• Parabaas
    Parabaas : পরবাস : বাংলা ভাষা, সাহিত্য ও সংস্কৃতি
  • পরবাস | সংখ্যা ২৯ | মার্চ ২০০৩ | রম্যরচনা
    Share
  • ছেঁড়া কোলাজ : এনাদ নাট্যগোষ্ঠী

    চরিত্র :
    =====

    নিখিল : বড়ভাই, (অ্যামেরিকাপ্রবাসী)
    নিলয় : ছোটভাই, (কলকাতাবাসী)
    পলাশ : নিখিলের বন্ধু ১
    অরূপ : নিখিলের বন্ধু ২
    জ্যাক : নিখিলের সকার পার্টনার
    সাজিদ ভাই : রিয়াল এস্টেট এজেন্ট
    পার্থ : নিখিল-পলাশের কলেজের বন্ধু, পোস্ট ডক স্টুডেন্ট
    জ্যাঠা : নিলয়-ঝুমুরের পাড়াতুতো জ্যাঠা


    নন্দিনী : নিখিলের বৌ
    ঝুমুর : নিলয়ের বৌ
    রীতা : পলাশের বৌ
    ঝিমলি : অরূপের বৌ







    ॥ প্রথম দৃশ্য ॥



    [ দেশের আধুনিক ড্রয়িং রুম । নিলয়, ঝুমুর বাইরে থেকে ঢোকে । ঝুমুর খুব উত্ফুল্ল, গুনগুন করতে করতে ঢোকে সে । ]

    ঝুমুর (গুনগুন করতে করতে) : হুঁ হুঁ হুঁ হুঁ ... নাচেরে আজিকে মযূরের মতো নাচেরে .. নাচেরে ...

    [ এক পাক ঘুরে আসে উল্লসিত ভঙ্গিতে । ]

    উফ্‌, আর মাত্র দুদিন মাঝখানে, তারপরই আমরা ভাইজাগে বেড়াতে যাচ্ছি । হাম অর তুম !! সেই কবে থেকে দিদি-প্রদীপদা বলে বলে হয়রাণ, বাবুর আর সময় হয় না !

    নিলয় : সময় হল না তো যাচ্ছি কি করে ?

    ঝুমুর : সে কি আর সহজে হয়েছে ? তিনমাস ধরে কানের কাছে ঘ্যানঘ্যান করে, চপচপে করে তেল লাগিয়ে লাগিয়ে, ভালমন্দ খাইয়ে দাইয়ে.. শোনো, ওখানে কি খুব ঠাণ্ডা এখন ?

    নিলয় : সমুদ্রের ধারে তো, মনে হয় না খুব ঠাণ্ডা --

    ঝুমুর : তাও দুটো ব্লেজার কিনে নিই, কি বলো ?

    নিলয় : দুটো ওভারকোটও কিনে নিই, কি বলো ?

    ঝুমুর : সবটাতে তোমার ইয়ার্কি । আমরা কি সিমলা যাচ্ছি নাকি ?

    [ নিলয় কথাবার্তার ফাঁকে ফাঁকে কাগজ গোছাচ্ছিল । সুটকেস খোলে । ]

    নিলয় : যাবার আগে কনট্রাযাক্টগুলোর কাগজপত্তর ঠিকমতো গুছিয়ে যেতে হবে ।

    [ ধপ করে সুটকেস বন্ধ করে । ]

    ঝুমুর : আর একবারও কাজের কথা নয় । বেড়াতে যাবার আগে শেষ কাজ তো করে এলাম - বাবাকে অ্যামেরিকার ফ্লাইটে তুলে দেওয়া । এখন উনি দাদাদের গুড হ্যাণ্ডস-এ । আর আমাদের এখন শুধু অকাজ !

    নিলয় : হ্যাঁ, বাবা ভালোয় ভালোয় পৌঁছলে নিশ্চিন্ত । চারদিকে যা প্লেনঘটিত ব্যাপারস্যাপার চলছে ।

    ঝুমুর : কুডাক ডেকো না তো । প্রতিদিন শয়ে শয়ে লোক যাচ্ছে, বাবারই তো এটা থার্ড টাইম । - অ্যাই, তুমি আজ আর বেরোবে না তো ?

    নিলয় : দাদাকে একটা আই এস ডি সেরে একবার আমহার্স্ট স্ট্রীটের ক্লায়েন্টের সংগে কথা বলতে যেতে হবে ।

    [ ঝুমুর অভিমানী ভঙ্গিতে তাকায় । ]

    ঝুমুর : উঁ ?

    নিলয় : কি হলো আবার ?

    ঝুমুর : তুমি যে বললে ভাইজাগ থেকে একবারে ফিরে কাজ শুরু করবে ?

    নিলয় : হ্যাঁ, হ্যাঁ - তাই তো করছি । ছোটখাটো দু-একটা যা বাকি আছে, সেগুলো কমপ্লিট করতে হবে তো । ঝুমুররানী, এইসব নিয়ে রাগ করতে নেই !

    ঝুমুর : (অভিমান ভুলে) আচ্ছা -- কিন্তু সন্ধের আগে ফিরতে হবে বাড়িতে ।

    নিলয় : সে আর বলতে । একটু দেরি হলে ওয়েট কোরো ।

    ঝুমুর : সে তো করিই । ওয়েট ছাড়া আর কোন্‌ কাজ করি আজকাল, বলো ?

