ভোরের শিশির গাড়ির গায়ে বিন্দু বিন্দু ঘামের মত চিকচিক করছে- যেন আসন্ন লম্বা সফরের চিন্তায় গাড়িটা শংকিত। আমরা চলেছি সেস্রিয়েম (Sasrium)-এর উদ্দেশ্যে। নামিব মরুভূমির প্রত্যন্তে পড়ে থাকা এই অঞ্চলটি পৃথিবীর আশ্চর্যতম কয়েকটি মায়াবি বালিয়াড়ির প্রবেশদ্বার।
দেখা গেল এটাই এবারের ভ্রমণের সবচেয়ে কঠিন পর্ব। পথে কোন লোকালয়ের চিহ্নমাত্র পেলাম না যতক্ষণ না আমরা সেই Sasrium-এর ৮০ কি.মি. আগে মাঝপথে কিউসেব (Kuiseb) গিরিখাতের কাছে একটু থেমে লাঞ্চ খাওয়া ছাড়া যাবার পথে উল্লেখযোগ্য কিছু আর ঘটে নি।
হাঁটু পর্যন্ত উঁচু নরম বুশম্যান-লেগ ঘাসে ঢাকা মাল্ভূমিতে কিছু কিছু জন্তুজানোয়ার ও গাছপালার দর্শন পেয়ে বুঝতে পারছিলাম যে আমরা গিরিখাতের কাছাকাছি এসে পড়েছি। কিছু দূরে ইম্পালা (Impala), জেমস্বুক (Gamesbook) আর যেন ঘাসের কার্পেটের উপরে ভেসে থাকা অনেক UFO। কোন অদৃশ্য তাড়নায় আচমকা সেগুলো এদিক থেকে ওদিকে ছুটে বেড়াচ্ছে। কাছাকাছি, লক্ষ্যভ্রষ্ট মিসাইলের মত একটা কুইভার Quivar গাছ বালির মধ্যে লজ্জায় তার বড় সড় মাথাটা গুঁজে পড়ে আছে। আর দূরের পাহাড়গুলো আনতমস্তকে দেখছে আমাদের ছোট্ট গাড়িটা শামুকের মত মাটিতে একটা ফাটল ধরে এগিয়ে চলেছে।
এই হল কুইসেব নদী। বছর কয়েক সপ্তাহের জন্য স্রোতস্বিনী হয়। ব্যাসল্টের চাঁই, ভাঙা পাথর ও বিক্ষিপ্ত স্তূপের মধ্যে দিয়ে আঁকাবাঁকা খাত কেটে রেখেছে। প্রধান গিরিবর্তের চারদিকে গভীর খাদের বুকে ঝাঁপ দিয়েছে রুক্ষ পাহাড়ের খাড়া দেওয়াল। কুইসেব গিরিবর্তের মধ্যে সেদিন নামতে নামতে আমরা কিছুক্ষণের জন্য অতীতের দিকে ফিরে যাচ্ছিলাম। হেনো মার্টিন (Henno Martin) ও হার্মান কর্ন (Herman Korn) নামের দুজন জার্মান ভূতত্ববিদ দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে কোনভাবেই লিপ্ত থাকতে চান নি বলে কুইসেবের নির্জনতায় এসে লুকিয়েছিলেন। এখানে তাঁরা আদিম মানবের মত জীবনযাপন শুরু করেন। যেন গোটা সভ্যতাকেই একেবারে গোড়া থেকে আবার ভেবে দেখবেন বলে। আমরা আমাদের যাত্রার শেষ চরণে পা বাড়াবার আগে এখানে একটি ব্রিজের কাছে গাড়ি দাঁড় করিয়ে ভূতত্ববিদ যেখানে থাকতেন সেখানটা একবার ঘুরে দেখে নিলাম।
গিরিবর্তের খাড়া গা বেয়ে গাড়িটা উপরের মালভূমিতে উঠে পরতেই Agnes Martin-এর আঁকা ছবির মত প্যাস্টেল রঙের ধেউ এসে আমাদের অভ্যর্থনা করলো। বিবর্ণ সবুজ ঘাস, লাল বালি, কালো পাথর, আর সবার উপরে নির্মল উজ্জ্বল আকাশ। আকাশে একটি শিকারী goshawk পাখি (সাদা, ডানার ডগাগুলো কালো) ঘুরছে তো ঘুরছেই, ডাকছে তো ডাকছেই।
