বিখ্যাত জার্মান প্রকাশক ছিলেন কুর্ট ওল্ফ্ (Kurt Wolff) (জন্ম ৩ মার্চ, ১৮৮৭) এবং মার্ক (Merck) হল এক বিশ্বখ্যাত ওষুধ কোম্পানী। এই কোম্পানী multiple sclerosis, ক্যান্সার, প্রজনন-সংক্রান্ত অসুখের ওষুধের জন্য সুখ্যাত। এটি জার্মানীর প্রাচীনতম কেমিক্যাল ও ফার্মাসিউটিক্যাল কোম্পানী। মার্ক পরিবারের কন্যা ছিলেন এলিজাবেথ ওল্ফ্ মার্ক, যিনি রবীন্দ্রনাথের ‘চিত্রা’ নাটকটি জার্মান ভাষায় অনুবাদ করেন এবং অনুবাদটি খ্যাতি পেয়ে যায়। কুর্ট ওল্ফ্-এর বাবা ছিলেন মিউজিকোলজির অধ্যাপক ও মিউজিসিয়ান। তাঁর মা এক ঐতিহ্যলালিত ইহুদি পরিবারের মেয়ে। ওল্ফ্-এর বয়স যখন ১৭ তখন তাঁর মা মারা যান। ধ্রুপদী মিউজিক, ধ্রুপদী জার্মান সাহিত্য ছিল এই পরিবারের লালনযোগ্য বিষয়। স্কুলের পড়া শেষ করে একবছরের জন্য ডার্মস্টাউট ও মিলিটারি সার্ভিসে যোগ দেন। এ সময়েই সাহিত্য বিষয়ক যোগাযোগ ঘটে। ওল্ফ্ মার্গবুর্গ বিশ্ববিদ্যালয়ে জার্মান সাহিত্য নিয়ে পড়া শুরু করেন, এটা চলতে থাকে লিপজিগ-এও, তবে ডিগ্রী নেওয়া হয় নি--খানিকটা রবীন্দ্রনাথের মতই। সে যাই হোক নিজেকে অ্যাকাডেমিকালি গড়ে নিলেন বাইশ বছর বয়সেই, বার করলেন গ্যেটের বন্ধু ও কবি যোহান হাইনরিশ মার্ক-এর লেখালিখির দুটি খণ্ড। ১৯০৯তেই বিয়ে করলেন ডার্মস্টাড-এর এলিজাবেথ মার্ককে যিনি পূর্বোক্ত কবির বংশধর। মার্কদের ছিল সুপরিচিত ওষুধের ব্যবসা। ওল্ফ্-এর শাশুড়ি ক্লারাও উচ্চ সমাজের সংস্কৃতিচর্চিত মহিলা, যিনি অনেক বছর ওল্ফ্কে কাজে কর্মে সুপরামর্শ দিয়েছেন। যা হোক নবদম্পতির দিন কাটত সুখে। তখন ওল্ফ্ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র, আলাপ হল আর্নস্ট রোহলট এর সঙ্গে, যে ১৯০৮এ একটা প্রকাশনা সংস্থা খুলেছিল। তার কাছ থেকে উৎসাহ পেয়ে দুজনে ১৯১০এ খুললেন প্রকাশনা। অবশ্য দু বছর পর ১৯১২ র নভেম্বর দুজনের আলাদা হওয়া। ওল্ফ্ তার পুরোনো সংস্থার নামে প্রকাশনা শুরু করলেন, ১৯১৩তে নাম বদলে হল কুর্ট ওল্ফ্ ভেরলাগ। গভীর একাগ্রতায় তা দ্রুত অগ্রসর হয়ে চলল।
