শীতের মাস। ১৯৮১ সাল। ইন্ডিয়ান ফিজিক্স অ্যাসোসিয়েশন (আই পি এ)-এর আমন্ত্রণে সালাম সাহেব ভারতে এসেছেন ‘আর ডি বিড়লা মেমোরিয়াল অ্যাওয়ার্ড’ গ্রহণ করতে। সম্ভবত সেই বছর থেকেই আই পি এ’র তরফ থেকে ওই পুরস্কারটি দেওয়ার রেওয়াজ শুরু হয়েছে। মূল অনুষ্ঠান বম্বেতে অনুষ্ঠিত হলেও কলকাতার আমন্ত্রণ উনি সাদরে গ্রহণ করেন। একদিনের ঝটিকা সফরে উনি চার-পাঁচ ঘন্টা কাটিয়েছিলেন ভেরিয়েবল এনার্জি সাইক্লোট্রন সেন্টার ও সাহা ইন্সটিটিউট অফ্ নিউক্লিয়ার ফিজিক্সের সল্টলেক ক্যাম্পাসে। বক্তৃতা, প্রশ্নোত্তরের পালা এবং ল্যাবরেটরি পরিদর্শনের পর মধ্যাহ্নভোজের বিরতিতে অনেকটা সময়ের জন্য ওনাকে কাছ থেকে দেখার সুযোগ হয়। চোখাচোখি হতেই ভ্রুকুঞ্চিত করে মুখ নাড়লেন। ভাবটা যেন “কী কিছু বলবে?” এরকম একটা সুযোগই আমি খুঁজছিলাম। জীবন সফল হলে সাধারণের থেকে দূরে সরিয়ে রাখো—সম্ভবত সেই তত্ত্বে উনি বিশ্বাস করেন না। যাইহোক, মনে বল সঞ্চয় করে প্রশ্নটা করে ফেললাম। অনেকটা খবরের কাগজের রিপোর্টারের মত। প্রশ্নটা ছিল আমার এরকম- “আমি একজন এনজিনিয়ার। মৌলিক বিজ্ঞান সম্পর্কে আদৌ বিশেষ কিছু জানা নেই। সহজ ভাষায় একটু বলবেন আপনি কী আবিষ্কার করেছেন?” যে কোনও নামী মানুষের, বিশেষ করে নোবেলজয়ীদের মত মানুষজনের সংগে আমাদের মত অখ্যাতজনের একটুকরো আলোচনার, সামান্য হলেও একটা দলিলগত মূল্য থাকে। জড়িয়ে থাকে ব্যক্তিগত স্মৃতি। সেই কারণেই এই লেখা।
আমার প্রশ্নের উত্তরে তিনি যা বলেছিলেন তার প্রায় অনেকটাই ভুলে গেছি এই ষোল-সতেরো বছরে। আসলে ব্যাপারটা আদৌ বুঝতাম না তখন। যাইহোক স্মৃতির সংগে কল্পনা মিশিয়ে তাঁর ইংরেজিতে দেওয়া উত্তরের বংগানুবাদ করলে এরকম দাঁড়ায়- “প্রকৃতি দেবীর রংগমঞ্চে অহরহ যে নাটক চলছে তাদের নায়ক-নায়িকারা হলেন পদার্থের মৌলিক কণা। তাদের ছলনাময়ী চাল-চলনের যে অপার রহস্য তার একটা নিয়ম খুঁজে বার করেছি আমরা। প্রকৃতির অনেক কিছু সত্যির মধ্যে এটাও একটা।” ঠোঁটের উপর স্মিত হাসি। আর কিছু না বললেও অনেক কিছু বলার হাসি। হয়তো আশা করেছিলেন আরো কিছু প্রশ্ন। আমার অক্ষমতা বাদ সেধেছিল। শান্ত অথচ চেহারার মধ্যে রাশভারি ভাব, সাজপোষাকে কেতাদুরস্ত। চোখে ভারী ফ্রেমের চশমা, চুল কিছুটা পাতলা। জ্বলজ্বল করছে চোখের চাহনি। ঠোঁটের কোলে প্রশান্তির হাসি। সব মিলিয়ে ব্যক্তিত্বের মধ্যে ধরা পড়েছে একটা অভিজাত রোশনাই আর আত্মপ্রত্যয়ের গরিমা। একই সঙ্গে মনে হয়েছে তিনি এমনই ব্যক্তিত্ব যিনি সাধারণ আর নিজের মধ্যে দুর্ভেদের অলীক দেওয়াল গড়ে তোলেননি। তাঁর সঙ্গে কথা বলতে গেলে ব্যক্তিত্বের বর্মের খোঁচায় ক্ষতবিক্ষত হতে পারি- এমন সম্ভাবনা মনের মধ্যে উঁকি দেয় না। হয়তো সেই কারণেই তাঁর সামনে অকপটে এমন প্রশ্ন রাখতে পারা গেছিল। নিজের গণ্ডীর বাইরে কাউকে আমল না দেওয়ার স্বভাবটা, যেমন আজকাল স্বঘোষিত বিখ্যাত মানুষজনের মধ্যে দেখা যায়, আদৌ সেরকম নয়।