    নিলয় : আবার রাগ, না ? আরে বাবা, আমার তো ব্যবসা । চাকরি তো নয় । দশটা-পাঁচটার চাকরি যদি তোমার বর করতো, তাহলে দেখতে, মহারানীর চরণে টোয়েন্টি ফোর আওয়ার্সই --

    ঝুমুর : তোমার দিনগুলো তাহলে বত্তিরিশ ঘন্টার হতে হতো । বাজে না বকে দাদাকে ফোন করার, করে নাও সেটা ।

    ঝুমুর : ঝুমুররানী, এক কাপ চা !

    ঝুমুর : এই নিয়ে চারবার হলো সকাল থেকে ।

    [ বাইরে থেকে কাসির আওয়াজ । পাড়াতুতো জ্যাঠামশাই ঢোকেন । নিলয়ের বাবার কাছ থেকে তিনি মাঝে মাঝে হোমিওপ্যাথি ওষুধ নিতে আসতেন । ]

    জ্যাঠামশাই : নিলয় ! বাড়ি আছো নাকি ?

    নিলয় : ঐ রামজ্যাঠা এসেছেন ! চায়ের নাম করতে না করতেই - হেবি টাইমিং ওনার, স্বীকার করতেই হবে ।

    ঝুমুর : রোজই উনি এই সময় আসেন । বাবার সংগে গল্পগুজব করেন, মানে উনিই বক্তা আরকি, আর বাবা মাঝে মধ্যে হুঁ হাঁ করেন, তারপর উনি হোমিওপ্যাথি ওষুধ নিয়ে চলে যান ।

    আসুন রামজ্যাঠা ।

    জ্যাঠা : এই যে নিলয় ! নেপেনকে তাহলে চড়িয়ে দিয়েই এলে !

    [ ঝুমুর নিলয় কথার রকমে একটু অস্বস্তিতে মুখ চাওয়াচাওয়ি করে । ]

    মানে প্লেনে ।

    নিলয় : হ্যাঁ, তুলে দিলাম এলাম প্লেনে ।

    জ্যাঠা : আমি এই পথেই যাচ্ছিলাম, ভাবলাম একটু খোঁজটা নিয়েই যাই । পাড়ার মধ্যে একজনের বিদেশভ্রমণ, সে কি কম কথা । হেঁ হেঁ হেঁ ...

    (বসে পড়ে)

    ওহে নটিনী, একটু চা চলবে নাকি ?

    নিলয় : না না ও হচ্ছে ঝুমুর । নন্দিনী তো বৌদির নাম ।

    জ্যাঠা : তুমি পাড়ার বৌমাদের নাম আমায় শিখিয়ো না বাপু । আমি তাদের নাম ধরে ডাকি না, গুণ ধরে ডাকি । তোমার বৌ নৃত্যবিশারদ, তাই তাকে ডাকি নটিনী ।

    ঝুমুর : আচ্ছা চা করে আনি ।

    জ্যাঠা : তা বিয়ের বাজারে দাম বাড়া ছাড়া নৃত্যবিশারদ হয়ে যে লাভ কি হয় । সেখানেও অবশ্য সংগীতবিশারদরা এখনো কম্পিটিশনে এগিয়ে আছে ।

    [ নিলয় মাথা নাড়ে জ্যাঠার সংগে কোনরকম তর্ক করার প্রয়াস না করে । ]

    জ্যাঠা : নাচগান শিখে যেমন সময় নষ্ট, আজকালকার ছেলে মেয়েদের বেশি লেখাপড়া করিয়েও তেমনি লাভ নেই ।

    কি তাই না ?

    [ নিলয় কথা না বলে মাথা নাড়ে, যা থেকে না-হ্যাঁ কোনটাই বোঝা যায় না । ]

    জ্যাঠা : ছেলেকে রক্তজল করে পড়াও, যেই ডানা গজালো তো উড়লো আমেরিকায় । আর বাবা বেচারি তো দুই মহাদেশের মধ্যে পিঙপঙ বল ।

    নিলয় (এবার কথা বলে) : তা দাদা নিজের কেরিয়ারের উন্নতি দেখবে না ?

    জ্যাঠা : তা দেখবে না কেন, কেরিয়ারের উন্নতি তো অবশ্যই দেখবে আর এদিকে যে বাবার হার্ট, কিডনি আর প্রস্টেটের দিনদিন অবনতি হচ্ছে, তা কে দেখবে ?

    নিলয় : কেন ওখান থেকে যতটা পারে দেখেই তো, আমিও এখানে --

    জ্যাঠা : একে তুমি দেখাশোনা বলো ? শোনো তবে একটা গল্প বলি । এই রামজ্যাঠাকে জন্ম থেকে তোমরা দেখছো মুহুরিগিরি করতে । এই শর্মা দিল্লীতে পি ডব্লু ডির হেড ক্যাশিয়ারের চাকরি পেয়েছিল হে ! চলেও গিয়েছিলাম । মাসে তিনশো টাকা মাইনে অনেক তখনকার দিনে । কিন্তু ঐ যে, দেখাশোনা ! সাত দিদির পর আমি একমাত্র পুত্রসন্তান । জয়েন করার পনেরো দিনের মাথায় টেলিগ্রাম এলো, মাদার ইল, কাম শার্প । সেই যে মায়ের দেখাশোনা করতে চলে এলাম, আর কলকাতার বাইরে পা বাড়াইনি ।

    কোন খেদ নেই তারজন্য । পারবি তোরা আজকালকার ছোকরারা ?