এক বছরের মধ্যেই ১৫-জন কর্মী এল। তিনি ও তাদের প্রকাশনা সম্পাদক সমসময়ের সব চেয়ে সুন্দর লেখকদের লেখা প্রকাশে ব্রতী হলেন। তখন ফ্রান্ৎস কাফকার নাম হয়েছে, বন্ধু ম্যাক্সব্রড তাকে আলাপ করিয়ে দিলেন ওল্ফ্-এর সঙ্গে। মিউনিখে প্রকাশনা সংস্থা স্থানান্তরিত হল, কর্মী-সংখ্যা হল ষাট। ১৯২১এ প্রথম বিশ্বযুদ্ধ-পরবর্তী মুদ্রাস্ফীতিতে ব্যবসা মার খেল, ১৯২৯এ বিশ্বব্যাপী অর্থনৈতিক মন্দায় প্রকাশনা বিপদগ্রস্ত হল। ব্যবসাপত্র লাটে তুলে দিয়ে, জমা বই বেচে দিয়ে ১৯৩০-এ ফার্ম বন্ধ করা হল। তবে এই পরাজয়ের কারণ শুধু অর্থনৈতিক নয়, এত দ্রুতগতি বিস্তারও পতনের কারণ। এলিজাবেথ মার্ক এর সঙ্গে বিবাহ-বিচ্ছেদ ঘটল। এক দশক অপেক্ষা করলেন নতুন প্রকাশনা খোলার জন্য। এই অনিশ্চয়তার দিনগুলিতে ওল্ফ্ ইউরোপে ভ্রাম্যমান, ১৯৩৩-এ জার্মানি ত্যাগ, পুনর্বিবাহ, জেগে ওঠার নানা চেষ্টা--ইটালিতে, প্যারিসে। শেষোক্ত দেশে গ্রেপ্তার হওয়া, অন্তরীণ থাকা, শেষ পর্যন্ত আমেরিকা যাবার ভিসা লাভ, নতুন বৌ ও বাচ্চা নিয়ে পৌঁছলেন ১৯৪১এর মার্চে। কুড়ি বছর আমেরিকায় কাটানোর পর ১৯৪২-এ খুললেন নতুন প্রকাশনা—প্যান্থিয়ন বুক্স্, নিউইয়র্কে। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সূচনাপর্বেই বোরিস পাস্তেরনাকের 'ডক্টর জিভাগো'। বিশ্বযুদ্ধের পর প্রত্যাবর্তন জার্মান প্রকাশনা জগতে। ১৯৫৯তে আমেরিকার প্রকাশনা ত্যাগ করে আগমন সুইজারল্যাণ্ডে, প্যান্থিয়ন বুক্স্-এর নব পত্তন। এক মোটর দুর্ঘটনায় ১৯৬৩-এ মৃত্যু, স্টুটগার্টের কাছে।
এবার রবীন্দ্রপ্রসঙ্গ। ওল্ফ্-এর বয়স যখন মাত্র পঁচিশ তখন বন্ধু রোহলট-এর থেকে ছাড়াছাড়ি, নিজের প্রকাশনা পত্তন একথা আগেই বলেছি। নয় মাস পরে ১৯১৩ নভেম্বরে রবীন্দ্রনাথ নোবেল পুরস্কার পেলেন। ওল্ফ্ গীতাঞ্জলি ছাপানোর ব্যবস্থা করেছিলেন এই সময়টাতেই। ১৯১৪তে প্রকাশ করলেন রবীন্দ্র গদ্যকবিতার ছোট্ট একটি বই। ওল্ফ্ নিজের প্রকাশনী থেকে সম্ভাবনাময় তরুণ কবি ও গদ্যকারদের লেখা ছাপছিলেন। তিনি জার্মান এক্সপ্রেশনিজম-এর বড়ো পৃষ্ঠপোষক ছিলেন। রবীন্দ্রনাথের গীতল গদ্য জার্মান এক্সপ্রেশনিজম এর মতো নয়। তৎকালীন তরুণ জার্মানরা প্রকৃতিঘনিষ্ঠ জীবনের পক্ষপাতী হলেও রবীন্দ্রনাথের ধ্রুপদী শৈলী, ঐশ্বরিকতার সন্নিকর্ষ আবহে কিঞ্চিৎ বেমানান। কিন্তু তবুও রবীন্দ্রনাথের বইপত্র ছাপিয়ে বিক্রি করে প্রকাশক হিসেবে তিনি সন্তুষ্ট। ১৯২০ পর্যন্ত রবীন্দ্রনাথের ব্রিটিশ প্রকাশক ম্যাকমিলন কোনো বই বার করা মাত্রই তার জার্মান অনুবাদ প্রকাশ হতে থাকে এই প্রকাশনা থেকে। ১৯১৪তে বার হল ৩টি বই—গীতাঞ্জলি, দ্য