জন্ম ২৯শে জানুয়ারি, ১৯২৬ সাল, অধুনা পাকিস্তানের ঝাং নামে দারিদ্র্য কবলিত অখ্যাত একটি অঞ্চলে। পিতা ছিলেন স্কুল শিক্ষক। জীবনের সব পরীক্ষাতেই সালাম নতুন করে রেকর্ড সৃষ্টি করেছেন। চোদ্দ বছরের সালাম ম্যাট্রিক পরীক্ষার ফলাফল জেনে লাহোরের রাস্তায় সাইকেল চালিয়ে বাড়ি ফেরার সময় শহরের মানুষজন রাস্তায় নেমে এসে তার প্রতি শুভেচ্ছাবাণী বিতরণ করেছিলেন। সরকারি বৃত্তি নিয়ে পাঞ্জাব বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৯৪৬ সালে মাত্র কুড়ি বছর বয়সে এমএ শেষ করার পর কেম্ব্রিজের সেন্ট জনস্ কলেজে চলে যান। সেখানে গণিত ও পদার্থবিদ্যায় রেকর্ড নম্বর পেয়ে বিএ (অনার্স) পরীক্ষায় প্রথম স্থান অধিকার করেন। ১৯৪৯ সালে ক্যাভেনডিশ ল্যাবরেটরিতে গবেষণার কাজে তিনি আমন্ত্রিত হন।
কেম্ব্রিজে পল্ ম্যাথুজের অধীনে তিনি গবেষণার কাজ শুরু করেন। কোয়ান্টাম ফিল্ড থিওরিতে অসামান্য অবদানের জন্য এক বছরের মধ্যেই ১৯৫০ সালে কেম্ব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয় তাঁকে স্মিথ পুরস্কারে সম্মানিত করে। ১৯৫১ সালে পি এইচ ডি থিসিস জমা নেওয়ার সময় ‘আবদুস সালাম’ আন্তর্জাতিক বিজ্ঞানী মহলে এক অতি পরিচিত নাম। অল্প কিছুদিন আমেরিকার প্রিন্সটন বিশ্ববিদ্যালয়ে কাটাবার পর সালাম লাহোরে ফিরে এসে সরকারি কলেজে, যে কলেজে নিজে লেখাপড়া করেছিলেন, গণিত বিভাগে যোগ দেন। কিসের টানে তিনি দেশে ফিরেছিলেন? ছাত্রাবস্থায় তিনি বুঝতে পেরেছিলেন যে তৃতীয় বিশ্বে অনেক প্রতিভা আছেন যাঁরা গবেষণার উপযুক্ত পরিকাঠামোর অভাবে আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে পিছিয়ে পড়ছেন। তিনি চিন্তা করেছিলেন যে তাত্ত্বিক পদার্থবিদ্যার এমন একটি আন্তর্জাতিক মানের প্রতিষ্ঠান লাহোরে তিনি গড়ে তুলবেন, যেখানে তৃতীয় বিশ্বের বিজ্ঞানীরা অগ্রাধিকার পাবেন এবং যোগ্য ও প্রতিভাশালী বিজ্ঞানীরা বছরের অন্তত কিছুটা সময় সুস্থ গবেষণার কাজে আত্মনিয়োগ করতে পারবেন। সেদিন তাঁর আশা পূর্ণ হয়নি। নিজের গবেষণার কাজও ব্যাহত হচ্ছিল। কাজেই ১৯৫৪ সালে কেম্ব্রিজে ফিরে গিয়ে লেকচারার পদে বহাল হন। ১৯৫৭ সালে মাত্র তিরিশ বছর বয়সে লন্ডনের ইম্পিরিয়াল কলেজ তাঁকে অধ্যাপক পদে নিযুক্ত করে।
পদার্থবিদ্যাকে ঘিরে ৫৭৫ খানা গবেষণা পত্রের প্রকাশনা আবদুস সালামের নিরলস কর্মজীবনের সাক্ষী হয়ে আছে। উচ্চশক্তিতে পদার্থ কণিকার আচরণের গবেষণায় তাঁর অসাধারণ অবদান পদার্থবিদ্যার ইতিহাসে তাঁকে অমর করে রাখবে। যুগান্তকারী যে কাজের জন্য ১৯৭৯ সালে স্টিভেন ওয়াইনবার্গ ও শেলডন গ্লাসোর সংগে তিনি নোবেল পুরস্কার ভাগ করে নিয়েছিলেন সে ব্যাপারে যতটুকু ধারণা করতে পেরেছি তা পাঠকের কাছে তুলে ধরছি। তবে মূল বক্তব্যে আসার আগে মুখবন্ধ হিসেবে প্রাসঙ্গিক বিষয়ের কিছুটা আলোচনার প্রয়োজন বোধ করছি।
