• Parabaas
    Parabaas : পরবাস : বাংলা ভাষা, সাহিত্য ও সংস্কৃতি
  • পরবাস | সংখ্যা ৮৬ | এপ্রিল ২০২২ | গল্প
    Share
  • টিউলিপ : শুভ্রা রায়



    রাজা দীনেন্দ্রনাথ স্ট্রিটের যুক্ত গলিপথের ভিতর লেডিস হোস্টেলের লাগোয়া ফুটপাতের উপর রাধাচূড়া গাছটা বেশ চোখে পড়ার মতন। ফুল কুঁড়ি পাতা সম্বলিত শাখপ্রশাখা গুলি পাশের বিল্ডিংটিকে বুড়ো আঙ্গুল দেখিয়ে বীরদর্পে নীল আকাশের সঙ্গে সখ্যতা চালিয়ে যাচ্ছে। রাধাচূড়ার পাতার ফাঁক দিয়ে সূর্যের গলন্ত রোদ ফুটপাতটাকে দগ্ধ করছে। তির্যক রোদে অর্ণব ফুটপাতের গা ঘেঁসে গাড়িটাকে পার্ক করে। একপলকে পেট্রোলের কাঁটা দেখে অর্ণব বাধ্য হয়ে গাড়ি থেকে বেরিয়ে আসে। গতকাল মাঝ রাতে গাড়িতে এসি চালিয়ে টিউলিপের সাথে ঘন্টা তিনেক কথা বলেছে। তখনি গাড়ির পেট্রলের কাঁটা বেশ নিচের দিকে। আজ হসপিটাল থেকে বেরিয়ে গাড়ির পেট্রল না ভরেই বালিগঞ্জ থেকে নর্থ কলকাতায় চলে এসেছে টিউলিপের হোস্টেলের সামনে।

    টিউলিপের বাড়ি গড়িয়া। গড়িয়া থেকে রোজ আরজিকরে যাতায়াতের প্রবলেমটা টিউলিপের কাছে প্রকট হয়ে দাঁড়িয়েছে। তাছাড়া যখন তখন আইসিইউ-তে ডিউটি পড়ে যায় তখন হাতে সময় থাকে না ক্যাব নিয়ে চলে আসার। তাই এক বছর হলো আরজিকর-এর কাছেই একটা লেডিস হোস্টেলে থাকে টিউলিপ। অর্ণব কাজী ও টিউলিপ চৌধুরী দুজনেই একই সঙ্গে এমবিবিএস কমপ্লিট করে। পোস্টগ্রাজুয়েট এন্ট্রান্স পরীক্ষায় তিনবার বসেও অর্ণব কোন সুবিধা করতে পারেনি। একটা বেসরকারি হসপিটালে মেডিকেল অফিসারের চাকরি নেয়। টিউলিপের পিজি-র থার্ড ইয়ার চলছে।

    ছ-বছর সম্পর্কের পর অর্ণবের মনে অদ্ভুত ভাবনা এসেছে যে টিউলিপ একধাপ এগিয়ে গেছে বলেই বিয়েতে সম্মতি দিচ্ছে না।

    কাল রাতে অর্ণব অনেকটা সময় ধরে বকবক করে টিউলিপের ব্রেনটার ভর্তা বানিয়েছে। একটুও ঘুমোতে দেয়নি। সকালে ডিউটি থাকায় টিউলিপকে আবার ঝটপট উঠে হসপিটালে দৌড়োতে হয়েছে। ক্রিটিকাল কেয়ারে যতক্ষণ ডিউটিতে থাকে ততক্ষণই সম্পূর্ণ সজাগ ও তৎপর থাকতে হয়। তবে টিউলিপের একটাই সুবিধা, হসপিটালের গেট দিয়ে ভিতরে প্রবেশ করলেই নিজের ডিউটি ছাড়া অন্য কিছু ভাবনাতে আসে না। টিউলিপ বিয়ে করতে চায় না সেই কথা টিউলিপ কিছুতেই অর্ণবকে বোঝাতে পারছে না। বিয়ে নামক সোশাল সেটেলমেন্টেকে এড়ানোর জন্যই তো টিউলিপ নিজের জন্মস্থান থেকে পালিয়ে এসেছে কলকাতায়।

