• Parabaas
    Parabaas : পরবাস : বাংলা ভাষা, সাহিত্য ও সংস্কৃতি
  • পরবাস | সংখ্যা ১ | জুন ১৯৯৭ | প্রবন্ধ
    Share
  • সভ্যতার স্মরণে : রোহন ওবেরয়
    translated from English to Bengali by ইন্দ্রনীল দাশগুপ্ত

    ভারতের পুলিশ চেষ্টা করেও জনতার মন জয় করতে পারছে না। সিনেমায় তাদের ভুঁড়িদার ও গুঁফো দেখানো হয়। সেই সঙ্গে মুখে পান ও এক হাতে রুল নিয়ে ঠুকছে।

    নিত্যি-ই কোনো আপত্তিকর কিছু করে তারা নিজেদের ভাবমূর্তিতে চিড় ধরিয়ে ফেলছে। দিল্লীর কনট প্লেসে দুজন নিরপরাধ ব্যবসায়ীকে গুলি করে নেরে ফেলার পর একটি সাব্‌ইন্স্‌পেক্টরকে মৃতদের তেড়ে আসা আত্মীয়দের কাছ থেকে প্রাণ হাতে নিয়ে পালাতে হয়। পাঞ্জাবের পান্ডোরি রুকমাণা গ্রামের লোকেরা ১০ মাইল দূরের হোশিয়ারপুর শহরে গিয়ে রাস্তার ট্র্যাফিক বন্ধ করে পুলিশের বিরুদ্ধেই সরকারী ব্যবস্থা দাবী করেছে। ওই গ্রামে কোন ওয়ারেন্ট ছাড়াই একটি লোককে মাঝরাত্রে গ্রেফ্‌তার করা হয় এবং মেরে ফেলা হয়। পাঞ্জাবের D.G.P. পি. সি ডগরা স্বীকার করতে বাধ্য হন যে পুলিশ তাদের সীমা অতিক্রম করেছে।

    অনেকেই মনে করেন যে আমাদের পুলিশ নিষ্ঠুর, বিশৃঙ্খল, ঘুষখোর, পুলিশী শিক্ষায় অল্পশিক্ষিত এবং মানুষের অধিকার ও জীবনের মূল্যের বিষয়ে উদাসীন। কিন্তু বিশেষ একটি গোষ্ঠীর কাছে খাঁকি উর্দী-পরিয়েদের সাত খুন মাপ। এঁদের কাছে পুলিশ সরকারী চাকুরেই শুধু নয়—আমাদের প্রজাতন্ত্রকে রক্ষা করার জন্য নিযুক্ত দেবদূত বিশেষ। এঁদের কাছে পুলিশ হল বিদ্রোহ, অরাজকতা, বিশৃঙ্খলা ইত্যাদি আটকাবার জন্য দেশের কবচ কুন্ডল।

    এঁরা অবশ্যই আর কেউ নন, আমাদের খবরের কাগজের কলামকাররা। এঁদের জেগে ওঠার সাম্প্রতিকতম কারণ হল পাঞ্জাবের তরণ- তরণ জেলার S.S.P. অজিত সিং সান্ধু এবং কাশ্মীরের জনৈক অবতার সিংএর মৃত্যু। দুজনের বিরুদ্ধেই হিউম্যান্‌ রাইট্‌স্‌ অ্যাক্‌টিভিস্টকে খুন করার অভিযোগ ছিল।

    ভারতবর্ষে, অন্তত: কাগুজে কলামকারদের মধ্যে, এই বিশ্বাস যে মানবিক অধিকার যাদের কেড়ে নেওয়া হচ্ছে তারা সবাই সন্ত্রাসবাদী এবং তাদের মানবিক অধিকার না থাকলেও চলে। তাই মানবিক অধিকার নিয়ে যাঁরা কথা বলেন তাঁদের একটু সন্দেহের চোখেই দেখা হয়: যেন তাঁরাও সন্ত্রাসবাদী দলেরই লোক।