মূলত চার রকম বলের আদান-প্রদানের মধ্যে দিয়েই প্রকৃতির যাবতীয় ঘটনা ব্যাখ্যা করা যায়। বোধহয় বিশেষ কিছু বোঝা গেল না। সাবান মেখে চান করছেন। হঠাৎ হাত পিছলে সাবান আছড়ে পড়লে বাথরুমের মেঝের উপর। কেন? উপরের দিকেও তো উঠে যেতে পারত সাবান? সাবান কী করে জানল যে তার ঠিকানা নিচের দিকেই? আসলে এটা পৃথিবীর টান- যাকে বলে মহাকর্ষ। মহাকর্ষ ক্ষেত্রের জন্যই সাবান বুঝতে পারল যে ওর কাছাকাছি রয়েছে বিশালবপু পৃথিবী। ওই একই কারণে সূর্যের চতুর্দিকে গ্রহগুলো ঘুরে বেড়াচ্ছে। যাইহোক মেঝে থেকে সাবান তুলে গায়ে-মুখে মেখে শাওয়ার খুলে দিলেন। ওঃ মা! জল শেষ। ছাদের জলের ট্যাংকে এক ফোঁটাও জল নেই। বাথরুম থেকে চিৎকার করে গিন্নীকে ফরমাস্ করলেন পাম্প চালাবার। পাম্প চলল। ১৫ মিনিটের মধ্যে ট্যাংকও ভর্তি। আপনার চান সারা হল। মেজাজ এখন বেশ ঠান্ডা। ভাবুন তো পাম্পটা চালালো কে? কেন, মোটর পাম্পের ইমপেলার ঘুরিয়ে একতলার কর্পোরেশনের জলের ট্যাংক থেকে চারতলার ছাদের ট্যাংকে জল তুলে দিল। কিন্তু প্রশ্ন হল মোটর ঘুরল কী করে। এ আবার কেমন কথা। সুইচ টিপলে মোটর চলে, মাথার ওপর পাখা ঘোরে, আলো জ্বলে- আরও কত কিছুই তো হয়। আমার মনে হয় ব্যাপারটা আরো একটু খুঁটিয়ে দেখা দরকার।
বিদ্যুৎবাহী তারের কুণ্ডলীর সামনে যদি তারের একটা আংটা রাখা যায় তাহলে কুণ্ডলীর চৌম্বকক্ষেত্রের প্রভাবে আংটাটি ঘুরতে থাকবে। অর্থাৎ কুণ্ডলীর সংগে আংটার সম্পর্ক স্থাপিত হয়েছে চৌম্বকক্ষেত্রের মাধ্যমে। ইলেকট্রিক মোটর হল, কয়েকশ বা কয়েকহাজার পাক তারের তৈরি বড়সড় একটা আংটা, যেটাকে ঘিরে আছে তড়িৎবাহী তারের একটি কুণ্ডলী। কুণ্ডলীতে বিদ্যুৎ চালনার মাত্রা ও আংটার পাকের ওপর নির্ভর করবে আংটার ঘূর্ণন গতি। এখন উপযুক্ত কায়দায় আংটার সংগে একটা শক্তপোক্ত রড লাগিয়ে সেটি পাম্পের ইমপেলার রডের সংগে জুড়ে দিলেই তা ঘুরবে ও যথারীতি পাম্প চলবে। জলও উঠবে। মোদ্দা কথা কুণ্ডলীর সংগে আংটার যোগাযোগ হয়েছে চৌম্বকক্ষেত্রের মাধ্যমে। আরও সূক্ষ্মভাবে বলা যায় মাধ্যমটা ছিল তড়িচ্চুম্বকীয়। কারণ কুণ্ডলীতে বিদ্যুৎ পাঠানো হয়েছিল বলেই চৌম্বকক্ষেত্র সৃষ্টি হয়েছিল। পুরো ব্যাপারটা আসলে তড়িচ্চুম্বকীয় ক্ষেত্রের ঘটকালি। ম্যাক্সওয়েল দেখিয়েছিলেন যে কিলবিল করছে ঝাঁকঝাঁক আলোককণিকা বা ফোটন যারা হল এই গাঁটছড়ার যোগসূত্র। আসলে তিনি প্রমাণ করেছিলেন যে বিদ্যুৎ, চুম্বক, আলো- এগুলো আলাদা আলাদা ব্যাপার নয়; একই সূত্রে বাঁধা। কিন্তু সাবান আর পৃথিবীর মধ্যে কে মধ্যস্থতা করল? হ্যাঁ তাদের পারস্পরিক আকর্ষণের বাহনরা হল গ্রাভিটন। মাধ্যাকর্ষণ ও তড়িচ্চুম্বকীয় বল দূর পাল্লায় প্রসারিত হওয়ার ফলে দৃশ্যমান জগতে তাদের প্রভাব আমরা বুঝতে পারি। যেমন উদাহরণে দেখা গেল। আরও অনেক অনেক ছোট পরিসরে, অণু-পরমাণুর জগতে ঢুকলে আমরা বুঝতে পারব যে শুধুমাত্র এই রকমের ক্রিয়া-বিক্রিয়া দিয়ে সব কিছু ব্যাখ্যা করা যাচ্ছে না। ক্ষুদেদের রাজত্বে মহাকর্ষ বলের অবদান নেই বললেই চলে। পরমাণুর স্থিতিশীলতা বজায় রাখছে তড়িচ্চুম্বকীয় বল। ধনাত্মক নিউক্লিয়াস