• Parabaas
    Parabaas : পরবাস : বাংলা ভাষা, সাহিত্য ও সংস্কৃতি
  • পরবাস | সংখ্যা ৯৭ | জানুয়ারি ২০২৫ | গ্রন্থ-সমালোচনা
    Share
  • বনামের দ্বান্দ্বিকতা : অজিত সিং প্যারাডক্স : নীলাদ্রি নিয়োগী

    অজিত সিং বনাম অজিত সিং — তৃষ্ণা বসাক ; প্রচ্ছদ- মৃণাল শীল; প্রকাশক- দে'জ পাবলিশিং, কলকাতা; প্রথম প্রকাশ- এপ্রিল ২০২৩; ISBN: 978-81-19033-93-5

    The Dark Knight সিনেমায় জোকার একটা অসম্ভব সুন্দর কথা বলেছে। নিজের পরিচয় দিতে গিয়ে সে জানায়, “Introduce a little anarchy. Upset the established order, and everything becomes chaos. I’m an agent of chaos.” মানুষ আসলে কোনও অবস্থাতেই বিশৃঙ্খলা নিতে পারে না। সবসময় চেষ্টা করে সেখানে একটা অর্ডার চাপিয়ে দিতে। আর সেখান থেকেই তৈরি হয় ন্যারেটিভ। জোকারের মতো প্রবল দার্শনিক কেউ কেউই শুধু পারে মানব-কর্তৃক নির্মিত সাধের অথচ ঠুনকো সেই ইমারৎকে নির্মম ধূলিসাৎ করে দিতে। সৃষ্টি করতে পারে একটা কাউন্টার ন্যারেটিভ, যেখানে প্রতিটি মানুষ তার গহন গোপনে লালিত কেওস-টি প্রত্যক্ষ করে শিউরে উঠবে আপাদমস্তক। কাল্পনিক গথাম শহরের নিজস্ব ‘নাইট’— ব্যাটম্যানকে দিয়ে সেই অরাজকতা সাময়িক ধামাচাপা দেওয়া যায় বটে, কিন্তু সার্বিকভাবে জনতার মনে সু-চেতনা আনা? সে তো ‘অনেক শতাব্দীর মনীষীর কাজ’। এখানে, ঠিক এখানেই মুদ্রার একটা উল্টো পিঠ চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দেয় অজিত সিং। তৃষ্ণা বসাকের ‘অজিত সিং বনাম অজিত সিং’ উপন্যাসের অ্যান্টাগনিস্ট অজিত সিং। অ্যানার্কিকেই যেন বহুমুখী অপরাধ দিয়ে একটা প্রত্নআঁধার সিম্ফনিতে বাঁধতে চায় সে।

    এই উপন্যাস প্রকৃত প্রস্তাবে ক্ষমতার রাজনীতির ওপর প্রিজমের ভেতর দিয়ে নানা বর্ণের আলো ফেলে যাওয়ার এক নিরন্তর প্রয়াস। একটি টেক্সট তখনই জটিল ও বহুস্তরীয় হয়ে ওঠে, যখন সেখানে নির্দিষ্ট স্থান ও কাল বর্ণিত হওয়া সত্ত্বেও তার সামূহিক ঘটনাসূত্র— যে কোনও আর্থ-সামাজিক প্রেক্ষাপটে এবং সময়পর্বে প্রাসঙ্গিক থেকে যায়। পাশাপাশি একটা গোটা শহর যখন চূড়ান্ত আইডেন্টিটি ক্রাইসিসে ভুগছে, তখন সেখানকার কিছু মানুষ অথবা না-মানুষের যুগপৎ অস্তিত্ব ও আত্মপরিচয়ের সংকট ক্রমশ যেন আরও ঘুলিয়ে তুলতে পারে যুদ্ধ-পরিস্থিতি; আখ্যানকেও করে তোলে বহুকৌণিক। হলোগ্রামে ফুটে ওঠা ক্ষমতার বিবিধ অলিন্দের অভ্যন্তরেও তখন ধীরে ধীরে আয়তন পায় এক অনিবার্য অন্তর্ঘাত। এই উপন্যাস তাই নানামাত্রিক দুর্নীতির ইতিবৃত্ত হয়েও নিছক ক্রাইম থ্রিলারে পর্যবসিত হয়নি। অপরাধের পশ্চাতে পূর্বাপর অপরাধ-মনস্কতা; নিপীড়িত সমাজ-বাস্তবতার ঠিক সমান্তরালে এক বিকল্প জাদু-বাস্তবতা এবং প্রতিটি প্রধান চরিত্রের অন্তরাত্মকথনের মধ্য দিয়ে স্ট্রিম অফ কনসাসনেসের সমৃদ্ধিমান ব্যবহার— উপন্যাস জুড়েই অমোঘ পলিফোনি সৃষ্টি করেছে। লেখক অত্যন্ত সচেতনভাবে, অথচ, খানিকটা যেন উদাসীন তন্ময়তায় একের পর এক ধূসর চরিত্র চিত্রণ করে তছনছ করে দিয়েছেন সাদা-কালোর চিরন্তন বাইনারি। সেই সব ধূসরিমা চরিত্রেরা, অতঃপর, তাদের নির্ধারিত পরিসরেই নিজস্ব বীক্ষণবিন্দু থেকে অসীম সম্ভাবনার এক জায়মান কথনবিশ্ব গড়ে তুলেছে।

