• Parabaas
    Parabaas : পরবাস : বাংলা ভাষা, সাহিত্য ও সংস্কৃতি
  • পরবাস | সংখ্যা ৩২ | জানুয়ারি ২০০৪ | রম্যরচনা
    Share
  • ছেঁড়া কোলাজ : এনাদ নাট্যগোষ্ঠী

    চরিত্র :
    =====

    নিখিল : বড়ভাই, (অ্যামেরিকাপ্রবাসী)
    নিলয় : ছোটভাই, (কলকাতাবাসী)
    পলাশ : নিখিলের বন্ধু ১
    অরূপ : নিখিলের বন্ধু ২
    জ্যাক : নিখিলের সকার পার্টনার
    সাজিদ ভাই : রিয়াল এস্টেট এজেন্ট
    পার্থ : নিখিল-পলাশের কলেজের বন্ধু, পোস্ট ডক স্টুডেন্ট
    জ্যাঠা : নিলয়-ঝুমুরের পাড়াতুতো জ্যাঠা


    নন্দিনী : নিখিলের বৌ
    ঝুমুর : নিলয়ের বৌ
    রীতা : পলাশের বৌ
    ঝিমলি : অরূপের বৌ







    !--- ॥ প্রথম দৃশ্য ॥


    [ দেশের আধুনিক ড্রয়িং রুম । নিলয়, ঝুমুর বাইরে থেকে ঢোকে । ঝুমুর খুব উত্ফুল্ল, গুনগুন করতে করতে ঢোকে সে । ]

    ঝুমুর (গুনগুন করতে করতে) : হুঁ হুঁ হুঁ হুঁ ... নাচেরে আজিকে মযূরের মতো নাচেরে .. নাচেরে ...

    [ এক পাক ঘুরে আসে উল্লসিত ভঙ্গিতে । ]

    উফ্‌, আর মাত্র দুদিন মাঝখানে, তারপরই আমরা ভাইজাগে বেড়াতে যাচ্ছি । হাম অর তুম !! সেই কবে থেকে দিদি-প্রদীপদা বলে বলে হয়রাণ, বাবুর আর সময় হয় না !

    নিলয় : সময় হল না তো যাচ্ছি কি করে ?

    ঝুমুর : সে কি আর সহজে হয়েছে ? তিনমাস ধরে কানের কাছে ঘ্যানঘ্যান করে, চপচপে করে তেল লাগিয়ে লাগিয়ে, ভালমন্দ খাইয়ে দাইয়ে.. শোনো, ওখানে কি খুব ঠাণ্ডা এখন ?

    নিলয় : সমুদ্রের ধারে তো, মনে হয় না খুব ঠাণ্ডা --

    ঝুমুর : তাও দুটো ব্লেজার কিনে নিই, কি বলো ?

    নিলয় : দুটো ওভারকোটও কিনে নিই, কি বলো ?

    ঝুমুর : সবটাতে তোমার ইয়ার্কি । আমরা কি সিমলা যাচ্ছি নাকি ?

    [ নিলয় কথাবার্তার ফাঁকে ফাঁকে কাগজ গোছাচ্ছিল । সুটকেস খোলে । ]

    নিলয় : যাবার আগে কনট্রাযাক্টগুলোর কাগজপত্তর ঠিকমতো গুছিয়ে যেতে হবে ।

    [ ধপ করে সুটকেস বন্ধ করে । ]

    ঝুমুর : আর একবারও কাজের কথা নয় । বেড়াতে যাবার আগে শেষ কাজ তো করে এলাম - বাবাকে অ্যামেরিকার ফ্লাইটে তুলে দেওয়া । এখন উনি দাদাদের গুড হ্যাণ্ডস-এ । আর আমাদের এখন শুধু অকাজ !

    নিলয় : হ্যাঁ, বাবা ভালোয় ভালোয় পৌঁছলে নিশ্চিন্ত । চারদিকে যা প্লেনঘটিত ব্যাপারস্যাপার চলছে ।

    ঝুমুর : কুডাক ডেকো না তো । প্রতিদিন শয়ে শয়ে লোক যাচ্ছে, বাবারই তো এটা থার্ড টাইম । - অ্যাই, তুমি আজ আর বেরোবে না তো ?

    নিলয় : দাদাকে একটা আই এস ডি সেরে একবার আমহার্স্ট স্ট্রীটের ক্লায়েন্টের সংগে কথা বলতে যেতে হবে ।

    [ ঝুমুর অভিমানী ভঙ্গিতে তাকায় । ]

    ঝুমুর : উঁ ?

    নিলয় : কি হলো আবার ?

    ঝুমুর : তুমি যে বললে ভাইজাগ থেকে একবারে ফিরে কাজ শুরু করবে ?

    নিলয় : হ্যাঁ, হ্যাঁ - তাই তো করছি । ছোটখাটো দু-একটা যা বাকি আছে, সেগুলো কমপ্লিট করতে হবে তো । ঝুমুররানী, এইসব নিয়ে রাগ করতে নেই !

    ঝুমুর : (অভিমান ভুলে) আচ্ছা -- কিন্তু সন্ধের আগে ফিরতে হবে বাড়িতে ।

    নিলয় : সে আর বলতে । একটু দেরি হলে ওয়েট কোরো ।

    ঝুমুর : সে তো করিই । ওয়েট ছাড়া আর কোন্‌ কাজ করি আজকাল, বলো ?

    নিলয় : আবার রাগ, না ? আরে বাবা, আমার তো ব্যবসা । চাকরি তো নয় । দশটা-পাঁচটার চাকরি যদি তোমার বর করতো, তাহলে দেখতে, মহারানীর চরণে টোয়েন্টি ফোর আওয়ার্সই --

    ঝুমুর : তোমার দিনগুলো তাহলে বত্তিরিশ ঘন্টার হতে হতো । বাজে না বকে দাদাকে ফোন করার, করে নাও সেটা ।

    ঝুমুর : ঝুমুররানী, এক কাপ চা !

    ঝুমুর : এই নিয়ে চারবার হলো সকাল থেকে ।

    [ বাইরে থেকে কাসির আওয়াজ । পাড়াতুতো জ্যাঠামশাই ঢোকেন । নিলয়ের বাবার কাছ থেকে তিনি মাঝে মাঝে হোমিওপ্যাথি ওষুধ নিতে আসতেন । ]

    জ্যাঠামশাই : নিলয় ! বাড়ি আছো নাকি ?

    নিলয় : ঐ রামজ্যাঠা এসেছেন ! চায়ের নাম করতে না করতেই - হেবি টাইমিং ওনার, স্বীকার করতেই হবে ।

    ঝুমুর : রোজই উনি এই সময় আসেন । বাবার সংগে গল্পগুজব করেন, মানে উনিই বক্তা আরকি, আর বাবা মাঝে মধ্যে হুঁ হাঁ করেন, তারপর উনি হোমিওপ্যাথি ওষুধ নিয়ে চলে যান ।

    আসুন রামজ্যাঠা ।

    জ্যাঠা : এই যে নিলয় ! নেপেনকে তাহলে চড়িয়ে দিয়েই এলে !

    [ ঝুমুর নিলয় কথার রকমে একটু অস্বস্তিতে মুখ চাওয়াচাওয়ি করে । ]

    মানে প্লেনে ।

    নিলয় : হ্যাঁ, তুলে দিলাম এলাম প্লেনে ।

    জ্যাঠা : আমি এই পথেই যাচ্ছিলাম, ভাবলাম একটু খোঁজটা নিয়েই যাই । পাড়ার মধ্যে একজনের বিদেশভ্রমণ, সে কি কম কথা । হেঁ হেঁ হেঁ ...

    (বসে পড়ে)

    ওহে নটিনী, একটু চা চলবে নাকি ?

    নিলয় : না না ও হচ্ছে ঝুমুর । নন্দিনী তো বৌদির নাম ।

    জ্যাঠা : তুমি পাড়ার বৌমাদের নাম আমায় শিখিয়ো না বাপু । আমি তাদের নাম ধরে ডাকি না, গুণ ধরে ডাকি । তোমার বৌ নৃত্যবিশারদ, তাই তাকে ডাকি নটিনী ।

    ঝুমুর : আচ্ছা চা করে আনি ।

    জ্যাঠা : তা বিয়ের বাজারে দাম বাড়া ছাড়া নৃত্যবিশারদ হয়ে যে লাভ কি হয় । সেখানেও অবশ্য সংগীতবিশারদরা এখনো কম্পিটিশনে এগিয়ে আছে ।

    [ নিলয় মাথা নাড়ে জ্যাঠার সংগে কোনরকম তর্ক করার প্রয়াস না করে । ]

    জ্যাঠা : নাচগান শিখে যেমন সময় নষ্ট, আজকালকার ছেলে মেয়েদের বেশি লেখাপড়া করিয়েও তেমনি লাভ নেই ।

    কি তাই না ?

    [ নিলয় কথা না বলে মাথা নাড়ে, যা থেকে না-হ্যাঁ কোনটাই বোঝা যায় না । ]

    জ্যাঠা : ছেলেকে রক্তজল করে পড়াও, যেই ডানা গজালো তো উড়লো আমেরিকায় । আর বাবা বেচারি তো দুই মহাদেশের মধ্যে পিঙপঙ বল ।

    নিলয় (এবার কথা বলে) : তা দাদা নিজের কেরিয়ারের উন্নতি দেখবে না ?

    জ্যাঠা : তা দেখবে না কেন, কেরিয়ারের উন্নতি তো অবশ্যই দেখবে আর এদিকে যে বাবার হার্ট, কিডনি আর প্রস্টেটের দিনদিন অবনতি হচ্ছে, তা কে দেখবে ?

    নিলয় : কেন ওখান থেকে যতটা পারে দেখেই তো, আমিও এখানে --

    জ্যাঠা : একে তুমি দেখাশোনা বলো ? শোনো তবে একটা গল্প বলি । এই রামজ্যাঠাকে জন্ম থেকে তোমরা দেখছো মুহুরিগিরি করতে । এই শর্মা দিল্লীতে পি ডব্লু ডির হেড ক্যাশিয়ারের চাকরি পেয়েছিল হে ! চলেও গিয়েছিলাম । মাসে তিনশো টাকা মাইনে অনেক তখনকার দিনে । কিন্তু ঐ যে, দেখাশোনা ! সাত দিদির পর আমি একমাত্র পুত্রসন্তান । জয়েন করার পনেরো দিনের মাথায় টেলিগ্রাম এলো, মাদার ইল, কাম শার্প । সেই যে মায়ের দেখাশোনা করতে চলে এলাম, আর কলকাতার বাইরে পা বাড়াইনি ।

    কোন খেদ নেই তারজন্য । পারবি তোরা আজকালকার ছোকরারা ?

    [ ঝুমুর ঢোকে চা নিয়ে । ]

    বুড়ো বয়সে বাবাকে ড্যাঙ ড্যাঙ করে আমেরিকার প্লেনে চড়িয়ে দিয়ে চলে এলি !

    নিলয় : বাবার কোন দু:খ নেই তো দাদা বাইরে বলে । আপনি যা বলছেন ব্যাপারটা ঠিক সেরকম নয় ।

    জ্যাঠা : দু:খ কি আর সে মাইকে অ্যালাউন্স করবে ? আর তুমি -- তুমি তো বাপু থেকেও নেই । সারাদিন পই পই পই পই - ঐ জন্য বলি দ্যাখো আমার ছেলেদুটোকে - লব আর কুশ এখনো চাকবাকরি পায়নি বটে, কিন্তু ঘরের ছেলে ঘরেই আছে তো । তারপর মা ষষ্ঠীর দয়ায় নাতনিদের নিয়ে সময় দিব্যি কেটে যায় আমার --

    [ চায়ে বড় একটা চুমুক দেন । ]

    জ্যাঠা : আহ্‌ । নটিনীর চায়ের হাতটা ভালো । ঐটের বড়ো টান আমার । হে হে হে ...

    আরেকটা টান তো তোমরা রাখতে দিলে না । রোজ দুপুরটাতে এসে একটু সুখদু:খের কথা কইতাম নেপেনের কাছে, তা সে তোমাদের সইলো না ।

    যাক্‌, ছেলের কাছে বেরিয়ে আসুক দুদিনের জন্যে । নাতির মুখ দেখে আসুক ।

    ঝুমুর : রামজ্যাঠা, আপনার ইচ্ছে করে না কখনো বিদেশে যেতে ?

    জ্যাঠা : বিদেশ ? হা হা হা.. (চায়ে চুমুক দিয়ে) গণেশঠাকুর কি করেছিলেন মনে নেই ? মাকে সাতবার প্রদক্ষিণ করেই তাঁর পৃথিবী ভ্রমণ হয়ে গিয়েছিল । সবই এক খেলা রে মা ।

    ঝুমুর (নিলয়ের দিকে) : তুমি দাদাদের ফোন করবে কখন ? বেশি রাত হয়ে গেলে আবার ওরা শুয়ে পড়বে ।

    নিলয় : এই করবো । রামজ্যাঠার সাথে কথা সেরে - (উদ্দেশ্য যাতে রামজ্যাঠা ওঠেন)

    জ্যাঠা : ও, নিখিলকে ফোন করবে ? করে নাও, করে নাও । আমি এই পাশেই বসে আছি । বুড়ো মানুষ, কাজকর্ম তো কিছু নেই - আমার আবার সময়ের দাম, হে হে হে ...

    [ নিলয় অগত্যা ফোন তুলে নেয় । ]


    নিলয় : হ্যালো দাদা ? হ্যাঁ, নিলয় বলছি । ... হ্যাঁ, বাবাকে তুলে দিয়ে এলাম । প্লেন ঠিক সময়েই ছেড়েছে । তোমরা কেমন আছ ? বাবার প্রেসক্রিপশন, হার্টের ওষুধ, ইন্সিওরেন্সের কাগজ সবই হ্যাণ্ডব্যাগে আছে । ... আমরা যাচ্ছি পরশু । বড়শালী অনেকদিন ধরে নেমন্তন্ন করে রেখেছে, এবার না গেলেই নয় । .. তাই নাকি ? ভেরি গুড, বাড়ি কিনলে ছবি ইমেল কোরো । ... বুবাই কেমন আছে ? না, না বিল বেশি উঠছে না । ... আচ্ছা, করো তাহলে ।

    দাদা কলব্যাক করছে বললো একটু পরে ।

    জ্যাঠা : নিখিলের উন্নতির কথা শুনে বড়ই খুশি হলাম ।

    নিলয় : হুঁ (ঝুমুরের দিকে তাকিয়ে) .. এবার ক্লায়েন্টের ওখানে যাবার জন্য তৈরি হতে হবে ।

    জ্যাঠা : আচ্ছা, নিখিল এখন কতো বেতন পায় ?

    নিলয় : জানি না ।

    জ্যাঠা : মাসে লাখ খানেক টাকা তো কোন ব্যাপার না । কি বলো ?

    নিলয় (রেগে উঠে) : আচ্ছা, আমি কি করে জানবো বলুন ? মাইনে জিগেস করা আজকাল আর চালু নয় --

    ঝুমুর : আহা, রামজ্যাঠা এমনিই জানতে চেয়েছেন ---

    জ্যাঠা : হ্যাঁ, দোষ হলো নাকি ওতে ?

    ঝুমুর : না না, দোষের কিছু হয় নি । জ্যাঠা, আপনার বেতনটা এনে আপনি কার হাতে দিতেন ? জেঠিমা না ঠাকুমা ?

    জ্যাঠা (গম্ভীর হয়ে) : গুরুজনের সংগে ইয়ার্কি দিচ্ছো ?

    ঝুমুর (জিভ কেটে) : না না । সিরিয়াসলি জানতে চাইছিলাম । যাতে এই ওকে চেপে ধরতে পারি ।

    জ্যাঠা : স্ত্রীধনের বাইরে আর কোন সম্পত্তিতে স্ত্রীদের লোভ থাকা উচিত্‌ নয় । (উঠতে উঠতে) আমি এখন উঠবো ।

    তোমাদের ঐ হলস না কি বলে একখণ্ড দাও তো, নিখিলের পাঠানো বড়ি । ওটা খেলে সকালে কাশিটা কম হয় ।

    জানি তোমরা সবেতেই পটু, তবু দরকার পড়লে খবর দিয়ো । নেপেন নেই, আমার একটা দায়িত্ব তো থাকে ---

    ঠিক আছে চলি তাহলে ।

    [ প্রস্থান । ]

    নিলয় : উফ্‌ বাবা, কানে তালা ধরে গেল ।

    ঝুমুর : আমার এখন ওসব শোনা রোজকারের ব্যাপার হয়ে গেছে । এখন তো বেশ এনজয় করি । হি হি হি ... জন্মের সময় বোধ হয় ওনার মা মুখে একটুও মধু দেননি ।

    নিলয় : বাবার আমেরিকায় যাওয়া তো দেখছি ওনার চক্ষুশূল । আমেরিকায় যারা থাকে তাদের ওপরেও হেবি রাগ ।

    ঝুমুর : সে নয় হোলো, সন্ধেবেলার প্রোগ্রামে আজ যদি দেরি করেছো --

    নিলয় : ও, সেটা আজকেই, না ? আজ সন্ধেয় কোন কাজ নেই বললাম তো । তা এটা কাদের প্রোগ্রাম ?

    ঝুমুর : কাদের আবার ? আমাদের ললিতকলা ট্রুপের --

    নিলয় : তোমার আবার ললিতকলা ট্রুপ কি ? চার বছর হলো তো ট্রুপের সংগে তোমার কোন সম্পর্ক নেই ।

    ঝুমুর : চার বছর হলো আমাদের বিয়েও হয়েছে ।

    নিলয় : অ্যাই, অ্যাই, একদম দুটোর মধ্যে কোন ইয়ে টানার চেষ্টা করবে না । আমি তোমার নাচের আর্ডেন্ট অ্যাডমায়ারার ছিলাম -- ছিলাম কি না ?

    ঝুমুর : সে যবে ছিলে তবে ছিলে । এখন তো নাচ শিকেয় উঠেছে, যদি শুধু ভালো দর্শক হতে পারি, সেও ---

    [ ফোন বাজে । ]

    নিলয় : (ফোন তুলে) হ্যালো ? হ্যাঁ নিলয় বলছি । বলো দাদা । গরম পোশাক ? .. গরম পোশাক বাবাই তো যা গুছিয়ে নেবার নিয়েছে, শাল আর জ্যাকেটের তো অভাব নেই । আমি ওদিকটা দেখবার সেরকম সময় পাইনি । দাঁড়াও এক সেকেণ্ড । ঝুমুর, বাবার সংগে যথেষ্ট গরম পোশাক আছে তো ?

    ঝুমুর : ওপরে একটা সোয়েটার তো পরেছিলেন, মাফলারও ছিল সংগে, মনে আছে ---

    নিলয় : হ্যাঁ হ্যাঁ, সব ঠিক আছে দাদা, চিন্তা কোরো না । আমরা ভাইজাগে রওনা হচ্ছি পরশু, তার মধ্যে তো বাবা পৌঁছে যাবে । বাবা পৌঁছলেই আমাদের খবরটা দিয়ে দিও ।

    ... দাঁড়াও দিচ্ছি । বৌদি ।

    [ ঝুমুরের দিকে ফোন এগিয়ে দেয় । ]

    ঝুমুর : দিদিভাই, বলো কেমন আছো ? আমরা দিব্যি আছি । বুবাইয়ের ছবি দেখলাম ইন্টারনেটে, এক্কেবারে তোমার মতো -- পরশু যাচ্ছি । .. হ্যাঁ, রীতাদির বাবা-মা এসেছিলেন, বাবার সংগে রীতাদির গয়নার সেট দেওয়ার জন্য । হ্যাণ্ডব্যাগেই ভরে দিয়েছি । বিউটিফুল জড়োয়া সেট, ভালোই খরচ করেছেন রীতাদির বাবা-মা মেয়ের গিফটে । পুরোটা কাজ করা ।

    আমি ... চলছে, কি আর করবো ? সংসার করছি মন দিয়ে । নাচটাই তো যা একটু পারতাম, কিন্তু বাঙালি পরিবার আর নাচ - দুটো বোধহয় দুদিকে চলে ।

    এই বয়সে আবার শুরু ? কি যে বলো । না গো, তোমাদের ওখানেই ওসব সম্ভব । এখন যদি তোমার দেওর একটু সময় বের করে নিয়ে প্রোগ্রামগুলোয় নিয়ে যায়, তাহলেই ঢের । একা একা যেতে ইচ্ছে করে, বলো ?

    ... এখন তো সেই খুশিতেই আছি - সুটকেস গুছিয়ে নিচ্ছি । ... বাবা পৌঁছলে ফোন কোরো । বাই ।

    নিলয় : চার ঘন্টা ধরে নাচ, প্রোগ্রাম, গয়নার গপ্পো - তোমরা পারোও বটে ।

    ঝুমুর : তা কি করবো, বিল্ডিং কনস্ট্রাকশনটা আবার আমার সেকরম আসে না, জানোই তো !


    নিলয় : অমনি একটা লেংগি দিলে তো !

    [ নিলয় কাগজপত্রে মনোনিবেশ করে । ]
    নিলয় : (চায়ে চুমুক দিয়ে) বৌদি চাকরিতে জয়েন করেছে ?

    ঝুমুর : বুবাই হবার পরে পরেই তো -- । সেও চার পাঁচমাস হলো ।

    নিলয় : বৌদির ক্যালি আছে কিন্তু । দশভুজা হয়ে বাচ্চা, সংসার, চাকরি - দাদা বললো ওরা শিগ্গীরই নাকি বাড়ি কিনছে ওখানে ।

    ঝুমুর : ভালোই তো । দিদিভাই যদি পারে, সেটা দেখেও আনন্দ । তবে কি জানো মশাই, সুযোগসুবিধা আর ওড়বার দুটো ডানা দিলে তোমার বৌও ---

    নিলয় : তোমাদের মেয়েদের ঐ একটা রোগ, অন্য কাউকে ভালো বললেই তোমরা নিজেদের সংগে কম্পেয়ার করতে থাকো -- আমি কি বলেছি একবারও যে তুমি পারতে না ?

    ঝুমুর : তা কম্পেয়ার করলেই বা কি মহাভারত অশুদ্ধ হয়ে গেল ? আমরা তো এখানে একরকম বন্দীই, না আছে নেশা, না আছে পেশা ---

    নিলয় : দ্যাখো না, সাকসেস কাকে বলে এখানেই তা দেখিয়ে দেব আমি । তারজন্য আমায় অ্যামেরিকায় যেতে হবে না । ও ছকটা আমি পুরো পেয়ে গেছি । জাস্ট প্ল্যানিং আর পরিশ্রম । তোমার বর কোথা থেকে কোথায় উঠবে, দেখে নিও । তুমিও ওড়বার ডানা এখানেই পেয়ে যাবে । (হাসি)

    ঝুমুর : সে আর বলতে !

    নিলয় : নাচ যদি শুরু করতে চাও তো করো না, আমার কোন আপত্তি নেই । প্যাঁ-পোঁ আসবার আগে পর্যন্ত --

    ঝুমুর : হ্যাঁ, তারপর ওরাই নাচিয়ে ছাড়বে । বাবার টর্চ বেয়ারার !

    নিলয় : খালি কটরমটর কথা । (গাল টিপে দিয়ে) এবার বেরোই । নইলে ঠিক সময়ে --

    ঝুমুর : কলামন্দিরের প্ল্যানটা ভুলো না যেন ।

    নিলয় : পাগল ! তোমার ওড়বার ডানা বলে কথা !



    ॥ প্রথম দৃশ্য সমাপ্ত ॥


    ॥ দ্বিতীয় দৃশ্য ॥


    [ আমেরিকায় নিখিল-নন্দিনীর বসার ঘর । নন্দিনী কোলাজটার সামনে কাজ করছে । নিখিল ভেতরের ঘর থেকে তৈরি হতে হতে ঢোকে । ]

    নিখিল : যাও যাও আর দেরি কোরো না, তৈরি হয়ে নাও । এখন আবার এটা ধরলে ? কাল তো রোববার - তুমি-আমি এক সংগে হাত লাগিয়ে শেষ করে ফেলবো --

    [ সামনে গিয়ে দাঁড়ায় । ]

    বাহ্‌ !