    তাই এ হেন দুজন হিউম্যান রাইট্‌স্‌ অ্যাক্‌টিভিস্ট, যশবন্ত সিং কালরা ও জালিল আন্দ্রারী খুন হলে বিশেষ সহানুভূতি দেখা যায় নি। এঁরা দুজন সন্ত্রাসবাদী না হলেও প্রায় ততোধিক ন্যক্কারজনক অপরাধে অপরাধী। এঁরা থানার লক-আপে করা অত্যাচারের বিরুদ্ধে গলা তুলেছিলেন এই বলে যে আমাদের সংবিধানের ক্রিমিনাল প্রসিডিওর কোডের ৩৩০ ও ৩৩১ ধারায় তা নিষিদ্ধ। শুধু এই দোষেই এঁদের গ্রেফতার করা যেত।

    এঁরা এও বলে ফেলেছিলেন যে ভারতের নাগরিকদের কোর্টে ন্যায্য বিচার পাওয়ার অধিকার সংবিধানেই দেওয়া আছে। বলেছিলেন যে একজন পুলিশ কারো মুখ দেখে অপছন্দ করলেই তাকে সন্ত্রাসবাদী বলে গুলি করতে পারে না। এই সব কথা (কনট প্লেস্বে খুন হওয়া ব্যবসায়ীদের আত্মীয়দের কাছে সমর্থন পেলেও) স্পষ্টত: একেবারেই দেশদ্রোহমূলক।

    যাইহোক, আন্দ্রারী আর কালরাকে পুলিশরা তুলে নিয়ে গিয়েছিলো। আন্দ্রারী এখন মৃত, কালরা নিরুদ্দেশ- মৃত বলেই আশঙ্কা। আমাদের চেয়ে কম আলোকপ্রাপ্ত দেশে ধরে নেওয়া হয় যে কেউ খুন হল৪এ খুনীকে ধরে ফেলার একটা চেষ্টা করা হবে। কিন্তু ভারতে যেই জানা গেলো যে সরকার খুনীদের অভিযুক্ত করেছে, অমনি সত্যনিষ্ঠদের মধ্যে একটা অসন্তোষের কোরাস উঠলো।

    কারণ দেখানো হল এই যে পুলিশ তো সন্ত্রাসবাদের সাথে সাহস করে লড়ছে, সেই ধর্মযুদ্ধের পথে দু একটা নিরপরাধ মানুষ যদি মেরেও ফেলে, তার জন্য তাদের উপর এতোটা জুলুম করা যায় না। আরেকটা যুক্তি: এইভাবে চললে তো পুলিশ বিভাগের মনোবল কমে যাবে এবং আমাদের সাধের গণতন্ত্র উগ্রপন্থার অথৈ জলে পড়ে হাবুডুবু খাবে।

    এই সব যুক্তি-ই একেবারেই অকাট্য। পুলিশের মনোবল যাতে না ভেঙ্গে যায় সেইজন্য এই ব্যবস্থাই করা উচিত যাতে তাদের বিরুদ্ধে কখনোই কোনো অভিযোগ না আনা যায়। তাহলে আর তাদের মাঝে মধ্যে দু একটা হিউম্যান রাইট্‌স্‌ অ্যাকটিভিস্ট মেরে-ই খুশী থাকতে হয় না, তারা জাতীয় মানবিক অধিকার কমিশন, পীপল্‌স ইউনিয়ন আর অন্যান্য ঝামেলাবাজ দলগুলোর সমস্ত সদস্যদের নিয়ে পত্রপাঠ গুলি করে মারতে পারে। যে সব বুদ্ধিজীবিরা সান্ধু আর অবতার সিং-এর বিরুদ্ধে মামলা আনার সমালোচনা করেছেন আমি তাঁদের সবাইকে বলি আমার সঙ্গে একমত হয়ে এই ব্যবস্থাই দাবি করুন।

