'বাইশে শ্রাবণ' হাতে পেয়েছিলাম স্কুল থেকে ১৯৬৬ সালের ৯ জুলাই স্কুলজীবনের শেষ টেস্ট পরীক্ষায় সাফল্যের জন্য উপহার হিসেবে। সেই বইখানি আমার কাছে অমূল্য রত্নস্বরূপ। কতবার যে পড়েছি! তবু বারংবার নতুন পাঠ নিতে পারি সেটি থেকে! লেখিকা নির্মলকুমারী মহলানবিশ সহজ কথায় স্পষ্ট ছবির মতো এঁকেছেন তাঁর সঙ্গে কবির সম্পর্কের নিবিড়তা এবং সেই সঙ্গে কবির জীবনে শেষ দিনটি আসার আগের দিনগুলিতে কবির নিজের এবং তাঁর ঘনিষ্ঠ মহলের মানুষজনের অকৃত্রিম উদ্বেগজনিত আচরণাদি ও কর্মব্যস্ততার বাস্তবতা তিনি পাঠকের অনুভবের জন্য চিরকালের জন্য ভাষায় রূপ দিয়ে গেছেন লেখার অভিজ্ঞতায় নিপুণ লেখিকার মতোই। কবির স্বভাবধর্মের বেশ কিছু অজানা দিকও তিনি উদ্ঘাটন করেছেন অনাড়ম্বর প্রকাশভঙ্গিতে। সেসবের থেকে বেছে নিয়ে কবির চলে যাওয়ার আগের কিছু দিনে লেখিকার পর্যবেক্ষিত বিশ্বকবির কিছু বিশিষ্টতার কথা এখানে তুলে ধরা হল।
কবি তাঁর পুত্রবধূ প্রতিমা দেবীকে বলেছিলেন, "যে আমার কাছে আসে তাকে আমি কিছু দিতে চেষ্টা করি কেবল তার সেবা নেব, এ আমার ধর্ম নয়। আমার মধ্যে যা বিশুদ্ধ, যা উত্তম তাদের আমি দিয়ে যেতে চাই।" তাঁর সেই চাওয়া সত্য হয়েছিল নির্মলকুমারীর জীবনে যাঁকে প্রতিমা দেবী বলেছিলেন 'তুমি একজন, যে তাঁর অন্তরের কাছে এসেছিলে।' লেখিকা সত্যিই পেয়েছিলেন বিশ্বকবির অন্তরের আশীর্বাদ তা নাহলে "বাইশে শ্রাবণ" হয়ত সৃষ্টি হতে পারত না, যে বইখানি বাংলা সাহিত্যের ভাণ্ডারে একটি অমূল্য সংযোজন।
|| ১ ||
বাংলা ১৩৬৬ সালের ২২শে শ্রাবণে পূর্ণ হয়েছিল বাংলার রবি অস্তাচলে যাওয়ার আঠারো বছর যেদিন আর অবশিষ্ট থাকতে দেখা যায়নি, বাইশে শ্রাবণের বেদনাধারার ঘন বর্ষণের রেশ। সেদিন একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন আলোড়ন তুলেছিল গুরুদেবের অকৃত্রিম স্নেহ-পরশে বিকশিত আত্মার অধিকারী নির্মলকুমারীর মনে: "তাঁর দৃষ্টি দিয়ে আমরা দেখেছি, তাঁর শ্রবণ দিয়ে আমরা শুনেছি, তাঁর বাক্য দিয়ে আমরা মনের ভাব প্রকাশ করবার চেষ্টা করেছি কিন্তু তাঁর জীবনের সাধনার ধারাটিকে কি অনুসরণ করবার দিকে মন দিয়েছি?" কবিগুরুর মহাপ্রস্থানের পর আরও কতকাল কাটল? আজও একই প্রশ্নের