    নন্দিনী : দ্যাখো তো, আইডিয়াটা কেমন ? এখানে এটা ভালো দেখাচ্ছে ?

    নিখিল : চমত্কার ! বুবাই-এর তিনটে ছবি, কাঁদছে, অল্প হাসছে, হা হা করে হাসছে - দারুণ কম্পোজিশনটা করেছো তো !

    [ নন্দিনী প্রীত হাসে । ]

    শোনো । রঙিন কোরো না এটা । সাদাকালো করো । আচ্ছা, দাঁড়াও আমি স্ক্যান করে কনভার্ট করে দিচ্ছি --

    নন্দিনী : কাল কোরো, কাল কোরো । এখন বেরোতে হবে তো বাবাকে আনতে ।

    নিখিল : বাবা আসার আগেই ফ্যামিলি কোলাজটা শেষ করে ফেলতে পারলে ভালো হতো । আরে, এই ছবিটা পেলে কোথায় ?

    নন্দিনী : দেখি দেখি । ও, এটা ? তোমাদের বাড়িতে পুরোনো ছবির গাদায় নষ্ট হয়ে যাচ্ছিল -- খুব সুন্দর ছবি --

    নিখিল : (হাসতে হাসতে) বাবার বুকের ওপর আমি, বছর খানেক বয়েস তখন বোধ হয় --

    নন্দিনী : আর দুজনেই অঘোর ঘুমে । জানো, ঠিক এইভাবে বুবাইকে নিয়ে তুমিও মাঝে মাঝে ঘুমিয়ে পড়ো !

    নিখিল : স্ট্রেঞ্জ !

    নন্দিনী : স্ট্রেঞ্জ-ফেঞ্জ কিছু না, জেনেটিক্স্‌ ।

    নিখিল : হা হা ... তা হবে । আরে নন্দিনী, এটা -- এটা দ্যাখো । এটাকে এখানে দাও -- এই এই ভাবে ।

    নন্দিনী : এটা, এখানে ? (ছবিটা হাতে নিয়ে দেখতে দেখতে স্মৃতিমেদুর হাসি) মনে আছে তোমার এই ছবিটা কোথায় তোলা হয়েছিল ?

    নিখিল : পার্থর কাণ্ড । বইমেলায় আমাদের দুজনকে একসংগে আবিষ্কার করে কি উল্লাস তার ! জালে নাকি রাঘব বোয়াল পড়েছে ।

    নন্দিনী : (হাসতে হাসতে) আমাকে প্রথম পরিচয়েই বলল, "এতোদিন কোথায় ছিলেন" ? খুলুন তো ঐ দিদিমনি মার্কা চশমাটা ।

    নিখিল : আজ ব্যাটার সংগে বহুযুগ পর দেখা হবে ।

    নন্দিনী (ঘড়ি দেখে) : হ্যাঁ, এতক্ষণে পলাশ এয়ারপোর্ট থেকে পার্থকে পিক-আপ করে ফিরে এসেছে ।

    নিখিল (ব্যস্তসমস্ত হয়ে) : না: আমাদেরও আর দেরি নয় । ব্যাক টু অ্যাকশান । তুমি রেডি হয়ে নায়, আমি পলাশকে চট করে ফোন করে নিই । আধঘন্টা খানেক হাতে সময় আছে । বাবাকে রিসিভ করে ফিরে বাজারটা করতে হবে । কে করবে, তুমি না আমি ? আমি, আমিই করবো । তুমি খালি একটা লিস্ট করে ফেলো গাড়িতে যেতে যেতে --

    নন্দিনী : হ্যাঁ বুবাই-এর ফরমুলাও প্রায় শেষ ।

    নিখিল : লিখে রাখো । একটা গাড়িই যথেষ্ট, কি বলো ? লেট্স্‌ মুভ । যাও যাও ।

    নন্দিনী : যাচ্ছি বাবা । এয়ারলাইনে ফোন করে জেনে নিয়েছো তো প্লেন অন টাইম কিনা ?

    নিখিল : হ্যাঁ, অন টাইম । .. আজ কি রান্না করেছো ?

    নন্দিনী : বাবার ডায়েট জেনে নিয়েছি । রাতে যা খান, তাই রেঁধেছি -- রুটি কিনে এনেছি, পাতলা মুসুরির ডাল আর চিকেন স্টু ।

    নিখিল : আর আমরা ? আমরাও স্টু ?

    নন্দিনী : ইয়েস স্যার ।

    নিখিল (চুল আঁচড়াতে আঁচড়াতে) : হুঁ ।

    নন্দিনী : পছন্দ হলো না ? আচ্ছা, ফেরার সময় কিছু একটা পিক আপ করে নেবো 'খন ।

    আমি তৈরি হয়ে আসছি ।

    [ প্রস্থান । ]
    নিখিল : হ্যাঁ, আমিও ফোনটা সেরে --

    (ডায়াল করে) হ্যালো ? পলাশ ? আমি নিখিল বলছি । পার্থ এসে গেছে ? গুড । আমিও এইবার বাবাকে আনতে যাবো । হ্যাঁ, সন্ধেবেলা আড্ডা মারতে তো যাবোই । সবাই ? বাবাকে নিয়ে ? বাবাকে নিয়ে - বাবা কি অতক্ষণ জাগতে পারবে ? দাঁড়া এক সেকেণ্ড ।

    নন্দিনী, নন্দিনী !

    নন্দিনী : আসছি । (প্রসাধন করতে করতে ঢোকে) কি, কি বলছো ?

    নিখিল : পলাশ-রীতা । সন্ধেবেলা যেতে বলছে -- চিকেন স্টুয়ের চেয়ে ভালোই হবে ।

    (ফোনের দিকে), আচ্ছা, নন্দিনীকে দিচ্ছি ।

    রীতা কথা বলবে তোমার সংগে ।

    নন্দিনী : হ্যাঁ, বলো রীতা । হ্যাঁ সব রেডি । রেডি আর কি, বুড়োমানুষ একা আসছেন । ... তা ঠিক, শ্বশুর আর শাশুড়ি আসায় তফাৎ আছে । আমার শাশুড়ি তো এদেশটা দেখতে পেলেন না, তার আগেই ... । ওনারই দেশভ্রমণের বেশি শখ ছিল । বাবাকে তো একরকম টেনেই আনছি আমরা । ... হ্যাঁ হ্যাঁ, তোমার গয়নার সেটও আসছে । হ্যাণ্ডব্যাগেই দিয়েছে বললো ঝুমুর । সামনের উইকেণ্ডেই তো তোমার কাজিনের বিয়ে ? .. আজ -- চেষ্টা করবো, কিন্তু এখনই বলতে পারছি না । আর গেলেও রাত জেগে আড্ডা দেওয়া বোধহয় হবে না ।

    [ দরজায় বেলের আওয়াজ । ]

    নিখিল : আমি দেখছি ।

    [ নিখিল এগোয় দরজা খুলতে । ]

    নন্দিনী : কেউ এসেছে । ... মল-এ যাচ্ছো ? আচ্ছা, তাহলে এক কাজ করো না, মল থেকে ফেরার পথে একবার ড্রপ-ইন করে গয়নাটা নিয়ে যাও ? আমি যেতে পারবো কিনা তো বুঝতে পারছি না । জড়োয়া সেট - তোমারও নিশ্চয়ই আর তর সইছে না । (হাসি)

    [ নিখিল সাজিদ ভাইকে নিয়ে ঢোকে । ]

    নন্দিনী : রীতা, এখন রাখছি তাহলে । ওকে, বাই । (ফোন রেখে) আসুন আসুন, সাজিদ ভাই ।

    সাজিদ : গুড মর্নিং, গুড মর্নিং ! শনিবার সক্কালে উইঠাই চইলা আসছি । ফোন কইরা আসা টাসা আমার ধাতে নাই, জানেনই তো ! তার উপর আপনাদের মিষ্ট খবর দিব !

    নন্দিনী/নিখিল : কি ? কি ?

    সাজিদ : বিশ্বাসযোগ্য সূত্রে খবর আসছে - ডলি ড্রাইভের বাড়ির ফরে আপনাদের অফারটাই একমাত্র স্ট্যাণ্ড করতাছে ।

    নন্দিনী : রিয়ালি !

    নিখিল : গ্রেট ! ঐ বাড়িটা আমাদের দুজনেরই এক বাক্যে পছন্দ হয়ে গিয়েছিল ।

    নন্দিনী : আমার ভীষণ আনন্দ হচ্ছে ! বাড়িটার সামনে পেছনে কতটা খোলা জায়গা, অ্যাপার্টেমন্টে থেকে থেকে দমবন্ধ হয়ে যাচ্ছে আমার ।

    সাজিদ : শুভস্য শীঘ্রম্‌ । তাই সক্কালেই কাগজ লইয়া চইলা আসছি । এইটা পইড়া সাইন দ্যান দুজনে ।

    নন্দিনী : বসুন না সাজিদ ভাই । -- চা খাবেন তো ?

    সাজিদ : অবশ্যই, অবশ্যই ।
    নন্দিনী : একটু বসুন, এখুনি নিয়ে আসছি ।

    [ প্রস্থান ]

    সাজিদ : এর পর যাইতে হইবো ডিয়েগোবাবুর বাড়ি । গাছপালা মিশানো সবুজ চা যাতে না খাইতে হয়, তাই ফার্স্ট আপনার এইখানেই আসছি ।


    সাজিদ : (বসে) তা সকালবেলাতেই আপনারা একেবারে জোড়ে সুটেড-বুটেড ? (কাগজপত্র বের করতে করতে) বেড়াইতে যাইতেছেন নাকি ?

    [ নিখিলের দিকে কাগজগুলো এগিয়ে দেয় ]

    নিখিল : না । আজ বাবা আসছেন দেশ থেকে । এয়ারপোর্টে বেরোবো শিগ্গীরই ।

    সাজিদ : তাইলে তো আপনাদের ষোলো কলা ।

    [ নিখিল হেসে কাগজপত্র উল্টোতে থাকে । ]

    নিখিল : বাপরে, এ যে বিরাট নথি ।

    সাজিদ : পড়তে চাইলে পড়েন । না চাইলে, ঐ লাল-দাগ মারা জাগাগুলায় সাইন মারেন । তালেই হইবো ।

    সাজিদ : নিখিলদা, আমি চট কৈরা একটা টেলিফোন সেরে লই ।

    সাজিদ : ব্যানার্জীদা, আমি সাজিদ কইতাছি । তারপর কেমন আছেন ? আমি ! সাজিদরে কখনো খারাপ থাকতে দ্যাখছেন ! .. হ্যাঁ, তারপর ইলিশ মাছগুলান সব একাই খাইলেন ? .. (হাসি) .. না, না । আসলে মিতা বৌদির সাথে বাজারে দেখা হইল তাই ।

    তারপর বাড়িটার কি ঠিক করলেন ?

    অ্যায় না না, ব্যানার্জীদা, বাড়িটার দাম ঠিকই আছে । বাজার এখন মন্দ আদারওয়াইজ হিলভিউতে অতো বড় বাড়ি আপনি ঐ দামে কোনভাবেই পাইবেন না ।

    [ নন্দিনীর চা হাতে প্রবেশ । ]

    বুঝছি, বুঝছি । আপনি বৌদিরে এক্টু বুঝান । আর দেরি করবেন না, বাড়িটা অন্তত একবার দেখে আসেন ।

    আচ্ছা ঠিক আছে কাল সকাল নয়টার সময় রেডি থাকবেন । আমি আপনাদের তুলে নিব । মিতা বৌদিরেও তৈরি থাকতে কইবেন ।

    আচ্ছা, ঠিক আছে তাহলে । ভালো থাকবেন । বাই ।

    [ নন্দিনী সাজিদকে চা দেয় । ]

    সাজিদ : (চায়ের কাপে পরিতৃপ্তির চুমুক দিয়ে) নিখিলদাকে কইতেছিলাম - আপনাদের তো ষোলো কলা । তিন জেনারেশন একত্রে নতুন বাড়ির উদ্বোধন করবেন ।

    নন্দিনী : সাজিদ ভাই, আমার শ্বশুর মশাই যখন শুনবেন যে আমরা এখানে বাড়ি কিনছি, তাঁর যে সেটা খুব ভালো লাগবে তা নয় ।

    সাজিদ : সে কি, ক্যান ?

    নন্দিনী : উনি এদেশটাকে মোটেই পছন্দ করে উঠতে পারেন না ।

    নিখিল : হ্যাঁ, বাবা একটু আদর্শবাদী মানুষ । বাড়ি কেনা মানেই বিদেশে গেঁড়ে বসা ওনার কাছে ।

    নন্দিনী : আগে যে দুবার এসেছেন, দু সপ্তাহ থাকার পর থেকেই ওনার প্রাণ আইঢাই । কবে দেশে ফিরবেন !

    সাজিদ : তখন কি বুবাইবাবু সীনে ছিলেন ?

    নন্দিনী : না, বুবাই হয়নি তখনো ।

    সাজিদ : অ্যায়, ওইটাই ধন্বন্তরি । এইবার দাদুভাইয়ের মুখ দেইখা সব ভুলবেন । আর দেশে ফিরতেই চাইবেন না ।

    নন্দিনী : বুবাইয়ের কথা বলেই তো ওঁকে টেনে আনছি ।

    একটু বসুন, এখুনি আসছি ।

    [ নন্দিনীর প্রস্থান । নিখিল পাতা উল্টে দেখে যায় । ]

    সাজিদ : নিখিলদা, পড়লেন নাকি ?

    নিখিল : (ফেরত দিতে দিতে) এখন এতো সব তো ডিটেলে পড়ার টাইম নেই । আপনি কি বিকেলে আসতে পারবেন কাগজপত্র নিয়ে ?

    সাজিদ : (ঘড়ি দেখে) আফটারনুনে ? আফটারনুনে তিনটার সময় আমি ফ্রী আছি ।

    নিখিল : তাহলে প্লীজ ওই সময়েই আসুন ? এখন বেরোবার তাড়া । আর শুভকাজটা না হয় বাবার সামনেই সারব ।

    [ নন্দিনীর প্রবেশ । হাতে বাচ্চার কেরিয়ার । নিচে নামিয়ে রাখে । ওপরের হুডটি তুলে দেবার কারণে বাচ্চা দর্শকদের কছে দৃশ্যমান নয় । ]

    সাজিদ : হ্যালো বুবাইসোনা ! .. বড় মিস্ট হইছে আপনাদের ছেলে ।

    [ নন্দিনী হাসে । ]

    নন্দিনী : সাজিদ ভাই - দেখবেন ওনার যা যা আপগ্রেড প্রমিস করেছে একটাও যেন মিস না হয় । বুঝতেই তো পারছেন, পা থেকে মাথা পর্যন্ত বন্ধক রেখে আমাদের বাড়ি কেনা --

    সাজিদ : অল কমপ্লীট অ্যাণ্ড ডান । সাজিদ হক সেসব ঠিক না কইরা কমিট করার বান্দাই নয় । আপনারা শুধু সইগুলা মারবেন আর চাবি লইবেন ।

    নিখিল : (উঠে দাঁড়াতে দাঁড়াতে) আর দেরি করতে পারছি না । এখন না বেরোলে বাবাকে বেরিয়ে একা একা দাঁড়িয়ে থাকতে হবে ।

    সাজিদ : ওরে বাবা, শিগগীর বাইরোন তালে । নূতন দেশ, নূতন ভাষা, নূতন চেহারার লোক !

    নন্দিনী : না না, উনি তো আগেও দুবার এসেছেন । কোন অসুবিধে হবে না । তাছাড়া আমরাও ঠিক সময়েই এয়ারপোর্টে পৌঁছে যাবো ।

    নিখিল : শনিবারের সকাল তার ওপর, রাস্তা ফাঁকা ।

    সাজিদ : ওকে, ওকে । বাই বাই । বাই বুবাই ।

    [ বুবাই-এর কেরিয়ারকে উদ্দেশ্য করে সাজিদ ভাই হাত নাড়েন । বাচ্চার কেরিয়ার সহ সকলের প্রস্থান । ]


    ॥ দ্বিতীয় দৃশ্য সমাপ্ত ॥




    ॥ তৃতীয় দৃশ্য ॥


    [ একই স্থান - নিখিলের বসার ঘর । নিখিল অস্থিরভাবে পায়চারি করছে । নন্দিনী পাশে সোফায় বসে । চিন্তান্বিত । নাম্বার ডায়াল করে, পায় না । কিছুক্ষণ পরে আরেকটা ডায়াল করে, মাঝপথে কেটে দেয় । আবার চেষ্টা করতে থাকে । বোঝা যায়, সে খুব চিন্তিত । ]

    নিখিল : দিস ইস সো আনবিলিভেবল !

    [ নন্দিনী নিখিলের কাছে উঠে এসে বলে । ]

    নন্দিনী : সব ঠিক হয়ে যাবে । শান্ত হও । টেনশান কোরো না ।

    নিখিল : কি করে এটা হতে পারে ? আমি তো কোন যুক্তিই খুঁজে পাচ্ছি না ।

    নন্দিনী : একটু সময় দাও । যা করার আমরা তো করছিই ।

    [ নিখিল নন্দিনীর হাত সরিয়ে উঠে পড়ে । আবার ডায়াল করতে তহকে । পাশের ঘর থেকে বুবাই ট্যাঁ করে কেঁদে ওঠে । ]

    নিখিল : আ:, ওকে থামাও না ! দেখছো না একটা ইম্পর্টেন্ট কাজ করছি ।

    [ নন্দিনী পশের ঘরে বুবাইকে থামাতে চলে যায় । নিখিল ডয়াল করে টেলিফোনে । ]

    নিখিল : নিলয়, নতুন কোন খবর পেলি ? না, এদিকেও খবর নেই কিছু । তুষারমামাকে কনট্যাক্ট করে দেখবি কিছু হয় কিনা ? আইএএস অফিসার ছিলেন তো --

    হ্যাঁ, হ্যাঁ আমি এদিকে যা কিছু সম্ভব --

    হ্যাঁ ওসব সোর্স অলরেডি দেখে নিয়েছি ।

    পুলিস ? আমি ঐ লেভেলে ব্যাপারটাকে এখনো নিতে চাইছি না । বুঝতেই পারছিস এখন যা আন্তর্জাতিক পরিস্থিতি -- বাঘে ছুঁলে আঠেরো ঘা । খুব সামান্য ব্যাপার হয়তো, কি বলিস ?

    [ নন্দিনীর প্রবেশ । ]

    নাথিং সিরিয়াস - আমরা অযথা ভয় পাচ্ছি । না, না - ভাইজাগের প্ল্যান বাতিল করবি কেন ? বললাম তো, চিন্তার কিছু নেই ।

    [ দরজায় বেলের শব্দ, নন্দিনী "আমি দেখছি" বলে এগোয় । ]

    যত রাতই হোক, নতুন খবর পেলেই আমায় একটা ফোন করে জানাবি ।

    .. শোন । হোয়াট ইজ ইয়োর ফিলিং ? ভয়ের কিছু নেই, বল্‌ ? .. না না, আই অ্যাম ফাইন । বিদেশ বিঁভুই হলেও বন্ধুরা তো আছে হেল্প আউট করার মতো । .. এখন রাখি । বাই ।

    [ নন্দিনী পলাশ রীতাকে নিয়ে ঢোকে । ]

    পলাশ : বাইরে তোমাদের গাড়ি পার্ক করা দেখেই বুঝলাম --

    রীতা : তোমাদের এখন কি মজা ! নন্দিনী, তোমার সব ফর্মায়েশি জিনিস এসে গেছে তো ? দেশের পাটালি, জামদানি আর ব্যাগভর্তি গল্পের বই --

    পলাশ : আমরা তো তাই সাত তাড়াতাড়ি মেসোমশাইকে প্রণাম করতে চলে এলাম । রীতার অবশ্য অন্য একটা ইনসেনটিভও --

    রীতা : দাঁড়াও, দাঁড়াও । নিখিলদা, হোয়াট হ্যাপেন্ড ? তোমাদের এরকম দেখাচ্ছে কেন ?

    নন্দিনী : স্যরি রীতা, তোমার গয়নার সেট আসেনি । বাবাও আসেননি ।

    পলাশ : মানে ? ট্রিপ ক্যানসেল করেছেন ?

    রীতা : মেসোমশাইয়ের শরীর ?

    নিখিল : (কপাল চেপে ধরে) কিচ্ছু জানি না । কলকাতা থেকে সিংগাপুরের ফ্লাইটে নিলয় তুলে দিয়েছে, তারপর আর কোন খবর নেই !

    পলাশ : সে কি !

    রীতা : মাই গড !

    নন্দিনী : এয়ারপোর্টে তিন ঘন্টা দাঁড়িয়ে থাকার পরেও যখন বাবা বেরোলেন না, আমরা বুঝলাম সামথিং ইজ রং ।

    নিখিল : আই অ্যাম টোটালি আউট অফ মাই উইট । কি করবো কিছু বুঝতে পারছি না । কারুর কাছে কোন ক্লু নেই ।

    রীতা : তোমরা মেসোমশাইকে খুঁজে না পেয়ে কি করলে ?

    পলাশ : নিশ্চয়ই ফ্লাইট মিস করেছেন !

    নিখিল : মনে হয় না ফ্লাইট মিস করেছেন বলে । সিংগাপুরে ছ ঘন্টার ওয়েট পিরিয়ড ছিলো । তারপরেও তো একদিন হয়ে গেছে -- ফ্লাইট মিস করলে কি একটা ফোন করতেন না ?

    [ সাজিদ ভাই-এর প্রবেশ । দরজা খোলাই ছিল । ]

    সাজিদ : চাঁদের হাট এক্কেরে ! হ্যালো । আই অ্যাম সাজিদ হক । মিস্টার ব্যানার্জী'স রিয়াল এস্টেট এজেন্ট ।

    [ পলাশের সংগে হ্যাণ্ডশেক করতে যান । পলাশ হাত বাড়িয়ে দেয় । তারপর সাজিদ রীতার দিকে হাত বাড়ান, রীতা লক্ষ না-করে কথা বলে চলে । সাজিদ হাত গুটিয়ে নেন । ]

    রীতা : কিন্তু খোঁজখবর না নিয়েই তোমরা চলে এলে ?

    নন্দিনী : না, না - খোঁজ তো নিচ্ছিই । এয়ারলাইন থেকে জানালো, সিংগাপুরের পর থেকে বোর্ডার লিস্টেই বাবার নাম নেই । সিংগাপুর অবধি শুধু বাবাকে ট্রেস করা গেছে ।

    নিখিল : পৃথিবীর এক প্রান্তে বসে অন্য প্রান্তে দুদিন আগে কি হয়েছে -- কে তার খোঁজ দেবে !

    নন্দিনী : নিখিল, খোঁজ আমরা পাবোই । ভরসা রাখো ।

    নিখিল : বাবা কি অবস্থায় আছে কে জানে । খোঁজ হয়তো পাবো, অনেক দেরিতে --

    নন্দিনী : কি আজেবাজে কথা ভাবছো ।

    পলাশ : নন্দিনী যা বলছে সেটাই ঠিক । লেটস হোপ ফর দ্য বেস্ট । একটা লোক আজকের দিনে এইভাবে উধাও হয়ে যেতে পারেন না ।

    রীতা : আর লাগেজ ? সব মিসিং ? জিনিসপত্র ?

