• Parabaas
    Parabaas : পরবাস : বাংলা ভাষা, সাহিত্য ও সংস্কৃতি
  • পরবাস | সংখ্যা ৩৭ | মার্চ ২০০৬ | কবিতা
    Share
  • ফেরা : ব্রত চক্রবর্তী

    আমাদের ঘোড়াগুলি
    মরে গ্যাছে নাকি ?
    দৌড় ফুরিয়ে গ্যাছে ?
    হ্রেষা নেই কেন ?
    গলা তুলে যে চেঁচায়,
    আহত বিস্ময় হয়,
    সে অনেক পথ ঘুরে,
    ঘুরে ঘুরে হতোদ্যম,
    চোট ও জখম নিয়ে ফেরা
    ভাঙাচোরা একজন, ভাঙা গলা,
    যেখানে ফিরেছে সে কিছু নেই,
    গোঁত্‌-খেয়ে-পড়া কাটা ঘুড়ির মতন
    লাট খাওয়া একদিক, পৃথিবীর,
    সেখানে দাঁড়িয়ে সে গলা তোলে,
    ভাঙা গলা দেখে সে অবাক
    লাট খেয়ে পরক্ষণে তার কাছে ফেরে,
    ঘেরে তাকে,
    আঙুল উঠিয়ে হয় চাপা ফিসফিস,
    তার গলা, ভাঙা ফিসফিসানির গলা
    তাকেই জিগ্গেস ক'রে বসে :
    আমাদের ঘোড়াগুলি মরে গ্যাছে নাকি ?
    দৌড় ফুরিয়ে গ্যাছে ?
    হ্রেষা নেই কেন ?
    এইবার ঝুঁকে যায় সেই লোক
    ভাঙাচোরা নিজের ফেরায়,
    পিছু-হটে হতোদ্যম ফিরে আসা
    নিজের দুপায়ে, চোটে ও জখমে,
    মরা ঘোড়াগুলি যেন টের পায়
    নিজের ভেতরে, এ পায়ে ও পায়ে,
    দৌড়-হারিয়ে-বসা চোটে ও জখমে !
    মনে পড়ে, বুঝে নেয়,
    বোঝে ওই লোক,
    যেখানে সে গিয়েছিল, যত দূরে,
    গিয়ে গিয়ে দেখেছে বুঝেছে
    যেখানেই মুঠো পায়, পেয়েছিল,
    পাবে কিছু ভেবেছিল,
    সেখানেই, সেখানে সেখানে,
    অন্যদের কুড়ুলের কোপে আর সাঁড়াশির চাপে
    গ্যাছে মুঠো ভেঙে,
    আঙুলের ফাঁকে গলে গ্যাছে যে সময় !
    মুঠো পায়নিকো, কেন কিছু দেয়নিকো
    কোনও মুঠো, আজ বোঝে,
    বুঝে যায় ওই লোক
    ভাঙা গলা ফিসফিসে,
    নিজের দুপায়ে, চোটে ও জখমে !
    কালো মাথাদের সালিশিতে চলে এ-পৃথিবী,
    কালোরাই অন্যদের পথ ভেঙে দেয়
    যেখানেই গ্যাছে সে দেখেছে বুঝেছে,
    বুঝে গ্যাছে নিজের একার মতো
    কোনও পথ নেই চলবার,
    নেই কোনও পথ এগবার,
    যদি-বা এগোতে চায়, কেউ,
    কোনওখানে,
    অন্যদের ফণা এসে পড়ে
    অস্থানে কুস্থানে,
    মাজা ভেঙে দিয়ে খুব হাসে,
    এর ফণা ওর ফণা হাসাহাসি করে,
    ভল্লগুলি এদিক ও-দিক থেকে
    এসে বিঁধে বলে, লাগেনি তো ?
    তার খুব লেগেছিল পায়ে পায়ে,
    শ্বাসে শ্বাসে, মুঠোয় মুঠোয়,
    এখন সন্ধ্যায় মনে হয় তার
    গলা খুলে ব'লে দেয় সব,
    বলে দেয় অনেক সকালে
    যখন সে পথে পা কারা ডেকেছিল,
    মাজা ভেঙে দিয়ে ফণায় ফণায়
    চোট ও জখম দিয়ে কারা-বা ফেরাল !
    দিনের নিভন্ত কাঁধে মাথা রেখে
    সমস্তকিছুই সে ব'লে দিতে পারে,
    ব'লে দিতে যায়,
    তার আগে নিজেতেই
    খুব ঝুঁকে যে-ই সে তাকায়,
    দ্যাখে আর চম্কায়,
    নিজে দ্যাখে, দ্যাখে তাকে
    দৌড় হারিয়ে ফেলা
    হ্রেষা ফুরিয়ে ফেলা
    অবিকল মরে যাওয়া
    ঘোড়ার মতন লাগে !
    অবিকল ঘোড়ার মতন !
    আমাদের ঘোড়া ব'লে
    যে-ই গলা ফের তোলে সে,
    ভয়ে গলা যে-ই সে তুলতে চায়,
    নিজেতেই ঝোঁকে আর বুঝে নেয় :
    ঘোড়াগুলি কেন নেই,
    মাঝপথে দৌড় হারিয়ে সব
    ছিল, নেই, কোথায় গিয়েছে ! .....
    মরা মরা ঘোড়া হয়ে
    ভাঙা শ্বাসে, চোটে ও জখমে,
    নিচু গলা ভাঙা হাঁটু কাঁপা চোখে
    গোঁত্‌-খাওয়া ঘুড়ি হয়ে এখন সে
    লাট খাওয়া যেখানে দাঁড়ায়,
    দাঁড়িয়েছে, একা,
    দিনের নিভন্ত কাঁধে মাথা রেখে
    দাঁড়িয়েছে, একা,
    সেইখানে কারা আসে বুঝে যায়,
    বুঝে নেয় ও আসে কারা,
    যারা হাওয়া বুঝতে পারেনি
    বাতাসের, ঝড়ে গ্যাছে উড়ে,
    যায়, পতাকা, কোথায়,
    পতাকা হারিয়ে ফেরে সেইখানে
    মানুষেরা, ঘোড়ার মতন লাগে ! ........




    (পরবাস, মার্চ, ২০০৬)

  • এই লেখাটি পুরোনো ফরম্যাটে দেখুন
  • মন্তব্য জমা দিন / Make a comment
  • (?)
  • মন্তব্য পড়ুন / Read comments