লোকটার নাম আমি জানতে পারিনি।
মল্লিকবাবু বা মল্লিকসাহেব বলে ডাকতো তাঁকে লোকে, তবে সাহেব-টাহেব গোত্রের কোন লোক ছিলেন না তিনি। নেহাতই ছা-পোষা রোগাসোগা তেঢেঙ্গে লম্বা এক প্রৌঢ় পুরুষ। মাথাজোড়া মস্ত টাক। দু’গাল বসা। চোখে পুরু প্লাস পাওয়ারের চশমা। শীতগ্রীষ্ম একটা খেঁসকুটে রঙের জওহর কোট সর্বদাই পরতেন গোল গলা কুর্তার ওপরে, নিম্নাঙ্গে ধুতি। মাথায় একটা মাড়োয়ারি টুপি, নস্যি রঙের। কী করেন, রোজ রোজ এই সকাল ন’টা তেত্রিশের ট্রেনটি ধরে কোথায় যান--জানতে পারিনি। কারণ, আমি নেমে গেলেও উনি জানলার ধারে ওঁর বাঁধা সীটটিতে বসে থাকেন আনমনে, চোখ বুজে।
ওঁকে প্রথম দেখিও এই ট্রেনের কামরাতেই। এই আধা গ্রামাঞ্চলের প্যাসেঞ্জার ট্রেনে ধুম্রপানের কানুন অত জোরদার মানা হয় না, আর মল্লিকসাহেব বিড়িও ফুঁকতেন হরবখত। একটা বিবর্ণ হয়ে আসা লাইটার সর্বদা থাকবেই ওঁর পকেটে। তার ওপর তাল ঠুকে ঠুকে কোনো গান-টানের সুর ভাঁজতেন বোধহয় প্রায়শই।
সদ্য সদ্য চাকুরি পেয়েছি তখন। ঔষধ কোম্পানির প্রতিনিধি। ঘুরতে হয় খুব।
প্যাসেঞ্জার ট্রেনের নিত্যযাত্রীরা পরস্পরকে চেনে ভালোই। কিন্তু একজন যাত্রী সেদিন উঠেছে যাঁকে আমি আগে কোনদিন দেখিনি, যদিও অন্য অনেক যাত্রীর সঙ্গে বেশ গপ্পসপ্প করে চলেছেন তিনি, মানে অনেকেরই বেশ পরিচিতই বলা চলে।
কিছু কিছু লোক ট্রেনে উঠে মুখ বন্ধ করে দু’মিনিট বসে থাকতে পারে না। বক বক বক বক করেই যাবে করেই যাবে। এই নতুন লোকটা সেই গোত্রের। এই পাশের লোকের সঙ্গে ভোটের সম্ভাব্য রেজাল্ট নিয়ে বকছে তো পরমুহূর্তেই চা-ওয়ালার সঙ্গে কেরোসিনের দাম নিয়ে। আমি ঔষধ কোম্পানিতে আছি জেনে থেকে তেনার প্রশ্নের আর শেষ নেই। কত কী যে জিজ্ঞাস্য!
এর পর থেকে মাঝে মাঝেই ডেইলি প্যাসেঞ্জারি করতে গিয়ে সেই মল্লিক সাহেব ও জ্ঞানান্বেষু ভদ্রলোকের সঙ্গে দেখা হতো। যথারীতি দ্বিতীয়জনকে এড়িয়ে চলতাম আমি, কিন্তু মল্লিকবাবুর প্রতি কেন জানি একটা টান অনুভব করতাম। কেন? জানি না। উনি কিন্তু কথা প্রায় বলতেনই না। কারোর সঙ্গেই না পারতপক্ষে। নেহাতই কোনো পরিচিতজন ওঁকে কিছু শুধালে হ্যাঁ-হুঁ করে স্বল্প কথায় সেরে নিয়ে আবার জানলার পাটায় তাল ঠুকে সেই অশ্রুতপ্রায় গানের সুর ভাঁজতেন।
***
এরপর একদিনের ঘটনায় আমাদের সম্পর্কটা অন্য দিকে মোড় নিলো। সেটাই বলি এখন।
ট্রেনের কামরায় সেই সর্বজ্ঞানী ভদ্রলোক আমার গায়ের কাছে ঝুঁকে এসে কানে কানে ফিসফিস করে বললেন, ‘আপনাদের কোম্পানি কি লাইফ-সেভিং ড্রাগ বানায় নাকি মশয়?’ ভাষাটা হিন্দোস্তানী।
আমি গোদা বাংলায় বললাম, ‘না। বানায় না। আমাদের প্রোডাক্ট দাদের মলম ও সর্দিকাশির সিরাপ। আপনার লাগবে?’
হেঁ হেঁ হেঁ হেঁ করে কান-এঁটো করা হাসি হেসে বললেন, ‘জন্মসূত্রে বাঙালী বটি, কিন্তু তিনপুরুষ ঘর ছাড়া। মাতৃভাষা ভুলতে বসেছি ভাই। আমার মা-ও এ’দেশীয়া ছিলেন কিনা।’
গলার ঝাঁজ কমিয়ে বললাম, ‘কার লাইফ নিয়ে টানাটানি পড়ল?’
‘মুরুগান মঠে মহাসাধক অর্জুনদাস মৃত্যুঞ্জয় স্বামী থাকেন। তাঁর কাছে একবার মেয়েটাকে নিয়ে ফেলতে পারলে,’ কেমন এক উদাস স্বরে স্বগতোক্তি করলেন ভদ্রলোক। আমার মায়া হলো একটু। কিন্তু কথা আর বাড়ালাম না, এই বোধহয় উনি জ্ঞানের ঝাঁপি খুলে বসেন।
***
এর ক’দিনের মধ্যে জেলাসদরে ডক্টর-ভিজিট করে ফিরছি। চড়া রোদ্দুর। প্রচণ্ড তাত। হঠাৎ আমার গায়ের পাশেই ক্যাঁ--চ্ করে একটা মারুতি ওমনি ভ্যান এসে থেমে গেল।
‘উঠে আস, হৃষীকেশ।’
ডাক্তার পট্টনায়ক। দরজাটা পাশে ঠেলে খুলে দিলেন ভেতর থেকে। ইস্কুলে উনি আমার বড়দার সহপাঠী ছিলেন, তাই একটু বিশেষ নেকনজরে দেখেন এই অধমকে।
কী ব্যাপার?
উঠে এসে জিজ্ঞেস করি।
‘সুর-বাবু বলছিলেন যে তোমাদের কোম্পানি নাকি লাইফ সেভিং ড্রাগ বানাবে? লাইসেন্স পেয়েছে?’
‘সুর-বাবুটা আবার কে?’ প্রশ্ন বেরিয়ে গেল আমার মুখ দিয়ে।
'মনু সুর। চেনো না? পুরো নামটা বোধহয় মনমোহন সুর। মনু সুর বলেই চেনে সকলে। বহুকাল থেকে আছে এ’তল্লাটে। ইন্সুরেন্স কোম্পানির এজেন্ট।'
বর্ণনায় বুঝলাম, এ’হলো ট্রেনের সেই সর্বজ্ঞ লোকটা।
‘অ। লোকটা হয় বাংলাভাষা বোঝে না, নৈলে কথার অর্থ উল্টো বোঝে।’ বলে সেদিনের কথপোকথনটা বললাম।
‘তবে লোকটা কিন্তু ভারি উপকারী।’ ডাক্তারবাবু বললেন।
আমার তাতে কীই বা যায় আসে? মনে মনে ভাবলাম। একজন ইন্সুরেন্সের এজেন্ট আমার কীই বা উপকারে আসবে?
