সামনে সূর্য ঝলমল করছে - চোখ ধাঁধিয়ে দিচ্ছে । চোখে ধরা যায়না এমনি তেজ । একটা যেন দুধের সর - মাঝখানটায়তে চকচকে পিছল আরও সাদা ওটা কি দৃষ্টি সরিয়ে এনে কিছুক্ষণ কিছুই দেখতে পায়না মুনিয়া, চোখ খারাপ হল নাকি চোখ বুজে থেকে আবার তাকায়, খানিকটা জল ছিটিয়ে দেয় দুচোখে । হঠাৎ আবার দেখা দেয় আগের মতো সাতরং - জলের কনায় কনায় । লাল, নীল, হলুদ, সবুজ, বেগনি - আরও নানা রং । নকল রঙ্গের নাম জানেনা মুনিয়া । এর আগে এই রং সে কখনও দেখেনি মনে মনে খুঁজতে লাগল । খুঁজে পেল শেষকালে আকাশে যে রামধনু দেখা যায় মাঝে মাঝে, তাতে কি এই রংগুলোই থাকেনা ।
রঙ্গের কথা ভাবতে ভাবতে আরও কতদূর এগিয়ে এসেছে খেয়াল নেই । এখনও জল শেষ হয়নি । ঢেউ রয়েছে নৌকো উঠেছে পড়েছে । হঠাৎ একটা কি দেখে চমকে উঠল মুনিয়া । নৌকোর গলুই বরাবর কি রকম কালো - যেন একটা বিরাট মাথা ভেসে আসছে । কেউ কি জলে ডুব দিয়ে মাথাটা জাগিয়ে রেখেছে ! ভয় পেল মুনিয়া । চোখ বুজল । কিন্তু চোখ বুজলে নৌকো চলবে কেমন করে ।
তাকিয়ে দেখে সেই কালোটা আরো বড় হয়ে আসছে জলের উপর । ঢেউ এসে একে একবার ডুবিয়ে দেয় । ঢেউ দূরে চলে গেলে আবার জেগে ওঠে । মুনিয়া ভালো করে দেখে নেয় - কারা যেন সেই বিরাট মাথার উপর বসে বসে রোদ পোহাচ্ছে ।
এত দূরে সে পায়ে হেঁটেও আসেনি । এখানটাতে ও-তো ধানক্ষেতই ছিল । হঠাৎ জলে ডুবে গেছে । মাঠ ধরেছে হাঙরের রূপ । মাঠের মাঝখানের বুড়ো সেই তেঁতুল গাছটা ডুবু ডুবু হয়েছে । গাছের মাথাটা একটুকু জেগে আছে । তাতে বাসা নিয়েছে জোলা ব্যাঙ্গ, সাপ, আর ছোটো ছোটো কচ্ছপ । মুনিয়া ওদের ঠিক চিনতে পারল । কচ্ছপগুলো ওকে দেখেই টুপটাপ খসে পড়ল জলে । ব্যাঙ্গগুলো জলে লুকিয়ে রইল । ভয় পেলোনা সাপেরা । গাছের ডালে ঝুলে ঝুলে থেকে থেকে জিভ বের করে ভয় দেখাতে লাগল মুনিয়াকে । এই সাপগুলো না থাকলে মুনিয়া একবার গাছটার মাথায় চড়ে বসত । সাপগুলো যে ভীষণ পাজি । মুনিয়াকে একটুও ভয় করেনা দেবে নাকি বৈঠার বাঁট দিয়ে গুঁতো একটা ।
বৈঠা বাড়াবে এমন সময় চ্যাঁও চ্যাঁও শব্দ । মুনিয়া খুঁজে বের করল ব্যাঙ্গের ছানার ঠ্যাং মুখে পুরেছে কালো একটা সাপ । ব্যাংটার নিশ্চয়ই খুব লাগছে । ছাড়িয়ে দেবে নাকি ! কিন্তু সাপটা যদি ব্যাং ছেড়ে ওকে এসে ধরে । তা ছাড়া সাপের ক্ষিদে পেয়েছে তাই ব্যাংটাকে খাচ্ছে ।
মুনিয়ার ক্ষিদে পেয়ে গেল । এক্ষুনি সে বাড়ি ফিরে গিয়ে মাকে বলবে, ভাত দাও মা । আর দেরি করা চলেনা, মুনিয়া নৌকো বেয়ে চলল, বাড়ির দিকে ।
এখন আর বাতাস নেই । একটুকু ঢেউও নেই । মুনিয়া মনে মনে বিরক্ত হয় ভগবানের উপর । আগে এমন বাতাস ঠেলে আসতে হল, এখন তেমন বাতাস থাকলে নৌকোয় পাল তুলতো সে পরনের কাপড়টা খুলে নিয়েই । ছোট্টো গামছার কানিটাতে নেংটি পরে বসে থাকত হাল ধরে ।
হঠাৎ দেখে একটা সাপ ওর নৌকোর আগে আগে চলছে সীতার কেটে মুনিয়া ভয় পেল - সাপটা ওদের বাড়ি পর্য্যন্ত যাবে নাকি রাত্রিবেলা ঘরে ঢুকে ছোবল দেয় যদি !
ঝুপ করে আবার একটা কি পড়ল যেন জলে । চোখের পলক না ফেলতেই উঠে গেল আর উড়ে চলল আকাশে । মুনিয়া তাকিয়ে দেখে একটা বাজ পাখি - ওটার পায়ের নখে মালার মতো ঝুলছে সেই সাপটা । মুনিয়া স্বস্তির নি:শ্বাস ফেলল ।
নৌকোটা যেন আর এগোয়না । গায়ের জোরেই বৈঠা টানে মুনিয়া । নৌকো কেন চলেনা । এখনও ধানগাছ দেখা যাচ্ছেনা । গাঁয়ের কাছে এলে তবে ঘাসের দেখা মিলবে - এক আধটা কেওড়ালি লতার কেয়ারি নয়ত জলে ভেসে থাকা ফুটকি দাম, পাউরা, ঝরাঘাসের দুচারটে ডগাও এখানে ওখানে হয়েছে, সেগুলো কোথায় এখনও চোখে পড়ছেনা কেন ।
হ্যাঁ, ওই দেখা দিয়েছে শাপলা শালুকেরা । তখন ছিল ফোটা এখন বুজে গিয়েছে -তাই দূরে থেকে চোখে পড়ছিল । ওদের ছাড়ালেই নবীদের বাড়ির পিছনের খাল ।
বাড়ি এক্ষুনি পৌঁছতে হবে । এই আনন্দে তার সেই গানের সুরটা মনে বাজতে থাকল । এখন কেন সে গানটা কেউ গাইছেনা,
.... সুবলে ডাকিয়া বলে হারাইলাম বাছুর ....
বলাই দাদা ও দাদা, মায়ের কথা নাই তোর মনে ..... সুর শেষ হবার আগেই নৌকোর গলুইটা লাগলো গিয়ে বাড়ির ঘাটে শব্দ হল ঠকাস্ - ঠক্ক ।
নাগিনার চোখ এখনও ছলছল । আসল কথাটা চেপে গিয়ে বলল, সারাদিন কিছু বাবা ........ ।
মুনিয়া বলল, মুংলিকে আগে দেখে আসি ...