অসহনীয় প্রাসঙ্গিকতা আমাদের পীড়িত করে নিরন্তর। তাঁকে আমরা পূজা-বন্দনাই করে চলেছি নানাভাবে কিন্তু তাঁর কর্ম-সাধনার পথে চলতে শিখছি না, শিখিনি যেন এক-পাও। আজ গ্রামজীবন, দেশীয় শিল্প-সংস্কৃতি ও উত্তরাধিকার হারাতে বসেছি আমরা কিছুমাত্র লজ্জাবোধ না করে। তিনি গ্রাম ও শহরজীবনের বিচ্ছেদ ভাবনায় কাতর হয়ে, দেশীয় শিল্প-সংস্কৃতি বাঁচানোর তাগিদে শান্তিনিকেতন ও শ্রীনিকেতন গড়েছিলেন। শ্রীনিকেতনের নামও আজ কারও মুখে উচ্চারিত হয় না। বিশ্বভারতীর পতন-সংবাদ আজ দৈনিক সংবাদপত্রে নিত্য ঠাঁই পায়। তাঁর সারাজীবনের লড়াইকে আমরা চিনি নি, জানি নি। কেবল তাঁর বাণী উদ্ধৃত করেই সব কাজ সারা করতে পাকাপোক্ত হয়েছি বহুকাল ধরে; এখনও চলছে যার ধারা অবিরাম গতিতে। এই আত্মবিস্মৃতি ক্ষমার অযোগ্য তবুও আমরা বাঙালিরা 'ভূরি পরিমাণ বাক্য রচনা'তেই কাল কাটিয়ে চলেছি 'তিল পরিমাণ আত্মত্যাগে' আমাদের বড়ই অনীহা। অথচ রবীন্দ্র-পূজারীরা ভালভাবেই জানেন যে, 'তাঁর লেখা এবং দৈনন্দিন জীবনটার মধ্যে কোনো ঐকান্তিক ভেদ ছিল না।' জেনেও সে পথে গেলে হারানোর ক্ষতি মেনে নিতে তারা নিতান্তই নারাজ।
নির্মলকুমারী জানিয়েছেন, 'ঘরোয়া রবীন্দ্রনাথ'কে কাছে থেকে দেখে তাঁরা অনেকেই বুঝে নিয়েছিলেন 'যে আদর্শ লেখায় প্রচার করেছেন সেই আদর্শ শেষদিন পর্যন্ত জীবনেও পালন করেছেন' বিশ্বভারতী-স্রষ্টা কবি। নিজের জীবন দিয়ে 'অস্তিত্বের সত্য মূল্য কোথায় তিনি তা দেখিয়ে দিয়ে গেছেন দেশবাসীকে। লেখিকা গ্রন্থশেষে আবেদন জানিয়ে রেখে গেছেন—"যারা তাঁকে দেখেননি, কোনোদিনও দেখবে না, তারা যেন আমাদের চোখের ভিতর দিয়ে তাঁর সত্যরূপটি দেখতে পায়; নিজেদের অযোগ্যতাবশতঃ কোথাও যেন সে ছবিটিকে ম্লান না করি - এইমাত্র কামনা।"
তাঁর চাওয়াকে মান্যতা দিয়ে তাঁর অন্তর দিয়ে চেনা-জানা রবীন্দ্রনাথকে কাছ থেকে দেখে তিনি যা অনুভব করেছিলেন সেগুলি আজ আমাদের অনুভবে বিধৃত করে নেওয়ার প্রয়াস গ্রহণ করা যাক।
|| ২ ||
বাংলার আকাশে সূর্যের মতোই যিনি জ্বলজ্বলে মূর্তিতে দীপ্যমান থেকে জীবনযাপন করে গেছেন সেই 'রবি' নামধারী মানুষটির কত না-জানা চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য আমরা জেনে নিতে পেরেছি তাঁর প্রাণালোকের স্পর্শে ধন্য প্রিয়তম মানুষটির লেখা থেকে! কিছু এখানে উল্লেখ করা হল —
