• Parabaas
    Parabaas : পরবাস : বাংলা ভাষা, সাহিত্য ও সংস্কৃতি
  • পরবাস | সংখ্যা ২ | সেপ্টেম্বর ১৯৯৭ | নাটক
    Share
  • রাত জুড়ে : সুদীপ্ত চট্টোপাধ্যায়

      [চরিত্র: অনঙ্গ, অভ্রেন্দু, শংকর, উন্মেষ (বাবুল), মোহন, সুভদ্র, শিউনন্দন জৈন, রুদ্রনাথ, সুরময়ী, নিশীথা, বীণা, অনিন্দ্যা (ঝিলিক)]।

    প্রথম দৃশ্য

      [পর্দা খোলে। মঞ্চ অন্ধকার। হঠাৎ মঞ্ছের পিছন দিকে, মাঝ বরাবর একটি slide স্থিরচিত্র প্রদর্শিত হয়। প্রোজেক্টর চালাচ্ছে মধ্যমঞ্চে কোন এক ব্যক্তি যাকে আমরা মাঝে মাঝে ভৌতিক ছায়ামূর্তির মত প্রোজেক্টরের আশেপাশে নড়তে চড়তে দেখেছি। প্রথম slide--- অনিপুণ হাতে লেখা title caption:

    ‘অন্ধকার থেকে আলোয়’

    দ্বিতীয় slide:

    ‘কলকাতা ১৯৭৩-৭৬’

    ওস্তাদ আমীর খাঁ গীত হংসধ্বনি রাগে খেয়াল বাজতে শুরু করে। এরপর সত্তর দশকের কলকাতার আবহাওয়াকে তুলে ধরার মত বেশ কয়েকটি ছবি আসে আর যায়। খবরের কাগজ থেকে কাটা সাদা-কালো ছবি, তার থেকে বানানো স্লাইড, অতএব ছবির grain বেশ স্পষ্ট। কলকাতা বিষয়ক বেশ কয়েকটি ছবির পর অবশেষে আসে প্রেসিডেন্সী কলেজের সম্মুখ প্রাঙ্গনের স্থিরচিত্র। কেউ একজন Tape recorder-এর সুইচ বন্ধ করে cassette বদলে দেয়। রাগ সংগীতের বদলে নারী কণ্ঠে ভাষ্যপাঠ শুরু হয়। ]

    ভাষ্য। সে বড় সুখের সময় নয়,
      সে বড় আনন্দের সময় নয়…

    যখন নিশান বদল হয় হঠাৎ সকালে, রাস্তায়, রাস্তায়, মোড়ে মোড়ে ব্যানার জুড়ে ঝুলতে থাকে ‘কঠোর পরিশ্রমের বিকল্প নেই’, কিংবা কবির ভাষায় ‘কঠোর বিকল্পের পরিশ্রম নেই’। তবু---সেই নাভিশ্বাস-ওঠা দিনগুলির মধ্যে, পুলিশি হানায় জর্জরিত কলেজ ক্যান্টিনের চিটে ধরা টেবিলে গান গেয়ে, সাহসী কথার চাবুক আছড়ে, কফি হাউসের কফি-কাপে তুফান তুলেছিল কয়েকটি তাজা প্রাণ।

      [slide বদলায়। কলেজ স্ট্রীটের কফি হাউসের ভিতর।]

    সাতটি বন্ধু। চারজন পুরুষ, নারী তিন।
      সময় কাটাতো রাতদিন
      করতো নাটক, করতো গান
      সাতটা মানুষ, একটা প্রাণ।

      [নতুন slide. কলেজের সিঁড়িতে সাত জন। ভাষ্যপাঠের পরিবর্তে এবার শোনা যায় ‘ও আলোর পথযাত্রী’ গান, সমবেত কন্ঠে। গানের মাঝে কেউ একজন ভুল করে, সবাই হেসে ওঠে, গান যায় থেমে। হাস্যরোলের ভিতর থেকে একটি নারীকন্ঠ বলে ওঠে--]

    (নিশীথা) । We are the magnificient seven.

      [একজন বলে---]

    (শংকর)। সাত হিন্দুস্থানী!

      [আরেকজন বলে---]

    (অভ্রেন্দু) । Seven Samurai রে! কুরোসাওয়া দেখিস না?

      [ভাষ্যপাঠিকার কন্ঠ ফিরে আসে।]

    এরা কুরোসাওয়া দেখতো, সত্যজিৎ দেখতো, ঋত্বিক দেখতো, রবি ঠাকুর চর্চা করতো, কাব্যি করতো বাঙ্গালিস্বভাব মত, আবার রাজনীতিও করতো--- কেউ কম, কেউ বেশী। এবার সাত জনের ব্যক্তি-পরিচয় দেওয়া যাক অক্ষরানুক্রমে। এক, শ্রী অভ্রেন্দু বিশ্বাস।

      [slide-এ অভ্রেন্দু। প্রত্যেক চরিত্রের প্রথম ছবিটি হবে কলেজ পরিচয়পত্রের।]

    মহাসপ্তক, অর্থাৎ Magnificent 7-এর মধ্যে দুজন ছিলেন বিলেতি সাহিত্যের পূজারী। তাঁদের মধ্যে একজন ইনি। সেই পরীক্ষার বছরে ক্লাসের দশজনের মধ্যে অবশ্য একজন মাত্র নন---একেবারে প্রথমজন, first class first ইনি-ই। মহাসপ্তকের ইনি ছিলেন দ্বিতীয় গীতিকার---পরবর্তী কালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে Yale বিশ্ববিদ্যালয়ের ইনি ‘সাংবাদিকতা’ বিষয়ে স্নাতকোত্তর সাম্মানিক লাভ করেন।

      [সস্ত্রীক অভ্রেন্দুর ছবি--সমসাময়িক। ]

    এক প্রতিষ্ঠিত ইংরেজি পত্রিকার সম্পাদকীয় পদে বহাল। সাংবাদিকতার দক্ষতার জন্য বহুবার পুরস্কৃত। প্রসঙ্গত উল্লেখ্য মহাসপ্তকের সংগীত বিভাগে এঁর স্বীকৃতি গায়ক হিসেবে নয়। কেননা বাগ্‌দেবী এঁকে কথা দিয়েছিলেন, সুর নয়।

