দূরের কবিতা:
প্রেমে দিওয়ানা কুকুরের গান—রোবের্তো বোলানোর লাগামহীন রচনা
অংকুর সাহা
রোবের্তো বোলানো মূলত কবি এবং কবিতাই তাঁর কাছে সাহিত্যের প্রিয়তম অবয়ব, কিন্তু ২০০৩ সালের ১৫ই জুলাই তাঁর মৃত্যুর আগের প্রায় এক দশকে তিনি রুদ্ধ নিঃশ্বাসে, ঝড়ের বেগে লিখে ফেলেন অনেক কটি উপন্যাস, নভেলা, ও ছোট গল্প। তার মধ্যে একটি (১৯৯৮ সালে প্রকাশিত “হিংস্র গোয়েন্দা”, “The Savage Defective”) রচনা সাড়া ফেলেছিল লাতিন আমেরিকায়—যেমনটি অনেকদিন, অন্তত গ্যাব্রিয়েল হোসে দিলা কনকর্দিয়া গার্সিয়া মার্কেস (১৯২৭ - ২০১৪) রচিত এবং ১৯৬৭ সালে প্রকাশিত “এক শত বছরের নিঃসঙ্গতা” (One Hundred Years of Solitude) উপন্যাসটির পরে, আর ঘটেনি। এসপানিওল ভাষার উৎকৃষ্ট গল্প উপন্যাসের ইংরেজি অনুবাদ বেরিয়ে পড়ে দ্রুতগতিতে, কিন্তু ভাল মানের কবিতা পড়ে থাকে পেছনে। সেই কারণে ইংরেজিভাষী পাঠকের কাছে বোলানোর পরিচয় কথাসাহিত্যিক হিশেবে; আর কবি হিশেবে তাঁর পরিচয় কেবল এসপানিওলভাষী কবিতাপ্রেমীদের কাছে। অথচ তাঁর পরিচিতেরা সবাই জানেন কবিতাই তাঁর প্রথম এবং একমাত্র প্রেম। এমনকী তাঁর ভিজিটিং কার্ডেও স্পষ্ট অক্ষরে লেখা—“রোবের্তো বোলানো কবি এবং ভবঘুরে”।
রোবের্তো বোলানো আবালোস-এর জন্ম চিলে নামক দেশটির সানতিয়াগো শহরে ১৯৫৩ সালের ২৮ এপ্রিল—তিনি আমাদের সত্তর দশকের কবিদের সতীর্থ ও সমবয়েসি। তাঁর পিতার পেশা ছিল ট্রাক চালানো আর শখ ছিল বক্সিং লড়াইএর; তাঁর মা স্কুলের শিক্ষিকা। রোবের্তো আর তাঁর ছোটবোনের শৈশব কাটে দক্ষিণ চিলের উপকূলবর্তী বন্দর-শহরগুলিতে; তাঁর নিজের রচনা থেকেই জানা যায়—বালক রোবের্তো “হাড্ডিসার, চোখে কম দেখে, সব সময় বইমুখো কিন্তু বিশেষ কোন অলৌকিক প্রতিভাহীন অস্তিত্ব”। এছাড়া ডিসলেক্সিয়া (Dyslexia) নামে একটি মানসিক পঠন-অক্ষমতায় ভুগতেন তিনি—পড়তে পড়তে একটি শব্দের অন্তর্গত অক্ষরগুলি অবলীলায় উল্টেপাল্টে যেত তাঁর মস্তিষ্কে। এছাড়া স্কুলের সহপাঠীরা নিয়মিত মারধর করত তাঁকে—তিনিও মিশতে পারতেন না কারুর সঙ্গে সহজে। তবে শিশু বয়েস থেকেই কবিতা পড়তে ভালবাসতেন তিনি এবং মায়েরও ভীষণ উৎসাহ ছিল তাতে।
১৯৬৮ সাল বোলানো পরিবারটি সানতিয়াগোর পাট চুকিয়ে চলে গেল মেহিকো এবং বসবাস শুরু করল মেহিকো সিটিতে। মহানগরীতে পৌঁছে তিনি স্কুলের পড়া ছাড়লেন, কিন্তু অন্যান্য পাঠ বেড়ে গেল অনেক গুণ। দোকানে বা গ্রন্থাগারে কোন বই দেখে ভাল লাগলেই তিনি নির্বিবাদে চুরি করতেন। এই চৌর্যবৃত্তির মাধ্যমেই তাঁর স্বশিক্ষা—কবিতায় ও রাজনীতিতে। বয়েস একটু বাড়লে অল্পস্বল্প সাংবাদিকতার কাজ; আর যোগ দিলেন নানান স্থানীয় বামপন্থী আন্দোলনে। একটি প্রবন্ধে বোলানো লিখেছেন, “আমার জন্ম সেই বছরে যে বছরে জোসেফ স্তালিন আর ডিলান টমাসের মৃত্যু।” আর মেহিকো সিটিতে যে বাড়িতে তাঁরা থাকতেন সেটি তার স্মৃতিতে, “A vast, almost imaginary place where freedom and metamorphosis were a daily spectacle.”