    রাধাচূড়ার একটু ছায়া খুঁজে অর্ণব মিনিট দুয়েক চুপচাপ দাঁড়িয়ে থেকে একটা সিগারেট ধরায়। হাতের ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখে আড়াইটে বেজে গেছে। টিউলিপের ফিরে আসার সময় হয়ে গেছে। অপেক্ষার ধকল কাটাতে গোটা তিনেক সিগারেটের সাহায্য নিয়ে দিব্বি মিনিট পনেরো কেটে যায়। কিছুক্ষণ পরেই দেখতে পায় টিউলিপ মেনরোড ক্রস করে হেঁটে গলির মুখে ঢুকছে। গেটের কাছে চলে এলে অর্ণব এগিয়ে আসে, 'টিউলিপ!'

    'অর্ণব তুই! আমি কাল রাত্রে তোর জন্য ঘুমোতে পারিনি। আমি এখন ভীষণ ক্লান্ত, কথা বলতে পারব না।'

    'তুই একা ক্লান্ত? আমিও হসপিটালে ডিউটি দিইরে। কেন এত ভাও খাচ্ছিস? ছ-বছরের রিলেশান… এখন বলছিস কোন অবস্থায় বিয়ে করব না। মামদোবাজি না কি?'

    'তুই-ই বা এত বিয়ে-বিয়ে করছিস কেন? কবে পোস্ট গ্রাজুয়েশনে এন্ট্রি নিবি?'

    'এমবিবিএস করেও রোজগারপাতি হয়রে। বউ খাওয়ানোর এলেম আছে আমার। দেখ, বেশি ঝামেলা শুরু করলে আমায় কিন্তু অন্য পথ ধরতে হবে।'

    'তবে যা না সেই পথে। এখানে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে রোমিওগিরি করছিস কেন? রিলেশানে থাকা মানেই কি আমায় বিয়ে করতে হবে? আমাকে একদম ধমকি দিবি না। বড্ড বিয়ে করার শখ, তাই না; দম থাকে তো কাল আসিস তোর মা-বাবাকে সঙ্গে নিয়ে আমাদের গড়িয়ার ফ্ল্যাটে। আমার বাবা-মার সামনে আমার বিয়ের কথা আলোচনা হবে। তোর দেমাকের বেলুনের হাওয়া ফস করে বেরিয়ে যাবে কাল।' কথাগুলো বলেই টিউলিপ অর্ণবকে পাশ কাটিয়ে হোস্টেলে ঢুকে যায়।

    অর্ণব পিছন থেকে চেঁচায়, 'বাড়ির ঠিকানাটা টেক্সট করে দিস।'

    #####

    গতকাল রাতেই টিউলিপ গড়িয়ায় চলে এসেছে। বাড়ি ফিরে তার বাবা-মাকে সব জানিয়েছে। কিছুক্ষণ আগে অর্ণব ফোন করে বাড়ির লোকেশান জেনে নিয়েছে। টিউলিপের মা মেয়েকে শাড়ি পরতে বলেছিলেন। টিউলিপ সেই কথায় কান না দিয়ে বলেছে, 'এত ফর্মালিটি দেখানোর কী আছে মা? এখানে তো আমার বিয়ে হচ্ছে না। অর্ণবের ছটফটানি বন্ধ করতে শুধুমাত্র ওঁদের বাড়িতে ডাকা।'

    কলিং বেল বেজে ওঠে, টিউলিপের বাবা রেহান চৌধুরী দরজা খুলে দেন। অর্ণবের বাবা-মা ও অর্ণবকে সাদরে অভ্যর্থনা জানিয়ে ড্রয়িং রুমে বসান। অর্ণবই শুরু করে, 'আঙ্কেল আমি অর্ণব কাজী, এমবিবিএস পাশ করে একটি বেসরকারি হসপিটালে মেডিকেল অফিসার হিসাবে কাজ করছি। ইনি আমার বাবা অপূর্ব কাজী, অ্যাডভোকেট, কলকাতা হাইকোর্টে প্র্যাকটিস। আমার মা অপরাজিতা কাজী, সোশাল ওয়ার্ক করেন। নারীর শিক্ষা ও অধিকার নিয়ে বেশ কয়েক বছর ধরে আমার মা কাজ করছেন। গতকালই ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের জন্মদিনে ফেসবুকে ভার্চুয়াল প্ল্যাটফর্মে মা নিজের বক্তব্য রেখেছিলেন। কাল ফেসবুক লাইভে ফাইভ কে মানে পাঁচ হাজারের বেশি লাইক পড়েছে আঙ্কেল। আই এ্যাম প্রাউড অফ হার।' ...অর্ণবের বক্তব্যে অর্ণবের বাবা-মা সমেত অর্ণবও প্রায় গদগদ ভঙ্গিমায় দাঁত লুকিয়ে হাসে।

