বাংলা প্রকাশনার জগতে পত্র-পত্রিকার অভাব কোনদিন ঘটেনি। হাতে-লেখা দেয়াল-পত্রিকা থেকে শুরু করে প্রায় শতাব্দী-প্রাচীন শ্রদ্ধেয় পত্রিকা--ছড়িয়ে-ছিটিয়ে সবাই আছে। উদ্দেশ্যের দিক দিয়েও এরা বহুরূপী। কারোর প্রকাশ হাত-পাকাবার-আসর হিসেবে, কারোর প্রকাশ সম্পূর্ণ ব্যবসায়িক উদ্দেশ্যে, আবার কেউ নিয়েছে এর মাঝামাঝি কোন জায়গা। লিটিল ম্যাগাজিন নামের যে ধূসর-সংজ্ঞার অজস্র পত্রিকা আছে, সেগুলো সর্বত্রই বোধহয় বুনো মোষ তাড়ানোর ফিকির।
পরবাসের রয়েছে এমনই উল্লেখযোগ্য আর জটিল এক উত্তরাধিকার। অথচ আন্তর্জাল মাধ্যম পরবাসকে দিয়েছে গতানুগতিকতার বাইরে যাবার আকর্ষণীয় এক সুযোগ। কোন দিকে যাবে পরবাস?
এই সংখ্যাতেই সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের সাক্ষাৎকারে আমারা জেনেছি ‘তরুণতম কবিদের মুখপত্র’ করার জন্য, সম্পাদক হিসেবে তিনি, ‘কৃত্তিবাস’-এ পাঠানো, প্রতিষ্ঠিত এবং প্রবীণ কবির কবিতা সবিনয়ে প্রত্যাখ্যান করেছেন। বুদ্ধদেব বসুর ;কবিতা’ পত্রিকায় কবির অর্বাচীনতার প্রতি সেরকম কোন পক্ষপাতিত্ব না থাকলেও পাঠক মোটামুটি জানতেন ওই পত্রিকায় ঠিক কী ধরনের লেখা পাওয়া যেতে পারে। ঠিক যেমন আজকের পাঠক জানেন যে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়- জ্যোতি বসুর রাজনৈতিক চাপান-উতোরের মুখরোচক কোন প্রতিবেদন পাওয়া যাবে না ‘এক্ষণ’ বা ‘অনুষ্টুপ’-এর মতন পত্রিকায়, কিংবা তিনি ‘মনোরমা’তে খুঁজতে যাবেন না জ্যাক দেরিদা’র উপর লেখা জ্ঞানগর্ভ কোন প্রবন্ধ। অর্থাৎ, মোদ্দা কথা হল, পাঠক হিসেবে এইসব পত্রিকাগুলোর চরিত্রের সঙ্গে আমরা বিলক্ষণ পরিচিত হয়ে গিয়েছি।
কিন্তু তেমনটা কি বলা যায় ‘পরবাস’ সম্বন্ধে? বরং আরো প্রাসঙ্গিক প্রশ্ন হল বোধহয়, পাঠক পরবাসের চরিত্র সম্পর্কে কী বলতে চান? এর উত্তরের উপর নির্ভর করছে পরবাস সম্পাদনার অনেকটাই।
সহজ মত-বিনিময়ের যে দুষ্প্রাপ্য সুযোগ আন্তর্জাল করে দিয়েছে, আমরা পাঠক, লেখক ও সম্পাদক- যদি আজ তার সদ্ব্যবহার না করতে পারি, তাহলে কিন্তু আগামীতে ‘মনের মতন পত্রিকা নেই’ বলে হা-হুতাশ স্রেফ অনুদ্যোগের চড়া দামের বিলাসিতা হিসেবে গণ্য হবে। উদ্যোগ নেবার ভার আমাদেরই হাতে।