কয়েক ঘন্টা পরে রাস্তাটা একটু ভালো হয়ে গেছে দেখে বুঝলাম আমরা Solitaire-এর কাছে এসে পড়েছি। এক জায়গায় রাস্তার পাশে একখানা মাত্র বাড়ি। ওটা নিশ্চয়ই গোটা Solitaire শহরটা নয়। কিন্তু প্রায় অবধারিতভাবেই একটু এগিয়ে, গাড়ি আস্তে করে, শেষমেশ আবার রিভার্স গীয়ারে ফিরে এসে বাড়িটার সামনে পেট্রোল পাম দেখে বুঝলাম সে ধারণার ভুল। এ যেন “বাগদাদ ক্যাফে” সিনেমার একটা সীন।
ঢোলা প্যান্ট পয়ার একটি লোক হাত দিয়ে পাম্প করে আমাদের ট্যাংক ভরে দিল। আমরা ততক্ষণে দোকানটার ভিতরে খাবার আর বরফ পাওয়া যায় কিনা দেখতে গেলাম। মোটাসোটা দোকানের মালিক বাজখাঁই গলায় বললেন, “বরফ নেই, এত বেলায় আর পাওয়া যায় না”। আমরা ফল আর বিস্কুট কিনে স্যান্ডউইচ আর আম-দুধ খাবো বলে বারান্দার স্ন্যাক বারের দিকে এগোলাম। যাকে বলে স্বর্গসুখ। আমাদের বলা হয়েছিল Scaricm-এ সূর্যাস্তের আগে পৌঁছতেই হবে, নইলে আমরা এখানে আরো খানিকক্ষণ বসতাম।
Scarism দেখতে মোটামুটি একটা সীমান্তের ঘাঁটির মত। কয়েকটা ছোট বাড়ি আর তাঁবু, ব্যাস্। সারাদিন মরুভূমিতে ঘুরে কালো হয়ে ও ধূলো মেখে ফিরে এসে লোকজন একটু বেড়াচ্ছে, গল্পটল্প করছে। ময়লা ফোর হুইল ড্রাইভ গাড়িগুলো উটের মত ইতস্তত ছড়িয়ে রাতের জন্য বিশ্রাম নিচ্ছে।
স্থানীয় ক্যাম্প অফিস আর টুকিটাকি জিনিসের দোকান করা হয়েছে একটা চূনকাম করা বাড়ীতে। খুদে বাগানটি তার যত্ন করে সাজানো। ভিতরে এক ফরাসী দম্পতি গভীর অভিনিবেশ ক্যাম্প অফিসারের সাথে তর্করত। তারা আরো একটা রাত থাকতে চায়। কযাম্প অফিসার খুব ধৈর্যের সাথে দেয়ালে টাঙানো বিরাট রিসার্ভেশন চার্ট দেখিয়ে বোঝাতে চেষ্টা করে যে আর জায়গা নেই।
নামিবিয়ার অন্যান্য ক্যাম্পগ্রাউন্ডের মত এটাও দেখলাম বেশ যত্নে রাখা। কলের জল, পরিষ্কার বাথরুম আর “ব্রাই” (দক্ষিণ আফ্রিকার ভাষায় বারবেকিউ) করার সুবিধে পাওয়া যাবে। আমরা গোল তাঁবু খাটিয়ে রাতের রান্নাটা তাড়াতাড়ি শেষ করে ফেললাম। আমাদের প্ল্যান ছিল রাত তিনটে নাগাদ বেরিয়ে পড়ে সুর্যোদয়ের সাথে সাথে Sossuvlci বালিয়াড়িতে গিয়ে পৌঁছনো। ঘন্টাখানেক ড্রাইভ করার পর রাস্তা শেষ হয়ে শুধু বালি পাবার কথা। সেখানে গাড়ি দাঁড় করিয়ে কয়েক মাইল হেঁটে বালিয়াড়ির উপত্যকার ঠিক মাঝখানে পৌঁছে যাওয়া যাবে।