      [slide-এ নতুন মুখ--যুবক অনঙ্গ চৌধুরী।]

    শ্রী অনঙ্গ চৌধুরী। অর্থনীতির ছাত্র। পরীক্ষার বছরে এঁরও কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রথম দশজনের মধ্যে স্থান ছিল।

      [অন্ধকার থেকে মঞ্চের দর্শকদের মধ্যে মৃদু হাসির গুঞ্জন শোনা যায়।]

    বন্ধু মহলে ‘অ্যানি’ নামে খ্যাত অনঙ্গ চৌধুরী মূলতঃ পালন করতেন উদ্যোক্তার ভূমিকা। এবং সেই ভূমিকা সুষ্ঠুভাবে পালন করে সুখ্যাতিও লাভ করেছেন অনেক।

      [অন্ধকার থেকে ভেসে আসে দুটি কন্ঠ।]

    নারী কন্ঠ। Partiality, partiality, বিশেষ কাউকে highlight করা চলবে না। পুরুষ কন্ঠ। ঊঁ-হু-হু, ওটা host’s prerogative.

      [সস্ত্রীক অনঙ্গর সমসাময়িক ছবি।]

    ভাষ্য। বর্তমানে ইনি শিল্পপতি। তিস্তা ভ্যালি টি এস্টেটের Managing director.

      [অন্ধকার থেকে আবার একটি পুরুষ কন্ঠ।]

    পুরুষ কন্ঠ। মালিক, মালিক। শালা বলতে ক্ষতি কি?

    ভাষ্য। তিন--

      [এবার বীণার slide।]

    শ্রীমতী বীণা দত্তগুপ্ত, মহা সপ্তকের বিলেতী সাহিত্যের অপর পূজারী। ইনি University-তে First class second। সুকন্ঠী এবং বলা বাহুল্য গানের দলের pillar ছিলেন ইনি। বর্তমানে--

      [স্বামী সহ বীণার সমসাময়িক slide]

    কলকাতার এক নারী কলেজের অধ্যাপিকা। শ্রী রুদ্রনাথ সেন মহাশয়ের স্ত্রীরূপে তিনি শ্রীমান সুভদ্রর মা।

      [রুদ্রনাথ ও বীণার ছেলে সুভদ্রর slide। Slide আসতেই অন্ধকারের ভিতর থেকে বালক কন্ঠে শোনা যায়--]

    সুভদ্র। ওটা আমার ছবি!

    ভাষ্য। চার--

      [slide-এ এবার হাসানের ছবি। এ ছবিটি অবশ্য পরিচয়পত্রের নয়--আগে দেখানো group photo থেকে change করা, হাস্যময় এবং ঈষৎ অস্পষ্ট একটি মুখ, যেন স্মৃতির অতল থেকে উঠে আসা। ]

    শ্রী হাসান মনসুর। সর্বসম্মতিক্রমেই এঁকে মহাসপ্তকের প্রাণকেন্দ্র হিসাবে চিহ্নিত করা যেতে পারে। অর্থনীতির ছাত্র--কিন্তু অনায়াস যাতায়াত ছিল সাহিত্য, সংগীত, নাট্যশিল্প এবং রাজনীতিতে। মহাসপ্তকের প্রধান গীতিকার ছিলেন ইনি। ছিলেন কবিও।

      [হাসানের কন্ঠে স্বরচিত কবিতার আবৃত্তি শোনা যায়।]

    হাসান। মাটির থেকে তোর দূরত্ব যদি মাপিস <ব্র> মেপে কূল পাবি নে--<ব্র> মাটি বড় অনাত্মীয় হয়েছে আজ <ব্র> না কি তুই হয়েছিস অনাত্মীয় তার থেকে <ব্র> বড় শালীন হয়ে আছো হে মন <ব্র> এমন বাঁধন যে, মাঠ ভরা করোটি দেখেও <ব্র> হাত কাঁপে না <ব্র> পা কাঁপে না <ব্র> বুক কাঁপে না <ব্র> হয়তো চন্দ্র সূর্য-ও স্থির।

    ভাষ্য। কবি হাসান মনসুর, গায়ক হাসান মনসুর, রাজনৈতিক কর্মী হাসান মনসুর, Honours graduate হতে পারেনি। তাঁর ভবিষ্যত পারেনি বর্তমানের চেহারা ধারণ করতে।

    (নীরবতা)

    হাসান মনসুর, জন্ম ১৯৫৪, মৃত্যু ১৯৭৬।

      [সানাইয়ের তীব্র কান্নার মত তান স্ফুলিঙ্গের মত জ্বলে উঠেই নিভে যায়। ]

    পাঁচ--

      [slide-এ এবার নিশীথা মজুমদারের পরিচিতা হবার পালা।]

    এঁর ছবি আপনারা কিছুক্ষণ আগেই দেখেছেন, তবে একক ভাবে নয়। ইনি শ্রীমতী নিশীথা মজুমদার। এখন নিশীথা বিশ্বাস। বাংলা সাহিত্য বিভাগ থেকে যে দুজন মহাসপ্তকের অংশীদার ছিলেন ইনি তাঁদের একজন। সপ্তকের অন্তত দুই সদস্য এঁকে বিশেষ ভাবে মনে রেখেছেন তাঁর স্বতঃস্ফূর্ত হুল্লোড় স্বভাবের জন্য। শোনা যায় দলীয় মনান্তরের সময় তাঁর উপস্থিতি নাকি ধন্বন্তরীর ভূমিকা পালন করতো। ]

    অভ্রেন্দুর গলা। তাই নাকি?

      [হাসির গুঞ্জন। ]

    নিশীথার কন্ঠ। Inferiority complex!