গার্ডেনার, চিত্রা (এলিজাবেথ মার্ক-এর অনুবাদ)। ১৯১তে বেরোল দ্য ক্রেসেন্ট মুন। রবীন্দ্রনাথের বইপত্রের সঙ্গেই বার করা হচ্ছিল জার্মান ঔপন্যাসিক ফ্রাঙ্ক ওয়ারফেল–এর বই। যুদ্ধের কালে রবীন্দ্রনাথ এবং ওয়ারফেল–এর বই একই সঙ্গে বিজ্ঞাপিত হত। বলা হত দু লেখকের বইতেই আছে মানবতা এবং শান্তির বাণী। ১৯১৫-এর শেষ দিকটাতেই রবীন্দ্রনাথ হয়ে উঠলেন—‘শান্তির কবি, যদি শব্দের মহত্ত্বকে গুরুত্ব দেওয়া হয়’। ১৯১৬–১৭তে রবীন্দ্রনাথের কোনো নতুন বই জার্মান ভাষায় প্রকাশ পায় না। কিন্তু ১৯১৮তে মিলে গেল চারটি নতুন বই, প্রকাশক ওল্ফ্। ১৯১৯, ১৯২০তে তিনটে ছটি (??) বই, ১৯২১-এ ৭টি বই এবং রচনা সংগ্রহ ৮ খণ্ডে। তাতেও থাকল আরও দুটি নতুন অনূদিত বই। ১৯২১এ রবীন্দ্রনাথ যখন জার্মানিতে পৌছলেন তখন এই ভারতীয় কবির জনপ্রিয়তার ভিতটি পাকাপোক্ত হয়ে গেছে। যতই মুদ্রার অবমূল্যায়ন হোক কূর্ট ওল্ফ্ প্রকাশন ১৯২৩এর শেষের হিসেব মতো এক মিলিয়নের বেশি রবীন্দ্রগ্রন্থ বিক্রি করেছিল। অবমূল্যায়নে রবীন্দ্রনাথের রয়ালটির জমা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল অবশ্য। ১৯২৪এর পর কিন্তু হঠাৎ রবীন্দ্রজনপ্রিয়তা অন্তর্হিত হয়। বিপুল রবীন্দ্রগ্রন্থ পড়ে থাকে। প্রকাশক বুঝলেন পাঠকদের আগ্রহ গেছে বদলে, পূর্বী মিস্টিক্যাল কবিতা থেকে বাস্তবমনস্ক সমকালীনমুখী রচনায় সরে গেছে, যেখানে পশ্চিমী মূল্যবোধের প্রাধান্য। রাজনীতির পালাবদল, আত্মিক ও সাংস্কৃতিক সংকট, যুদ্ধে পরাজয় পাঠকচিত্তকে বদলে দিচ্ছিল। ১৯২৩এ এল দুটি নতুন বই, ১৯২৫এ রবীন্দ্রনাথের ‘গোরা’ উপন্যাস। ১৯২৬, ১৯৩০এ রবীন্দ্রনাথের পুনরাগমনেও নতুন কোনো বই বার হয়নি। কূর্ট ওল্ফ্ ইতিপূর্বে প্রকাশিত রবীন্দ্রগ্রন্থের দামী ও সস্তা দুরকম সংস্করণই বার করেছিলেন। ১৯২৯এ ম্যাকমিলন রবীন্দ্রগ্রন্থের জনপ্রিয়তা কতদূর অব্যাহত জানতে চাইলে প্রকাশক জানাল কথাসাহিত্য জার্মান ভাষায় আর না ছাপানোই ভালো। তারা নতুন বই চাইলেন না, পুনর্মুদ্রণও নয়।