কিন্তু ক’দিনের মধ্যে বিষয়টা খোলসা হলো।
বলি সেটা
ডাক্তারবাবুই বললেন, ‘খোদ দিল্লির উপরমহল থেকে পুলিশের কাছে চাপ এসেছে, শুনেছ?’
‘সে কি? দিল্লি--ওপরমহল--পুলিশ--কী কী সব বলছেন আপনি,স্যর? আপনার কাছে খবর এলো কী করে? খবরটা কী?’
‘মফস্বলের ডাক্তারের চেম্বার, বুঝলে ভাইটি, হলো সংবাদের আকর। তুমি চাও বা না-চাও খবর আসতেই থাকবে’।
খবরটা, যা জানা গেল, তা এইঃ
এক অতি উচ্চ আমলার ছোট্ট নাতনিটি নিরুদ্দেশ হয়েছে। বা চুরি হয়েছে। বহু তোলপাড় চলছে তা নিয়ে গত কয়েকদিন ধরে। খবরের কাগজে, টিভি চ্যানেলে চ্যানেলে হৈ চৈ কম হয়নি; এখনও হচ্ছে। আমি টিভি দেখিটেখি না বলে খবর পাইনি।
পুলিশের অনুমান, দুষ্কৃতী বা দুষ্কৃতির দল আমাদের এইদিক পানেই রয়েছে--পূর্বভারতে। তাদের ফোনের জিপিএস থেকে নাকি হদিশ করা গেছে।
‘তা ডাক্তারবাবু, এটা আপনার বা আমার চিন্তার কারণ হচ্ছে কেন? আমরা তো মেডিক্যাল লাইনের মনিষ্যি।’
‘কনসার্ন হচ্ছে এই জন্যেই যে গত সপ্তাহেই মনুদা, মানে ঐ উপকারী বন্ধু ইন্স্যুরেন্সের এজেন্ট, আমাকে এক হারানো বালিকার কথা বলছিল!’
ছ্যাঁৎ করে উঠলো আমার বুকটা!
এ’ আবার কী কাণ্ড বাপু? এই শুনলাম ঐ বাঙালি মনু শর্মা উপকারি ব্যক্তি, শিশু-অপহরণের মতো কাণ্ডের সঙ্গে তার নাম ওঠে কেন?
বলতে বলতে ডাক্তারের চেম্বারের কোণে রাখা লাল ল্যান্ডফোনটায় ক্রিং ক্রিং করে কল এসে গেল।
হাসিখুশি মানুষ ডাক্তার পট্টনায়ক ফোন তুলে হ্যালো বলে তারপর আমার দিকে ঘাড় নাড়িয়ে ইঙ্গিতবহ হাসলেন।
বুঝলাম, লাইনে কোন চেনা ব্যক্তি রয়েছেন।
হ্যাঁ, মনু সুর। পুরো নাম যার মনমোহন সুর।
***
ছুটির দিন ডাক্তাররের বৈঠকখানায় জমাটি ব্রিজ খেলার আসর বসে। মনুবাবু সে আসরের মধ্যমণি, এবং ডাক্তারের পার্টনার। তাই উনি মনকে অত পাত্তা দেন, বুঝলাম।
খেলে নাকি খুব ভালো। আমি ব্রিজ বুঝি না।
আমি সেদিন ওঁদের শহরেই আটকে গিয়েছি। বিকেল থেকে প্রবল কালবৈশাখী ঝড়ে রেললাইনে গাছ পড়ে ট্রেন বন্ধ। বাসায় ফিরতে পারব না। রাতে এখানেই কোনো একটা সস্তার হোটেলে থেকে যাব।
সন্ধ্যাবেলায় তাই ডাক্তারবাবুর চেম্বারের আশপাশেই ঘুরঘুর করছি। ভিতরের একটা ঘরে ব্রিজের আসর জমে উঠেছে। যদিও মনুবাবু আসেননি আজ, তবু ডাক্তারবাবুর সঙ্গীসাথীর অভাব হয় না, যদিও নিজে উনি খেলছেন না আজ।
চেম্বার খোলা, না?
একটা সিগারেট ধরিয়ে আমি ওঁর বাসার সামনের পথটায় একটু পায়চারি করছিলাম। এখন বৃষ্টিটা থেমে একটু ঠান্ডা হয়েছে আবহাওয়াটা।
হঠাৎ একটা মোপেডে চড়ে মনু সুরের আগমন। টিমটিম করছে সেটির হেডলাইটের আলো। বাড়ির সামনেটায় বাহন থামিয়ে আমার দিকে তাকিয়ে এক গাল হেসে বললেন, ‘বানাচ্ছে, বানাচ্ছে। রাজকোটের ওষুধ কোম্পানি লাইফ সেভিং ড্রাগ বানাচ্ছে। কেন, এই বিজ্ঞাপনটা দেখেননি কি?’
বলতে বলতে ওঁর কাঁধঝোলার মধ্যে থেকে সড়াৎ করে এক গোটানো পোস্টার আমার নাকের ডগায় খুলে ছবির শিশুটির মুখের দিকে আঙুল দিয়ে দেখালেন।
অদ্ভুত ছবি সেটা। বিজ্ঞাপনের ছবিতে তো হাসিখুশি মানুষজনেরই ছবি থাকে সাধারণত, কিন্তু এতে দেখি এক নেড়ামুণ্ডি বালিকার ছবি রয়েছে মাথায় তার লালনীল রিবনের ফেট্টি বাঁধা। পরনে হলুদ ফ্রক। মুখটা ম্রিয়মাণ।
কেমোথেরাপি বা এমন কোন চিকিৎসার কারণে রোগীর চুল ফেলে দিতে হয়। এটা তেমন।
একটু থতমত খেলাম। অবাক হলাম। এড়িয়ে যেতে চাইলাম। কী দরকার বাপু আমার এই সব উটকো ঝঞ্ঝাটের মধ্যে জড়িয়ে পড়বার?
লোকটাকে এড়িয়ে বাড়ির ভিতরে ঢুকে যেতে গেলাম।
আমার হাত পাকড়ে বলে উঠলেন, “‘স্বস্মৈ স্বল্পং সমাজায় সর্বস্যং’--অস্যার্থে, ‘নিজের জন্যে সামান্য, সমাজের জন্যে সর্বস্ব!’ বুঝলেন কিছু, খোকাবাবু? ডাক্তারবাবু যে বলেন হৃষীকেশ আমাদের খাঁটি দিলের মানুষ?”
একটু গ্যাস খেলাম।
বললাম, আমায় কী করতে হবে?