    ভাষ্য। বর্তমানে--

      [slide-এ স্বামী-পুত্রসহ নিশীথার ছবি।]

    সপ্তকের আর এক মহারথী, যাঁর সঙ্গে আপনাদের পরিচয় একটু আগেই ঘটেছে, সেই অভ্রেন্দু বিশ্বাস মহাশয়ের স্ত্রী, গৃহবধূ, সমাজ সেবিকা এবং এক পুত্র সন্তান শ্রীমান আরিত্রের জননী। ছয়--

      [সুরময়ীর একক slide প্রদর্শিত হয়। ]

    শ্রীমতি সুরময়ী মিত্র। মহাসপ্তকে ভূগোল বিভাগের একমাত্র প্রতিনিধি। সুগায়িকার খ্যাতি ব্যতিরেকে এঁর সুনামের প্রধান ভিত্তি ছিল রন্ধনশিল্পে। সেই সুনাম আজও অক্ষুন্ন কিনা তার প্রমাণ আগামী দুই দিনে মিলবে আশা করছি।

    অভ্রেন্দুর কন্ঠ। না মিললে ঝামেলা হবে।

      [হাসির গুঞ্জন।]

    ভাষ্য বর্তমানে--

      [অনঙ্গ ও সুরময়ীর দ্বৈত slide।]

    ইনি সুরময়ী চৌধুরী। পূর্বে পরিচয়কৃত অনঙ্গ চৌধুরীর স্ত্রী, এক সফল গৃহবধূ।

    নিশীথার কন্ঠ। এবং অনিন্দ্যা নামে এক বালিকার সফল মাসিও বটে!

    ভাষ্য। অক্ষয়রানুক্রমে এবার সপ্তম সপ্তকের পরিচয় দেবার সময় হলো।

      [slide-এ শেষ চরিত্র--শংকর।]

    অভ্রেন্দুর কন্ঠ। কিন্তু তিনি কোথায়? আসবেন কি আদৌ?

    ভাষ্য। শ্রী শংকর মুখোপাধ্যায়। আজকের জনমানসে সে শংকর মুখার্জিকে আমরা খ্যাতনামা গায়ক-অভিনেতা হিসেবে চিনি, ইনি তখন--মানে যে ভীতমুখ বালককে এ মুহূর্তে ছবিতে দেখছেন--ছিলেন শুধুই মহাসপ্তকের পুরুষ গায়কদের অন্যতম। বাংলা বিভাগের দ্বিতীয় প্রতিনিধি।

      [ভাষ্য পাঠের সঙ্গে শোনা যায় অমার্জিত রেকর্ডিংয়ে ‘ও মোদের দেশবাসীরে’ গানে শংকরের solo lead-এর অংশ। Slide বদলের সময় তা সামান্য জোরালো হয়ে আবার মিলিয়ে যায়। পরবর্তী slide--ফাংশানে গান গাইছে আজকের শংকর।]

    আজকের শংকর মুখার্জিকে বলা যেতে পারে মহাসপ্তকের গর্ব। (নীরবতা) আজ মহাসপ্তকের পূর্ণমিলনের দিন। সে মিলন সার্থক হোক, খুশীতে ভরপুর হোক। বয়ঃজ্যেষ্ঠদের আশীর্বাদ চেয়ে এই home documentary-টি শেষ করছি।

      [শেষ slide--‘মহাসপ্তক অমর রহে’। আলো জ্বলে ওঠে। উপস্থিত সবাই হাততালি দিয়ে ওঠে।

    এবার বোঝা যায় এটি একটি বিশাল লিভিং রুম এবং এরই পিছনের দেওয়ালে স্লাইড্‌গুলি দেখানো হচ্ছিল। পাঠকবর্গের অবগতির জন্য আবার জানানো যেতে পারে, যদি ইতিমধ্যে ধরে ফেলতে না ফেলে থাকেন, অনঙ্গ চৌধুরী-ই মহাসপ্তকের এই পূর্ণমিলনের প্রধান উদ্যোক্তা। তার চা বাগানের নিকটে অবস্থিত এই প্রাসাদোপম বাড়ীটি, তিস্তা ভ্যালির কেন্দ্রস্থলের এই ঔপনিবেশিক manor-টিতে তিনি কলকাতা থেকে উত্তরবঙ্গে ডেকে এনেছেন পুরনো বন্ধুদের। তাদের স্বাগত জানাবার জন্যই তথ্যচিত্রটি নির্মিত। অনঙ্গর বড় শ্যালিকার কন্যা অনিন্দ্যা, ওরফে ঝিলিক, তার নির্মাণ-কর্ত্রী। মার মৃত্যুর পর সে মাসী ও মেসোকে অভিভাবকরূপে গ্রহণ করেছে।

    শংকর (এবং হাসান) বাদে মহাসপ্তকের সবাই এসে পড়েছে এবং সবাই ঘরে উপস্থিত। সেই সঙ্গে রয়েছে বীণার স্বামী রুদ্রনাথ, পুত্র সুভদ্র, অনিন্দ্যা, অভ্রেন্দুর ভাই উন্মেষ ও অনঙ্গর প্রতিবেশী শিউনন্দন জৈন (আরেক চা বাগানের মালিক)।

    তথ্যচিত্র প্রদর্শনের শেষে সুরময়ী ঘরের আলো জ্বেলে দেয়। অনিন্দ্যা projector ও tape recorder off করে, অনঙ্গ দাঁড়িয়ে ওঠে। অন্যরা সবাই ঘরের নানা জায়গায়-- কেউ চেয়ারে, কেউ টুলে বসে। সবার মুখে আনন্দের ভাব। সুভদ্র একটা মাঝারি মাপের স্যুটকেসের ওপরে বসে মন দিয়ে একটা খেলনা এরোপ্লেন পর্যবেক্ষণে ব্যস্ত।

    অনঙ্গ ঘরের মাঝামাঝি চলে আসে।

    অনঙ্গ। Board of directors’ meeting ছাড়া আর কোথাও ভাষণ দিইনি গত ১৬-১৯ বছরে। মানে…যেখানে প্রাণ খুলে…ওই…মনের কয়েকটা কয়েকটা অন্ততঃ কথা বলতে পারি। ভীষণ emotional লাগছে মানে…. এই যে তোদের সামনে দাঁড়িয়ে উঠে, পিছনে হাত দিয়ে এ ভাবে… formally যে বক্তৃতা করব…

    অভ্রেন্দু। বলে যাও গুরু, no problem. এটাও তো একটা experience!