নাগিনা চুপ করে রইল । মুনিয়া ছুটে গেল গোয়ালঘরে । পুনি একলা দাঁড়িয়ে । এখন বর্ষাকাল । মুংলি কি সাঁতার জানে ! শুধাল বাবাকে গিয়ে, মুংলি কখন সাঁতার শিখল বাবা নাগিনা বলল, ওদের সাঁতার শিখতে হয়না । জলে পড়লেই সাঁতরাতে পারে ।
পুনি চেঁচাচ্ছে থেকে থেকে হাম্বা, হাম্বা, মুনিয়া শুনছে আয় মা, ... আয় মা .... ।
তবু আসছেনা মুংলি । মুনিয়া অবাক হয় ভেবে - মুংলিও মায়ের ডাকে একবারও সাড়া দিলনা, একবারও তো বললনা আগের মতো হেম্বে হেম্বে - আমি আসছি, আমি আসছি ।
গোয়ালের পিছন, বাড়ির যত আনাচ কানাচ সব সে তন্ন তন্ন করে দেখতে লাগল । খুঁজতে খুঁজতে হঠাতি তার চোখে পড়ল সেই কালমেঘের গাছগুলো । ছোট বেলা জিভে সেই যে অস্বাভাবিক তেতো লেগে সারা শরীর শিউরে উঠত, কালমেঘের গাছ দেখে সেই শিহরণ জাগল এইক্ষণেও । কি কষ্টই না পেয়েছে পেটের পীড়ায় - তার চাইতেও তার বেশি কষ্ট ছিল এই কালমেঘের রস গেলা । কিন্তু আজ তো সে কালমেঘ কষ্ট দিচ্ছেনা, অন্য এক দুশ্চিন্তার মেঘ কালো হয়ে আচ্ছন্ন করেছে তার মনের আকাশ ।
ছেলে মানুষ হলে কি হবে, ভাবনা চিন্তা মুনিয়ার মনেও হয় - খোঁজাখুঁজি করছিল চুপচাপ হঠাৎ এসে মায়ের কাছে শুধালো, আচ্ছা মা, কালমেঘের ফুল হয়না ।
রঙ্গিনী অবাক হয়ে ছেলের দিকে তাকিয়ে থেকে বলে, কেন হবেনা, কালোমেঘ থেকেই তো ভালো বৃষ্টি হয়, বৃষ্টিই তো মেঘের ফুল ।
মুনিয়া বলে, সে কালোমেঘ নয় মা, আমাদের ঘরের পিছনে যে কালমেঘের গাছ আছে, তাতে ফুল ধরেনা ।
রঙ্গিনী বলে, সে কালমেঘের ফুল - তো তুমিই । কালমেঘ না হলে তোমাকে হয়ত বাঁচাতেই পারা যেতনা, যা তোমার হাড় টিংটিংয়ে অসুখে ধরেছিল লিভারে, ভাগ্যিস কবিরাজ মশায় কালমেঘের কথা বলেছিলেন ।
পুনিটা আবার হাম্বা হাম্বা ডাকতে লাগলে । মুনিয়া ছুটে চলে গেল পুনির কাছে ।
রঙ্গিনী মনে মনে ভাবে দুশ্চিন্তার যে কালোমেঘ এখন তাদের মনে জমেছে তা থেকে শান্তির ধারা বর্ষন হবে কোন পথ দিয়ে এই দু:খ থেকে কি আনন্দের ফুল ফুটবে ।
মুনিয়া আবার ছুটে এসে মাকে শুধালো, বলো মা মুংলি কোথায় ?
মা এবার মাথা নিচু করে মাটির দিকে তাকিয়ে পায়ের আঙ্গুলে মাটিতে দাগ কাটছে - যেন সকল কথাই মনে আছে - ভয়ে বলতে সাহস হচ্ছে না ।
মুনিয়া আরও কাছে এসে দুহাতে মায়ের ঘোমটা সরিয়ে মুখখানা উঁচু করে তুলে কি রকম ঝাঁকুনি দিয়ে শুধালো, কি বলবেনা আমাকে মুংলির কথা ।
রঙ্গিনীর মনের সাজানো গোছানো সকল কথা এলোমেলো হয়ে ঘুরে বেড়াতে লাগলো ভিতরে । ছটফট করতে লাগলো পাখির মতো কিন্তু একটি কথাও বেরিয়ে এল না কিছুতেই ।
হঠাৎ যেন মুনিয়ার মায়ের ঘুম ভাঙ্গলো মুনিয়া কাছে নেই । এই-তো এক্ষুনি ছিল, আবার গেল কোথায় । এই যে মুনিয়া কথা বলল, অনেক কথাতো বলল, পুনির কাছে ছুটে গেল, আবার ফিরে এল - এই সব কি তাহলে স্বপ্ন ! রঙ্গিনী হতচেতনের মতো ছুটে গোয়ালঘরের দিকে । ডাকতে লাগল, মুনিয়ারে .. মুনিয়া .. ও মুনিয়া ।
গোয়ালে মুনিয়া যায়নি । পুনি একলা দাঁড়িয়ে, রঙ্গিনীর মতোই পুনিরও ছলছল চোখ । পুনির দিকে তবু তাকিয়ে দেখার সময় হলনা রঙ্গিনীর । মুনিয়াকে না পেয়ে সে ছুটে এল নাগিনার কাজের ঘরে । না, এখানেও আসেনি মুনিয়া । নাগিনাও নেই । ঘর খালি । দরজা খোলা । কত লোকের কত টুকিটাকি চামড়ার জিনিস - জুতো ছাড়াও খোল, ঢোল, তবলা, বাঁয়া কত কিছু ছড়ানো, এ সব ফেলে রেখে নাগিনাই বা গেল কোথায় ।
ঘাটে এসে দেখে নৌকোটাও নেই । মুনিয়া যেখানে ঘরের পিছনে ঝুলানো দড়িতে ওর বৈঠা রাখে সেখানে এল রঙ্গিনী । বৈঠাও নেই । মুনিয়া নিয়েছে আবার গেল কোথায় সারাদিন খায়নি, একদম কিছু খায়নি, সত্যি সত্যি খায়নি - এ অবস্থায় ভুগছানি লেগে যেখানে সেখানে পড়ে মরবে ছেলেটা । মায়ের পরাণ হঠাৎ খা খা করতে লাগল । মুনিয়া মুনিয়ারে .... বলে চীত্কার করে রঙ্গিনী মাথা ঘুরে পড়ে গেল হিজল গাছের তলায় ।