আমাদের কাছে ফোর হুইল ড্রাইভ গাড়ি নেই বলে একটু চিন্তা হচ্ছিল। রোড কন্ডিশন কিরকম সেটা আরেকবার ভালো করে জেনে নিতে গেলাম। আমাদের প্রতিবেশী সুইস দম্পতিদের কাছ থেকে খারাপ খবরটা পাওয়া গেল। Sossuvlci-তে তারা এ নিয়ে চতুর্থবার এসেছে বলে মরুভূমি-তে গাড়ি চালাবার ব্যাপারে তাদের অভিজ্ঞ বলেই মানতে হয়। তারা জানালো যে এবছর অস্বাভাবিক রকম বেশী বৃষ্টি হওয়ায় প্রচুর পরিমাণে পাউডারের মত নরম বালি এসে রাস্তাগুলো আটকে রেখেছে। একমাত্র ফোর হুইল ড্রাইভ গাড়ি নিয়েই তার উপর দিয়ে কোনমতে গেলেও যাওয়া যেতে পারে।
অন্ধকারে একটা ফোর হুইল ড্রাইভ খুঁজতে বেরিয়ে পড়তে হল। কাছাকাছি একটা লাক্সারি লজ দেখা যাচ্ছিল। অনেকটা কেল্লার মত দেখতে, মরক্কোর বাড়ির ধাঁচে সমতল ছাদের উপর একটা ওয়াচ টাওয়ার আছে দেখলাম। ভিতরে ঢুকে দেখি একটা চত্বর। অবিকল যেন “দ্য ইংলিশ পেশেন্ট” ছবির সেট। বিশেষ করে তা মনে হল কারণ আমাদের সাহায্য করতে যে মহিলা এগিয়ে এলেন তাঁকে দেখতে একেবারে অভিনেত্রী ক্রিস্টিন স্কট-টমাসের মত।
আলাদীনের দৈত্যের মত কোত্থেকে একটি প্রাইভেট ট্যুর অপারেটর এসে উদয় হল। সে আমাদের বালিতে গাড়ি চালাবার এমন সব টেকনিক শেখাতে লাগলো যার মাথামুন্ডু কিছু বোঝা যায় না”। …. দ্বিতীয় বাম্পটার পরেই তোমরা দেখতে পাবে যে বালিতে কিছু গাড়ি আটকে আছে, তখন রাস্তা থেকে সরে, বেশী জোরে চালিও না আবার, ডাইনে মোচড় মেরে যেই দেখবে বালিতে টায়ারের দাগ অমনি শ খানেক মিটার চালিয়ে যাবে নাক বরাবর তাহলেই বড় বাম্পটার কাছে গিয়ে পৌঁছবে”…. আমরা বৃথা বাক্যব্যয় না করে এই লোকটিকেই গাড়ি চালাবার জন্য ঠিক করে ফেললাম।
গাড়ির ব্যাপারটা মিটিয়ে ফেলে বেশ নিশ্চিন্ত হয়ে আমরা অন্ধকারে তারাভরা আকাশের নীচে রাতটা উপভোগ করতে ক্যাম্পে ফিরে এলাম। হেনো মার্টিনের ভাষায়…” সম্পূর্ণ নীরবতা। যেন নক্ষত্র থেকে মহাকাশের নিশ্চলতা গলে গলে পড়ছে”…।
রাতভোরের ড্রাইভের জন্য ক্যাম্পাররা তৈরি হচ্ছে। সেই শব্দে ঘুম ভাঙলো আমাদের। আমাদের ট্যুর গাইড তার টয়োটা ল্যান্ড ক্রুইসারে তিনজনের একটি জার্মান পরিবারের সাথে আমাদেরও একটু চেপেচুপে ঢুকিয়ে নিল। প্রচুর ধূলো উড়িয়ে আমারা হু হু করে বেরিয়ে পড়লাম। গ্রন্থাগারের যাত্রিদের জন্য তৈরি এয়ারফীল্ডের মত খোলা ধু ধু প্রান্তর। তার দুদিকে দৈত্যের মত ঘুমিয়ে আছে প্রকান্ড এক একটা বালিয়াড়ি।
