- ভেজাল, ভেজাল - গজনভি রীতিমত তেরিয়া - প্যারাসুট ব'লে কী গছিয়েছে দেখুন ।
- ছাড়বেন না মশাই - সত্যসাধনের পরামর্শ - চাঁদিপুরে থাকতে একবার দেখি মাছের মধ্যে লোহার রড ঢোকানো । মাছওলাকে বলতে গেলে দাঁত বের ক'রে হাসে ।
- থানায় ডায়রি করলেন ?
- বালাই ষাট । পুলিশ এত তুচ্ছ ব্যাপারে মাথা ঘামায় নাকি ? বাধ্য হয়ে রটিয়ে দিতে হ'ল জগাই মাছওলার মাছের পেটে সোনা পাওয়া যাচ্ছে । ব্যস্, সে কী মেটাল ডিটেক্টরের ভিড় ! দু একজন আবার আসল ব্যাপারটা ধরে ফেলে দূর থেকে চুম্বক ছঁংউড়ে মাছ ছিনতাই করেছিল ।
- কিন্তু খামোখা পেনাল কোড আওড়াচ্ছিলেন কেন ? - কংকাবতী এতক্ষণে একটা প্রশ্ন করার ফাঁক পেলেন ।
- কনফারেন্সে বলতে হ'ল কিনা, এখনও ঠোঁটে লেগে আছে - গজনভির স্বীকারোক্তি ।
- কবিসম্মেলনে পেনাল কোড ? - গাংলুর গলাটা প্রায় আর্তনাদের মত শোনাল ।
- কবিসম্মেলন হ'তে যাবে কেন ? - গজনভি আকাশ থেকে পড়লেন - লিগাল কনফারেন্সের এই বাংলা হয়েছে নাকি ?
কবিসম্মেলন শুনে সত্যসাধন একটু শরীর ছেড়ে দিয়েছিলেন, এখন আবার উত্সুক হয়ে উঠলেন - তার মানে সুপ্রিম কোর্টের -
- রাখুন আপনার সুপ্রিম কোর্ট - গজনভি যারপরনাই বিরক্ত - কতরকম নিয়মকানুনের দিকে নজর রাখতে হয় বোঝেন ? গ্রাভিটেশনই বলুন আর রিলেটিভিটিই বলুন - সব হিসেবগুলো রাখছে কে ?
সত্যসাধন আমতা আমতা ক'রে বললেন - মানে ?
- সিম্পল । বিভিন্ন গ্রহনক্ষত্রের প্রতিনিধিরা একসঙ্গে ব'সে নিয়মগুলো তৈরি করে । এই তো এবারেই আলোর স্পিড বাড়ানোর একটা পিটিশন বাতিল হয়ে গেল ।
অংকস্যারের দেখাদেখি গ্যাঞ্জামেরও কাশি আসছিল । অনেক কষ্টে সামলে নিয়ে বলল - আর হাততালিটা ?
গজনভি চারদিক দেখে নিয়ে গলা নামিয়ে বললেন - ওটা প্রি-রেকর্ডেড । সঙ্গেই রাখি । স্টেজে উঠলে যথাসময়ে চালিয়ে দিই । অডিয়েন্সের ওপর ফেলে রাখি না । যতটা সেল্ফ-সাফিসিয়েন্ট হওয়া যায় আর কি ।
- কিন্তু স্পেসশিপটার কী হ'ল ? - কংকাবতী আবার মুখ খুললেন ।
- স্পেসশিপ ইজ গন । ঝাঁঝরা হয়ে গেছে একেবারে । আসলে উইয়ের ব্যাপারে আমাদের একটু দুর্বলতাও আছে । আমাদের এক পূর্বপুরুষ ওদের খুব স্নেহ করতেন । নাম শুনেছেন বোধহয় ।
- কার কথা বলছেন ? - অংকস্যারের সন্দিগ্ধ প্রশ্ন ।
স্পেসশিপ যদি নাই থাকে তো মহাকাশে গেলেন কী ক'রে ? - গ্যাঞ্জামের পেট থেকে ভুড়ভুড়ি কেটে প্রশ্নটা প্রায় গলায় উঠে এসেছিল, কিন্তু আখতার গজনভির উত্তর সেটাকে আবার দুটো হিক্কা সমেত পেটের এক কোণায় শুইয়ে দিল ।
- বাল্মীকি - ব'লে গজনভি কফির কাপে চুমুক দিলেন ।
গ্যাঞ্জাম দেখেটেখে বলল - পা আর বলের ছবি -
- বুঝেছি - গাংলু বলল - পা আর গোল - পাগল ।
- আসলে আমি পাতাল বোঝাতে চেয়েছিলাম - অংকস্যার একটু ব্যাকফুটে - তবে ব্যাপারটা মোটের ওপর এক ।
মেজোদাদু ঘাবড়ে গিয়ে বললেন - হাসপাতালের জন্য এর পাশে আবার হাঁস আঁকতে হবে নাকি মোহন ?