    আগেই বলেছি যে যাদের মানবিক অধিকার কেড়ে নেওয়া হচ্ছে তারা প্রায় সকলেই সন্ত্রাসবাদী। পুলিশের সাথে “সংঘর্ষে” যারা মরছে তাদের ক্ষেত্রে আবার এটা বিশেষভাবে প্রযোজ্য। মৃত্যুর আগে তারা যদি উগ্রবাদী নাও হয়ে থাকে, মৃত্যুর পরে খুবই নিশ্চিত ভাবে তাই হয়ে যায়।

    কনট প্লেসের ঘটনাটাই ভালো উদাহরণ। আক্রান্ত মানুষ দুটি মৃত্যুর আগে ছিলেন নিরস্ত্র, শান্তিকামী ব্যবসায়ী। নীল রঙের মারুতি চালিয়ে যাচ্ছিলেন তাঁরা। তারপর ন’জন পুলিশ তিনটে গাড়ি থেকে লাফিয়ে নেমে অবিশ্রান্ত গুলিবৃষ্টি করে তাঁদের মেরে ফেলার পর তাঁরা উগ্রবাদী হয়ে যান।

    পুলিশে F.I.R অনুযায়ী দুজনই নাকি আগে গুলি করেন এবং আত্মরক্ষার জন্য পুলিশ তাঁদের মারতে বাধ্য হয়। একটা পিস্তল আর কিছু কার্তুজও পাওয়া যায় নি। জানা যায় যে পুলিশরা আসলে উত্তর-প্রদেশের এক কুখ্যাত গুন্ডা ও তার সঙ্গী ভেবেই ভুল করে ব্যবসায়ীদের মারে। ব্যাপারটা প্রধানমন্ত্রীর দপ্তর পর্যন্ত গড়ায়। কুমারের চাকরি যায় এবং জড়িত পুলিশদের গ্রেফ্‌তার করা হয়।

    রাজধানীর সজাগ জনমতের আওতার বাইরে পুলিশী সংঘর্ষ জিনিসটা খুবই কাজে লাগে কিন্তু। কোনরকম মামলা মোকদ্দমা বা অসুবিধেজনক প্রশ্নের সম্মুখীন না হয়েই কাউকে সরিয়ে ফেলবার এই প্রকৃষ্ট উপায়। পুলিশকে শুধু বলতে হয় যে অমুককে “সংঘর্ষে” গুলি করা হয়েছে (সত্য হোক মিথ্যা হোক, একটা পিস্তল পাওয়া গিয়েছে বললে কাজটা আরো পাকা হয়)। প্রেসও মিনমিন করে তাই-ই মেনে নেয় ও ছেপে বসে থাকে। তারা আবার নিজেদের কাজটা সুষ্ঠুভাবে করার জন্য যোগটোগ করে প্রকাশও করে দেয় সেদিন কতজন “সন্ত্রাসবাদী” –কে বধ করা হল।

    পাঞ্জাব আর চন্ডীগড়ের আর্মড্‌ ফোর্সেস্‌ (স্পেশাল পাওয়ার্স্‌) অ্যাক্ট ১৯৮৩-র সৌজন্যেই এইসব করা সম্ভব হচ্ছে। এই আইন অনুযায়ী সশস্ত্র বাহিনীরা যাকে ইচ্ছে গুলি করতে পারে। এই নৃশংস ও দমনমূলক আইন তৈরি করার ঠিক পরের বছরগুলিতেই যা পাঞ্জাবের সন্ত্রাসবাদ হু হু করে বঅ্যাড়ে তা ঠিক কাকতলীয় নয়।