আর ঘূর্ণায়মান ঋণাত্মক ইলেকট্রনের টানাপোড়েনে সামাল দিচ্ছে তড়িচ্চুম্বকীয় বল। কিন্তু প্রোটন-নিউট্রনে ঠাসা নিউক্লিয়াসে স্থিতিশীলতার রহস্যটা কী? নিস্তড়িৎ নিউট্রনের কথা না হয় বাদই দিলাম। সমান আধানের প্রোটন-প্রোটনের বিকর্ষণের যে বল তাতে হাইড্রোজেন ছাড়া সব নিউক্লিয়াসেরই তো ভেঙেচুরে খানখান হয়ে যাবার কথা। তা হচ্ছে না কারণ কয়েক ফার্মি (১ ফার্মি=১০-১৩ সে:মি:, এক সেন্টিমিটারের দশলক্ষ কোটিভাগের এক ভাগ) দূরত্বের ব্যবধানে পায়ন কণিকার আদান-প্রদানে নিউক্লিয়নদের (নিউক্লিয়াসের গণ্ডীর মধ্যে চরিত্রগত সাদৃশ্য থাকায় নিউক্লিয়ন, প্রোটন বা নিউট্রনের সমার্থক) আঁটোসাঁটো করে বেঁধে রাখে নিউক্লিয়ার ফোর্স যেটা এক ধরণের গুরু বলের বা স্ট্রং ফোর্সের প্রকাশ। প্রতিটি প্রোটন বা নিউট্রনকে ঘিরে রেখেছে গুরু বলের ক্ষেত্র বা গুরুক্ষেত্র। দেখা যাক গুরুবলের উৎসটা কোথায়। নিউক্লিয়ানরা আদৌ মৌলিক নয়। কোয়ার্ক কণিকা হল নিউক্লিয়ন গঠনের উপাদান। কোয়ার্কের আধান আছে। এমনকি অনেক জাতেরও কোয়ার্ক আছে। বিস্তারিত ব্যাখ্যায় না গিয়ে আমরা আপ কোয়ার্ক ও ডাউন কোয়ার্ক- যারা প্রোটন ও নিউট্রনের উপাধান তাদের সংক্ষিপ্ত আলোচনা করব। প্রোটন ও নিউট্রন বা ব্যারিয়ন গোষ্ঠীভুক্ত যে কোনও যৌগিক কণিকার উপাদান তিনটি কোয়ার্ক। প্রোটনে আছে দুটি আপ ও একটি ডাউন কোয়ার্ক। নিউট্রনে ঠিক উলটো, অর্থাৎ দুটি ডাউন ও একটি আপ কোয়ার্ক। ধনাত্মক আধানযুক্ত আপ কোয়ার্কের আধানের মান +২/৩ আর ঋণাত্মক ডাউন কোয়ার্কের মান -২/৩। এই হিসেব থেকে পরিষ্কার যে তড়িতাহিত উপাদানে তৈরি হওয়া সত্ত্বেও নিউট্রন কেন নিস্তড়িৎ। যাই হোক, এই কোয়ার্ক মৌল কণিকাদের মধ্যে পারস্পরিক ক্রিয়া-বিক্রিয়াই হল গুরু বলের উৎস এবং এই প্রক্রিয়ায় যে কণিকার লেনদেন চলে তাদের নাম গ্লুয়ন। গ্লুয়নেরও বৈচিত্র্য আছে। তবে সেই আলোচনা এখানে নিষ্প্রয়োজন।
কিন্তু প্রশ্ন হল, সব পদার্থের নিউক্লিয়াসই কি চিরস্থায়ী? না তা তো নয়। তেজস্ক্রিয়তার ঘটনা ব্যাখ্যা করে হেনরি বেকারেল একশ বছর আগেই বুঝিয়ে দিয়েছেন যে ইউরেনিয়াম, প্লুটোনাম ইত্যাদি ভারী মৌলগুলো আপনা আপনি ভেঙে যায়। ছিটকে বেরিয়ে আসে কিছু মৌলিক কণিকা। এই কণার স্রোতকেই বলা হয় তেজস্ক্রিয় রশ্মি। কিভাবে এটা ঘটছে? এটা কি গুরু বলের প্রভাব? না, তা কি করে হবে? কারণ এইমাত্র দেখলাম গুরুবল তো নিউক্লিয়াসকে জুড়ে রাখে। তাহলে নিশ্চয়ই চতুর্থ আর একরকম বল আছে যা গুরু বলের মত তেমন জোরালো নয়। কারণ জোরালো হলে তেজস্ক্রিয় পদার্থ তো শীগগিরই উবে যেত। বিজ্ঞানীরা এই বলের নাম রাখলেন লঘুবল বা উইক ফোর্স। তেজস্ক্রিয়তার ঘটনা লঘু বলের এক ধরনের প্রকাশ মাত্র। প্রসঙ্গত উল্লেখ করব যে তেজস্ক্রিয় পদার্থ থেকে আলফা (হিলিয়াম নিউক্লিয়াস), বিটা (ধনাত্মক বা ঋণাত্মক ইলেকট্রন) এবং গামা (উচ্চ কম্পাংকের ফোটন) কণিকা বেরিয়ে আসা সম্ভব। শুধুমাত্র বিটা কণিকা নির্বাসনের