- তালগোল বোঝানো তো বেশ শক্ত হবে দেখছি - কংকাবতী কাগজে আঁকিবঁংউকি কাটতে গিয়ে ফাঁপরে পড়েছেন ।
অংকস্যার বললেন - আস্তে আস্তে এই ছবিগুলো থেকেই হরফের জন্ম । হিয়েরোগ্লিফে যেমন ইংরেজি m -এর হরফ হ'ল পঁযাচার ছবি । আবার হাতের ছবি হয়ে দাঁড়াল d -এর হরফ । তবে এদের বর্ণমালায় - অক্ষর বা ছবি - যাই বলিস, তাতে একটা ব্যাপার ছিল যেটা ইংরেজি বর্ণমালায় নেই, কিন্তু বাংলায় আছে ।
অংকস্যার জল খেতে খেতে অন্যদের ভাবার সময় দিলেন । কেউই বিশেষ সুবিধে করতে পারল না । সত্যসাধন গভীর মনোযোগে টাক চুলকোচ্ছেন । মেজোদাদু ভেবেটেবে বললেন - মূর্ধন্য ষ ।
অংকস্যার বললেন - যুক্তাক্ষর । দুটো ছবিকে মিলিয়ে নতুন ছবি যেটা ধ্বনি দুটোর যোগফল বোঝাবে ।
- হিয়েরোগ্লিফটা কি বাঁদিক থেকে ডানদিকে যায়, নাকি উল্টো ? - প্রশ্ন গ্যাঞ্জামের ।
- গুড কোয়েশ্চেন । আসলে দুটোই হ'তে পারে । অক্ষর দেখে বুঝতে হবে । যেমন ধর পঁযাচার মুখ যদি বাঁদিকে থাকে তাহ'লে বাঁদিক থেকে ডানদিকে যাব । নইলে উল্টোটা । হিয়েরোগ্লিফে একপাতা লেখাকে যদি আয়নার সামনে ধরিস তো সেটাও হিয়েরোগ্লিফ হিসেবে চলতে পারে । শুধু উল্টোদিক থেকে পড়তে হবে ।
মেজোদাদু একটা শ্বাস ছেড়ে বললেন - বোঝো, সবকটা অক্ষর আবার উল্টো ক'রে লেখা ! তাতে কিনা যুক্তাক্ষরও আছে । সব আবার ছবিতে । বকচ্ছপ উল্টে আঁকা কি চাট্টিখানি কথা ?
অংকস্যার বললেন - সবে তো কলির সন্ধে স্যার, ওদের অংকের কথায় তো আসিই নি এখনও ।
- অংক ? - মেজোদাদু চোখ কপালে তুলে ফেললেন - ঐসব পঁযাচা আর বাদুড় এঁকে অংক ?
- ইয়েস স্যার । ডেসিমেল সিস্টেম, ভগ্নাংশের গুণ ভাগ, ৯৬০; -এর ভ্যালু - কী চাই আপনার বলুন ?
