[`রাজা-বাদশার গপ্পো' নাটকটি বিখ্যাত ফরাসী নাট্যকার মলিয়ের-এর প্রহসন, ত্ং ংঔস্খরুংবঠত্র টধত্ছত্রঞ -এর ইংরেজি অনুবাদ `দ্য ফ্লাইং ডক্টর' (অনু: অ্যালবার্ট বারমেল; ‘চত্রং-বিঞ ঙধস্ংরুঠংয ধী ংঔধত্ঠংশং: নংটংত্র ত্ংঐছষ্য’, ংঋংইংঋত্ছণ্ণযং জধধূয, ২০০০ ) অবলম্বনে রচিত । মলিয়ের (আসল নাম জাঁ-ব্যাপটিস্ট পোকেলিন [১৬২২-১৬৭৩]), গদ্য-পদ্য মিলিয়ে ১২টি পূর্ণাঙ্গ নাটক ও আরো ৬টি সংক্ষিপ্ত প্রহসন বা নাটিকা রচনা করেছেন । মলিয়ের দেখিয়েছেন কীভাবে তীক্ষণ বিদ্রুপাত্মক প্রহসন সুযোগ্য নাট্যাকারের হাতে নমনীয় অথচ গভীর শিল্পে উত্তীর্ণ হতে পারে ।]
ইন্দ্র : তা হলে এখন কি উপায়, হরি ?
হরি : যা করবার করতে হবে তাড়াতাড়ি ।
[ আগের গ্লাসের বাকীটুকু নি:শেষ করতে করতে]
(পরবাস ৩৮, নভেম্বর, ২০০৬)
নইলে কিচ্ছু করার নেই, যতই করো কান্নাকাটি
তোমাদের প্রেমের টোটাল ইতি -
খুব শীগ্গির ঐ মোটা উকিলের ভাই টোপর বসিয়ে টাকে
পালাচ্ছে নিয়ে দিদিটাকে ...
সব ঠিকঠাক, স্রেফ পয়সা দেখিয়ে আমার খুড়োকে -
তুমি চেনো না ঐ বদমাশ বুড়োকে !
পারলে তো ঐ পাজী
বিয়ে করে নেয় আজই !
নেহাৎ দিদি দিয়েছে মোক্ষম চাল -
কাকাকে বুঝিয়েছে কাল,
শরীর বড়ো. খারাপ,
সইবে না এখন বিয়ের চাপ ।
তা হোক্ অবুঝ, বুদ্ধি কিছু না থাক্ ঘটে
হাজার হোক্ বাপ্ তো বটে -
আজ ভোর থেকেই খুঁজে মরছে
ভালো ডাক্তার কোথায় কে আছে !
ফন্দি একটা আঁটো যা হোক্
ইন্দ্রদা - এই শেষ সুযোগ,
তাই দিদিই আমাকে পাঠালো,
এটা গেল তো সব গেল ।
ভালো বন্ধু যদি কেউ থাকে
ডাক্তার সাজিয়ে নিয়ে এসো তাকে ।
জানো তো, কাকার বাগানবাড়ি রয়েছে বোলপুরে ।
ডাক্তার বোঝাক্ : পেশেন্ট আসুক একটু ঘুরে,
একটু হাওয়া বদলে, কোথাও বাইরে থেকে ।
আর তবেই যদি দিদিকে -
কাকা বাইরে বের করতে চায় ...
এ-ক-মা-ত্র উপায় !
তবে হ্যাঁ, চটপট ফিরো বিয়ে-থা সেরে ।
তারপর সোজা কাকার পায়ে যাবে পড়ে -
ইনিশিয়ালি বুড়ো যাবে বেজায় চটে,
তবু মেনে নেবে - হাজার হোক্ বাপ তো বটে ।
ইন্দ্র : প্ল্যান তো মারকাটারি, কিন্তু ডাক্তার পাই কোথায় ?
এমন ফল্স্ ডাক্তার বন্ধু কেউ আসছে না তো মাথায় ।
হরি : ঙছত্র'ঞ ষ্ধণ্ণ ঞচ্ঠত্রূ ধী তোমার রুশঠটংশ - রাজা ?
ইন্দ্র : পাগল ! সে তো আদ্যন্ত খাজা,
শুধু কথার ঝুড়ি, কাজে অষ্টরম্ভা, খালি বুকনি,
তার ওপরে সময়ে-অসময়ে মদেতে ছুঁকছুঁকনি !
হরি : ও তো একটু লেখাপড়া জানা, তাছাড়া আগে কিছুদিন ছিল যাত্রাদলে -
ইন্দ্র : কিন্তু ... না-না ... ও সোজা কেস্ জটিল করে তোলে ।
হরি : দ্যাখো কি করবে, আমি একটু পরে আসছি, এখন যাই ।
আবার বলছি, যা করণীয় তা জলদি করা চাই ।
[ হরি কান্তির বাড়িতে ঢুকে মঞ্চের অন্যদিক দিয়ে বেরিয়ে যায় ।]
ইন্দ্র : মুশকিল ! একজন পারফেক্ট কেউ আসছে না মনে -
হরিঠ কী ঠিক ... ড্রাইভারটাকে দিয়ে ফাটকা খেলব এখানে ?
চূছষ্ ... ওরে আমার রাজা
তুই এখন অগতির গতি, তুই ই আমার নগেন পাঁজা !