‘এই ত। পথে এসো বাপধন। তোমার কাজ তিনি লিখে রেকে গেছেন গ। তুমি খালি করে যাও।’
এই মনু সুর লোকটা কি পাগল না চালিয়াত--কিছু বুঝি না বাপু।
নিজে থেকেই সে বলে চলে, ‘মুরুগান মঠে মহাসাধক অর্জুনদাস মৃত্যুঞ্জয় স্বামী থাকেন--বলছিলাম না সেদিন ট্রেনে।’
‘হ্যাঁ। তাঁর এখানে কী রোল? তিনি কি মৃত্যুকে জয় করেছেন, বা করিয়ে দিতে পারেন? ওঁর সাথে দেখা করে লাভ হবে কিছু?’ আমার গলার প্রচ্ছন্ন ব্যঙ্গ সম্ভবত ওঁর কান এড়ায়নি।
গলার সুর বদলে একটু গম্ভীর স্বরে বললেন, ‘একবার যদি ওঁর দর্শন পেয়ে যেতে ভাইটি, এ’কথা তুমি আর বলতে পারতে না কো! মাথায় ওঁর করস্পর্শ পেলে বেঁচে যেত মল্লিকা। ’
‘মল্লিকা কে?’
‘ওমা, দিল্লির মল্লিকা রোহতগীর নাম শোননি? টিভি চ্যানেলের দৌলতে সে যে বিখ্যাত আজ!’
ঢং ঢং করে বাড়ির ভিতর থেকে পুরনো দিনের পেন্ডুলাম ঘড়িতে রাত আটটা বেজে গেল। আমার বুকের ভিতরটা দুরু দুরু করছে। কেন জানি “না। মনে হচ্ছে এই নিরুদ্দিষ্ট বালিকার প্রসঙ্গটা কোনো অশুভ ঘটনাবলী বয়ে আনবে।
|| ২ ||
আমার কর্মস্থল মহকুমা-শহরটি ছেড়ে এই জঙ্গলের মধ্যে রাত কাটানোর কথা ছিল না। কাটাতে হলো অতীন-রেহানার পাল্লায় পড়ে।
বলছি সে গল্প।
অতীন ও রেহানা আমার ছোটবেলার বন্ধু-কাম-কলেজের সহপাঠী-কাম প্রতিবেশী। হঠাৎ কাঁধে ইয়া বড় বড় দুই রুকস্যাক বেঁধে কাল রাতে এসে হাজির আমার এখানকার বাসায়। সঙ্গে একটা ম্যান্ডোলিনের মতো তারবাদ্যও রয়েছে। লোকগান নিয়ে গবেষণা ওদের, আজ এ’-গ্রাম কাল ও’-শহর ঘুরে বেড়ায় ওরা।
বললে চল্ হুতোমপুরে যাবো। সেখানে তারক মিস্ত্রী ও তার গুরু ফিদ্দাহ্ হোসেন আছেন। তাঁদের ভাঁড়ারে অসাধারণ সব প্রায়-লুপ্ত গানের ভাণ্ডার আছে, খবর পেইচি।
বলে সেই দোতার বাজিয়ে ধরলে গানঃ
চেতে লাইগিৎ মাপাঃ কানা কঁইয়ডাক,
ধাঁঅ ধাঁঅ কান্দাহারিরে
চেতে লাইগিৎ গপচ কানা বাদোলিকো,
ধাঁঅ ধাঁঅ কান্দাহারিরে||
‘ধাও ধাও কান্দাহার’—বলছে কেন রে? শুধাই।
কান্দাহারে যেতে বলছে নাকি? সেই কাবুল-কান্দাহার?
‘হ্যাঁ, প্রাচীন খেরোয়াল রাজ্যের প্রতিনিধি সে-সব দেশেও গিয়েছিল বলে সূচনা পাওয়া যায় তাদের গানে।’ রেহানা বললে।
আমাকেও তাদের সঙ্গে সেই আদিবাসী গেরামে যেতে হবে? আপিস থেকে ছুটি পাবো না বলে আমি একটু গাঁইগুঁই করাতে কঠোর ধমকানি খেলাম বাল্যবন্ধুদের কাছে।
অতএব? অতএব সাথী হতে হয়েছে তাদের। আমি আবার চাকুরিসূত্রে এখন এই অঞ্চলের অধিবাসী কিনা, তাই ন্যাচরেলি তাদের লোকাল গার্জেন হয়ে পড়েছি।
***
আদিবাসী অধ্যুসিত কুসুমতলা গ্রামটা ডুংরি নদীর তীরে। দূরে পাহাড়ের শ্রেণী দেখা যায়। নদীতে জল বেশি নেই, পায়ের পাতা ভেজে মাত্র।
রুটের বাসটা যখন বড় রাস্তার বাঁকে নামিয়ে দিয়ে চলে গেল আমাদের, মোবাইলের ঘড়িতে বিকেল চারটে বাজে। বেশ রোদ রয়েছে। জ্যৈষ্ঠ মাসের সবে শুরু।
আমরা হাঁটতে লাগলাম সেই আদিবাসী গ্রামটার দিকে।
‘হৃষী, তুই ল্যাজারাস সিন্ড্রোমের নাম শুনেছিস কি, খুব তো ডাক্তারি করে বেড়াস?’ রেহানা।
রেহানা বায়োসায়েন্সে পোষ্টগ্র্যাড করতে করতে ছেড়ে দিয়ে চলে এসেছে।
চুপ করে রইলাম। জানি না। কী-ই বা বলব?
‘মেডিক্যাল সায়েন্সের সব রকম প্রচেষ্টার শেষে, কোনো রোগীকে যখন মৃত ঘোষণা করে দেওয়া হয়েছে, তারপরেও সে কোন আশ্চর্য দৈব উপায়ে বেঁচে ফিরে আসে। আদ্যিকাল থেকে এমনভাবে বাঁচার নজির বেশ কিছু পাওয়া গেছে--সেই বাইবেলের কাল হয়ে আজ আধুনিক বিজ্ঞানেও। ইন ফ্যাক্ট, সেই থেকেই এই নামটা এসেছে।’ হাঁটতে হাঁটতে রেহানা বলল।
‘লাইফ সেভিং ড্রাগ?’ শুধোই।
‘ড্রাগ নয়। কোনো ঔষধ দিয়ে মৃতকে পুনরুজ্জীবিত করা যায় না। কীভাবে যায় সেটাই তো রহস্য, সেটাই গবেষণার বিষয়।’ বললে সে মুডি মেয়ে।
‘ইজরায়েল দেশে মৃতসাগরের পশ্চিমতীরে রয়েছে আল আজারিয়া শহর। বাইবেলে লেখা আছে ঈশাপ্রভু এখানেই সন্ত্ ল্যাজারাসের মড়াকে পুনরুজ্জীবিত করে তুলেছিলেন।’ রেহানা বলে চলে।
‘প্রয়াণের চারদিন পরে’। অতীনের সংযোজন, পিঠে ভারী রুকস্যাক নিয়ে নদীর পাড় দিয়ে হাঁটতে হাঁটতে চলেছি আমরা তিনজন।
‘তার সঙ্গে তোদের আজ এখান আসবার সংযোগ কি?’ শুধালাম।
গান গেয়ে উঠলো অতীন। গলা মেলালো রেহানা।
বাহাঞ্ আতাংকেৎ আঁজলে কাতে
মনে থিরলায়েন মঞ্জসতে
কুশি রাস্কৌতে মনে পেরেচ্ এম
সানাম দুখ ভাবনাঞ্ হিড়িঞ এনা….