- গোড়া থেকে, গোড়া থেকে - কংকাবতী এতক্ষণ কাগজে কীসব আঁচড় কাটছিলেন, এখন অংকের গন্ধে উদগ্রীব ।
- তথাস্তু - অংকস্যার গুছিয়ে বসলেন - পুরোনো অনেক হিয়েরোগ্লিফ পাওয়া গেছে পাথরের ফলকে কিংবা বিভিন্ন আসবাবে । কিন্তু তাতে অংকের খবর তেমন নেই । এক্ষেত্রে ভরসা হ'ল হিয়েরোগ্লিফ লেখা প্যাপিরাস । মুশকিল হ'ল, বেশির ভাগ প্যাপিরাসই টেকেনি । তবে কপাল ভাল - দুটো খুব জোরালো প্যাপিরাস বেঁচে গেছে - রাইণ্ড
এই প্যাপিরাসগুলো থেকে তখনকার অংকের অনেকগুলো ব্যাপার বেরিয়ে আসে । দশমিক পদ্ধতি চালু থাকলেও ডিজিটগুলো কিন্তু ০ থেকে ৯ ছিল না । বরং এক, দশ, একশো, হাজার - এই হিসেবে ছিল । মানে ধরা যাক ডিজিটগুলো
- ঠিক - গ্যাঞ্জাম ধরে ফেলেছে - নম্বর যত বড় হবে, তত নতুন নতুন ডিজিট লাগবে । অগুন্তি ডিজিট বানাতে হবে ।
- এগজ্যাক্টলি - অংকস্যার বললেন - দুটো প্যাপিরাসেই অনেকগুলো অংক করা আছে । যোগবিয়োগে কোন অসুবিধে ছিল না, কিন্তু সমস্যা ছিল গুণভাগ নিয়ে । তাই কায়দাটা ছিল গুণ করতে হ'লে যোগ ক'রে ক'রে যাওয়া ।
- কায়দার কী আছে স্যার ? নামতা শেখার আগে আমরাও তো - বলল গাংলু ।
- না না, গুণ মানে বারবার যোগ তো বটেই । কিন্তু সেটাই ওরা সহজ ক'রে নিয়েছিল । ধর বাইশকে তেরো দিয়ে গুণ করতে হবে । ওরা সেটা করত এইভাবে - বাইশকে বাইশের সঙ্গে যোগ করত, তারপর যোগফলকে আবার নিজের সঙ্গে যোগ দিত, এরকম ।
অংকস্যার লিখতে লাগলেন -
আবার উল্টোদিক দিয়ে করলে -
- মাই গড - এ তো বাইনারি অ্যারিথমেটিক - শিউরে উঠলেন কংকাবতী -
১৩=২ ৩ +২ ২ +২ ০ , ২২=২ ৪ +২ ২ +২ ১
!
- অবশ্যই - অংকস্যার ব'লে চললেন - ভগ্নাংশের গুণভাগেও একই রাস্তা নেওয়া হ'ত । আর ব্যবসাবাণিজ্য করতে গেলে ভগ্নাংশ ছাড়া চলবেই বা কী ক'রে ?
- মমির ব্যবসার কথা বলছ তো ? - মেজোদাদু এতক্ষণে সন্তুষ্ট ।
- আরো অনেক অংক ছিল প্যাপিরাস দুটোয় - মুণ্ডুকাটা পিরামিডের আয়তন বের করার অংক পর্যন্ত । বৃত্তের ক্ষেত্রফল বের করার একটা অংক ছিল - যাতে বলা হয়েছে ব্যাসের ১/৯ অংশ বাদ দিয়ে বাকিটাকে আবার তাই দিয়ে গুণ করতে হবে । তার মানে ৯৬০; -এর ভ্যালু কত দাঁড়াচ্ছে বল তো গাংলু ?
গাংলু তড়িঘড়ি কাগজ কলম টেনে নিল । কিন্তু হঠাৎ ঘড়ির দিকে চোখ যেতেই আঁতকে উঠলেন অংকস্যার - সর্বনাশ । দেরি হয়ে গেছে ।
গ্যাঞ্জামরা এই সর্বনাশের মানে জানে । দেরি ক'রে ফেললে অংকস্যারের মা মারধোর করেন না, নিলডাউন করান না, শুধু তিনদিন বাড়িতে অংক কষা বন্ধ ক'রে দেন । স্যারের তাতে ভারি দুর্ভোগ - রাত্রে ঘুম হয় না, চোঁয়া ঢেকুর ওঠে, চোখের নিচে কালিটালি প'ড়ে নাজেহাল অবস্থা ।
সভা ভঙ্গ বুঝে সত্যসাধন আর কংকাবতী আড়মোড়া ভেঙ্গে উঠে দাঁড়ালেন । অংকস্যার কোনমতে একতাড়া কাগজপত্র ঝোলায় পুরে দৌড় লাগিয়েছেন । পেছন থেকে গাংলুর চিত্কার ভেসে আসছে - পাই ইজ ইকুয়াল টু থ্রি পয়েন্ট ওয়ান সিক্স জিরো ফাইভ ...