    নিশীথা। তুমি থামো তো… নারে অ্যানি, তুই বল্‌।

    অনঙ্গ। আসলে বলার মত কথা তো আমার একটাই। আমি খুব, খুব, ভীষণ খুশী।

    অভ্রেন্দু। খুশী না সুখী ভেবে বল্‌।

    নিশীথা। আঃ।

    অনঙ্গ। দুটোই। ভাব্‌ না--গত decade & a half-এ যেটা সম্ভব হয়নি, সেটা আজ হতে চলেছে… শুধু শংকর হারামজাদাটা এসে পড়লেই…

    সুরময়ী। আসবে, আসবে। বলেছে যখন।

    অনঙ্গ। না--আসলে ৬-টা বাজতে চললো তো… But I am happy! এ ভাবে অতীতকে ফিরে পাওয়াটাতো খুব rare…. মানে এত সুন্দর ঘরে…. কেমন নিষ্পাপ ভাবে… এই দ্যাখ্‌! কবিতা চলে আসছে।

    সুরময়ী। আচ্ছা, ১ মিনিট। একটু interrupt করছি। অনঙ্গ একটা দারুণ জরুরি announcement করতে ভুলে গেছে। সেটা হলো আলেখ্যটি তৈরী করেছে অনিন্দ্যা (অঙ্গুলিনির্দেশ করে) মানে ঝিলিক, আমার দিদির মেয়ে, এখন আমাদের কাছেই থাকে, এই এবারই Jadavpur থেকে partII দিয়েছে। ওকে আমাদের সবার ধন্যবাদ জানানো উচিত।

    অভ্রেন্দু। অবশ্যই। A round of applause, please!

      [সবাই হাততালি দিয়ে ওঠে।]

    নিশীথা। অ্যাই ঝিলিক… তোকে তুইই বলছি..

    অনিন্দ্যা। হ্যাঁ, হ্যাঁ, বলুন না।

    নিশীথা। তুই তো দারুণ জমিয়েছিস্‌ রে ব্যাপারটা। দেখিস তুই একদিন দুর্ধর্ষ filmmaker হবি… the second Aparna Sen.

      [হাসি। অনিন্দ্যা সলজ্জ ভাবে হাসে।]

    অভ্রেন্দু। গ্যাস খাইও না…. ও যা হবার তাই হবে। কে কী হয় আগে থেকে কক্‌খনো predict করা যায় না। আমাদের একজনের ক্ষেত্রেও কি prediction মিলেছে, মানে essentially speaking? (উঠে পড়ে) হ্যাঁ, এক, বলতে পারো শংকর। তাও আমরা কেউ কি ভেবেছিলাম যে ও যোগেন দাস-এর ‘শৃঙ্গার’ ছবিতে “kiss থেকে কিস্‌মত”--এ ধরণের সব গান গাইবে? কেবল হাসান বেঁচে থাকলে কী হতো বলা যায় না। তাই বলছি…

    নিশীথা। আচ্ছা তুমি কী শুরু করেছ বলো তো? কোথায় মেয়েটাকে একটু encourage করার জন্যে ও সব বলিই নি। আসলে স্মৃতি ব্যাপারটাই খুব dangerous (ভীষণ আন্তরিক) তোর presentation-টা সত্যিই খুব ভালো হয়েছে। দ্যাখ্‌না, অ্যানি তো nostalgia-স্পৃষ্ট হয়ে একেবারে….

    বীণা। দারুণ কাজ করেছো অনিন্দ্যা। Thank you…

    অনিন্দ্যা। না. না এ কী বলছেন। আমি ভীষণ শ্রদ্ধা নিয়েই কাজটা করেছি।

    নিশীথা। এই যাঃ, দেখেছ সুরময়ীটার কাণ্ড? ।

    সুরময়ী। কী হলো আবার?

    নিশীথা। (ওর দিকে দৃকপাত না করে) রুদ্রবাবু—(নীরবতা) উঠে দাঁড়ান।

      [রুদ্রনাথ ভীষণ অস্বস্তিতে পড়লেও, মুখে একটা অদ্ভুত হাসি নিয়ে উঠে দাঁড়ায়। ]

    আমি মহাসপ্তকের বাদবাকি কজন সদস্য এখানে উপস্থিত, তাদের কাছে আর্জি রাখছি--এই ভদ্রলোকটিকে যেন আমরা non-member status দিয়ে ভুলে না যাই। তাই তো, নাকি?

    অভ্রেন্দু। এটা আবার বলার কি….

    বীণা। সুরময়ী--সুভদ্রর জন্য পাতলা মাছের ঝোল করেছিস তো?

    সুরময়ী। হ্যাঁ, হ্যাঁ…

    বীণা। তাহলে ওকে এখনই খাইয়ে দিই। রাস্তায় সারাদিন আজেবাজে সব খেয়েছে। আসলে ওর কদিন ধরেই…

    অনঙ্গ। হ্যাঁ, হ্যাঁ--রুদ্রবাবু make yourself absolutely at home!

    সুরময়ী। তুই ছেলেটাকে নিয়ে আমার সঙ্গে আয়।

      [বীণা সুভদ্রকে স্যুটকেসের ওপর তার আরামের আসন থেকে তুলতে যায়।]

    সুভদ্র। (প্রতিবাদের সুরে) আমি এখন যাব না, মা।

    বীণা। সুভদ্র--মার কথা শুনতে হয়। [ছেলেকে কোলে তুলে নেয়।]

    সুভদ্র। আমি যাব না। বড়দের কথা শুনতে আমার ভালো লাগে…। ও বাপি…

    রুদ্র। থাক না ও আমার কাছে..