    [ ঝুমুর ঢোকে চা নিয়ে । ]

    বুড়ো বয়সে বাবাকে ড্যাঙ ড্যাঙ করে আমেরিকার প্লেনে চড়িয়ে দিয়ে চলে এলি !

    নিলয় : বাবার কোন দু:খ নেই তো দাদা বাইরে বলে । আপনি যা বলছেন ব্যাপারটা ঠিক সেরকম নয় ।

    জ্যাঠা : দু:খ কি আর সে মাইকে অ্যালাউন্স করবে ? আর তুমি -- তুমি তো বাপু থেকেও নেই । সারাদিন পই পই পই পই - ঐ জন্য বলি দ্যাখো আমার ছেলেদুটোকে - লব আর কুশ এখনো চাকবাকরি পায়নি বটে, কিন্তু ঘরের ছেলে ঘরেই আছে তো । তারপর মা ষষ্ঠীর দয়ায় নাতনিদের নিয়ে সময় দিব্যি কেটে যায় আমার --

    [ চায়ে বড় একটা চুমুক দেন । ]

    জ্যাঠা : আহ্‌ । নটিনীর চায়ের হাতটা ভালো । ঐটের বড়ো টান আমার । হে হে হে ...

    আরেকটা টান তো তোমরা রাখতে দিলে না । রোজ দুপুরটাতে এসে একটু সুখদু:খের কথা কইতাম নেপেনের কাছে, তা সে তোমাদের সইলো না ।

    যাক্‌, ছেলের কাছে বেরিয়ে আসুক দুদিনের জন্যে । নাতির মুখ দেখে আসুক ।

    ঝুমুর : রামজ্যাঠা, আপনার ইচ্ছে করে না কখনো বিদেশে যেতে ?

    জ্যাঠা : বিদেশ ? হা হা হা.. (চায়ে চুমুক দিয়ে) গণেশঠাকুর কি করেছিলেন মনে নেই ? মাকে সাতবার প্রদক্ষিণ করেই তাঁর পৃথিবী ভ্রমণ হয়ে গিয়েছিল । সবই এক খেলা রে মা ।

    ঝুমুর (নিলয়ের দিকে) : তুমি দাদাদের ফোন করবে কখন ? বেশি রাত হয়ে গেলে আবার ওরা শুয়ে পড়বে ।

    নিলয় : এই করবো । রামজ্যাঠার সাথে কথা সেরে - (উদ্দেশ্য যাতে রামজ্যাঠা ওঠেন)

    জ্যাঠা : ও, নিখিলকে ফোন করবে ? করে নাও, করে নাও । আমি এই পাশেই বসে আছি । বুড়ো মানুষ, কাজকর্ম তো কিছু নেই - আমার আবার সময়ের দাম, হে হে হে ...

    [ নিলয় অগত্যা ফোন তুলে নেয় । ]


    নিলয় : হ্যালো দাদা ? হ্যাঁ, নিলয় বলছি । ... হ্যাঁ, বাবাকে তুলে দিয়ে এলাম । প্লেন ঠিক সময়েই ছেড়েছে । তোমরা কেমন আছ ? বাবার প্রেসক্রিপশন, হার্টের ওষুধ, ইন্সিওরেন্সের কাগজ সবই হ্যাণ্ডব্যাগে আছে । ... আমরা যাচ্ছি পরশু । বড়শালী অনেকদিন ধরে নেমন্তন্ন করে রেখেছে, এবার না গেলেই নয় । .. তাই নাকি ? ভেরি গুড, বাড়ি কিনলে ছবি ইমেল কোরো । ... বুবাই কেমন আছে ? না, না বিল বেশি উঠছে না । ... আচ্ছা, করো তাহলে ।

    দাদা কলব্যাক করছে বললো একটু পরে ।

    জ্যাঠা : নিখিলের উন্নতির কথা শুনে বড়ই খুশি হলাম ।

    নিলয় : হুঁ (ঝুমুরের দিকে তাকিয়ে) .. এবার ক্লায়েন্টের ওখানে যাবার জন্য তৈরি হতে হবে ।

    জ্যাঠা : আচ্ছা, নিখিল এখন কতো বেতন পায় ?

    নিলয় : জানি না ।

    জ্যাঠা : মাসে লাখ খানেক টাকা তো কোন ব্যাপার না । কি বলো ?

    নিলয় (রেগে উঠে) : আচ্ছা, আমি কি করে জানবো বলুন ? মাইনে জিগেস করা আজকাল আর চালু নয় --

    ঝুমুর : আহা, রামজ্যাঠা এমনিই জানতে চেয়েছেন ---

    জ্যাঠা : হ্যাঁ, দোষ হলো নাকি ওতে ?

    ঝুমুর : না না, দোষের কিছু হয় নি । জ্যাঠা, আপনার বেতনটা এনে আপনি কার হাতে দিতেন ? জেঠিমা না ঠাকুমা ?