কিছুক্ষণ পর রঙ্গিনী আবার উঠে বসল । ভাবল সে কি জ্ঞান হারিয়ে ছিল তাহলে মুনিয়াকে এইযে দেখল যেন । মুনিয়া এসে তাকে বার বার বলছে, খিদে পেয়েছে মা, ভাত দাও, খিদে পেয়েছে মা খেতে দাও । মুনিয়ার মা তবে তো উঠেছিল ছেলের জন্য ভাত বাড়বে বলে । কিন্তু কোথায়, সবইতো মিথ্যে - ছেলেতো তার ফিরে আসেনি ।
ছেলে কাছে নেই, ছেলের বাবাই গেল কোথায় চুপিচুপি এঘর ওঘর কতবার যে এই কিছুক্ষণের মধ্যে ঘুরল কিন্তু কোথায় কে সবাই তাকে একলা ফেলে রেখে চলে গেল চেঁচিয়ে ডাকবে নাকি নাগিনার নাম ধরে । কিন্তু ওই নাম মুখে এলনা, এলো যে নাম সে হচ্ছে মুনিয়া ... মুনিয়ারে ... ও মুনিয়া ।
সূর্যদেব পশ্চিম আকাশে চলে পড়লেন । আলো যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে অন্ধকার বিরাট হা করে গ্রাস করল নাগিনার ভিটেটাকে । রঙ্গিনীর চোখে বার বার ভাসতে লাগলো ওদের প্রতিবেশী বাড়ির পিছনে তালগাছের সেই শকুনি দুটোকে । এমনতো কখনও হয়নি । কেন এই ভয় ঢুকল মনে । সন্ধ্যেবেলায় প্রদীপ জ্বললনা, ধূপধুনোর গন্ধ ছড়ালো না, শাঁখ বাজল না । পুনি গাইটাও যেন ভয় পেয়ে চীত্কার করতে লাগল, হাম্বা হাম্বা ।
এমন সময় কানে পৌঁছল হাম্বা শব্দ । পুনি এখনও আছে । হতভাগিনী মা । নাগিনা স্থির থাকতে পারল না । ছুটেই উঠল গিয়ে বাড়ির উঠনে । ভিজা কাপড়েই ঢুকল গিয়ে গোয়ালঘরে, কিন্তু অন্ধকারে পুনির চোখ মুখ কিছুই দেখতে পেলনা ।
ঘরে ঢুকে হাতড়ে হাতড়ে অনেক কষ্টে বের করল বালিশের ওয়াড়ের ভিতর থেকে দেশলাইটা । একটা কাঠিই আছে তাতে - বার বার কানের কাছে নেড়ে দেখল । ভিজে হাত নষ্ট হয়ে যদি বারুদ নষ্ট হয়ে যায় । বালিশে হাতটা মুছে নিল ভালো করে, কুপীটাও খুঁজে পেল শেষে । আলো জ্বালল । আলোটা নিয়ে এল পুনির কাছে । পুনির চোখের দিকে তাকিয়ে রইল বিমূঢ় হয়ে । কি যেন কিছু এমন দেখল ওই বোবা পশুর চোখে, যা এতদিন একবারও দেখেনি ।
রঙ্গিনীর ধড়ে প্রাণ এল । আশার পাখায় ভর করে সে যেন উড়েই এসে পড়ল গোয়ালঘরে । নাগিনার পায়ের কাছে আছাড় খেয়ে পড়ে বলল, আমার মুনিয়াকে কোথায় রেখে এলে গো .....
নাগিনা সংযত কন্ঠেই বলল, ওঠো, বলো স্থির হও । শোনো বলছি মুনিয়ার কথা ।
মুনিয়ার না একটু শক্তি পেল শরীরে ।
নাগিনা বলতে লাগল, মুনিয়াকে খুঁজতেই গিয়েছিলাম । নৌকোটা তো মুনিয়া নিয়ে গিয়েছে ।
সত্যি মুনিয়া নৌকো নিয়ে গেছে !
হ্যাঁ গো, মুনিয়ানা হলে আর কে নেবে আমাদের ঘাট থেকে নৌকো !
মুনিয়ার মা একটা দীর্ঘ নি:শ্বাস ছেড়ে বলল, তুমি কোথায় গিয়েছিলে ?
পাইকেরের বাড়িতে ।
মুনিয়াকে পেলে সেখানে ?
সেখানে সে যায়নি ।
কি করে যাবে, সে কি জানে যে মুংলিকে পাইকের কিনে নিয়েছে ।
নাগিনা অবাক শুধায়, তুমি বলোনি সে কথা মুনিয়াকে ?
কি করে বলব ! বললে ভালো হবে কি মন্দ হবে সেতো জানতাম না ।
নাগিনা দুহাত কপালে রেখে বলল, হায় ভগবান !
রঙ্গিনী পুনির গায়ে মাথায় হাত বুলিয়ে বলতে লাগল, পুনি, তোর দু:খ বুঝিনি বলে কি তুই অভিশাপ দিলি মা কিন্তু তোর তো পেটে আর একটি আসছে । আমি কার মুখ দেখে দিন কাটাবো বল । আমার মুনিয়াকে তুই এনে দে মা, তোর পায়ে পড়ি ।
নাগিনা রঙ্গিনীকে তুলে ধরে বলল, এত অস্থির হও কেন মুনিয়া ঠিক ফিরে আসবে । ভগবান কখনও আমাদের উপর বিমুখ হবেন না । ওই দ্যাখো তোমার মিনি এসেছে, ভোলা এসেছে ।
রঙ্গিনীর গায়ের কাছ ঘেঁসে মিনি বিড়ালটা লেজ আকাশে তুলে ম্যাও ম্যাও করতে লাগল - ওর দেখা দেখি কুকুরটাও লেজ নাড়াতে নাড়াতে আকাশের দিকে মুখ করে ভো-ও-ও শব্দ তুলে জানাল যে তাদের দুজনেরই ক্ষিদে পেয়েছে ।
রঙ্গিনী মিনিটাকে হাত দিয়ে ঠেলে সরিয়ে দিল, ভোলাটাকে দুর হ বলে সরিয়ে দিল । ওরা যেন বুঝতে পারল কি একটা অজানা অপরাধ ওদের হয়েছে সেজন্য ধীরে ধীরে দুজনেই সরে পড়ল ।
নাগিনা বলল, মিনি ভোলা তোমার এত প্রিয় ছিল, ওদের তুমি তাড়িয়ে দিলে কেন এ-সব কিন্তু ঈশ্বরের পরীক্ষা ।
রঙ্গিনী বলে, তাই বুঝি ! কিন্তু তা-হোক মুনিয়াকে না পাওয়া পর্যন্ত আমার ঈশ্বর টিশ্বর নেই !