অঞ্জলি ভরা পুষ্পস্তবক তুলে নাও হাতে সখা হে
স্থির সুন্দর মনে হে।
আনন্দধারা বহাও মনেতে
দুঃখরে কর দূর হে||
কী সুন্দর কথা, না?
তবে?
‘তার মানে হলো এই যে ঐ আল আজারিয়া শহরে ‘গানের রাজা’ ফিদ্দাহ্ হোসেন সাহেব অনেকদিন ছিলেন। এক ইটারি চালাতেন। ওঁর কাছে আছে গুপ্তবিদ্যা। ল্যাজারেস সিন্ড্রোম!’ রেহানা ফিস্ ফিস্ করে বলে।
‘গানে। গানে গানে।’ চুপি চুপি বলে উঠল অতীন।
|| ৩ ||
এত ছ্যাছ্যাক্কার কোনোদিনও সইতে হয়নি।
হুট করে শহর থেকে তিনমূর্তি জীনস পরা জোয়ানমদ্দ ছেলেমেয়ে এসে তাদের গান শুনতে চাইছে শুনে এই গ্রামের লোকজন বেমালুম মুখ ঘুরিয়ে নিল। তাছাড়া তারক মিস্ত্রী আজকাল আর এখানে থাকে না, ছুতোরের কাজ পেয়ে ভুবনেশ্বর চলে গেছে আজ অনেক দিন হলো, জানা গেল।
আর গানের রাজা ফিদ্দাহ্ হোসেন সাহেব?
অদ্ভুত কারণে মুখে কুলুপ সকল গ্রামবাসীর।
অতএব?
অতএব আজ রাত্তিরটা তো এখানেই কোথাও থেকে যেতে হয়, কারণ ফেরার বাস সেই কাল সকাল দশটা নাগাদ আসবে।
ভাগ্যিস সঙ্গে এক মহিলা আছে, নৈলে জোয়ান মদ্দ ব্যাটাছেলে দেখলে গ্রামবাসী বোধহয় ডাকাতদল বলে পিটিয়ে দিত আমাদের।
***
নদীর ধারে এক ভাঙাচোরা চায়ের ঝুপড়িতে রাত্রিবাস করাই সাব্যস্ত হলো। নৈলে খোলা আকাশের নিচে পড়ে থাকতে হতো, যদিও অতীনরা বলল তেমন অভিজ্ঞতাও ওদের কম নেই। নৈশাহার করা হলো ওদের সঙ্গে আনা চিঁড়ে ভাজা আর বিস্কুট দিয়ে।
একটা দোচালার মধ্যে দু’পাশে দুটো লড়বড়ে কাঠের বেঞ্চিতে ওদের শোবার ঠাঁই হয়েছে, মাঝখানের উঁচু খাবার টেবিলটায় আমি, যদিও তার দৈর্ঘ্য আধ মানুষের বেশি নয়। মশার উপদ্রব বেশি নেই এই নদীতীরে কিন্তু নানারকম পোকামাকড় জ্বালিয়েই চলেছে।
এইভাবে মানুষ ঘুমাতে পারে, বল?
ওরা সব ‘ক্ষেত্র-সমীক্ষক’ মানুষ, ওদের এ’সব অভ্যেস আছে। আমার নেই।
***
এর মধ্যেও পথশ্রমে ক্লান্ত শরীরে ঘুম নেমে এসেছিল স্বাভাবিক নিয়মে। ভেঙে গেল হঠাৎ কেন জানি না।
কান খাড়া করে শুয়ে আছি কারণ কোত্থেকে এক গানের সুর ভেসে আসছে।
হ্যাঁ, ঠিক। শুনতে ভুল হয়নি আমার। একটা গানের সুর। কোনো মানুষের গলা। পুরুষমানুষ। দূরে ঐ পাহাড়ের কোল থেকে ভেসে আসছে। অপূর্ব সুরেলা গলা। ক্রমে ক্রমে সারা আকাশ বাতাস নদীতীর মথিত করে তুলতে লাগল সে সুর। এতো ভরাট তেজী গলা যে এই এত দূর থেকেও মনপ্রাণ আলোড়িত করে তুলছে সে গান।
আমি তো গানের লোকই নই। গানের লোক যারা এসেছে সেই অতীন-রেহানা? তারা কী করছে? তাকিয়ে দেখি তারা দুই জন দুই পাশের দুটো বেঞ্চির উপরে শুয়ে দিব্য নাক ডাকতেছে। একবার ভাবলুম ডাকি। কী সব গান নাকি শুনতে এসেছে তো তারা শুনুক এই দৈব গান?
তা না, ঘুমিয়েই কাতর।
ব্যাপক চন্দ্রালোকে ভেসে যাচ্ছে চারিদিক--এই নদী, বালিয়াড়ি, ঐ দূরের পর্বতমালা।
কেমন একটা ঘোর-লাগা অবস্থায় পড়ে ছিলাম। হঠাৎ সেটা ভেঙে গেল একটা কচি মেয়ের কণ্ঠস্বরে,
‘দাদি, ওরা কেন এসেছে? ওদের চলে যেতে বলো না!।’
মাথার দিকে তাকিয়ে দেখি কখন একটা ফ্রক পরা রোগা বালিকা এসে দাঁড়িয়েছে ঝুপড়ির সামনেটায়, সাদা থান পরা এক বৃদ্ধার হাত ধরে। ঝকঝকে চাঁদের আলোয় দেখতে অসুবিধে নেই।
‘কে? কে?’
চমকে উঠে বসলাম। ক্যাঁচকোঁচ করে উঠল পলকা টেবিলটা।
ক্যাঁক্ ক্যাঁক্ ক্যাঁক্ ক্যাঁক্ করে ডাকতে ডাকতে একটা বড় কী পাখি নদী পেরিয়ে ডানা ঝাপটাতে ঝাপটাতে উড়ে গেল জঙ্গলের দিক পানে।
‘তোমার সঙ্গে যদি দেখা হয় দাদান-কে এটা দিও। বলো, মলি দিয়েছে। ’
সটান ঝুপড়িটার মধ্যে ঢুকে এসে আমার টেবিলের ওপরে একটা কাঠের পুতুল ঠক্ করে বসিয়ে দিয়ে ফের হেঁটে হেঁটে তার বুড়ি দিদিমার কাছে ফিরে গেল সেই খুকি।
বিঘৎ খানেক লম্বা পুতুলটা। একটাই কাষ্ঠখণ্ড থেকে বানানো। বেশ লাল-সবুজ রংচঙে--জ্যোৎস্নায় স্পষ্ট দেখলুম যা।
আমি উঠে বসেছি ততক্ষণে।
কিন্তু কী বলব? কাকে বলব? অতীনরা এখনও ঘুমোচ্ছে কেন? কথার আওয়াজে ঘুম কেন ভেঙে যাচ্ছে না ওদের?
***
পরের দিন বাসে ফিরতে ফিরতে বহুবার বলে বলেও ওদের আমি মানাতে পারিনি যে কাল রাতে ওটা আমার স্বপ্ন ছিল না, সত্যিই আমি গান শুনেছিলাম, সত্যিই সেই খুকি একটা পুতুল দিয়ে গিয়েছিল আমাকে।
কিন্তু পুতুলটা গেল কৈ?