যাই খুঁজে দেখি, সে ব্যাটা কোথায় আছে -
[ রাজা ঢোকে ।]
রাজা : মনে হচ্ছে দাদা, আপনি যেতে চাইছিলেন রাজার কাছে
ইন্দ্র : শোন্ রাজা শোন্, অবস্থা বড়ো. করুণ ।
রাজা : কি চাই দাদা, শুধু আদেশ করুন -
বিলিতি কার্পেট, সিগারেট কিংবা টেডি বিয়ার,
ছোটো বড়ো. নানান মাপের বোতল-ভরা বিউটি কেয়ার,
গরমে ঠাণ্ডা মেশিন, কুলকুচি করার বেসিন,
আলিপুরে ফ্ল্যাট যদি চাই, সেটাও আবার সাউথ-ফেসিং,
লাগলে বলুন -
ইন্দ্র : ওরে ভাই রে, ক্ষমা করুন !
ওসব কিচ্ছু চাই না আমার,
বলে খাচ্ছে খাবি ফিউচার !
রাজা : ফেং শুই মুর্তি আছে । তো ফিউচার মুঠোয় আছে ।
চাইনিস ভোকাল টনিক সস্তায় বিক্রি আছে ।
ইন্দ্র : এতো আচ্ছা জ্বালা -
ওরে বুঝিস্ কিছু প্রেমের খেলা !
রাজা : রেডিমেড মোহব্বতের কক্টেল বানিয়ে দেবো,
ভরপুর মস্তি দাদা, বাই-পোস্ট পাঠিয়ে দেবো -
ইন্দ্র : শাট্ আপ, শা-ট আপ
বন্ধ কর্ লাফ-ঝাঁপ
কোনো কথা না শুনে গল্পের গরু চাপাচ্ছে গাছে -
বাংলা ব্যাণ্ড শুনে আর বাংলা টেনে মাথাটা একেবারে গ্যাছে
আমার একটা কাজ করে দে ভাই, হাতজোড় করি -
রাজা : দাদা, আপনার জন্য আমি হাতের মুঠোয় প্রাণ নিতে পারি,
তন্নতন্ন খুঁজে ১০৮ টা নীলপদ্ম এনে দিতে পারি আপনাকে -
ইন্দ্র : উফ্ ! চুপচাপ শোন্ - ডাক্তার সাজতে হবে তোকে ।
রাজা : কী ... ডাক্তার সাজা ...
প্লীজ দাদা দেবেন না এমন সাজা
বড়ো. হয়ে ডাক্তার হব - কত স্বপ্ন ছিল বাবা-মা'র চোখে,
কিন্তু কি যেন বলে লোকে -
কুঁজোরও সাধ হয় চিৎ হয়ে শোবার,
গামছারও ইচ্ছে হয় ধোপাবাড়ি যাবার ।
ইচ্ছে গুলো সব কবেই গ্যাছে হারিয়ে
দোহাই দাদা, মজা করবেন না আমাকে নিয়ে ।
ইন্দ্র : পাঁচশো টাকা বখ্শিস্ দেবো -
রাজা : না-না বুঝছেন না, আমি কি করে ডাক্তার হব !
ইন্দ্র : হাজার টাকা -
রাজা : তবু, শাক দিয়ে মাছ কি যায় ঢাকা !
ইন্দ্র : শেষ কথা - দুহাজার -
রাজা : যাক্ যাক্, চক্ষুলজ্জা আছে তো রাজার -
মনিবের তরে প্রাণ সঁপেছি আমি ।
কেউ না জানুক, জানে অন্তর্যামী ।
কিন্তু হ্যাঁ, চাই ডাক্তারের ড্রেস্,
আর - এটা তো জটিল কেস্,
তাই চাই আগাম লাইসেন্স ।
মানে.. বুঝতেই পারছেন ... কমন্সেন্স ...
দরকার রাজার
[ অ্যাডভান্স এক হাজার ।] (মশছবূ ২)
[ আলো নিভে যায় ধীরে ধীরে ।]
॥ দ্বিতীয় দৃশ্য ॥
[আলো জ্বললে দেখা যায় কান্তি চেঁচাতে চেঁচাতে বাড়ির ভেতরের দিক থেকে মঞ্চে ঢুকছে । একটু পেছনে মীরা ।]
কান্তি : মীরা, মী----রা, আরে গেলি কোন্খানে ?
মীরা : আজ্ঞে কাকাবাবু, আমি তো এইখানে ।
কান্তি : এই যে, সারাদিন গিয়েছিলি কোথায় মরতে !
তোকে আর হরিকে বলেছিলাম ভালো ডাক্তার খোঁজ করতে
তা হরিবাবু তো মনে হচ্ছে না এখন এ রাস্তা মাড়াবেন ...
তিনি ঘরের খাবেন আর বনের মোষ তাড়াবেন !
এখন মীরাদেবী, আপনিই জবাব দিন -
একজন ও ডাক্তার পেলেন কি সারাদিন ?
মীরা : ও: কাকাবাবু ... ডাক্তার আর ডাক্তার ...
বলি মনের খবর রাখেন মেয়েটার !
এক ঘাটে যে নৌকো আষ্টেপিষ্টে বাঁধা,
কেন তাকে জোর করে অন্য ঘাটে যেতে সাধা -
ক্ষিদে নেই, ঘুম নেই, এই দিদিমণির রোগ,
এর সঙ্গে পাচ্ছেন না ভালোবাসার যোগ !
কান্তি : যোগ যা কিছু আছে, তা বিয়োগও হবে তাড়াতাড়ি ।
চিন্তা শুধু, মাঝখান থেকে বিয়েটার হচ্ছে দেরী ...
আর একটাও কথা নয় - ডাক্তার চাই আজই ।
[ কান্তি বাড়ির ভেতর দিকে মঞ্চ থেকে বেরিয়ে যায় ]
মীরা : না বাবা ... আমি আর কি বলব ... আমি বাড়ির ঝি ।
[ মীরা কান্তির পিছু নেয় ।]
[ হরি অন্যদিক থেকে মঞ্চে ঢুকে দ্রুতগতিতে বাড়িতে ঢোকে ।]
হরি : দিদি, এই দিদি ... কোথায় গেলি ... ধ্যুৎ কোনো সাড়া নেই !