নাগিনা ত ইচ্ছে করে যেখান থেকে হোক মুনিয়াকে গিয়ে কাঁধে চড়িয়ে নিয়ে আসে । কোথায় যে ছেলেটা গেল । জলে ডুবে মরেনি তো ! না, নৌকো নিয়ে গেছে । অত ভয়ের কিছু নেই । আর পেটের ক্ষিদেয় মানুষ একদিনে দুদিনে মরেনা ।
বলতে গেলে সারাটা রাত জলে জলে ঘোরাঘুরি করেছে নাগিনা । শরীর তার সাপের গায়ের মতো ঠান্ডা হয়ে গেছে । বড় বেশী শীত শীত করছে । কাপড়ের খুঁটে আর কুলোয়না । বিছানায় গিয়ে কাঁথামুড়ি দিলে ভালো হয় । জ্বরজাড়ি হলে তখন কে দেখবে রঙ্গিনীকে, পুনিটাকে খাবারই বা জোগাবে কে কিন্তু মুনিয়া জানি কোথায় কি করছে এখন এই এত রাত্তিরে । কোনোদিন ছেলেটা এ-রকম একলা বেরোয়নি একেবারে । পথে ঘাটে গাছগাছালির কালো ছায়া দেখেওতো মানুষ ভয় পেয়ে যায় ।
নাগিনা মনের দুশ্চিন্তাকে অনেক চেষ্টায় পথ ঘুরিয়ে নেয় । ভাবে - লক্ষ কোটি মানুষের এই জগত্, কত ছেলে পিলে এ-রকম দূরদেশান্ত চলে যায় মা-বাপকে ছেড়ে, তারা কি কেউ ঘরে ফেরেনা নিশ্চয় ফেরে, একশজনই ফিরে আসে, মুনিয়াও ফিরে আসবে । ভেবে ভেবে একটু শক্ত হয়ে সোজা হয়ে বসে নাগিনা ।
নাগিনা ছুটে চলছে । নবী হুসেনের বাড়ির মোরগটা ডেকে উঠল গলার জোরে - কোকঁরকরৎ - কো-কো-কো ..... পূব আকাশে শুকতারাটা জ্বল্ জ্বল্ করছে । চারিদিক ফরশা হতে থাকবে এখন থেকে । তারাটার দিকে তাকিয়ে তাকিয়ে এগিয়ে চলল নাগিনা । জলের উপর দিয়ে সাপের মতো সাঁতরে চলল একা একা । সামনে পড়ল একটা পোড়া বাড়ি ভাঙ্গা । বাড়ি আর নেই জঙ্গল হয়ে উঠেছে । জঙ্গলে কত কি থাকে যারা মানুষের শত্রু কিন্তু নাগিনার মনে এখন সাপ শেয়াল বাঘ কোনোটারই ঠাঁই নেই । শেয়ালটা তার ফোলা লেজটা আরও দুলিয়ে হুক্কা হুয়া ডাক ছেড়ে নাগিনার পাশ দিয়েই ছুতে পালাল । পায়েও একটা ঠান্ডা মতো পিছল পিছল কি যেন ঠেকল, কিন্তু ও-সব এখন গৌন, সারা মন জুড়ে রেয়েছে সারা আশমানের চান্দ একটি তার একমাত্র সন্তান মুনিয়া ।
কতক্ষণে গ্রাম চাড়িয়ে লোক্যালবোর্ডের শড়কটা ধরতে পারবে সেই শধু ভাবছে আর ছুটছে নাগিনা । শড়কের পাশাপাশি খাল । সেই খালে নৌকো চালিয়ে মুনিয়া যদি রেলস্টেশন অবধি গিয়ে থাকে ! রেলস্টেশনের পাশ দিয়ে পথ গিয়েছে সিঙ্গারবিল ঘাঁটিতে সেখানে বিদেশী সৈন্যের ছাউনি পড়েছে । হাজার হাজার লোক থাকে সেখানে । আমির বক্স ওদের জন্য মাংস যোগান দেয় । যুদ্ধ লেগেছে, আর দেশের বিদেশের লোক এসে ভিড় করেছে বলেইতো সকল জিনিসের এমন দাম বেড়েছে । পোড়া যুদ্ধের এই কালোমেঘই আজ অন্ধকার করেছে মুনিয়ার ঘর । ভাবতে ভাবতে নাগিনা অস্থির হয়ে ওঠে - মুনিয়া যদি মুংলিকে খুঁজতে ঐ ঘাঁটি পর্যন্তই চলে গিয়ে থাকে, বলাত যায়না ছেলে মানুষের মাথায় কত কি-ই না ঢোকে !
আবার খানিকটা জলা । কম জল । সেটা হেঁটে পার হলে পর হিন্দু পাড়া আরম্ভ । প্রথমেই জাগ্রত ঠাকুর সিদ্ধেশের শিবের মন্দির । ঠাকুরের ঘুম ভাঙ্গাচ্ছেন পূজারী একসঙ্গে তিনটি কাঁসর পিটিয়ে - ঢং-ঢং-টং-টং ঠুং -ঠুং,
মৃদু মিশ্র ধ্বনির এই প্রভাত সঙ্গীত শুনতে শুনতে জেগে ওঠে গ্রামের লোক । ঘর ছেড়ে কেউ বেরোয়না, মাঠ ঘাট সবই তখনও ফাঁকাই থাকে, তবু বোঝা যায় জগতে মানুষ আছে, যে পঠিক একলা পথ চলছে, তার ভয় পাবার কারন নেই । ঠাকুরের উদ্দেশ্যে হাত জোড় করে প্রণাম নিবেদন করতে করতে নাগিনা এগিয়ে চলে ।
পাড়ার ভিতর দিয়ে পথ । এ বাড়ি ও বাড়ি থেকে কুকুর বেরোয় ঘেউ ঘেউ করে, লাফিয়ে লাফিয়ে কামড়াতে যায় নাগিনাকে । নাগিনা চোখ বুজে পথ হাঁটে আর বলে, ভগবান, তুমি আছো সকলের মধ্যে ।
নাগিনা এবার শড়কে এসে পৌঁছল । জল নেই, কাদা নেই ! চোখ বুজেই ছুটতে লাগল নাগিনা । খুব ভোরবেলার ট্রেনটা এখনও হয়ত ছাড়েনি স্টেশন । কিন্তু দিগন্তে গাছের আড়ালে ঐ যে কালো ধূয়া রেখা টেনে যাচ্ছে - সেটা কিসের !
একটা লোক কৌতূহলী হয় বাইরে দাঁড়িয়ে ছিল । মুনিয়া বেরিয়ে এলে তাকে নানা কথা শুধিয়ে জেনে নিল ব্যাপারটা আর চটপট বলল, শিগগির ছুটে যা, সড়ক ধরে, এক পাল গরুবাছুর ওইদিকে তাড়িয়ে নিয়ে একটু আগেই গেল এক পাইকের ।
হাঁটার চাইতে নৌকোতে তাড়াতাড়ি হবে । যতক্ষণ সড়কের পাশ দিয়ে খাল বেয়ে নৌকো চলে ততক্ষণ মুনিয়া নৌকোয় গেল, তারপর পাহাড়ের কাছাকাছি জায়গায়, নৌকো যেখানে ঠেকে ঠেকে চলে, সেখানে নৌকোটা রেখে দিয়ে সড়কে নেমে ছুটতে লাগল প্রাণপন । ছুটে ছুটে পেটে খিল ধরে গেল । পেট হাত দিয়ে চেপে ধরে মুনিয়া দৌড়তে লাগল ।
টুং টুং শব্দে বল্লমের আগায় বাঁধা ঘুঙ্গুর বাজিয়ে ডাকহরকরা আসছে ডাকে বোঝাই থলি কাঁধে নিয়ে । মুনিয়া শুধাল তাকে, ওদিকে কি একপাল গরু নিয়ে কেউ যাচ্ছে ?
ডাকহরকরা তার হাঁটার গতি একটুও না কমিয়েই উত্তর দিল, হ্যাঁ, যাচ্ছে, শিগগির ছুটে যাও, ধরতে পাবে ।
পথটা ত্রক্রমে পাহাড়ের উপর উঠে গেছে । পথের সীমায় বটগাছটাকে খুবই কাছে মনে হচ্ছে, কিন্তু মুনিয়া যতই হাঁটে গাছটা ততই যেন পিছিয়ে যাচ্ছে, মুনিয়া অবাক হয়ে ভাবে গাছেরও কি পা আছে নাকি !