মেহিকোতেই তাঁর কবিতা লেখার শুরু এবং দুটি কবিতা সংকলনও নাকি প্রকাশিত হয়েছিল ১৯৭০-এর দশাব্দে, কিন্তু সেগুলির আর সন্ধান পাওয়া যায় না। রাজনৈতিক জীবনে তিনি এই সময় ট্রটস্কিবাদে দীক্ষা নেন এবং ইনফ্রা-রিয়েলিসমো (infrarealismo, অববাস্তববাদ) নামে একটি ক্ষণজন্মা কবিতা আন্দোলনের নেতৃত্ব দেন। পরের দিকে, তাঁর “হিংস্র গোয়েন্দা” উপন্যাসে এই কবিতা আন্দোলনকে ব্যঙ্গবিদ্রূপ করেছিলেন তিনি। এই সময় থেকেই শুরু হল তাঁর একাকী ভবঘুরে জীবন।
১৯৭০ সালে চিলে-তে সরকার গঠন করেছেন নবনির্বাচিত সমাজতন্ত্রী নেতা সালবাদোর আইয়েন্দে (১৯০৮-১৯৭৩); ১৯৭৩ সালের বসন্তে তাঁর বামপন্থী আন্দোলনে অংশ নেবার জন্যে রোবের্তো ফিরে গেলেন দেশে, কিন্তু তার কয়েক মাস পরেই ১১ সেপ্টেম্বর ১৯৭৩, ঘটল বিপর্যয়—আমেরিকার প্ররোচনায়, অন্যায় সামরিক অভ্যুত্থানে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা দখল করলেন জেনারেল আগুস্তো পিনোশে (১৯১৫-২০০৬)। চিলের প্রতিটি কবি সাহিত্যিক বুদ্ধিজীবীর জীবনে রয়েছে এই কালো দিনটির করুণ প্রভাব। বিপ্লবী কবি ও সঙ্গীত শিল্পী বিক্তর হারা (১৯৩২-১৯৭৩) অন্য হাজার মানুষের মত বন্দী হয়েছিলেন সানতিয়াগোর সেই কুখ্যাত স্টেডিয়ামে; সৈন্যেরা গুঁড়িয়ে দিয়েছিল তাঁর বুকের প্রতিটি পাঁজর তার পর মেশিন গান চালিয়ে ঝাঁঝরা করে দিয়েছিল তাঁর শরীর ১৫ সেপ্টেম্বর ১৯৭৩। মৃত্যুর আগে বিক্তর তাঁর শেষ কবিতাটি লিখেছলেন, “এস্তাদিও চিলে”—এক বন্ধু তাঁর জুতোর মধ্যে লুকিয়ে রেখেছিলেন কবিতাটি। হাসপাতালে ছিলেন দুরারোগ্য ক্যানসারে আক্রান্ত পাবলো নেরুদা, তাই তাঁকে সহ্য করতে হয়নি নিগ্রহ বা অপমান; তাঁর মৃত্যু হয় কয়েক দিন পরে ২৩ সেপ্টেম্বর।
সেই তুলনায় বোলানোর ফাঁড়া কেটেছিল অল্পে—আতংকবাদী সন্দেহে তাঁকে গ্রেফতার করে পুলিস; তিনি আশংকা করেছিলেন তাঁকে অত্যাচার করার পর খুন করা হবে অন্যদের মতন। কিন্তু আট দিন জেলে থাকার পর তিনি অলৌকিকভাবে মুক্তি পেয়ে যান—কারণ দুজন কারারক্ষী ছিলেন তাঁর ছোটবেলার বন্ধু এবং স্কুলের সহপাঠী। অনেক বছর পরে লেখা “নাচের চিঠি” গল্পে তিনি ঘটনাটির কথা লিখেছেন, “In the small hours I could hear them torturing others. I could not sleep and there was nothing to read except a magazine in English that someone left behind. The only interesting article in it was about a house that once belonged to Dylan Thomas.”