১৯৩৭ সালে চোখ জুড়ানো সোনালী রঙের দেহধারী মানুষটির দেহে প্রথম রোগ-লক্ষণ দেখা দেয়। বিশ্রামের প্রয়োজন হল। কিন্তু সেদিকে তাঁর মন নেই। উপরন্তু দর্শনার্থীর বিপুল সংখ্যাকে নিয়ন্ত্রণ করার প্রয়োজনও তাঁকে বোঝানো দায়। 'শরীরের দোহাই পাড়লে' যা বলতেন তা শিক্ষণীয় তো বটেই একই সঙ্গে অবিশ্বাস্যরকমের অভিনব — "যারা মানী লোক তাদের ফিরিয়ে দিতে আমার দ্বিধা হয় না, কিন্তু যারা অতি অভাজন, যাদের সকলেই অনায়াসে অবজ্ঞা করতে পারে, তাদেরকে দেখা হবে না বলতে আমি পারিনে। আমি জানি এতে আমার সময় নষ্ট হয়, বিশ্রামের ব্যাঘাত ঘটে, কিন্তু উপায় কি বলো?" বিশ্ব-বন্দিত মানুষটির এই নিরুপায়-ভাবনা আজ যাদের মনে আলোড়ন তুলতে পারে, দুঃখের বিষয়, তেমন মানুষের সংখ্যা ক্রমেই হ্রাসমান।
জীবনকে বিরামহীন কর্মময় করে তুলেছিলেন লেখার অবিশ্রান্ত ফোয়ারা ঝরিয়ে চলার পাশাপাশি। জীবনে বারে বারে পেয়েছেন প্রিয়জনের মৃত্যু-শোক। তবুও কর্মশক্তিতে ভাঁটা পড়তে দেন নি। পুত্র শমীন্দ্র অকালে চলে গেলে বলে উঠতে পেরেছিলেন সহজ সত্য প্রকাশের ভঙ্গিতে — "শমী যে রাত্রে গেল তার পরের রাত্রে রেলে আসতে আসতে দেখলুম জ্যোৎস্নায় আকাশ ভেসে যাচ্চে, কোথাও কিছু-কম পড়েছে তার লক্ষণ নেই। মন বললে কম পড়েনি — সমস্তের মধ্যে সবই রয়ে গেছে, আমিও তারি মধ্যে। সমস্তর জন্য আমার কাজও বাকি রইল। যতদিন আছি সেই কাজের ধারা চলতে থাকবে। সাহস যেন থাকে, অবসাদ যেন না আসে, কোনোখানে কোনো সূত্র যেন ছিন্ন না হয়ে যায় ....।"
১৯৪১ সাল তাঁর চলে যাওয়ার সন। খুবই অসুস্থ তিনি তখন। তাঁর পুরনো সেবক বনমালী দেশ থেকে ফিরে স্নান সেরে পরিচ্ছন্ন বেশে তাঁর সামনে যাবেন বলে দেরি হল তাঁর সঙ্গে দেখা করতে। কবি ব্যস্ত হয়ে পড়লেন — কেন বনমালী আসছে না? তাঁর সেই অতি চাঞ্চল্যভরা ব্যস্ততার হেতু অতঃপর তিনি প্রকাশ করলেন — "বনমালী কেন আমার কাছে আসছে না? তার জমি নিলাম হয়ে যাচ্ছিলো, তার কী ব্যবস্থা হল জানতে চাই।" ভৃত্য-সেবকের জন্য এতখানি উতলা হওয়া কি তাঁকে মানায়? — সে ভাবনা ভাবতে তিনি পারেননি!