অন্ধকার হয়ে এল । বিরাট গাছটা একটা প্রকান্ড ছায়া হয়ে অকূল সন্ধ্যায় হারিয়ে গেল । মুনিয়া সামনের দিকেই এগিয়ে চলছে ।
হঠাৎ একটা মশাল বেরল জঙ্গলের ভিতর থেকে । একটা পথ আরেকটা পথে এসে মিশল । মশালটার পিছু পিছু একপাল গরু । তাদের পিছনে আবার একটা টিমটিমে আলো - পাগড়ি বাঁধা এক লোকের কাঁধে লাঠির আগায় লন্ঠনটা লট্ পট করছে । মুনিয়া মনে মনে ভাবে - লন্ঠনটা হাতে নিলেই চলে ।
লন্ঠনওয়ালা লোকটা বেশ তাড়াতাড়িই হাঁটে । মুনিয়া ওর সঙ্গে দৌড়েও কূল পায়না । তবু ছুটতে ছুটতেই চলছে লোকটা পিছু পিছু । একপাল গরুর খুরের শব্দ উঠেছে - খটর্ খটর্ গটর্ গটর অন্য কোনো কথা শোনা যাচ্ছে না ।
কি জানি কেন সামনের মশালটা একটু দাঁড়াল । পিছনের লন্ঠনটাও থামল । মুনিয়া ফাঁক বুঝে শুধাল, আচ্ছা, একটা লন্ঠন-ত আছে, আবার একটা মশাল কেন !
লোকটা যেন চমকে উঠেই বলল, তুই কে-রে আবার, কোথা থেকে এলি, মানুষ না ভূত !
মুনিয়া বলে, মানুষ ।
যাবি কোথায় !
আগে বলো, মশালটা কেন জ্বালিয়েছ ?
জঙ্গলের ভিতর বাঘ আছে, মশাল না থাকলে বাঘ লাফিয়ে পড়বে ঘাড়ে ।
ভয়ে বিস্ময়ে হতবাক মুনিয়ার অবস্থা কাহিল । পথের দুপাশে ভীত চকিত দৃষ্টি দিয়ে দিয়ে দুরু দুরু বুকে এগিয়ে চলল সে গরু পাইকেরের গা ঘেঁষে ঘেঁষে ।
এই পাইকেররা বর্ষাকালে ভাঁটি অঞ্চল থেকে উঠে আসে পাহাড়ে দেশে । এই হাট থেকে গরু কিনে নিয়ে অন্য হাঁটে বিক্রি করতে যায় ।
মুনিয়া চুপ থাকলে ভয় পায় বেশি । লোকগুলোও কথা বলেনা, মাঝে মাঝে খক্ খক্ কাশে আর হাঁটে । মুনিয়া নীরবতা ভেঙ্গে শুধায়, লন্ঠনটা এত উঁচুতে কেন !
উত্তর হয়, উঁচুতে রাখলে অনেক দূর থেকে বাঘের চোখে পড়ে ।
হাঁটছে তো হাঁটছেই । হাঁটার আর বিরাম নেই । আগে পিছে আলো, তবু সবটা স্পষ্ট দেখা যায়না । মুনিয়ার মন পড়ে আছে গরুগুলোতে । কোনটা কিরকম ঠিক দেখতে পাচ্ছে না । ওর মুংলিটাকি এখানেই আছে । ডাকবে নাকি মুংলি বলে । পুনিকে নিয়ে এলে ভালো হত, ও বলত হাম্বা, আর মুংলি সঙ্গে সঙ্গে উত্তর দিত , হেম্বে রবে ।
সামনের মশালটা আবার থামল । গরুগুলোও দাঁড়াল । পিছনের লন্ঠনের গায়ে ঘেঁষে মুনিয়া শুধায়, কি হল আবার । লোকটা বলল, শুনতে পাচ্ছিসনা, ঐ যে বাঘ ডাকছে !
মুনিয়া একটু ছুতে এসে লোকটার আগে দাঁড়িয়ে শুধাল, বাঘ !
আরে হ্যাঁ, ওই দ্যাখ্ সামনে কত লোক আসছে বড় বড় মশাল জ্বালিয়ে নিয়ে হললা করতে করতে ।
এর মধ্যেই হালুম হালুম গর্জন মুনিয়ার কানে এল । মাটি কেঁপে কেঁপে উঠছে বাঘের ডাকে ।
লোকটা বলল, ভয় পেয়েছিস খুব !
মুনিয়া ঢোক গিলে বলল, না ।
হঠাৎ সে প্রশ্ন করল, জ্যান্ত বাঘ ডাকছে !
লোকটা হেসে বলল, জ্যান্ত না -তো কি মরা বাঘে ডাকবে !
কেন ডাকছে !
সামনে গেলেই দেখতে পাবে !
রাত শেষ হয়ে এল । পথের পাশেই একটা বিরাট ঘরের মতো আস্ত আস্ত বাঁশ পুঁতে পুঁতে বেশ লম্বা একটা খাঁচা । তার ভিতরে বুলেটের মতো দুটো চোখ জ্বলছে । দরজাটা এমনি করে বন্ধ হয়েছে যে বাঘ বাবাজী নড়তে চড়তে পারছেনা । কি বড়েবকায়দায় ঠেকে গিয়ে মনের দু:খে ও রাগে ডাক ছাড়ছে - হাললুম, হাললুম, ... ল্লুম ... ল্লুম ....
গ্রাম থেকে ছুটোছুটি করে সব ছেলেবুড়ো আসছে মজা দেখতে । এমন ভয়ংকর বাঘটার সামনে দাঁড়িয়ে ছোটো ছোটো বাচ্ছারাও বাঘটাকে নানা রকম ঠাট্টা বিদ্রুপ করছে ।
পূবের আকাশে দিনের মশাল জ্বলে উঠল । রাত্রির মশাল গুলো নিবিয়ে দিল । বাঘের খাঁচাটা ছাড়িয়ে গিয়ে একটু দূরে একটা পুকুরের পাড়ে পাকুড় গাছের তলায় গরুর পাল দাঁড় করিয়ে পাইকের দুজন বিশ্রাম করতে বসল ।
মুনিয়া বলল, আমি গরুগুলো দেখছি ।
একটা লোক বলল, গরুগুলো ঠিক থাকবে খোকা, তুই এদিকে আয়, পুকুর থেকে হাতমুখ ধুয়ে নিয়ে কিছু খেয়েনে !
মুনিয়া লজ্জা করছিল আসতে । লোকটা একটা পদ্ম পাতায় চিড়ে গুড় ভাগ করে দিয়ে ডাকল, ওরে খোকা, শিগগির আয়, কত পথ হেঁটেছিস, মুখখানা শুকিয়ে উঠেছে - শিগগির খেয়েনে !