    ‘অজিত সিং বনাম অজিত সিং’-এর কাহিনি আবর্তিত হয়েছে শহরের এক ‘পাঁচ তারা বিশ্ববিদ্যালয়’-কে কেন্দ্র করে। নামোল্লেখ না থাকলেও আর্টস, সায়েন্স ও ইঞ্জিনিয়ারিং সমৃদ্ধ, নানাবিধ আন্দোলনের পীঠস্থান এবং প্রগতিশীল ছাত্রছাত্রীদের আঁতুড় ঘর এই বিশ্ববিদ্যালয়কে চিনে নিতে সমস্যা হয় না। সেই বিশ্ববিদ্যালয় ও তৎসহ আরও বিস্তীর্ণ এলাকায় যাবতীয় ক্ষমতার কেন্দ্রে রয়েছে অজিত সিং। তার অঙ্গুলিহেলন ছাড়া ক্যাম্পাসের একটা পাতাও নড়ে না। কে গবেষণার সুযোগ পাবে, কে পাবে চাকরি— থেকে শুরু করে কার প্রমোশন হবে, আর কাকে ক্ষমতা এমনকি জীবন থেকেও মুছে ফেলা হবে— সব কিছুর নির্ধারক অপ্রতিরোধ্য অজিত। এতদূর পড়ে মনে হতে পারে, এমন ‘টাইপ’ চরিত্র তো বাংলা সাহিত্যে বহু আছে! তাহলে অজিতের বিশেষত্ব কোথায়, যে তাকে নিয়ে নির্মিত হতে পারে কোনও উত্তরাধুনিক টেক্সট? আসলে অজিতের চারিত্র্যে একটা অদ্ভুত প্যরাডক্স লক্ষিত হয়। তার মধ্যে আছে একইসঙ্গে আত্মবিশ্বাস ও হীনমন্যতা। একই মুহূর্তে তার মনে খেলে যেতে পারে আত্মতৃপ্তি ও আত্মক্ষোভ। আবার সে নিরন্তর নির্বিশেষে আত্ম-পর বিশ্লেষণ করতেও সক্ষম। একটা অনিবারণীয় হ্যামলেটীয় দ্বিধা তার মননকে অনুক্ষণ আচ্ছন্ন রাখে। তাই হায়ারার্কির সর্বোচ্চ ক্রমে থাকা সত্ত্বেও অজিতের বিষাদবর্ণ ভাল্নারেবল সত্তা অপ্রকাশ্য থাকে না।