[ বাড়ির ভেতর দিক থেকে শর্মিলা ঢোকে ।]
শর্মিলা : হুঁ ! যমের বাড়ি ছাড়া আর কোথাও যাবার তাড়া নেই ।
বল, কি খবর আছে ?
হরি : তাই তো বলতে এলাম - সুখবর আছে ...
এইমাত্র গেছিলাম, ইন্দ্রদা বললো, ডাক্তার সেট হয়ে গ্যাছে ...
শর্মিলা : চেঁচাচ্ছিস কেন ! আয় কাছে ...
বাবা পাশের ঘরেই আছে -
হ্যাঁ, এবার বল্ - কি করে পাওয়া গেল
ডাক্তার কে হোলো ?
হরি : ইন্দ্রদার ড্রাইভার রাজা ।
শর্মিলা : মাগো, আর লোক পেল না !
আমি পেশেন্ট হতে পারব না যা-
অনবরত বাজে বকে ...
আবার মাঝেমধ্যেই মদ খেয়ে থাকে,
মুখে ভক্ভক্ করে গন্ধ !
হরি : সে তো কাকাও খায়, করতে পারিস্ বন্ধ -
শর্মিলা : বাজে বকিস্নি হরি, ওর সঙ্গে বাবার তুলনা -
বাবা খায় ওয়াইন-হুইস্কি, ওর মতো চুল্লু খায় না !
হরি : সে পয়সা থাকলে রাজাও দেখাত কেতা -
শর্মিলা : আচ্ছা, আপনি কবে থেকে সর্বহারার নেতা !
বেশী জ্ঞান দিলে বন্ধ করে দেব পকেটমানি -
হরি : আরে কী মুশকিল ... আমি কোথ্থেকে নতুন ডাক্তার আনি ।
শর্মিলা : ঠিক আছে রাজাই আসুক, কিন্তু বলে দিবি ওকে
আমাকে জাস্ট একবার দেখে
বাবাকে ম্যানেজ করেই যেন পালায় ...
খামোখা যেন আমাকে না জ্বালায় ।
হরি : আচ্ছা বাবা তাই হবে ... এখন বল্ - কাকার হুইস্কি আছে একটু স্টকে ।
শর্মিলা : কেন ? তাও কি গেলাতে হবে নাকি ওকে !
হরি : আরে চেঁচাস্ না !
চুপ করে শোন্ না -
[ দুজনে অল্পক্ষণ ফিস্ফিস্ করে আলোচনা করে ।]
ঠিক আছে তাহলে, আর লাভ নেই দেরি করে ...
তুই ভেতরে যা, আমি ওকে এক্ষুনি আনছি ধরে ।
[ শর্মিলা বাড়ির ভেতর দিকে বেরিয়ে যায়, হরি অন্যদিকে । পরক্ষণেই হরি ঢোকে পেছনে রাজা, পরনে ডাক্তারের
[ হরি চেঁচাতে চেঁচাতে বাড়িতে ঢোকে ।]
কাকা-কাকা, ও কাকা কোথায় তুমি, কী জ্বালা !
[ কান্তি ঢোকে ভেতর দিক থেকে ।]
কান্তি : ষাঁড়ের মতো চেঁচাস্ কেন, আমি কি কালা !
হরি : কাকা, জবর খবর - পেয়েছি সেরা ডাক্তার ...
এই এলাকায় নতুন, কিন্তু প্রচুর নামডাক তার ।
দেখলেই বুঝবেন, সর্বরোগের স্পেশালিস্ট ...
সারা পৃথিবী ঘোরা তাঁর - কি ওয়েস্ট কি ইস্ট !
কান্তি : কোথায় তিনি কোথায়,
বাইরে দাঁড়িয়ে ... হায় হায় হায় !
হরি : না-না এই তো ... আমার কাকা .... ডক্টর রাজা রায় ।
রাজা : প্রীত হলাম পরিচিত হয়ে ।
নমস্কার ।
[ রাজা মেয়েলি হাবভাবে কথা বলতে থাকে]
কান্তি : ন-নমস্কার !
হরি : ও কাকা, বলতে ভুলে গেছি ... তা গুণ কি থাকে ঢাকা -
রুগী দেখার সঙ্গে উনি সাহিত্যরসেও পাকা ।
কান্তি : তাই না কি রে, হরি !
রাজা : আ-হা-হা, এসব বাড়াবাড়ি ...
অল্প কিছুই আছে এই ঘটে ...
আর জানেনই তো, যা সত্যি বটে
তার চেয়ে একটু বেশীই রটে ।
যাক্, কী যে বক্ছি ছাইপাঁশ ছাতার মাথা ...
বরং ... কিছু মনে করবেন না ... বলি একটা কথা -
চশমা দিয়ে ঘেরা
সাক্ষাৎ পটলচেরা
আপনার ঐ চোখদুটি -
[ কান্তি ঘাবড়ে গিয়ে ভুরু কোঁচকায় ।]
আহ্ কী অসাধারণ ঐ ভ্রুকুটি !
মশায়ের নাম ?
কান্তি : আ-আ-আজ্ঞে কান্তি দাম ।
[ রাজা কান্তির কাছে ঘেঁষে আসে ।]
রাজা : কা-ন্তি, কী অব্যর্থ নাম, কী সুকান্তি ...
এ মোহিনী রূপ মনে আনে শান্তি ।
কান্তি : এ-এসব কী হচ্ছে হরি ...
