৯-কার
পরবাসের স্টলের দরজায় নীল রঙের কাপড়ের ওপর উজ্জ্বল হলুদ রঙের লেখা “৯-কার কেন ডিগবাজি খায়?” সন্ধে হবো-হবো… এক তথাকথিত ইনটেলেকচুয়াল আকন্ঠ সাহিত্যরস পান করে ঠিক ওই লেখাটির নিচে উল্টে পড়লেন, মানে পড়েই রইলেন। চলতে চলতে থমকে দাঁড়ানো এক সদ্য গোঁফ-ওঠা কিশোরের মন্তব্য- “লিকার খেয়ে ডিগবাজি খায়”। বইমেলা সেদিন পাঁচ লক্ষ লোকের সফেন ককটেল।
নিউ ইয়র্ক, পরবাস ও প্লাগ পয়েন্ট
বইমেলায় পরবাসের এক সম্পাদকের সঙ্গে স্টল কর্তৃপক্ষের কথোপকথন তুলে ধরা হল:
সম্পাদক: একটা প্লাগ পয়েন্টের ব্যবস্থা করা যাবে কি?
কর্তৃপক্ষ: আপনি কোথ্থেকে আসছেন?
সম্পা: মানিকতলা, কিন্তু তার সঙ্গে…
কর্তৃ: ক্যালিফোর্নিয়া থেকে পরবাসের সম্পাদক আসছেন, উনি এলে সব হবে।
সম্পা: মানে, ইয়ে সত্যি বলতে কি আমি নিউ ইয়র্ক থেকে আসছি, মানিকতলায় কয়েকদিন মাত্র….
কর্তৃ: (এক গাল হাসি): তাই বলুন… আমি ভাবি চেহারায় এত চকচকে ভাব… বাবলা একটা চা আর একটা ১৫ অ্যাম্পীয়র…
এরপর সম্পাদক মশাই-এর বাটার হাওয়াই চপ্পল, চৌরঙ্গীর ফুটপাথ থেকে কেনা ডোরাকাটা শার্ট মায় hmt-র ঘড়ি পর্যন্ত মার্কিনী আখ্যা পেয়ে গেল।
ধূমপান নিষেধ
মাঠের মধ্যে বসে নিশ্চিন্তে সুখটান দিচ্ছিলেন এক ভদ্রলোক। হঠাৎ শীর্ণকায় এক হোমগার্ডের আবির্ভাব এবং কড়া গলায় ধমক- সিগারেট খেতে গেলে দিঘির পাড়ে যান। হতভম্ব আধপোড়া সিগারেটটা ফেলেই দিলেন। আপাতদৃষ্টিতে হাস্যকর হলেও এবারের বইমেলায় ছেলে-বুড়ো সবাই একবাক্যে প্রশংসা করেছে কর্তৃপক্ষের এই সচেতনতার।
স্মোকিং জোন এবারের বইমেলায় অন্যতম সংযোজন।
শুধু স্রোতে ভাসা
বইমেলার শেষদিনে নাকি ছলাখ লোক হয়েছিলো। গুনে দেখা হয়নি- তবে যে-কোন জায়গায় দাঁড়ালে বিনা আয়াসে দেড়শো-দুশো মিটার পথ অতিক্রম করা যাচ্ছিল জন-সমুদ্রে ভেসে ভেসে। এক ভদ্রলোক দেখলাম দুবার আনন্দ স্টল তাক করে জনস্রোত থেকে বেরোতে গিয়ে ফসকে গেলেন। তৃতীয়বার আমার দিকে তাকিয়ে বললেন, “শুধু যাওয়া আসা…”
সম্রাট ও বইমেলা
পরবাসের এক সম্পাদকের বেহালা বাজানোয় অনুশীলন আছে বলে শোনা যায়। বইমেলা ডিউটিতে কলকাতা গিয়ে তিনি নাকি প্রথমেই একটি বেহালা জোগাড় করে ফেলেছিলেন। কারণ শুধোতে বললেন যে গতবারের দুর্ঘটনা আবার ঘটলে তিনি চ্যাটার্জী ইন্টারন্যাশনালের ছাতে বসে বেহালা বাজাবেন। এই নব-নীরোর আশায় ছাই দিয়ে সৌভাগ্যবশত এবারের বইমেলা নির্বিঘ্নেই সমাপ্ত হয়েছে।