    পুলিশ পূজারীরা বলবে যে সন্ত্রাসবাদের ওষুধ হল বুলেট। আসল ব্যাপারটা যথারীতি এর চেয়ে ঢের বেশী জটিল: পুলিশের বুলেট-ই অধিকাংশ ক্ষেত্রে সন্ত্রাসবাদকে জন্ম দেয়। পুলিশের হাতে নিহত বা নির্যাতিত প্রতিটি মানুষের আত্মীয় ও স্বজনের মধ্যে ডজন ডজন সন্ত্রাসবাদী তৈরি হয়ে যায়।

    সম্প্রতি CBI সুপ্রীম কোর্টকে জানিয়েছে যে পুলিশ “সংঘর্ষে” নিহত এবং অ-শনাক্ত বলে গোপন সৎকার করা হাজার হাজার মানুষের মধ্যে ৫৮৫ জনকে সম্পূর্ণভাবে শনাক্ত করা গিয়েছিল, ২৭৪ জনকে আংশিকভাবে শনাক্ত করা সম্ভব হয়েছিল এবং ১২৩৮ জন অ-শনাক্ত ছিল। কোর্ট শনাক্তদের আত্মীয়দের ক্ষতিপূরণ দিতে আদেশ করে ও NHRC-কে বলে শুনানী করতে। এখন পাঞ্জাব পুলিশ মৃতদের আত্মীয়দের সাথে ভাব করার জন্য ছূটোছুটি করছে।

    কাশ্মীরা সং-এর কথা-ই ধরা যাক, পান্ডোরি রুক্মণা গ্রামের সেই যুবক, যাকে খুন করে পুলিশ “তাদের সীমা অতিক্রম করে”। এঁর আত্মীয়রা কোনমতেই পুলিশের সাথে ভাব করতে চান না।

    ১৯৯২ সালের ৩ অক্টোবর, লাপোকের সরকারি কলেজের ভাইস প্রিন্সিপাল জনৈক সুখদেব সিংকে তাঁর শ্বশুর সুখচৈন সিং-এর সাথে খান্ডোয়াল গ্রাম থেকে পুলিশ তুলে নেয়। সুখদেব সিং-এর স্ত্রী সুখবন্ত কাউর বলেছেন যে তাঁর পরিবার থেকে একটি লিখিত আর্জি দাখিল করার পর পুলিশ তাঁর মুখ বন্ধ রাখার পুরস্কার হিসেবে একটি ডেথ সার্টিফিকেট পাঠিয়ে দিয়েছে। অনেকের মত তিনিও NHRC-র শুনানী সময় সাক্ষ্য দিতে যাবেন।

    তথ্য সংগ্রহের ব্যাপারে বিশেষভাবে দুর্বল এক সাংবাদিক হলেন Rediff on The Net-এর বর্ষা ভোঁসলে। উনি একটি নতুন যুক্তি বের করেছেন: আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্র এবং ব্রিটেনের সন্ত্রাসবিরোধী আইন নাকি ভারতের চেয়েও কড়া। এটা একটু বিশদে আলোচনা করতে চাই।

    আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্রের ANTI TERRORISM AND EFFECTIVE DEATH PENALTY ACT নাকি এই ধরনের কড়া আইনের একটি উদাহরণ, ব্রিটেনের PREVENTION OF TERRORISM BILL-ও নাকি তথৈবচ। মনে হতে পারে যে আইনের নামের মধ্যে TERRORSIM কথাটা থাকলেই তারা সবাই সমতুল্য। আসলে, তা মোটেও নয়।

    ব্রিটেনের আইন পুলিশ কাউকে ধরে আদালতের শুনানী ছাড়া এক হপ্তা মাত্র আটকে রাখতে পারে। আমেরিকার আইন শুনানী ছাড়া ধরে রাখা সম্ভবই নয়। কিন্তু বলা আছে গ্রেফ্‌তার হবার একবছরের মধ্যে HABEUS CORPUS- এর আর্জি দাখিল করতে হবে।

