রাহুল আর বনমালী অন্ধকারে কনটপ্লেসের মাঝখানকার পার্কটা ক্রস করে বারাখাম্বা রোডের দিকে এগোচ্ছিল । মার্চ মাসের রাত । ইনার সার্কেলের বিরাট সাদা থাম আর বন্ধ দোকানগুলোর মাঝখানে চওড়া ফুটপাথ এঁকে বেঁকে শুয়ে আছে সাদা অজগরের মত । তার লাশের উপর থেঁত্লানো রজনীগন্ধা আর বেলফুল । ফাঁকা পার্কিং লটগুলো পেরিয়ে অজগরের গায়ে পা দেবার সময় দৃশ্যটা চোখে পড়ে । জিন্সের প্যান্ট আর জ্যাকেট পরা একটা লম্বা মেয়ে নিজের হাত ছাড়াবার চেষ্টা করছে এবং একজন প্রৌঢ় লোক তাকে হাতে পায়ে ধরে সাধাসাধি করছে - কত চাই ? কত চাই বলো প্লীজ । ইত্যাদি ।
মেয়েটা দূর থেকে কী বলল শোনা যায়নি । তারপর দেখা গেল এক ঝটকায় হাত ছাড়িয়ে সে বাঁক ঘুরে পালাচ্ছে । লোকটা গেল তার পিছনে । একটু পরে মেয়েটা একাই ফিরে এসে থামের গায়ে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে ভ্যানিটি ব্যাগ দোলাতে থাকে ।
বনমালী সিগারেট ধরাবার জন্য দাঁড়িয়ে পড়েছিল । রাহুল এলোমেলো হাওয়া আটকাচ্ছে পিঠ দিয়ে । এমন সময় পিঠে টক্ টক্ । ঘুরে দেখে মেয়েটাও নিজের সিগারেট মুখে করে নিয়ে হাজির । বনমালীর সিগারেট থেকে আগুন নিয়ে সে জিজ্ঞেস করল - কিনবে ?
ধোঁয়ায় নিজেকে আড়াল করে ফেলেছিল বনমালী । সে চোখ মুখ কুঁচকে বলে - কী ?
নিথর চোখে বনমালীর দিকে তাকিয়ে মেয়েটা বলল - মেয়ে !
বনমালী বলল - এখানে মেয়েও পাওয়া যায় নাকি ?
মেয়েটা বলল - এত রাতে শুধু মেয়ের দোকানই খোলা বাবুয়া ।
তো বনমালী গালের খোঁচা খোঁচা দাড়ি চুলকে বলল - মেয়ে যা চাই তা সব আমরা ফ্রি-তেই পাই ।
এতক্ষণ মেয়েটা থামে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে ছিল । এবার সিগারেট হাতে থাম ছেড়ে দাঁড়াল এবং ধীরে একপাক ঘুরে দেখাল নিজেকে । যেন বলছে - ফ্রি-তে এই কোয়ালিটি পাওয়া যায় না ।
মেয়েটা লম্বা । পাঁচ সাত কি আট । তার উপরে একটা হিল তোলা পাম্প শু পরে রাহুল বনমালীর সমান হয়ে গেছে । রাহুল যতটুকু দেখল তাতে স্বীকার করল ফিগারটা জবরদস্ত । গায়ের রঙ ফর্সা এবং মুখশ্রী বেশ ভালো । চোখের ভুরু প্লাক করা । কথায় গ্রাম্য টান নেই । কলেজে পড়া মেয়েদের সঙ্গে কোনো পার্থক্য ধরা যায় না । মুখে সে রাহুল-বনমালীকে বলল - ভেবে নাও । পরে আপশোষ না হয় ।
