• Parabaas
    Parabaas : পরবাস : বাংলা ভাষা, সাহিত্য ও সংস্কৃতি
  • পরবাস | সংখ্যা ৮৭ | জুলাই ২০২২ | প্রবন্ধ
    Share
  • চাঁদের দেশে বাড়ির খোঁজে : জয়দীপ মুখোপাধ্যায়

    ক্রোড়পত্রঃ তরুণ মজুমদার (১৯৩১-২০২২)


    ঐ দূরের এক দেশ, যেখানে নীল জোছনারা আলো বিলায় রুপোলি রঙের পেখম মেলে। সে দেশে বুড়ি মা নিরন্তর চরকা কাটে, সে দেশে ভরা পূর্ণিমার দিনে রুটিকেও ঝলসানো লাগে। সে দেশ তো কল্পিত এক সৌন্দর্য, তাই সে দেশে বাড়ি যদি থাকে একটিই, সদ্য প্রয়াত পরিচালক শ্রী তরুণ মজুমদারের মতো ক্লাসিক্যাল যুগের শিল্পীদের বুননে, সেই বাড়ি বারোয়ারি আনন্দ পরিবেশক, সে বাড়িতে গান থাকে "চাঁদের হাসির বাঁধ" ভেঙে তোলপাড় করা হৃদয় উৎস থেকে, সে বাড়িতে আদর্শবান শিক্ষক ও বয়স্করা সম্মানিত পিতৃপ্রতিম, যাঁরা ভালোবাসার কাঙালপনায় ভরিয়ে তোলেন গৃহস্থের সাজানো সংসার, পেছনের বহু বছরের ফেলে আসা অভ্যেস, কতিপয় নীতিগত পরম্পরা আর প্রেম, হাসি, মজা, সুর। সেই বাড়ি, যার খোঁজে আজও পৃথিবী উথালপাথাল, সে বাড়ির ঠিকানার সন্ধান দিয়ে গেছেন তরুণবাবু।

    শুধু মধ্যবর্তী সিনেমা পরিচালক হিসেবে বা প্রতীকী আদর্শ-ভরা, মূল্যবোধ ও সুস্থ রুচি এবং সংস্কৃতিবোধ দিয়ে অথবা মনোরঞ্জক সুখী গৃহকোণের নাট্য ও চিত্রর প্রায়োগিক উপস্থাপনা বা এদেশী, প্রবাসী, শহর, নগর, মফস্বল বা একদম নিখাদ গ্রাম পর্যালোচনা করা তরুণ মজুমদারকে আমরা দেখে একরকমের আলপনা এঁকেছি। কিন্তু শিল্পী হিসেবে সোচ্চারিত আগুনের স্তূপের হৃদয় আমরা কি অনুসন্ধান করতে প্রয়াসী হয়েছি? অথবা মূল্যায়নের? পরিচালক গৌতম ঘোষ কদিন আগে একটি লেখায় বলেছেন, ফিল্ম সোসাইটির দর্শক ও গঠক একটা রেখা টানতে গিয়ে তরুণ মজুমদার, রাজেন তরফদার, অসিত সেন, অজয় কর, অরবিন্দ মুখোপাধ্যায়দের মতো পরিচালকদের ছবিগুলিকে অনাদর করেছেন। অথচ, আমরা যারা পরবর্তী প্রজন্ম, তারা অন্তত জানে, আমাদের জন্যে, ভবিষ্যতের জন্যে, কী রেখে গেলেন, কী দিয়ে গেলেন এইসব বাংলা ছবির ক্লাসিক্যাল যুগের শিল্পী সদস্যরা।

    পঞ্চাশের বাংলা। সদ্য স্বাধীন দেশে সবাই তখন স্বপ্ন দেখছে নতুন কিছু গড়বার। বাংলা সিনেমায় তখন স্বর্ণযুগ। দশক দুয়েক আগে আমাদের সাথে স্টুডিও পাড়ার পরিচয় ঘটেছে দেবকী বসু, প্রমথেশ বড়ুয়া, নীতিন বসু, সায়গল, ধীরাজ ভট্টাচার্য, মধু বসু, সাধনা বসু, কানন দেবী, পঙ্কজ মল্লিক, রাই চাঁদ বড়াল, দুর্গাদাস, প্রেমেন্দ্র মিত্র, রবীন মজুমদার এবং এমন অনেকের যাঁরা বাংলা সিনেমাকে একটা দিক নির্ণয় করতে সাহায্য করেছে। পঞ্চাশের দশক একটা transition-এর দশক, কলকাতার বুকে যার পুনরাবির্ভাব আবার ঘটেছিল সত্তরে। পঞ্চাশের এই দশটি বছর বাংলা সিনেমায় ক্লাসিক যুগের সূচক। স্টুডিওপাড়া গড়ে ওঠা এলাকাগুলিতে এ-ঘর ও-ঘর চলচ্চিত্রকর্মী, কলাকুশলী, শিল্পী, লেখক, গীতিকার, সুরকার, পরিচালকদের চাঁদের হাট। বিমল রায়ের "উদয়ের পথে" বেশ সাহস দিয়েছিল নব্য ধারার চলচ্চিত্রকারদের। ক্লাসিক যুগের সব শিল্পীদেরই উত্থান এই পর্যায়ক্রমিক ইতিহাসের ধারায়, ওই পঞ্চাশের মধ্যগগনে। ১৯৫৮ সালে তরুণ মজুমদার তখন বছর সাতাশের যুবক। তার কয়েক বছর আগে থেকেই তিনি সিনেমার সঙ্গে নানা প্রকারে জড়িয়ে গিয়েছিলেন।