পুতুলটা খুঁজে পেলে তো ওদের আর অস্বীকার করবার জায়গা থাকত না, কিন্তু সেটা পাওয়া যায়নি।
সে তো কোনো বেড়াল-কুকুর মুখে করে তুলেও নিয়ে যেতে পারে, বল? আমার একটা ছোট হাতব্যাগই বলে কোথায় রেখেছিলাম--এই ফাঁকে সেটাও আর খুঁজে পাচ্ছি না। সেটায় আমার আধার কার্ড থেকে আরও অনেক দরকারি জিনিস আছে। হারিয়ে গেলে সাড়ে সব্বোনাশ হয়ে যাবে।
|| ৪ ||
এর দু’দিনের মধ্যে আবার আমাকে ট্রেন ধরে হাকিমপুর যেতে হয়েছিল, যেমন এককালে রোজ যেতাম।
সেই ট্রেনে জানলার ধারের সীটে মল্লিকবুড়ো বসে আছেন আপন মনে। আপন মনে বসে বসে গান ভাঁজছেন জানলার গরাদে তাল ঠুকে ঠুকে। ঐ দেখ, ঐ আবার জহরকোটের পকেট থেকে বিড়ি বের করে ধরালেন। ওঁর পুরু চশমার কাঁচ ছেয়ে গেল ধোঁয়ায়।
একতারা বাজাতে বাজাতে এক বৃদ্ধা ভিখারী এ’দিকে আসছে। সঙ্গে তার বাটি হাতে বালিকা এক। কাছে এলে চোখ পড়ে গেল সরাসরি ওদের উপরে। চমকে তাকিয়ে দেখি এ তো সেই পরশু রাত্রে নদীর পাড়ে দেখা বালিকা ও সাদা থান পরা তার দাদী। আমার দিকে দেখছে মেয়েটি। না, আমার ভুল হয়নি। চোখ কচলে ভালো করে দেখলাম তাদের। মেয়েটাও দেখেছে আমাকে।
চলে গেল আমার পাশ দিয়ে গান গাইতে গাইতে। অদ্ভুত এক অবিশ্বাসী ঘোরের মধ্যে বসে আছি। আমি কি জেগে আছি না স্বপ্ন দেখছি? না, জেগে জেগে স্বপ্ন দেখছি? প্রবল গরমে ঘামতে লাগলাম।
হঠাৎ সেই গানটা ভেসে এলো, অতি হালকা যদিও।
সেই গানটা! সেই পরশু রাতে নদীতীরে পাহাড় ডিঙিয়ে যে পুরুষ কণ্ঠ মাতিয়ে দিয়ে গিয়েছিল। কোত্থেকে ভেসে আসছে এখন এই গানটা, এই ট্রেনের কামরার মধ্যে? আজকে যদিও ভিড়ভাট্টাটা যথেষ্ট কম।
এবার মল্লিকবাবুর দিকটায় একটু ঘেঁসে আসতে স্পষ্ট শুনতে পেলাম সে গান উনিই গাইছেন। সে গানের বাণী জানি না, সুরও প্রায় অচেনা। কিন্তু অদ্ভুত কী এক মাদকতা সে গানে! সারা শরীরে রোমাঞ্চ হলো আমার।
কী এক ঘোরের মধ্যে চলে গেলাম, আর কিছু মনে নেই।
|| ৫ ||
আমাকে কি কোনো রোগে ধরল?
বন্ধু-কাম-অভিভাবক ডাক্তার পট্টনায়কের পরামর্শে নিউরোলজিস্ট দেখাবো, এমন ঠিক হলো। এপয়েন্টমেন্ট চেয়ে মেসেজ পাঠালাম নামী ডাক্তারের কাছে, যা নাকি মাসখানেকের আগে পাওয়া যায় না।
'বাবা, হৃষীকেশ, তুমি এর মধ্যে আমার সঙ্গে চলো একবার,’ মনু সুর আমার হাত পাকড়ে সনির্বন্ধ অনুরোধ করেন (সাধে কি আর ডাক্তারবাবু এঁকে উপকারী মানুষ বলে উল্লেখ করে থাকেন?) ‘--তোমার ঐ সব হ্যালুসিনেশন দেখা আর গান শুনতে পাওয়ার ব্যায়রাম এক্কেবারে ভালো হয়ে যাবে গো ভাইটি। এইগুলি ডাক্তারের কাম না।’
‘তাহলে কি আমাকে মোক্তারের কাছে নিয়ে যাবেন, মনুদা?’ শুধাই।
ঠাট্টাটা গায়ে না মেখে উনি বললেন, ‘দোলমা পাহাড় ছাড়িয়ে ওঁর আশ্রম ছিল একটা। মঠ!’
‘আপনি কি সেই অর্জুনবাবার কথা বলছেন?’
‘উনি চলে গিয়েছিলেন সুদূর পশ্চিমে, মৃতসাগরের তীরে।’
মৃতসাগর? মানে ‘ডেড সী’? ইজরায়েলে?
দু’দিনের মধ্যে দ্বিতীয়বার নামটা শুনলাম। সেখানেই বেথানী গ্রামে প্রভু ঈশাদেব মৃতের দেহে প্রাণ সঞ্চার করেছিলেন। গুগল করে দেখলাম বাইবেলের কালের বেথানী আর আজকের আল আজারিয়া একই স্থান। সেখানে গিয়েই কি কুসুমতলা গ্রামের ফিদ্দাহ্ হোসেন রোটি-গোস্তের দোকান দিয়েছিলেন একটা ?
কে জানে বাপু? ঐ অতীন-রেহেনা এসেই আমার মাথাটা ঘুলিয়ে দিয়ে গেল। নৈলে বেশ তো ছিলাম।
|| ৬ ||
কুসুমতলা গ্রামে যে আমাকে ফের আসতে হবে, সেটা ভাবিনি। এবার একা একা।
কারণটা বলি।
পরশুদিন হঠাৎ মোবাইলে একটা কল পেলাম, অজানা নম্বর থেকে। হিন্দিতে কথা বলছে। জানা গেল, সেটা সদর পুলিশ স্টেশনের। এই শহরেরই।
‘আপনার নাম হৃষীকেশ বিশ্বাস? রিভাইভ মেডিসিন কোম্পানির এমার?’
‘জী হ্যাঁ।’
‘কয়েকদিন আগে আপনি দোলমা পাহাড়ের কোলে ডুংরি নদীতীরে আদিবাসীদের কুসুমতলা গ্রামে গিয়ে রাত কাটিয়েছিলেন?’
‘জী। গিয়েছিলাম’ [থানা থেকে ফোন পেয়ে ঘাবড়ে যে যথেষ্ট গেছি সেটা গলার স্বরে গোপন করার ব্যর্থ চেষ্টা।]
‘কেন?’
আমি চুপ। বন্ধুদের সঙ্গে হারানো সঙ্গীতের সন্ধানে গিয়েছিলাম বললে বিশ্বাসযোগ্য হবে আমার উত্তরটা? ভাবছি।
‘কী? চুপ কেন? বলুন, কেন সেখানে গিয়েছিলেন আর কার সঙ্গে রাত কাটিয়েছিলেন, কার বাড়িতে?’