জেল থেকে মুক্তি পেয়ে তিনি গেলেন এল সালবাদোর; সেখানে কিছুদিন কাটালেন রোকে দালতোন (১৯৩৫ - ১৯৭৫) এবং ফারাবুন্দো মার্তি জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা দলের গেরিলা কবিদের সঙ্গে—যাঁদের এক হাতে কবিতা লেখার নোটবই, অন্য হাতে মুক্তিযুদ্ধের বন্দুক। কিন্তু চার মাস সেখানে বাস করেও যখন দেখলেন যে লেখা হয়েছে মাত্র একটি কবিতা (আর সেটিও বেশ বাজে), তখন ফিরে গেলেন মেহিকো সিটি। সেখানে কয়েক বছর কাটালেন লাতিন আমেরিকার র্যাঁবোর ভূমিকায় বোহেমিয় কবি, আপাদমাথা প্রতিষ্ঠানবিরোধী এবং পেশাদার সাহিত্য-প্ররোচক। যদিও তাঁর কবিতা পড়েনি কেউ, তাঁর নাম সবাই জানে—কখন প্রকাশকের আপিসে গিয়ে হামলা শুরু করবেন—এইসব আজেবাজে জঞ্জাল ছেপে কী লাভ? কখনো নামকরা কবিদের কবিতাপাঠের আসরে বিনা আমন্ত্রণে গিয়ে উঠে দাঁড়িয়ে অনর্গল কবিতা পাঠ। তাঁর হাতে নিগ্রহ সয়েছেন স্বয়ং অক্তাভিও পাস (১৯১৪ - ১৯৯৮)। মেহিকোর রবীন্দ্রনাথ, তিনিও কবিতা পড়তে মঞ্চে ওঠার আগে প্রেক্ষাগৃহে উঁকি মেরে দেখে নিতেন বোলানো বা তাঁর দলবল ওত পেতে রয়েছেন কি না। এবং কবিতার পাশাপাশি শারীরিক এবং মানসিক নৈরাচার—মদ, গাঁজা, আফিম, মারিহুয়ানা, হেরোইন—“মেহিকোর কবিতার খোলনলচে বদলে ফেলার জন্য” এই নিঃস্বার্থ আত্মত্যাগ—মারামারি, চৌর্যবৃত্তি (মাঝারি একটা লাইব্রেরি বানিয়ে ফেলেছিলেন চুরি-করা বই দিয়ে), হরেক রকমের গুন্ডাগিরি ও চোরাচালান। এবং লজ্জাহীন, সীমাহীন, লাগামহীন যৌনতা—পুরুষ ও নারী উভয়ের সঙ্গে; গণিকা কেনার রেস্ত না থাকলে পানশালার পরিচারিকাদের মধ্যে যাঁরা তাঁর কবিতার অনুরাগী, ওষ্ঠমেহনে তৃপ্ত করতেন তাঁকে।
এর মধ্যেই তিনি ফুরসত পেয়েছিলেন প্রেমে পড়ার—প্রেমে ব্যর্থ হয়ে গভীরতম মানসিক অবসাদের প্রকোপে পড়লেন, মেহিকোয় থাকলে গলায় দড়ি দেওয়া ছাড়া উপায় নেই। ১৯৭৭ সালে তিনি দেশ ছেড়ে চিরকালের মত রওনা হলেন ইওরোপ। নিজের সম্পর্কে তিনি লিখেছেন, রূপকথার হ্যানসেল আর গ্রেটেল যেমন পথনির্দেশ দেবার জন্য রুটির গুঁড়ো ছড়িয়েছিল, তিনিও যে শহরে বাস করেছেন, একটি দুটি ভাঙা দাঁত রেখে এসেছেন সেখানে! এবং নিয়মিত কবিতা লিখে গেছেন, “রক্ত, ঘাম, বীর্য, অশ্রুর অপরূপ বিচিত্র বর্ষণে।” কোনটি তাঁর প্রিয় কর্ম, এই প্রশ্নের উত্তরে দু দশক ধরে তাঁর একই উত্তর—“বর্হেস পাঠ এবং নিবিড় সঙ্গম।”