    ক্ষমতার কেন্দ্রীকরণ ঘটেছে আরেক নারী চরিত্র মোহরমালার মধ্যেও। মফঃস্বলের কলেজে অধ্যাপনা দিয়ে জীবন শুরু করলেও খুব দ্রুত ক্ষমতার খেলাটা ধরে ফেলে সে। এরপর বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ানোর সুযোগ পাওয়া এবং ক্রমে অ্যাডমিনিস্ট্রেশনে পৌঁছে যাওয়া— সেই অনায়াস অভিযোজনেরই কন্টিনিউয়েশন। উচ্চাকাঙ্ক্ষা, শরীর নিয়ে অযথা ট্যাবু না থাকা, মানব-চরিত্র যথার্থ অনুধাবন ক্ষমতা, সর্বোপরি প্রখর ব্যক্তিত্ব তাকে সাফল্য ও ক্ষমতার চুড়ায় পৌঁছে দিয়েছে। এতদসত্ত্বেও মোহরের মধ্যে অজিতের মতোই আত্মবৈপরীত্য বিদ্যমান। নামমাত্র স্বামী ভবানী শাস্ত্রীকে সমঝে চলে সে। শহরের বড় বড় মাথাদের টিকি জ্যোতিষী ভবানীর হাতে রয়েছে বলে নয়; বরং তার ভবিষ্যৎবাণীর যাথার্থ্য মোহরকে আবিষ্ট রাখে চিরকাল। পাশাপাশি ভণ্ড জেনেও ভবানীর অনিষ্ট করার ক্ষমতাকে এক আশ্চর্য যুক্তিহীন অবচেতনে লালন করে মোহর। এ ছাড়াও কন্যা কিঞ্জল তার অন্যতম দুর্বল জায়গা। বুদ্ধিমতী, দৃঢ় মানসিকতার কিঞ্জল তার পিতার মনোবিকারের শিকার। ফলে, অনাময় ট্রমাক্রান্ত সে শৈশব থেকেই। মায়ের প্রতি কিঞ্জলের শ্রদ্ধা, ভালোবাসা আর পরম নির্ভরতা যেমন আছে, তেমনই সূক্ষ্ম এক হিংসা তথা ঘৃণা ও একরাশ অভিমানও রয়েছে সঙ্গত কারণে। মা ও মেয়ের সম্পর্কের এক অনতিক্রম্য স্ববিরোধ অনুপম দক্ষতায় ফুটিয়ে তুলেছেন লেখক।

    কেন্দ্রীকৃত ক্ষমতার ঠিক বিপ্রতীপে রয়েছে দোলন, পটা, তাজমুলের মতো মানুষেরা। ক্লিশে হলেও ‘নিপীড়িত-বঞ্চিত’ শব্দবন্ধ যাদের জন্য যথাযথ। পূর্বোল্লিখিত দ্বিমাত্রিক সংকট (অস্তিত্ব ও আত্মপরিচয়ের) তাদের যাপনে গাঢ়তর ছায়া ফেলে যায় নিরন্তর। তাজমুলদের নিজস্ব স্বর শুধু যে সংলাপের মাধ্যমেই শোনা যায়, তা নয়। কখনও কখনও সেইসব আর্ত-সংশয়বেদ্য হতচেতন স্বর যেন আখ্যানেরই সামুহিক টোন-কে ব্যত্যয়হীন অনুবর্তনে তুলে ধরে। তাদের সঙ্গে নানাভাবে খারাপ হয়ে চলেছে। সে তো বাস্তবিকই আমাদের সকলের সঙ্গেই ঘটে থাকে। কিন্তু দোলন বা পটাদের মতো অপেক্ষাতুর অথচ চিরক্লান্ত ক্রীড়নক-সত্তা— যে-সমস্ত যন্ত্রণার সারাৎসার প্রত্যক্ষ করে মুহুর্মুহু শিউরে ওঠে, তা তাদের অস্তিত্বকে ধরেই যেন আমূল নাড়িয়ে দিতে থাকে। তাদের অনাময় ক্ষতচিহ্ন এবং দুর্মর পরিত্রাণহীন ট্র্যাজেডির প্রতি বাড়তি কোনও প্রকাশ্য এমপ্যাথি না দেখিয়েও লেখক এইসব চরিত্রের ভিতরভুবন অনায়াস সহজতায় দীপ্রতর করে তুলেছেন। হেরে গিয়ে কিংবা হারিয়ে গিয়েও তাই দোলনরা শেষ পর্যন্ত এক অভাবিত অভিযানে নিজেদের ঠিক খুঁজে পায়!