    পলাশ : আহা, সেটা মাইনর ব্যাপার । মেসোমশাই-এর কি হলো সেটা জানাই এখন প্রাইমারী --

    রীতা : (অপ্রতিভ) হ্যাঁ - লাগেজের খবর জানলে মেসোমশাইকে কোনভাবে হয়তো ট্র্যাক করতে সুবিধা হবে, সেই ভেবেই বলা --

    নন্দিনী : লাগেজ পৌঁছেছে । সে তো কলকাতা থেকে একবারে চেক ইন করা হয়েছিল ।

    রীতা : যাক্‌ !

    নন্দিনী : তবে আমরা ছাড়াতে পারিনি । কাস্টম ক্লিয়ারেন্সের পর ওরা ওপরের অ্যাড্রেসে দিয়ে যাবে বলেছে ।

    [ সাজিদ ভাই এতক্ষণ এর দিকে, ওর দিকে তাকিয়ে ঘটনাটা বোঝার চেষ্টা করছিলেন । বুঝে ফেলেছেন মোটামুটি । ]

    সাজিদ : টু ব্যাড ।

    নিখিল : অ্যাঁ ? হ্যাঁ । (ডায়াল করতে থাকে)

    সাজিদ : টেন্সড হইবেন না ।

    নিখিল : হুঁ । (ডায়াল করা থামিয়ে দেয়)

    সাজিদ : উনি তো আগেও আসছেন ।

    নন্দিনী : হ্যাঁ, দুবার এসেছেন এর আগে ।

    সাজিদ : বুবাইবাবুর জন্য সিংগাপুরিয়ান খেলনা কিনতে গিয়া ফ্লাইট ধরতে পারেন নাই ।

    রীতা : উফ্‌ !

    নন্দিনী : (ম্লান হেসে) সাজিদ ভাই, সেইরকমই কিছু যেন হয়, আমরাও তাই প্রার্থনা করছি । হয়তো এয়ারপোর্টে ঘুমিয়ে পড়েছিলেন, উঠতে পারেননি ঠিক সময়ে । খেয়ালি মানুষ, হয়তো সিংগাপুর শহর দেখতে বেরিয়ে পড়েছিলেন । সবই এখন হয়তো --

    নিখিল : আজকে আর কাগজপত্র --

    সাজিদ : এই যে, বার করছি । উইকেণ্ডেই সেরে ফ্যালেন ?

    নন্দিনী : আমাদের এই মনের অবস্থায় এখন --

    রীতা : ও, তোমাদের বাড়ি পছন্দ হয়ে গেলো ? কত পড়লো গো ?

    নন্দিনী : এখনো কিছু ফাইনালাইজড হয়নি ।

    সাজিদ : এই যে কাগজ, পড়ে ফ্যালেন চট করে ।

    নিখিল : সাজিদ ভাই, আজ বরং থাক । দু-একদিন ওয়েট করা যায় না ?

    সাজিদ : অফার তো অ্যাকসেপ্ট করছে - কাল ইভনিং পর্যন্ত টাইম আছে । দ্যাখেন তালে বাবা এসে পৌঁছন কিনা তার মধ্যে ।

    নন্দিনী : কিন্তু ... দেরি হয়ে গেলে ডিলটা হারাবার কোন সম্ভাবনা নেই তো ?

    নিখিল : না হলে না হবে, কিন্তু এখন কাগজপত্র পড়ার সময় নেই আমার, ইচ্ছেও করছে না ।

    নন্দিনী : আমি ... পড়ে দেখবো ?

    সাজিদ : শোনেন শোনেন, তাড়ার কিছু নাই । আপনেরা কনফ্লিক্ট করবেন না । আমি আগামীকাল আসব ।

    নিখিল : আর প্লীজ একটু ফোন করে আসবেন ।

    সাজিদ : ওকে, ওকে । যা বলেন । অ্যাজ ইউ উইশ ।

    নন্দিনী : সাজিদ ভাই, চা খাবেন ?

    সাজিদ : না নন্দিনীদি । আগামীতে হবে । চা মিষ্টি দুইটাই । মেসোমশাই ফিরে আসুন । বেস্ট অফ লাক ।

    [সাজিদের প্রস্থান । ]


    নিখিল : (অস্থিরভাবে পায়চারি করতে করতে) বাবার ... শরীরও এরমধ্যে যথেষ্ট ভালো ছিলো ।

    নন্দিনী : কিছুদিন আগেই তো একটা থরো চেক-আপ করিয়ে নেওয়া হয়েছিলো ।

    পলাশ : তাছাড়া ইনসিওরেন্স নিতে গেলেও চেক করে শুনেছি ।

    রীতা : (বসে পড়ে) তোমরা কোথায় বাড়ি কিনছো গো নন্দিনীদি ?

    নন্দিনী : সিলভার ত্রক্রীকে ।

    রীতা : ওহ্‌, সে তো খুব পশ জায়গা ।

    [ নিখিল উঠে ফোনে ডায়াল করতে থাকে । পায় না । ]

    রীতা : নিখিলদার কম্পানির অবশ্য এই বাজারেও দারুণ রমরমা ।

    নন্দিনী : এখন আর বাবার চিন্তা ছাড়া কিছু নেই মাথায় । ... চা খাবে তোমরা ? আমার বেশ মাথাটা ধরেছে ।

    পলাশ : তোমরা বরং রেস্ট নাও, আমরা --

    রীতা : আমার চায়ে আপত্তি নেই ।

    [ নন্দিনীর প্রস্থান । ওদিকে ফোন বাজে । নিখিল অস্ফুটে ইংরেজিতে কিছু বাক্যালাপ করে । ফোন রেখে ফিরে আসে । ]

    নিখিল (চেঁচিয়ে ভেতরে নন্দিনীকে উদ্দেশ্য করে) : লাগেজ পৌঁছে দিতে এসেছে ওরা । আমি ঘুরে আসছি একটু নীচে থেকে ।

    পলাশ : তোর কি হেল্প লাগবে ?

    নিখিল : না, ওরাই তুলে দিয়ে যাবে । আমি জাস্ট এগিয়ে দেখি ।

    [ নিখিল বেরিয়ে যেতেই ]

    রীতা : কি লাক আমার ! বাপটুর বিয়েতে গয়না তো পরা হবেই না, এখন দুলাখ টাকার সেটটা না হারায় ।

    পলাশ : কি যা তা বলছো ? মেসোমশাই ফিরে এলেই পেয়ে যাবে তোমার জিনিস ।

    রীতা : ওরাই তো বললো, বাবা আগেও দুবার এসেছেন এদেশে । ওনার একা আসা নিয়ে কোন প্রবলেম নেই । সেই ভেবেই না আমি --

    পলাশ : আমি তো তোমাকে তখনই বলে ছিলাম, দামি জিনিস অন্য কারুর হাত দিয়ে আনতে দিয়ো না --

    রীতা : হ্যাঁ, তখন তোমার কথা শুনলেই হতো ।

    পলাশ : কিন্তু এদের প্রবলেমটা তোমার গয়নার প্রবলেমের চাইতে অনেক বেশি অ্যাকিউট । কাজেই গয়না নিয়ে অত শোক করা আপাতত: মুলতুবি রাখো ।

    রীতা : শোক করছি না । .. কিন্তু অত টাকার অত সুন্দর জড়োয়া সেট -- । .. হ্যাঁ গো, কেউ ঐ সেটের লোভে মেসোমশাইকে কিছু করেনি তো ?

    পলাশ : কে কি করে জানবে হ্যাণ্ডব্যাগে কি আছে ?

    রীতা : কেন, ওরা যে স্ক্যান করে সবকিছু, দেখতে পাবে না ? যারা চেক করে, তাদের মধ্যে যদি কারুর সংগে গুণ্ডাদের কানেকশান থাকে ?

    পলাশ : হুম্‌ ।

    রীতা : থাক্‌, এ নিয়ে তোমার আর কিছু বলার দরকার নেই ওদের ।

    পলাশ : বাট দ্যাটস আ গুড পয়েন্ট । ওটা একটা সুত্র হতে পারে ।

    রীতা : ওরা পুলিশকে খবর দিয়েছে নিশ্চয়ই । তোমার আর গোয়েন্দাগিরি করে কাজ নেই বাপু ।

    [ নন্দিনী চা নিয়ে ঢোকে । রীতাকে দেয় ও নিজে নেয় । রীতা টেবিলে নামিয়ে রেখে কথা বলে চলে । ]

    রীতা : আমি পলাশকে বলছিলাম, তোমরা নিশ্চয়ই সব জায়গায় খবর দিয়েছো । এয়ারলাইন, পুলিস, ইমিগ্রেশন ইত্যাদি ।

    নন্দিনী : পুলিশ ? না, পুলিশে তো খবর দিইনি ।

    পলাশ : সেটা বোধ হয় দিয়ে রাখা দরকার ।

    নন্দিনী : বাবার মতো বয়স্ক লোককে কেন কেউ --

    রীতা : না, না ওসব কিছু হবে না - কিন্তু তোমাদের সব দিকেই তো চিন্তা করতে হবে, তাই না ? পুলিশে জানিয়ে রাখা ভালো ।

    নন্দিনী : হ্যাঁ, ঠিকই বলেছো । জানানো দরকার ।

    [ ইতিমধ্যে নিখিল লাগেজ নিয়ে বাইরের দরজা দিয়ে ঢুকে ভেতরের ঘরে সুটকেস রেখে আসে । ]

    রীতা : (ভেতরের ঘরের দিয়ে তাকিয়ে) যাক অ্যাট লিস্ট জিনিসগুলো - (থেমে যায়)

    নন্দিনী : চাবি তো বাবার কাছে । তাছাড়া বাবা যখন আসবেন, বাবার আনা জিনিস বাবাই খুলবেন । বাবা তো আসবেনই ।

    [ সবাই চুপ হয়ে যায় । নিখিল ফিরে আসে । ]

    রীতা : (নৈ:শব্দ্য ভেঙে) হ্যাঁ, সে তো ঠিকই । ... তোমার দেওরের কাছে ডুপ্লিকেট নেই ?

    নিখিল : সে পরে দেখা যাবে । চাবি নিয়ে মাথা ঘামানোর এখন --

    নন্দিনী : চা নাও, রীতা । ঠাণ্ডা হয়ে যাচ্ছে ।
    রীতা : হ্যাঁ, নিচ্ছি । (চায়ের কাপ তুলে, কিন্তু কিন্তু করে) একটা কথা, নন্দিনীদি । আমার জড়োয়া সেট, বাই এনি চান্স্‌ কি এই সুটকেসে --?

    নন্দিনী : না, এই সুটকেসে থাকবে না । ঝুমুর যত্ন করে বাবার হ্যাণ্ডব্যাগে ঢুকিয়ে দিয়েছে সেটটা । তুমি তো তাইই চেয়েছিলে ।

    রীতা : হ্যাঁ, সে তো চেয়েইছিলাম, কিন্তু কে জানতো --

    পলাশ : রীতা !

    নন্দিনী : রীতার খারাপ লাগা স্বাভাবিক । বাবা ফিরে এলে তোমার গয়নাও এসে যাবে রীতা । নয়তো - দেখা যাক আমরা কি করতে পারি ।

    রীতা : না, না সে নিয়ে তুমি একদম ভেবো না নন্দিনীদি । আজ সন্ধেয় আসছো তো ? এসে গল্পগুজব করলে হয়তো একটু বেটার ফিল করবে ।

    নিখিল : এই পরিস্থিতিতে মনে হয় না যেতে পারবো বলে ।

    নন্দিনী : আর কখন কি দরকারি ফোন আসে, তার জন্য থাকতে হবে তো ।

    রীতা : কেন, সেলফোনের নাম্বার দাওনি ?

    পলাশ : জোরজার কিছু নেই, সম্ভব হলে এসো । ... আমরা এবার আসি । পরে ফোন করব ।

    রীতা : কোন দরকার হলে জানাতে একদম হেজিটেট কোরো না কিন্তু ।

    নন্দিনী : শিওর ।

    [ রীতা ও পলাশের প্রস্থান । ওদের দরজা পর্যন্ত এগিয়ে দিকে নন্দিনী ফিরে আসে । ]

    নিখিল : এই তো তোমার বন্ধু সমাজের নমুনা ! নিজেরটা ছাড়া আর কিছু বোঝে না ।

    নন্দিনী : আর তোমার আত্মীয়সমাজ এরকম ক্ষেত্রে কি করতো শুনি ?

    নিখিল : অ্যাট লিস্ট এই বিপদের সময়ে গয়না গয়না করে মাথা খারাপ করে দিতো না ।

    নন্দিনী : অবস্থায় না পড়লে বোঝা যায় না যে কে কিরকম ব্যবহার করে ।

    [ নিখিল কপাল চেপে ক্লান্তভাবে বসে পড়ে । নন্দিনী এসে ওর হাত তুলে নেয় নিজের হাতে । ]

    নন্দিনী : বাবা হারিয়ে যাবার মানুষ নন । আমার মন বলছে, ঠিক খোঁজ পাওয়া যাবে ।

    [ কয়েকটি মুহূর্ত এইভাবে কাটে । এরমধ্যে হঠাৎ সাজিদ ভাই-এর প্রবেশ । ]

    সাজিদ : (গলা খাঁকারি দেয়) দরজা খোলা দেইখা ফোন না কইরাই ঢুকে পড়লাম । এইটা রাখেন ।

    নন্দিনী : কি এটা ?

    সাজিদ : অল্প গরম খাবার । ভাবলাম, টেনশানে নিশ্চয়ই আপনারা ক্ষুধাতৃষ্ণা ভুলছেন । পৌঁছাইয়া দিই । ভালো চাইনীজ ফুড । ন্যান ধরেন - কিন্তু কিন্তু করনের কিছু নাই ।


    ॥ তৃতীয় দৃশ্য সমাপ্ত ॥





    ॥ চতুর্থ দৃশ্য ॥



    [ দেশের লিভিং রুম । টিভিতে গান চলছে । নিলয় টিভির দিকে চেয়ে আছে, কিন্তু কিছু দেখছে বলে মনে হচ্ছে না । চ্যানেল সার্ফ করে চলেছে অস্থিরভাবে । চেয়ারে বসে ঝুমুর খবরের কাগজ পড়ছে । ]

    নিলয় : আচ্ছা, বাবা ব্রাউন সোয়েটারের নীচে কি পরেছিল মনে আছে ?

    ঝুমুর : সোয়েটারের নীচে কি পরেছিলেন দেখবো কি করে ?

    নিলয় : তুষারমামা জিগ্যেস করছিলেন ।

    ঝুমুর : ও । হ্যাঁগো, তুষারকাকারা কি এখনো লেক গার্ডেনসে ?

    [ নিলয় উত্তর দেয় না । ঝুমুর একটু অপেক্ষা করে আবার চোখ নামিয়ে খবরের কাগজ পড়তে থাকে । ]

    নিলয় : বাবা এয়ারপোর্টে একজন কো-প্যাসেঞ্জারের সংগে কথা বলছিলো না ?

    ঝুমুর : হ্যাঁ, একজন অবাঙালি ভদ্রলোক । একই ফ্লাইটে যাচ্ছিলেন, সিংগাপুরে যাবেন বলছিলেন ।

    নিলয় : (আগ্রহ নিয়ে) নাম ? নাম মনে আছে ?

    ঝুমুর : নাহ্‌ ।

    নিলয় : কোলকাতায় কোথায় থাকেন ভদ্রলোক ?

    ঝুমুত : আমি কি অতো জিগেস করেছি ? (মনে পড়ার ভঙ্গিতে) ... ও, উনি বলছিলেন বড়বাজার থেকে আসতে খুব জ্যামে পড়তে হয়েছে । মনে হয়, বড়োবাজারের বিজনেসম্যান ।

    নিলয় : ওনার কাছ থেকে নিশ্চয়ই কিছু ইনফরমেশন পাওয়া যাবে । বড়বাজারে লোকটার ফ্যামিলিকে গিয়ে খুঁজে বের করি --

    ঝুমুর : তোমার কি মাথা খারাপ হয়েছে ? বড়বাজার কি একটা গলি ?

    নিখিল : (অস্থির ভঙ্গিতে) তাহলে কি করা যায় ? .. আচ্ছা, বাবা যদি ঐ ভদ্রলোকের সংগে তার বাড়িতে চলে গিয়ে থাকে ?

    ঝুমুর : (অল্প হেসে) হ্যাঁ, তোমার বাবা তা করতেই পারেন ।

    নিলয় : বাবার কি কোন কাণ্ডজ্ঞান নেই যে ওরকম করতে যাবে ?

    ঝুমুর : কেন, সেই হরিদ্বারে মনে নেই ? মা মারা যাবার পর আমরা যেবার গেলাম ? সকালে উঠে একা একা বেরিয়ে গিয়ে গঙ্গার ধারে বসে আছেন, সারাদিন কোন খোঁজ নেই । আমরা চিন্তায় মরি ।

    নিলয় : আহা, সে তো কয়েক ঘন্টার ব্যাপার । বিকেল হতে না হতেই ঠিক ফিরে এসেছিলো - এখানে তো একদিনেরও বেশি হয়ে গেছে --

    ঝুমুর : তাতে কি হয়েছে ? এবার হয়তো খেয়ালের মাত্রাটা আর একটু বেড়েছে ।

    নিলয় : চুপ করো তো !

    [ নিলয় টিভির রিমোট নিয়ে খেলা করে । ]

    নিলয় : টিভিতে একটা অ্যাড দেবো কি ?

    ঝুমুর : এখানকার টিভিতে অ্যাড দিয়ে কি হবে ?

    নিলয় : বাবা তো কোথাও যেতে চাইতো না, শুধু নিজের ঘরে বসে চুপ করে বই পড়া - ওই কাজ ।

    ঝুমুর : কতবার বলেছি বেড়াতে চলুন আমাদের সংগে । বাইরে গেলে মনটা তরতাজা হয়ে যাবে । ভালো লাগবে । তা কক্ষনো নিতে পারিনি । ফলে আমরাও তো এদ্দিন কোথাও --

    নিলয় : বাবার জন্য বেড়াতে যেতে পারিনি । এবারও বোধ হয় পারবো না ।

    [ কিছুক্ষণ এইভাবে কাটে । ঝুমুর গুনগুন করে রবীন্দ্রসংগীত গাইতে থাকে ।]

    নিলয় : বন্ধ করো না ! ভাল্লাগছে না ।

    ঝুমুর : তুমি যে কি না ! মাথার চুল ছিঁড়লেই কি সলিউশন বেরোবে ?

    নিলয় : (ব্যস্ত ভঙ্গিতে উঠে দাঁড়িয়ে) একটু ঘুরে আসি ।

    ঝুমুর : কোথায় যাচ্ছো এখন ? এই শোনো, এইসব খবর পাওয়ার আগে আমি একটা নতুন পেস্ট্রী বানাচ্ছিলাম - ওটা একটু খাবে ?

    নিখিল : না, এখন খিদে নেই ।

    [ বেরিয়ে যায় । ঝুমুর রুষ্ট হয় । তারপর আবার রবীন্দ্রসংগীত গুনগুন করে গাইতে গাইতে ঘর পরিষ্কার করতে থাকে । নিলয় আবার ঢোকে । ]

    ঝুমুর : কি হলো ? তপনরা নেই ?

    নিলয় : না, গেলাম না আর । কি হবে ? ঐ একই সান্ত্বনার কথা শোনাবে ।

    [ বাইরের দরজায় আবার আওয়াজ । ]
    নিলয় : কে এলো আবার ।

    [ রামজ্যাঠার প্রবেশ । ]

    জ্যাঠা : দু:সংবাদ আর দাবানল - দুইই হু হু করে ছড়িয়ে পড়ে । নৃপেনের খবর শুনলাম বংকুর দোকানে । তা আমি বলতে এলাম --

    নিলয় : (হঠাৎ উত্তেজিত হয়ে) হ্যাঁ হ্যাঁ জানি । আমি আর দাদা দুজনে বাবার অপদার্থ ছেলে - এই তো ? বাবাকে নিয়ে পিঙপঙ খেলেছি, তাই এই দুর্ঘটনা । আর আপনি তো সব আগেই বুঝেছিলেন, বলেছিলেন ।

    জ্যাঠা : এসো এদিকে এসো ।

    [ নিলয়কে হাত ধরে টেনে । ]

    নিলয় : কি ব্যাপার কি ?

    জ্যাঠা (ধমক দিয়ে) : বোসো বলছি ।

    [ নিলয় বসে পড়ে । ]

    জ্যাঠা : আমি শুধু নিন্দেমন্দই করি তোমাদের ?

    [ নিলয় গোঁজ হয়ে বসে থাকে । ]

    কি, বলো ?

    ছ্যা ছ্যা ছ্যা ছ্যা ছ্যা ।

    [ নীরব হয়ে থাকেন । তারপর আস্তে ভারি স্বরে ]

    আমি জানি তোমরা দুভাই বাবা বলতে অজ্ঞান । নৃপেনের কোন দু:খ রাখোনি, সুযোগ্য সন্তান হয়েছো তোমরা । লবকুশকে আমি বাড়িতে সব সময় তাই বলি । আর উল্টো বুঝলি তোরা, হ্যাঁ ?

    [ কোঁচা দিয়ে জল মুছে নেন চোখের । ]

    নিখিল অতো দূর দেশ থেকেও বাবার জন্য কি রকম খেয়াল রাখে, মনে করে করে বাবার জন্য একটি একটি করে জিনিস কিনে পাঠায় । আরে সেসব তো আমরাও ভোগ করি । আর তুমি, তোমার কনট্রাক্টারির কাজের মধ্যেও কিভাবে বুড়োকে মশারির মধ্যে ফল এনে দিয়ে যেতে - সে তো আমার নিজের চোখে দেখা । শুধুই মুখের বাক্য ধরলে তোমরা ? ভেতরের কথাটা বুঝলে না ?

    [ ঝুমুরের সামনে গিয়ে মাথায় হাত রেখে বলেন ]

    ঝুমুর মা কি শ্বশুরের কম খেয়াল রাখতো ? ওর সামনে নেপেন কিছুতেই গম্ভীর হয়ে থাকতে পারতো না - বাপ মেয়ের মতো ছিল দুজনে ।

    নিলয় : সবই বুঝলাম, কিন্তু আপনি বোধহয় একটা সত্যি কথাই বলেছিলেন, বাবাকে এই বুড়ো বয়েসে প্লেনে না চড়ালে -

    জ্যাঠা (উঠতে উঠতে) : তোমাদের এতো চেষ্টা কখনো বৃথা যাবে না নিলয় । নেপেন সুস্থ দেহে আমেরিকা পৌঁছে যাবে । নাতির মুখ দেখবে না ? পাঁচ মাসের নাতিকে পড়াবে বলে সহজ পাঠ কিনে নিয়ে গেছে । হা হা হা !

    [ সবাই হাসে । ]

    চলি এখন । শ্যামলী বললো দুপুরে তোমার সংগে দেখা করতে আসবে ঝুমুর ।

    ঝুমুর : হ্যাঁ হ্যাঁ নিশ্চয়ই ।

    [প্রস্থান । ]

    ঝুমুর : বাবা ওনাকে দেখেই ভেতরে ছুট লাগাবো ভেবেছিলাম, না জানি কতো নিন্দেমন্দই শুনতে হয় ।

    নিলয় : আমাদের অবস্থা দেখে আর বেশি কড়কালেন না ।

    ঝুমুর : কি যে বলো । মুখে একটু কটকটে হলেও উনি মানুষ খারাপ নন ।

    [ এমন সময় ফোন বাজে, নিলয় তোলে । ]

    নিলয় : হ্যালো ?

    [ ওপাশ থেকে নিখিলকে দেখা যায় । আলো এসে পড়েছে শুধু তার ওপরে । ]

    নিখিল : নিলয় ? দাদা বলছি । খবর আছে নতুন কিছু ?