ঘটনার জন্যই লঘু বল দায়ী। যাইহোক দেখা গেল যে সব মিলিয়ে চার রকমের বল বস্তুজগতের আচরণ নিয়ন্ত্রণ করে। গুরুবল সবচেয়ে জোরালো, তারপর তড়িচ্চুম্বকীয় বল, এর পর লঘু বলের স্থান, সবথেকে দুর্বল মহাকর্ষীয় বল। মনে রাখতে হবে যে লঘুবলের কর্মক্ষেত্রের গণ্ডী খুবই সীমাবদ্ধ (১০-১৫ সে: মি: ) অর্থাৎ গুরু বলের ১০০ ভাগের এক ভাগ পরিসরে। সব বলেরই তো বাহন আছে। সেই নিয়ম তো লঘু বলের ক্ষেত্রেও খাটা উচিত। হ্যাঁ এখানেও ব্যতিক্রম নেই। লঘু বলের বাহনরা হল আধানযুক্ত ডব্লিউ কণিকা (+W, -W)।
ফিরে আসব সালাম প্রসঙ্গে। সালামের অন্যতম অবদানের কথা অবৈজ্ঞানিক মানুষের কাছে পৌঁছে দেবার জন্যই অনেকগুলো কথা ইতিমধ্যে খরচ করেছি। আরও দু-চার কথা বলা দরকার। ১৯৬৭ সালের আগে পর্যন্ত তত্ত্বগতভাবে লঘুবলের আচরণ সম্পর্কে বিশেষ কিছু জানা ছিল না। ওই সময় হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয় স্টিভেন ওয়াইনবার্গ ও শেলডন গ্লাসো এবং লন্ডনে ইম্পিরিয়াল কলেজে আবদুস সালাম সম্পূর্ণ স্বাধীনভাবে যে তত্ত্ব খাড়া করলেন তাতে দেখা গেল যে ‘উপযুক্ত পরিবেশ’-এ তড়িচ্চুম্বকীয় বল ও লঘু বলকে একই সূত্রে বাঁধা যায়। এর প্রায় একশ বছর আগে তড়িৎ ও চুম্বক ধর্মের মিলন ঘটিয়েছিলেন ম্যাক্সওয়েল তাঁর আবিষ্কৃত যুগান্তকারী তড়িচ্চুম্বকীয় তত্ত্বে। ওয়াইনবার্গ-সালাম-শেলডন ত্রয়ী তাঁদের তত্ত্বে +/- W কণিকার সন্ধান পেয়েছিলেন। উপরন্তু ওয়াইনবার্গ ও সালাম বললেন যে +/- W ছাড়াও নিস্তড়িৎ আরও একটি কণার লেনদেনের মাধ্যমেও লঘুক্রিয়া চলতে পারে। তৃতীয় কণিকার নাম রাখলেন তাঁরা Zo (জেড নট)। ১৯৮৩ সালে জেনিভার সার্ন-এ (CERN) কার্লো রুবিয়ার নেতৃত্বে একদল বিজ্ঞানীর সম্মিলিত প্রচেষ্টায় যে পরীক্ষা-নিরীক্ষা চালানো হয়, তাতে +/- W ও Zo কণিকার সন্ধান মেলে। পদার্থ কণিকার এমন সূক্ষ্ম আচরণের পরীক্ষামূলক পরিকল্পনার সার্থক রূপায়ণের জন্য পদার্থবিদ কার্লো রুবিয়া ও ইলেকট্রিক্যাল এনজিনিয়ার সাইমন ভ্যান্ডারমিয়ার-কে ১৯৮৪ সালে নোবেল পুরস্কারে সম্মানিত করা হয়।
প্রশ্ন উঠতে পারে যে তড়িচ্চুম্বকীয় বল ও লঘু বল কী করে এক হয়? প্রথমটির বাহন ফোটন যার স্থিরভারের মান শূন্য, অথচ +/- W ও Zo কণিকা, যাদের আরেক নাম ভেক্টর বোসন (বোসন নামটি হয়েছে সত্যেন বোস-এর নামে), তাদের স্থিরভর অসম্ভব বেশি। যুক্তিতে কোনও ভুল নেই। মহাকর্ষ ও তড়িচ্চুম্বকীয় বল দূর পাল্লার। পক্ষান্তরে গুরু ও লঘু বলের কর্মক্ষেত্র অত্যন্ত স্বল্প পরিসরে। তাদের বাহনদের ভরের মধ্যে যে আকাশ-পাতাল তফাত থাকবে তার ইঙ্গিত তো হাইসেনবার্গের অনিশ্চয়তা সূত্রই বলে দেয়। সূত্রটি হল Δp. Δx ≥h/(2π). Δp ও Δx যথাক্রমে পদার্থের ভরবেগ ও অবস্থানের অনিশ্চয়তা অনিশ্চয়তা এবং h হল প্ল্যাঙ্কের ধ্রুবক, অত্যন্ত ছোট একটি সংখ্যা। ফর্মূলা থেকে পরিষ্কার যে Δx ছোট হলে Δp অপেক্ষাকৃত বড় হবে বা উলটোটা। ভরবেগ শক্তিরই নামান্তর। আবার আইনস্টাইনের আপেক্ষিকতা তত্ত্বের উপজাত E=mc2 অনুযায়ী শক্তি আর ভরের মধ্যে কোনও প্রভেদ নেই। কাজেই অত্যন্ত স্বল্প পরিসরের মধ্যে ক্রিয়া-বিক্রিয়াশীল কণাদের মধ্যে যে কণিকা মধ্যস্থতা করবে, তার ভর বেশি হওয়ারই কথা। অনিশ্চয়তা সূত্রের নিশ্চয়তার কোনও সন্দেহ নেই।
