বিশাল আকাশের নিচে, পার্কের বেঞ্চিতে, এক পাগল বুড়ো ব’সে থাকে। বুড়ো ব’সে ব’সে বিভিন্ন মেঘ সম্বন্ধে কথা বলে। বুড়োর চুল ধবধবে সাদা। দাড়িটাও সাদা। গোঁফটাও। বুড়োর মুখ পরিচ্ছন্ন, দাঁতগুলো ঝকঝক করে। তার প্রাচীন চোখদুটো জীবন্ত, সদ্যোজাত শিশুর দৃষ্টির মত।
আকাশ যখন হালকা নীল, যেমন ভোরবেলাতে, বুড়ো তখন নিঃশব্দে শূন্যপানে উপরের দিকে তাকিয়ে থাকে। আকাশে যখন গাঢ় একটা অসিতোপল আভা ফোটে, তার দৃষ্টি তখন গভীর হয়ে চারপাশে ছড়িয়ে যায়।
কিন্তু যখন আকাশ দিয়ে মেঘ যায়, তখন বুড়ো কথা বলে। প্রচুর উৎসাহ নিয়ে সে তখন সাদা সাদা মেঘের গঠন ও আকার নিয়ে বকবক করে। স্তরের উপর স্তর মেঘেদের বর্ণনা ক’রে বুড়ো কবিতার মত কথা বলে। মেঘেদের কত রকমের ধূসরতা, কত গূঢ় বর্ণভেদ - তাই নিয়ে সে গীতি-গাথা আবৃত্তি করে (কারণ মেঘেরা খুব কমই শুধুমাত্র সাদা-কালো হয়)।
যখন সাদা তুলোর মত জলদ খুব আস্তে আস্তে আশমানে ভেসে যায়, বুড়ো তখন মিষ্টি সুরে গান গায়। সেই গান দীর্ঘ প্রতীক্ষার। সেই গান স্থিরতার। আর যখন শুভ্র আর কৃষ্ণ বিদ্রোহী মেঘেরা পরস্পরের সাথে প্রতিযোগিতা ক’রে ছুটে চলে, তখন সে গলা উঁচিয়ে ভালোবাসার গান গায়, কামনার গান। সেই গান ব্যথার আর ভগ্ন হৃদয়ের গান।
কখনো ঘন কালো মেঘ দিগন্ত অন্ধকার ক’রে আসে, পৃথিবীকে গ্রাস করবে ব’লে ভয় দেখায়। বুড়ো তখন হাসে, প্রথমে মৃদু স্মিত, তারপর সশব্দ। যখন সন্ধ্যাবেলা আকাশ পরিষ্কার হয়ে যায়, আর সব আলো আস্তে আস্তে গভীরতর নীল হ’তে থাকে, সাথে একটু একটু কমলার রেশ, তখন বুড়ো ফিসফিস করে কাউকে যেন প্রেমের কথা বলে। যখন রাত হয় আর কোনো মেঘ থাকে না, তখন সে নির্বাক হয়ে যায়, তা সে নিশ্ছিদ্র অন্ধকারেই হোক অথবা অযুত নক্ষত্রের সমাবেশে।
বুড়োকে আমার ভালো লাগে। আমার মনের আকাশের তলায় সে বেঞ্চিতে ব’সে থাকে। আবহাওয়া পালটে যেতে থাকে ক্রমাগত, অবিরাম।