বনমালীও বোধহয় এতক্ষণ সেরকমই কিছু ভাবছিল । যদিও রাহুল জানে যে আপশোষ করা ছাড়া আর উপায় নেই । যে কটা টাকা ছিল, রাহুলের এক ছাত্র ফেল করার পর তার কাকা দুটো লোক সঙ্গে করে এনে ফেরত নিয়ে গেছে । নইলে টিভি উঠিয়ে নিত । রাহুলের মামা অবশ্য রাহুলের পক্ষ নিয়ে বলেছিলেন - মেহনতের টাকা আমরা ফেরত দিই না । টিভি নিতে হয় তো নিয়ে যান, প্রচণ্ড শক মারে । রাহুলই পকেট থেকে দু হপ্তার পয়সা ফেরত দিয়ে বাঁচায় । বনমালী কলেজের প্রথম দুবছর বেহিসেবি হয়ে ধারে কর্জে এমন ডুবে গিয়েছিল যেমনটা মেয়ের বিয়ে দিয়ে ওঠার পর রাহুলের মামাদের হয় এক এক সময় । যে কোনোরকম পণ্যের বাজার থেকে সন্ন্যাস নিয়েছে গত এক বছর যাবৎ । তবু সে ধোঁয়া ছেড়ে বলে - অঙ্গরেজি আতী হ্যায় কেয়া ? যেন ইংরেজি জানা না থাকলে কোনো ক্ষতি আছে । রাহুল মনে মনে ভাবল - উল্লুক ।
মেয়েটাও যেন সেটাই প্রমাণ করার জন্য চোস্ত ইংরেজিতে বলে - ইংরেজিতে চাই তো ইংরেজিতেই দেব । কিন্তু তার এক্সট্রা নোব ।
হতবাক বনমালীর এবার কাশি সামলাতে একটু সময় গিয়েছে । পরে সে বলল - কোয়ালিটি ঠিকই আছে, কিন্তু টাইম নেই । আমরা কনট প্লেস দিয়ে শর্ট কাট করছিলাম ।
মেয়েটা নাছোড়বান্দা। - তো একদিন লং কাট করে নাও । খেয়ে তো ফেলব না । তোমরা দুজন, আমি একা । ভয় কী ? বাড়িতে বকবে ?
বনমালী চটে যাচ্ছিল । রাহুল বনমালীকে থামিয়ে বলে - রেট কী ?
- একজনের চারশো । দুজনের ছশো ।
বনমালী কাবাবে হাড্ডি হয়ে বলল - ধন্নো, তুই পথ ছাড়ার কত নিবি বল ।
ধন্নো শেষ পর্যন্ত বনমালীর অভদ্রতায় খচে গিয়ে মুখ ঘুরিয়ে নেয় এবং আবার থামের গায়ে হেলান দিয়ে ভ্যানিটি ব্যাগ দোলাতে থাকে ।
বাড়াবাড়ি হয়ে গেছে ভেবে রাহুল বলল - সরি । নো হার্ড ফিলিংস ।
বনমালীও দুটো ভালো কথা না বলে যাওয়া উচিত নয় ভেবে যাবার সময় বলে - আরে ফিগার তো ভালোই আর রেট এত কম যে দশ-বিশ হাজারের চাকরি লেগে গেলে রোজই কিনে নিতাম দুজনে ভাগাভাগি করে । কিন্তু চাকরি এখনো লাগেনি আমাদের । লেগে গেলে তোকে এখানেই পাওয়া যাবে তো ?
পরে এগিয়ে গিয়ে রাহুল আর বনমালী ইনার সার্কেলের বাঁকটা ঘুরে দেখে বুড়ো মত লোকটা অন্ধকারে ঘাপটি মেরে দাঁড়িয়ে । রাহুল-বনমালীকে দেখে সে ফিসফিসিয়ে জিজ্ঞেস করল - কত চাইছে ? রাহুল প্রথমে বুঝতে পারেনি । তারপর বলল - চারশো । লোকটা বিমর্ষ হয়ে বলে - আমি পাঁচশো বলছি, তাও রাজি হচ্ছে না কেন ?