ও বাবা ... কী করি !
ওহ্ ডাক্তারবাবু, কী করছেন হে -
হরি : ডাক্তারবাবু বোধহয় একটু ভছষ্ !
রাজা : ষ্ণছষ্ নই গো, হা পোড়াকপাল ...
এ আমার প্রেমের খেয়াল -
আসলে আমি বাই-সেক, না-না, ট্রাই-সেক্সুয়াল ।
হরি ও কান্তি : মা-মানে !
রাজা : এ মা, এটা কে না জানে ...
যাকে যখন মনে ধরে ভাই
আমি তাকেই করি ঞশষ্ ।
সে যাক্, আজ কান্তির রূপ আমি দেখিয়াছি ...
তাই আপাতত: হরির রূপ দেখিতে চাই না আর ।
কই, নাড়ী দেখি আপনার ?
হরি : রুগী উনি নন্, ওনার মেয়ে !
রাজা : আ: - এটাই তো বোকামি সবচেয়ে ...
যেতে হবে রোগের মূলে,
অর্থাৎ কিনা রোগীর কুলে ...
ফজলি আমের গাছে কি আর হিমসাগর ফলে !
কান্তি : মানে !
রাজা : চলেছি রোগের উত্স-সন্ধানে ।
নাম শুনেছেন তো বিধান রায়ের ...
আমি হলাম নাতি তাঁর মামাতো শালার খুড়তুতো ভাইয়ের
যাক্ সে কথা - এখন প্রয়োজন কোনো জোরালো সূত্র
পাওয়া যেতে পারে কি রোগীর অল্প মূত্র ?
কান্তি : অ্যাঁ ! হ্যাঁ-হ্যাঁ নিশ্চয়ই ... মীরা, মী-রা ... সব যায় কোথায়
কাজের সময়ে যদি কাউকে পাওয়া যায় !
হরি : দাঁড়াও দাঁড়াও, আমিই গিয়ে বলে আসছি দিদিকে -
যেন রেডি করে আমাকে ডাকে ।
[ হরি মঞ্চের মধ্যেই ভেতরের ঘরে ঢুকে বেরিয়ে আসে । জানালা দিয়ে শর্মিলাকে অল্প দেখা যায় ]
কান্তি : প্লীজ ডাক্তার রায়, আমার মেয়েকে বাঁচান -
লাস্ট দুটো দিন না ঘুম, না খাওয়া, না চান ...
রাজা : কথা আছে - ডাক্তার পৌঁছোয় রোগী মরার পরে ।
আর আমি সেই ডাক্তার , যমরাজ যাকে ফলো করে ।
শর্মিলা : [ ঘরের ভেতর থেকে ] হরি -
রাজা : স্যাম্পল রেডি, যান তাড়াতাড়ি ।
[ হরি ঘরের দরজার কাছ থেকে শর্মিলার কাছ থেকে একটি ভর্তি গ্লাস নিয়ে ফিরে আসে ।]
হ্যাঁ যা বলছিলাম - আমি তো এখনো দেখিনি রোগীকে, চিন্তা কি !
এই তো স্পেসিমেন এসে গেছে, টেস্ট করে দেখি ।
[ হরির কাছ থেকে গ্লাসটি নিয়ে রাজা গ্লাসের ত্ঠইণ্ণংরু মুখে ঢেলে একটু কুলকুচো করে গিলে ফেলে । ]
হুমমম্, হচ্ছে ধন্ধ
অন্ত্র ও মূত্রাশয়ে লেগেছে দ্বন্দ্ব !
কান্তি : আ-আপনি ণ্ণশঠত্রং গিলে ফেললেন !
রাজা : সঙ্গে সঙ্গে নয় - ভুল বল্লেন ।
অন্য কেউ হলে শুধু চোখে দেখাই সার ...
কিন্তু আমি রাজা রায়, নই সাধারণ ডাক্তার ।
মূত্রকে মুখের মধ্যে এনে
পাক খাওয়ালাম সবখানে ।
যেইমাত্র সে তরল আমার স্বাদগ্রন্থি ছুঁলে -
বুঝিলাম রোগ তুমি কোথা হইতে আসিয়াছিলে !
তবে পরিমাণে এ-তো বড়ো. অল্প ...
চাই আরো বুঝতে রোগের পুরো গল্প ।
হরি : বহু কষ্টে মিলেছে এ কেষ্ট ...
এই তো যথেষ্ট !
রাজা : আহা, মূত্রত্যাগে রোগীর কেন এত দ্বিধা,
চাই আরো ... অন্তত: যতটা সুবিধা ।
[ হরি রাগতভাবে ভেতরের ঘরে ঢুকে আবার বেরিয়ে আসে জানালা দিয়ে দেখা যায় শর্মিলা কিভাবে "ণ্ণশঠত্রং" বধত্ত্ংবঞ করছে একটি হুইস্কির বোতল থেকে ছোট্ট একটি গ্লাসে মদ ঢেলে ।]
আ: ... হত এমন যদি সব রোগীর
আমি এই ডাক্তারই থাকতাম চিরদিন !
[ হরিকে ফিরে আসতে দেখে ]
এ কী, আপনি খালি হাতে এলেন !
হরি : এতো তাড়া কিসের, এই তো একবার টেস্ট করলেন ...
রাজা : কী বলে দেখুন, নেই তাড়া !
আরে বাবা, রোগ ধরতে দেরী হলে রোগীই তো পড়বে মারা ।
কান্তি : তাইতো-তাইতো, ওরে হরি
দিদিকে বল্ তড়িঘড়ি ...