কংকাবতীর আঁকা পঁযাচা অংকস্যারের ঝোলা থেকে খসে হাওয়ায় কয়েক মিটার উড়ে ধীরেসুস্থে মাটির দিকে নামতে লাগল ।
আগের বারের শব্দজব্দের উত্তর পাঠিয়েছেন, ত্রক্রমানুযায়ী, পেনসিলভ্যানিয়া থেকে শর্মিলা ব্যানার্জি, এবং অলবানি, নিউ ইয়র্ক থেকে ভাস্কর সেনগুপ্ত । সবাইকে আমাদের অভিনন্দন । দুজনের পুরস্কার রওনা দিচ্ছে । এবারেও প্রথম দুজন সঠিক উত্তরদাতাকে পুরস্কার দেওয়া হবে । দয়া করে এবার থেকে ডাকযোগে উত্তর পাঠালেও ই-মেল (যদি থাকে, তো) জানাতে ভুলবেন না ।
১ ২২
১+১=২ ২২+২২=৪৪
২+২=৪ ৪৪+৪৪=৮৮
৪+৪=৮ ৮৮+৮৮=১৭৬
অংকস্যার বললেন - এবার থামতে হবে কারণ ৮ আর ৮ যোগ দিলে ১৩ ছাড়িয়ে যাচ্ছে । এখন এর মধ্যে ৮+৪+১=১৩, কাজে কাজেই সেই লাইনগুলো যোগ করলেই গুণফল বেরিয়ে যাবে, মানে ১৭৬+৮৮+২২=২৮৬ ।
১ ১৩
১+১=২ ১৩+১৩=২৬
২+২=৪ ২৬+২৬=৫২
৪+৪=৮ ৫২+৫২=১০৪
৮+৮=১৬ ১০৪+১০৪=২০৮
এবার যেহেতু ২২=১৬+৪+২, গুণফল পাচ্ছি ২০৮+৫২+২৬=২৮৬ ।
পাশাপাশি
উপরনিচ
(১) বিলেতে রবি বশ হ'লে বোতল
(৫) বজ্র-মাধব কাটব মাধব-গ্রামে
(৮) নির্জনে হদিস রদবদল
(৯) অপবাদ-গ্রস্ত রক্ষিতা
(১১) আলপনা আনে নীল পাতা
(১২) অল্প আসক্তিতে মন কাট
(১৪) শিকারে যান
(১৬) রাত্রির সীমান্ত কাটান
(১৮) বাসার মাথায় সয় না হস্তাঘাত
(২০) ভাস্বর প্রদীপরা খারাপ
(২২) ধাতব তার আরাম
(২৪) শতাব্দ কছম
(২৫) থামলেই নিলামে স্থল
(২৭) মিথ্যে অশ্বিনীকুমারদ্বয়
(২৯) নিচে আসা মানা
(৩১) সমাজ দিত এক বর্ণ
(৩৩) দেখা নজির নেই
(৩৫) স্বাদের ব্যাপারে রসনা
(৩৭) সানাই শুনে নত হব
(৩৯) বিপদে আপদে পংক্তি
(৪১) খিল দেবো কাগজে, কাটবো আঁচড়
(৪৩) রতন কি নাম ?
(৪৪) আস্তে পড়ে, জল ঝরে, দিদি মদ খায়
(৪৫) খুব প্রিয় না তনয়রা
(১) সাতটা সাগর নদে তরীটা
(২) চা'টা হ'লে দিন
(৩) করি সাত রঙ্গ
(৪) লেখাপড়া ক'রে সাক্ষি বদ্লাস
(৫) যথা পাঞ্চালিকা তথা বক্র
(৬) দুই সুরে নোংরা জমে
(৭) মরছি, নাম নিয়েছি "দুখী"
(১০) বড় রাগে সপ্তম স্বর
(১৩) মা'র মত বাঁদর-স্নেহ
(১৫) এক'শ শব দোয়া পেয়ে ধন্য
(১৭) ধার = ধার না
(১৯) দাঁত ছাড়া হাতির কামনায়
(২১) নম্র পথে নেবেন এক
(২৩) জিব সরে না স্বর ছাড়া
(২৬) মেয়াদী খাজনার ব্যবস্থা করেছে রাজাই
(২৮) তার জন্য রানী করেছে বর্জন
(৩০) কম না তার অঙ্গীকার দেবতার কাছে
(৩১) সর্পিল বোমার নিলাম সবার উপরে
(৩২) মতলবি সব মুছলে নমস্কার
(৩৪) মন যদি মানে হার, করুণার নেই পার
(৩৬) আঙুলের ডগায় তখন বেত
(৩৮) তিন বা বউ
(৪০) দড়াম্ মরুত্
(৪২) মায়ের মেয়ে ধরবো না ধার ধারবো না
(এবারের শব্দজব্দ তৈরি করেছেন অংশুমান গুহ)
আগের বারের ত্রক্রসওয়ার্ডের উত্তর এখানে