আজকের ইন্টারনেট বিপ্লবের সঙ্গে যুক্ত আছেন অসংখ্য বাঙালী ও বাংলা ভাষী। তথ্য, তত্ত্ব, আর সবার উপরে রসের মিশ্রণে এই নতুন মাধ্যম বাংলা ভাষার পক্ষে যে কত সম্ভাবনাময় তা টের পাওয়া যাবে “পরবাস”- এর মধ্যে। “পরবাস” প্রথম “সম্পূর্ণ” বাংলা সাংস্কৃতিক ওয়েবজিন। এতে ছবি ও লেখা তো আছেই, আগামী সংখ্যাগুলিতে শব্দ, গান, চলচ্চিত্রের অংশ, এমন কি animation-ও যুক্ত হতে পারে। প্রযুক্তিগতদিক থেকে সব তো এখনই সম্ভব, আর প্রতিমুহূর্তে পরিবর্তনশীল ইন্টারনেট ভবিষ্যতে আমাদের কোন বিস্ময়কর জগতে নিয়ে যাবে তা আজ কল্পনা করা কঠিন। ইনফর্মেশন ও কমিউনিকেশন টেক্নোলজির এই জয়যাত্রার যুগে বাংলা ভাষা ও বাংলা সংস্কৃতিকে নতুন প্রযুক্তির সেরা সব কিছু দেব- এই হল আমাদের সমস্ত শ্রমের প্রেরণা এবং আমাদের সংকল্প।
“পরবাস” নামের পিছনে যে যৎকিঞ্চিত ইতিহাস আছে তাও বলে রাখার এই প্রকৃষ্ট সময়। বাংলা ওয়েবজিনের পরিকল্পনা প্রথম যাদের মাথায় আসে তারা সকলেই পরবাসী, আমেরিকায় পড়তে আসা বা আমেরিকায় জীবিকা খুঁজে পাওয়া বাঙালী। ইন্টারনেটের নিউজগ্রুপ গুলির সূত্রে এদের আলাপ। সেই সময় soc.culture.bengali ও soc.culture.bangladesh নামের নিউজগ্রুপ-দুটির মধ্যে দিয়ে বাংলা ভাষাকে ইন্টারনেটে বাঁচিয়ে রাখার প্রচেষ্টা থেকেই বাংলা ওয়েবজিন গড়ে তোলার স্বপ্ন। ঐ নিউজগ্রুপ দুটি তৈরী করার পেছনেও উদ্দেশ্য ছিল প্রবাসে ছড়িয়ে থাকা বাঙালীদের নতুন আর বলিষ্ঠ ইন্টারনেট প্রযুক্তি দিয়ে এমন একটি আড্ডায় এনে ফেলা যেখানে স্থান ও কালের বিস্তর ফারাকও কোন গুরুতর সমস্যা নয়। টেক্নোলজির এই নতুন পথ চেনাতে প্রবাস ও প্রবাসী-মনের যে ভূমিকা তা স্মরণ করেই ওয়েবজিনের নাম “পরবাস”। আবার অন্যদিকে এই ওয়েবজিন বিশ্বময় বাঙালীকে স্বদেশ এবং দুই-বাঙলাকে পৃথিবীর কাছে নিয়ে যাবে। সেই অর্থে “পরবাস”, খব চমকপ্রদ ভাবে, আসলে এক সর্বগামী নিজবাস!
“পরবাস”-এর আঙ্গিক বাংলায় একেবারে নতুন (সুতরাং- অন্য রূপ ও বসন বলে সে আরেক অর্থে পরবাস!) কিভাবে একে পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ ওয়েবজিন করে তোলা যায় তা নিয়ে ক্রমাগত পরীক্ষা নিরীক্ষা চালিয়ে যেতে হবে আমাদের, যা একক প্রচেষ্টায় সম্ভব নয়। এই ওয়েবজিনের বেঁচে থাকা ও বেড়ে ওঠা সম্পূর্ণ ভাবে নির্ভর করে আছে এর পাঠকদের সহযোগিতা ও অংশগ্রহণের উপর। পাঠকরাই হবেন লেখক, কবি, চিত্রশিল্পী, ফটোগ্রাফার এবং প্রযুক্তির পরামর্শদাতা। ওয়েবজিনের অন্য পাতায়, কিভাবে লেখা ও মতামত পাঠানো যাবে তা বলে দেওয়া হয়েছে। আর বেশি কথা না বাড়িয়ে বলি, যে ফলেন পরিচীয়তে—আপনারা পড়ুন, দেখুন, আপনাদের মতামত জানান, লেখার উপর, ওয়েবজিনের অঙ্গসজ্জার উপর। আপনাদের লেখা, ছবি ইত্যাদি পাঠান, আপনার পরিচতদের-ও সেটা করতে উৎসাহ দিন—তাঁরা যেখানেই থাকুন না কেন। আপাতত সীমিত হলেও ইন্টারনেটের ব্যবহার বাড়ছে এবং বাড়বে সর্বত্র। ভৌগোলিক সীমা ছাড়িয়ে, প্রযুক্তির অভিনবতাকে অতিক্রম করে যেদিন “পরবাস” আপনাদের মনকে ছুঁতে পারবে সেদিনই তা সার্থক হবে। তখনই আমরা বুক ফুলিয়ে ইতিহাসের কাছে দাবী করবো পরবাসের উল্লেখ, শুধু প্রথম ওয়েবজিন বলে নয়, একটি উঁচু মানের বাংলা ওয়েবজিনের পথিকৃৎ হিসেবে।
বর্ষা, ১৯৯৭