শর্মিলা : (ভেতর থেকে) হরি, এদিকে আয় একটু -
রাজা : যান, যান, টেস্ট নাম্বার টু -
[ হরি ফিরে আসে অতি ছোট্ট একটি গ্লাস-ভর্তি মদ নিয়ে ।]
হরি : আশা করি টেস্ট করার দরকার নেই আর,
রুগীর ইচ্ছে, এটাই হোক্ শেষবার ।
রাজা : কান্তিবাবু, সর্বনাশ -
এতো বড়ো. কঠিন রোগের আভাস !
মেয়ের আপনার বাড়া দরকার মূত্রত্যাগের ক্ষুধা -
ঠিক আছে, পরে ওষুধ লিখে দেব, হবে না অসুবিধা ।
যাক্, এখন একবার রোগীকে দেখি -
হরি : দাঁড়ান, আমি দিদিকে ডাকি -
[ হরি মঞ্চে ঘরের মধ্য থেকে শর্মিলাকে নিয়ে আসে ।]
রাজা : দিদিভাই, শরীর কি বড়ো.ই কাবু ?
শর্মিলা : হ্যাঁ ডাক্তার বাবু ...
মাথা যন্ত্রণা, শরীর অবশ, পেটে ব্যথা ...
রাজা : বুঝেছি বুঝেছি ... এ তো হওয়ারই কথা ।
আমার আর কিছু জানার নেই, রোগী বরং বিশ্রাম নিক্ ।
[ শর্মিলা ও হরি ধীরে ধীরে বেরিয়ে যায় বাড়ির ভিতর দিকে ।]
হুম্, আমি তাহলে ধরেছিলাম ঠিক ।
[ ঠিক এসময়ে মুরারি মঞ্চে ঢুকে কান্তির বাড়ির দরজার সামনে হাঁক পাড়ে ।]
মুরারি : কান্তি, বাড়ি আছো নাকি হে ?
কান্তি : এ অসময়ে আবার কে
[মুরারি ঢুকে পড়ে ।]
আরে মুরারি যে -
সারপ্রাইজ ভিজিট, অ্যাঁ ... কোনো বিশেষ কাজে !
মুরারি : না হে ভায়া, যাচ্ছিলাম এই পথে ...
একটু সময় ছিল, তা ভাবলাম হবু ভাজের সাথে
ক'মিনিট আড্ডা মেরে যাই ...
হা: হা: হা: ... এনার সঙ্গে তো আলাপ হল না ভাই !
কান্তি : আরে এই তো এলে, আলাপ করানোর সুযোগ পেলাম কই !
আমার বন্ধু মুরারি ধর - বার-অ্যাট-ল,
আবার আমার মেয়ের হবু ব্রাদার-ইন-ল ...
আর ইনি ডাক্তার রাজা রায় ।
রাজা : নমস্কার মহাশয় ...
আচ্ছা আপনার ভাইয়ের সঙ্গে ওনার মেয়ের বিয়ে !
কিন্তু একটা কথা ... মানে ইয়ে
আপনার ভাই কি বর-বর ...
মা-মানে দোজবর !
মুরারি : ঘচ্ছঞ রুধ ষ্ধণ্ণ স্ংছত্র !
রাজা : না ... মানে ... আসলে সবারই তো বয়স বাড়ে প্রতিদিন ...
বলছিলাম, আপনি তো আমার বাবার মতো, মানে... প্রায় বাবারই বয়সী ।
মুরারি : ও... হা: হা: হা: ... আমায় দেখে ভাবছেন ভাইয়ের বয়সও অনেক বেশী ।
না মশাই, আমি বাড়ির বড়ো. ... আর এ হোলো সবার ছোটো, মৈনাক
আমি ছত্স্ধযঞ ওর বাবার মতো - পঁচিশ বছরের ফারাক -
এর মধ্যে রয়েছে আট জন
দুই ভাই, ছয় বোন ...
রাজা : (বিড়বিড় করে) উরি বাবারে, সে কী কথা ...
বাবা তো মাকে শুকোতেই দেয়নি কাঁথা !
মুরারি : কিছু বললেন নাকি ?
রাজা : না: ... বলার আর কীই বা বাকী ...
মুরারি : অ... কিন্তু কান্তি, ডাক্তার কেন ? কে অসুস্থ !
রাজা : ওনার মেয়ে ... তবে হবেন না ব্যস্ত ...
মুরারি : একী ... শরীর খারাপ ... এই সময় ... কই, মা আমার কই
একবার একটু দেখতে চাই -
রাজা : দাঁড়ান-দাঁড়ান ... যদি সত্যিই রোগীর ভালো চান,
তবে রোগী না দেখে দেখুন রোগী যাতে একা বিশ্রাম পান ...
অযথা ডিস্টার্বড্ না হন -
কান্তি : প্লীজ, কিছু মনে কোরো না মুরারি -
মুরারি : না-না, সে ঠিক আছে ... কিন্তু ডাক্তার, মায়ের সারতে কত দেরী !
রাজা : লাগবে একটু সময় ...
তবে সেরে যাবে, নেই কোনো ভয় ...
আরে বাবা, এসেছে স্বয়ং ডাক্তার রাজা রায়
দেখবেন রোগ কেমন পড়িমড়ি করে পালায় !
যা হোক্ ... এখন আড্ডার সময় নয় ... কাজ আছে, যেতে হবে ...
তার আগে রোগের চিকিত্সায় মন দিতে হবে ...
কান্তিবাবু, আপনার সঙ্গে কিছু কথা ছিল ... একান্তে -
মুরারি : আ-আমি বরং যাই ... পরে ংঋচ্ধত্রং করছি খবরাখবর জানতে
কান্তি : আ-চ্ছা, সাবধানে যেও -
মুরারি : মনটা বড়ো. মুষড়ে গেল হে ... কোনো দরকার পড়লেই জানিও
[ কান্তি মাথা নাড়ে । মুরারি বেরিয়ে যায় ।]
কান্তি : একটু চেষ্টা করুন ডাক্তার রায় ...