ক্ষিধে-তো পেয়েছে ঠিকই, কিন্তু অচেনা এই লোকদের কাছ থেকে খাবে মুনিয়া । এর আগে কখনও খায়নি মায়ের হাতে ছায়া । শুধু দুর্গাপুজোর সময় জমিদার বাড়িতে ঠাকুরের প্রসাদ খেয়েছিল - কলাপাতায় - গরম গরম খিচুড়ি আর পায়েস ।
সেদিন নাগিনার বিশেষ নেমতন্ন ছিল জমিদার বাবুর । ঠাকুরের সম্মুখে মোষ বলি দিয়েছিল । একটা প্রকান্ড মোষের গলাটা হাড়িকাঠে ফেলে তেল হলুদে ঘষে ঘষে এতটুকু সরু করে নিয়েছিল । মোষটার জিভ বেরিয়ে গিয়েছিল । মোষটা মা, মা, বলে কাঁদছিল । বলি হয়ে গেলে নাগিনা মোষটা নিয়ে এসেছিল । মোষের চামড়ার কত দাম । নাগিনা সেটা বিনা পয়সায় পেয়েছিল । শুধু তাই নয় - মোষটার সঙ্গে নাগিনা পেয়েছিল একটা ধুতি একটা গামছা আর একটা ডালা ভরতি চাল ডাল নুন তেল লঙ্কার সিধে ।
ফেলে আসা দিনের সেই ছবি ভাসছিল মুনিয়ার মনের ভিতর । সে যেন হঠাতি দেখতে পেল তার সামনে কে রেখে দিয়েছে সকাল বেলার খাবার - একটি পদ্ম পাতার উপর চিড়ে আর গুড় । মুনিয়ার চোখ ছল ছল করে উঠল কোন কথা মনে ভেবে যেন । লোকটা বলল, খাচ্ছিস নে কেন খোকা !
খোকা তবু হাত দেয়না খাবারে ।
লোকটা এবার কাৎ হয়ে হাতের উপর মাথা রেখে চোখ বুজল । গরুগুলোও একে একে মাটিতে গা এলিয়ে দিল । কোনো কোনোটা পুকুর থেকে জল খেয়ে এল । এবার শুয়ে শুয়ে জাবর কাটতে শুরু করল ।
মুনিয়া দেখল যে সবাই চোখ বুজেছে । এবার ও চুপি চুপি চিড়ে গুড় নি:শেষ করল তাড়াতাড়ি ।
হাতমুখ ধুয়ে পেটভরে জল খেয়ে নিয়ে মুনিয়াও কাৎ হয়ে শুয়ে পড়ল পাকুড় গাছের শিকড়টাকে বালিশ করে । আকাশের দিকে তাকিয়ে তাকিয়ে আকাশ পাতাল ভাবতে ভাবতে মুনিয়ার চোখ লেগে গেল । সারাদিনের ক্লান্তি আর সারা রাতেও পথ হাঁটার পর গাঢ় নিদ্রা এসে কোলে নিয়ে বসল মুনিয়াকে । মুনিয়া বুঝি শুয়ে শুয়ে ছেলেবেলার মায়ের শোনা গান স্বপ্ন দেখছিল ।
ঘুমপাড়ানি মাসি পিসি আমার বাড়ি যেয়ো
বাটা ভরা পান দেবো গাল ভরে খেয়ো ।
সেই স্বপ্ন থেকে তাকে এখন সরিয়ে নেবার চেষ্টা কে করবে ।
ট্রেন থেকে যাত্রী নেমে এসেছে দু-চারজন । নাগিনা কাউকেই চেনেনা । তবু শুধায়, একটি ছেলেকে যেতে দেখেছেন এই পথে ।
আচমকা প্রশ্নে যাত্রীরা প্রত্যেকেই অবাক হয়ে নাগিনার দিকে তাকিয়ে উত্তর দেয়, না-তো !
তবু নাগিনা ছুটতে ছুটতে গিয়ে ঢুকে পাহাড়ের ভিতর । দুদিকে গহন বন । মাঝখান দিয়ে এক পা চলার পথ । মাথার উপর দিয়ে এদিক ওদিক করছে বন শালিক আর বুলবুলিরা । ফুটে আছে রাশি রাশি কুরচি, কটকাই, উলটকম্বল, নাগফুলি । বুনো কুল আর টেকভুই ফলেছে অজস্র । ভোমরারা পাগল হয়ে ঘুরছে ভন্ ভন্ শব্দে আর কদিন পরেই গ্রামের ছেলেরা এসে ভেঙ্গে পড়বে দলবেঁধে এই জঙ্গলে । লাঠিসোঁটা হাতে থাকবে প্রত্যেকের । ডাক ছাড়তে ছাড়তে হৈ হল্লা করতে করতে তছনছ করে যাবে এই জঙ্গলটাকে । তার পরে আসবে দুর্গোপূজোয় ফুল তোলায় ধুম । তিনদিন ধরে কটকাই ফুলের সমারোহ দেখা যাবে মন্ডপে মন্ডপে । কটকাই ফুল বাসি হয়না । নাগফুলির কী তীব্র গন্ধই বেরিয়েছে - নাগিনা শ্বাস বন্ধ করে ছুটে চলল ।
সামনেই ছাতি আইন স্টেশন । স্টেশনে পৌঁছে নাগিনা দেখে ট্রেন স্টেশন ছেড়ে চলে যাচ্ছে হুস্ হুস্ ভুস্ ভুস্ করতে করতে । নাগিনাও ট্রেনের পিছন পিছন ছুটে যেতে লাগল পাগলের মতো ।
রেলের চৌকিদার পিছন থেকে ডাকল নাগিনাকে । নাগিনা কোনো কথাই শুনলো না । ছুটো রেলওয়ে পুলিশ আসছিল - তারাও বারণ করল নাগিনাকে, বলল, এক্ষুনি আরেকটা ট্রেন আসবে ওদিক থেকে - ফিরে চলো তুমি । নাগিনা কিছুই যেন বুঝলনা ।
যুদ্ধের সময় । যেখানে সেখানে সিপাই সান্ত্রী ঘুরছে । নাগিনার প্রতি সবারই নজর পড়ল । নাগিনাকে ধরে নিয়ে এল স্টেশনে । কোনো কথা জিজ্ঞেস না করে তাকে বসিয়ে রাখল এক ঠাঁয় ।
বসে থেকে থেকে সন্ধ্যে হল । রাত হল । কত ট্রেন এল গেল । কত যাত্রী উঠল নামল । নাগিনা বসে রইল চুপটি করে । একটা পুলিশ তাকে পাহারা দিচ্ছে ।
অনেক রাতে কখন যেন নাগিনার চোখ লেগে গেল । পুলিশটা তাকে ডান্ডা দিয়ে গুঁতো মেরে বলল, চল আমার সঙ্গে ।
নাগিনা নির্বাক চলতে লাগল পুলিশের সঙ্গে । উঁচু প্ল্যাটফর্ম থেকে নিচুতে লাইনের ধারে গিয়ে একটু দাঁড়াল । একটা ট্রেন এসে থামল । পুলিশ নাগিনাকে একটা ওয়াগানের ভিতর ঠেলে ঢুকিয়ে দিয়ে দরজাটা বন্ধ করে দিল ।
নাগিনার চোখ থেকে হঠাৎ যেন এই পৃথিবীটা মুছে গেল । তার নিশ্বাস বন্ধ হয়ে আসতে লাগল ।
এমন সময় ওয়াগানের দরজাটা আবার খুলে গেল আপনা থেকেই । মুখ বাড়িয়ে নাগিনা দেখল আরেকটা স্টেশন ট্রেন থামছে । সঙ্গে সঙ্গেই লাফ দিয়ে পড়ল ।
নিজেকে সামলে নিয়ে ঠিক হয়ে দাঁড়াতেই দ্যাখে আবার এসেছে সেই পুলিশটা । ডান্ডা দিয়ে ইশারা করে বলছে, চল ।
নাগিনা পুলিশের সঙ্গে সঙ্গে চলল । হাঁটতে হাঁটতে রাত পোহাল । সূর্যোদয় হল । পথে লোকচলাচল আরম্ভ হয়েছে । পাশ দিয়ে যে যায়, সেই তাকায় নাগিনার দিকে, কেউ বলে, ব্যাটা চোর, কেউ বলে ডাকাত, কেউ বলে যাহোক একটা কিছু দাগী আসামী হবে, তা নাহলে পুলিশে ধরে ।