বনমালী আবার ক্ষেপে গিয়ে বলে - অবে আয়নায় মুখ দেখেছিস ? আমরা চাইলে ফ্রিতেও দিত । তোকে দেবে কেন ? তোর মেয়ের চেয়েও বয়সে ছোট । তোরই তো না বলার কথা ।
অন্ধকারে মিলিয়ে যেতে যেতে লোকটা গালাগালি দিয়ে কী বলল বোঝা গেল না ।
এর পাঁচ-ছ মাস পরের কথা । ইউনিভার্সিটির রেজাল্ট বেরিয়েছে এবং রাহুল-বনমালীদের পকেটে আর একটা ডিগ্রি ঢুকেছে । বনমালী ব্যাঙ্কের পরীক্ষাগুলো ভল্ট করে করে ডিঙোচ্ছিল । ইন্টারভিউ ক্লিয়ার করতে পারলে তবে অফিসার হবে । রাহুল আর কিছু না পেয়ে আরো একটা ডিগ্রি করতে বিদেশ যাবে বলে রেডি । পাসপোর্ট ভিসা তৈরি, কিন্তু প্লেন ভাড়ার টাকা জোগাড় হয়নি । বন্ধুবান্ধবরা সবাই দু-পাঁচ হাজার করে সাহায্য করছিল । এমন সময় সে একটা নাচের পার্টিতে নেমন্তন্ন পায় ।
সেন্ট স্টিফেন্সের উঁচু কানেকশানগুলোর জোরে রাহুল সাউথ দিল্লীর বড়লোক ছেলেমেয়েদের পার্টিতে নেমন্তন্ন পেত । রাহুলদের কলেজ থেকে শুধু ছেলেদের ডাকা হয়েছিল, কেননা পার্টির উদ্যোক্তা এক ডাকাবুকো মেয়ে-কলেজের মেয়েরা, যাদের সঙ্গে রাহুলদের কো-এড কলেজের মেয়েদের বনত না এবং যাদের উর্বরতা, কলঙ্ক ও বদনামের গল্প সেই মেয়ে-কলেজের ঐতিহ্যের একটা অন্যতম অংশ ছিল ।
পার্টিটা ডাকা হয়েছিল এক প্রাসাদোপম ঠিকানায় । বাড়ির কুকুরের জন্যই যাদের আলাদা দুতলা ফ্ল্যাট এবং লন । হোস্ট সিমরন রাহুলদের ব্যাচেরই মেয়ে । বাবা-মাকে জাপানে পাঠিয়ে অভিভাবক হিসেবে তার দু বছরের সিনিয়ার দিদিকে পার্টিতে থাকতে অনুমতি দিয়েছিল ।
স্লো মিউজিকের সাথে জোড়ায় জোড়ায় গায়ে গা ঠেকিয়ে সেই সর্বাঙ্গীন সমর্থনযোগ্য নাচ চলছিল যার স্থানীয় নাম ড্রাই ফ্রুট্স্ । রাহুলরা ওসব না করে কয়েকজন বসে বীয়ার আর কাজু খাচ্ছে । হলঘরের আলো নিবু নিবু । রাহুলদের দলটা আস্তে আস্তে কমে আসছিল অবশ্য, কেননা এক এক করে ছেলেমেয়েরা বিশ্রাম নেবার জন্য সটকে পড়ছিল পাশের ঘরগুলোতে । শেষে গুল্লু গ্রোভার কাঁদতে কাঁদতে রাহুলের কাউচে আছড়ে পড়ে । ফোঁপানির চেয়ে হেঁচকি বেশি । তার মধ্যে যেটুকু বোঝা গেল তা এই । গুল্লুর বাবার একটা অবৈধ সম্পর্ক ছিল । গুল্লু সেটা ছোটবেলা জানতে পেরে যায় এবং কলেজের জন্য জমিয়ে রাখে । গত তিন বছরে বাবাকে ব্ল্যাকমেল করে করে তিনলাখ টাকা বের করেছে । ইচ্ছে ছিল একটা হোটেল খোলার, কিন্তু দু-লাখ তার নিজের ভোগেই উড়ে গেছে এবং বাকি এক-লাখে পালমপুরে যে জমিটা কিনেছিল সেটা এক প্রোমোটার পার্টনার হাতিয়ে নিয়েছে । বাবা-মা থাকে বম্বেতে । রিটায়ার্ড । এবং তাদের আর কোনো সঞ্চয় নেই ।
যে ক'জন রাহুলদের কোনটায় বসেছিল তারাও সোফা কাউচ ছেড়ে তাড়াতাড়ি কেটে পড়ে এই করুণ কাহিনীর প্রথম রিল দেখার পর । শুনতে শুনতে রাহুল যে কখন ঘুমিয়ে পড়েছে তার খেয়াল ছিল না । অনেকক্ষণ পরে ঘুম ভাঙতে দেখে হলঘর প্রায় খালি । নাচ শেষ । সবাই যে যেখানে জায়গা পেয়েছে শুতে চলে গেছে । কেউ কেউ কুণ্ডলি পাকিয়ে মাটি নিয়েছে এদিক ওদিক । গুল্লু গ্রোভার হলঘরের কার্পেটে উপুড় হয়ে পড়ে আছে। আর কাজুর প্লেট নিয়ে রাহুলের সামনে কাউচে এসে বসছে জিন্স আর টি শার্ট পরা পাঁচ ফুট আট ইঞ্চির একটা মেয়ে ।
রাহুল চিনেছিল, কিন্তু কিছু বলেনি । মেয়েটা নিজেই হাত নাড়িয়ে বলল - হাই, আমি সোনিয়া । তোমার নাম কি ?