    অর্ণবের আলাপচারিতা শুনে রেহান চৌধুরী বলেন, 'হাঁ, বিদ্যাসাগর সাবজী বহুত গ্রেট আদমী ছিলেন আমিও জানি। নারী শিকসার জন্য প্রথম আওয়াজ তোলেন তিনি। ওনার আশীর্বাদেই হামার মেয়ে আজ ডক্টর। আমি, হামার মেয়ে বাংলা জানি বুঝি। স্রেফ হামার ওয়াইফ বাংলা বলতে পারেন না। আমরা ইউপি-র লোক। নয় বরোস কলকাতায় আছি। আমার স্যানিটারী গুডসের বিসনেস আছে। আপনারা আজ হামার বাড়িতে এসেছেন আমি বহুত খুশি হয়েছি। টিউলিপ অর্ণবের বারেমে সব বলেছে।’

    এদিকে কথার ফাঁকে ততক্ষণে শরবত মিষ্টি সহযোগে টিউলিপ ট্রে নিয়ে তার মায়ের সঙ্গে ঘরের ভিতরে প্রবেশ করে। টিউলিপের পরনে একটা হাল্কা ফিরোজা রংএর জারদৌসি চুড়িদার, সঙ্গে হাল্কা গয়নায় টিউলিপকে অনন্যা লাগছে। অর্ণব টিউলিপের দিকে মুগ্ধ হয়ে তাকিয়ে তারপরই ভ্রু কুঁচকে পরনের চুড়িদারটিকে নিরীক্ষণ করে। ভাবখানা এমন যেন আমার মা-বাবা এসেছেন তুমি কেন শাড়ি পরলে না? অর্ণবের সামনের সোফায় বসে টিউলিপ অর্ণবের ভাবগতি দেখে আসন্ন প্রশ্ন আন্দাজ করে উত্তরটা সবার সামনেই দিয়ে বসে, 'আসলে ব্লাউজ ঠিকঠাক রেডি ছিল না বলে শাড়ি পরতে পারলাম না।’

    'না না, ঠিক আছে, তোমাকে ভারি মিষ্টি লাগছে, আমার ছেলের নজরের তারিফ করতে হয়,' অর্ণবের মা হেসে বলেন টিউলিপকে।

    'থ্যাংক ইউ আন্টি।'

    অর্ণবের বাবা শরবতের গ্লাস হাতে নিয়ে রেহান চৌধুরীকে প্রশ্ন করলেন, 'এত ফুল থাকতে আপনি মেয়ের নাম টিউলিপ রাখলেন কেন?'

    রেহান চৌধুরী উত্তরে জানালেন, 'আরে ওর একটা কিসসা আছে। আমি টিউলিপের মাকে নিয়ে হানিমুনে কাশ্মীরে যাই। সেখানে টিউলিপ গার্ডেন দেখে হামার দিল গার্ডেন গার্ডেন হয়ে যায়। টিউলিপ ফুল এত সুন্দর আমি বলে বোঝাতে পারবো না। বিয়ের এক বরোস পর যখন হামাদের মেয়ে হয় তখন হামার মাথায় টিউলিপ নামটা আসে। হামাদের বাড়ির সবাই এই নাম রাখার এগেন্সটে ছিল, আমি জোর করেই টিউলিপ নামটা রাখি। টিউলিপ ইস অ্যা ইউনিক এন্ড প্রীটি নেম। ইট সুটস্ মাই ডটার।'

    'হ্যাঁ ঠিকই। আমাদের যে কারণে এখানে আসা সেই ব্যাপারে এবার কথা বলি,’ অপরাজিতা দেবী শুরু করলেন, ‘অর্ণব আর টিউলিপের অনেকদিন ধরে রিলেশান, আমরা চাইছি এই রিলেশানটাকে আরো এগিয়ে নিতে, এবার ওদের বিয়ের ব্যবস্থা করি। এই ব্যাপারে আপনাদের কী মতামত সেটা জানতে চাই?'