    বীণা। নাঃ। অনেক রাত হয়েছে। খাবে চল।

      [সুভদ্রর প্রতিবাদ উপেক্ষা করে বীণা ছেলেকে কোলে নিয়ে সুরময়ীর সঙ্গে প্রস্থান করে। ঘরে কিছুক্ষণ অনর্থক নীরবতা। অনঙ্গ রুদ্রনাথের দিকে এগিয়ে আসে। ]

    অনঙ্গ। রুদ্রবাবু--আপনি হয়তো মিস্টার জৈনের সঙ্গে আলাপ করে খুশী হবেন। (মি: জৈন উঠে দাঁড়ান)। মিস্টার শিউনন্দন জৈন, আমার প্রতিবেশী। নারায়ণী টী গার্ডেন্সে এবং জগৎলখ্‌শমী textiles-এর proprietor…. মি: রুদ্রনাথ সেন, (জৈনকে) বলছিলাম না--ইনি kirloscar-এ আছেন?

    জৈন। ও! আচ্ছা, আচ্ছা, আচ্ছা।

      [উন্মেষ এতক্ষণ রুদ্রনাথের সঙ্গে ছিল। সে উঠে মঞ্চের পিছনের জানলার সামনের গিয়ে দাঁড়ায়। অনঙ্গ রুদ্রকে জৈনের সঙ্গে ভিড়িয়েই বুঝতে পারে উন্মেষ একা হয়ে গেল।]

    অনঙ্গ । [অভ্রেন্দুকে] আজব লোক তো তুই। ভাইটার সঙ্গে ঝিলিকের আলাপটাও করতে পারিসনি অ্যাতক্ষণ?

    অভ্রেন্দু। Host আমি না তুই?

    অনঙ্গ। এই--তোর এত formality হোল কবে থেকে রে?

    নিশীথা। নাঃ। তোমার না…. সত্যি! আয়রে ঝিলিক। তুই তোর commentary-তে ঠিকই বলেছিস--এবারেও মনান্তরে আমাকেই ধন্বন্তরী হতে হবে। এই আমার একমাত্র দেবর--একমোদ্বিতীয়ম শ্রীমান উন্মেষ বিশ্বাস ওরফে বাবুল।

    অনিন্দ্যা। আসুন--আলো থাকতে থাকতে আপনাকে Greenhouse-টা দেখিয়ে আনি। বাইরে আবার মেঘও করেছে।

    নিশীথা। হ্যাঁ, তাই ভালো। [অনিন্দ্যা প্রস্থানোদ্যত হতেই] আর শোন্‌--ফিরলে পরে তোদের মুখে “আপনি” যেন আর না শুনি, কেমন?   [হাসে]

      [অনিন্দ্যা আর উন্মেষ প্রস্থান পথে অগ্রসর হয়।]

    উন্মেষ। আসার পথে একসঙ্গে অনেকগুলো কুকুরের ডাক শুনলাম…?

    অনিন্দ্যা। আপ্‌….তোমার কুকুরে ভয় নাকি?

    উন্মেষ। না না, তা কেন… [প্রস্থান]।

      [অনঙ্গ আর অভ্রেন্দু ইতোমধ্যে গল্প জুড়ে দিয়েছে। রুদ্রনাথ আর জৈনও আলোচনায় মগ্ন। নিশীথা বুঝতে পারে তার এখন এখানে না থাকলেও চলবে। সে আড়মোড়া ভাঙ্গে, শব্দ করে। অন্যরা থেমে তার দিকে তাকায়। নিশীথা অস্বস্তিতে পড়ে। ]

    অনঙ্গ। খুব tired?

    নিশীথা। সেই ফারাক্কায় last থেমেছি। তারপর থেকেই তো non-stop drive--

    অভ্রেন্দু। হ্যাঁ, বয়সও তো আর কমছে না। যৌবন তো আর vanity bag নয় যে--

    নিশীথা। [অভ্রেন্দুকে] এই--তুমি ওই মাঝারি মত নীল ব্যাগটা গাড়ী থেকে নামিয়েছিলে?

    অভ্রেন্দু। একতলায় ওই telephone-এর টেবিলের তলায় রেখেছি। এক্ষুনি চাই?

    নিশীথা। নাঃ। এম্‌নি বলছিলাম। আমি যাই, একটু মহিলা মহলে ঢুঁ মেরে আসি।

    অভ্রেন্দু। হ্যাঁ যাও। Glory, Hallelujah! [হাঁফ ছাড়ে]।

    নিশীথা। ইয়ারকি মেরো না। আমাকে ছাড়া তোমার--

    অনঙ্গ। আচ্ছা শোন্‌--আজ, কাল আর পরশু, মানে এখানে একসঙ্গে আমরা যতক্ষণ আছি--সবাই সবাইকে ‘তুই’ বলতে পারি না! মানে সুরময়ী, আমি আর তোরা দুজনে আর কি! আগের মত?

    অভ্রেন্দু। হ্যাঁ, চেষ্টা করে দেখা যেতে পারে। [কাশে]। তাহলে ‘তুই’ এখন ‘আয়’ নিশীথা। ‘তোর’ উপস্থিতি ক্রমশঃ unbearable হয়ে উঠছে।

    নিশীথা। ধ্যাৎ!

      [হুড়মুড়িয়ে প্রস্থান করে। অনঙ্গ আর অভ্রেন্দু জোরে হেসে ওঠে।]

    রুদ্র। সত্যি, আপনারা পারেনও।

    অনঙ্গ। না, ভাবুন একবার, প্রথমে তো আমরা কলেজে এলাম, বন্ধু হলাম। তারপরে নয় প্রেম, বিবাহ, সংসার। সেই পরের পার্টটা ঝেড়ে ফেলার জন্যই তো এই reunion, তাই না? তাহলে ‘তুমি’ওয়ালারাও সেই reunion-এর মেজাজে ‘তুই’-এ ফিরে আসবে। Logic-টা পরিষ্কার।

    জৈন। আপনাদের college friendsএর বীচ এরকম friendship দেখতে তাজ্জব লাগে। আমি তো morning class করতাম St. Xaviersএ--from class to office to home. বাস্‌। ওটাই daily routine ছিলো। Classmate-দের নাম ভি জানতাম না।

    অভ্রেন্দু। আপনার policy-টা জানেন, কতটা চ্যবনপ্রাশের মত।

    জৈন। চ্যবনপ্রাশ?