রাহুল নামটা বলে । গুল্লু হঠাৎ ঘুমের মধ্যে দুবার হেঁচকি তুলে বমি করল কার্পেটে । মেয়েটা নাক সিঁটকে বলে - সকালে সিমরন ওর ছাল তুলে নেবে । চলো আমরা বাইরে একটু খোলা হাওয়ায় গিয়ে দাঁড়াই ।
টেবিল থেকে একমুঠো করে নোনতা কাজু তুলে নিয়ে ওরা হলঘরের সঙ্গে লাগোয়া ঝুল-বারান্দায় এসে দাঁড়ায় । মেঝে থেকে তিন হাত নিচে সাদা গোলাপের বিরাট বাগান। রাস্তা বাড়ি থেকে অনেক দূরে এবং স্ট্রিটল্যাম্পের আলো প্রায় অদৃশ্য বলে আকাশের তারা দৃশ্যমান । অগাস্ট মাসের নাতিশীতোষ্ণ হাওয়া বইছিল ।
সোনিয়া বলল - আমাকে তুমি ঠিকই চিনেছো । দেখাচ্ছো না । আমি তো তোমাকে অনেকক্ষণ আগে থেকেই দেখছি ।
রাহুল রেলিংএর উপর ভর দিয়ে বসেছিল । ফলে সোনিয়াকে তার চেয়েও লম্বা মনে হচ্ছে । রাহুল এদিক ওদিক চেয়ে বলল - শোনো, চাকরি হয়ে গেছে আমার ।
সোনিয়া হো হো করে হেসে উঠে বলে - কত পাচ্ছো ?
যদিও রাহুল পাচ্ছে একটা স্কলারশীপ মাত্র এবং বিদেশে তার মূল্য কিছুই নয়, তবু সে বলে - তোমার যা রেট সে তুলনায় যথেষ্ট ।
সোনিয়া চোখ নাচিয়ে বলল - চাকরি পাইনি কিন্তু ম্যানেজমেন্টের পরীক্ষাটা পাশ করে গেছি । দু বছর স্টুডেন্ট থাকতে হবে আরো ।
রাহুলের মাথায় কিচ্ছু ঢুকছিল না । প্রথমত তার জানতে ইচ্ছে করছিল যে মেয়েটা হুকার হিসেবে নেমন্তন্ন পেয়েছে না স্টুডেন্ট হিসেবে । নাকি দুইই ? সে বলল - তোমার রেট কি বেড়ে গেল তার মানে ?
- অফ কোর্স । অনেক বেড়ে গেল । কত হয়েছে গেস্ করো ।
রাহুল চিন্তাভাবনা করে বলল - আটশো ?
খি খি করে হাসতে হাসতে সোনিয়া বলল - কোয়ালিফিকেশানটা নাহয় ছেড়ে দাও, ফিগারটা দেখো একবার । তুমি আমার জায়গায় হলে কী রেট লাগাতে ?