    প্রতিউত্তরে রেহান চৌধুরী জানালেন, 'কিন্তু হামার মেয়ে বিয়ে করতেই চায় না। ওর কথার এগেন্সটে কী করে মতামত দিই?'

    'মানে?'

    'মানে আর কিছুই না আন্টি, আমি বিয়ে করতে চাই না, কেননা আমার অতীত জানতে পারলে আপনারা আমাকে আর ছেলের বউ করবেন না।'

    টিউলিপের কথা শুনে হতবাক অর্ণব বলে, 'এই সব কী বলছিস টিউলিপ? তোর কীসের অতীত? তোর মতো স্কলার মেয়ের পড়াশুনো ছাড়া আর কী অতীত থাকতে পারে?'

    'অর্ণব তোমার টিউলিপ বিধবা, ষোলা বরোসে ওর বিয়ে হয়ে যায়। ইউপি-তে হামাদের পরিবারের মেয়েদের পনদ্রা ষোলা বরোসে বিয়ে হয়ে যায় এখনও। টিউলিপ ছোটবেলা থেকেই পড়াশুনোতে এক নম্বর ছিল। ওকে নিয়ে আমি অনেক স্বপ্ন দেখতাম। ক্লাস টেনের বোর্ড দেবার পরই হঠাৎই একদিন হামার আব্বা আমাদের না জানিয়ে টিউলিপের বিয়ে ঠিক করে আসেন। অনেক অশান্তির পর আব্বার সম্মানের কথা ভেবে টিউলিপের বিয়ে দিতে বাধ্য হয়ে রাজী হই।’

    'পাপা এবার আমি বলি,’ রেহান চৌধুরীকে থামিয়ে টিউলিপ বলা শুরু করে, 'আমার পাপা বাকিটা লজ্জায় ঠিকমতো বলতে পারবে না তাই আমি বলছি, 'বিয়ের পরের দিন আমি শ্বশুরবাড়ি চলে যাই, সেদিনই আমার সোহাগরাতে আমার হাসব্যান্ড আমার উপর অকথ্য শারীরিক অত্যাচার করে। মাঝরাতে হাসব্যান্ডের বন্ধুদের ফোন আসে, আমার হাসব্যান্ড তখন আলমারিতে লুকিয়ে রাখা মদের বোতল শেষ করে ঘর থেকে বেরিয়ে যায়। পরের দিন সকালে থানা থেকে বাড়িতে ফোন আসে, জানায় ওঁর পথ দুর্ঘটনায় মৃত্যু হয়েছে। বন্ধুদের সাথে বাজি লড়ে হাইরোডে বাইক রাইডস করতে গিয়ে ব্যালেন্স হারিয়ে দুর্ঘটনা ঘটে। অপয়ার শীলমোহর পড়ে আমার জীবন এরপর নরক হয়ে ওঠে, একটা ষোল বছরের কিশোরী মেয়ের জীবন তছনছ হয়ে যায়।' ...টিউলিপ দুই হাত দিয়ে মুখ ঢেকে ফুঁপিয়ে কেঁদে ওঠে।

