গতরাতে পুড়ে গেছে বিস্তৃত অরণ্যের কিছু সবুজ ।
মাথা উঁচু ইউক্যালিপ্টাসের সুবাসিত হাতছানির বদলে
এখন দেখবে দাঁড়িয়ে থাকা কাঠকয়লার ভিখারির বেশ ...
ধূলায় আচ্ছন্ন আকাশ দেখলে হঠাৎ ভুল করে মনে
হতেও পারে, হয়তো কালবৈশাখী ...
চরাচর ছাপিয়ে ছুটে আসছে একটুখানি বৃষ্টির মতো
স্বস্তির মেঘ সাথে করে ... যদিও বৈশাখ তো অনেক দূর ...
আসলে ছুটে এসেছিল, শতাব্দীর খিদে পেটে ধরে ...
চলন্ত উনুনের মতো আগুন ... আগুন !
ঘুমাচ্ছিলে তুমি অবলীলায়, অকাতরে, আশ্লেষে ...
অন্ধকারে গাঢ় থেকে গাঢ়তর তোমার নিশ্বাস প্রশ্বাস ...
কুয়াশার মতো ঘুরছিলো আমাকে ঘিরে --
আমার মনে তোমার প্রায় কিশোর মুখের খোঁচা খোঁচা দাড়ি
আর ওই যে পাহাড়ের ওপরের সর্পিল রাস্তায় পলাশগাছের সারি ...
একটা নদীও সামনে আসে গাছপালা সরিয়ে মুগ্ধ আবিষ্কারের মতো
স্বচ্ছ পানিতে নির্জনতার ঘোর লাগা শব্দ ...
স্বপ্নের পোড়া গন্ধে তন্দ্রা ছিঁড়ে যায় ...
জানালায় জ্বোরো রোগীর বিস্বাদ আর ম্লান মুখ নিয়ে সূর্যটা
উঁকিঝুঁকি দিয়ে চলে যায়, কিছু ঠিক নেই, তবু আমি আছি ।
তখনো তুমি মোহাবিষ্ট, তখনো তোমার ঠোঁটে পাতলা হাসি
আর চিরল চোখের পাপড়িতে আসন্ন দুপুরের মাদকতা ...
আমার কেমন শীত করে ওঠে যেন,
গাছপোড়া ধোঁয়াগুলো হঠাৎ কুয়াশা হয়ে যায় ...
আমি তোমার কোলে মুখ লুকাই ... আমার বুকে ছাইয়ের গন্ধ ...
আমার দাঁতের ফাঁকে বালির মতন ছাই কিচ কিচ ...
ছাইয়ের গাদায় বাষ্পীভূত আমার চোখের জল ...
আজ দিনটা ক্লান্ত হলে যখন আমি ফিরবো তোমার কাছে,
তোমার কাছে ফিরবো কি ?
তোমার বুকে লেপটে থাকবে অন্য নারীর সুরভি,
করতলে তার স্পর্শ, ঠোঁটে তার স্বাদ, চোখে স্মৃতি ।
এই মলিন সকালের ছোট্ট একটা আলিঙ্গনের অস্থিরতা,
সে তখন গতজন্মের স্মৃতি,
যেমন ভুলে গেছ বইয়ের মধ্যে শুকনো ফুল ।
দু:খের কোনো নির্দিষ্ট রং নেই, কেউ বলে লাল, কেউ ভাবে গেরুয়া ...
আমি দেখি পুড়ে যাওয়া অতীতটুকু, পড়ে থাকা স্বপ্নটুকু,
ছাই হয়ে ঘুরপাক ঘুরপাক ... ঘূর্ণিঝড় যেন ...
কী বলবো আর, শুধু বলে রাখা,
গতরাতে পুড়ে গেছে, বিস্তৃত অরণ্যের খানিকটা সবুজ ।