মার্টিন কেম্পশেনের মতে—রবীন্দ্রনাথের স্পিরিচুয়ালিটির ধাঁচ প্রকাশক ওল্ফ্-এর কাছে তখন অদ্ভুত এবং অনধিগম্য লাগছিল। এরপর আর কোনো এ ধাঁচের ভারতীয় লেখা (ব্যতিক্রম প্রাচীন বৌদ্ধ স্তোত্র) ছাপতে আগ্রহ হারিয়ে ফেলেন। রুচির ভিন্নতা যে কারণ তা বোঝা যায় বোরিস পাস্তেরনাককে লেখা প্রকাশকের একটি চিঠি থেকে—'প্রকাশক হিসেবে যখন শুরু করেছিলাম নোবেল পুরস্কার পাওয়া কবির লেখা ছাপতে গিয়েছি স্রেফ তরুণ প্রকাশকের পয়সা হবে বলে। আমি এই প্রিয় প্রৌঢ় ভারতীয় আস্তিকের প্রতি অবজ্ঞা প্রকাশ করিনি, তবে খুব বেশি গুরুত্বও দিতে পারিনি, তাঁকে না নিয়ে আর একজনকেও পছন্দ করতে পারতাম।' ১৯৬২তে এক রেডিয়ো বক্তৃতায় অবশ্য সুর নরম করে ইউরোপীয় এবং আমেরিকান বিদ্বানদের রবীন্দ্র কবিপ্রতিভার স্বীকৃতির তালিকা পেশ করছিলেন। জার্মান বুদ্ধিজীবীদের ঔদাসীন্য অপছন্দ করেন কারণ রবীন্দ্রগ্রন্থের বিক্রি ছিল যথেষ্ট। শেষত: প্রকাশক প্রশংসা করেন রবীন্দ্র ব্যক্তিত্বের। কবিত্ব নয় দ্যুতিময় ব্যক্তিত্ব তাঁকে মুগ্ধ করে। ১৯২১এ লেখেন—'স্রষ্টা হিসেবে রবীন্দ্রনাথ খাঁটি এবং অকৃত্রিম।' ওল্ফ্ রবীন্দ্রনাথ এবং রবীন্দ্রনাথের সঙ্গে চিঠিপত্র চালিয়ে গেছেন। প্রথম দিকের (১৯১৪) তিনটি ব্যবসায়িক চিঠি অবশ্য পাওয়া গেছে। ১৯২১–এ চিঠিপত্রে রবীন্দ্রের জার্মানীতে আসা নিয়ে। এ সময় প্রকাশক রবীন্দ্রনাথের নানা জার্মান অনুবাদ প্রসঙ্গের কিছু বিক্ষিপ্ত চিন্তার একটি সংকলন প্রকাশ করেন। এই ভ্রমণ যে বই বিক্রি বাড়াতে সাহায্য করবে প্রকাশকের তাতে সংশয় ছিল না। ১৯২১, ৫ জুন রবীন্দ্রনাথ ও সঙ্গীরা বার্লিনে পৌঁছালে ওল্ফ্ তার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন মিউনিখে, এক সঙ্গে লাঞ্চ করেন, বিকেলে শহর বেড়াতে যান। এর পর ডিনার। ৮ জুন রবীন্দ্রনাথ ওল্ফ্-এর বিরাট প্রকাশনা বাড়িতে গণ্যমান্য অতিথিদের উপস্থিতিতে (যাতে টমাস মান-ও ছিলেন) বক্তৃতা দেন। কবির মহান আভিজাত্য, আকর্ষণীয় চেহারা তাঁকে মুগ্ধ করে। তাঁর মেয়ে বলে—যেন ঈশ্বর এসেছেন দেখা দিতে। বার্দ্ধক্যে যে স্মৃতিকথা লেখেন তাতে প্রাসঙ্গিক অংশ এইরকম—‘তারপর সেই ভারতীয় দুপুরে খাওয়ার জন্য এলেন একাকী আমাদের কনিজিনস্ট্রাসের বাড়িতে অনুরোধে। তাঁর পোষাক ছিল ভারতীয়। যতদূর জানি তনি কখনও পশ্চিমী পোশাক পরেন নি। দীর্ঘ ধূসরশ্বেতশ্মশ্রুমণ্ডিত তাকে দেখে অবাক লাগছিল, বেশ আভিজাত্য ছিল। আমার তিন বছরের কন্যাটির কাছে খুবই স্বাভাবিক লাগছিল যখন তিনি তাকে কোলে নিলেন, মনে হল আমাদের ঈশ্বর আমাদের কাছে এসেছেন। কোলে বসে কন্যা স্বস্তি, ও যখন তিনি তাকে কোলে নিলেন, মনে সন্তোষ বোধ করছিল। ঠাকুর মহাশয়ের আচার আচরণে নাটকীয় কিছু ছিল না। তিনি খুব সহজ শব্দে কথা বলছিলেন। আমরা টেবিলে ছিলাম। তিনি সব জায়গায় যা খান তাই খাচ্ছিলেন, সুরা সেবন করলেন না। প্রথম থেকেই আমাদের কথাবার্তা ছিল স্বাভাবিক, আটপৌরে কিন্তু অসৌজন্যময় ছিল না।’ এলিজাবেথ ওল্ফ্ মার্ক-এর ‘চিত্রা’ অনুবাদ রবীন্দ্র শতবার্ষিকীতে পুনর্মুদ্রিত হয়। কাইজারলিং-রবীন্দ্র কথোপকথন আবার গবেষকদের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে। ওল্ফ্-এর স্মৃতিকথা থেকে আর একটা কথা জানা যায়। ১৯১৪তে বিখ্যাত কবি রাইনের মারিয়া রিলকের সঙ্গে চিঠি বিনিময় হয়েছিল প্রকাশকের। উদ্দেশ্য রবীন্দ্র রচনার অনুবাদ বিষয়ে ওঁকে অনুরোধ করা। রিলকের মনে এই ভারতীয় প্রজ্ঞাবানের প্রতি বিপুল শ্রদ্ধা থাকা সত্ত্বেও তিনি অনুবাদে রাজি হন নি। রিলকে মনে করলেন মূল ভাষার যাবতীয় প্রকৃতিকে তিনি জার্মান ভাষায় আনতে পারবেন না। ওল্ফ্-এর ১৯৬২ রেডিও বক্তৃতার শেষে প্রণিধানযোগ্য একটি কথা ছিল। তা হল প্রাচ্যদর্শন ও কবিতা বিষয়ে একটা দূরায়ত আগ্রহ ছিল। কিন্তু প্রাচ্য কবি যখন তাঁর বিশ্বজনীন ধর্মীয়তা নিয়ে, নৈতিক বিশ্বাস নিয়ে এলেন শিক্ষা দেবার জন্য নয়, কবিতা প্রভৃতিকে শুধুমাত্র হাজির করলেন কোনো প্রত্যাশা না রেখেই, তাতে ফুটে উঠল এক নব সারল্য, যা ঠিক আদর্শ প্রচার নয়, নব মানব জ্ঞানের আধার যা প্রাচ্য সৌন্দর্যের সতেজতার সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিচ্ছে। লোকে যখন পড়ছে তখন যুক্তির অতীত এক যাদু কাজ করছে। একটা গোপন রহস্যময় শক্তি সঞ্চার হয়। এই কবির কবিতা এমন এক বিরল গুণের অধিকারী যাতে স্রষ্টা একাকার হয়ে যায়। কবি তখন দৈবী গুরুত্ব পেয়ে যান। এই মন্তব্যে রবীন্দ্র বিচারের নতুন দিক জেগে ওঠে।
কেম্পশেন জানাচ্ছেন রবীন্দ্র অনুবাদের জন্য ওল্ফ্ একাধিক অনুবাদক ঠিক করেছিলেন। গীতাঞ্জলি অনুবাদ করেন মারি লুইস গথেইন, তার ছেলে সহকারী ছিল। ওল্ফ্-এর স্ত্রী মার্ক অনুবাদ করেছিলেন ‘চিত্রা’ বা চিত্রাঙ্গদা নাটক। মার্ক এর বোন আনমারি ভন পুটকাসের কিছু গদ্য অনুবাদ করেছিলেন। এছাড়া অনুবাদক ছিলেন হানস এফেনবার্গার, হেডউইগ লাচমান, গুস্তাভ লাণ্ডোয়ের, এমিল এঙ্গেলহার্ড। সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য অনুবাদক ছিলেন – হেলেন মায়ার ফ্রাঙ্ক।