    নিলয় : না, তেমন কিছু নেই । তুষারমামাকে কনট্যাক্ট করেছিলাম, ডেসক্রিপশন দিয়ে থানায় এফআইআর করতে বললেন । একটু পরে যাবো এক বন্ধুর সংগে ।

    নিখিল : হুম্ম্ম্‌, এদিকেও তো কোন নতুন ইনফরমেশান পাই নি আর --

    নিলয় : কি যে হলো ! বাবা তো এখানে ভালোই ছিলেন, কেন যে -- (থেমে যায়)

    নিখিল : তুই কি ... আমাদের কিছু বলতে চাইছিস ?

    নিলয় : না না, তোমাদের আবার কি বলবো, আমাদেরই যেতে দেওয়া উচিত হয়নি ।

    নিখিল : নিলয়, বাবা এলে যে আমাদের ভালো লাগবে সেটা জানা কথা । কিন্তু সেটা ছাড়াও বাবাকে নিয়ে আসার আমাদের আরেকটা উদ্দেশ্য ছিল, ভুলে যাস্‌ না । বাবার জন্যে তোরা কোথাও বেরোতে পারিস না, তোদের রিলিফ দেওয়াও --

    নিলয় : এক মিনিট, এক মিনিট । আমি কবে বললাম বাবার জন্য আমরা বেরোতে পারি না ? বাবা আমাদের এখানে অলওয়েজ ওয়েলকাম ।

    নিখিল : বলিস নি হয়তো মুখ ফুটে বাট ইট ওয়াজ অলওয়েজ ফেল্ট ।

    নিলয় : এটা তোমার অত্যন্ত আনফেয়ার কমেন্ট দাদা । তুমি কি ফিল করলে সেটা কথা নয়, ডিড আই এভার সে দ্যাট ? ডিড আই এভার টেল ইউ যে বাবার জন্য আমরা বেরোতে পারি না ?

    নিখিল : শোন্‌ নিলয় কেন মাথা গরম করছিস ? যা সত্যি, তার রেসপন্সিবিলিটি তো আমাদের নিতেই হবে --

    নিলয় : না, আমি মোটেই মাথা গরম করছি না । কিন্তু দাদা, আই অ্যাম স্যরি টু সে দিস, কিন্তু তোমরা বুড়োমানুষকে একা একা অদ্দুর টানাটানি না করলে এই হাঙ্গামাটা হতো না ।

    নিখিল : তার মানে কি ? তুই কি আমাদের এর জন্যে দায়ী করতে চাস ? বলতে চাস কলকাতায় থাকলে এরকম হতো না ?

    [ ঝুমুর এসে দাঁড়ায় । ভাবেভঙ্গিতে অনুনয় । "কি হচ্ছে" এরকম ভাব । ]

    ঝুমুর : দাও, ফোনটা দাও আমায় । আমি দিদিভাই-এর সংগে --

    নিলয় : (কর্ণপাত না করে) না, এখানে থাকলে এটা হোত না । এখানে ঝুমুর সর্বক্ষণ প্রেজেন্ট - দ্যাবাদেবী দুজনেই বেরিয়ে গেলাম, সেরকম তো নয় ।

    নিখিল : ইংগিত করা ছেড়ে সোজাসুজি কথা বল্‌ । কর্তব্য তো আমরা কেউই করছিলাম না বাবার প্রতি -

    নিলয় : তোমায় কেন ইংগিত করবো ? যা সত্যি, তাই বলছি । আমার কর্তব্য আমি ঠিকই করেছি । চাকরি করে এসে দাদা তুমি কটা কথা বলতে বাবার সংগে ? (গলা সপ্তমে চড়ছে) - এতো আনফেয়ার কমেন্ট করো কি করে ? ... বিদেশে থাকলে তো গায়ে একটুও আঁচ লাগে না, তাই বোঝো না । বাবার যদি কিছু হয় -- আমি তোমাদের --

    [ প্রচণ্ড ইমোশনাল হয়ে পড়ে, কথা আটকে যায় । ঝুমুর তাড়াতাডি এসে ফোন কেড়ে নেয় । ]

    ঝুমুর : দাদা, কিছু মনে কোরো না - ও খুব উত্তেজিত হয়ে পড়েছে । বাবার কথা ভেবে মাথার ঠিক নেই ।

    নিখিল : (উঁচু গলায়) ও কি ভেবেছে কি ? এই টেনশানের সময় আরেকটা টেনশান তৈরি করে গিল্ট ফিলিঙের হাত থেকে রেহাই পাবে ? তোমরা জেনে রাখো ঝুমুর --

    ঝুমুর : আমি আবার কি করলাম ? আমায় বকছো কেন ? তুমিও শান্ত হও, প্লীজ । এখন রাখছি, দাদা । পরে কখা হবে ।

    [ ঝুমুর ফোনে রাখে । ওপাশের আলো নেভে । নিলয় তখনো ফুঁসছে । ]

    নিলয় : কাওয়ার্ড । বিদেশে থাকে, তাই বড়ো বড়ো কথা । মা মারা যাবার পর তো আসতেই পারলো না । এখন বলছে, আমাদের রিলিফ দেবার জন্য ওরা বাবাকে -- । ওদের পীড়াপিড়িতেই তো বাবা -- । (কথা শেষ করতে পারে না সে, এতো রাগ)

    ঝুমুর : শান্তি, শান্তি ! নিখিল-নিলয় দুই ভাই, ঝগডা-ঝাঁটি কিছু নাই ! (হালকা করার চেষ্টা করে পরিবেশ)

    নিখিল : ইউ শাট আপ !


    ॥ চতুর্থ দৃশ্য সমাপ্ত ॥




    ॥ পঞ্চম দৃশ্য ॥


    [ পলাশ-রীতার বসার ঘর । পর্দা ওঠবার সময় অন্ধকারে সমস্বরে গানের আওয়াজ পাওয়া যায় চটুল সুরে -- ]

    তু লাল পাহাড়ির দ্যাশে যা
    রাঙামাটির দ্যাশে যা
    হিথায় তুরে মানাইছে না গ --
    ইক্কেবারে মানাইছে না গ --

    [ আলো জ্বললে দেখা যায়, পলাশ-রীতা, পার্থ, অরূপ-ঝিমলি প্রচণ্ড আড্ডা দিচ্ছে । হা-হা-হো-হো হাসি । অরূপ ফিরে এসে চেয়ারে বসে । রীতা ভেতর থেকে একটা ট্রে নিয়ে ঢোকে ।]

    রীতা : অ্যাই শোনো সবাই, এখন একটু জলপানের বিরতি । খেলা বন্ধ রাখো ।

    [ টেবিলের ওপর ট্রে রাখতেই বুভুক্ষু বাঙালির দল খেলায় ভঙ্গ দিয়ে ওটার ওপর হুমড়ি খেয়ে পড়ে । ঝিমলি বাদে । ]

    ঝিমলি : দ্যাখো দ্যাখো, কিরকম রাক্ষসের দল ! একটু অপেক্ষা করার পর্যন্ত সময় নেই ।

    পার্থ : (অ্যাপেটাইজারে একটা কামড় বসিয়ে ) কিসের অপেক্ষা ম্যাডাম ? কেন অপেক্ষা ?

    ঝিমলি : অন্যদেরও খাবার নিতে দেওয়ার একটা চান্স্‌ দেওয়ার অপেক্ষা ।

    পার্থ : সবাই যদি অন্যের খাবার নেবার জন্য অপেক্ষা করতে থাকে তাকে শাস্ত্রে কি বলে জানো তো ? ডেডলক !

    তাছাড়া যাদের বৌ দেশে খাবারের ব্যাপারে তাদের ফার্স্ট প্রেফারেন্স ।

    ঝিমলি : বৌ দেশে তো কি ? ক্লিভল্যাণ্ডে ইণ্ডিয়ান রেস্টোর্যান্ট নেই ?

    পলাশ : অরূপ টুরে গেলে ঝিমলি যা করে আরকি ।

    ঝিমলি : মোটেই না । অরূপ আজকাল ভারি কুঁড়ে হয়েছে ।

    রীতা : পার্থদা বাইরে কিনে খাবে ? তাহলেই হয়েছে ।

    ঝিমলি : কেন, পার্থদা খুব পেটরোগা বুঝি ?

    রীতা : না না, পেট দিব্যি ভালো । এই তো দুপুরে আমরা সাহারায় খেয়ে এলাম ।

    ঝিমলি : তবে ?

    [ রীতা কিছু বলে না, মুচকে মুচকে হাসে । ]

    পার্থ : রীতা বলতে লজ্জা পাচ্ছে । আমি আসলে একটু মিতব্যয়ী কিনা ।

    পলাশ : শুধু মিতব্যয়ী ?

    পার্থ : হ্যাঁ, একটু সঞ্চয়ী আর কি ।

    পলাশ : সঞ্চয়ী মানে একেবারে মহাজন । তোর সেই সাইকেল বিক্রির গল্প আমি জীবনেও ভুলবো না মাইরি ।

    ঝিমলি : কিরকম, কিরকম ?

    পলাশ : প্রতি রোববার করে খদ্দের আসতো । পঞ্চাশ টাকায় কেনা সাইকেল, প্লাস পাঁচ টাকার রঙ -- বিক্রি করলে গুরু যেন কত টাকায় ?

    পার্থ : দেড়শো । তবে আর সপ্তাহ দুএক থাকলে আর একটু উঠতো হয়তো, নতুন ব্যাচ এসে পড়তো কিনা । কিন্তু খাওয়া খরচা হিসেব করে দেখলাম -- পড়তায় পোষাবে না ।
    তবে লাভের পয়সায় তোদের বিড়ি খওয়াই নি ? বল্‌ সে কথা ?

    পলাশ : অতোদিনকার আগের বিড়ির ধোঁয়া এখন আকাশে মিলিয়ে গেছে ।

    পার্থ : তোরা শালা জোট বেঁধে প্ল্যান করতিস আমার গাঁটের পয়সা খরচ করানোর জন্য ।

    রীতা : কোনদিন সফল হয়নি, আই বেট ।

    পলাশ : ওসব প্ল্যান নিখিলের মাথা থেকে বেরোতো ।

    ঝিমলি : নিখিলদা ? যাহ্‌, বিশ্বাসই হয় না । এত শান্ত আর ভদ্র ।

    অরূপ : কলেজজীবনে বদমাইশি করার সংগে অভদ্রতার কি সম্পর্ক ? তোমরা বাংলা ইউসেজগুলোর ঠিকমত জানো না ।

    ঝিমলি : "ঠিকমত জানা" মানে যে "বিকৃত জানা" তা সত্যিই জানতাম না । ডন বসকোতে বুঝি তোমাদের এই রকম --

    পার্থ : অরূপ ডন বসকো বুঝি ? কোন্‌ ব্যাচ ?

    ঝিমলি : অ্যাই অ্যাই কথা ঘুরিও না । নিখিলদা কি প্ল্যান করতো তাই বলো ।

    পলাশ : আচ্ছা শোনো, আমি বলছি । পার্থ তখন সবে মনীষাকে তোলবার চেষ্টা করছে ।

    রীতা : ইস্‌ কি ভাষা ।

    ঝিমলি : এই মনীষাই কি বর্তমানে পার্থ বৌদি ?

    অরূপ : আগে বলতে দাও না গল্পটা । তোমাদের ঐ এক ব্যাপার - একটু ইন্টুমিন্টুর গন্ধ পেলে সংগে আউট অফ ফোকাস হয়ে সোজা ছাঁদনাতলায় । মনীষা-র সংগে পার্থর বিয়ে হলো কিনা সেটা জানাটা এখানে সম্পূর্ণ ইররেলিভেন্ট ।

    ঝিমলি : তুমি বেশি বোকো না । পলাশদা তারপর কি হলো ?

    পলাশ : তো পার্থ মনীষাকে তোলবার চেষ্টা করছে -- কিন্তু মনীষা মোটেই পাত্তা দিচ্ছে না । পার্থ কারণে-অকারণে দেখা করতে চাইলেও করছে না । ওদিকে কলেজ ফেস্টের সূত্রে নিখিল আর মনীষা তখন একই গানের দলে রিহার্সাল করতো । তখন পার্থ নিখিলকে ধরে পড়লো, বস উদ্ধার করো । ও তখন মরীয়া, সুযোগ পেলেই মনীষার কছে মনের কথাটা পাড়বে । নিখিল বললো, কোন ব্যাপার না । একটু খরচ আছে । পিপিঙে আমি মনীষাকে নিয়ে যাবো, বলবো আমার আরেক বন্ধুও আসবে, তারপর তোদের রেখে আমি কেটে পড়বো । বাকিটা তোমার কেরামতি ।

    পার্থ : এমন নিষ্পাপ মুখে বললো যে আমি বিশ্বাসও করলাম । তিনজনকে পিপিঙে খাওয়ানোর খরচা সত্বেও । লঙ টার্মের কথা ভেবে ।

    ঝিমলি : গিয়ে কি দেখলে ? সব ফাঁকা, মনীষা টনীষা কেউ নেই ?

    পার্থ : না না, মনীষা ছিলো । বেশ জাঁকিয়েই ছিলো ।

    পলাশ : আর নিখিলও কথামতো মনীষা আর পার্থকে ফাঁকা টেবিলে বসিয়ে চলে এসেছিল ।

    ঝিমলি : যাব্বাবা, তাহলে আর গল্প কি হলো ?

    পার্থ : মনীষা ছিলো, নিখিল ছিলো । আর ছিলো ওদের রিহার্সালের আরো ছটা ছেলে ।

    [ সবাই হাসিতে ফেটে পড়ে । ]

    ঝিমলি (হাসতে হাসতে) : সবাইকে খাওয়াতে হলো?

    পলাশ : নইলে মনীষার কাছে প্রেস্টিজ পাংচার হয়ে যাবে না ?

    পার্থ : নিখিলটা এমন বদমাইশ, উঠে আসার সময় বলে কি, পার্থ পরে হিসেব করে কস্ট শেয়ার করে নেবো ।

    [ সবাই হাসছে । ]

    পলাশ : যেমন বুনো ওল তেমনি বাঘা তেঁতুল ।

    [ সবার হাসি, অরূপ ছাড়া । ]

    অরূপ : এটা কি দিলে বোঝা কিন্তু সত্যিই ডন বসকোর নলেজের বাইরে ।

    ঝিমলি : উফ ! মানে হচ্ছে টিট ফর ট্যাট ।

    অরূপ : ও আচ্ছা, থ্যাংক ইউ ।

    [ এবার অরূপের হাসি, দেরিতে । ]

    ঝিমলি : এতক্ষণে বুঝেছে । (হাসি)

    [ বাকিরাও হাসতে থাকে ।]

    পার্থ (গম্ভীর হয়ে গিয়ে) : নাহ্‌ নিখিলটাকে মিস করছি । ভেবেছিলাম তোদের সংগে জমিয়ে আড্ডা দেবো - তা না ও বেচারা যে কি দুশ্চিন্তাতেই কাটাচ্ছে --

    [ সবাই একটু চুপ হয়ে যায় । ]

    রীতা : নাও, তোমরা ডাম্ব শ্যারাড শুরু করো না আবার । কে যেন করছিলে লাস্ট ।

    অরূপ (হাত তুলে) : আমি ।

    পার্থ : বুঝলি পলাশ, জানুয়ারিতে দেশে গিয়েছিলাম, কলেজেও গেলাম । একেজির সংগে দেখা ।

    ঝিমলি : অ্যাই রীতা, বিয়েতে কোন শাড়ীটা পর.বে দেখাও না গো ।

    রীতা : দাঁড়াও, আনছি ।

    [ ভেতরে চলে যায় । ]
    পলাশ : আচ্ছা ? কি বললেন একেজি ?
    একমাত্র একেজির ক্লাসে আমরা কোনদিন মাস দিই নি, মনে আছে ?

    অরূপ : হ্যাঁ উনি আমাদেরও এক্সটারনাল হয়ে এসেছিলেন একবার । হি হ্যাজ আ ভেরি ইম্প্রেসিভ পার্সোনালিটি । আমরা তো ঐ তোমরা যাকে বলো "মন্ত্রমুগ্ধ" ।


    পার্থ : নিখিলের নাম করে জিগেস করলেন, কোথায় আছে, কি করছে ।

    [ এই সময় রীতা শাড়িটা নিয়ে ঢোকে । মেয়েদের সংলাপ শোনা যায়, পুরুষরা মাইম-এ কথা বলে চলে । নারী ও পুরুষরা দুটি দলে বিভক্ত হয়ে যায় । ]

    ঝিমলি : ঘধগ! দারুণ তো, ভীষ-ও-ওণ গরজাস ।

    রীতা : ভালো না ? কিন্তু হলে কি হবে, এর সংগে পরার মতো গয়না তো নেই ।

    ঝিমলি : সে কি ! কেন গয়নার কি হলো ?

    রীতা : সেই কথাই তো বলছি । এদিকে এসো, বলছি ।

    [ দুজনে সামনে এগিয়ে আসে । ]

    রীতা : আর বোলো না । নিখিলদার বাবার সংগেই তো আসছিলো গয়না । তা ভদ্রলোক কোথায় হাওয়া হয়ে গেলেন, আর আমার গয়নার বাক্সো-ও সেই সংগে --

    [ মেয়েরা মাইম-এ কথা চালাতে থাকে এবার, পুরুষরা উচ্চকিত । ]

    পলাশ : নিখিল তো ছিলো ওনার ব্লু-আইড বয় !

    পার্থ : সেটা অবশ্য বিনা কারণে নয় । অ্যাবসট্র্যাক্ট ম্যাথসের ক্লাসে ওদের তর্কটা প্রায় যুগলবন্দীর মতো শোনাতো, মনে আছে ?

    পলাশ : হ্যাঁ । দুজনেরই এঞ্জিনিয়ারিঙে আসা উচিত হয়নি ।

    পার্থ : একেজি বললেন, কলেজে আর কেউ পড়াতে আসতে চায় না, কথায় কথায় এখন লোকজন আমেরিকা চলে যায় । বললেন, বন্ধুবান্ধবকে বলে দেখতে, এখন সুযোগসুবিধা অনেক বেড়েছে - কেউ যদি আসতে চায় --

    পলাশ (দীর্ঘনি:শ্বাস ফেলে) : হুম্‌ -- দেখবি গেলে হয়তো একদিন নিখিলই দুম্‌ করে --

    পার্থ : না না এখানে ও তো ফেঁদে বসেছে দিব্যি দেখতে পচ্ছি ।

    [ শুরু হয় নারী ও পুরুষদের টুকরো টুকরো কথার কোলাজ । এখনো দু দল-এ বিভক্ত তারা । ]

    অরূপ : হ্যাঁ, বেশ কিছু স্টক অপশান আছে ওর --

    ঝিমলি : স্কুল ডিসট্রিকট ভালো না হলে --

    পলাশ : কম্পানিগুলো গ্রীন কার্ড তো বন্ধ করে দিয়েছে --

    রীতা : চন্দ্রাণী পার্লস থেকে মুক্তোর টপ আর নেকলেস --

    পার্থ : জব মার্কেটের দিন দিন বা অবস্থা হচ্ছে --

    ঝিমলি : সর্ষে বাটা দিয়ে পোর্ক ট্রাই করেছো কখনো ? --

    অরূপ : শচীন তেণ্ডুলকার কিরকম ছক্কাটা মারলো দেখলে ? --

    রীতা : হৃত্বিক রোশন অমার স-অ-অবেচয়ে ফেভারিট --

    পলাশ : প্রেসিডেন্ট বুশ ইজ ডুইং প্রেটি গুড --

    ঝিমলি : ক্যাব্রানে সভিয় আমার দারুণ লাগে, জানো !

    [ কোলাজ শেষ । ]

    পলাশ : তুই শালা মাস্টার হলে ছাত্ররা একটা জিনিস অন্তত ভালো শিখবে --

    পার্থ : কি ? টোকাটুকি ?

    পলাশ : একজ্যাক্টলি ! হা হা হা ..

    [ বাকিরাও হাসে । রীতা-ঝিমলি সেই শব্দে ফিরে তাকায় । ]

    ঝিমলি : এই, কি নিয়ে হাসছো গো তোমরা ?

    পার্থ : টোকটুকির নতুন নতুন টেকনোলজি বের করতে কি কম সময় ব্যয় করেছি ?

    পলাশ : বেস্ট ছিলো ঐ ট্রানস্পারেন্ট সেট স্কোয়ারের নিচে টুকে নিয়ে যাওয়াটা ।

    অরূপ : হোয়াট'স দ্যাট ?

    পলাশ : ট্রানস্পারেন্ট সেট স্কোয়ারগুলো দেখেছো তো ? ওর মধ্যে কালো কালি দিয়ে লিখে নিয়ে গিয়ে কালো বেঞ্চের ওপর রেখে দিলে । কেউ কিছু বুঝবে না । সেই স্যার চোখের বাইরে, ওমনি ওটাকে নিয়ে সাদা কাগজের ওপর ফেলে দাও !

    [ সবার সম্মিলিত হাসি । ]

    পার্থ : না না ওটা আমার ব্রেন চাইল্ড নয় ।

    রীতা : বাজে ছেলে ছিলে তোমরা সব ।

    চলো এবার খেলা শুরু করি ।

    ঝিমলি : সত্যি, আমি কিন্তু এখনো জানতে চাই ঐ মনীষার সংগেই কি --

    রীতা : আচ্ছা, ডাম্ব শ্যারাডের একটা কাগজ দাও তো ।

    [ অরূপ খেলার জন্য উঠে দাঁডায়, নির্ধারিত জায়গায় এগিয়ে যায় । রীতা কাগজটা নিয়ে কিছু লিখে ঝিমলির দিকে এগিয়ে দেয় । ]

    রীতা : এই যে কাগজে লিখে দিলাম পার্থদার বৌ-এর নাম ।

    [ ঝিমলি দেখে হাসে । বাকিরাও হাসে । ]

    অরূপ : কে, কে ? ইজ শি দা ওয়ান ?

    ঝিমলি : কেন এখন কেন ? একদম বলবে না তো রীতা । মেয়েরা নাকি ছাঁদনাতলা ছাড়া আর কিছু ভবতে পারে না -- এটা নাকি টোটালি ইররেলিভেন্ট ।

    রীতা (হাসতে হাস্তে) : যেমন কুকুর তেমনি মুগুর ।

    অরূপ : আরেকটা টিট ফর ট্যাট ?

    রীতা : রাইট ।

    পলাশ : অরূপ, এই যে এখানে তোমার পুরোনোটার কাগজ ।

    [ অরূপ কাগজটা হাতে নিয়ে দেখে আবার খেলা শুরু করে । অরূপ আবার ওপরের দিকে আঙুল তুলে কিছু দেখায় ।]

    ঝিমলি : কে জানে বাবা, আঙুলটা হঠাৎ আকাশের দিকে তাক করে দিল কেন ?

    পলাশ : আকাশ ? (অরূপ মাথা নাড়ে)

    রীতা : চাঁদ ? (অরূপ মাথা নাড়ে) সুর্য ? তারা ??? (অরূপ ত্রক্রমাগত মাথা নাড়তে থাকে ।)

    পার্থ : উফ্‌, প্রত্যেকটা পার্টিতে এই একই খেলা খেলে তোমরা কি আনন্দ পাও বলো তো ?

    রীতা : প্রত্যেকটা পার্টিতে মোটেই খেলি না । যখন ইচ্ছে হয় তখন খেলি । আরেকবার দেখাও তো অরূপ ।

    পার্থ : আর প্রত্যেকদিনই ইচ্ছে হয় ।

    রীতা : মোটেই না ।

    [ অরূপ উড়ন্ত কিছু একটা দেখায় । ]

    রীতা : পাখি ? (অরূপ দুই দেখায়, চার দেখায় । ) দুটো পাখি ? চারটে ?? (অরূপ ত্রক্রমাগত মাথা নাড়তে থাকে ।)

    পলাশ : বলাকাদল? (সবাই হেসে ওঠে । অরূপ মাথা নেড়ে যাচ্ছে । কেউ বুঝছে না দেখে রেগেও যাচ্ছে ।)

    পার্থ : বোবা নয়, তবু বোবা সাজতে হচ্ছে । কি ভয়ঙ্কর ব্যাপার । (অরূপ হাত দিয়ে কিছু দেখাচ্ছিলো) অরূপ, মুখ থাকতে হাত কেন ?