নাগিনা মনে মনে রেগে ওঠে ।
একটা থানায় নিয়ে এসে হাজির করল ওকে । দারোগার হাতে পৌঁছে দিয়ে পুলিশ ফিরে গেল । যাবার সময় নাগিনা দেখতে পেলনা ।
নাগিনাকে একটা অন্ধ ছোট্ট কোঠায় ঢুকিয়ে রাখল । জাল দেওয়া একটি মাত্র দরজা তাতে । বাইরে থেকে তালা ঝুলিয়ে দিল । নাগিনার নিশ্বাস বন্ধ হয়ে আসছে যেন । নাগিনার মনে হল - হাজত বাসের ভয়ে লোকে আধপেটা খেয়ে দিন কাটায় - একজনের ঘরে বেশি থাকলেও তাতে হাত দেয়না, সেই হাজতবাসই ছিল তার ভাগ্যে । কিন্তু কেন কোন অপরাধে পুলিশটাও দেশের লোক, দারোগাও সাহেব নয়, তবু কেন বিদেশীর মতো অযথা কষ্ট দেয় দেশের মানুষকে । নাগিনা ভাবে আর অস্থির হয়ে ওঠে, কিন্তু ওর কথাতো কেউ ভাবেনা । ও সত্যি কথা বললেও কেউ তো বিশ্বাস করবেনা ।
কি যে নাগিনার অপরাধ, কতদিন যে এই দুর্ভোগ তাকে ভোগ করতে হবে, সেকথা এখানকার কেউই যেন জানেনা ।
নাগিনার কথায় বাতাসও নড়েনা, কিন্তু কর্তাদের ইশারায় পাহাড় ধ্বসে পড়ে, সাগরে হয় নগর । তবু নাগিনার তপ্ত নি:শ্বাসে হাজতের দেয়ালে নোনা ধরতে থাকে ।
বছর খানেক পরে একদিন নাগিনা যখন ছাড়া পেল, তখন চুলে দাড়িতে তার এক অদ্ভুত চেহারা হয়েছে । সে এবার অন্য মানুষ । শুধু বাইরের এই পরিবর্তন নয় । ভিতরেও ভিতরেও বদলে গেছে নাগিনা । কোনো অপরাধ না করেই যখন এমন শাস্তি পেল, এখন আর তার শুধু শুধু ভয় পাবার কি কারণ আছে । শাস্তি পেতে পেতে মরণ একদিন হবে - এর বেশি কিছু নয়, তাহলে আর ভাবনা কি । পথ দিয়ে যেতে যেতে একলা একলা নাগিনা হাসতে থাকে হো হো করে ।
সিঙ্গারবিল ঘাঁটির দিকেই এই পথটা গিয়েছে । সৈন্যরা থাকে এখানে । সারাদিন খাকি রঙের গাড়িগুলো ইন্দোরের মতো ছুটে পালায় । গেরুয়া ধুলি উড়তে থাকে পিছনে । নাগিনা গাড়ির হর্ন শুনতে পেয়েও পথ ছেড়ে দাঁড়ায়না - চাপা দেবে দাও ।
হঠাৎ একটা মিলিটারি জিপের শব্দ শুনল । বার বার হর্ন দিচ্ছে, পথ ছেড়েদে । নাগিনা কর্ণপাতই করেনা । চটপট নেমে আসে একটা বিদেশী সৈন্য । রাইফেলটা বাগিয়ে ধরে নাগিনার দিকেই । নাগিনা স্থির হয়ে দাঁড়িয়ে থাকে । তার বুকে এতটুকু কম্পন নেই ।
গুলি ছোড়ার শব্দ হল । নাগিনা তবু দাঁড়িয়ে । অপলক নেত্রে তাকিয়ে আছে সামনের দিকে ভাবখানা - মেরেই ফেলোনা ।
একটা কিচির মিচির শব্দ শোনা গেল । মানুষের নয় - বানরের আর্তনাদ । নাগিনা ঘাড় ফিরিয়ে দেখে, বন্দুকের গুলি খেয়ে একটা ধাড়ী বানরী বাঁশঝাড় থেকে হাতটা ছেড়ে দিয়ে শূন্যে ঝুলে ঘুরতে ঘুরতে পড়ছে মাটিতে । মরা মায়ের বুকে আঁকড়ে একটা কচি বাচ্চা তখনও কিচির মিচির করছে ।
নাগিনা বাজ পাখির মতো ছোঁ মেরে ঐ বাচ্চাটাকে নিয়ে নেমে পড়ল পথের পাশ দিয়ে দুর্ভেদ্য বাঘনঘলতার জঙ্গলে ।
সিঙ্গারবিলের সৈন্য-শিবির পর্যন্ত আসতে নাগিনার কয়েকদিন লেগে গেল । মাধবপুরের থানা থেকে ওই জায়গাটা পঁচিশ তিরিশ মাইল হবে । মাঝে মাঝে গ্রাম, মাঝে মাঝে জমি, কখনও আবার মাথার উপরে বাঁশবাগান ঝুলছে । বানরেরা দল বেঁধে পথের এপাশ থেকে ওপাশে লাফিয়ে লাফিয়ে যাচ্ছে । নাগিনার নজর আছে - কাঁধের উপর চড়ানো তার বাচ্চাটাকে না আবার অন্য কোনো বানরী কেড়ে নেয় ।
পথ চলতে চলতে যেখানেই রাত হয়, নাগিনা সেখানেই থেমে যায় - একটা বড় গাছের শিকড় আশ্রয় করে শুয়ে থাকে । বাচ্চাটাকে কোলে নিয়ে কিছুক্ষণ আদর করে । তারপর কখন চোখ লেগে যায় । পরের দিন যখন ঘুমভাঙে তখন দেখতে পায় - তার কাছে পড়ে আছে কলা, পেয়ারা, খেজুর । রুটির টুকরো, বাদাম আরও কত কি ! নাগিনা ভাবে এত সব খাবার কে তাকে দিয়ে যায় । আবার ভাবে, তাকে কি আর দেয়, দেয় ওই বানরের ছানাটাকে, শিশু কিনা, শিশুকে সবাই ভালবাসে । হলই বা বানর । নাগিনা এই বানরের বাচ্চাটাকেও মুনিয়া বলে ডাকতে আরম্ভ করল ।
কিন্তু তাদেরই বা দোষ কি তারাতো মুনিয়াকে ডেকে সঙ্গে আনেনি । যতক্ষন সঙ্গে ছিল ততক্ষণ দেখা শোনা করেছে ।
চীত্কার করে কাঁদলেও কেউ শুনবেনা । এই অবস্থায় পড়ে যে কান্নার জন্ম তারই নাম অরণ্য রোদন । মুনিয়া সে সব কথা না জেনেও কাঁদলনা ।
কোথায় কতদূরে গ্রাম, কোনদিক যেতে কোনদিকে যাবে - চেনা নেই জানা নেই । তার চেয়ে ভালো এই গাছে চড়ে বসে থাকা । বাঘের হাতে তো আর কুড়াল নেই যে গাছ কেটে তবে মুনিয়াকে ধরে খাবে । আর কোনো কথাটি না ভেবে চটপট মুনিয়া গাছটাতে উঠে পড়ল । একেবারে উঁচুতে মগডালে গিয়ে নিজেকে বেশ করে বেঁধে নিল ডালের সঙ্গে নিজের পরনের ছেঁড়া কাপড় খানা ছিঁড়ে নিয়ে । এবার ঘুমিয়ে পড়লেও মাটিতে পড়ে যাবার সম্ভাবনা রইলনা ।
হঠাৎ ঘুম ভেঙ্গে গেল না ঘুম এসে ওকে ঝাঁকুনি দিল ! ঠিক বুঝতে পারলনা । শুধু নিচের দিকে তাকিয়ে রইল ফিস্ ফিস্ করে কারা যেন কথা বলছে গাছটার নিচে দাঁড়িয়ে আর চুরুট ফুঁকছে । হাতে হাতে সবারই কালো মতো কি ওগুলো ! বন্দুক নয়তো !