অসুস্থ, ক্লান্ত শরীরে চিকিৎসার বিবিধ উৎপীড়ন সইতে হচ্ছে। সহ্য করতে হচ্ছে মৃত্যুযন্ত্রণা। কিন্তু তাই বলে তাঁর কাছে-পিঠে থাকা প্রিয়জনেরা বিব্রত, চিন্তাভারাক্রান্ত মুখে পাশে ঘুর ঘুর করবেন সে চিত্র দেখতে তিনি নিতান্তই বিমুখ। তাদের হাসি-কৌতুকে, আনন্দ-খুশিতে ঝলমলে রূপে দেখতে চান তিনি। সে দায়-ভার নিজেই তুলে নিয়েছিলেন কাঁধে। নির্মলকুমারী লিখেছেন, "প্রিয়জনের মৃত্যুবেদনা কী রকম শান্ত চিত্তে গ্রহণ করতে হয় তাও যেমন দেখেছি, নিজের মৃত্যু-যন্ত্রণা কী রকম ধৈর্য্যের সঙ্গে বহন করতে হয় তাও দেখলাম।" একদিন নির্মলকুমারী কবির শয্যার পাশে এসে জানালেন বিমর্ষমুখে — আজ তিনি ট্রেনের তলায় চাপা পড়তে পড়তে বেঁচে ফিরেছেন উদ্বিগ্ন মন নিয়ে কবির কাছে আসার পথে। কবি তাঁর বিষন্নতা-বিপন্নতা কাটাবার জন্য বললেন, "বলো কি? তার চেয়ে আমার জন্যে কিছু টাকা দিলে পারতে। সে গল্প জানো না বুঝি? একজন আর একজনকে বলছে এ-তো প্রাণ নয় যে দিয়ে ফেললেই হ'ল, এ হচ্ছে টাকা! দেওয়া অত সহজ নয়।" লেখিকার মনের সব কষ্ট ধুয়ে-মুছে গেল বাঁধন-হারা হাসিতে সে রসিকতা শোনার পর।
আনন্দলোকে নিমন্ত্রণ জানাতেই এসেছিলেন সবাইকে বুঝি এই ধরাধামে তিনি! তাই রোগাক্রান্ত জীবনের দিনকটিতেও বিষাদ-ঘন, গম্ভীর পরিবেশ সইতে পারতেন না। নির্মলকুমারী তাঁদের পুরনো ভৃত্য রামচরিতকে কবির পরিচর্যার কাজে নিযুক্ত করলেন কবির প্রিয় সেবক বনমালী বয়সের ভারে অশক্ত হয়ে পড়েছে বলে। কবি কিন্তু বললেন, "ঐ গুণের চাকরকে তুমি ফিরিয়ে নাও। ... কোনো ঠাট্টা-তামাশা ওর সঙ্গে করতে পারিনে, ঠাট্টা করলে ও হাসতে জানে না, শুধু কাজ নিয়ে আমি কি করবো? আমার 'লীলমণি' (বনমালী) আর কিছু পারুক না পারুক পেট ভরে হাসতে জানে, ঠাট্টায় যোগ দেয় — তাই ওর সঙ্গে কথা বলে আমি আনন্দ পাই।" লেখিকা জানিয়েছেন, 'খুব কাজের' ভৃত্য রামচরিতের 'দোষের মধ্যে একটু গম্ভীর মুখ এবং একজোড়া প্রকাণ্ড গোঁফ, তাতে আরো যেন মুখটা অন্ধকার দেখাতো।'
গুরুতর অসুস্থ অবস্থাতে মৃত্যুর মাত্র দশ-বারো দিন আগে পর পর দুটি কবিতা লিখে ফেলে নিজেই নিজেকে নিয়ে মশ্করা করতে পেরেছিলেন 'মৃত্যুর নিপুণ শিল্প বিকীর্ণ আঁধারে'-র মুখোমুখি দাঁড়িয়েও — "এটা পাগলামি না তো কি? এর কি কোনো শেষ নেই?" কবিতা দুটির একটির শুরু হল — "প্রথম দিনের সূর্য / প্রশ্ন করেছিল" এবং অপরটির প্রথম দুটি বাক্য হল — "দুঃখের আঁধার রাত্রি বারে বারে / এসেছে আমার দ্বারে;"।
লেখিকার স্বামী 'বৈজ্ঞানিক - অধ্যাপক' প্রশান্তচন্দ্র মহলানবিশকে কবি বলেছিলেন, "যখন দেখলুম সত্যি কাজের চেয়েও নামের নেশা বেশী, কি কাজ হ'ল তার চেয়েও কে করেছে সেইটাই বড়ো কথা, তখন বুঝলুম আমার ওর মধ্যে থেকে সময় নষ্ট করলে চলবে না, তাই সরে দাঁড়ালুম। এই দলাদলির বিষই আমাদের মেরেছে। অনেক লোককে আমি দেখেছি যাদের মনোভাব হচ্ছে তার দ্বারা কিংবা তার দলের দ্বারা যদি স্বদেশ উদ্ধার না হয় তাহলে অন্য কারও দ্বারায়ও হয়ে দরকার নেই। দেশের লোকের ভালো হোক এটার চেয়েও বড়ো কথা আমার দ্বারা বা আমার দলের দ্বারা সেই ভালো হল কি না। এরকম জায়গায় কখনও আমি থাকতে পারি?" স্বদেশী যুগে রাজনৈতিক আন্দোলনে যোগ দিয়েও কেন সরে এলেন তার কৈফিয়ত কবি এভাবেই দিয়েছিলেন। "বাইশে শ্রাবণ" বইতে এই তথ্য জানিয়েছেন লেখিকা। পড়তে পড়তে আক্ষেপ জাগে প্রাণে — একই কথা আজও দেশবাসীকে নিদারুণ ক্ষোভে বলে যেতে হচ্ছে! ছবিটা বদলান গেল না! কেন?