মাঝপথে ড্রাইভার আচমকা গাড়ি আথমিয়ে আমাদের নামিয়ে বালিয়াড়ি-তত্ত্ব বোঝাতে শুরু করলো। ড্রাইভারকে ঘিরে আমরা দাঁড়িয়েছি স্টোনহেঞ্জের পাথরের পিলারের মত, উদীয়মান সূর্যের আলোয় লম্বা ছায়া পড়েছে আমাদের। ড্রাইভার বললো বালি তৈরি হয়েছে গুঁড়ো কোয়ার্টজ পাথর দিয়ে। কমলা, লাল বা ক্রীম রঙ থেকে শুরু করে বেগুনী বা কালো রঙের হতে পারে এই বালি। নামিব আর কালাহারি মরুভূমির বালিয়াড়ির তফাত হল এই যে নামিবের বালিয়াড়িগুলো অস্থাবর। বাতাসের ধাক্কায় বছরে কয়েক মিটার করে সরে যায়। হাওয়ার দিক অনুযায়ী বালিয়াড়িগুলো প্যারাবলিক, সরল রেখার মত বা তারার মত আকৃতির হতে পারে। অস্থায়ী বালিয়াড়িগুলোকে বলে বার্চান বালিয়াড়ি। এগুলো দেখতে বাঁকা চাঁদের মত। বাঁকা ফলাটা যেদিকে মুখ করে আভহে বালিয়াড়িটা সে দিকে একটু মেকটু করে সরছে। নামিবের দক্ষিণ দিকের বার্চান বালিয়াড়িগুলো নাকি একটি পরিত্যক্ত খনি আর তার পাশে গড়ে ওঠা শহরকে গ্রাস করে ফেলছে। ইত্যাদি, ইত্যাদি। বক্তৃতার গতিবেগ সামলাতে পারে না আমাদের ড্রাইভার। শেষে একটু বাগ্মীতার ছোঁয়া লাগিয়ে দেয়: “তোমরা সব দূষিত শহর ছেড়ে এসেছো, গাড়ির হর্ন বাজাতে বাজাতে এই পরিষ্কার, শান্ত, রমণীয় দৃশ্য দেখবে বলে। দুদিকে হাত ছড়িয়ে সে বলে, “এই হল আমার দেশ। আমি একে ভালোবাসি”।
কিছুক্ষণের মধ্যেই আমরা বিপজ্জনক নরম বালির কাছে পৌঁছে গেলাম। যুদ্ধের পর পড়ে থাকা ভাঙা ট্যাংকের মত বেশ কিছু গাড়ি আটকে পড়ে আছে। আমরা সাবধানে গাড়ির চাকার দাগের উপর দিয়ে চললাম। উঁচু নীচু জমি পার করে শেষ পর্যন্ত এসে পৌঁছেছি Sossuvlci উপত্যকার মরুদ্যানের ঠিক মাঝখানে। এখানকার সবচেয়ে উঁচু বালিয়াড়ির নামও Sossusvlci। প্রায় ৩০০ মি. উঁচু এই বালিয়াড়িকে পৃথিবীর সবচেয়ে উঁচু বালিয়াড়িদের মধ্যেই ধরা হয়, যদিও সর্বোচ্চ বালিয়াড়িটা আছে গোবি মরুভূমিতে।
চতুর্দিকে টুরিস্ট আর হাইকাররা ছড়িয়ে ছিটিয়ে নিজের নিজের চিন্তায় মগ্ন হয়ে আছে। কথাও একা একজন বালিয়াড়ির কোন গিরিশিরা ধরে ক্লান্ত তীর্থযাত্রীর মত উঠছে। কোথাও এক দল লোক পিঁপড়ের সারির মত ধালু গা বেয়ে চলেছে। কেউ কেউ স্কেটবোর্ডে করা ঢালু গা বেয়ে পিছলে নেমে আসছে। একজন ফরাসী স্কী-প্রেমিক কয়েক বছর আগে বালিয়াড়িতে স্কী করার প্রচলন করেছেন।
কমলা মেরিঞ্জের মত চারদিক থেকে ঘিরে থাকা বালিয়াড়িগুলো আকার আর আকৃতি বুঝতে আমাদের বেশ খানিকটা সময় লাগলো। আরেকটু ভালো করে দেখার জন্যে আমরা উঁচু দেখে একটা বালিয়াড়ির ধারালো গিরিশিরা বেয়ে উঠে পড়লাম। বালিয়াড়ির উপর ত্বকের মত একটা স্তরে হাওয়া এসে মানুষের তৈরী সমস্ত দাগ মুছে দিচ্ছিল। অশ্রুবিন্দুর মত উপর থেকে গরিয়ে আসা বালির দানার সম্মিলিত শব্দ-টা গর্জনের মত শোনাতে পারে। মার্কো পোলো গোবি মরুভূমির পার হবার সময় এরকম শব্দ শুনতে পেয়েছিলেন।