    আর এইসব টুকরো-টাকরা হারিয়ে যাওয়া মানুষদের এক বিচিত্র সংগ্রহশালা গড়ে তোলে শতরূপা। সে নিজেও রাজনৈতিক ষড়যন্ত্রের শিকার। তার উন্নতি ও জনপ্রিয়তা দেখে কমপ্লেক্সে ভুগে কিছু ক্ষমতাবান মানুষ প্রায় পঁচিশ বছর আগে তাকে গুম করেছিল। প্রসঙ্গত, এই অংশটি অনতি-অতীতের এক সত্য ঘটনার আদলে লিখিত। পার্থক্য এটাই যে মূল ঘটনার কোনও সমাধান আজও হয়নি। আর সেটারই শিল্পসম্মত সুযোগ লেখক এখানে পুরোমাত্রায় নিয়েছেন। তাঁর কল্পনায় তাই শতরূপা বেঁচে তো আছেই, সে যেন তৈরি করে ফেলেছে ক্ষমতার এক বিকল্প কেন্দ্র। সেখানে হারিয়ে যাওয়া মানুষদের একত্র করে সে প্রস্তুতি নেয় এক চূড়ান্ত অন্তর্ঘাতের। বস্তুত, শতরূপা এবং পেশাদার খুনি মার্কেজকে কেন্দ্র করে উপন্যাসে অসম্ভব অর্থপূর্ণ কিছু জাদুবাস্তব মুহূর্ত সৃষ্টি হয়েছে। এই মার্কেজ চরিত্রটিও যুগপৎ মায়ানিবিড় ও বহুস্তরান্বিত। সে যেমন নিবিষ্টচিত্ত নিপুণতায় মানুষকে হত্যা করতে পারে, আবার অব্যবহিত পরেই অনবচ্ছিন্ন মনোযোগে গার্সিয়া মার্কেজের বই পড়ে! মার্কেজের ভক্ত বলেই বন্ধুমহলে তার এহেন নামকরণ। স্বল্পভাষী, ব্যক্তিত্ববান, দর্শনায়িত ও আত্মতাময় এই চরিত্রটি মৃত্যুর সঙ্গে দেওয়াল-পিঠ সংগ্রাম করতে করতেই বিকল্প এক বাস্তবতায় পৌঁছে যায় পাঠককে সঙ্গে নিয়ে। পরাবাস্তব সেই আর্কাইভে মার্কেজ তার প্রথম ও একমাত্র প্রেমিকাকে পায় কিংবা পায় না; তার পছন্দের বই পড়তে পারে কিংবা পারে না; আস্তিত্বিক অবসাদে ভুগতে ভুগতে সে ক্রমে আত্মমৃগয়ায় মেতে ওঠে কিংবা ওঠে না— সবটাই লেখক একটা ওপেন এন্ডে গিয়ে সুতো ছেড়ে রেখেছেন। পাঠককে চিন্তার অবকাশ করে দেওয়া ছাড়া অন্তর্মনস্ক এই চরিত্রের কোনও অমোঘ ও ঈপ্সিত পরিণতি দেখানো সম্ভবও ছিল না।