রূপে তোমায়
গেলবারের অগ্নিভ অভিজ্ঞতার পর এবার প্রতিটি স্টলের দরজার পাশে শোভা পেয়েছে অগ্নি-নির্বাপক যন্ত্র- বাংলায় যাকে ফায়ার এক্সটিংগুইশার বলে। এক স্টলের মালিককে এই নতুন ওয়াল ডেকোরেশানের সম্বন্ধে মন্তব্য করতে শোনা গেল, “এলোমেলো বেরিয়ে থাকা পেরেক পোঁতার জন্যে আর এজমালি হাতুড়ির খোঁজে বেরোতে হচ্ছে না”।
বসে আছে পথ চেয়ে
পার্ক স্ট্রীট মেট্রো ষ্টেশন থেকে বেরিয়ে বইমেলায় প্রবেশের লাইন। ভেলপুরির সংগে নতুন বইয়ের গন্ধ মিশে চারদিক ম’ ম’ করছে। আট থেকে আশিরা অস্থির হয়ে পড়ছে তীর্থের কাকের মতো। এরই মধ্যে এক যুবক নির্বিকার চিত্তে লাইনের পাশ দিয়ে হাঁটতে হাঁটতে “দেখি দাদা” ভংগিতে সোজা কাউন্টারের সামনে পৌঁছে গেলেন। সত্যি কথা বলতে কি কেবল একটি কাউন্টারেই… বাকি দুতিনটেতে কর্মচারীরা হাপিত্যেশ করে বসে আছেন। টিকিট কেটে ঠোঁটের কোণে বিজয়ীর হাসি লাগিয়ে যুবকটি মেলায় ঢুকে গেলেন। একটু দূরে দাঁড়িয়ে থাকা এই প্রতিবেদকের মনে হল সাফল্য শব্দটাও বড় আপেক্ষিক!
বাৎসল্য
গায়ে ডোরাকাটা জামা, পরনে লুংগি, হাতে মাছের থলি- তাতে একগাদা লিটল ম্যাগাজিন আর হ্যান্ডবিল। চোখে পুরু কাঁচ, মাথা ধবধবে সাদা, প্রায় ষাট ছুঁই-ছুঁই ভদ্রলোক বইমেলা থেকে বেরোনোর মুখে এক ভলান্টিয়ারকে ধরলেন- “ইসসস… গাটা পুড়ে যাচ্ছে যে, গাছের তলায় যা, গরম জলে কুলি কর”… ইত্যাদি ইত্যাদি। ছেলেটি শিশুর মতো ঘাড় নেড়ে গেল। ভদ্রলোক যাওয়ার মুহূর্তে ঘুরে দাঁড়ালেন- “ও হ্যাঁ, তোর এই দাদুটা কিন্তু কালকেও টিকিট কাটতে পারবে না”!!!
মুক্তাঙ্গন
এদিক ওদিক ঘোরাঘুরি করছেন সুনীল গাঙ্গুলী, পড়ছেন জয় গোস্বামী। কৌরব-পরবাসের স্টলের সামনে গলা জড়াজড়ি করে আড্ডা দিচ্ছেন কমল চক্কোত্তি আর গৌতম চ্যাটার্জী। রক ব্যান্ড “পরশপাথর” ঘুরে ঘুরে গান গাইছে, মাটিতে বসেই গীটার হাতে গলা ছেড়েছে “মহীনের ঘোড়াগুলি”। বইমেলা সরগরম। নিন্দুকেরা বলে পরবাসের দুই সম্পাদক তখন এক ঝটিকা বিক্ষোভের সামনে পড়ে গিল্ড অফিসে বন্দী।