কিন্তু ওয়াইনবার্গ ও সালাম অন্য যুক্তির আশ্রয় নিলেন। তাঁরা বললেন যে প্রকৃতিদেবীর এমন পক্ষপাতিত্ব করার কথা নয়--যে এক বাহন ক্ষীণজীবী ফোটন আর অন্যগুলো হৃষ্টপুষ্ট। এটা নিশ্চয়ই প্রকৃতির ছলনা। এই বিশ্বাসের ভিত্তিতে অংক-টংক কষে তাঁরা একটা প্রতিসাম্য তত্ত্ব খাড়া করলেন যার নাম দিলেন তাঁরা গেজ সিমেট্রি (gauge symmetry)। মনে আছে হয়তো যে তাঁরা তাঁদের তত্ত্বে ‘উপযুক্ত পরিবেশ’ কথাটার উল্লেখ করেছিলেন। ‘উপযুক্ত পরিবেশ’ কথাটার যে ব্যাখ্যা তাঁরা দিয়েছিলেন সেটা এরকম: স্বল্প শক্তিক্ষেত্রসম্পন্ন পরিবেশে W ও Zo কণাদের যে ভারী বলে মনে হয়, সেটা প্রতিসাম্যের পরোক্ষ প্রকাশের জন্যে। প্রত্যক্ষ প্রকাশ হলে তাদেরও ফোটনের মত ভরহীন বলে মনে হত। আজকে ত্বরণ যন্ত্রে (Particle Accelerator) পদার্থ কণিকার যে ধরনের ভরবেগ ও শক্তি তৈরি করা যায় সেই ভরবেগে গুরুবল (strong force), তড়িচ্চুম্বকীয় বলের থেকে অনেক জোরালো। কিন্তু ভরবেগ যদি ক্রমশ আরো বাড়ানো সম্ভব হয় তাহলে দেখা যাবে যে গুরু বল, লঘু বল ও তড়িচ্চুম্বকীয় বলের আচরণের মধ্যে আর কোনও তফাত থাকছে না। এ যেন এমন একটি নাটকের পটভূমি যেখানে নায়ক, ভিলেন বা পার্শ্বচরিত্রের আচরণে বোঝার উপায় নেই যে কে কোন ভূমিকা পালন করছে। দর্শক স্তম্ভিত। এমনই একটি বিজ্ঞান নাটকের তাত্ত্বিক পটভূমি রচনা করেছিলেন স্টিভেন ওয়াইনবার্গ, শেলডন গ্লাশো ও আবদুস সালাম। ম্যাক্সওয়েল ইলেকট্রিক ও ম্যাগনেটিক বলকে একসূত্রে বেঁধে ইলেকট্রোম্যাগনেটিক ফোর্স-এর তত্ত্ব খাড়া করেছিলেন। ওয়ানবার্গ- সালাম- গ্লাসো এর সাথে গাঁটছড়া বাঁধলেন লঘুবলের (weak force)। এই মিলনসূত্রের নামকরণ হল ইলেকট্রোউইক ফোর্স (electroweak force)। ইলেকট্রোউইক ফোর্সের তত্ত্ব আইনস্টাইন কল্পিত গ্র্যান্ড ইউনিফিকেশনের বা মহামিলন তত্ত্বের কাজ অনেকখানি এগিয়ে দিয়েছে, যদিও মহাকর্ষকে এর আওতায় আনার কাজ এখনও দূর অস্ত্।
আবদুস সালাম উঁচু জাতের বিজ্ঞান সাধনার পাশাপাশি সাংগঠনিক ও বিজ্ঞান পরিচালনার কাজ চালিয়ে গেছেন সমান তালে। ১৯৫১ সালে লন্ডন থেকে ফিরে লাহোরে আন্তর্জাতিক বিজ্ঞান নিকেতন তৈরির যে পরিকল্পনা তিনি করেন, তা চরিতার্থ হয় ১৯৬৪ সালে। ইটালির ত্রিয়েস্ত শহরে ইন্টারন্যাশানাল সেন্টার ফর থিওরিটিক্যাল ফিজিক্স (ICTP), তিরিশ বছরেরও বেশি আবদুস সালামের সাংগঠনিক কীর্তির সাক্ষ্য বহন করে চলেছে। নোবেল পুরস্কারের অর্থ ছাড়াও সারা জীবনে অর্জিত অসংখ্য পুরস্কারের আর্থিক ভাগের একটি কানাকড়িও তিনি নিজের ব্যক্তিগত কাজে ব্যবহার করেননি। ১৯৯৫ সাল পর্যন্ত তিনি আই সি টি পি-র অধিকর্তার দায়িত্ব পালন