মেয়েটাকে যাতে ক'দিনেই সারিয়ে তোলা যায় -
রাজা : হুঁ সেটা সম্ভব যদি রোগী ক'দিন কাটায়
খোলা হাওয়ায় ...
কোথাও চেঞ্জে গিয়ে -
কান্তি : কিন্তু মেয়ের সামনে যে বিয়ে !
রাজা : যাচ্চলে ...
বিয়ে তো হবে মেয়ে বাঁচলে !
এখন বাইরে কোথাও পাঠিয়ে কিছুদিন
তাকে বাঁচতে দিন -
কান্তি : ও: ... আমি ঞধঞছত্ত্ষ্ বধত্রীণ্ণযংরু কী যে করি ...
রাজা : কোলকাতার বাইরে কাছাকাছি ভালো জায়গায় আছে বাড়ি-টাড়ি ?
কান্তি : বোলপুরে ...
কিন্তু মেয়েকে একা পাঠাই কি করে ?
আমি কী করে যাই ... এত কাজ রয়েছে ...
বিয়ের আর ক'দিনই বা আছে ...
রাজা : কেন, যে আমায় নিয়ে এল, সেই ভাই তো রয়েছে -
কান্তি : ষ্ণধধরু ঠরুংছ ! আপনি আমায় বাঁচালেন ডাক্তার রায় ।
রাজা : তাহলে আবার পরে দেখা হবে, এখন বিদায় ।
কান্তি : আপনার ভিজিটটা ডাক্তারবাবু ... কত দেব ?
রাজা : প্রথম এলাম - যা দেবেন খুশি মনে নেব ।
[ কান্তি কিছু টাকা গুঁজে দেয় রাজার হাতে ।]
কান্তি : আমি তবে আজই ওদের বোলপুরে পাঠানোর ব্যবস্থা করি ।
রাজা : হ্যাঁ-হ্যাঁ, আজই ... এক্ষুণি ... খুব তাড়াতাড়ি ।
বড়ো. আরাম পেলাম আলাপ হয়ে - আমি তবে যাই -
কান্তি : চূছষ্ ...থ্যাঙ্কিউ-থ্যাঙ্কিউ... ঢষ্ং
[ রাজা বাড়ির দরজা দিয়ে বেরোয় । কান্তি ঘরের ভেতরের দিকে মঞ্চ থেকে বেরিয়ে যায় । রাজা ডাক্তারের পোশাক খুলে মঞ্চের একপাশে রাখে । ইন্দ্র ঢোকে ।]
ইন্দ্র : কি রে রাজা কি খবর ... বুড়োকে মানানো গেল কোনোমতে ।
রাজা : খুড়োকে প্রেমে মজিয়ে দিয়েছি দাদা - কেল্লা ফতে !
রতনে রতন চেনে, কান্তি চিনেছেন রাজাকে
আবার আমার ভিজিটও দিয়েছেন, থামানো গেল না তাঁকে -
তবে আপনার আর কী হবে সেসব শুনে ...
যান্ দাদা যান্ - ওরা বোধহয় ওদিকে বেরিয়ে গেল এতক্ষণে
ইন্দ্র : হ্যাঁ, ঠিক বলেছিস, আর দেরী নয় ...
বিয়েটা আজই সেরে ফেলতে হয় -
[ ইন্দ্র দৌড়ে বেরিয়ে যায় ।]
রাজা : ওরে রাজা তোর জবাব নেই ... আহ্, এই সেরেছে
কেন যে মরতে খালি পেটে অতটা খেলাম ... মাথাটা কেমন জানি ঘুরছে ।
[ কান্তির বাড়ির ভেতর দিক থেকে পায়ের শব্দ শোনা যায় । দেখা যায়, কান্তি দরজার দিকে এগিয়ে আসছে ।]
এই রে, যেখানে বাঘের ভয় ...
সেখানেই সন্ধে হয় -
কান্তিবুড়ো এদিকেই আসছে, এখন কি করা ...
আমার কোট ... ওরে বাবারে ... এবার নির্ঘাৎ পড়ব মারা !
[ বত্ধছূ গায়ে চড়ানোর আগেই কান্তি বাইরে বেরিয়ে আসে । রাজা কোনোমতে বত্ধছূ আড়াল করে মাতালের অভিনয় করতে থাকে ।]
কান্তি : আরে এখানে, এভাবে ডাক্তার রায় !
রাজা : রা-য় ! কে রায় ! ও- রায় ...
ও তো বাড়ি নেই - সব্বাই জানে ...
কান্তি : মা-মানে -
রাজা : দুয়ারে লম্বু ঘুঘুটি আছে খাড়া
মাঝে-মাঝেই দিচ্ছে কড়া নাড়া,
"ও রায়, বাড়ি আছো ?"
রায়, তুমি দিচ্ছো না তো সাড়া -
কান্তি : এ তো পাঁড় মাতালেরও বাড়া -
ডাক্তার রায়ের মতই দেখতে ... কিন্তু তা কি করে হয়
না-না... এ নিশ্চয়ই ডাক্তার নয় -
রাজা : পচাই-পাড়া এখানে বারোমাস
মোদো-মাতাল ষাঁড়ের মতো চরে
চিত্পটাং - অবুঝ নাভিশ্বাস,
মেয়ে দেখেই আঁচল চেপে ধরে ।
"ও রায় - বাড়ি আছো ?"
সমকালীন যতেক নোংরামি
হজম করে মটকা মারি আমি ।
কেবলই শুনি মাতাল কড়ানাড়া
- রায় ! বাড়ি আছো ?