    এর সঙ্গে আমাদের NATIONAL SECUIRITY ACT বা NSA-র তুলনা করুন যাতে এক বছর পর্যন্ত বিনা বিচারে একটি লোককে বন্দি রাখা যায় (পাঞ্জাবে মেয়াদটা দুবছরও ছিলো একস্ময়)- এবং সেই সঙ্গে মাথায় রাখুন যা কার্যত: হাওতবাস প্রায় অনির্দিষ্টকাল পর্যন্তই চলে। ব্রিটেন বা আমেরিকাতে যা অকল্পনীয়।

    ব্রিটেনের আইনে নিজের সপক্ষে জবানবন্দী দিতে অস্বীকার করলে তাকে অপরাধের প্রমাণ হিসেবে ধরা হতে পারে, আমেরিকায় আইনে দেশ থেকে বহিষ্কার বা DEPORTATION-এর শুনানী-তে গোপনে সাক্ষ্য প্রমাণ হিসেবে গ্রাহ্য হতে পারে। এর সঙ্গে ভারতের TADA-র তুলনা করুন। TADA-র অধীনে পুলিশের কাছে করা স্বীকারোক্তিও প্রমাণ হিসেবে গ্রাহ্য। পুলিশী অত্যাচারকে প্রায় নিমন্ত্রণ জানানো হচ্ছে আর কি! পাশ্চাত্য গণতন্ত্রগুলিতে এটা ভাবা যায় না। উপরন্তু সাক্ষ্য প্রমাণের ব্যাপারটাই তুলে দেওয়া হয়েছে। কিছু কিছু ক্ষেত্রে অভিযুক্তের দায়িত্ব নিজেকে নির্দোষ প্রমাণ করা।

    আমাদের দেশের এই ন্যক্কারজনক আইনগুলির কোন আইন ব্রিটেনে বা আমেরিকাতে তো নেই-ই, এরকম আইনের কথা ওই দেশে ভাবাই যায় না। আমাদের ARMED FORCES (SPECIAL FORCES), ACT-এর মত আইন, যা সহস্ত্র বাহিনীদের নিজের ইচ্ছে মত মানুষ খুন করার অধিকার এবং তারপর সমস্ত দায় ও বিচার থেকে মুক্তি দেয়- কোন গণতান্ত্রিক, অধিকার-সচেতন নাগরিকদের দেশে এক মুহূর্তের জন্যেও মেনে নেওয়া হবে না।

    মেনে নেওয়া হবে না আমাদের NSA-এর মত আইন যা বিনা বিচারে একবছর পর্যন্ত কাউকে বন্দী রাখাকে স্বীকৃতি দেয় বা TERRORIST AND DISRUPTIVE ACTIVITIES ACT (TADA)-র সরকারী গোপন কোর্ট ও লুকোনো সাক্ষীর ব্যবস্থা। তাও এমন সব মামলায় যেখানে যাবজ্জীবন কারাদন্ড বা মৃত্যুদন্ড পর্যন্ত দেওয়া যেতে পারে।

    NSA তো আসলে ১৯৭৫-৭৭ এর এমার্জেন্সির সময়কার কুখ্যাত MAINTENANCE OF INTERNAL SECUIRITY ACT- এরই নামান্তর। ১৯৭৮-এ জনতা সরকার এই আইন প্রত্যাহার করে নেয়। ১৯৮০-তে কংগ্রেস সরকার ক্ষমতায় এসেই NSA চালু করে। তারপর একের পর এক সরকার এসেছে এবং দমনমূলক আইন ক্রমশ: বাড়িয়ে জঘন্যভাবে নিজের হাতে উত্তরোত্তর ক্ষমতা তুলে নিয়েছে।