    তৃষ্ণা বসাক নিটোল কাহিনি-সমৃদ্ধ কোনও গোলগাল ও চটকদার উপন্যাস লিখতে বসেননি। জীবনের কিছু খণ্ড মুহূর্তে সার্চ লাইটের তীব্র আলো ফেলেছেন মাত্র। আর সেই প্রতিস্পর্ধী আলোতেই ফুটে উঠেছে কিছু পূর্ণাবয়ব মানুষের সূক্ষ্মভাবানুভূতি ও প্রক্রিয়াত্মক অবচেতন। সেইসঙ্গে সংঘাতপূর্ণ এই সময়ে ক্ষমতার অলিন্দের দিকে ছুঁড়ে দিতে চেয়েছেন কয়েকটি অস্বস্তিকাতর পরিপ্রশ্ন। নিষ্পেষিত ও জীবন্মৃত কিছু ফ্যাতাড়ু-সদৃশ মানুষের মধ্যে যে সাবভার্সন প্রত্যক্ষ করতে ও করাতে চেয়েছেন তিনি, সেটাই ক্রমশ যুক্তিবিন্যাসের অতিনির্দিষ্টতায় একটা আদল পায় আখ্যানের। তবে দুয়েকটি ক্ষেত্রে পোয়েটিক জাস্টিসের পিচ্ছিল জনপ্রিয় পথ উপেক্ষা করতে পারেননি লেখক। অস্বীকৃত ও অবৈধ সন্তান গগনের দ্বারা অরিষ্টনেমি যজ্ঞের ঋত্বিক— কুচক্রী ভবানী শাস্ত্রীর অগ্নিদগ্ধ হয়ে মৃত্যুবরণ; পুরুষতান্ত্রিক, ইগোবান অমরনাথের শিক্ষা, সংস্কৃতি, স্টেটাস ও ক্ষমতার যাবতীয় অহং একাদিক্রমে গুঁড়িয়ে যাওয়া; সর্বোপরি বৃদ্ধা আঙ্গুরবালার জমি দখল করার জন্য তাকে দিঘির জলে ডুবিয়ে মারা অজিতের শেষ পর্যন্ত গাড়ি অ্যাক্সিডেন্টের পর জলে ডুবেই মৃত্যু— সবটাই নিয়তি-নির্ধারিত পরিণতিকে তুলে ধরার পাশাপাশি পাঠক-তৃপ্তির আপাত-উদাসীন প্রয়াসকেও দ্যোতিত করে।

    উপন্যাসের নামকরণের মধ্যে অজিত সিং-এর আত্মবৈপরীত্যই আভাসিত হয়েছে বটে, তবে ছোট বড় প্রতিটি চরিত্রই কমবেশি নিজের মুখোমুখি হয়েছে এখানে। আধুনিক জীবনের জটিলতা ছাপ ফেলে গেছে তাদের স্বভাব-চিহ্নিত মননে। তারা কিছু ভাবছে, তারপর আবার নিজেকেই কাউন্টার করছে, নিজের কথা-মত-মানসিকতাকে ডিফার করছে, চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দিচ্ছে! তারা কেউই যেন নিজেকে নিয়ে সুখী নয়। হওয়ার কথাও ছিল না নিশ্চিতভাবেই। একটা আদ্যন্ত অনিশ্চিত কালবেলায় কোনও সংবেদনশীল মানুষই কি সম্পূর্ণত কল্যাণস্থিতিতে ভরসা রেখে বেঁচে থাকতে পারে? এই অসহনীয় মুমূর্ষা-উৎক্রান্ত প্রতিবেশে, কি ধনী কি দরিদ্র, কি নারী কি পুরুষ— সকলেই কিন্তু ক্ষমতা-নিরপেক্ষ এক যৌথ-নিউরোসিসে আক্রান্ত। প্রত্যেকেই আমরা এক অনোন্যপায় মান্যতা পেতে চাইছি একে অপরের থেকে; অথচ ভেবে দেখছি না জান্তে বা অজান্তেই কীভাবে প্রতিনিয়ত আমরা ‘অপরায়ন’ করে চলেছি অল্পবিস্তর ঘৃণা সহযোগে আমাদের অতৃপ্ত অহং ম্যারিনেট করে। এভাবেই অসংখ্য অদৃশ্য ‘বনাম’-কে সমীকৃত করে নিজস্ব বৃত্ত বাড়াতে বাড়াতেই কি একদিন নিজের ভেতরে অন্বয়ব্যতিরেকী বহুমুখী ‘বনাম’ নিয়ে আত্মপ্রতারণায় মেতে উঠি না আমরা? ‘অজিত সিং বনাম অজিত সিং’-এর প্রশ্নতীক্ষ্ণ টেক্সট কার্যত এইসব আমি-কেই বনামের দ্বান্দ্বিকতায় অলোকসামান্য করে তুলেছে।

  • মন্তব্য জমা দিন / Make a comment
  • (?)
  • মন্তব্য পড়ুন / Read comments