    অরূপ (এবার মুখে বলে ) : বলবো মুখে ?

    ঝিমলি/রীতা : না !!!!

    পার্থ : আমরা ভাই গরীব পোস্ট ডক স্টুডেন্ট, পার্টিও করতে হয় না আর রোজ রোজ বোবাও সাজতে হয় না ।

    রীতা : প্লীজ পার্থদা থামো না ।

    ঝিমলি : আহা পার্থদা দুদিনের জন্য বেড়াতে এসেছেন, তাও আবার বৌ ছাড়া - এত বোকো না রীতা ।

    রীতা : আমি আবার কোথায় বকলাম ? পার্থদাই তো সবসময় বলছে আমরা নাকি সব উঠতি লাখোপতি, হাতে কাঁচা পয়সা । আর ওনারা হলেন গিয়ে দরিদ্র গবেষক ।

    পার্থ : তোমরা আমাদের শ্রেণীশত্রু ।

    অরূপ : তা গবেষকের আর কদ্দিন বাকি শ্রেণীশত্রু হতে ?

    পলাশ : এই এই অরূপ নো টক । একদম মুখ খুলবে না । আবার দেখাও ।

    [ অরূপ আবার পাখির মতো দেখায় কিছু একটা । ]

    ঝিমলি : দূর, তুমি পারছো না । সরো, আমি দেখাই ।

    রীতা : একটু দাঁডাও, খাবারটা গরম করা শুরু করি ।

    [ রীতার প্রস্থান । ]

    অরূপ : নিখিলের বাবার আর কোন খোঁজ -- ?

    পলাশ : নাহ্‌, শুনিনি তো ।

    ঝিমলি : অ্যাই রীতা, হেলপ লাগবে কোনো ?

    রীতা (ভেতর থেকে) : না ।

    অরূপ : নিখিলকে একবার ফোন করতে হবে ফিরে ।

    পার্থ : কোথা দিয়ে আসছিলেন যেন ?

    পলাশ : সিংগাপুর দিয়ে ।

    [ রীতা ফিরে আসে । ]


    রীতা : আচ্ছা পলাশ তোমাদের অফিসের ঐ মহিলা সিংগাপুরের না ?
    পলাশ : অফিসে তো অনেক মহিলা, তবে সিংগাপুরের কেউ না ।

    রীতা : আহা, ঐ রকমই তো দেখতে । ঐ যে তোমাদের অ্যাডমিন ।

    পলাশ : ভেনেশিয়ার কথা বলছো ? ও হংকং-এর মেয়ে ।

    রীতা : ঐ হলো ।

    পলাশ : আচ্ছা, তোমার অপূর্ব ভূগোলজ্ঞানের পরিচয় কি সবার সামনে না দিলেই নয় ?

    ঝিমলি : দূর, আমি কখন থেকে করবো বলে দাঁড়িয়ে আছি, কেউ খেলছো না ।

    পলাশ : অ্যাই, সবাই - ব্যাক টু গেম ।

    অরূপ : আমার এক বন্ধু সিংগাপুর এয়ারলাইন্সে --

    ঝিমলি : আবার ? যাও আর খেলবো না ।

    রীতা : না না, আর হবে না, আর হবে না । খেলো খেলো ।

    পলাশ : অরূপ, মুখে সেলোটেপ ।

    [ ঝিমলি চটপট দেখায় । প্লেন টেক অফ করছে । ]

    রীতা : এরোপ্লেন, এরোপ্লেন ।

    অরূপ : আমিও তো এরোপ্লেন দেখালাম । তখন কেউ পারলে না ।

    ঝিমলি : চুপ !

    [ ঝিমলি হাত দিয়ে উঁচু বিলডিং দেখায় । পরপর দুটো । প্লেন টেক অফ হরে দেখায়, দিয়ে ধাক্কা মারে, ঝিমলি হাত পা ছড়িয়ে মরে যাবার ভঙ্গি করে । কাঁদতে থাকে । ]

    রীতা, পলাশ : ডাবলু টি সি !

    [ ঝিমলি হ্যাঁ-বোধক মাথা নাড়ে । আসনপিঁডি হয়ে বসে পড়ে । ধ্যান করার ভঙ্গিতে । ]

    পলাশ : সাধু ? হিমালয় ? বিন লাদেন ?

    রীতা : বিন লাদেন আবার কবে থেকে সাধু হলো ?

    পার্থ : তুমি মহারাজ সাধু হলে আজ --

    [ ঝিমলি নিজের হাত দেখতে থাকে গভীর মনোযোগের সংগে । ]

    পলাশ : পামিস্ট্রি ! জ্যোতিষী ?? কিরো ???

    [ ঝিমলি হ্যাঁ-বোধক ঘাড় নাড়ে । প্লেন দেখায় আর হাত দেখা দেখায়, বারবার । ]

    পার্থ : (ওপাশ থেকে) নস্ট্রাডামুস ?

    ঝিমলি : হ্যাঁ !

    [ ঝিমলি এক গাল হেসে এসে বসে পড়ে । চটপট হাততালি । ]

    পলাশ : বেশ জমেছে আড্ডাটা ।

    পার্থ : খ্যাটানটাও জমবে । উফ্‌, সম্বরম খেতে খেতে জিভে হাজা হয়ে গেছে ।

    ঝিমলি : রীতা, কি মেনু গো আজ ?

    রীতা : সেরকম কিছু না, একটু অন্যরকম হবে বলে মোগলাই পরোটা, কষা মাংস আর --

    [ দরজায় বেল । ]

    রীতা : কে এল এখন ?

    [ পলাশ উঠে দরজা খুলে দেয় । নিখিল নন্দিনী । ]

    নন্দিনী : বাড়িতে বসে থেকে দুজনেরই টেনশন বাড়ছিলো ছাড়া কমছিলো না, তাই চলেই এলাম --

    পার্থ : খুব ভালো করেছো । তোমাদের কথাই ভাবছিলাম । হ্যাল্লো খোকাবাবু ! (শেষেরটি বুবাইকে উদ্দ্যেশ্য করে)

    রীতা : শোওও শুইট !

    ঝিমলি : ওমা আবার ঘুমু করছে । কি কিউট যে লাগছে !!

    নন্দিনী : হ্যাঁ, এই জাস্ট ঘুমিয়ে পড়লো ।

    রীতা : যাও যাও, ভেতরের ঘরে শুইয়ে দাও ।

    দাঁড়াও তোমাদের জন্য স্ন্যাকস --

    নন্দিনী : না, রীতা, এখন কিছু খেতে ইচ্ছে করছে না । তোমরা খাও । আমি ওকে শুইয়ে আসি --

    [ নন্দিনী ভেতরে চলে যায় । ]

    রীতা : নিখিলদা, তোমায় দিই ?
    নিখিল : আমারও ইচ্ছে করছে না ।

    পলাশ : সে ঠিক আছে, আমরা একটু পরেই খাবো না হয় ।

    পার্থ : দাঁড়া আমি একটা ড্রিংক বানিয়ে আনি তোর জন্য ।

    [ পার্থ ভেতরে চলে যায় । ]

    অরূপ : আমরা ডাম্ব শারাড খেলছিলাম, খুব জমেছে, ট্রাই করবি ?

    নিখিল : আমরা দেখছি, খেলো না তোমরা । আমাদের জন্য ব্যস্ত হয়ো না ।

    [ নন্দিনী ফিরে আসে । ]

    ঝিমলি : বুঝলে নন্দিনী, ডাম্ব শারাডে অরূপকে নস্ট্রাডামুস করতে দেওয়া হয়েছে, সে আর কিছুতেই বোঝাতে পারে না । আরে বাবা, এরোপ্লেন আর অ্যাকসিডেন্ট দুটো দেখালেই তো --

    [ থেমে যায়, বেফাঁস কথা বলে ফেলেছে বুঝে । ]

    নিখিল : তোমাদের কারুর সিংগাপুর এয়ারলাইনসে কোন কনট্যাক্ট আছে? যদি একটু ভেতর থেকে খোঁজ নেওয়া যেতো --

    অরূপ : আমি একটু আগেই বলছিলাম ওদের, আমার এক বন্ধু সিংগাপুর এয়ারলাইনসে কাজ করে ।

    নিখিল : (অনুনয়ের ভঙ্গিতে) অরূপ, আমার খুব উপকার হয় তাহলে, একটু দেখবে তার সংগে যোগাযোগ করে ?

    অরূপ : শিওর, আমি কালই ভেঙ্কটকে কল করে দেখবো ।

    নিখিল : অরূপ, উড ইউ মাইণ্ড টু কল নাও ? বুঝতেই পারছো, আমাদের প্রত্যেকটা মিনিট এখন কি পেইনফুলি কাটছে ।

    অরূপ : ওকে ।

    পলাশ : অরূপ, পাশের ঘরে চলে যাও, ওখানেই ফোন পাবে ।

    অরূপ : ঠিক আছে, ঠিক আছে, তোমরা কন্টিনিউ করো খেলা ।

    নন্দিনী : হ্যাঁ, হ্যাঁ, শুরু করো না ।

    রীতা : অন্য সময় হলে নিখিলদাকে গান গাইতে বলতাম - কিশোরের গানগুলো যা ভালো গায় --

    ঝিমলি : কেন, এখন করো না ? আমি নিখিলদার গান কখনো শুনিনি । নিখিলদা, প্লীজ ?

    নিখিল : না, আমার ভালো লাগছে না গান গাইতে ।

    [ সবাই চুপ হযে যায় । নন্দিনী একা আড্ডার পরিবেশকে জিইয়ে রাখতে চেষ্টা করে । পার্থ ফিরে আসে । নিখিলকে ড্রিংক দেয় । ]

    নন্দিনী : কই, তোমাদের খেলা বন্ধ হলো কেন ?

    [ কেউ উত্তর দেয় না । এর ওর দিকে তাকায় । ]

    রীতা : খেলা এখন থাক্‌ । খেতে দিয়ে দেব কি এখন ?

    নন্দিনী : হ্যাঁ, হ্যাঁ - তোমাদের খিদে পেয়ে গেলে দিয়ে দাও ।

    রীতা : আচ্ছা ।

    [ প্রস্থান । ]

    নন্দিনী : পার্থ, নিখিল আর পলাশ অনেক প্ল্যান করে রেখেছিল -- তুমি এলে তোমায় কোথায় কোথায় নিয়ে যাবে -- মোটে তো দেড়দিন সময় । তার মধ্যে দেখো এই কাণ্ড ।

    পার্থ : দূর, ওটা কোন ব্যাপার হলো । তাছাড়া ঘোরাঘুরি গাড়ি চালানো টেনশান আমার একদম পোষায় না । বেড়াতে এসেছি, ভালোমন্দ খাচ্ছি, শুয়েবসে আড্ডা দিচ্ছি - ব্যাস এই সবচেয়ে ভালো --

    নিখিল খবর বল্‌ ।

    নিখিল : এই তো চলছে । বাবার খবরের জন্য ওয়েট করছি এখন ।

    [ হঠাৎ অরূপদের দিকে ঘুরে ]

    নিখিল : আচ্ছা, তোমাদের চেনাজানা কারুর এরকম হয়েছে ?

    পলাশ : না, তা হয়নি । কিন্তু রিল্যাক্স নিখিল । দ্যাখ, কালকের মধ্যেই ঠিক খবর পেয়ে যাবি । জাস্ট আ ম্যাটার অফ টাইম । সারা পৃথিবী এখন যেভাবে কানেক্টেড, কেউ হারিয়ে যেতে পারে না ।

    নিখিল : চব্বিশ ঘন্টা তো হয়ে গেলো, এয়ারলাইন কোনো খবর দিতে পারছে না । পুলিশের কাছে কোনো ক্রিমিনাল ইনসিডেন্সের রিপোর্ট নেই । একটা লোক যদি মাঝরাস্তা থেকে হাওয়া হয়ে যায়, কে কি করতে পারে ? এ কি মেলার মধ্যে ছোট বাচ্ছার হারিয়ে যাওয়া ?

    [ অরূপ ফিরে আসে । ]

    অরূপ : ফরচুনেটলি ভেংকটের সেল নামবারটা ছিলো । সিংগাপুরের স্টাফেদের সংগে ওর পার্সোনাল কনট্যাক্ট আছে, খবর নিয়ে জানাবে বললো ।

    একি, সবাই এতো গ্লুমি হয়ে বসে আছো কেন ? খেলা বন্ধ হয়ে গেলো ? এবার কি তাহলে খ্যাটান হবে ?

    পার্থ : আহ্‌, মোগলাই পরোটা ।

    [ রীতা একটা পাত্র নিয়ে ঢোকে । টেবিলে রাখে । ]

    ঝিমলি : পরোটার ভেতরে কি পুর দিয়েছো রীতা ?

    রীতা : কনভেনশনালি তো ডিমের হয়, কিন্তু আমি কিমা দিয়ে --

    পার্থ : সুড়ুৎ !

    নিখিল : আচ্ছ, প্লেন-এ ওরা যে খাবার দেয়, তা খেয়ে কেউ অসুস্থ হয়ে পড়েছে এরকম ঘটনা শুনেছো ?

    অরূপ : না, নিখিল, ওসব কিছুই হয়নি, এয়ারলাইনকে স্যু করে দেবে তাহলে । তাছাড়া আরো প্যাসেনজারও তো ছিলো, তাদের কারুর কিছু হলো না, শুধু মেসোমশাই-এরই --

    নিখিল : না, এমনিই বললাম ।

    ঝিমলি : এটা কি ? রসোমালাই ? রীতা, রেসিপিটা ইমেল করে দেবে প্লীজ ?

    নিখিল : আচ্ছা, নিউজগ্রুপে পোস্ট করলে হয় না ?

    ঝিমলি : কি ? রেসিপি ?

    [ পার্থ, নিখিল আর নন্দিনী ছাড়া বাকিরা হেসে ওঠে । ]

    নিখিল : না, রেসিপি নয় । এই রকম ঘটনা আর কারুর ঘটেছে কিনা । বা আমার কি করা উচিত এক্ষেত্রে ।

    পলাশ : পোস্ট করে দেখতে পারিস ট্র্যাভেল-গ্রুপে । নিউজগ্রুপের লোকেরা খুব হেল্পফুল হয় । নানারকম আইডিয়া পাবি ।

    নিখিল : চলো নন্দিনী ।

    নন্দিনী : এখুনি ?

    রীতা : একি, তোমরা না খেয়ে চলে যাবে ?

    নিখিল : খিদে নেই একদম । তাছাড়া খাবো বলে আসিও নি । নিউজগ্রুপে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব পোস্ট করতে হবে । কাজেই ... চলো নন্দিনী --

    নন্দিনী : যাচ্ছি, কিন্তু ওটা কি ঘন্টাখানেক অপেক্ষা করতে পারতো না ?

    নিখিল : (চেঁচিয়ে) বললাম তো না । তোমার যেতে ইচ্ছে না করে, তুমি থাকো না । আমি চললাম ।

    নন্দিনী : ফাইন, চলো । (উঠে দাঁড়ায়) বুবাইকে তুলে নিয়ে আসি । [ অন্দরে যায় । ]

    রীতা : তোমরা একটু খেয়ে গেলে খুব ভালো লাগতো --

    [ নিখিল উত্তর দেয় না । সবাই নি:শব্দে অপেক্ষা করে নন্দিনীর ফেরার জন্য । নন্দিনী বুবাই-এর ব্যাসিনেট নিয়ে ফিরে আসে । ]

    নন্দিনী : আচ্ছা, আসি তাহলে । তোমাদের ফোন করে জানাবো কোন খবর পেলেই ।

    সবাই : বাই/টেক-কেয়ার/সি-ইউ ।

    [ নিখিল নন্দিনীর প্রস্থান । পার্থ দরজা অবধি এগিয়ে দিতে যায় । বাকিরা অপেক্ষা করে নিখিলদের বেরোনো পর্যন্ত । পরমুহূর্তেই ফিরে আসে নিজেদের বৃত্তে । ]

    ঝিমলি (হাসতে হাসতে) : এই, সেদিন তনুশ্রীদির বাড়িতে কি হয়েছে জানো ?

    [ সবাই পুরোনো পার্টি মেজাজে ফিরে হাসে । হা হা হাসি । মাইমে কথা ও হাসি চলতে থাকে ওদের মধ্যে । পার্থ ফিরে আসে, সে দূরে দাঁড়িয়ে দেখতে থাকে এদেরকে । সবাই আবার খেলতে শুরু করে -- পুরোটাই নি:শব্দে । ওদের ওপর অল্প আলো । ওরা নি:শব্দে হাসছে, ঝিমলি-রীতা একে অন্যের গায়ে ঢলে পড়ছে, গল্প করছে । অন্য একটা আলো পার্থর ওপর । সে দূরত্বে দাঁড়িয়ে এই সামাজিক বৃত্তটিকে পর্যবেক্ষণ করছে ভুরু কুঁচকে । কিছুটা সময় ধরে এটা ঘটে । সামাজিক সম্পর্কগুলোর অসারতা যেন এই সময়ের মধ্যে পার্থ ও দর্শকদের কাছে পৌঁছে যাচ্ছে । আলো কমে যায় । ]


    ॥ পঞ্চম দৃশ্য সমাপ্ত । ॥




    ॥ ষষ্ঠ দৃশ্য ॥


    [ পলাশদের বাড়ি থেকে ফিরেছে নিখিল-নন্দিনী । রাত প্রায় সাড়ে দশটা । নন্দিনী ছেলের টুকুটাকি জিনিস গোছাচ্ছে । নিখিল একটা ড্রিংক হাতে সোফায় বসে । ]

    নন্দিনী : পোস্ট করতে পারলে নিউজগ্রুপে ?

    নিখিল : হ্যাঁ । কিন্তু ...

    নন্দিনী : এবার একটু খেয়ে নিয়ে ঘুমোবার চেষ্টা করো ।

    নিখিল : হ্যাঁ ? আমার খিদে নেই ।

    নন্দিনী : কেন এমন করছো বলবে ? তোমার ভালো লাগবে ভেবেই তো পলাশদের --

    নিখিল : আমার ভালো লাগছে না নন্দিনী --

    নন্দিনী : প্লীজ একটু বোঝো । এখন এতো টেনশান করলে --

    নিখিল : টেনশান আমি করছি না --

    নন্দিনী : টেনশান করছো না ? আমি কি তোমাকে চিনি না ? .. দেখো কাল ঠিক কোন ভালো খবর আসবে --

    [ নিখিল কোন উত্তর দেয় না ]

    নন্দিনী : (হঠাৎ কিছু মনে পড়ে) দেখেছো .. ঠিক ভুলেছি !

    নিখিল : কি?

    নন্দিনী : বুবাই-এর ফরমুলা শেষ হয়ে গেছে । রাতে খাবে কি ছেলেটা । আমি যাই নিয়ে আসি ।

    নিখিল : এত রাতে আমি যাচ্ছি ।

    নন্দিনী : নাহ্‌, আমিই ঘুরে আসছি । যাবো আর আসবো । ছেলেটা এখানেই ঘুমোক, একটু নজর রেখো ।

    [ নন্দিনী ছেলের ব্যাসিনেটে একটা মিউজিকাল খেলনা চালিয়ে দিয়ে বেরিয়ে যায় । টুইংকল টুইংকল লিট্ল স্টার বাজতে থাকে ।]


    নিখিল : (ক্লান্ত স্বরে, গান গেয়ে) টুইংকল টুইংকল লিট্ল স্টার ... বুবাই । ঘুমিয়ে পড়েছিস ? কি সুন্দর যন্ত্রের সাথে ঘুমিয়ে পড়তে পারিস তুই । যন্ত্রে বাজবে সুর আর সেই সুর শুনে শুনে তুই ঘুমিয়ে পড়বি । জানিস, আমি যখন ছোট ছিলাম বাবা আমাদের ঘুম পাড়াতো । আমাদের চোখ বুজে শুয়ে পড়তে বলতো, আমরা শুয়ে পড়তাম, আর বাবা একের পর এক কবিতা আবৃত্তি করতো । সেই কবিতাটা, বাবার খুব প্রিয় ছিলো,

    "আমি ছেড়েই দিতে রাজী আছি সুসভ্যতার আলোক,
    আমি চাই না হতে নব বংগে নব যুগের চালক.."

    হা হা হা.. (আপন মনে হেসে ওঠে) - কি সুন্দর ছিল দিনগুলো ।

    শীতের ছুটিতে মা, বাবা, নিলু, অসীম কাকু, কাকিমা, বাবুদা, আমরা সবাই মিলে বেড়াতে যেতাম -- চিড়িয়াখানা, বোটানিকাল গার্ডেন । একবার পিকনিকে ক্রিকেট খেলতে গিয়ে আমার পা মচকে গেল, এতো ব্যাথা যে আর হাঁটতেই পারছিলাম না, অসীমকাকু আর বাবা পালা করে আমায় কোলে নিয়ে বাড়ি ফিরলো । ফেরার সময় সে আরেক কাণ্ড । হাওড়া স্টেশনে একটা ট্রেনে তাড়াহুড়োয় উঠে পড়লাম, সে ট্রেন আবার একটা গ্যলোপিং ট্রেন ছিলো, অতো রাতে আমাদের নিয়ে অনেক পরের একটা স্টেশনে ... সেই রাতে আবার উল্টোদিকের প্ল্যাটফর্মে গিয়ে অপেক্ষা করে শেষে ... মাঝে মাঝে মনে হয়, আমিও ওইরকম একটা গ্যালোপিং ট্রেনে চড়ে বহুদুরের একটা স্টেশনে চলে এসেছি, অনেক অনেক আগে নামার কথা ছিলো ।

    তোর আমাদের মতো ছোটবেলা হবে না । (বিমর্ষ হয়ে যায়, কিন্তু পরক্ষণেই) তা নাইবা হলো । জিমন্যাসটিক্স্‌, সুইমিং, আর্ট ক্লাস, আইস স্কেটিং আরো কত কিছু করবি আমাদের ছোটবেলায় সেগুলো জানতামই না । তুই জানবি -- তোকে সব জানবার সুযোগ দেবো আমরা । দেখবি এখানকার সকাল কতো উজ্জ্বল, আকাশ কতো নীল । এই তো তোর ধনধান্য পুষ্পেভরা দেশ । দেশের ধোঁয়ায় তোর গলা বন্ধ হয়ে যেতো, বইয়ের চাপে তুই হাসতে ভুলে যেতিস ! তোকে নিয়ে, তোকে নিয়ে আমরা এখানেই ভালো থাকবো, সুখে থাকবো । এক পরম নিশ্চিন্ততায় বড়ো করে তুলবো তোকে । নিরাপত্তা -- এখানকার চেয়ে বড়ো নিরাপত্তা তোকে আমি কোথায় দিতে পারতাম বল ?