ফিগারটা সাংঘাতিক এবং মুখশ্রীও খুব আকর্ষনীয় । রাহুল কিছুতেই ভেবে পায় না কীসের দরকারে মেয়েটা এই লাইনে নেমেছিল । সে বলে - আমি হলে জমিয়ে রেখে দিতাম । অমূল্য জিনিস । কাউকে হাত লাগাতে দিতাম না ।
সোনিয়া খি খি করে এমন হাসতে শুরু করল যে রাহুলের মনে হয় বীয়ারের বুদবুদ সব বেরিয়ে আসবে এবার । এ আর থামবে না । সে বলল - এত হাসির কী আছে ? সব জিনিসের ভ্যালু কি টাকায় মাপা যায় ?
তারপর সোনিয়া হাসতে হাসতে যে গল্পটা বলে তাতে আগের ঘটনাগুলোর একটা অতীব গোলমেলে কারণ হয়তো পেলেও পাওয়া যায় । সোনিয়া বলছিল - তুমি জনিকে চেনো তো ? জনি খান্না । যার বাবার হোটেল আছে কনট প্লেসে ? সেকেণ্ড ইয়ারে পড়ার সময় আমরা ছ-সাত জন অ্যাডিক্ট হয়ে যাই । এই তো সবে মে মাসে পরীক্ষাগুলো শেষ হবার পর ডি-টক্স করেছি । তখন অনেক রিস্ক নিতাম । একটা খেলা ছিল কনট প্লেসে দাঁড়িয়ে কে কত বোকা ক্লায়েন্ট ধরতে পারে তার কমপিটিশান । টাকা অ্যাডভান্স নিয়ে গাড়ি অবধি আসতাম । তারপর গাড়ি থেকে বেরোতো পুলিশের উর্দি পরা জনি খান্না । হি - হি - হি - হি । কত যে ছেলেকে ঠকিয়েছি তার ইয়ত্তা নেই । তবে গরীবদের টাকা নিতাম না ।
রাহুল বলল - ছেলেরা এত বোকা ? আগেই টাকা দিত ?
সোনিয়া বলল - খান্নাকে দেখার পর পরে চাইলেও দিত । কলেজের ছেলেরা তো সবচেয়ে বোকা - তারাই সবচেয়ে আগে দেয় ।
রাহুল বলল - পুলিশে ধরেনি ?
সোনিয়া বলল - একবার ধরতে এসেছিল - কিন্তু খান্নার তিনটে স্টার দেখে আপনিই সরে পড়ে । অবশ্য বুড়োরা জড়িয়ে ধরে হ্যারাস করেছে কয়েকবার । পরীক্ষার আগে সব ছেড়েছুড়ে দিই । জনি তো সিভিল সার্ভিসে কোয়ালিফাই করে গেছে । হয়তো একদিন ও-ই পুলিশ কমিশনার হয়ে যাবে । তাহলে আমিও ম্যানেজমেন্টটা পাশ করার পর একটা আপস্কেল ব্রথেল খুলে ম্যাডাম কাম সি-ই-ও হয়ে যাব ।
তারপর বাকি সময়টা রাহুল আর সোনিয়া তাদের আগের মোলাকাতের ঘটনাটা ভেবে ভেবে হাসল খানিকক্ষণ । সোনিয়া বলে - পকেটে পয়সা থাকলে তোমরাও বের করে দিতে ঠিক ।
রাহুল ভিতরে ভিতরে একটু মনমরা হয়ে যায় । কারণ গুল্লু গ্রোভার ছাড়া সে-ই বোধহয় পার্টির একমাত্র নিমন্ত্রিত যার পকেট ও পিতার সম্পত্তি জিরো । এইসব ছেলেমেয়েরা দু-দশ বছর পর বড় বড় সরকারি ও বেসরকারি চাকরিগুলো দখল করে বসবে । ব্যবসাগুলো চালাবে । ছোটবেলা থেকেই এরা জানে ভবিষ্যৎ কীভাবে গড়তে হয় । রাহুলদের সেই মোটিভেশান হয়নি । কোনোদিন যদি সে বিদেশ থেকে ফেরে, তখনও পকেট ফাঁকাই থাকবে নির্ঘাৎ ।
মুখে রাহুল বলে - পকেটে চারশো-ছশো ছিল না তা হয় ? আসলে আমার দাদুর একটা রিসর্ট আছে । সিঙ্গাপুরে । সেদিন আমরা দাদুকে মীট করতে যাচ্ছিলাম হলিডে ইনে । দেরি হয়ে গেলে মীট করা হত না । পরদিন ভোরে দাদুর ফ্লাইট ছিল ।
- তো মিথ্যে বললে কেন ?