    সময়কাল পঞ্চাশ দশকের প্রারম্ভ। 'তরুণ' তরুণ মজুমদার রসায়ন শাস্ত্রে স্নাতক হবার পর মনের তাগিদে এক আত্মীয়ের সহায়তায় স্টুডিওপাড়ায় পা রাখলেন। তখন অনেকেই রসায়ন শাস্ত্র পড়ে সিনেমা ল্যাবরেটরিতে কাজের জন্যে যোগাযোগ করতেন। পরিচালক হৃষিকেশ মুখোপাধ্যায়ও তাই করেছিলেন। তরুণবাবু চাকরি পেলেন অ্যাপ্রেন্টিস-এর। রূপশ্রী স্টুডিওতে তখন অর্ধেন্দু চট্টোপাধ্যায়ের মতো নামী পরিচালকেরা কাজ করছিলেন। কিন্তু কয়েক মাস পরে টেকনিশিয়ানদের একাংশের সাথে তরুণবাবুদের মতান্তর হয়। ফলে ওই চাকরি তিনি ছেড়ে 'অনুশীলন এজেন্সি' নামে একটা সিনেমা পাবলিসিটি অফিসে সৃজনশীল কর্মী হিসেবে যোগ দিলেন।

    বিখ্যাত পরিচালক দেবকী বসু তাঁর "পথিক" ছবিটি তৈরি করলেন ১৯৫৩ সালে। এই ছবিটির পাবলিসিটির মুখ্য ভূমিকায় ছিলেন তরুণ মজুমদার। ছবিটির পাবলিসিটিতে তাঁর বৈচিত্র্যময় সৃজনশীল ডিজাইনগুলো মুগ্ধ করেছিল সিনেমা সম্রাজ্ঞী অভিনেত্রী ও 'শ্রীমতী পিকচার্স'-এর কর্ণধার কানন দেবীকে। 'শ্রীমতী পিকচার্স’-এর ব্যানারে কানন দেবীর স্বামী হরিদাস ভট্টাচার্য তখন ব্যস্ত তাঁর 'নব বিধান' ছবিটির শুটিংয়ে। পায়ে পায়ে জড়িয়ে গেলেন তরুণবাবু ওই ইউনিটের সঙ্গে। টালিগঞ্জের স্টুডিওপাড়ার শেষ মাথায় শেষ স্টুডিও ছিল কানন দেবীর, ক্যালকাটা মুভিটোন। ওখান থেকে পায়ে-হাঁটা পথে নিউ থিয়েটার্স। আর তখন স্টুডিওপাড়ায় আজকের মতো ভিড় ছিল না, সিনেমাপ্রেমী ও কর্মীর সংখ্যা হাতে গোনা। পুরো স্টুডিওপাড়া একটা পরিবারের মতো ছিল। তরুণবাবুর উপস্থিতি সেই স্টুডিওপাড়াকে সমৃদ্ধতর করেছিল। ফলে অচিরেই নিউ থিয়েটার্স-এর বিভিন্ন জ্ঞানীগুণীজনদের সাথে সৌহার্দ্য গড়ে উঠল তরুণ মজুমদারের, এঁদের মধ্যে ছিলেন প্রবাদপ্রতিম বীরেন সরকার, জ্ঞানপ্রকাশ ঘোষ বা কমল দাশগুপ্তর মতো বিশিষ্টজনেরা। কয়েক ধাপ এগিয়ে গেলেন তরুণ মজুমদার, নিজে ছবি করবেন, এমন স্বপ্ন কি অবশেষে সফল হতে চলল?