কান্তি : এই তুমি কে ? এতটা মদ খেয়েছ !
রাজা : আমি বাদশা - বাদশা রায়
কিন্তু আসলে ফকির, ভগবানের রায়ে !
কান্তি : বাদশা হও আর ফকিরই হও ...
বাড়ির সামনে এমন হুজ্জুতি ভালো নয় -
তা এখানে কেন ? কি চাই ?
রাজা : কিচ্ছু না কাকাভাই
একটা - শুধু একটা কোশ্চেন পুট করতে চাই -
দাদা আছে দাদা -
না-না হুট করে ডাকবেন না, আমি বাবা ভয়ে কাদা ...
বেজায় ঝামেলা হয়েছিল ... আমি অমানুষ কিনা,
তাই লজ্জায় আর দাদার কাছে মুখ দেখাতে পারি না -
কান্তি : কিন্তু কে তোমার দাদা হয় ?
রাজা : আজ্ঞে, ডাক্তার রাজা রায় ...
আপন যমজ ভাই, স্যার ...
দু-ঘন্টার বড়ো., কী বলব আর -
এণ্ণযঞ ভুল বুঝে আমায় করল পর !
বলুন না স্যার দাদাকে, আমায় একটু ক্ষমা করে দিতে ...
প্লীজ, আপনার গা-হাত-পা আমি স্যার টিপে দেবো ংঈশংং -তে
কান্তি : আরে না-না, ঠিক আছে ... ছিলাম কথা -
বুঝিয়ে বলব তোমার মনের ব্যথা ...
ডাক্তার একটু কেমন যেন, তবে ভালো স্বভাবে ...
আমার তো মনে হয়, তোমাকে ক্ষমা করে দেবে ।
রাজা : আবার আমরা মিলে যাব - ভাবিনি কোনোদিনই ...
যদি হয় স্যার, আমি আপনার কাছে চিরঋণী !
আমি তবে যাই,
জষ্ং স্যার, ঢষ্-ং !
[রাজা বত্ধছূ লুকিয়ে পিছু হটতে হটতে বেরিয়ে যায় ।]
কান্তি : উফ্, যেন ত্রধশঞচ্ ংঋধত্ং আর যধণ্ণঞচ্ ংঋধত্ং - এদিকে যমজ ভাই !
দেখি, ডাক্তারকে এখন আবার কোথায় খুঁজে পাই -
[ কান্তি বেরোতে যায়, তখনই রাজা ঢোকে ডাক্তারের বেশে ।]
আরে এই তো ... আপনাকেই খুঁজছিলাম ডাক্তার রায় -
রাজা : আহা... আমিও তো... যাক্ এখন আর কেউ নেই, বলুন যা প্রাণ চায় ।
কান্তি : না-না-না ওসব কিছু নয় ...
বলছিলাম কি - বাদশা ... আপনার ভাই হয় ...
রাজা : না-আ ... আপনি জানলেন কি করে ...
সে অসভ্য এখনো যায়নি মরে !
কান্তি : ছি-ছি-ছি একী বলছেন - আপনার যমজ ভাই !
রাজা : ও একটা লজ্জা, একটা মাতাল, একটা নোংরা, একটা-একটা দুচ্ছা***
কান্তি : জানি ... সব বুঝছি ডাক্তার রায়
কিন্তু হাতের পাঁচটা আঙুল কি সমান হয় !
প্লীজ, দিন না ওকে ক্ষমা করে -
রাজা : আচ্ছা:, ক্ষমা চাইতে এসেছে আপনাকে ধরে !
কান্তি : না-না, বাদশা এসেছিল আপনারই খোঁজে ...
ও সত্যিই এখন ওর ভুল বোঝে ।
ওকে আমি কথা দিয়েছি ডাক্তার রায়
প্লীজ ক্ষমা করে দিন ... ছঞ ত্ংছযঞ আমার কথা ভেবে না হয় -
রাজা : হে বিধাতা, এই ছিল তোমার মনে ...
কী করে ফেরাই তারে যে এমন প্রেমাস্ত্র হানে !
কথা দিলাম -
[ রাজা বেরিয়ে যায় ।]
কান্তি : বাপ্স্ ! আচ্ছা আমি কি করতে বেরিয়েছিলাম ...
[মাথাটা গুলিয়ে গেল ... কিছুই মনে পড়ছে না ছাই ...]
দূর, বাড়িই ফিরে যাই -
[কান্তি বাড়িতে ঢছবূ করে অন্যদিক দিয়ে মঞ্চ থেকে বেরিয়ে যায় । আলো ধীরে ধীরে নিভে যায় ।]
॥ তৃতীয় দৃশ্য ॥
[ আলো জ্বললে দেখা যায় ইন্দ্র ও রাজা মঞ্চে ঢুকছে - কান্তির বাড়ির সামনে । রাজার হাতে রুধবঞধশ'য বত্ধছূ ]
ইন্দ্র : তুই আমার জন্য যা করলি রাজা,
শুধু টাকা দিয়ে মিটবে না এ ঋণের বোঝা ।
আর একটুখানি ম্যানেজ করে দে, আমরা ঠিক সময়ে পৌঁছে যাচ্ছি
রাজা : দাদা, ভাগ্য ভালো যে আমি এখনো আস্ত রয়েছি !
আপনার শ্বশুর আমায় দেখে ফেলেছেন ডাক্তারি পোশাক ছাড়া
যমজ ভাইয়ের গল্প না বানালে অবধারিত পড়তাম ধরা !