করেছেন। তিনি পোশাকী প্রধান ছিলেন না। তিনি ছিলেন প্রতিদিনের কাজে জড়িয়ে থাকা সকলের কাছের মানুষ। ভদ্রতা, নম্রতা এবং অলক্ষ্যে কাজ করে যাওয়ার দক্ষতায় মানুষটি সবাইকার সমীহভাজন হয়েছিলেন। তাঁর জীবনীকার এক সময়ের সহকর্মী মিরিয়াম লুইসের কথায়- “….Inspired by their personal regard for him and encouraged by the fact that he works harder than any of them, the staff cheerfully submit to working conditions that would be unthinkable here at the International Atomic Energy Agency (IAEA) in Vienna. The money he received from the Atoms for Peace medal and award, he spent on setting up a fund for young Pakistani Physicists to visit ICTP. He uses his share of the Nobel prize entirely for the benefit of Physicists from developing countries and does not spend it on himself or his family…” জীবনী লেখার সময় মিরিয়াম লুইস আই এ ই এ- তে কাজ করতেন। প্রসঙ্গত উল্লেখ করব যে তৃতীয় বিশ্বের যে কোনও প্রতিষ্ঠানে আন্তর্জাতিক মানের বিজ্ঞান কর্মশালা, সেমিনার ইত্যাদি অনুষ্ঠিত হলে, প্রয়োজনে আই সি টি পি-র অনুদান সহজেই পাওয়া যায়। ভাবা যায়, অসাধারণ দূরদর্শিতা ছাড়াও কী বিচক্ষণ সাংগঠনিক চিন্তাধারা কাজ করছিল মানুষটির মধ্যে! তৃতীয় বিশ্বে বিজ্ঞান সাধনায় অগ্রগতির প্রচেষ্টায় পৃথিবীতে এমনভাবে আর কেউ ভেবেছেন বলে মনে হয় না। আই সি টি পি’র সৃষ্টি বিজ্ঞানের ইতিহাসে এক নজিরবিহীন দৃষ্টান্ত। আই সি টি পি প্রাচ্য ও পাশ্চাত্যের সাধনার এক পবিত্র মিলনতীর্থ।
যথার্থ কর্মযোগী মানুষটিকে পৃথিবীর চুয়াল্লিশটি বিশ্ববিদ্যালয় সাম্মানিক ডি এস সি উপাধিতে সম্মানিত করে। ভারতের বেনারস হিন্দু বিশ্ববিদ্যালয় এবং আলিগড় মুসলিম বিশ্ববিদ্যালয়ও এদের মধ্যে আছে। ১৯৫১ থেকে শুরু করে ১৯৯০ সাল পর্যন্ত বিভিন্ন সময়ে পাকিস্তান সরকার ও ইউনাইটেড নেশন ছাড়াও সারা পৃথিবীর বহু প্রতিষ্ঠানের বিজ্ঞান উপদেষ্টার দায়িত্ব পালন করেছেন।
যে সংস্কৃতি ও মূল্যবোধের বাতাবরণে শিশুকাল থেকে তিনি বেড়ে উঠেছিলেন, পরিণত বয়সেও তা অটুট ছিল। কয়েক ঘন্টা কলকাতা সফরের অবসরে একদা লাহোর স্কুলে তাঁর অংকের শিক্ষাগুরু বর্ষীয়ান অনিল গাঙ্গুলীর সংগে দেখা করার জন্য তিনি ছুটে গিয়েছিলেন তাঁর ভবানীপুরের চক্রবেড়িয়ার বাড়িতে। তিনি ছিলেন ঈশ্বরভক্ত ধর্মনিষ্ঠ মুসলমান। স্টকহোমে নোবেল পুরস্কার বিতরণী সভায় সুইডেন সম্রাট ষোড়শ গুস্তাফ আবদুস সালামকে শেরওয়ানি-চুড়িদার-পাগড়ি সজ্জিত পেশোয়ারী পোশাকে দেখে মুগ্ধ হন। তাঁর একটি মন্তব্য থেকে বোঝা যায় যে কর্মজীবন ও সামাজিক জীবনের সংগে কিরকম ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে ছিল তাঁর ধর্মনিষ্ঠ আচরণ। তিনি বলেছিলেন- “The holy Quran enjoins us to reflect on the varieties of Allah’s created laws of nature; however, that