    অভ্রেন্দু। হ্যাঁ--ওই চ্যবনপ্রাশে রক্ত পরিষ্কার থাকে আর আপনার policy-তে conscience--

    জৈন। হ্যাঁ?

    অভ্রেন্দু। বিবেক, বিবেক।

    জৈন। হ্যাঁ?

    অনঙ্গ। Vivek--

    জৈন। হাঁ হাঁ। আমার ভাতিজার নাম Vivek! La Martinierre-এ পড়ে।

      [নীরবতা। জৈন বাদে বাকিরা কথোপকথনে সংযোগাভাবের মজায় হেসে ওঠে। বুঝতে না পেরে জৈনও বোকার মতো হাসতে থাকে।]

    অনঙ্গ। [প্রসঙ্গ বদলাবার জন্য] তো Mr. Jain--কাল আপনার landrover টা ধার দেবেন তো? এদের একটু আশপাশটা ঘুরিয়ে নিয়ে আসতাম।

    জৈন। হাঁ, লেকিন--

    অনঙ্গ। না না--আমার বুড়ো landrover-টা বিগড়ে না গেলে আপনাকে বলতাম না।

    জৈন। আরে ধুর! আমি কি সে জন্যে আপনাকে বলছি? আমার গাড়ী আপনি লিবেন, তাতে ঝামেলা কি?

    অনঙ্গ। তাহলে?

    জৈন। আজ শাম বারিষ নামবে। Forecast-এ বললো কাল দিনভর চলবে। তাহলে আপনারা বেরোবেন কিভাবে? Forecast বলছে heavy rain with thunderstorm!

    অভ্রেন্দু। তোর ছবি flop করলো রে অ্যানি।

    অনঙ্গ। কি আছে? তাহলে রোববার সকালে যাবো।

    জৈন। আমার বুড্‌ঢা নেপালী দারোয়ানটা বলছিল কি জানোয়ারদের behaviour কি অনুসার ও বুঝে কেমুন বারিষ হবে।

    অভ্রেন্দু। তো সেই animal meteorology কি বলছে?

    জৈন। Abnormal কুছু হবে।

    অনঙ্গ। Abnormal মানে?

      [বাইরে থেকে হঠাৎ একসঙ্গে অনেকগুলো বাঘা বাঘা কুকুরের ডাক শোনা যায়। একটু দূর থেকে ভেসে আসে কান ফাটানো শব্দ, তারপর মিলিয়ে যায়।]

    অনঙ্গ। ওই। মোহন কুকুরগুলোকে নিয়ে ফিরলো।

    অভ্রেন্দু। হ্যাঁ, আমিও শুনেছিলাম তুই বাড়ীতে একটা ছোটোখাটো চিড়িয়াখানা বানিয়েছিস।

    অনঙ্গ। চিড়িয়াখানা নয়, কুকুরখানা। ভুল শুনেছিস।

    জৈন। হাঁ, চৌধুরী সাবের ইখানে অনেক লোক আসে শুধু dogs দেখতে, garden নয়। He is quite famous for his dogs! সাত-সাত খানা!

    রুদ্র। আমাদের একটা অ্যালসেশিয়ান আছে। সুভদ্রর বয়সী।

    অনঙ্গ। আমার কুকুরগুলো ঠিক domesticated নয়। মানে আর পাঁচটা পোষা কুকুরের মত নয় আরকি! [অভ্রেন্দুকে]। তুই তো জানিস, আমার বরাবরই কুকুরের সখ। যখন কলকাতায় ছিলাম তখনই মনে হতো কুকুরদের ঘরে বন্দী করে রাখাটা অপরাধ। ওই বলে না--“বন্যেরা বনে সুন্দর”?

    রুদ্র। শিশুরা মাতৃক্রোড়ে।

    অনঙ্গ। তো ৭৮-এ বাবা এই tea estate-টা কেনার পর যখন আমাকে তার total দায়িত্ব দিলেন, তখন chance পেলাম আমার স্বপ্নটাকে realise করার। এখানে move করার পর পরই একটা বড়সড় kennel বানালাম। আর সে সময়টা আমায় ফি বছর Europe যেতে হতো। And each time I brought home a pappy. এখন আমার এখানে আছে সাত সাতটা full grown শিকারী কুকুর। একটা গ্রেট ডেন্‌, from Germany, দুটো Doberman Pinscher, also from Germany, একটা English Bloodhound, একটা Bull Terrier, ওটাও ইংরেজ, একটা St. Bernard from Switzerland, আর ওই বুড়ো অ্যালসেশিয়ানটা--যেটাকে কলকাতার বাড়ীতে তোরা একেবারে ছোট্ট দেখেছিলি।

    অভ্রেন্দু। উরিব্বাস। কি করেছিস রে? কুকুরগুলো তাহলে দেখতে হয়!

    জৈন। হাঁ হাঁ--কি বললাম? একদম tourist attraction!

    রুদ্র। কুকুরগুলোকে রাখেন কোথায়?

    অনঙ্গ। ওই যে বললাম--kennel বানিয়েছি একটা। বাড়ীর backyard-এ পাঁচ কাঠার একটা বেড়া দেওয়া area আছে।

      [হঠাৎ হুড়মুড় করে শংকরের প্রবেশ। পরনে কলাপাতা রঙের পাঞ্জাবী। সেই দেখে সবাই কিছুক্ষণ ওর দিকে ঠায় চেয়ে থাকে। শংকরের পিছনে ওর bag হাতে আসে মোহন।]

    শংকর। [ঝুপ করে চেয়ারে বসেই] তোর ব্যাপারটা কি বল্‌তো? বাড়ীতে কাউকে ঢুকতে দিবি না নাকি? শালা, কুকুরগুলো কি চিল্লান চিল্লালো রে ভাই!