আমতা আমতা করি।
‘মল্লিকা রোহতগীর সঙ্গে আপনার দেখা হয়েছিল?’
‘মল্লিকা? সে কে?’
‘প্রাক্তন হোম সেক্রেটারির অপহৃতা নাতনির নাম টিভির দৌলতে সারা দেশ জানে, আর আপনি জানেন না? ন্যাকা সাজছেন? ওষুধ পড়লে ঠিকই বেরোবে কথা।……আপনার সামানের মধ্যে থেকে মল্লিকার প্রিয় দুটো কাঠের পুতুলের একটা আমাদের হস্তগোচর হয়েছে।’ থানেদারের বক্তব্য।
‘পেয়েছেন? পেয়েছেন সে পুতুল? একটা মেয়ে রাতের আলো-আঁধারিতে এসে দিয়ে গিয়েছিল আমাকে সে পুতুলটা; সেটা দেখাতে পারছিলাম না বলে অতীন-রেহেনা……’
‘আপনি কাল সকাল দশটার মধ্যে পুলিশ স্টেশনে এসে দেখা করবেন। দিস্ ইজ আ স্ট্রিক্ট অফিসিয়াল অর্ডার!’
***
কোম্পানিকে খবরটা জানাতে ভয় পেলাম। চাকরিটা খেয়ে নেবে না তো আবার জানতে পারলে? আমাদের এসোশিয়েশনের সেক্রেটারি পোদ্দারজীও ঠিক শোধের-বোধের লোক নন কিনা; তাঁকেও জানানো অনুচিত হবে। অতএব আমার ভরোসার ভরোসা অগতির গতি পট্টনায়েক ডাক্তারকেই গিয়ে ধরলাম। সব খুলে বললাম তাঁর কাছে।
চিন্তার ছায়া পড়লো ওঁর মুখে।
অনেকক্ষণ চিন্তা করে বললেন, ‘এ তো আমার ডোমেইন নয় বাপু হে। মিশ্রজী উকিলকে ধরতে হবে। রোসো।’
ফোন লাগালেন।
অতঃপর তেমন তেমন পরামর্শ মোতাবেক পুলিশ স্টেশনে যাওয়াই সব্যস্ত হলো। গেলাম। থানেদার সাহেব নেহাতই ভদ্রলোক, অমায়িক ব্যবহার। এতটা আশাই করা যায় না কোনো ওসির কাছ থেকে।
প্রথম প্রশ্নটা কিন্তু আমিই করেছিলাম।
‘সেই পুতুলটা পেয়েছেন আপনারা? মলির দেওয়া কাঠের পুতুলটা? কৈ, দিন তো দিন তো দেখি সেটা। সেটা পাওয়া যাচ্ছিল না বলে ওরা……’
‘আরে বিশ্বাসজী, রসুন, রসুন। এইমাত্র এসিয়েছেন, বসুন, চায়ে পী লিজিয়ে। অনেক কথা আছে আমার আপনার সঙ্গে।’ থানেদারের নিবেদন।
হলো, ‘অনেক কথাবার্তা’।
সেই মোতাবেক আজ এখানে এসেছি এই কুসুমতলা গাঁয়ে। যদিও আজ আর বাসে আসতে হয়নি, পুলিশের জিপ বড় রাস্তার মোড়ে ছেড়ে দিয়ে গেছে আমাকে। অনেক আগে আগেই এসেছি এবার। এখন দুপুর দুটো বাজে।
ফিদ্দাহ্ হোসেনের বিষয়ে যদিও গ্রামের কেউই কোনো খবর দিতে পারলো না। বা, দিলো না। ওঁর নামটা উঠলেই সরল আদিবাসী মানুষগুলো আশ্চর্য রকম নিশ্চুপ হয়ে যায়।
রোদ্দুর কমলে সেই চায়ের দোকানটার লড়বড়ে বেঞ্চিতে এসে বসেছি, যেটায় রেহানা রাতে শুয়েছিল দিন চার-পাঁচ আগে।
দোকানটা এখন খোলা রয়েছে। একটা চা ও লেড়ো বিস্কুট খেতে খেতে ভাবছি, কোত্থেকে কী উটকো ঝঞ্ঝাটের মধ্যে পড়ে গেলুম বলো তো?
এরই মধ্যে কখন এক বৃদ্ধ এসে বসেছে আমার পাশে বেঞ্চিতে। বেশ লম্বা একহারা চেহারা; এখানকার আদিবাসী নন বলেই মনে হলো। পরনে সাদা আচকান। হাতে লাঠি।
তাকিয়ে দেখি, আমার দিকে চেয়ে মিটিমিটি হাসছে।
কেন? খুব রাগ হলো।
আমি মরছি নিজের জ্বালায়।
শেষে কাষ্ঠ হেসে বিড়িতে একটা টান দিয়ে বললে সে বুড়ো,
‘অর্জুন স্বামী গাইলে মড়া জেগে ওঠে, সেটা জানো কি?’
‘অর্জুন স্বামী কে? সেই কি মুরগান মঠের….’
‘অয় অয় হৈল আর কি গিয়া।’ হেঁ হেঁ হেঁ হেঁ।
‘মানে? অর্জুন স্বামীকে দিয়ে আমি কী করব? আমি তো গানের জাদুকর ফিদ্দাহ্ হোসেন সাহেবের খোঁজে সেবার এসেছিলাম….’
‘অয় অয় হৈল আর কি গিয়া।’ আবার এক কথা বললে সে থুড়থুড়ে বুড়ো।
‘মানে কি অর্জুনস্বামীও গাইতে পারেন ফিদ্দাহ্ হোসেনের মতো? মনু সুর যেন এমন একটা আভাস দিয়েছিল একবার।’ বললাম।
বুড়ো নিশ্চুপ হয়ে বিড়ি ফুঁকতে থাকে।
‘অর্জুন বলো বা ফিদ্দাহ্--দুইই ঝকঝকে দুইই রূপোর মতো শানদার, দু’জনেই জয়ী! কী, ঠিক বলছি কিনা?’
এ’সব জেনে আমি কী করব? কী সব হেঁয়ালি করে কথা বলে অজানা বুড়ো, কিছুই মানে বুঝি না।
‘একটা কচি বাচ্চা, দুধের শিশু প্রায়। মরতে বসেছে সে। তাকে বাঁচানো কি মানুষের মতো কর্তব্য করা নয়?’ বিড়ি ফুঁকতে ফুঁকতে বললে সে বুড়ো।
সজাগ হয়ে উঠে নড়ে চড়ে বসলাম আমি। এই উপলক্ষ্যেই তো আমার আজ আবার আসা এই গ্রামে; এই হারানোর বাচ্চার সন্ধানে।
এক দৃষ্টে তাকিয়ে আছে সে বুড়ো আমার দিকে। চায়ের দোকানদারটিও যোগ দিয়েছে। মিটিমিটি হাসছেও সে।
‘এবার আমি দোকান আগে বাড়াবো। আপনে গা তোলেন কত্তা। ঝাঁপটা ফেলতে দিন।’ বলে সে দোকানদার।
কোথায় যাবো? আমার এখানে আসবার কী গতি হবে শেষটায়? থানেদার সাহেবকে ফিরে গিয়ে কী জবাব দোব? আর, না দিতে পারলে কি আর ওঁর ব্যবহার ততটাই মোলায়েম থাকবে?