our generation has been privileged to glimpse a part of His design is a bounty and a grace for which I render thanks with a humble heart.” আজীবন মহামিলন তত্ত্বে বিশ্বাসী সালাম সাহেব জীবনের শেষ লগ্নের বেশ কিছুটা সময় নিঃসঙ্গ কাটিয়েছেন তাঁর অক্সফোর্ডের খামারবাড়িতে। বহুদিনের আক্রান্ত পারকিনসন্স ব্যাধি শেষজীবনে তাঁকে পঙ্গু করে দিয়েছিল। হুইল চেয়ারে চলাফেরা করতেন। এতটাই অথর্ব হয়ে পড়েছিলেন যে বিজ্ঞানীসঙ্গ, এমনকি বিজ্ঞানজগৎ থেকেও প্রায় বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছিলেন। পাকিস্তান থেকে স্বেচ্ছা নির্বাসিত হয়েছিলেন তিনি আগেই। ১৯৬১ সাল থেকে দীর্ঘ তেরো বছর পাকিস্তান সরকারের মুখ্য বিজ্ঞান উপদেষ্টা ছিলেন তিনি। ‘আহ্মদিয়া’ সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মুসলমান হওয়ার ফলে ভুট্টো সরকারের আমলে তিনি অস্বস্তিতে ছিলেন। ১৯৭৪ সালে শেষ পর্যন্ত তিনি ব্রিটেনে স্বেচ্ছা নির্বাসিত হন। ঘটনাটা খুবই মর্মান্তিক। রাজনীতিবিদরা বোঝেন না যে বিজ্ঞানী বিজ্ঞানীই, তাদের কোনও জাত নেই। আর তাছাড়া আবদুস সালামরা সত্যিই সংখ্যালঘু।
১৯৯৬ এর ২১শে নভেম্বর ভোর রাত্রে তাঁর অক্সফোর্ডের বাসভবনে আবদুস সালাম শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। তাঁর স্ত্রী, দুই পুত্র এবং চার কন্যা বর্তমান। তাঁর ইচ্ছামত মৃত্যুর পর তাঁর মরদেহ লন্ডন থেকে উড়িয়ে আনা হয় পাকিস্তানে। ২৩শে নভেম্বর ১৯৯৬ পাঞ্জাবের রাবওয়াতে তাঁর অন্ত্যেষ্টি সম্পন্ন হয়।
১৯৮৮ সালে সালাম সাহেবের সংগে দ্বিতীয় এবং শেষ সাক্ষাতের অভিজ্ঞতার কথা বলে শেষ করব। কলকাতা ছুঁয়ে বাংলাদেশ যাবার পথে উনি কয়েক ঘন্টা কাটিয়েছিলেন আমাদের প্রতিষ্ঠানে। কম্পিউটার টার্মিনালে বসে কাজ করছিলাম। আমাদের ডিরেক্টরের সংগে সেখানে হঠাৎ হাজির হলেন। ৭-৮ বছর আগে দেখা শান্ত সহৃদয় মূর্তিটা তখনো অটুট ছিল। টার্মিনালের পর্দায় ফুটে ওঠা গ্রাফিক্সের নক্শা দেখেই বুঝলেন কী ধরনের কাজ হচ্ছে। সাইক্লোট্রোন ল্যাবরেটরিতে কম্পিউটারের উপযুক্ত ব্যবহারে সন্তোষ প্রকাশ করেছিলেন। শেষ বারের সেই সাক্ষাৎ স্মৃতিতে আজও সজীব হয়ে আছে।
দেখেশুনে আজ মনে হয় যে তৃতীয় বিশ্বের বিজ্ঞান-শিক্ষিত বেশিরভাগ মানুষের মানসিক ও সাংস্কৃতিক নাড়ির টান ইংরেজিভাষী জগতের সংগে। এ ব্যাপারে বিতর্কে যেতে চাই না। এটা আমার সম্পূর্ণ ব্যক্তিগত অভিমত। তারই ভিত্তিতে বলতে চাই যে আবদুস সালামের জীবনচরিত আজ শুধু প্রাসঙ্গিকই নয়, তা সৃষ্টির উৎসও বটে।
তথ্যসূত্র:
১) Biographical Sketch- Mirium Lewis, IAEA, Vienna
২) Unified Theory of Elementary Particle Interaction- Steven Weinberg, Scientific American, 1974
৩) Gauge Theories of Forces Between Elementary Particles- Gerard t’Hooft, Scientific American, June 1980.
৪) কি দিয়ে সমস্ত কিছু গড়া- পলাশ বরন পাল, প: ব: রাজ্য পুস্তক পরিষদ।