    অনঙ্গ। Bad timing শংকর। সময় মতো না আসার শাস্তি বলতে পারিস।

      [মোহন suitcase রেখে প্রস্থান করে।]

    অভ্রেন্দু। এত দেরী করলি কেন বল্‌তো? একটা দারুণ ব্যাপার miss করে গেলি।

    শংকর। আর বলিস না মাইরি। Driver বানচোৎটা রাস্তা ভুল করলো।

    অভ্রেন্দু। ওফ্‌হো। জিভে লাগাম লাগা শংকু। এখানে বাইরের লোক আছে।

    শংকর। এ হে হে। কিছু মনে করবেন না please! আসলে বহুদিন পর বন্ধুদের সঙ্গে দেখা তো।

    জৈন। আরে না না। কোই বাৎ নেহী! চাইলে আপনাকে কিছু মারোয়াড়ি খিস্তিও শিখিয়ে দিতে পারি। হে হে হে --

      [অন্যরা ভদ্রতা করে মৃদু হাসে। জৈন বোঝে তার মস্করা যোগ্যতার মান রাখতে পারেনি। ]

    শংকর। Ladies-রা সব কোথায়?

    অনঙ্গ। আছে এদিক সেদিক কোথাও।

    শংকর। ডাক ওদের।

    অনঙ্গ। তুই বরং চল। তোকে দেখে ওদের কি reaction হয় দেখতে ইচ্ছে করছে।

    অভ্রেন্দু। হ্যাঁ। Dress যা চড়িয়েছিস।

    অনঙ্গ। চল তাহলে। Let’s have a few heart attacks। [অভ্রেন্দুকে] তুই যা না--ঘরে গিয়ে একটু rest নে।

    অভ্রেন্দু। নাঃ। ঘরে গেলে নিশীথা জামা জুতো খোলো, চান করো, পাউডার লাগাও--এইসব করবে। তার চেয়ে এখানেই ঠ্যাং ছড়িয়ে একটু…

    জৈন। হাঁ--আমিও তাহলে। [রুদ্রকে]। এ… Mr.Sen, আপনি আসবেন নাকি হামার বাড়ী। Export-এর documents কুছু দিখাতাম।

    রুদ্র। না, মানে…

    জৈন। It’s not even 8 now. এক ঘন্টার বেপার। বাড়ী তো পাশেই।

    অনঙ্গ। আরে যান না রুদ্রবাবু। No problem--আপনাকে বাদ দিয়ে ডিনার বলবে না। ঘুরে আসুন। Don’t worry.

    রুদ্র। [জৈনকে] চলুন তাহলে।

      [সবাই বাহির পথে অগ্রসর হয়। ]

    শংকর। জায়গাটা জব্বর বাগিয়েছো ওস্তাদ। আর বাড়ীটাও হেবি।

    অনঙ্গ। হুঁ হুঁ বাবা--Kingsley সাহেবের English manor, built in 1907.

    শংকর। বাব্বা। ভালো maintain করেছিস তো।

    অনঙ্গ। West facing বাড়ী তো। sunset-টা দেখবি সামনের portico দিয়ে দারুণ লাগে।

    অভ্রেন্দু। অ্যানি--[অনঙ্গ ঘুরে দাঁড়ায়] বড় আলোটা নিভিয়ে table lamp-টা জ্বালিয়ে দে না একটু।

      [অনঙ্গ স্নেহভরে হাসে। বন্ধুর নির্দেশ পালন করে। ]

    অনঙ্গ। ঘুমিয়ে পড়িসনা আবার।   [সবার প্রস্থান।]

      [দূর থেকে ভেসে আসে jeep-এর শব্দ এবং কুকুরগুলোর ব্যস্ত হাঁকডাক। মৃদু মেঘগর্জন হয়। অভ্রেন্দু হঠাৎ গিয়ে projector চালিয়ে slide-গুলো উল্টো order-এ দেখতে থাকে। শংকর, শুভময়ী, নিশীথা, হাসান।   [হাসানের ছবিতে এসে অভ্রেন্দু থামে।] Tape-টা rewind করে হাসানের আবৃত্তির অংশে এসে থামে। কবিতা শুনতে শুনতে ঠায় চেয়ে থাকে মৃত বন্ধুর মুখের দিকে। আবৃত্তি শেষ হলে tape বন্ধ করে। আগের slide-টা আনে। সুভদ্রর ছবি। তারপর রুদ্রনাথ ও বীণার। একটু বেশীক্ষণই যেন অভ্রেন্দু চেয়ে থাকে ওদের দিকে। তারপর ছবি বদলায়--এবার বীণার একক ছবি। অভ্রেন্দু ঠায় চেয়ে থাকে। আবার মেঘের গর্জন। অভ্রেন্দু projector-এর lens-এর উপর আঙ্গুল ফেলে নানারকম ছায়া ফেলতে থাকে। হঠাৎই বীণার প্রবেশ। অভ্রেন্দু চট করে projector-টা off করে দেয়। বীণা দরজার কাছে দাঁড়িয়ে অভ্রেন্দুকে কিছুক্ষণ তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে পর্যবেক্ষণ করে। ]

    বীণা। Suitcase-টা নিতে এলাম।

    অভ্রেন্দু। বেশ করলি। [Suitcase টা তুলে নিয়ে গিয়ে বীণার সামনে রাখে] নে।

      [বীণা একতিলও নড়ে না। অভ্রেন্দু তার পুরনো বসার জায়গায় ফিরে এসে cigarette ধরায়। ]

    বীণা। চারমিনার ছেড়ে দিয়েছো?

    অভ্রেন্দু। [হাসে] বুড়ো ফুসফুস দুটো জেহাদ ডাকে মাঝে মাঝে তাই এখন Classic খাই।

    বীণা। গল্প লেখাটাও ছেড়ে দিলে?

    অভ্রেন্দু। খুব কম। I have time for only editorials and news features…   [নীরবতা]। অন্যদের লেখার উপর কলম চালাই, খুব radical কথা থাকলে কেটে দিই। মাইনে করা কলম তো। [বীণা প্রস্থানোদ্যত] চলে যাচ্ছিস? [কাছে উঠে যায়, বীণা নড়ে না।] কিছু বললি না যে?