ভাবতে ভাবতে দেখি কখন সেই ঢ্যাঙা বুড়ো উঠে হাঁটতে লেগেছে জঙ্গলের দিক পানে।
ফস্ করে একটা দশ টাকার নোট টেবিলের উপরে ফেলে দিয়ে সেই বুড়োর পিছে পিছে হাঁটা দিলাম আমিও।
‘কৃষ্ণ বলো বা আল্লাহ্--যতই বলো দুইই এক, একের নাম করলে আর অপরের গান করা যায় না গো, করলে কোনো লোকেই আর তোমাকে নিজের জন বলে ভাববে না, ভাববে পর। এ’ ভাববে তুমি ওর লোক, আর ও’ ভাববে তুমি এ’র দলে। ’ পথ চলতে চলতে আপন মনে বকবক করতে থাকে সে বুড়ো।
কে শুনতে চেয়েছে তার কাছে এ’সব কথা? ঐসব ধর্ম-অধর্ম আল্লাহ্-কৃষ্ণ--এ’সব জেনে আমি কী করব?
‘আপনি এক অসুস্থা বালিকার কথা বলছিলেন যেন?’ আমি কাজের কথায় আসি।
হাঁটতে হাঁটতে হঠাৎ থেমে আমার দিকে ঘাড় ঘুরিয়ে ফিক্ করে হেসে ফেলল সে বুড়ো। তার হাতে ধরা লাঠির দীর্ঘ ছায়া পড়েছে বালিয়াড়ির উপরে।
‘সেইজন্যে দেখবে ফিদ্দাহ্ হোসেনকে গ্রামের সবাই এড়িয়ে চলে, তার নাম হলেই চুপ।’
‘কেন?’
‘ঐ যে--না ঘরকা না ঘাটকা--সে যে কোথাকার কেউ জানে না। এঁর গান গাইলে যে আর ওঁর গান গাওয়া চলে না !’
বিকেল হয়ে আসছে। ঝড় আসবে নাকি? হাওয়াটা হঠাৎ পড়ে গেল।
নদীর পাড় দিয়ে দুই মানুষ চলেছে। সামনে সামনে এক লম্বাটে বুড়া , পিছনে এক যুবা যে পুলিশের ভয়ে তাদেরই হয়ে বকলমে কাজ করতে এসেছে; আদতে নিপাট এম.আর.--মেডিক্যাল রেপ্রেজেন্টেটিভ।
‘সেখানে এক নুনের কারখানায় নৌকরি করতাম, বুঝলে ভাইটি, পটাশ! তা, সে জলেই এতো নুন যে কেউ ডোবে না, ভেসে থাকে।’ বুড়ো চলতে চলতে আপন মনে বলতে থাকে।
‘কোন্ জল?’ শুধাই।
‘তালাও এর পানি। মস্ত বড় তালাও। হ্রদই বলতে পারো, এত বড়। সাগরও বলে ওখানে। মৃতসাগর!’
চমকে উঠলাম বুড়োর কথায়!
ডেড সী? যার তীরে তীরে দেশ-বিদেশ থেকে হাজারো টুরিস্ট যায়?
‘সেখানে এক ইটারিতে গানের রাজা ফিদ্দাহ্ হোসেন চাকরি করতে গিয়েছিলেন না? ’
‘সে চাকরি তো চলে গেল। বলে, গান গাওয়া চলবে না, তা হারাম! এদিকে গেছিই সেই সুদূর পশ্চিমদেশে তারের বাজনা ঔদ শিখতে। মহাভারতের কালে স্বয়ং রাণী গান্ধারী ঔদ বাজাতেন, জানো তো সেটা ?’
বুড়োর কথা শুনে এবার বন্ বন্ করে মাথাটা ঘুরতে লাগল আমার। বললাম,
‘কে? কে আপনি?’ সটান বসে পড়ে জড়িয়ে ধরলাম ওঁর পদযুগল; ‘কেন আপনি দেখা দিয়েছেন? আমাকে বাঁচান বিপদ থেকে।’
কেঁদে ফেলল সেই নিরীহ এম.আর--মান্থলি টার্গেট এচিভড না হলে যার চাকরি রাখা ভার।
‘সেই ছোট্ট মেয়েটিকে খুঁজে না পাওয়া গেলে পুলিশ আমাকে…’ ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কেঁদে উঠলাম। আর কোনো পথও যে খোলা নেই আমার, ‘তার সেই কাঠের রংচঙে পুতুল পুলিশ খুঁজে পেয়েছে আমার হারানো হাতব্যাগ থেকে, যেটা কিনা সে নিজে হাতে আমায় দিয়ে গিয়েছিল সেই রাতে।’ পকেট থেকে রুমাল বের করে চোখ মুছতে মুছতে বললাম।
‘কিন্তু সে তো অপহৃতা হয়নি,’ বুড়ো বলে চলে, ‘তার দাদীমা নিজে তাকে মিউজিক থেরাপির জন্য লুকিয়ে লুকিয়ে মুরগান মঠের উদ্দেশ্যে নিয়ে এসেছিলেন, যখন তার দেহে প্রাণ প্রায় নেইই প্রায়। ওরা ওদের পারিবারিক কোন্দলের জন্যে এ’সব বলে বেড়াচ্ছে পুলিশকে, বুঝলে?’
‘মুরগান মঠ? যেখানে মৃত্যুঞ্জয় স্বামী অর্জুনদাস থাকেন? কিন্তু সে মঠ নাকি উঠে গেছে?’ [মনু সুর তো আমাকেও ওখানে চিকিৎসার জন্যে নিয়ে যেতে চেয়েছিলেন।]
হে হে হে হে করে কাষ্ঠ হাসি হাসলেন সেই বৃদ্ধ। বললেন, ‘মঠ কি আর উঠে যায় বাপু? মঠ বিরাজ করেন নিজ ইচ্ছায়।’
এ’কথার মানেটা যদিও বুঝলাম না।
|| ৭ ||
জঙ্গলের ধারে এক ঝুপড়ির সামনে এসে উপস্থিত হয়েছি আমরা দু’জনে এতক্ষণে, মাথাটা যার সদ্য ছাওয়া হয়েছে পদ্মপাতা দিয়ে।
দরোজা নামক ডালাটা তুলে ভিতরে ঢুকে গেল বৃদ্ধ। আমি বাইরে। ভিতরে এক ঝলক তাকিয়ে যা দেখলাম--খাটিয়ার উপরে এক বালিকা শুয়ে আছে। পাশে এক বৃদ্ধা মেঝেতে বসে জলপট্টি দিচ্ছে তার কপালে।
বিকাল গড়িয়ে সন্ধ্যার দিকে। যদিও আলো এখনও দিব্য রয়েছে।
এ-ই কি সেই ‘অপহৃতা’ বালিকা, আর তার দাদীমা?
মেয়েটি কি মরণাপন্না?
হঠাৎ দূর নদীর ধার থেকে ‘অর্জুন অর্জুন’ বলে কার ডাক শোনা গেল!