    "অগ্রদূত" তখন এমন এক পরিচালক গোষ্ঠী যেখানে বিভূতি লাহার মতো অতি দক্ষ ক্যামেরাম্যানই শুধু জড়িয়ে ছিলেন না, শৈলেন ঘোষাল, নিতাই ভট্টাচার্য, যতীন দত্ত ও বিমল ঘোষের মতো সুদক্ষ টেকনিশিয়ানদের সঙ্গী করে একের পর এক হিট ছবি উপহার দিয়েছিলেন। সিনেমাকে যদিও বলা হয়, "director's media", তবু একসাথে সু-উচ্চ মনের ও মানের টেকনিশিয়ানদের সাথে থাকলে গোষ্ঠী - ইউনিট হিসেবে ভাল কাজ হয়, সেখানে হয়তো কোনো বিশেষ পরিচালকদের আলাদা করে স্বাতন্ত্র্য রক্ষিত হয় না, তবে একটা টিম হিসেবে গড়ে ওঠে। তরুণ মজুমদারের মতোই সমকালীন আর দুই পরিচালক - শচীন মুখোপাধ্যায় ও দিলীপ মুখোপাধ্যায় এরকমই একটি common platform-এর সন্ধানে ছিলেন, যেখানে একটি গোষ্ঠী হিসেবে তারা কাজ করতে পারবেন। "যাত্রিক"-এর জয়যাত্রা শুরু হল। ১৯৫৯-এ উত্তম-সুচিত্রার ব্লক ব্লাস্টার সুপারহিট ছবিটি তৈরি হলো "চাওয়া পাওয়া", "যাত্রিক" গোষ্ঠীর প্রথম নিবেদন।

    সিনেমা নির্মাণ ও পরিচালনা কোনো অলস-ভূমির ওপর গোলাপ চারা ফোটানো নয়, সেটা যারা ছবি পরিচালনা করেন, তারাই বোঝেন। তরুণবাবুরাও বুঝেছিলেন। "আলোর পিপাসা" বা "কাচের স্বর্গ" অবধি যাত্রিক গোষ্ঠী দৌড়লেও একটা সময় এসে তরুণ মজুমদার একক পরিচালক সত্তা হিসেবে কাজ করতে শুরু করেন।

    তরুণ মজুমদারকে আমরা যতটুকু জেনেছি বা তার যে সমস্ত অবিস্মরণীয় ছবিগুলো দেখেছি, আমরা শিল্পীর অন্তরতম জায়গায় প্রবেশ করার ক্ষেত্রে সঠিক মূল্যায়ন সে ভাবে করে উঠতে পারিনি। ঠিক যেভাবে, সিনেমা aesthetics -কে যার যার নিজের ভাবনায় জারিত করার প্রয়াসী হয়ে আমরা মুষ্টিমেয় কয়েকজন পরিচালকের কাজ ছাড়া অন্যান্য অনেকের ক্ষেত্রে একটি কল্পিত সীমারেখা অঙ্কন করে দিই। যেভাবে আমরা সত্যজিৎ রায়, ঋত্বিক ঘটক বা মৃণাল সেনের প্রতিটি cinematic identity খুঁজে বেড়াই, সেভাবে তপন সিংহ, অসিত সেন, হৃষিকেশ মুখোপাধ্যায়, রাজেন তরফদার, পার্থপ্রতিম চৌধুরী এবং তরুণ মজুমদারের মতো পরিচালকদের "মধ্য ধারার" চলচ্চিত্রকার হিসেব একটু ব্রাত্য করে রাখি। অথচ, তরুণবাবুর মৃত্যুতে সব বাঙালিরা যে এতটাই হৃদয়-হারা হয়েছেন, সেটা কোন জায়গা থেকে? সেটা কি শ্রীমান পৃথ্বীরাজ, বালিকা বধূ, দাদার কীর্তি বা ভালোবাসা ভালোবাসা-র নিখাদ নিটোল বাঙালিদের কিশোর প্রেমের কাহিনী ও নাট্য বিন্যাসের জায়গা থেকে? না কি ঠগিনী বা কুহেলী-র রহস্যময়তার আবরণ থেকে? কিম্বা পলাতক, নিমন্ত্রণ, ফুলেশ্বরী-র গ্রামীণ পটচিত্রের অলঙ্করণ থেকে? অথবা সংসার সীমান্তে, গণদেবতা-র ত্রিমাত্রিক কাহিনী বিন্যাসের, সাবঅলটার্ন ও marginalised সমাজভুক্ত মানুষের লড়াইয়ের অসাধারণ চিত্রায়ণের জন্য!