- আমি নয় । আমার বন্ধু । খুব সাবধানী ছেলে তো । সবসময় বলে পকেটে কিছু নেই । সে ধরে নিয়েছিল তোমার দু-চারটে বদ সাঙ্গো-পাঙ্গো কাছেই আছে ।
শুনে সোনিয়া আবার খি খি করে হাসতে লাগল । রাহুলও যোগ দেয় সেই মাতালের হাসিতে ।
পরে রাহুল খোঁজ নিয়ে জেনেছিল সোনিয়া সত্যি সত্যিই ম্যানেজমেন্টে চান্স পেয়ে আহমেদাবাদ চলে যাচ্ছে । ওর গপ্পের অন্তত অর্ধেকটা সত্যি । তাও সিঙ্গাপুরের দাদুকে বাদ দিলে রাহুল এদের কাছে যুধিষ্ঠির ।
সোনিয়া আর রাহুল যখন হাসতে হাসতে গড়িয়ে পড়ছিল তখন রাহুল বলল - নেক্স্ট্ মাসে আমি অ্যামেরিকা চলে যাচ্ছি । আর হয়তো দেখা হবে না ।
সোনিয়া বলে - আপশোষ হচ্ছে ?
রাহুল বলল - আপশোষ হচ্ছে এইজন্য যে তোমার আসল রেটটা জানা হল না ।
সোনিয়া বলল - কেন ? তোমরা নাকি ফ্রি-তে মেয়ে পাও !
- সেটা তোমায় যে বলেছে তার বাবাই আজও ভার্জিন । ব্যাজার মুখে বলে রাহুল।
শুনে সোনিয়া আবার খি খি করে হাসতে হাসতে গড়িয়ে পড়ে বলল - ভার্জিনিটির কিছু করতে পারব না । তবে ডান্সে আমার সত্যিকারের রেট কিন্তু ফ্রি !
তারপর সোনিয়া ভিতরে গিয়ে মিউজিকটা আস্তে করে অন করেছিল আবার । গুল্লুর নিস্পন্দ দেহে একবার সাড় এসে আবার বেরিয়ে যায় একটা হেঁচকির সাথে । বাইরে বারান্দায় দাঁড়িয়ে স্যাক্সোফোনে `হাংগরি আইজে'র বাজনার সঙ্গে সঙ্গে নাচছিল রাহুল আর সোনিয়া । কাছে আসতে আসতে যতটা সম্ভব কাছে আসা যায় সেই ততটা কাছে - ছোঁয়া থেকে কলিশনে ।
রাহুল অবশেষে বুঝতে পারে শরীরের সঙ্গে শরীরকে মিশিয়ে দিয়েও কৌমার্য নষ্ট হয় না যাতে সেই স্থানীয় নাচের মানে । স্পর্শে চরম ঘনিষ্ঠ হয়েও যাতে নেই আর্দ্রতার সমস্যা । একটা ছেলে আর একটা মেয়ের মধ্যে এর চেয়ে নিরাপদ ও সঙ্গীতময় আর কী হতে পারে ? মিথ্যে, অবিশ্বাস আর বানানো গল্পের উপর দাঁড়ানো একটা কয়েক ঘন্টার সম্পর্ক, অগাস্টের নাতিশীতোষ্ণ রাত এবং নানাবিধ দিশি সংস্কারকে তাদের যুগের খাঁটি স্থানীয় আবিষ্কার রূপান্তরীত করেছে এক রোমাঞ্চকর অভিজ্ঞতায় । বহুদিন পর বিদেশে বিভুঁয়ে বসেও যার রমণীয় স্মৃতি হয়তো ভুলবার নয় ।
এবং কিশমিশ ও বেদানার প্রেমিকরা যার নাম দিয়েছে - ড্রাই ফ্রুট্স্ ।