আবার, ঐ শোন, ‘অর্জুন! অর্জুন!!’ বলে কে ডাকে? কাকে ডাকে?
ঝুপড়ির ভিতর থেকে ব্যস্তসমস্ত হয়ে বেরিয়ে এলেন সেই বৃদ্ধ, যিনি নাকি একদা মৃতসাগরের তীরে বসে ঔদ বীণা বাজাতেন। হ্যাঁ, হাতে তাঁর এখন ম্যান্ডোলিনের মতো দেখতে ছোট এক তারবাদ্য ধরা রয়েছে বটে, আকারে ঠিক যেন একটা আধাকাটা বড়সড় ন্যাশপাতি ফল।
আবার ঐ শোনা গেল, ‘অর্জুন! অর্জুন!!’
‘আসি। আসি গুরুদেব!’ বলতে বলতে ঝুপড়ি থেকে বেরিয়ে উদ্ভ্রান্তের মতো সেই ঢ্যাঙা বুড়ো দৌড় লাগালেন নদীর পানে; হাউ হাউ করে কাঁদতে লাগলেন, ‘নেই, নেই হুজুর, প্রাণ নেই। প্রাণ নেই! মল্লিকা চলে গেছে!’
দৌড় লাগালাম আমিও তাঁর পিছনে পিছনে। মনে চিন্তা, ঐ ছোট্ট বালিকা কি তাহলে এন্তেকাল করেছে? সে-ই কি ‘মল্লিকা’?
আকাশে মেঘ করে এসেছে। আঁধার-আঁধার লাগে। নদীর ধারের বালিয়াড়িতে পৌঁছে আবছা আলো আঁধারিতে দেখি সেখানে এক মনিষ্যি দাঁড়িয়ে আছেন। মুখের সামনে দুই হাতের চোঙা বানিয়ে ঐ আবার ডাকলেন, ‘অর্জুন! অর্জুন!!’
লোকটাকে আমি চিনি। চোখে তাঁর পুরু প্লাস পাওয়ারের চশমা, মাথায় ফেজের ধাঁচে মারোয়াড়ি টুপি। গায়ে খেঁশকুটে রঙের জওহর কোট।
ট্রেনের সেই মল্লিকবাবু!
অবাক হয়ে গেলাম। মল্লিকসাহেব এখন এখানে কেন? কী করে? কী সূত্রে? এই ঢ্যাঙাবুড়োটা তাঁকে ‘গুরুদেব’ সম্বোধন করছে কেন?
হাওয়া উঠেছে এবার। হাওয়ায় উড়ছে ওঁর ধুতির খুঁট।
অর্জুন বা সেই ঢ্যাঙাবুড়ো বা ডেডসী-বাসী ফিদ্দাহ্ হোসেনের আগমনে এখন দু’জনে কী যেন আলোচনা করছেন, এত দূর থেকে শুনতে পাচ্ছি না আমি।
অবাক হওয়ার বোধ হয় তখনও কিছুটা বাকি ছিল আমার, কারণ এবার ‘হৃষী! হৃষী! হৃষীকেশ!!’ বলে নদীর বালি ঠেঙিয়ে আমায় ডাকতে ডাকতে একটা লোক ছুটে আসছে এ’দিক পানেই।
কাছে আসতে দেখি তিনি আর কেউ নন, আমার অতি পরিচিত মনমোহন সুর--যে মনু সুরকে উপকারী মানুষ হিসেবে স্বীকৃতি দেন স্বয়ং ডাক্তার অশোক পট্টনায়েক! মুরুগান মঠ কেন্দ্রিক এঁদের এই মিউজিক-থেরাপির নিরীক্ষায় মনু সুর-ও যে মল্লিকবাবু ও অর্জুনদাসজীর সঙ্গে যুক্ত আছেন সেটা আমি আগে ধরতে পারিনি, যদিও বোঝা উচিত ছিল কারণ প্রথম আলাপেই সরল এই মানুষটি অসুস্থা বালিকা মল্লিকার চিকিৎসা-প্রসঙ্গটি তুলেছিলেন বটে সেই ট্রেনের কামরায় বসে। লাইফ-সেভিং ড্রাগের কথাও বোধহয় সেই সূত্রেই এনেছিলেন, আমি তখন ধরতে পারিনি বিষয়টা। বিরক্ত হয়েছিলাম।
‘হৃষী, তুমি এই কুসুমতলায় এসেছে শুনে দৌড়তে দৌড়তে আসছি। শুনলাম, তোমার নাকি বড্ড বিপদ?’ মনু সু্রের গলায় উৎকণ্ঠা!
তাঁকে উত্তর দেবার আগেই শুনি গান ভেসে আসছে।
কোত্থেকে?
গাইছেন স্বয়ং মল্লিকসাহেব। হাওয়ার উড়ছে ওঁর বেশবাস, মাথার টুপিও। ওঁর ভ্রূক্ষেপ নেই। দুই হাত প্রসারিত করে আকাশের দিকে তাকিয়ে উদাত্ত গলায় ধরেছেন গান। এ’গানের একটু আমি শুনেছিলাম গত সপ্তাহে মাঝ রাতে এই নদীতীরেই--অতীন-রেহেনার সঙ্গে যখন প্রথম এখানে আসি। এই গানটাই মল্লিকসাহেব ট্রেনে যেতে যেতে মৃদুস্বরে মকসো করছিলেন না পরেরদিন ?
সে গানের বর্ণনা করি তেমন ভাষা জানা নেই আমার। বস্তুত, সে সুরের বর্ণনা দুই লক্ষ অক্ষর লিখেও করা যায় না, আমি এই দু’পাতার গপ্প লিখে কী বোঝাবো?
গান ক্রমে তেজী হয়ে উঠল। অর্জুনও যোগ দিয়েছেন যে সেই গানে, সঙ্গে বাজছে ঔদ বীণা!
ক্রমে বড় আনন্দের রসানুভূতি হতে লাগল সে গান শুনে।
ঘাড় ঘুরিয়ে এবার দেখি কখন সেই বালিকা মল্লিকা এসে দাঁড়িয়েছে এই নদীর তীরে। মুখে তার হাসি। আনন্দে নাচছে সে এই গানের সুরের তালে তালে। হাতে ধরা তার এক ছোট পুতুল। রংচঙে। পড়ন্ত বেলার আলো পড়েছে তাতে--তার জেল্লা দেখা যাচ্ছে এই এত দূর থেকেও।
কে যেন বলছিল মল্লিকা নেই, চলে গেছে সে??!
আমার মনের মধ্যে রিনরিন করে উঠেছে আবাল্য শোনা চেনা গান,
‘মোর বীণা ওঠে কোন্ সুরে বাজি। কোন্ নব চঞ্চল ছন্দে!!’
অবাক হয়ে তাকিয়ে দেখি নবীন সেই বালিকাকে মাতিয়ে দিয়ে নাচিয়ে দিয়ে নদীর তীরে এক লাইনে পাশাপাশি দাঁড়িয়ে গাইছেন মল্লিকসাহেব, বীণাহস্তে অর্জুন মৃত্যুঞ্জয় স্বামী আর আমাদের উপকারী বন্ধু মনু সুর ……..