    জ্যাঠা (গম্ভীর হয়ে) : গুরুজনের সংগে ইয়ার্কি দিচ্ছো ?

    ঝুমুর (জিভ কেটে) : না না । সিরিয়াসলি জানতে চাইছিলাম । যাতে এই ওকে চেপে ধরতে পারি ।

    জ্যাঠা : স্ত্রীধনের বাইরে আর কোন সম্পত্তিতে স্ত্রীদের লোভ থাকা উচিত্‌ নয় । (উঠতে উঠতে) আমি এখন উঠবো ।

    তোমাদের ঐ হলস না কি বলে একখণ্ড দাও তো, নিখিলের পাঠানো বড়ি । ওটা খেলে সকালে কাশিটা কম হয় ।

    জানি তোমরা সবেতেই পটু, তবু দরকার পড়লে খবর দিয়ো । নেপেন নেই, আমার একটা দায়িত্ব তো থাকে ---

    ঠিক আছে চলি তাহলে ।

    [ প্রস্থান । ]

    নিলয় : উফ্‌ বাবা, কানে তালা ধরে গেল ।

    ঝুমুর : আমার এখন ওসব শোনা রোজকারের ব্যাপার হয়ে গেছে । এখন তো বেশ এনজয় করি । হি হি হি ... জন্মের সময় বোধ হয় ওনার মা মুখে একটুও মধু দেননি ।

    নিলয় : বাবার আমেরিকায় যাওয়া তো দেখছি ওনার চক্ষুশূল । আমেরিকায় যারা থাকে তাদের ওপরেও হেবি রাগ ।

    ঝুমুর : সে নয় হোলো, সন্ধেবেলার প্রোগ্রামে আজ যদি দেরি করেছো --

    নিলয় : ও, সেটা আজকেই, না ? আজ সন্ধেয় কোন কাজ নেই বললাম তো । তা এটা কাদের প্রোগ্রাম ?

    ঝুমুর : কাদের আবার ? আমাদের ললিতকলা ট্রুপের --

    নিলয় : তোমার আবার ললিতকলা ট্রুপ কি ? চার বছর হলো তো ট্রুপের সংগে তোমার কোন সম্পর্ক নেই ।

    ঝুমুর : চার বছর হলো আমাদের বিয়েও হয়েছে ।

    নিলয় : অ্যাই, অ্যাই, একদম দুটোর মধ্যে কোন ইয়ে টানার চেষ্টা করবে না । আমি তোমার নাচের আর্ডেন্ট অ্যাডমায়ারার ছিলাম -- ছিলাম কি না ?

    ঝুমুর : সে যবে ছিলে তবে ছিলে । এখন তো নাচ শিকেয় উঠেছে, যদি শুধু ভালো দর্শক হতে পারি, সেও ---

    [ ফোন বাজে । ]

    নিলয় : (ফোন তুলে) হ্যালো ? হ্যাঁ নিলয় বলছি । বলো দাদা । গরম পোশাক ? .. গরম পোশাক বাবাই তো যা গুছিয়ে নেবার নিয়েছে, শাল আর জ্যাকেটের তো অভাব নেই । আমি ওদিকটা দেখবার সেরকম সময় পাইনি । দাঁড়াও এক সেকেণ্ড । ঝুমুর, বাবার সংগে যথেষ্ট গরম পোশাক আছে তো ?

    ঝুমুর : ওপরে একটা সোয়েটার তো পরেছিলেন, মাফলারও ছিল সংগে, মনে আছে ---

    নিলয় : হ্যাঁ হ্যাঁ, সব ঠিক আছে দাদা, চিন্তা কোরো না । আমরা ভাইজাগে রওনা হচ্ছি পরশু, তার মধ্যে তো বাবা পৌঁছে যাবে । বাবা পৌঁছলেই আমাদের খবরটা দিয়ে দিও ।

    ... দাঁড়াও দিচ্ছি । বৌদি ।

    [ ঝুমুরের দিকে ফোন এগিয়ে দেয় । ]

    ঝুমুর : দিদিভাই, বলো কেমন আছো ? আমরা দিব্যি আছি । বুবাইয়ের ছবি দেখলাম ইন্টারনেটে, এক্কেবারে তোমার মতো -- পরশু যাচ্ছি । .. হ্যাঁ, রীতাদির বাবা-মা এসেছিলেন, বাবার সংগে রীতাদির গয়নার সেট দেওয়ার জন্য । হ্যাণ্ডব্যাগেই ভরে দিয়েছি । বিউটিফুল জড়োয়া সেট, ভালোই খরচ করেছেন রীতাদির বাবা-মা মেয়ের গিফটে । পুরোটা কাজ করা ।

    আমি ... চলছে, কি আর করবো ? সংসার করছি মন দিয়ে । নাচটাই তো যা একটু পারতাম, কিন্তু বাঙালি পরিবার আর নাচ - দুটো বোধহয় দুদিকে চলে ।

    এই বয়সে আবার শুরু ? কি যে বলো । না গো, তোমাদের ওখানেই ওসব সম্ভব । এখন যদি তোমার দেওর একটু সময় বের করে নিয়ে প্রোগ্রামগুলোয় নিয়ে যায়, তাহলেই ঢের । একা একা যেতে ইচ্ছে করে, বলো ?