    TADA ও অন্যান্য প্রতিষেধক গ্রেফ্‌তারের আইনগুলি বাঁচিয়ে রাখার কারণ এই বলা হয় যে অভিযোগ আনার আগে প্রমাণসংগ্রহের সময়ে পুলিশের গ্রেফ্‌তারের অধিকার প্রয়োজন। TADA-র অধীনে ধরা লোকেদের অধিকংশই যে দোষী প্রমাণিত হয় না তা মোটেও TADA বাঁচিয়ে রাখার যুক্তি নয়- বরং এতে এটাই বোঝা যায় যে পুলিশ তাদের বিরুদ্ধেই TADA ব্যবহার করে যাদের বিরুদ্ধে কোর্টে প্রমাণ করার মত কোন অভিযোগই নেই। অন্য অনেক দেশে এই ধরনের মানুষকে নির্দোষ বলা হয়ে থাকে। ভারতে আমরা তাদেরই TADA-য় ধরা আসামী বলি।

    NSA আর ARMED FORCES (SPECIAL FORCES) ACT যতদিন না তুলে নেওয়া হচ্ছে ভারতে আইনের শাসন আছে বলা যাবে না। সোজা ভাষায় বললে আমাদের বত্তমান শাসন ব্যবস্থা বলা প্রজাতন্ত্র বা BANANA REPUBLIC-গুলোর সমতুল্য।

    ভারতে বহু সন্ত্রাসবাদী দল রয়েছে- খবরের কাগজে তাদের নামও ছাপা হয়। কিন্তু ধরুন উত্তরপ্রদেশের PROVINCIAL ARMED CONSTABULARY-র নাম করার এই তালিকায় এসেছে? এমন কি ভারতেরই কোর্টে (বিদেশী শক্তি বা মানবিক অধিকারের অ্যাক্টিভিস্টদের মত শয়তানী লোকেদের হাত-ও নেই এতে) PAC-কে ১৯৮৭-র মীরাটের দাঙ্গায় ডজন ডজন মুসলমানদের হত্যার জন্য দায়ী করার পরও নয়) নিরপরাধ মানুষকে অন্য কেউ মারলেই তা সন্ত্রাসবাদ, কিন্তু সরকার মারলে তা স্বাভাবিক! ফলে আশ্চর্য নয় যে এতগুলি উগ্রপন্থী দল উঠে এসেছে। অন্যায় থেকেই বিদ্বেষ এবং বিদ্বেষ থেকেই হিংসার জন্ম।

    পক্ষপাতদুষ্ট নয় এবং ন্যায় অন্যায়ের তফাৎ বুঝতে পারে এমন একটি প্রশাসন-ই আভ্যন্তরীণ বিক্ষোভ, বিদ্রোহ বা দেশবিরোধী কার্যকলাপের শ্রেষ্ঠ প্রতিষেধক। আমাদের দুর্ভাগ্য এই যে নির্দোষদের বাঁচাবার কোন রকম নিরাপত্তাই যাতে নেই এমন একটি নিষ্ঠুর সুরক্ষাবাহিনীর উপর ভারতের বহু লোক বিশ্বাস করে বসে আছেন। তাঁদের ধারণা উগ্রপন্থীদের খুনখারাপি থামাবার উপায় হল পুলিশকেও নিরপরাধ মানুষকে খুন করার অধিকার দেওয়া।

    এই উন্মত্ততা সময়ের সাথে সাথে কমে যাবে ও যাচ্ছে এই আশা করা যাক। অপরাধজগতের সাথে মোকাবিলা করার জন্য পুলিশদের চাই আধুনিক সরঞ্জাম, উন্নত প্রশিক্ষণ, কঠোর শৃঙ্খলা ও বেতনবৃদ্ধি। তাদের হাতে বেপরোয়া ক্ষমতা তুলে দেবার কোন প্রয়োজন নেই। ভারতের মত সমস্যাজর্জর দেশের তা মোটেই পোষায় না।
  • এই লেখাটি পুরোনো ফরম্যাটে দেখুন
  • মন্তব্য জমা দিন / Make a comment
  • (?)
  • মন্তব্য পড়ুন / Read comments