানা দিশি বোমা ছুঁড়ল। ছোট মন্দির খুব পোক্ত ছিল না, ইট সিমেণ্ট ছড়িয়ে পড়ল, ঢিলে টালি ভেঙ্গে ছত্রাখান, টিন উড়ে সোহিনীদের বারান্দায় পড়ল। গভীর রাতের ঘটনা হওয়ায় কেউ জখম হয়নি।

    পুলিশ এল, দুপক্ষে কজন গ্রেফতার হল, তাদের নির্দেশে ছড়ানো ভাঙা ইট সিমেণ্টের জঞ্জাল সরাতে গিয়ে কোনোক্রমে বিছানো ভাঙ্গা টালির নিচ থেকে বেরিয়ে এল বাঁদরের কঙ্কাল। একটা পথকুকুর এসে সেটার খুলি মুখে নিতেই লোক তেড়ে এল, মার মার করতে করতেই খুলি মুখে কুকুর পালিয়ে গেল। সংবাদমাধ্যমের লোক ছবি তুলল, বেশ ফলাও করে কাহিনি লিখল। বাঁদরের দেহাবশেষ এবং ভগ্ন মন্দিরের ইটপাথর সরানো হলেও কেউ সেখানে নতুন মন্দির বানানোর সংকল্প আপাতত করেনি। তবে সোহিনীরা এখনও আধখানা গেট দিয়েই বাড়ি ঢোকে, কারণ পুলিশ জায়গাটা ‘বিতর্কিত’ বলে ঘেরা দিয়ে রেখেছে।



    অলংকরণ (Artwork) : রাহুল মজুমদার
  • মন্তব্য জমা দিন / Make a comment
  • (?)
  • মন্তব্য পড়ুন / Read comments