    ... এখন তো সেই খুশিতেই আছি - সুটকেস গুছিয়ে নিচ্ছি । ... বাবা পৌঁছলে ফোন কোরো । বাই ।

    নিলয় : চার ঘন্টা ধরে নাচ, প্রোগ্রাম, গয়নার গপ্পো - তোমরা পারোও বটে ।

    ঝুমুর : তা কি করবো, বিল্ডিং কনস্ট্রাকশনটা আবার আমার সেকরম আসে না, জানোই তো !


    নিলয় : অমনি একটা লেংগি দিলে তো !

    [ নিলয় কাগজপত্রে মনোনিবেশ করে । ]
    নিলয় : (চায়ে চুমুক দিয়ে) বৌদি চাকরিতে জয়েন করেছে ?

    ঝুমুর : বুবাই হবার পরে পরেই তো -- । সেও চার পাঁচমাস হলো ।

    নিলয় : বৌদির ক্যালি আছে কিন্তু । দশভুজা হয়ে বাচ্চা, সংসার, চাকরি - দাদা বললো ওরা শিগ্গীরই নাকি বাড়ি কিনছে ওখানে ।

    ঝুমুর : ভালোই তো । দিদিভাই যদি পারে, সেটা দেখেও আনন্দ । তবে কি জানো মশাই, সুযোগসুবিধা আর ওড়বার দুটো ডানা দিলে তোমার বৌও ---

    নিলয় : তোমাদের মেয়েদের ঐ একটা রোগ, অন্য কাউকে ভালো বললেই তোমরা নিজেদের সংগে কম্পেয়ার করতে থাকো -- আমি কি বলেছি একবারও যে তুমি পারতে না ?

    ঝুমুর : তা কম্পেয়ার করলেই বা কি মহাভারত অশুদ্ধ হয়ে গেল ? আমরা তো এখানে একরকম বন্দীই, না আছে নেশা, না আছে পেশা ---

    নিলয় : দ্যাখো না, সাকসেস কাকে বলে এখানেই তা দেখিয়ে দেব আমি । তারজন্য আমায় অ্যামেরিকায় যেতে হবে না । ও ছকটা আমি পুরো পেয়ে গেছি । জাস্ট প্ল্যানিং আর পরিশ্রম । তোমার বর কোথা থেকে কোথায় উঠবে, দেখে নিও । তুমিও ওড়বার ডানা এখানেই পেয়ে যাবে । (হাসি)

    ঝুমুর : সে আর বলতে !

    নিলয় : নাচ যদি শুরু করতে চাও তো করো না, আমার কোন আপত্তি নেই । প্যাঁ-পোঁ আসবার আগে পর্যন্ত --

    ঝুমুর : হ্যাঁ, তারপর ওরাই নাচিয়ে ছাড়বে । বাবার টর্চ বেয়ারার !

    নিলয় : খালি কটরমটর কথা । (গাল টিপে দিয়ে) এবার বেরোই । নইলে ঠিক সময়ে --

    ঝুমুর : কলামন্দিরের প্ল্যানটা ভুলো না যেন ।

    নিলয় : পাগল ! তোমার ওড়বার ডানা বলে কথা !



    ॥ প্রথম দৃশ্য সমাপ্ত ॥


    ॥ দ্বিতীয় দৃশ্য ॥


    [ আমেরিকায় নিখিল-নন্দিনীর বসার ঘর । নন্দিনী কোলাজটার সামনে কাজ করছে । নিখিল ভেতরের ঘর থেকে তৈরি হতে হতে ঢোকে । ]

    নিখিল : যাও যাও আর দেরি কোরো না, তৈরি হয়ে নাও । এখন আবার এটা ধরলে ? কাল তো রোববার - তুমি-আমি এক সংগে হাত লাগিয়ে শেষ করে ফেলবো --

    [ সামনে গিয়ে দাঁড়ায় । ]

    বাহ্‌ !

    নন্দিনী : দ্যাখো তো, আইডিয়াটা কেমন ? এখানে এটা ভালো দেখাচ্ছে ?

    নিখিল : চমত্কার ! বুবাই-এর তিনটে ছবি, কাঁদছে, অল্প হাসছে, হা হা করে হাসছে - দারুণ কম্পোজিশনটা করেছো তো !

    [ নন্দিনী প্রীত হাসে । ]

    শোনো । রঙিন কোরো না এটা । সাদাকালো করো । আচ্ছা, দাঁড়াও আমি স্ক্যান করে কনভার্ট করে দিচ্ছি --

    নন্দিনী : কাল কোরো, কাল কোরো । এখন বেরোতে হবে তো বাবাকে আনতে ।

    নিখিল : বাবা আসার আগেই ফ্যামিলি কোলাজটা শেষ করে ফেলতে পারলে ভালো হতো । আরে, এই ছবিটা পেলে কোথায় ?