    রেহান চৌধুরী বললেন, 'মাস খানেক পর একদিন আমরা তিনজনে আজমির শরীফ যাবার প্ল্যান করে সারাজীবনের মতো ঘর পরিবার ছেড়ে কলকাতায় পালিয়ে আসি। আসার সময় হামাদের সব সেভিংস আর জুয়েলারি নিয়ে চলে এসেছিলাম। এখানে টিউলিপের মার বহেন থাকে, তিনি হামাদের থাকার ব্যবস্থা করে দেন। তারপরেও অশান্তি পিছু ছোড়েনি। এখানে এসে জানতে পারলাম টিউলিপ প্রেগন্যান্ট। পার্কস্ট্রিটের একটা নার্সিংহোমে অ্যাবোরশন করাই। কিছুদিন পরে টিউলিপের আন্টি টিউলিপের লোকাল গার্জেন হিসাবে এখানকার স্কুলে টিউলিপকে ইলেভেনে ভর্তি করে দেন। টিউলিপের নতুন জীবন শুরু হয়। বোর্ডে দারুণ রেজাল্ট করে, এক চান্সে মেডিকেলে সীট পায়। এমবিবিএস শেষ করেই পোস্ট গ্রাজুয়েটে চান্স পেয়ে যায়। আমি আমার মেয়ের সাকসেস দেখে ভীষণ হ্যাপী। টিউলিপের মা মাঝে মাঝে টিউলিপের বিয়ের কথা তোলেন। হামার আর বিয়ের কথা ভাবতে ইচ্ছে করে না। কারণ অতীতের কালো ধাব্বা ভীষণ পেইনফুল। বাবা হিসাবে মেয়ের সুখই আমার সুখ। এরপর কি টিউলিপকে ছেলের বউ করার ইচ্ছে থাকবে আপনাদের? ইচ্ছে করলে সব কথা গোপন করে টিউলিপের বিয়ে দিতে পারতাম। কিন্তু আপনাদের মতো আমিও ভদ্রলোক আছি। তাই পারলাম না।'

    সব বৃত্তান্ত শুনে তিন জনের মুখে যেন অমাবস্যার কালো ছায়া নেমে আসে। তিন জনই কিংকর্তব্যবিমূঢ়। শব্দের উৎপত্তি স্থলে যেন পাথর চাপা পড়েছে। নিজেরাই যেন পরস্পরের সাথে চোখাচোখি করতে পাচ্ছেন না। ওঁদের উত্তরহীন নীরবতা দেখে টিউলিপ চোখ মুছে ঠোঁটে হালকা হাসি এঁকে অর্ণবকে কটাক্ষ করে, 'বলেছিলাম না ফস করে বেলুন থেকে হাওয়া বেরিয়ে যাবে।'

    টিউলিপের কটাক্ষ শুনে অপরাজিতাদেবী বলেন, 'আমরা বাড়ি গিয়ে আলোচনা করে আপনাদের জানাচ্ছি।'

    #####

    বাড়ি ফিরে বিমর্ষ অর্ণব ছাদে চলে যায়। খোলা আকাশের এক ঝাঁক তারার মাঝে অর্ণবের নিজেকে বড় একাকী মনে হয়। অর্ণব এতদিনে জেনে এসেছিল টিউলিপ একটা নির্ভরতার জায়গা। সত্যি ফস করে আত্মবিশ্বাসের বেলুন থেকে হাওয়া বেরিয়ে গেছে। অর্ণব বিড়বিড় করে ওঠে, 'আমি তোকে খুব ভাল বন্ধু ভাবতাম, আর তুই তোর কষ্টের ক্ষতগুলো আমার সাথে কোনদিন শেয়ার করিসনি! তাহলে আমরা কীসের বন্ধু ছিলাম?' অর্ণবের গলা বুজে আসে, অযাচিত জল চোখের পাতা ভারী করে তোলে। কিছুক্ষণ বাদে ছাদ থেকে নেমে অর্ণব নিজের বিছানায় চলে যায়।

    পরের দিন সকালে ব্রেকফাস্ট টেবিলে অর্ণবের বাবা অর্ণবকে জিজ্ঞাসা করেন, 'কিরে কী ঠিক করলি?'

    'তোমরা তো রাজি হবে না, বাড়িভাড়াটা চাপ হয়ে গেল। ফালতু খরচ, কী আর করা যাবে, বিয়ের পর তো ভাড়া বাড়িতেই উঠতে হবে।'

    অর্ণবের কথায় অপরাজিতাদেবী বেশ রেগে গিয়ে বলে উঠলেন, 'কেন এত আমাদের ছোট করছিস? বিদ্যাসাগরমশাই দেড়শো বছর আগে বিধবা বিবাহ দিয়েছিলেন, তাঁর অনুগামী হয়ে আমরা ভার্চুয়াল প্ল্যাটফর্মে শুধু ভণিতা করি না। আমাদেরও ওই আলোর পথে হাঁটতে ইচ্ছে করে। বিয়ে হবে, টিউলিপকে আমাদের বেশ পছন্দ।'



    অলংকরণ (Artwork) : রাহুল মজুমদার
  • মন্তব্য জমা দিন / Make a comment
  • (?)
  • মন্তব্য পড়ুন / Read comments