    এই নিরাপত্তা না থাকলে তোর মা, আমিই আজ কোথায় ভেসে যেতাম ! আমি হয়তো পড়ে থাকতাম দেশে এক কোণে বুরোক্রেসির শিকার হয়ে - আর তোর মা ? নন্দিনী হয়তো মরেই যেতো । গত উইন্টারে -- তুই তখনো হোসনি বুবাই । টুরে গিয়ে যখন নন্দিনী আটকে পড়লো বরফের ধসে -- মিসৌরি স্টেটের এক প্রত্যন্ত প্রান্তে, কিভাবে তখন এই পাগল দেশের লোকগুলো যে নিজেদের জীবন সংশয় করে আসন্নপ্রসবা নন্দিনীকে বাঁচিয়েছিলো ... কি করে ভুলি ।

    আমাদের দেশে মানুষের প্রাণের দাম বড়ো কম রে বুবাই ।

    ... তোকে নিয়ে আমরা খুব ভালো থাকব এখানে । উইকেণ্ডের সকালে পার্কের সবুজ ঘাসে তোকে নিয়ে বেড়াবো, তুই খেলতে খেলতে আনন্দে শুয়ে পড়বি -- এখানকার দূষণহীন রোদ তোর শরীরটা শুষে নেবে -- তুই এক উজ্জ্বল শিশু হবি বুবাই । শুধু তাই কেন, আমি, তোর মা সবাই বড়ো ভালোবেসে ফেলেছি এই স্বস্তি -- এই ভালো থাকা -- এই পাখির মতোন সকাল ।

    [ কিছুক্ষণ সময় চুপ করে থাকে নিখিল । তারপর যেন তার ভাবান্তর ঘটে । ]

    আমি নাই বা গেলেম বিলাত, নাই বা পেলেম রাজার খিলাত
    যদি পরজন্মে পাইরে হতে ব্রজের রাখাল বালক
    তবে নিবিয়ে দেব নিজের ঘরে সুসভ্যতার আলোক --


    আমি না থাকলে তুই আমার জন্য কাঁদবি ? কাঁদবি ? বুবাই ?

    নাহ্‌ ... কাঁদবি না । আমি তো আর বাবার মতো কিছু করি না তোর জন্যে । সকাল হলে ফেলে দিয়ে আসি তোকে ডে-কেয়ারে, আবার যখন সারাদিনের পর তুই ক্লান্ত, তখন তোকে তুলে আনি ঘুম পাড়াবার জন্য । আর উইকেণ্ড মানেই তো পার্টি আর পার্টি, ঘরভর্তি কতগুলো বুড়ো বুড়ো লোক হাসছে, গিলছে, কথা বলছে -- তুই আর কি করবি ... বুবাই ..

    সভতার আলো - তোকে জীবনে সবটুকু আলো দিতে চাই, আনন্দ দিতে চাই, স্বস্তি দিতে চাই । তোর জন্যেই তো সব ।

    [ খেলনার স্তুপের কাছে দাঁড়িয়ে নিখিল বলে ]

    পারব না, আনন্দ বোধ হয় দিতে পারবো না - তাই তোর জন্যে জড়ো করেছি রাজ্যের যাবতীয় সুখ --

    [ আলো উজ্জ্বল হয়ে পড়ে নিখিলের মুখে । হাতে বুবাই-এর খেলনা । নিখিল অস্ফুটে গেয়ে ওঠে - ]

    তুই লালপাহাড়ীর দেশে যা, রাঙামাটির দেশে যা
    হেথায় তোরে মানাইছে না রে --


    ॥ ষষ্ঠ দৃশ্য সমাপ্ত ॥

    ---

    ॥ সপ্তম দৃশ্য ॥



    [ রবিবারের সকাল । নিখিল সোফায় চিৎ হয়ে শুয়ে । নন্দিনী ঢোকে । ]

    নন্দিনী : এত বেলা হলো, এখনো শুয়ে আছো ? জ্বর আসেনি তো ? (কপালে হাত রেখে তাপ দেখে ।)

    না, গা তো ঠাণ্ডাই লাগছে । সকার খেলতে গেলে না আজ আর ? গেলে হয়তো ভালো --

    নিখিল : না, যাবো না ।

    [ উল্টোদিকে ঘুরে শোয়, যাতে মুখ দেখা না যায় । কিছুক্ষণ পরেই এদিকে ফিরে হঠাৎ উঠে বসে । ]

    নিখিল : বাবা, বাবা নিশ্চয়ই এমন কোন বিপর্যয়ের মধ্যে পড়েছে যেখান থেকে আমাদের খবর দিতে পারছে না । হয়তো খবর দেওয়ার অবস্থাতেই নেই ।

    নন্দিনী : সারারাত ধরে একই কথা বারবার কেন ভেবে যাচ্ছো ? এক্ষুনি তো কোন কিনারা করতে পারবে না ।

    নিখিল : অপেক্ষা, অপেক্ষা । অপেক্ষা ছাড়া আর কিছুই করতে পারছি না বাবার জন্য ।

    [ আবার শুয়ে পড়ে । নন্দিনী নিখিলের মাথার নীচে সোফার একটা কুশন গুঁজে দেয় । ]

    নন্দিনী : একটু ঘুমিয়ে নাও পারলে । রাতে তো একটুও --

    নিখিল : বুবাইকে খাইয়েছো ?

    নন্দিনী : হ্যাঁ, খাইয়েছি । বাচ্চারা বোধহয় সেন্স করতে পারে, আজ আর খাওয়া নিয়ে কোন ঝমেলা পাকায়নি । চুপটি করে শুয়ে নিজের মনে খেলছে ।

    [ নিখিল আবার উঠে বসে । ]

    নিখিল : আমি যখন খুব ছোট ছিলাম, বাবার সংগে বেড়াতে গিয়ে প্রায়ই একটা ভয় হতো, যদি হারিয়ে যাই ।

    নন্দিনী : ছোটবেলায় আমারও খুব ছেলেধরার ভয় ছিলো ।

    নিখিল : একদিন বাবার সংগে মামারবাড়ি যাবো ট্রেনে চড়ে, বাবা রেলস্টেশনের ওভারব্রীজের ওপর আমাকে দাঁড় করিয়ে টিকিট কাটতে গেল । এদিকে প্ল্যাটফর্মে অন্য একটা ট্রেন এসে দাঁড়িয়েছে আর পিলপিল পিলপিল করে লোক উঠছে ব্রীজে । দেখে আমার খুব ভয় হলো, বাবা যদি আমায় খুঁজে না পায় ? আমি ব্রীজ ধরে নামতে শুরু করলাম । তারপর বাবা ফিরে এসে আমাকে সত্যিসত্যি না পেয়ে -- সে এক কাণ্ড !

    নন্দিনী : শেষ পর্যন্ত তো আর হারিয়ে যাওনি ।

    নিখিল : হ্যাঁ, প্ল্যাটফমখ ফাঁকা হয়ে গেলে খুঁজে খুঁজে আমায় বের করেছিল ।

    নন্দিণি : ক্যাসাব্লাংকার গল্প পড়োনি তো ছোটোবেলায় !

    নিখিল : তারপরেও বাবা আমায় ওভারব্রীজে দাঁড় করিয়ে টিকিট কাটতে গেছে । মা শুনে আঁতকে উঠতো । কিন্তু বাবা বলতো, নইলে ছেলে বড়ো হবে কি করে ?

    [ দরজায় বেল । নন্দিনী খুলে দিতে এগিয়ে যায় । বাইরের দরজার সংলাপ শোনা যায় ]
    নন্দিনী : হৃংয ?

    জ্যাক : ঝয ব্ঠূচ্ঠৎ ঞচ্‌ংশং ?

    নন্দিনী : হৃংয, চ্‌ং ঠয. হৃধণ্ণ ছশং ংঈশধস্‌ ?

    জ্যাক : ঝ ংঋত্ছষ্‌ যধববংশ গঠঞচ্‌ চ্ঠস্‌.

    নন্দিনী : চচ্‌ ধূছষ্‌. ত্‌ংঐংছযং বধস্‌ং ঠত্র.

    [ দুজনে ভেতরে ঢোকে । ]
    নিখিল : ণঠ, বধস্‌ং ঠত্র. ব্ছত্ররুঠত্রঠ, ঞচ্ঠয ঠয ঁছঠূঠযচ্ছত্র.

    জ্যাক : ণঠ, চ্ধগ ছশং ষ্ধণ্ণ রুধঠত্রভ ঞধরুছষ্‌? ঙছত্ৎ স্‌ং ঁছবূ.

    নন্দিনী : চষ. ণঠ ঁছবূ!

    জ্যাক : মচ্ছঞ'য ংঋশংবঠযংত্ষ্‌ গচ্ষ্‌ ঝ'স্‌ চ্‌ংশং. মধ চ্ঠএছবূ ষ্ধণ্ণশ চ্ণ্ণযঢছত্ররু. (হাসি)

    ব্ঠূচ্ঠত্‌, ঝ এণ্ণযঞ চ্‌ংছশরু ছঢধণ্ণঞ ঞচ্‌ং স্ঠযচ্ছৃ ংঈশধস্‌ শিণ্ণৃ রুণ্ণশঠত্রভ ঞচ্‌ং ভছস্‌ং. ঝ'স্‌ যধ যধশশষ্‌. জণ্ণঞ (হঠাৎ উদ্দীপ্ত হয়ে) ংঈধশ ছত্ৎ ষ্ধণ্ণ ংঊত্রধগ, চ্‌ং স্ঠভচ্ঞ ঢং রুধঠত্রভ ছ ঢশংছূ এধণ্ণশত্রংষ্‌ যধস্‌ংগচ্‌ংশং ধণ্ণঞ ঞচ্‌ংশং.

    নিখিল : ব্ধ, ত্রধঞ গঠঞচ্ধণ্ণঞ ত্‌ংঞঞঠত্রভ ণ্ণয ংঊত্রধগ.

    নন্দিনী : নঠত্রবং স্ষ্‌ স্ধঞচ্‌ংশ-ঠত্র-ত্ছগ ংঋছযযংরু ছগছষ্‌, ছঢধণ্ণঞ ৪ ষ্‌ংছশয ছভধ, চ্‌ং রুধংযত্র'ঞ গছত্রঞ ঞধ ঞশছটংৎ ছঞ ছত্ত্‌. নধ ঠঞ ঠয টংশষ্‌ ণ্ণত্রত্ঠূংত্ষ্‌ --

    জ্যাক : ঘছঠঞ ছ যংবধত্ররু. ঝ চ্ধৃং চ্‌ং গছয ছত্শঠভচ্ঞ ?

    নিখিল : ঘচ্ছঞ রুধ ষ্ধণ্ণ স্‌ংছত্রঅ? ণং গছয ঠত্র যধণ্ণত্ররু চ্‌ংছত্ঞচ্‌ --

    জ্যাক : ব্ধ, ঝ স্‌ংছত্র ংস্ধঞঠধত্রছত্ত্ষ্‌. ঝ রুধত্র'ঞ গছত্রঞ ঞধ যবছশং ষ্ধণ্ণ ধশ ছত্রষ্ঞচ্ঠত্রভ, ঢণ্ণঞ ঠঞ ঠয টংশষ্‌ বধস্স্ধত্র চ্‌ংশং ঞচ্‌ং ধত্রু ংঈধত্‌ংঊয ভংঞ ঞধ ছ রুংংংঋ রুংংঋশংযযঠধত্র ছীঞংশ ঞচ্‌ংষ্‌ ত্ধযং ঞচ্‌ংঠশ ত্ধত্রভ ঞঠস্‌ং ংঋছশঞত্রংশ.

    [ নিখিল নন্দিনী থমকে যায় । তারা একথা আগে ভাবেনি । ]

    জণ্ণঞ ঞচ্‌ংত্র, রুধত্র'ঞ গধশশষ্‌. ঝত্ররুঠছত্রয ছশং ঞধধ ংঈছস্ঠত্ষ্‌-ধশঠংত্রঞংরু ঞধ যণ্ণীংঈংশ ংঈশধস্‌ ত্ধত্রংত্ঠত্রংযয. হৃধণ্ণ ভণ্ণষ্য ছত্গছষ্য যঞঠবূ ঞধভংঞচ্‌ংশ - ধত্র ঞচ্‌ং শধছরু, ধত্র ছ ঞশঠৃ, ঠত্র ঞচ্‌ং শংযঞধশছত্রঞ - ণছ চ্ছ চ্ছঅ!

    নিখিল : (আপনমনে) ংঔষ্‌ ংঈছঞচ্‌ংশ ছত্গছষ্য ঞধধূ ঞচ্‌ং শধছরু ত্‌ংযয ঞশছটংত্ত্‌ংরু. ণং গছয ছ ঢধশত্র ত্ধত্রংশ.

    নন্দিনী : ঁছবূ, স্ষ্‌ ংঈছঞচ্‌ংশ-ঠত্র-ত্ছগ ঠয ছ টংশষ্‌ ংঋধযঠঞঠটং ংঋংশযধত্র. ঝ রুধত্র'ঞ শংস্‌ংস্ঢংশ যংংঠত্রভ চ্ঠস্‌ রুংংঋশংযযংরু ংটংশ.

    জ্যাক : ঝ ছস্‌ যণ্ণশং চ্‌ং গধত্র'ঞ ঢং. (নিখিলের পিঠে চাপড় মেরে) বচ্‌ংংশ ণ্ণৃ. ঝ বছস্‌ং চ্‌ংশং ছত্যধ ঞধ ংঋণ্ণত্ৎ ষ্ধণ্ণ ধণ্ণঞ ধী ষ্ধণ্ণশ চ্ঠরুংধণ্ণঞ. ত্‌ংঞ'য ভধ চ্ছটং ছ ভছস্‌ং.

    নিখিল : ঝ'ত্ৎ ংঋছযয ঞধরুছষ্‌. ঝ ত্রংংরু ঞধ ঢং চ্‌ংশং.

    জ্যাক : ধূ, ঞচ্‌ংত্র. নংং ষ্ধণ্ণ ত্রংন্ঞ গংংংঊ.

    নিখিল : মচ্ছত্রূয ংঈধশ ঢংঠত্রভ চ্‌ংশং, ঁছবূ.

    জ্যাক : ত্রিষ্‌ ঞঠস্‌ংঅ! জষ্‌ং ভণ্ণষ্য. ত্‌ংঞ স্‌ং ংঊত্রধগ ঠী ষ্ধণ্ণ ত্রংংরু ছত্রষ্‌ চ্‌ংত্‌ংঋ.

    নিখিল : নণ্ণশং. ত্রিরু ঞচ্ছত্রূ ষ্ধণ্ণ. জষ্‌ং.

    নন্দিনী : জষ্‌ং ঁছবূ.

    [ জ্যাকের প্রস্থান । ]

    নন্দিনী : এরা সবসময় ডিপ্রেশানের ভয়ে গর্তে সেঁধিয়ে থাকে ।

    নিখিল : কিন্তু ... জ্যাক হয়তো খুব ভুল বলেনি ।

    নন্দিনী : কি ? বাবা সন্ন্যাসী হয়ে চলে গেছেন কোথাও ?

    নিখিল : (উষ্মাভরে) ঠাট্টার কথা নয় - হি কুড । কি কুড ইভ্ন ডু সামথিং টু হিমসেল্ফ ।

    নন্দিনী : কি যা তা বকছো । ওনার জীবনে কোন প্রবলেম ছিলো না --

    নিখিল : কি ছিলো না ছিলো আমরা কখনো জিগ্গেস করেও দেখিনি । আমরা, আমরাই হয়তো বাবাকে এখানে টেনে আনতে গিয়ে আরো একাকীত্বের দিকে ঠেলে দিয়েছি ।

    নন্দিনী : উনি তো কখনো জোর দিয়ে না করেননি । করলে কি আমরা টেনে আনতে পারতাম ওঁকে ?

    নিখিল : (শ্লেষের হাসি দিয়ে) আমরা যে বুবাই-এর টোপ ফেললাম ।

    নন্দিনী : টোপ ? টোপ হোলো ওটা তোমার কাছে ? ছেলেকে, নাতিকে কাছে পেতে কোন্‌ বাবার না ভালো লাগে ?

    নিখিল : ওটা যে অর্ধসত্য, তা তুমিও জানো, আমিও জানি । কেন টেনে আনছিলাম ওনাকে, তা তুমি জানো না ? অমাদের অপরাধবোধ !

    নন্দিনী : এই শুরু করলে তো এনআরআই দু:খবিলাস ?

    নিখিল : (উত্তেজিত কন্ঠে) বাবার দিকটা অনুভব করতে পারলে তুমি একথা বলতে না নন্দিনী । এখানে এসে বাবার কি চতুর্বর্গ উদ্ধার হতো, বলো ? পঁচিশটা জন্মদিনের নেমন্তন্ন, আটটা জায়গায় টিক মেরে বেড়াতে যাওয়া আর নির্বান্ধব কতগুলো দুপুর কাটানো --

    নন্দিনী : আমরা কি মেনে নিইনি এই সমস্ত লিমিটেশান ? নতুন তো কিছু নয় -- এর সংগে মানিয়েই বাস করতে শিখেছি আমরা ।

    নিখিল : আর তার রিটার্ন ? ভেবে দেখেছো কিছু পাচ্ছো কিনা ?

    [ সামনে এগিয়ে যায়, আত্মস্থ ভঙ্গিতে বলে ]

    বাবা শিখিয়েছিলেন, সুখে নয়, আনন্দে থেকো ।

    [ খানিকক্ষণ চুপ । যেন বাবার কথার রোমন্থন চলছে । তারপর আচমকা ঘুরে বলে ]

    বলো, এখানে কোন্‌ আনন্দে আছি আমরা ? চতুর্দিকে এই দেঁতোহাসি মার্কা সম্পর্কগুলো তোমার কাছে অন্ত:সারশূন্য বলে মনে হয় না ? একই বয়সের কিছু লোকের এক ধরনের কথাবার্তা, স্টক মার্কেটের গল্প, বাড়ি-গাড়ি-বাচ্চার পড়াশুনো-পটলাক - এই আমাদের জীবনের টপ প্রায়রিটি ! এরই জন্য আমরা পেছনে ফেলে এসেছি আত্মীয়স্বজন, নিজের সমাজ, কলেজ স্ট্রীট । কোন্‌ আনন্দে আছি আমরা ?

    নন্দিনী : পেতে জানলে আনন্দ এখানেও খুঁজে পেতে পারো তুমি ।

    নিখিল : না, আমি পারি না । এই বিপদের মুহূর্তে আমি ফীল করছি, এখানে কেউ নেই, কিচ্ছু নেই আমার । ভরসা পেতে পারি, এমন একজনও নেই ।

    নন্দিনী : (আস্তে) ভরসা তো সবাইকে নিজের মধ্যেই খুঁজতে হয় --

    নিলয় : তোমার ঐ বড়ো বড়ো থিয়োরেটিকাল বাত ছাড়ো । আই নিড হেল্প্‌ । আই নিড সাপোর্ট । এই দু:সময়ে সারা আমেরিকায় এমন কেউ আছে, যে আমার পাশে এসে দাঁড়িয়েছে ? এখানে আমার এগ্জিসটেন্স কি অসার আর মুল্যহীন । ঘেন্না হয় আমার ।

    কি ? তুমি যেন কিছুই বুঝতে পারছো না আমার কথা ?

    নন্দিনী : না পারছি না । হয়তো এই দেশটা আমার দামটাকে একটু বাড়িয়ে দিয়েছে তাই । কিন্তু প্লীজ, এখন তর্ক কোরো না । তুমি প্রচণ্ড স্ট্রেসের মধ্যে আছো - এসব কথা থাক ।

    নিখিল : থাকবে কেন ? তোমার পছন্দ হচ্ছে না বলে ? এতোদিনের মধ্যে এই প্রথম আমি ক্লিয়ারলি ভাবতে পারছি ।

    নন্দিনী : কি, কি ভাবতে পারছো ?

    নিখিল : যে স্টক মার্কেট, বাড়ি কেনা আর এই হোহোহাহা - দ্যাটস নট হাও আই ওয়ান্ট টু লিভ মাই লাইফ ।

    [ ফোন বাজে । নন্দিনী ধরে । ]

    নন্দিনী : হ্যাঁ অরূপ বলো । কি বললো ভেংকট ? কি ? বুঝলাম না । সে কি ! ঠিক ইনফরমেশান দিয়েছে তো ?

    [ নিখিলের উদ্দেশ্যে ]

    সিংগাপুর এয়ারপোর্টে বছর ষাটেকের এক ভদ্রলোকের হার্ট অ্যাটাক হয় । ঐ দিন, ঐ ফ্লাইটেই কলকাতা থেকে আসছিলেন ।

    [ নিখিল এসে নন্দিনীর হাত থেকে ফোনটা ছিনিয়ে নেয় । ]

    .. হ্যালো ? কবে ? কখন হয়েছে ?

    ও মাই গড ! (ভেঙে পড়ে)

    হ্যাঁ, বাবার বয়সও ঐরকম, সিকসটি ওয়ান বোধ হয় । .. অবস্থা কেমন ? আর কোন খবর নেই ? পুরো ইনফরমেশানটা পেলেই আমায় সংগে সংগে ফোন কোরো, প্লীজ ?
    .. বাই ।

    [ ফোন রেখে চুপচাপ মুখে ঢেকে সোফায় বসে । ]

    জোর করে বাবাকে না আনলে হয়তো --

    [ আবার নীরবতা । হঠাৎ উঠে দাঁডায় । ডায়াল করে সাজিদ ভাইকে ]

    নিখিল : হ্যালো ? সাজিদ ভাই ? আমি নিখিল বলছি । শুনুন, খারাপ লাগছে বলতে, কিন্তু আমাদের একটু প্ল্যান চেঞ্জড হয়েছে - বাড়ি কেনাটা এখন বন্ধ করতে চাই । না না, আমরা ভালো আছি । হ্যাঁ, বাবা ভালো নেই । অসুস্থ হয়ে পড়েছেন সিংগাপুরে খুব সম্ভবত, ডিটেল খবর পাইনি । এখন রাখছি । .. বাই ।

    নন্দিনী : এটা কি করলে ?

    নিখিল : যা উচিত মনে করেছি সেটাই করলাম ।

    নন্দিনী : তুমি কিছুটা সময় নিলে না কেন ? আর এই ডিসিশনটা সাজিদ ভাইকে জানানোর আগে আমার সংগে একবার আলোচনা করে নেবার দরকার বোধ করলে না ?

    নিখিল : শোনো নন্দিনী । শুধু বাড়ি কেনা পোস্টপোন করাই নয়, আমি, আমি ঠিক করে ফেলেছি যে আমরা দেশে ফিরে যাবো ।

    নন্দিনী : দেশে ফিরে যাবে -- পাঁচ মিনিটের মধ্যে ডিসাইড করে ফেললে ?

    নিখিল : তুমি আমার মানসিক অবস্থাটা বুঝতে পারছো না । স্বার্থপরের মত --

    নন্দিনী : শোনো, এতো একদিনের ব্যাপার নয়, আমরা এতোদিনের প্ল্যান হুট করে চেঞ্জ করে ফেলতে পারি না । বাবা সুস্থ হয়ে ফিরুন, তদ্দিনে তুমিও খানিকটা পারসপেকটিভ ফিরে পাবে ।

    নিখিল : (চেঁচিয়ে) ইউ ডোন্ট আণ্ডারস্ট্যাণ্ড । এটাই আমার পারস্পেকটিভ । আজ, এই মুহূর্ত থেকে আমি এটা এক্জিকিউট করতে আরম্ভ করবো । বাবা ফেরার সংগে এর কোন সম্পর্ক নেই ।

    [ নন্দিনী এতক্ষণ নিখিলকে হালকাভাবে ঠেকাচ্ছিল । কিন্তু সে বোঝে, নিখিল সত্যিই এক ইন্ট্রোস্পেকশানে মগ্ন । অনেকক্ষণ পর । ]

    নন্দিনী : সেক্ষেত্রে, আমার দিকটাও তোমাকে বুঝতে হবে ।

    নিখিল : অফ কোর্স । তোমার আবার কি দিক ?

    নন্দিনী : আমার এখানে কিছু করার আছে, সেটা মানো তো ?

    নিখিল : অভভিয়াসলি ! দেশে ফিরলেও থাকবে ।

    নন্দিনী : চাকরির কথা শুধু বলছি না । আমি বলছি আমার মনের স্বাধীনতার কথা, নিজের ভালোলাগা অনুযায়ী কাজ করতে পারার কথা ।

    নিখিল : দেশে তোমার ভালো লাগা অনুযায়ী তুমি কোন্‌ কাজটা করতে পারোনি শুনি ?