নি:শ্বাস বন্ধ করে মুনিয়া দেখছিল, এমন সময় অনিচ্ছা সত্বেও একটা হাঁচি বেরল ওর নাকমুখ ছাপিয়ে, সারা শরীর কাঁপিয়ে । নীচে থেকে একটা আলো সেই হাঁচিকে খুঁজতে লাগলো । মুনিয়া ধরা পড়ে গেছে ।
মুনিয়াকে গাছ থেকে নামিয়ে নিয়ে এসে বন্দুক হাতে একজন লোক শুধাল তার নাম ।
মুনিয়া নিরুত্তর ।
শুধাল তার বাবার নাম ।
মুনিয়া চুপ ।
শুধাল তার বাড়িঘর, কোথা থেকে এসেছে, কোথাই বা যাচ্ছে ।
মুনিয়া কিছুই বলল না ।
এবার মুনিয়াকে শক্ত হাতে ধরে টেনে নিয়ে চলল হিড় হিড় করে একটা পথে ছোটো ছোটো গাছ মাড়িয়ে মাড়িয়ে ।
মুনিয়া ভাবছিল বাঘের ভয়ে দিনের বেলাতেই যেখানে লোক চলে না, সেখানে রাত্রিবেলা ঘোরাফেরা করে এরা ! বাঘের চাইতে নিশ্চয় আরও ভয়ঙ্কর !
বেশ কিছুক্ষণ হাঁটার পর উঠল এসে একটা বাড়িতে । একটা কুকুর এল ঘেউ ঘেউ করে, কিন্তু লোকটাকে যেন চিনতে পেরেই লেজ নাড়াতে লাগল । একটা চৌকিদার একটা ধূঁয়ায় ঝাপসা লন্ঠন হাতে এসে সেলাম জানাল লোকটাকে । মুনিয়া ভাবল - জমিদার লোক হয়ত বা !
বাইরের উঠোন পেরিয়ে ভিতরের উঠনে এল । তারপর একটা বিরাট ঘরের বারান্দায় উঠে দরজায় ঠোকা দিল ঠক্-ঠক্-ঠক্ ।
ভিতর থেকে কে যেন বলল, ওটাকে নিয়ে ঘরে ঢুকোনা কিন্তু !
লোকটা বলল, দরজা খুলেই দ্যাখোনা, কি এনেছি !
বুঝেছি, ভারী তো একটা গুলি খাওয়া বাঘ আর কি !
না গো, আজ বাঘ নয়, অন্য জিনিস, দ্যাখোই না বেরিয়ে এসে ।
এবার খট্ করে দরজা খুলে গেল ।
টর্চের আলো পড়লো মুনিয়ার মুখে ।
এক অচেনা নরম হাতের স্পর্শ পেল মুনিয়া ওর সারা শরীরে । যন্ত্র চালিতের মতো এগিয়ে গেল আকর্ষনে । মুনিয়ার মুখ মাটির দিকে । মহিলাটি ওর চিবুকে হাত দিয়ে ওর মুখখানা তুলে ধরলেন নিজের দৃষ্টির কাছে ।
গরম জল এল । খাবার এল । কিছুক্ষণের মধ্যেই মুনিয়ার হাত পা ধোয়া মোছা হল, খাওয়া শেষ হল ।
তারপর পরিষ্কার কাপড় চোপড় পরিয়ে তাকে যখন জাজিম পাতা খাটে নরম বিছানায় বসালেন সেই মহিলা, মুনিয়ার মনে পড়ল তার মাকে আর বাবাকে ।
সারাটা রাত সে গড়াগড়ি করে কাটিয়ে দিল । হঠাৎ আচমকা একটা ভয় তাকে ঘিরে ধরল - যদি এরা জানতে পারে আমি কত গরীবের ছেলে তাহলে কি শাস্তি না দিয়ে ছাড়বে ।
অন্ধকার ঘর । চুপি চুপি তবু সে উঠল । নেমে এল মাটিতে দরজাটা খুঁজতে লাগল । হাতড়ে হাতড়ে এগিয়ে যাচ্ছিল, হাতটা লেগে গেল একটা দরজার কড়াতে, একেবারে নীরব রাত্রির স্তব্ধতা ভাঙ্গতে ওইটুকু শব্দই যথেষ্ট । শব্দ শুনে প্রশ্ন করলেন সেই মহিলা, কে কে !
মুনিয়া কথার উত্তর না দিয়ে চুপি চুপি আবার বিছানায় এসে শুয়ে পড়লো । তার বুক ঢিপ ঢিপ করতে থাকল ।
পরের দিন সকাল থেকে নূতন পরিবারে নূতন পরিবেশে মুনিয়ার জীবন আরম্ভ হল । মুনিয়া দেখল যে তাদের গ্রামের জমিদার বাড়িটা যেমন ছিল এখানটা ঠিক তেমনি, সদর অন্দর বড় বড় ঘর, দামী দামী জিনিসপত্র । লোকজন, চাকর বাকর - বাড়িতে প্রচুর । কোনোদিকে পালিয়ে যাবার উপায় নেই ।
সামনেই দুর্গাপূজো । মন্ডপের বারান্দায় মূর্তি তৈরি হচ্ছে । মুনিয়া দাঁড়িয়ে দেখছিল । একটা বুড়ো মতো লোক মুনিয়ার খুব কাছে এসে এদিক ওদিক তাকিয়ে ওকে শুধাল, তোমাকে বুঝি নিশীথ পোষ্য পত্রি করতে এনেছে ।
মুনিয়া মাথা নীচু করে দাঁড়িয়ে ভাবতে লাগল - এখান থেকে পালিয়ে যাবার কি কোনো উপায় নেই !
[ক্রমশ:]