    বীণা। বলার কিছু নেই।   [চলে যেতে যায়।]

    অভ্রেন্দু। একটু দাঁড়া।

    বীণা। না, আমায় যেতে হবে। সুভদ্র একবার ঘুমিয়ে পড়লে ওর জামাকাপড় পালটানো impossible হয়ে যাবে।

    অভ্রেন্দু। দুমিনিট পরে গেলে কিছু হবে না।

    বীণা। আমার…

    অভ্রেন্দু। তুই কি আমাকে একটুও বুঝতে পারছিস না? ১৪ বছর এই কথাগুলো মাথার মধ্যে বয়ে বেড়াচ্ছি। I have waited for this moment for 14 long years. এখন আমায় এড়িয়ে যাস না please! For heaven’s sake!

      [বীণা একটা অদ্ভুত মৃদু হাসি হাসে।]

    বীণা। কী হবে?

    অভ্রেন্দু। তুই আমাকে এখনো--I know… I can well understand the   [থামে] ৭৬’-এর June মাসে আমি ভেবেছিলাম আমার America যাবার খবরটা তোকে খুশী করবে, সাময়িকভাবে খারাপ লাগলেও। আর তুই ভাবলি আমি হাসানের সঙ্গে অন্যান্য comrade—দের   [বীণা তাকায়]… মানে অন্যান্যদের সঙ্গে betray করলাম।

      [বাইরে বাজ পড়ে]।

    বীণা। আজ আর এসব কথা…

    অভ্রেন্দু। বীণা please… যা বলার আজকেই বলে নিতে হবে।

    বীণা। ঠিক আছে। মনে রেখো, তুমিই বলতে বললেmsp; [অভ্রেন্দু মাথা নাড়ে] তুমি ওই কাগজটায় সই করলে কি করে?

    অভ্রেন্দু। কি কাগজ?

    বীণা। যাবার আগে পুলিশের কাছে? লিখে দিতে পারলে? হাসান, ত্রিদিব, প্রশান্ত, রোহিত--ওদের কার সঙ্গে তোমার কোনো রাজনৈতিক সম্পর্ক ছিলো না? ওরা জোর করে তোমার নাম union-এর খাতায় তুলেছিলো কেন, police সব charge তুলে নেবে বলে, যাতে passport পেতে তোমার সুবিধে হয়?

    অভ্রেন্দু।   [বেশ নীরবতার পর]। এসব কে বললো তোকে?

    বীণা। ছাত্র পরিষদের প্রদীপ। ওরই MLA বাবাকে তো তুমি হাতে পায়ে ধরেছিলে, তাই না?   [নীরবতা]

      [বীণা তীক্ষ্ণভাবে অভ্রেন্দুকে দ্যাখে কিছুক্ষণ।]

    বীণা। জানি না!

    অভ্রেন্দু। Thank you Bina Thank you.   [অভ্রেন্দু হঠাৎ হাসে] টা এই রুদ্রবাবুটিকে পেলি কোথায়?

    বিনা। আনন্দবাজারের 2nd page থেকে। বাবার choice.

    অভ্রেন্দু।   [অদ্ভুত হেসে] Surprising.   [নীরবতা] নিশীথা… মানে নিশীথা সম্পর্কে তোর কোনো প্রশ্ন আছে? মানে আমার সঙ্গে…

    বীণা।   [অসম্ভব আবেগরুদ্ধ কন্ঠে] না। কোনো প্রশ্ন নেই।   [উঠে পড়ে]

    অভ্রেন্দু। Just one more question, please. Clarification-ও বলতে পারিস। বহুবার, বহুলোকের কাছে শুনেছি। তুই যাদের সাথে পরীক্ষার preparation করতিস তাদের কাছেও শুনেছি তুই নাকি partII-তে 7th paper-এ একটা question পুরো answer করিস্ নি?

    বীণা।   [একটু চুপ করে থেকে] বাজে কথা।

    অভ্রেন্দু। কেন করেছিলি? তখন তো already everything was over. আমি ওভাবে first class first হতে চাইনি। তুই আমায় কৃপা করেছিলি বীণা?

      [বাইরে এবার বেশ জোরে মেঘ ডেকে ওঠে। বীণা জানলার দিকে মুখ ঘুরিয়ে তাকায়। তারপর সেদিকে এগোয়।]

    অভ্রেন্দু। কি হোল? জবাব দিলি না যে?

    বীণা। যাই, বৃষ্টিটা বেশ জোরে নামার আগে সুভদ্রর জামাকাপড়….  [ জানালার কাছে পৌঁছে যায়। কথাগুলো যেন বাঁধে আটকে থাকা অশ্রু নদীর উথাল পাথাল দোলায় দুলছে।]

    অভ্রেন্দু। হঠাৎ একটা ছেঁড়া কবিতা মনে পড়ছে। D.H Lawrence-এর--

    Yours is the sullen sorrow,
    The disgrace is also mine
    Your love was intense and through
    Mine was the love of a growing flower
    For the sunshine

    এর একটা অনুবাদ করেছিলি তুই--

    বীণা। ‘তোমার হলো দুঃখটুকু
    আমার হলো গ্লানি।
    তীব্র ছিলো আমার প্রেম, গভীর ছিলো আর।
    ফুলের মতন আমার প্রেম, ফোটার উন্মোচনে
    রোদটুকু চেয়েছিলো’।

      [প্রচণ্ড বাজ পড়ে। বৃষ্টি নামে। জানলার আধো অন্ধকারে বীণাকে দেখে বোঝা যায়, তার বাঁধটা ভেঙ্গে গেছে। ]

    বীণা।   [মুখ ফেরায় না] বৃষ্টি নামলো।

      [চার দৃশ্যে সমাপ্য নাটকটির প্রথম দৃশ্য সমাপ্ত। ]


    নাটকটি অভিনয় করার আগে নাট্যকারের অনুমতি নেওয়া প্রয়োজন--সম্পাদক

  • পর্ব ১ | পর্ব ২ | পর্ব ৩ | পর্ব ৪ (শেষ)
  • এই লেখাটি পুরোনো ফরম্যাটে দেখুন
  • মন্তব্য জমা দিন / Make a comment
  • (?)
  • মন্তব্য পড়ুন / Read comments