    নন্দিনী : অনেক কিছু । সামনে ব্যাগ দিয়ে আড়াল না করে ভিড়ে হাঁটতে পারিনি, কাউকে না কাউকে কৈফিয়ত না দিয়ে কোথাও যেতে পারিনি, মন লাগিয়ে সংসারও করতে পারিনি - কারণ সেই সংসার আমার নিজস্ব ছিলো না । তোমাকে, তোমাকেও কাছে পাইনি তেমন করে । আজ এখানে দোকানপাট করা থেকে, চাকরি করা থেকে, বুবাইকে খাওয়ানো পর্যন্ত সবকিছু আমরা ভাগাভাগি করে নিয়েছি -- দেশে কি তা সম্ভব ছিলো ? ঝুমুরের কথা ভাবো । ওর মধ্যে কতো সাধ আছে, সাধ্যও আছে, কিন্তু উপায় নেই -- সোনার শেকল পরে স্বামীর সংসার সাজাতে সাজাতে বছরের পর বছর কাটিয়ে দিচ্ছে । ওখানে তুমি আমায় ফিরে যেতে বোলো না ।

    নিখিল : সেটা ওর চয়েস । তুমি কি জানো ? দুদিনের বৈরাগী - ভাতরে কয় অন্ন । স্বাধীনতা-টাধীনতা সব চোখ ঠারা -- আসলে এই যে আরাম, বিলাস -- এসব ছেড়ে যাবার শক্তি নেই । নিজে ভালোভাবে বাঁচলেই ব্যাস, না ?

    নন্দিনী : তুমি বলো, নিজে ভালোভাবে বাঁচতে চাওয়ার মধ্যে অন্যায় কি আছে ?

    নিখিল : আর বুবাই ? বুবাইকে একটা সুস্থ, সম্পূর্ণ পরিবেশ দেওয়ার কথা একবারও ভেবে দেখবে না তুমি - এতোই উদগ্র তোমার নিজে ভালো থাকবার লোভ ?

    নন্দিনী : বাহ । এই পরিবেশ তোমার-আমার দেখা পরিবেশ থেকে আলাদা বলেই তা অসুস্থ হয়ে গেলো ? এখান থেকে দেশে নিয়ে গিয়ে পাহাড়প্রমাণ বইয়ের চাপে ওকে ফেলে দিলেই ও মানুষের মতো মানুষ হয়ে উঠবে, কেমন ?

    নিখিল : অল সেইড অ্যাণ্ড ডান, আই ওয়ান্ট টু গো ব্যাক ।

    নন্দিনী : গো ব্যাক ? আমি চাই না ।

    নিখিল : এটা কি অসম্ভব কথা বলছো, তুমি বুঝতে পারছো ? আমার ভালো লাগা না-লাগার থেকে এই দেশে থাকার প্রায়োরিটিই বেশি হলো তোমার কাছে ?

    নন্দিনী : আর এই একই প্রশ্ন তোমায় যদি করি ?

    নিখিল : আ:, অবুঝের মতো কথা বোলো না । একটু খতিয়ে দেখলেই তুমি আমার পয়েন্টটা বুঝবে ।

    নন্দিনী : খতিয়ে তো তুমিও দেখতে পারো ।

    নিখিল : (অধৈর্য স্বরে, উচ্চগ্রামে) কিন্তু আমি ফিরতে চাই । আমি এখানে থাকতে পারবো না । এখানে আমি বিলং করি না । এখানে আমার কোন বন্ধু নেই ।

    নন্দিনী : আমি দেশে আরো বেশি করে বিলং করি না ।

    নিখিল : তুমি কিছুতেই কম্প্রোমাইজ করবে না, না ?

    নন্দিনী : নিজের ভালোলাগার সংগে কম্প্রোমাইজ করে বেশিদূর টানা যায় না ।

    নিখিল : ও, টানা যায় না ! .. আমাদের সম্পর্ক .. টানা যায় না ?

    নন্দিনী : আমি সেকথা একবারও বলিনি ।

    নিখিল : টানা যায় না ! তাহলে যে সম্পর্ক তোমার ঐ অ্যামেরিকান ড্রিমের এক ধাক্কাতেই ভেঙে পড়ে, সেটা রাখা কেন ?

    বলো, কেন ? তোমার লিবারাল সমাজ কি করতে বলে এক্ষেত্রে ? বলো ?

    [ দুজনেই চুপ । আলো কমে শুধু নিখিলের ওপর পড়ে । ]

    নন্দিনী, এভাবে হয় না । আমাদের আলাদা হয়ে যাওয়াই সবচেয়ে ভালো । আমরা পরস্পরের সংগে কিছু শেয়ার করি না, কিচ্ছু না । লেট'স কল ইট আ ডে ।

    [ আলো এসে পড়ে নন্দিনীর মুখে । সে হতবাক । সে কখনোই ভাবে নি, নিখিল সেপারেশানের কথা উচ্চারণ করবে । তার নির্বাক অবস্থাতেই পর্দা পড়ে যায় । ]


    ॥ সপ্তম দৃশ্য সমাপ্ত ॥



    ॥ অষ্টম দৃশ্য ॥


    [ নিলয় সুটকেস গোছাচ্ছে । পুরোনো জিনিস যেগুলো নিয়ে তারা ভাইজাগে যাবে ভেবেছিল সেগুলো বের করে দিচ্ছে । একে একে সুটকেসে অন্য জিনিস ঢুকবে । ]

    নিলয় (চেঁচিয়ে) : ঝুমুর, ঝুমুর ! পাসপোর্টটা কোথায় ?

    ঝুমুর (ঢুকে) : গডরেজেই রাখা ছিলো তো । পাসপোর্ট দিয়ে কি হবে ?

    নিলয় : ভাবছি সিংগাপুরে গিয়ে চোখ কানের বিবাদ মিটিয়ে নেবো । আজই রওনা হয়ে যাবো । ভিসা পেতে অসুবিধা হচ্ছে না যখন ।

    ঝুমুর : তুমি আজই সিংগাপুরে যেতে চাও ?

    নিলয় (ব্যস্তভাবে) : হ্যাঁ । কখন খবর আসে তার ভরসায় বসে না থেকে চলেই যাই । ভাইজাগের টিকিটটা ক্যানসেল করে দিয়েছো তো ?

    ঝুমুর : না, ক্যানসেল এখনো করিনি । পিছিয়ে দিয়েছি দুসপ্তাহ ।

    নিলয় : করে দাও, করে দাও । ভাইজাগ-ফাইজাগ এখন মায়া ।

    [ ঝুমুর উত্তর দেয় না । নিলয় সুটকেস থেকে ত্রক্রমাগত জিনিস বের করতে থাকে । ঝুমুরের শাড়ি, পোশাক । ]

    ঝুমুর : এগুলো, এগুলো কেন বের করছো ? ভাইজাগে যাওয়ার জন্য সব কষ্ট করে ঢুকিয়েছিলাম ।

    নিলয় : উফ্‌, গন্ধমাদন ঢুকিয়েছো একেবারে । আমি এই সুটকেসটাই নিয়ে যাবো ।

    ঝুমুর : সিংগাপুরে.. আজই যাওয়ার কি দরকার ?

    নিলয় : দরকার আছে । বাবার আদৌ কোন ট্রিটমেন্ট শুরু হয়েছে কিনা দেখতে হবে তো । কে জানে বাবা কোথায় পড়ে আছে, কি অবস্থায় । টাকা পয়সা নিয়ে না গেলে কোথাও আজকাল কোন কাজ হয় না, জানোই তো !

    ঝুমুর : এখনো তো কনফার্মড খবর পাওনি ।

    নিলয় : কনফার্মড খবর আবার কি ? দাদার বন্ধু খোদ খবর দিয়েছে - সমস্ত বিবরণ মিলে যাচ্ছে । আর খারাপটার জন্য তৈরি থাকাই বুদ্ধিমানের কাজ ।

    ঝুমুর : তাও আমার মনে হচ্ছে আজই যাবার কোন দরকার নেই ।

    নিলয় (রেগে) : আমি আজ গেলে তোমার প্রবলেম কি বলো তো ? এতোগুলো লোক চারধারে, মুখের কথা খসতে না কসতেই তোমার হুকুম তামিল হয়ে যায় --

    ঝুমুর : আমি কি সেজন্যে বলেছি । ... দাদা কি বললো ?

    নিলয় : কি ব্যাপারে ?

    ঝুমুর : বললো যে যাওয়া উচিত ?

    নিলয় : দাদা আবার কি বলবে । বললো যে তুই যা ভালো বুঝিস কর ।

    ঝুমুর : দাদা কি আসছে সিংগাপুরে ?

    নিলয় : কি ব্যাপারটা কি ? এতো জেরা শুরু করেছো কেন ? দাদার পক্ষে কি ওখান থেকে হুটহাট আসা সম্ভব ? ঐ নিয়ে কথাই হয়নি ।

    ঝুমুর : আমার মনে হচ্ছে তুমি বেশি উতলা হয়ে পড়েছো । দাদাকে দেখো তো - তোমার মতো একটা উড়ো খবর পেয়েই ছুটে যাচ্ছে না ।

    নিলয় : উড়ো খবর ! আর সত্যি হলে ? আমার একটা দায়িত্ববোধ আছে তো । বাবার ওখানে শরীর খারাপ জেনেও আমি নিশ্চেষ্ট হয়ে বসে থাকবো ?

    ঝুমুর : তা দাদাও তো বড়ো ছেলে । তারও কি একইরকম ভাবা উচিত নয় ?

    নিলয় : আমি কাছাকাছি আছি তাই -- আর তোমাকে কি সব কিছুর কৈফিয়ত দিতে হবে নাকি ?

    ঝুমুর : না দায়িত্ববোধের কথা বলছিলে তো !

    নিলয় : ব্যাস, আর একটাও কথা নয় । দাদার কাজের কোন সমালোচনা আমি শুনতে চাই না ।

    ঝুমুর : সমালোচনা আমি করছি না । কারণ দাদা ঠিকই করেছে । সিংগাপুরে যাবার এক্ষুণি যে কোন দরকার নেই সেটা দাদা জানে ।

    .. আমার কছ থেকে সমালোচনা শুনতে চাও না ! আর নিজে দুদিন আগে টেলিফোনে যা করলে - সেটা কি ? ভ্রাতৃপ্রেম ?

    নিলয় : বললাম না দাদার সম্বন্ধে কোন কথা আমি তোমার কাছ থেকে শুনতে চাই না ? ওটা ... ওটা তোমার এক্তিয়ারের বাইরে ।

    ঝুমুর : সব সময় আমার এক্তিয়ার তুমি ঠিক করে দেবে । কেন ? আমার এক্তিয়ার ঠিক করে দেওয়া খু-উ-ব তোমার এক্তিয়ারের মধ্যে, কেমন ?

    নিলয় : আমার এখন এই নিয়ে বাগ্বিতণ্ডা করার সময় নেই তোমার সংগে । এটা ফ্যামিলির ব্যাপার । আমার যা করার করতেই হবে ।

    ঝুমুর : তোমার ফ্যামিলির জন্যই তো আমি আজ আস্টেপৃষ্ঠে বাঁধা । অথচ অ্যাদ্দিন বাদেও কিছু বলতে গেলেই শুনতে হয় এক্তিয়ারের বাইরে ।

    নিলয় : আমি তোমার ওপর জোর করে কিছুই চাপাইনি । ... কোন কিছুতেই তোমার সন্তোষ নেই কেন বলো তো ?

    ঝুমুর : কি করে থাকবে ? তুমি যখন যা বলবে তাই আমায় করতে হবে । যখন যেমন ইচ্ছে হবে লক্ষ্মণের গণ্ডি কেটে নাচতে গাইতে বলবে আর তেমনি তেমনি করে যেতে হবে আমায় ! কেন যে মরতে বিয়ে করেছিলাম !

    নিলয় : বাবার এই অবস্থা, তার মধ্যে তোমার এই আচরণ -- অসহ্য !

    ঝুমুর (ক্রন্দনরত ) : না, তুমি আজ সিংগাপুরে যেতে পারবে না ।

    নিলয় : আমার কাজ আছে । সরো সরো ।

    [ ঝুমুরকে সম্পূর্ণ উপেক্ষা করে ভেতরে চলে যায় । ঝুমুর ছলছল চোখে দাঁড়িয়ে থাকে । ]

    [ দরজা খুলে জ্যাঠামশাই-এর প্রবেশ । ]

    জ্যাঠা : নিলয় ! ঝুমুর ! আছো নাকি । খবরাখবর নিতে - একি কাঁদছো কেন ? নৃপেন কেমন আছে ?

    [ ঝুমুর চেয়ার এগিয়ে দেয় জ্যাঠামশাই-এর দিকে । ]

    ঝুমুর : সিংগাপুরে একজন অসুস্থ ভদ্রলোকের খোঁজ --

    জ্যাঠা : হ্যাঁ হ্যাঁ সেই তো বংকুর দোকানে শুনলাম । আর কোন খবর --
    ঝুমুর : না আর কিছু না ।

    জ্যাঠা : তাই বলো । আমি তো তোমায় কাঁদতে দেখে ভয় পেয়ে গেছি । .. আচ্ছা নেপেনের হার্টে প্রবলেম তো সেরকম ছিলো না - কিকরে এমন হলো বলো তো ? নিজের শরীরের প্রতি ও খুব সজাগ ছিলো তো ।

    ঝুমুর : বাবাই যে অসুস্থ হয়েছেন, তাই বা ভাবছেন কেন রামজ্যাঠা ।

    জ্যাঠা (লজ্জিত হয়ে) : হ্যাঁ ঠিকই বলেছো । .. বুডো হয়েছি তো, সব সময় মনটা কু গায় ।

    [ নিলয়ের পুন:প্রবেশ । ]

    নিলয় : রাত্তির দশটায় ফ্লাইট । (জ্যাঠাকে দেখে) ও রামজ্যাঠা এসেছেন, শুনেছেন তো সব খবর ।

    জ্যাঠা : হ্যাঁ ।

    নিলয় : আজ আমি সিংগাপুরে যাচ্ছি । ঝুমুর রইলো । একটু খোঁজ খবর রাখবেন । জানি না কদিন ওখানে কাটাতে হবে --

    জ্যাঠা : সে আর বলতে ! দু খানা ঘুপচি ঘর না হলে আমাদের সংগেই থাকতে বলতাম । .. শ্যামলী দুবেলা এসে খোঁজ নিয়ে যাবে'খন । আমি তো আসবোই ।

    .. দ্যাখো কি খবর পাও আর খবর পেলেই জানিও । আমার থেকে চার বছরের ছোট নেপেন । সে আমার আগে বিছানায় পড়ে যাবে, তাই কি হয় ।

    [ উঠে দাঁড়িয়ে ]

    আমায় আবার ছোট নাতনিকে ইস্কুলে নিয়ে যেতে হবে ।

    [ বেরিয়ে যাচ্ছেন । হঠাৎ পেছন ফিরে ]

    জ্যাঠা : আচ্ছা নটিনী কাঁদছিলো কেন ?

    নিলয় : আমি কি জানি !

    জ্যাঠা : তুমি জানবে না তো কে জানবে ?

    ঝুমুর : ও কিছু না । আপনার ক্যালিফস ৩০ খুঁজে পাইনি রামজ্যাঠা ।

    জ্যাঠা : তাই কাঁদছিলে ?

    [ ঝুমুর হেসে ফ্যালে । ]

    ঝুমুর : না ।

    জ্যাঠা : তবে ?

    ঝুমুর : কিছু না ।

    জ্যাঠা : তাহলে ? নিলয় সিংগাপুরে যাবে সেই দুশ্চিন্তায় ?

    নিলয় : হুঁ, দুশ্চিন্তা !

    জ্যাঠা (নিলয়ের দিকে তাকিয়ে) : হাওয়া গরম করে রেখেছো দেখছি । যেখানেই যাই সেখানেই ঝগড়াঝাঁটি ! এই বিপদের মধ্যেও রোজকার কাজটা দেখছি ভোলোনি !

    নিলয় : বলুন না, বলুন -- এই বিপদের মধ্যেও ঝগড়াটা কে করছে ।

    ঝুমুর (আবার ত্রক্রন্দনরত) : জানেন রামজ্যাঠা, সব সময় নিজের ইচ্ছে মতো কাজ করবে, যুক্তি দিয়ে বললেও শুনবে না ।

    জ্যাঠা : বুঝেছি ।

    ঝুমুর : যেন আমি ওর কেউ নই ।

    [ নিলয় চলে যাওয়ার উপক্রম করছিলো, জ্যাঠা আটকান । ]

    জ্যাঠা : যাচ্ছো কোথায়, বোসো বোসো ।

    [ নিলয় বসে । ]

    ঝুমুর : আর মাথা সব সময় গরম হয়েই থাকে ।

    জ্যাঠা : হুম্ম্ম্‌ ।

    ঝুমুর : আমার ভালো লাগা না লাগার খোঁজ কোনদিনও রাখে না ।

    [ ঝুমুর ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদতে থাকে । ]

    জ্যাঠা : (চেয়ারে বসে পড়েন) শোনো তোমাদের একটা গল্প বলি । অল্প বয়সে আমার খুব চণ্ডাল রাগ ছিলো বুঝলে । পান থেকে চুন খসার জো ছিলো না । একদিন দুহাতে বাজার করে ফিরছি -- গেট থেকে চিত্কার করে ডাকলাম তোমার জেঠিমাকে ব্যাগ ধরার জন্য -- উত্তর নেই । আরেকটু এগিয়ে আরেকবার ডাকলাম, তাও তার সাড়া নেই । হাতের ব্যাগদুটো তখন করলাম কি, দুম করে সেখানেই ফেলে দিলাম । হাঁসের ডিম নর্দমায় গড়াগড়ি যেতে লাগলো । ঘরে ঢুকে দেখি, রেডিও ফুল ভলুমে চালিয়ে শ্রীমতী টেবিলক্লথে ফুল তুলছেন । মাথায় আগুন ধরে গেল । কাঁচি নিয়ে ঘ্যাঁচঘ্যাঁচ করে চালিয়ে দিলাম টেবিলক্লথের মধ্যে দিয়ে ।

    তোমার জেঠিমার যে সেদিন কি মনে হয়েছিলো তার খোঁজ আমিও রাখিনি । এখন আর খোঁজ চাইলেও তাকে কোথায় পাবো ... "সময় তো থাকবে না গো মা কেবল মাত্র কথা রবে মা গো" (শ্যামাসংগীত গেয়ে ওঠেন)

    দেখো নটিনী, আজকালকার ছেলে নিলয়, সে কি আর এই বদরাগী বুড়োর মতো টেবিলক্লথ কাটবে ? কাটবে না । তার সেই বোধটা আছে । আর যখন নিলয়ের ছেলে বা নাতি হবে -- দেখে নিও, কথায় কথায় তারা তাদের নটিনীকে এইভাবে কাঁদাবেও না । দিন পাল্টাচ্ছে ! এই বুড়ো না চাইলেও -- হা হা হা !

    ঝুমুর (দু:খ ভুলে হেসে) : আপনি জেঠিমার টেবিলক্লথটা কেটে ফেললেন ? আমি হলে তক্ষুণি পুঁটুলি বেঁধে --

    জ্যাঠা : আজকালকার ছেলেদের অতো বুকের পাটাই নেই । হা হা হা হা...

    [ নিলয়ও মুচকি মুচকি হাসে । এইসময় টেলিফোন বাজে ভেতর থেকে । নিলয় ভেতরে চলে যায় । ]

    ঝুমুর : চা খাবেন রামজ্যাঠা ?

    জ্যাঠা : না আজ আর দেরি নয় । ও তোমার কাছে আরেকটা কথা বলার ছিলো । রুমনির ইস্কুলে কি একটা ফাংশান হবে, সেখানে সে নাচতে চায় । খুব বায়না করছে আমার কাছে, তা তুমি যদি তাকে একটু দেখিয়ে দাও --

    ঝুমুর : হ্যাঁ হ্যাঁ, কোন অসুবিধে নেই । যে-কোনদিন দুপুরের পর আসতে বলবেন । আমি তো বোরই হই বাড়িতে বসে থেকে থেকে ।

    [ নিলয়ের প্রবেশ । ]

    নিলয় : দাদা ফোন করেছিলো । সিংগাপুরের ভদ্রলোকের আইডেন্টিটি জানা গেছে ।

    [ জ্যাঠামশাই ও ঝুমুর স্থাণুবৎ চেয়ে থাকে অমোঘ বাণীটি শোনার জন্য ।]

    নিলয় : বাবা নন । সাম এ সি চ্যাটার্জি ।

    ॥ অষ্টম দৃশ্য সমাপ্ত ॥



    ॥ নবম দৃশ্য ॥


    [ নিখিলের বসার ঘর । কোলাজটা অসমাপ্ত হয়ে পড়ে আছে । একফালি রোদ এসে পড়েছে ওটার ওপর । নন্দিনীকে দেখা যাচ্ছে না । নিখিল অনেক কাগজপত্রের মধ্যে বসে আছে । পামে কিসব লিখছে, হিসেব করছে । এইসব করতে করতেই হঠাৎ সোফায় গিয়ে শুয়ে পড়লো একটা কাগজ নিয়ে । কিছুক্ষণ পর কাগজটা রেখে এমনিই শুয়ে রইল । বোঝা যাচ্ছে সে স্ট্রেসড আউট এবং টায়ার্ড । ফোন বাজে । ]

    নিখিল : হ্যালো ? পলাশ ? বল । ... হ্যাঁ, বাড়িতেই আছি এখন । .. কখন পার্থর ফ্লাইট ? শিওর, চলে আয় । .. ওকে, বাই ।

    [ আবার কাগজপত্রের মধ্যে গিয়ে বসে । পাশের ঘরের উদ্দেশ্যে চেঁচিয়ে বলে ]

    নিখিল : পলাশরা আসছে এখনই দেখা করতে । পার্থ বিকেলে ফিরে যাবে, তাই ।

    [ কোন উত্তর আসে না । নিখিল আবার কাগজপত্র গোছাতে থাকে । তার মধ্যে যে প্রচণ্ড অস্থিরতা কাজ করছে, তা বোঝা যায় । ইতিমধ্যে দরজায় বেল বাজে । নিখিল এগিয়ে খুলে দেয় । পলাশ, রীতা, পার্থ ঢোকে । ]

    নিখিল : আয় ।

    পার্থ : গুরু তোমাদের বহুত মজা, একই কমপ্লেক্সে থাকো !

    পলাশ : সে আর কদিন ! নিখিল বাড়ি কিনে চলে গেলেই মজার ইতি ।

    রীতা (সোফায় বসে) : থ্যাংক গড নিখিলদা, সিংগাপুরের অসুস্থ ভদ্রলোক মেশোমশাই নন । যা ভয় পেয়েছিলাম শুনে ।

    পলাশ : বাট দা প্রবলেম স্টিল রিমেনস -- মেসোমশাই কোথায় ।

    নিখিল : হ্যাঁ, একদিকে যেমন রিলিভড বোধ করছি, অন্যদিকে মনে হচ্ছে ওটা বাবা হলে তবু তো একটা খোঁজ পাওয়া যেত ।

    পলাশ : হুঁ । .. এতো কাগজপত্তর কিসের ?

    নিখিল : ঐ ট্যাক্সের একটু মানে ফাণ্ডা করছিলাম ।

    নিখিল : এক্ষুনি আবার ট্যাকস কিসের ?

    নিখিল : একটু দরকার আছে ।

    রীতা : ও, তোমাদের বাড়ি কেনার ব্যাপারে, না ?

    নিখিল : না ।

    পার্থ (আয়েশ করে বসে) : আমি হিসেব করে দেখলাম, বৌ আর মেয়ে এখানে থাকলে ট্যাকসের যা বেনিফিট হবে, তা ক্লীভল্যাণ্ডে রুমমেটের সংগে শেয়ার করে থাকার কস্টের প্রায় সমান সমান । সবদিক বিচার করে ওদের নিয়ে আসাই স্থির করলাম ।

    রীতা : আর সমান সমান না হলে কি করতে পার্থদা ?