কবিতার নিজস্ব গৃহ বলতে দুটি—বইএর দোকান আর গ্রন্থাগার; এছাড়া পানশালা আর গণিকালয়ে যাওয়ার প্রয়োজন ঘটে মাঝে মাঝে; ইওরোপ গিয়েও এই জীবনদর্শন অব্যাহত রইল বোলানোর। ফ্রান্স, স্পেন আর উত্তর আফ্রিকার বিভিন্ন শহরে ভবঘুরের জীবন কাটিয়ে শেষ পর্যন্ত শিকড় ছড়ালেন ভূমধ্যসাগরের তীরে, বার্সিলোনা শহরের নিকটে, বিবাহ করলেন এক স্পেনীয় মহিলাকে আশির দশাব্দের মাঝামাঝি। তাঁর স্ত্রী সেনোরা ক্যারোলাইনা লোপেস-এর সহায়তায় নিষিদ্ধ ভেষজের নেশাটি ঘুচল তাঁর, কিন্তু ততদিনে দেরি হয়ে গিয়েছে—এত বছর ধরে অন্য নেশাড়ুদের সঙ্গে একই সিরিন্জ ব্যবহার করেছেন না ধুয়ে, অতএব দীর্ঘজীবী হবার কোন সম্ভাবনাই নেই তাঁর।
১৯৯০ সালে জন্মাল প্রথম পুত্র, নাম রাখলেন “লাউতারো”, চিলের মাপুচো উপজাতির বীর নেতার নামে, যিনি প্রাণ দিয়ে চিলের স্বাধীনতা রক্ষা করতে চেয়েছিলেন স্পেনীয় সাম্রাজ্যের আগ্রাসনের হাত থেকে। লাউতারোর জীবন অবলম্বনেই ষোড়শ শতাব্দীতে রচিত হয়েছিল চিলের প্রথম মহাকাব্য, “লা আরাউকানা”। এবং বোলানো শপথ নিলেন আর যতদিন বাঁচবেন—গল্প উপন্যাস লিখে অর্থ উপার্জন করবেন সন্তানের ভবিষ্যৎ সুরক্ষার জন্যে; কবিতা হবে তাঁর দ্বিতীয় প্রেম। এক দশকের মধ্যেই তিনি উঠে এলেন এসপানিওল ভাষার কথাসাহিত্যের শীর্ষস্থানে।
তাঁর কাব্যগ্রন্থ কুল্লে তিনটি—সেগুলি শেষ তেইশ বছরের রচনা; ইওরোপে এসে উপস্থিত হবার আগের রচনাগুলি বোধহয় হারিয়ে গেছে চিরকালের মত। ২০০০ সালে প্রকাশিত হয় “প্রেম দিওয়ানা কুকুরঃ কবিতা ১৯৮০-১৯৯৮” (“লস পেরোস রোমান্তিকোসঃ পোয়েমাস ১৯৮০-১৯৯৮”। অতি সম্প্রতি গ্রন্থটির ইংরেজি অনুবাদ করেছেন লরা হিলি এবং ইংরেজি ও এসপানিওল ভাষায় দ্বিভাষিক গ্রন্থটি প্রকাশ করেছেন ন্যু ডাইরেকশানস (নভেম্বর ২৮, ২০০৮)। গ্রন্থটি তৈরি হয়েছে তাড়াহুড়োয়—অনুবাদের মান ভাল হলেও ভূমিকা, আলোচনা বা টীকা ও অনুষঙ্গ সম্পূর্ণ অনুপস্থিত। কিন্তু কবিতাগুলির অমোঘ টানে আমি প্রায় সঙ্গে সঙ্গেই তাদের বাংলা অনুবাদ শুরু করি। আরো দুটি কাব্যগ্রন্থ রয়েছে বোলানোর—২০০০ সালে প্রকাশিত “তিন” (“Tres”) এবং ২০০৭ সালে প্রকাশিত “লা উনিভার্সিদাদ দেসকোনোসিদা” (“অচেনা বিশ্ববিদ্যালয়”)। তাঁর গল্পে উপন্যাসেও যখন-তখন এসে উপস্থিত হন কবিরা রাস্তায়, ঘাটে, কারাগারে, পানশালায়, গণিকালয়ে, যুদ্ধক্ষেত্রে, গির্জায়; জীবিত কবি, মৃত কবি, বাস্তবের কবি, কল্পনার কবি। “People are coward to the last breath. Poetry is the only thing that is not contaminated… Only poetry is not shit.” ১৯৭৬ সালে প্রকাশিত তাঁর অন্য একটি কাব্যগ্রন্থের নামা জানা গেছে— “প্রেমের পুনরাবিষ্কারে” মেহিকো সিটি থেকে, কিন্তু তার সন্ধান পাওয়া যায়নি।