    নন্দিনী : দেখি দেখি । ও, এটা ? তোমাদের বাড়িতে পুরোনো ছবির গাদায় নষ্ট হয়ে যাচ্ছিল -- খুব সুন্দর ছবি --

    নিখিল : (হাসতে হাসতে) বাবার বুকের ওপর আমি, বছর খানেক বয়েস তখন বোধ হয় --

    নন্দিনী : আর দুজনেই অঘোর ঘুমে । জানো, ঠিক এইভাবে বুবাইকে নিয়ে তুমিও মাঝে মাঝে ঘুমিয়ে পড়ো !

    নিখিল : স্ট্রেঞ্জ !

    নন্দিনী : স্ট্রেঞ্জ-ফেঞ্জ কিছু না, জেনেটিক্স্‌ ।

    নিখিল : হা হা ... তা হবে । আরে নন্দিনী, এটা -- এটা দ্যাখো । এটাকে এখানে দাও -- এই এই ভাবে ।

    নন্দিনী : এটা, এখানে ? (ছবিটা হাতে নিয়ে দেখতে দেখতে স্মৃতিমেদুর হাসি) মনে আছে তোমার এই ছবিটা কোথায় তোলা হয়েছিল ?

    নিখিল : পার্থর কাণ্ড । বইমেলায় আমাদের দুজনকে একসংগে আবিষ্কার করে কি উল্লাস তার ! জালে নাকি রাঘব বোয়াল পড়েছে ।

    নন্দিনী : (হাসতে হাসতে) আমাকে প্রথম পরিচয়েই বলল, "এতোদিন কোথায় ছিলেন" ? খুলুন তো ঐ দিদিমনি মার্কা চশমাটা ।

    নিখিল : আজ ব্যাটার সংগে বহুযুগ পর দেখা হবে ।

    নন্দিনী (ঘড়ি দেখে) : হ্যাঁ, এতক্ষণে পলাশ এয়ারপোর্ট থেকে পার্থকে পিক-আপ করে ফিরে এসেছে ।

    নিখিল (ব্যস্তসমস্ত হয়ে) : না: আমাদেরও আর দেরি নয় । ব্যাক টু অ্যাকশান । তুমি রেডি হয়ে নায়, আমি পলাশকে চট করে ফোন করে নিই । আধঘন্টা খানেক হাতে সময় আছে । বাবাকে রিসিভ করে ফিরে বাজারটা করতে হবে । কে করবে, তুমি না আমি ? আমি, আমিই করবো । তুমি খালি একটা লিস্ট করে ফেলো গাড়িতে যেতে যেতে --

    নন্দিনী : হ্যাঁ বুবাই-এর ফরমুলাও প্রায় শেষ ।

    নিখিল : লিখে রাখো । একটা গাড়িই যথেষ্ট, কি বলো ? লেট্স্‌ মুভ । যাও যাও ।

    নন্দিনী : যাচ্ছি বাবা । এয়ারলাইনে ফোন করে জেনে নিয়েছো তো প্লেন অন টাইম কিনা ?

    নিখিল : হ্যাঁ, অন টাইম । .. আজ কি রান্না করেছো ?

    নন্দিনী : বাবার ডায়েট জেনে নিয়েছি । রাতে যা খান, তাই রেঁধেছি -- রুটি কিনে এনেছি, পাতলা মুসুরির ডাল আর চিকেন স্টু ।

    নিখিল : আর আমরা ? আমরাও স্টু ?

    নন্দিনী : ইয়েস স্যার ।

    নিখিল (চুল আঁচড়াতে আঁচড়াতে) : হুঁ ।

    নন্দিনী : পছন্দ হলো না ? আচ্ছা, ফেরার সময় কিছু একটা পিক আপ করে নেবো 'খন ।

    আমি তৈরি হয়ে আসছি ।

    [ প্রস্থান । ]
    নিখিল : হ্যাঁ, আমিও ফোনটা সেরে --

    (ডায়াল করে) হ্যালো ? পলাশ ? আমি নিখিল বলছি । পার্থ এসে গেছে ? গুড । আমিও এইবার বাবাকে আনতে যাবো । হ্যাঁ, সন্ধেবেলা আড্ডা মারতে তো যাবোই । সবাই ? বাবাকে নিয়ে ? বাবাকে নিয়ে - বাবা কি অতক্ষণ জাগতে পারবে ? দাঁড়া এক সেকেণ্ড ।

    নন্দিনী, নন্দিনী !

    নন্দিনী : আসছি । (প্রসাধন করতে করতে ঢোকে) কি, কি বলছো ?

    নিখিল : পলাশ-রীতা । সন্ধেবেলা যেতে বলছে -- চিকেন স্টুয়ের চেয়ে ভালোই হবে ।

    (ফোনের দিকে), আচ্ছা, নন্দিনীকে দিচ্ছি ।

    রীতা কথা বলবে তোমার সংগে ।

    নন্দিনী : হ্যাঁ, বলো রীতা । হ্যাঁ সব রেডি । রেডি আর কি, বুড়োমানুষ একা আসছেন । ... তা ঠিক, শ্বশুর আর শাশুড়ি আসায় তফাৎ আছে । আমার শাশুড়ি তো এদেশটা দেখতে পেলেন না, তার আগেই ... । ওনারই দেশভ্রমণের বেশি শখ ছিল । বাবাকে তো একরকম টেনেই আনছি আমরা । ... হ্যাঁ হ্যাঁ, তোমার গয়নার সেটও আসছে । হ্যাণ্ডব্যাগেই দিয়েছে বললো ঝুমুর । সামনের উইকেণ্ডেই তো তোমার কাজিনের বিয়ে ? .. আজ -- চেষ্টা করবো, কিন্তু এখনই বলতে পারছি না । আর গেলেও রাত জেগে আড্ডা দেওয়া বোধহয় হবে না ।