    পার্থ : কিছু একটা ছক কষতে হতো । অ্যাপার্টেমন্ট রেন্ট করতাম বা টিউশানি করতাম ।

    রীতা : টিউশানি ! এখানে টিউশানি হয় ?

    পার্থ : হয় না আবার ? ছেলেমেয়ের লেখাপড়ায় কিছু কমতি পড়ে যায়, এ কখনো ভারতীয় বাবা মা হতে দিতে পারে ?

    রীতা : আইডিয়াটা অবশ্য খারাপ নয় । পড়াশোনায় একটা রেগুলারিটি থাকে বাচ্চাদের --

    পলাশ (নিখিলের দিকে) : তা বাড়ির লেখাপড়া কি করে ফেলেছিস না আর কিছুদিন ওয়েট করবি ?

    নিখিল : না, করিনি ।

    পার্থ : কি হবে এখানে বাড়ি কিনে ? এখানে বাড়ি কেনাও যা, মোন্টানায় বাড়ি কেনাও তা । চেতলার ঠেক না থাকলে সব সমান । শুধু শুধু অতগুলো পয়সা কেন জলে দেবে গুরু --

    রীতা : পার্থদা মোন্টানায় বাড়ি কিনো আমরা সবাই নাহয় বেড়াতে যাবো ।

    পার্থ : আমি ? এখানে ? আমি এখানে জীবনেও বাড়ি-ফাড়ি কেনার মধ্যে নেই । পিতৃদেব গড়িয়ায় একখানা হাঁকিয়ে গেছেন -- সেখানে শেয়ারের দেড়খানা ঘর আমার -- ঐ যথেষ্ট ।

    [ পলাশ এতক্ষণ ট্যাকসের বই দেখছিল । একটা বইয়ের কভার দেখে বলে ]

    পলাশ : এটা কি ? ম্যানেজিং কনফ্লিকটস ? এইসব পড়ছিস -- অফিসে গণ্ডগোল হয়েছে নাকি কিছু ?

    নিখিল : না, সেসব কিছু না ।

    রীতা : তাহলে নিশ্চয়ই নন্দিনীদির সংগে ঝগড়া !

    তাই তো নন্দিনীদি কোথায় ? দেখছি না যে --

    নিখিল : ওর শরীর খারাপ, শুয়ে আছে ।

    [ নন্দিনীর এমত ব্যবহার অপ্রত্যাশিত -- সবাই চুপ করে যায় । ]

    নিখিল : অ্যাকচুয়ালি আমি একটা ডিসিশান নিয়েছি ।

    পলাশ : কি ?

    নিখিল : আমি, দেশে ফিরে যাচ্ছি শিগ্গিরই ।

    [ সবাই চুপ । ]

    নিখিল : নন্দিনী থাকবে ।

    [ পলাশ, রীতা পার্থ একসংগে কথা বলে । ]

    পার্থ : হোয়াট ?

    পলাশ : ইজ ইট ফাইনাল ?

    রীতা : নন্দিনী আর তুমি দুজনে দুজায়গায় ? কি যা তা বলছো ! আর বুবাই ? বুবাই-এর কথা তোমরা ভেবেছো ?

    নিখিল : বুবাই । বুবাই একটা বিরাট প্রশ্নচিহ্ন ।

    পলাশ : আর সেই প্রশ্নের উত্তর ? ইউ গট টু সলভ্‌ ইট ।

    নিখিল (ম্লান হেসে) : পাঁচমাসের শিশুর স্থান কোথায়, এ নিয়ে এই মুহূর্তে আমাদের বেশি কিছু অপশান বোধহয় নেই --

    পলাশ : আমি বুঝতে পারছি না তুই কি করে এটা হতে দিতে পারিস !

    নিখিল (একটু রেগে) : আমি কি করতে পারি নন্দিনী না যেতে চাইলে ? পাঁচ মাসের শিশুকে মায়ের কাছছাড়া করবো, এমন পাষণ্ড আমি নই --

    পার্থ : যা বাপ যা । দেশেই যা । দেখবি স-অ-ব ঠিক হয়ে যাবে ।

    নিখিল : আমি মেন্টালি ব্যাপারটা ভেবে ফেলেছি । আর ফরচুনেটলি আমাদের গ্রুপের কিছু কাজ ইণ্ডিয়াতে অফশোর প্রজেক্টে গেছে । কাজেই -- চাকরির দিক দিয়ে চিন্তা নেই ।

    পলাশ : চাকরির কথা নয় -- ইট ইজ আ ভেরি সাডেন ডিসিশান । ডোন্ট বি হেস্টি ।

    রীতা : হ্যাঁ, পাগলের মতো কাজ কোরো না নিখিলদা । নন্দিনীকে, বুবাইকে ফেলে রেখে --

    নিখিল : বললাম না, নন্দিনীই আমার সংগে যেতে চায় না ।

    পলাশ : এরকম একটা ইমপর্টেন্ট ডিসিশান হুট করে নেওয়া ঠিক নয় । কিছুদিন সময় নিয়ে দেখ --

    পার্থ : এক কাজ কর বাপ, ইউনিভার্সিটিতে অ্যাসিস্ট্যান্ট প্রফের পোস্টে তোকে ডেকে নেবে -- তুই ওখানে চলে যা । ইউনিভার্সিটির খোলনলচে বদলে দে দেখি -- "পাল্টে দেবার স্বপ্ন আমার আজো তো গেল না.." (গান ধরে) ।

    রীতা : তুমি যাও না পার্থদা । ক্লীভল্যাণ্ডে পোস্ট ডক না করে তুমি দেশোদ্ধার করো গে ।

    পলাশ : এই সময় চলে যাবি ? এই বয়সে কটা লোক লাইন টু ম্যানেজার হতে পারে ? ইওর কেরিয়ার জাস্ট স্টার্টেড টু ব্লুম !

    নিখিল : ওসব এখন ততটা ম্যাটার করছে না । আই হ্যাভ ডিসাইডেড ।

    পার্থদা : একেজি যদি তোকে পান, লাফিয়ে উঠবেন । ওনার অনেক প্ল্যান, শুধু ফ্রেশ ব্লাড পাচ্ছেন না --

    রীতা : তা তোমার ব্লাডে কি কিছু দোষ পাওয়া গেছে পার্থদা ? তুমি যাও না ।

    পার্থ (কর্ণপাত না করে) : আমি যদি একেজিকে পছন্দ না হয়, কোই বাত নেহি । একটা কম্পানি খুলে ফ্যাল্‌ নিজে । সব সুবিধা পেয়ে যাবি -- বুদ্ধবাবু এনআরআইদের ঘরে ফেরানোর জন্য সব করে দেবেন ।

    রীতা : খালি এখানে বসে বসে লেজ নাড়া ।

    পলাশ : তোরা থামবি ।

    নিখিল, বুঝতে পারছি নন্দিনীর সংগে কোন কারণে ঝগড়া করে তোর মাথা গরম --

    নিখিল : এই টপিকটা বাদ দে এবার ।

    পলাশ : ওকে । .. আমরা তোর পার্সোনাল ব্যাপারে ইন্টারফেয়ার করতে চাই না, তাও বলছি, হুট করে --

    পার্থ : আরে ইন্টারফেয়ার আবার কি ? দেশে যাবে মন করেছে, বেশ যাবে । নন্দিনীও যাবে শেষ পর্যন্ত, জানা কথা ।

    রীতা : কেন জানা কথা কেন ?

    পার্থ : কদিন একা থাকলেই নন্দিনীর ভালো লাগা বেরিয়ে যাবে ।

    রীতা : এখানে একা থাকা দেশে সাতগুষ্টির মধ্যে থাকার চাইতে অনেক ভালো । বছরে একবার যাই -- ভি আই পির মতো পাত্তা । ওখানে গিয়ে থাকলে দুদিনেই সব ঝাঁকের কই হয়ে যাবো --

    পলাশ : নিখিল, ডোন্ট বে হেস্টি ।

    নিখিল : লেটস চেঞ্জ দা টপিক ।

    পার্থ (অনেক ভাবার ভংগি করে সিরিয়াস হয়ে গিয়ে) : দেশে যেতে পারলে একটা কাজের মতো কাজ হতো নিখিল । কিন্তু ... সবাই পারে না । পলাশ ইজ রাইট । এই আমাকেই দ্যাখ না । পয়সা - শালা - সব পয়সার আঠায় - [ আঙুল ও মুখ দিয়ে শব্দ করে ]

    রীতা : পথে এসো পার্থদা ।

    পার্থ : সবাই পারে না ।

    তুইও পারবি না নিখিল । এখানকার পাল্লাটা বড্ড ভারি ।

    নিখিল : বললাম না এই নিয়ে আর কথা বলতে চাই না ? পারি কি না পারি দেখতেই পাবি ।

    রীতা : মাথা গরম না করে নন্দিনীদিকে ডাকো -- ভাব করে নাও । অত ভালো বাড়িটা হাতছাড়া করো না নিখিলদা ।

    নিখিল : ডিজগাস্টিং !

    [ রীতা চমকে তাকায় । এতো রুড কথা আশা করে নি সে । ]

    পলাশ : তুই এতো ইম্প্রাকটিকাল ডিসিশন নিবি -- এ আমি মোটেই ভাবিবি ।

    পার্থ : নিখিল, জেদ ছাড় । যা হবে না, তা ভেবে শুধু শুধু শক্তিক্ষয় করিস না । আমারও শালা মাসে একবার করে এই ফেজটা যায় --

    নিখিল (স্পষ্ট স্বরে, রুডলি) : উইল ইউ লিভ মি অ্যালোন ?

    পলাশ : স্যরি --

    পার্থ : অত ফটফট করে ইংরেজি বকলেই তো হলো না -- ভেবে দ্যাখ, দেশে যাবার ডিসিশন নিলেই কি মেসোমশাই ফিরে আসবেন ?

    নিখিল (চেঁচিয়ে) : অনেক হয়েছে, তোরা এবার আয় । আমার ডিসিশন আমিই নেবো । লিভ মি অ্যালোন ।

    রীতা : পলাশ, চলো । আমার এখানে একদম ভালো লাগছে না ।

    নিখিল : হ্যাঁ, হ্যাঁ, প্লীজ যাও তোমরা ।

    পলাশ (কাঁধ ঝাঁকিয়ে) : ওকে, জাস্ট ট্রায়েড টু গিভ ইউ আ শোলডার ।

    পার্থ : এ কি মাইরি । গুরু তুমি --

    নিখিল : প্লীজ গো !

    [ সবাই একে একে বেরোয় । পার্থ সবার শেষে বেরিয়ে গিয়েই আবার ফিরে আসে টুপিটা হাতে নিয়ে নিখিলের দিকে তাকিয়ে একটা বাও করে -- তারপর বেরিয়ে যায় । ]

    [ নিখিল ফিরে এসে সোফায় বসে একটা পেন দিয়ে আওয়াজ করতে থাকে । তারপর ফ্রাসটেশনে পেনটা ছুঁড়ে দেয় টেবিলের ওপর । নন্দিনী এসে দাঁড়িয়েছে বেডরুম থেকে । ]

    নন্দিনী : দারুণ !

    [ এগিয়ে আরো কাছে আসে । ]

    ভদ্রতাবোধের চমত্কার পরিচয় দিলে বন্ধুদের কাছে !

    নিখিল : বেশ করেছি ।

    নন্দিনী : বেশ তো করেইছো । বিবেকের পরাকাষ্ঠা না তুমি ! দেশে তো যাচ্ছোই, আর এখানকার সৌজন্যের পোশাকটাও যে অলরেডি খুলে ফেলেছো, খুব ভালো করেছো ।

    নিখিল : তোমার বাঁকা কথাগুলো বন্ধ করবে ?

    নন্দিনী : কেন বল তো ? সব কিছু ভেঙে তছনছ করে দিতে পারো তুমি একদিনের মধ্যে আর অমি চুপ করে থাকবো ?

    নিখিল : ওরা আমায় কিভাবে খোঁচাচ্ছিলো শুনতে পাওনি ? আমার, কিচ্ছু এসে যায় না ওরা কি ভাবলো না ভাবলো তাতে --

    নন্দিনী : তা যাবে কেন, তোমার তো আর এদের দরকার নেই । যখন ছিল তখন এদের সংগেই বসে সন্ধেবেলায় বীয়ার খেয়েছো, আড্ডা মেরেছো, বেড়াতে গেছো । ... অত খারাপ লাগতো এদের সংগ তো অ্যাদ্দিন কিভাবে ছিলে ?

    নিখিল : কখনোই তার মধ্যে আমি কোন প্রাণ খুঁজে পাইনি । এখন সেটা আরো ভালো করে রিয়ালাইজ করছি ।

    নন্দিনী : খুব ভালো কথা, তুমি এখান থেকে চলে যেতে পারো, ওদের সংগে অভদ্রতা করতে পারো, কুত্সিত ভাষা ব্যবহার করতে পারো -- কিন্তু আমি যে এদের মধ্যেই বাস করবো সেটা জানো না ? আমার পায়ের নীচে সবটুকু জমি না কেড়ে নিলে তোমার শান্তি নেই, না ?

    নিখিল : আমি চাই না তুমি এখানে থাকো --

    নন্দিনী : ও, তাই যেভাবে পারো আমার সবটুকু নষ্ট না করে দিয়ে তুমি যাবে না, না ?

    নিখিল : ব্যাস ব্যাস - অনেকদূর ভেবেছো । আর আমার যাওয়ার জন্য তুমি দেখছি পা বাড়িয়েই আছো । হোয়াট নেকসট ?

    নন্দিনী : শোনো নিখিল, তোমায় যেতেও আমি বলিনি, পরে কি হবে তাও জানি না । কিন্তু যেতে যদি হয়, বিনা বাক্যব্যয়ে যাও, ডিগনিটির সংগে যাও । আমাকে নিজের মতো করে বাঁচতে দাও ।

    [ কথা শেষ করে নন্দিনী ভেতরে যাবার জন্য পা বাড়ায় । নিখিল আক্রোশে ফুঁসে ওঠে । নন্দিনীর দিকে ক্রোধে উন্মত্ত হয়ে ছুটে আসে । নন্দিনী ভয়ে কুঁক,ডে যায় । নন্দিনীর ওপর আক্রোশটা গিয়ে পড়ে ঘরের জিনিসপত্রের ওপর । একটা একটা করে জিনিস ছুঁড়ে ফেলতে শুরু করে । চোখ পড়ে কোলাজটার ওপর । সেটার দিকে ছুটে যায় । কোলাজের ছবি-গুলো টেনে ছিঁড়তে থাকে । ধ্বংসের এই দৃশ্য নন্দিনী সহ্য করতে পারে না । তার ব্রেকডাউন হয় । ]

    ॥ নবম দৃশ্য সমাপ্ত ॥


    ॥ দশম দৃশ্য ॥


    [ বসার ঘরে একটা স্লিপিং ব্যাগ পাতা সেখানে নন্দিনী ঘুমিয়েছে বোঝা যায় । একধারে বসে নন্দিনী ফোন করছে । পাশে অ্যাপার্টেমন্ট গাইড খোলা । নিখিল বাইরে গেছে । ]

    নন্দিনী : ইয়েস, সিংগল বেডরুম, ফর অ্যান অ্যাডাল্ট অ্যাণ্ড আ ফাইভ মান্থ ওল্ড বেবি । ওয়ান্ট টু মুভ ইন অ্যাজ সুন অ্যাজ আই ক্যান । শিওর । টেক ইয়োর টাইম টু লুক ফর দা ডিটেলস । কল মি ব্যাক । থ্যাংকস । বাই ।

    [ ফোন রাখে । অ্যাপার্টেমন্ট গাইড উল্টোয় । আরেকটা নম্বর বের করে । ডায়াল করে ফোনে । ]

    নন্দিনী : রোজ অ্যাপার্টেমন্ট ? হাই, আই অ্যাম লুকিং ফর অ্যান ওয়ান বেডরুম অ্যাপার্টেমন্ট । .. ইন জানুয়ারি । .. নো, আরলিয়ার দ্যান দ্যাট ।
    ওকে, থ্যাংকস । বাই ।

    [ আবার আরেকটা দেখে ডায়াল করে । ]


    হাই, আই লেফট আ মেসেজ আরলিয়ার । .. ইয়েস । ওকে । .. অ্যাণ্ড ফর আ স্টুডিও ?
    [ নিখিল বাইরে থেকে ঢোকে । ] .. ওকে । আই উইল লেট ইউ নো । বাই ।

    [ নিখিল এসে সোফায় বসে প্রথমে হেলান দিয়ে । তারপর উঠে নন্দিনীর কাছে যায় । কাঁধে হাত রেখে বলে । ]

    নিখিল : আমি সরি, নন্দিনী । আমি ... আমি ওটা নষ্ট করতে চাইনি ।

    নন্দিনী : ঠিক আছে । (কাঁধ ছাড়িয়ে বই পড়তে থাকে । )

    নিখিল : তুমি এখনো রেগে আছো ।

    নন্দিনী : না, আমার এখন অনেক কাজ ।

    নিখিল : নন্দিনী, আই কানট লিভ উইদাউট ইউ ।

    [ নন্দিনী চোখ তুলে তাকায় । নিখিল এগিয়ে এসে গাঢ় স্বরে বলে ]

    তোমাকে ছাড়া ... সবই অসম্পূর্ণ । এতগুলো বছর ধরে ... তুমি আমার রক্তে মিশে গেছো ।

    [ নন্দিনীর দিকে নিখিল আরো এগিয়ে যায় । ]

    নন্দিনী !

    নন্দিনী : কি ।

    নিখিল : আমরা পরস্পরকে ছাড়া এক পাও চলতে পারবো না ।

    [ তারপর হঠাৎ যেন বাস্তবে ফিরে আসে নিখিল । ]

    বাট, আই কান্ট লিভ হিয়ার ইদার ।

    [ নন্দিনী শোনার সংগে সংগে চোখ নামিয়ে আবার বই পড়তে থাকে । নিখিল নন্দিনীর কাছে গিয়ে বইটা বন্ধ করে । ]

    তুমি চলো আমার সংগে । একবার গিয়ে দেখো -- ভালো না লাগলে ফিরে এসো ।

    নন্দিনী (বই খুলে) : তুমি যাও । আমার এখানে থাকতে ভালো না লাগলে আমি যাবো ।

    নিখিল (রাগতস্বরে) : আবার সেই জেদ । দেখব আমি তুমি কদিন থাকতে পারো একা এখানে ।

    নন্দিনী : কত লোক তো আছে । একা হবো কেন ।

    নিখিল (আবার কাতরস্বরে) : আমি জানি তুমি তা পারবে । এইটুকু পাওয়ার জন্য সব নষ্ট করে দেবে ?

    [ নন্দিনী উত্তর দেয় না । এই সময়েই ফোন বাজে । নন্দিনী "আমার ফোন মনে হয় । ওঘরে ধরছি । " বলে ভেতরে চলে যায় । নিখিল সোফায় বসে মাথা চেপে ধরে, বোঝা যায়, খুব কষ্ট হচ্ছে তার । নন্দিনী ফিরে এসে বলে - ]

    নন্দিনী : বাবা । এয়ারপোর্ট থেকে ফোন করেছিলেন । ওয়েট করছেন নিয়ে আসার জন্য ।

    নিখিল (উত্তেজনায় দাঁড়িয়ে উঠে) : হোয়াট ? শরীর ভালো আছে ? কি, কি বললো ? কি হয়েছিলো ? কোথায় ছিলো ?

    নন্দিনী : শরীর ঠিক আছে বললেন । আর কিছু জিগ্গেস করিনি আমি । খুব টায়ার্ড লাগলো ওনাকে । ফিরে এলে ধীরে সুস্থে জানা যাবে, তাই আর কিছু জিগেস করিনি আমি ।

    [ নিখিল ধীরে ধীরে সোফায় বসে পড়ে । শূন্যদৃষ্টিতে সামনের দিকে তাকিয়ে থাকে । ]

    নিখিল : হোয়াট আ ম্যাসাকার !

    [ শুধু ঘড়ির টিক টিক শব্দ । অনেকক্ষণ বসে থাকে নিখিল । এক সময় সামনে পড়ে থাকা ছবির টুকরো হাত দিয়ে দ্যাখে ।

    ভেতর থেকে হালকা করে ফোনের আওয়াজ ভেসে আসে । নন্দিনী ভেতরে যায় । টেলিফোনে ইংরেজিতে অস্ফুটে যেন কারো সংগে অ্যাপার্টেমন্ট সংক্রান্ত কথা শোনা যায় ।

    নিখিল চারদিকে তাকিয়ে দেখে । বুবাই-এর মিউজিক্যাল লালাবি বেজে চলে -- বুবাই পা ছুঁড়েছে বোধ হয় । সেই সংগে বাচ্চার হাসির আওয়াজ ।

    কিছু সময় ধরে এই শব্দপ্রবাহ চলে । ]


    নিখিল : নন্দিনী, নন্দিনী !

    [ নন্দিনী কথা বলতে বলতেই ঢোকে । "ইয়েস, আই ওয়ান্ট টু ফিক্স্‌ ইট সুন", "হোয়াট'স দা ডিপোজিট ?" ইত্যাদি পরিষ্কার ফ্রেজ শোনা যায় । নিখিল আচমকা উঠে নন্দিনীর হাত থেকে ফোন কেড়ে নেয় । ]

    নিখিল (জোরে, রাগত স্বরে) : স্টপ ইট !

    (ভাঙাস্বরে, প্রায় ভেঙে পড়ে) স্টপ ইট !!

    [ ফোনের সুইচ অফ করে দেয় । ]

    কোথায় যাবে তুমি ? কোথ্থাও যাবে না ।

    [ নন্দিনীর কাছে এগিয়ে যায় । নন্দিনীকে ধরে এনে সোফায় বসায় । নিজে নীচে বসে । চুপ করে থাকে অনেকক্ষণ । তারপর এক সময় বলে ]

    নিখিল : এ দুদিন খুব কষ্ট পেয়েছো, না ? খুব খারাপ ব্যবহার করেছি আমি ।

    [ নন্দিনী কিছু বলে না । ]

    নিখিল : আমি খুব সরি নন্দিনী ।

    [ নন্দিনী তাও কিছু বলে না । ]

    নিখিল : আর ঝগড়াঝাঁটি করবো না আমরা । ঝড় তো শেষ হয়ে গেছে, এখন শুধু রোদ উঠবে । দ্যাখো বাইরে দ্যাখো ।

    আমাদের কোলাজটা আবার প্রথম থেকে শুরু করতে হবে । খুব চটপট এগোবে এবার দেখো ।

    আর মুখ ভার করে থেকো না । হুঁ ?

    [ নন্দিনীর তবুও শূন্য দৃষ্টি । ]

    নিখিল : যাও, তৈরি হয়ে নাও । আমি ততক্ষণে একটা দরকারি ফোন করে নিই । (নন্দিনী যায় না । নিখিল ফোনের দিকে এগিয়ে যায় । )

    হ্যালো ? সাজিদ ভাই । আমি নিখিল বলছি ।

    নন্দিনী : নিখিল ।

    নিখিল : কি হলো আবার ? (গান বন্ধ করে দেয় ।)

    [ আলো ওদের দুজনের ওপর । ]

    নন্দিনী : এখন যদি আবার বাবাকে না পেয়ে ফিরে আসতে হয় ?

    [ নিখিল স্থাণু হয়ে দাঁড়িয়ে থাকে । কিছুক্ষণ পরে আস্তে আস্তে আলো নিভে যায় । ]

    ॥ দশ দৃশ্যে নাটক সমাপ্ত ॥


    নাটক মঞ্চস্থ করতে গেলে এনাদ নাট্যগোষ্ঠীর লিখিত অনুমতির প্রয়োজন ।


  • এই লেখাটি পুরোনো ফরম্যাটে দেখুন
  • মন্তব্য জমা দিন / Make a comment
  • (?)
  • মন্তব্য পড়ুন / Read comments