মাঝে মাঝে জন্তু জানোয়ারের চিহ্ন দেখতে পাচ্ছিলাম। মরুভূমিতে যে কত রকম ছোট জন্তু আর পোকা মাকড় থাকে জানলে বিস্মিত হতে হবে। যেমন সাইড ওয়াইন্ডিং সাপ বা অন্ধ গোল্ডেন মোল যা বালির নীচ দিয়ে এমনভাবে সাঁতার কেটে যায় যেন কার্পেটের নীচ দিয়ে চলেছে একটা ঢিবি। এছাড়া আছে মাকড়সা যে খাদক জন্তুর হাত এড়াতে সেকেন্ডে পাঁচ ফুটের মত অবিশ্বাস্য দ্রুতগতিতে গরিয়ে যেতে পারে। বীটল জাটিয় পোকাই আছে প্রায় ২০০ রকমের। Gamesbook-এর মত বড় জানোয়ারও আছে। মরুভূমির জলবায়ুর সাথে খাপ খাইয়ে নিতে জেম্সবুক-কে প্রচন্ড কষ্টসহিষ্ণু এবং শক্তিশালী হতে হয়েছে। হেনো মার্টিন লিখেছেন যে শিকার করার সময় এসের মাথায় একটা পিস্তলের গুলি মারলেও কিছুই হত না।
বৃষ্টির স্বল্পতার জন্য প্রাণীজগতও নিজেকে অদ্ভুত ভাবে প্রস্তুত করে নিয়েছে। বীজ বা ডিমগুলো বহুদিন জলের অভাব সহ্য করতে পারে। নীল উইভিল পোকার (weevil beetle) ডিম বৃষতির প্রথম ফোঁটার সাথে সাথেই ফুটতে শুরু করে। একরাতের মধ্যে ডিম ফুটে যায়। জন্মাবার কয়েকদিনের মধ্যে beetle-গুলি প্রজনন করে নিজেরা ডিম পেড়ে মারা যায়। নতুন ডিমগুলো আবার কয়েক বছর অপেক্ষা করে থাকে পরের বৃষ্টির জন্য।
এই বছর বৃষ্টি একটু বেশী হয়ে গেছে। মরুদ্যানটি দেখলাম জলে ভরা, যদিও ধারগুলো ভাঙা মাটির পাত্রের মত ফেটে ফেটে যাচ্ছিল। মসৃণ বালিয়াড়ির মুখের উপর দাড়ির মত ঘাস গজিয়ে গেছে। গাছপালা প্রায় সবই অচেনা। একটা গাছের পাতাগুলো স্পঞ্জের মত। হাতে নিয়ে চাপ দিলে টক টক একটা জল বেরিয়ে আসে। মরুভূমির নিজস্ব লেমোনেড।
উঁচু বালিয়াড়ির উপর দাঁড়িয়ে আমরা মরুভূমির পুরোটা দেখতে পাচ্ছিলাম। নীচে মরুদ্যানের জল চিক চিক করছে। কুয়াশা, মেঘ আর সকলের আলোর সংস্পর্শে মরুভূমির বালির অং পালটে যাচ্ছে মুহুর্মুহু। দূর থেকে যারা এসেছে তাদের জন্য কখনো বেগুনী, কখনো গোলাপী, কখনো লাল বা কমলা রঙের উপঢৌকন। সারা পৃথিবী থেকে যে পেশাদার ফটোগ্রাফাররা এখানে এই রঙের খেলার ছবি তুলতে আসবে তাতে আশ্চর্য কি? ফিরে আসার জন্য আর না নড়তে চায় না কারো।
সে রাত্রে Windhock-এ ফিরবার পথে আমরা প্রকান্ড সব পাথরের চাঁই এর পাশ দিয়ে এলাম। দেখে মনে হচ্ছিল যেন আকাশ থেকে পড়েছে। নামিবিয়াতে সত্যি সত্যিই পৃথিবীর একটি বৃহত্তম উল্কা বর্ষণ ঘটেছিল। এই সব উল্কাগুলি যেমন দূর মহাকাশ থেকে পোস্টেজ স্ট্যাম্পের মত বিদেশ বিভূঁয়ে এসে পড়ে আছে, মনে হচ্ছিল যেন আমরাও কোন অচিন রাজ্যে এসে পড়েছি। আমাদের মনের ভালো লাগাটা মত কোন যন্ত্র ছিল না হাতের কাছে। কিন্তু বুঝতে পারছিলাম, ঠিক জায়গাতেই এসেছি।