    [ দরজায় বেলের আওয়াজ । ]

    নিখিল : আমি দেখছি ।

    [ নিখিল এগোয় দরজা খুলতে । ]

    নন্দিনী : কেউ এসেছে । ... মল-এ যাচ্ছো ? আচ্ছা, তাহলে এক কাজ করো না, মল থেকে ফেরার পথে একবার ড্রপ-ইন করে গয়নাটা নিয়ে যাও ? আমি যেতে পারবো কিনা তো বুঝতে পারছি না । জড়োয়া সেট - তোমারও নিশ্চয়ই আর তর সইছে না । (হাসি)

    [ নিখিল সাজিদ ভাইকে নিয়ে ঢোকে । ]

    নন্দিনী : রীতা, এখন রাখছি তাহলে । ওকে, বাই । (ফোন রেখে) আসুন আসুন, সাজিদ ভাই ।

    সাজিদ : গুড মর্নিং, গুড মর্নিং ! শনিবার সক্কালে উইঠাই চইলা আসছি । ফোন কইরা আসা টাসা আমার ধাতে নাই, জানেনই তো ! তার উপর আপনাদের মিষ্ট খবর দিব !

    নন্দিনী/নিখিল : কি ? কি ?

    সাজিদ : বিশ্বাসযোগ্য সূত্রে খবর আসছে - ডলি ড্রাইভের বাড়ির ফরে আপনাদের অফারটাই একমাত্র স্ট্যাণ্ড করতাছে ।

    নন্দিনী : রিয়ালি !

    নিখিল : গ্রেট ! ঐ বাড়িটা আমাদের দুজনেরই এক বাক্যে পছন্দ হয়ে গিয়েছিল ।

    নন্দিনী : আমার ভীষণ আনন্দ হচ্ছে ! বাড়িটার সামনে পেছনে কতটা খোলা জায়গা, অ্যাপার্টেমন্টে থেকে থেকে দমবন্ধ হয়ে যাচ্ছে আমার ।

    সাজিদ : শুভস্য শীঘ্রম্‌ । তাই সক্কালেই কাগজ লইয়া চইলা আসছি । এইটা পইড়া সাইন দ্যান দুজনে ।

    নন্দিনী : বসুন না সাজিদ ভাই । -- চা খাবেন তো ?

    সাজিদ : অবশ্যই, অবশ্যই ।
    নন্দিনী : একটু বসুন, এখুনি নিয়ে আসছি ।

    [ প্রস্থান ]

    সাজিদ : এর পর যাইতে হইবো ডিয়েগোবাবুর বাড়ি । গাছপালা মিশানো সবুজ চা যাতে না খাইতে হয়, তাই ফার্স্ট আপনার এইখানেই আসছি ।


    সাজিদ : (বসে) তা সকালবেলাতেই আপনারা একেবারে জোড়ে সুটেড-বুটেড ? (কাগজপত্র বের করতে করতে) বেড়াইতে যাইতেছেন নাকি ?

    [ নিখিলের দিকে কাগজগুলো এগিয়ে দেয় ]

    নিখিল : না । আজ বাবা আসছেন দেশ থেকে । এয়ারপোর্টে বেরোবো শিগ্গীরই ।

    সাজিদ : তাইলে তো আপনাদের ষোলো কলা ।

    [ নিখিল হেসে কাগজপত্র উল্টোতে থাকে । ]

    নিখিল : বাপরে, এ যে বিরাট নথি ।

    সাজিদ : পড়তে চাইলে পড়েন । না চাইলে, ঐ লাল-দাগ মারা জাগাগুলায় সাইন মারেন । তালেই হইবো ।

    সাজিদ : নিখিলদা, আমি চট কৈরা একটা টেলিফোন সেরে লই ।

    সাজিদ : ব্যানার্জীদা, আমি সাজিদ কইতাছি । তারপর কেমন আছেন ? আমি ! সাজিদরে কখনো খারাপ থাকতে দ্যাখছেন ! .. হ্যাঁ, তারপর ইলিশ মাছগুলান সব একাই খাইলেন ? .. (হাসি) .. না, না । আসলে মিতা বৌদির সাথে বাজারে দেখা হইল তাই ।

    তারপর বাড়িটার কি ঠিক করলেন ?