তাঁর মন যেন সত্যকে জানতে পারত মাধ্যম ছাড়াই। যেখানে যেতে তাঁর মন চায়নি সেখানে গেলে ক্ষতিই হয়েছে। দেহে অস্ত্রোপচার চান নি। তবুও তা করা হল এবং তাতে কোন লাভ হল না। তাঁর চলে যাওয়া যেন আরও ত্বরান্বিত হল। তিনি আরো চান নি "কলকাতার উন্মত্ত কোলাহলের মধ্যে, 'জয় বিশ্বকবি কি জয়, জয় রবীন্দ্রনাথের জয়, বন্দেমাতরম্' — এই রকম জয়ধ্বনির মধ্যে যেন তার জীবনের সমাপ্তি ঘটে।" তিনি শান্তিনিকেতনেই তাঁর শেষ শয়ান ঘটুক চেয়েছিলেন। তাঁর সে ইচ্ছে পূরণ করা হয়নি। বড় বড় মানুষদের মরদেহ দখল করে নেওয়ার এমন 'মহাখেলা' আজও চলে, দেখা যায়! হায় কবি!
না, আক্ষেপেই শেষ না হোক আমাদের বাইশে শ্রাবণের অনুভবজাত প্রত্যয়। বরং তিনি কবি হিসেবে সেদিন যা চেয়েছিলেন তাঁর সেই চাওয়াই হোক আমাদেরও চাওয়ার ধন: "আমি কবি, আমার সবচেয়ে বড়ো কাজ দেশের লোকের দৃষ্টি যাতে ভালোমন্দর তফাতটা পরিষ্কার দেখতে পায় সেই সাধনায় আত্মনিয়োগ করা, চরিত্রের মর্যাদা যেখানে খর্ব হয় সেখানে দেখিয়ে দিতে পারা আসল গৌরবটা কি। সবচেয়ে বড়ো কাজ সত্যের আহ্বানে সাড়া দিতে পারার মতো চেতনা জাগানো।"
আর সেইসঙ্গে বাইশে শ্রাবণ-কে যিনি পূর্ণ মর্যাদা দিতে শিখিয়েছেন সেই লেখিকার আশার সঙ্গে আমাদের আশাকে মিলিয়ে দিয়ে বলা যাক — "সমস্ত দেশ আবার আপন মর্যাদা ফিরে পাবে — সেজন্যে এই দুর্যোগের রাত্রির অন্ধকারের মধ্যে আশা করে প্রতীক্ষা করে থাকব।" একালের দুর্নীতি-দুষ্কৃতি-নির্ভর পথভ্রষ্টদের তৈরি করা দুর্দিনের অবসান দেশে ঘটবেই একদিন যেদিন অস্তমিত রবির কিরণচ্ছটায় আবার আলোময় হয়ে উঠবে বাংলার তথা সমগ্র দেশের মলিনতামুক্ত হাসিভরা আকাশ আর সেদিনই কেবল এতদিনের নিরর্থক রবি-পূজা সার্থকতা লাভ করবে।
'বাইশে শ্রাবণ'; নির্মলকুমারী মহলানবিশ।