তাঁর অসুস্থতার সংবাদটিও রহস্যে ঢাকা; যতদূর জানা যায়, অনেক বছর ধরে তিনি “হেপাটাইটিস সি”-এর প্রকোপে পীড়িত ছিলেন, শেষ পর্যন্ত তা পরিণত হয় যকৃতের দুরারোগ্য ব্যাধিতে। অকেজো যকৃৎ পালটে অন্য যকৃৎ প্রতিস্থাপনের পরিকল্পনা চলছিল—অপেক্ষার সারণিতে তাঁর নাম ছিল উঁচুর দিকে, এমন সময় তাঁর মৃত্যু ঘটে ১৫ জুলাই ২০০৩। জীবনের শেষ পাঁচ বছর ধরে তিনি একটানা লিখে গেছেন তাঁর মহতী উপন্যাস—১১০০ পৃষ্ঠার দীর্ঘ “২৬৬৬” (“ছাব্বিশ শো ছেষট্টি”)—পাঁচ খণ্ডের গোয়ন্দা উপন্যাস—মৃত্যুর কয়েকদিন আগে রচনাটি সমাপ্ত হয়। ৮৯৮ পৃষ্ঠার ইংরেজি অনুবাদটি করেছেন নাতাশা ওয়াইমার, প্রকাশিত হয়েছে ২০০৮ সালে এবং শোরগোল তুলেছে সাহিত্যরসিক মহলে। একবিংশ শতকের শ্রেষ্ঠ উপন্যাস—কোন কোন সমালোচকের মতে।
ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে তাঁর অপ্রকাশিত, অগ্রন্থিত কবিতাগুলি—আশা করব সেগুলি কেউ প্রকাশ করবেন সুসম্পাদিত সংকলনে।
প্রেমে দিওয়ানা কুকুর
অনেক কাল হ’ল, বয়েস তখন আমার বিশ ছুঁই ছুঁই, আমি
আপাদমাথা উন্মাদ।
আমি হারিয়েছি স্বদেশ
কিন্তু জিতে নিয়েছি স্বপ্ন।
এবং সেই স্বপ্ন যতক্ষণ আমার সহায়
পরোয়া করি না অন্য কিছুর।
না করি কাজকর্ম, না করি পুজো,
না করি ভোরের আলোয়
প্রেমে দিওয়ানা কুকুরদের পাশে বসে লেখাপড়া।
আমার অস্তিত্বের শূন্যতায় শিকড় গাড়ে স্বপ্ন।
আলো আঁধারের কম্বলে মোড়া
কাঠের শয়নকক্ষে
যা গ্রীষ্মমণ্ডলের ফুসফুসের গভীরে বসানো।
মাঝে মাঝে আমি নিজের অন্তরে পিছু হটে
স্বপ্নের কাছাকাছি পৌঁছাই; তরল ভাবনায়
চিরন্তন ভাস্কর্য,
কামনায় শিউরে ওঠা
শুভ্র কীট।
পলাতক প্রেম।
স্বপ্নের অভ্যন্তরে আরো এক স্বপ্ন।
দুঃস্বপ্ন আমাকে ডেকে বলেঃ বয়েস বাড়বে তোমার।
যন্ত্রণার প্রতিচ্ছবি ও তার গোলকধাঁধা পেছনে ফেলে
এগোবে তুমি, ভুলেও যাবে তাদের।
কিন্তু অনেক কাল আগে, সেই বয়েস বাড়াটাও ছিল অপরাধ।
যা বলছিলাম, আমি এখন হাজির, প্রেমে দিওয়ানা
কুকুরদের সঙ্গে এবং এলাকা ছেড়ে নড়ছি না আমি।
—The Romantic Dogs
—The Nurses
টীকা—পো-এডগার অ্যালেন পো (১৮০৯-১৮৪৯), খুব সম্ভবত তাঁর “রু মর্গের হত্যাকাণ্ড” গল্পের অনুষঙ্গ এসেছে এখানে—Lupe
—Resurrection
টীকা—গেলিক ভাষায় “লখ” মানে হল “লেক” বা “হ্রদ”। “লখ নেস” স্কটল্যান্ডের একটি বিশাল হ্রদ—কাল্পনিক “লখ নেসের দৈত্য” এর জন্যে ভুবন বিখ্যাত।—In the Reading Room of Hell
—Fragments
—With the Flies
—Ernesto Cardenal and I
—Rain
ভাগ্য—Luck
সব কবিতাগুলির এসপানিওল ভাষা থেকে ইংরেজি অনুবাদ—লরা হিলি (Romatic Dogs by Roberto Bolano. Trans. Laura Healy, New Ditections, 2008)