    অ্যায় না না, ব্যানার্জীদা, বাড়িটার দাম ঠিকই আছে । বাজার এখন মন্দ আদারওয়াইজ হিলভিউতে অতো বড় বাড়ি আপনি ঐ দামে কোনভাবেই পাইবেন না ।

    [ নন্দিনীর চা হাতে প্রবেশ । ]

    বুঝছি, বুঝছি । আপনি বৌদিরে এক্টু বুঝান । আর দেরি করবেন না, বাড়িটা অন্তত একবার দেখে আসেন ।

    আচ্ছা ঠিক আছে কাল সকাল নয়টার সময় রেডি থাকবেন । আমি আপনাদের তুলে নিব । মিতা বৌদিরেও তৈরি থাকতে কইবেন ।

    আচ্ছা, ঠিক আছে তাহলে । ভালো থাকবেন । বাই ।

    [ নন্দিনী সাজিদকে চা দেয় । ]

    সাজিদ : (চায়ের কাপে পরিতৃপ্তির চুমুক দিয়ে) নিখিলদাকে কইতেছিলাম - আপনাদের তো ষোলো কলা । তিন জেনারেশন একত্রে নতুন বাড়ির উদ্বোধন করবেন ।

    নন্দিনী : সাজিদ ভাই, আমার শ্বশুর মশাই যখন শুনবেন যে আমরা এখানে বাড়ি কিনছি, তাঁর যে সেটা খুব ভালো লাগবে তা নয় ।

    সাজিদ : সে কি, ক্যান ?

    নন্দিনী : উনি এদেশটাকে মোটেই পছন্দ করে উঠতে পারেন না ।

    নিখিল : হ্যাঁ, বাবা একটু আদর্শবাদী মানুষ । বাড়ি কেনা মানেই বিদেশে গেঁড়ে বসা ওনার কাছে ।

    নন্দিনী : আগে যে দুবার এসেছেন, দু সপ্তাহ থাকার পর থেকেই ওনার প্রাণ আইঢাই । কবে দেশে ফিরবেন !

    সাজিদ : তখন কি বুবাইবাবু সীনে ছিলেন ?

    নন্দিনী : না, বুবাই হয়নি তখনো ।

    সাজিদ : অ্যায়, ওইটাই ধন্বন্তরি । এইবার দাদুভাইয়ের মুখ দেইখা সব ভুলবেন । আর দেশে ফিরতেই চাইবেন না ।

    নন্দিনী : বুবাইয়ের কথা বলেই তো ওঁকে টেনে আনছি ।

    একটু বসুন, এখুনি আসছি ।

    [ নন্দিনীর প্রস্থান । নিখিল পাতা উল্টে দেখে যায় । ]

    সাজিদ : নিখিলদা, পড়লেন নাকি ?

    নিখিল : (ফেরত দিতে দিতে) এখন এতো সব তো ডিটেলে পড়ার টাইম নেই । আপনি কি বিকেলে আসতে পারবেন কাগজপত্র নিয়ে ?

    সাজিদ : (ঘড়ি দেখে) আফটারনুনে ? আফটারনুনে তিনটার সময় আমি ফ্রী আছি ।

    নিখিল : তাহলে প্লীজ ওই সময়েই আসুন ? এখন বেরোবার তাড়া । আর শুভকাজটা না হয় বাবার সামনেই সারব ।

    [ নন্দিনীর প্রবেশ । হাতে বাচ্চার কেরিয়ার । নিচে নামিয়ে রাখে । ওপরের হুডটি তুলে দেবার কারণে বাচ্চা দর্শকদের কছে দৃশ্যমান নয় । ]

    সাজিদ : হ্যালো বুবাইসোনা ! .. বড় মিস্ট হইছে আপনাদের ছেলে ।

    [ নন্দিনী হাসে । ]

    নন্দিনী : সাজিদ ভাই - দেখবেন ওনার যা যা আপগ্রেড প্রমিস করেছে একটাও যেন মিস না হয় । বুঝতেই তো পারছেন, পা থেকে মাথা পর্যন্ত বন্ধক রেখে আমাদের বাড়ি কেনা --

    সাজিদ : অল কমপ্লীট অ্যাণ্ড ডান । সাজিদ হক সেসব ঠিক না কইরা কমিট করার বান্দাই নয় । আপনারা শুধু সইগুলা মারবেন আর চাবি লইবেন ।

    নিখিল : (উঠে দাঁড়াতে দাঁড়াতে) আর দেরি করতে পারছি না । এখন না বেরোলে বাবাকে বেরিয়ে একা একা দাঁড়িয়ে থাকতে হবে ।

    সাজিদ : ওরে বাবা, শিগগীর বাইরোন তালে । নূতন দেশ, নূতন ভাষা, নূতন চেহারার লোক !

    নন্দিনী : না না, উনি তো আগেও দুবার এসেছেন । কোন অসুবিধে হবে না । তাছাড়া আমরাও ঠিক সময়েই এয়ারপোর্টে পৌঁছে যাবো ।

    নিখিল : শনিবারের সকাল তার ওপর, রাস্তা ফাঁকা ।

    সাজিদ : ওকে, ওকে । বাই বাই । বাই বুবাই ।

    [ বুবাই-এর কেরিয়ারকে উদ্দেশ্য করে সাজিদ ভাই হাত নাড়েন । বাচ্চার কেরিয়ার সহ সকলের প্রস্থান । ]


    ॥ দ্বিতীয় দৃশ্য সমাপ্ত ॥


    নাটক মঞ্চস্থ করতে গেলে এনাদ নাট্যগোষ্ঠীর লিখিত অনুমতির প্রয়োজন ।

    (চলবে)

  • এই লেখাটি পুরোনো ফরম্যাটে দেখুন
  • মন্তব্য জমা দিন / Make a comment
  • (?)
  • মন্তব্য পড়ুন / Read comments