    দাউদাউ করে জ্বলছে গ্রামীণ সমাজ, প্রথম বিশ্বযুদ্ধোত্তর তন্তুবায় বা কামার শ্রেণীভুক্ত দরিদ্র মানুষের অস্তিত্বের লড়াই, মহাজনী প্রথার বিরুদ্ধে সোচ্চারিত গ্রাম ভূমি, এসব সমস্যার contemporaneity এখনও বর্তমান, এখনও গ্রামজীবনে সমকালীন। তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায় যে গ্রামীণ কথ্য ভাষায় তার জ্ঞানপীঠ পুরস্কারপ্রাপ্ত উপন্যাসটি লিখেছিলেন, ঠিক ততটাই অনমনীয় ভাবে তরুণবাবু তার ছবিটি এত বড় span নিয়ে করার সাহস দেখিয়েছেন। তার মনের মাঝে ছাইচাপা আগুনই যেন অগ্নুৎপাতের মতো 'গণদেবতা' ছবিটিতে প্রতিটি নাটকীয় ভাঁজে ছড়িয়ে পড়েছে।

    বাঙালি দর্শক বেড়ে উঠেছে narratives-এর মধ্যে দিয়ে। Neo-realist ফিল্মের ধারাকে আঁকড়ে ধরে। সেখান থেকে, তরুণবাবুর ছবি ভীষণ communicative, মানুষ দেখে তৃপ্ত হয়, সুচেতনা, সুসংস্কৃতি সম্পর্কে একটা গভীর জীবনবোধের বার্তা দেয়। তরতরিয়ে গল্প বলা বড়ো শিল্পসুষমামণ্ডিত একটা কঠিন কাজ, সিনেমায় তো বটেই। যেটাতে সত্যজিৎবাবু ছিলেন একজন master craftsman. তরুণ মজুমদারের ছবি সেই ক্লাসিক্যাল অ্যাপ্রোচকে সঙ্গে করেই ব্যক্ত হয়েছে। ছবির মূল উপপাদ্যটিকে সরসভাবে বজায় রেখেও বিভিন্ন জীবনধারার ব্যাখ্যা দিয়েছেন। নাটকীয় মুহূর্ত সৃষ্টি করেছেন dramatic psychosis-কে maintain করে, এমন এক স্বকীয় মেজাজে তার ছবিগুলো বিধৃত হয়েছে, যা একান্তই তরুণীয়। সাহিত্যধর্মী সিনেমা করার প্রবণতা বর্তমানে নিম্নগামী। কিন্তু এইসব ক্লাসিক্যাল সিনেমাযুগের শিল্পীরা সাহিত্যকে মূল্য দিতেন ষোলো আনা। সেখানে গণদেবতার মতো বড় ক্যানভাসকেও সাবলীলভাবে, সাহসী হয়ে চিত্রায়িত করা যে কী কঠিনতম এক কাজ, তার ব্যাখ্যা দেওয়া কঠিন।

    তরুণবাবুর আর একটা বিশেষ দিক ছিল, তার ছবিতে গানের ব্যবহার। Folk থেকে ক্লাসিক্যাল, রবীন্দ্রসঙ্গীত থেকে situational গান, এই অবারিত গতায়াত ছবিগুলোতে যেন সেই চাঁদের জ্যোৎস্নার মতো আলোকিত করে রেখেছে। শ্রীমান পৃথ্বীরাজ ছবিতে "সখি ভাবনা কাহারে বলে" গানটির প্রয়োগকালে নববধূর একাকীত্বের সঙ্গী হয় প্রিয় সেই জোছনালোক। তার প্রায় সব ছবিতেই গানের প্রয়োগ এক নতুন মাত্রা যোগ করে, ছবির অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ হিসেবে ধরা দেয়।

    তরুণ মজুমদারের মতো চলচ্চিত্রকারেরা শুধু দায়বদ্ধতার তাগিদে সিনেমা করেননি। ছবিগুলোর মধ্যে নানাভাবে উঠে এসেছে নীতি ও নীতিহীনতা, আদর্শ ও আদর্শহীনতা, মূল্যবোধ ও মূল্যবোধহীনতার চিরকালীন দ্বৈরথ। বার বার নব প্রজন্মের কাছে চরিত্রগুলো ধরা দিয়েছে সঠিক পথের দিশা দেখাতে। সেদিক দিয়ে তরুণ মজুমদার একজন সৃজনশীল প্রতিষ্ঠান।

    তাঁর সব রচনাসম্ভার থেকে যাক সেই স্বপ্নের চাঁদের বাড়ির অন্দরমহলে। যখন আমরা নিজেদের শিকড়ের সন্ধানে, অস্তিত্বের প্রয়োজনে পৌঁছব সেই সুনীল বাড়ির দোর-দালানে, আবার হয়তো আমরা সে ছবিগুলো দেখে নিজেদের জারিত করার ভাগ্য পাবো ফিরে। মনের অন্দরেই সুচারুভাবে অনুরণিত হবে সেই "আলো" ছবিতে বৃদ্ধার পুরোনো অ্যালবাম দেখে সরলতাময় অশ্রু বিসর্জন, সুদূর পারের থেকে আগত অশ্রুধারার মতন।



    অলংকরণ (Artwork) : ছবিঃ তিমিরকান্তি ঘোষ
  • মন্তব্য জমা দিন / Make a comment
  • (?)