• Parabaas
    Parabaas : পরবাস : বাংলা ভাষা, সাহিত্য ও সংস্কৃতি
  • পরবাস | সংখ্যা ৮৭ | জুলাই ২০২২ | কবিতা
    Share
  • তিনটি কবিতা : পরমার্থ বন্দ্যোপাধ্যায়



    আমি অকৃতী অধম

    সকাল থেকেই কালবৈশাখী ক্রুদ্ধ কিশোরীর মতো আজ সব
    লন্ডভন্ড করে দিচ্ছে। সমুদ্রও দামাল কিশোরের মতো
    তার সঙ্গে পাল্লা দিয়েই ফুঁসে উঠেছে, যেন সে তার পৌরুষ
    দেখিয়ে রহস্যময়ী দুরন্ত প্রেয়সীকে মুগ্ধ করতে চায়।

    বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে দু’টিতে এখন অনেকটা শান্ত,
    রাগের পরে অনুরাগের পালা, বাতাসে তারই মাতাল গন্ধ।
    সাগর সৈকতে ভিড় বাড়ছে, বন্ধুরা মেতে উঠেছে হল্লায়।
    একবার ভিড়ের মধ্যে থেকে উঠে দাঁড়াই, তার চম্পককলি
    আঙুল ছুঁয়ে, ভিড়ের আরও অনেক গভীরে হারিয়ে যেতে যেতে
    অনুভব করি সেই বিদ্যুৎ চাহনি, যা সে যুগ যুগান্ত ধরে
    সঞ্চিত রেখেছে এই মাহেন্দ্রক্ষণের জন্য। বৃষ্টি নেমেছে;
    চরাচর জুড়ে অবিশ্রান্ত ধারাপাত, কেউ মনে মনে বলে,

    ‘আমি অকৃতী অধম বলেও তো কিছু কম করে মোরে দাওনি।’
    চরাচর জুড়ে অবিশ্রান্ত ধারাপাত, আর কেউ মনে মনে—-।


    টুকরো কবিতা

    আরেকটু থাকলেই আরও কবিতা, হাজার হাজার কবিতা, কবিতার সমুদ্রে ভেসে যাওয়া, তাই চলে যাচ্ছি। মাথা ভর্তি ধোঁওয়া না পুরোটাই ফাঁকা, জানি না। কবিতার অধরা পাঞ্চলাইন, গল্পরা হঠাৎ পথ হারিয়ে ফেলছে, ওরা কেন যে ট্রেন থেকে নেমে যাচ্ছে! আমি যাত্রা শুরু করতে পারি, গন্তব্য সবসময় তো ওদের হাতেই থাকে। এমনকি গতিপথ, এমনকি থমকে দাঁড়ানো। আমি তো জানি না যে শিয়ালদহ না রানাঘাট কোন ট্রেন ধরব, উলটোডাঙা না ব্যারাকপুরে নেমে যাব, না কি পুরোটাই যাব!

    অপসৃয়মাণ ট্রেনের অলিন্দ, স্টেশন মাস্টার, খবরের কাগজের হকার এবং জুতো পালিশওয়ালা নয়তো সকাল-বিকাল কী দেখে? ওরা কি জেনে গেছে আমার কম্পাসে অন্যরকম দিক নির্ণয়, আমার মানচিত্রে অন্য কোনও ছবি? ভিখিরির চোখেও করুণা, স্টেশনের পাগলটার চোখেও সন্দেহ, ও কেন সেদিন কুর্নিশ করে পথ ছেড়ে দিল? কেন যে? আসলে, এখানকার আবহাওয়ায় নিম্মচাপ এবং সেই অসাধারণ অজুহাতে গরল পান করছি, তারপরে যা হয়—-। গানটা ভালো, মোদ্দা কথা তো সেটাই। সামান্য এইটুকু বলতেই কত অজুহাত! ধান ভাঙতে শিবের গীত।

    তারপর অনেকগুলো শব্দ ঘরের মধ্যে ঢুকে এল, হই-হট্টগোলের একটা ঘূর্ণি উঠল, গান এবং গন্ডগোল কথাটাকে চাপা দিয়ে দিল, কিন্তু রেশ রয়ে গেল কানে, প্রাণেও কি নয়? ঠিকই শুনেছি তো? না, আর জানতে চাইনি। সম্ভাবনা তো থেকেই গেল, তাই না? আর, কেউ জানুক না জানুক, তুই তো জানিস, যে ফেরার থেকেও, ফেরার খবর অনেক বড়, অনেক বর্ণময়।


    লজ্জা করে ভারী

    লম্বা লম্বা বার্তা আমার, পাঠিয়ে দিয়ে লজ্জা করে ভারী।
    বিব্রত হই, হওয়াই উচিত। মাথায় আমার যখন তখন,
    খেয়াল পোকার অযুত কামড়। ঠিক যেন এক শাঁখের করাত,
    আসতে কাটছে, যেতেও কাটছে। বিরামবিহীন ভলক্যানো সেই,
    গরম লাভা উগরে যায় খালি; কী হবে এই অগ্ন্যুৎপাতে?
    দিনের শেষে ছাইয়ের হিসেব করতে বসি, বাড়তে থাকে গ্লানি।
    তবু উপায় করতে আমি নারি, সত্যি আমার লজ্জা করে ভারী।


    অলংকরণ (Artwork) : অনন্যা দাশ
  • মন্তব্য জমা দিন / Make a comment
  • (?)