[ এই সময়ে কান্তি নিজের বাড়ির দিক থেকে মঞ্চে ঢুকে বাড়ি থেকে বেরোতে থাকে ।]
এইরে বোধহয় আবার আসছেন, পায়ের শব্দ পাচ্ছি ...
ইন্দ্র : আমি পালাচ্ছি ... [ইন্দ্র দৌড়ে বেরিয়ে যায় ]
রাজা : আচ্ছা ফ্যাসাদ যত ... [ তড়িঘড়ি মঞ্চের কোণে ডাক্তারের পোশাক ফেলে আড়াল করে ।]
[ কান্তি বাড়ির দরজা দিয়ে বেরোয় ।]
কান্তি : এই যে বাদশা, তোমায় খুঁজছি কত -
শোনো, সুখবর আছে
তোমার দাদা তোমায় ক্ষমা করার কথা দিয়ে গ্যাছে ।
তবে দাদা তোমার যা খামখেয়ালী - কি করে নিশ্চিত হই !
দুজনকে যদি একসঙ্গে পেয়ে পাশাপাশি জুড়ে দিই
তবে শান্তি পাই ।
তুমি আমার ঘরে থাকো একটুখানি
আমি বরং তাঁকে খুঁজে আনি ।
রাজা : না-না-না, বারবার
এত খোঁজাখুঁজির কী দরকার !
দাদা ব্যস্ত মানুষ, কোথায় খুঁজে বেড়াবেন, ফালতু সময় নষ্ট !
অল্রেডি আপনাকে দিয়েছি প্রচুর কষ্ট ।
আমিই ঠিক তাকে কোথাও খুঁজে পাব,
কথা দিচ্ছি, আপনার নাম করে ক্ষমা চেয়ে নেব ।
[কান্তি রাজাকে বাড়ির মধ্যে ঠেলে নিয়ে যায় ।]
কান্তি : না-আ, তুমি এ ঘরে বন্দী থাকো, কখন পালাবে গুটি-গুটি,
আজ ভাইয়ে-ভাইয়ে মিলিয়ে দিয়ে তবেই আমার ছুটি ।
[কান্তি রাজাকে ভেতরের ঘরে ঢুকিয়ে দরজা তালাবন্ধ করে এবং ডাক্তারকে খুঁজতে বেরিয়ে যায় ।]
রাজা : জানালার কাছে এসে ও দাদা গো, এ তোমার শ্বশুর
[ নিজের মনে] না অসুর !
কি ফাঁসান ফেঁসেছি ....
না:, এদ্দুর যখন এসেছি
হারব-না না-হেরে,
যদি তোর ডাক শুনে কেউ না আসে তবে একলা পালা রে
[ রাজা নাক-চোখ বন্ধ করে জানালা দিয়ে লাফ মারে আর ঠিক তখনই মীরা বাড়ির ভিতর থেকে মঞ্চে ঢোকে । ঘাবড়ে গিয়ে মীরা লুকিয়ে পড়ে । অন্যদিকে রাজা বাড়ি থেকে বেরিয়ে
মীরা : উড়ন্ত মানুষ - তাজ্জব ব্যাপার ! ঘরের মধ্যে ছবির শ্যুটিং নাকি -
একটু দাঁড়িয়ে যাই, দেখি যদি আরো কিছু থাকে বাকি !
[ কান্তি ফিরে আসে মঞ্চের বাইরে থেকে নিজের বাড়ির মধ্যে । পিছনে পিছনে রাজা - ডাক্তারের পোশাকে ।]
কান্তি : ও: কত খুঁজলাম - কোথায় যে ডাক্তারকে পাওয়া যায় !
রাজা : আপনার মন যদি চায়, তো হাজির ডাক্তার রাজা রায় ।
[ মীরা অবাক চোখে আস্তে আস্তে ঘরের মধ্যে ঢুকে যায় ।]
কান্তি : এই তো, এই-তো ডাক্তার,
আমার একটা শেষ আবদার -
আপনাকে রাখতেই হবে,
আমি জানি বাদশা আপনার ক্ষমা পাবে,
তবু তা দেখতে চাই নিজের চোখে ...
ও এখানেই, যদি আপনি ক্ষমা করে একটু জড়িয়ে ধরেন ওকে ।
রাজা : অসম্ভব, অবাস্তব -
এতক্ষণ আমি শুনেছি সব,
কিন্তু আর নয় -
কান্তি : প্লীজ ... আমার জন্যে না হয় -
রাজা : হা - য় ...
বাদশা বেরিয়ে আয় !
কান্তি : দাঁড়ান-দাঁড়ান, আমি ডেকে আনি,
কত ভয়ে ভয়ে রয়েছে না জানি ।
[ কান্তি যেই ঘরের দরজার দিকে এগোয়, রাজা বত্ধছূ খুলে ফেলে জানালা দিয়ে ঘরে ঢুকে পড়ে ভীতভাবে কাঁদতে থাকে ।]
[ কান্তি ও রাজাকে জানালায় দেখা যায় ।]
আরে বোকা ছেলে ... দেখো ভয় পায় ...
বাইরে দাদা তোমার অপেক্ষায় ।
রাজা : দাদাকে প্লীজ স্যার রাজি করান ঘরে আসতে, পায়ে পড়ি,
নয়তো আপনার সামনে দাদার পা ধরে গড়াগড়ি ...
তার ওপর কি না কি বলবে, ভালো দেখাবে কি -
কান্তি : ঠিক আছে, ঠিক আছে, চেষ্টা করে দেখি -
[ কান্তি জানালা থেকে সরে দরজার দিকে আসে । সেই ফাঁকে রাজা জানালা দিয়ে নেমে আসে, বত্ধছূ চড়িয়ে নেয় গায়ে, এবং কান্তির জন্য অপেক্ষা করে ।]
[ঘরের বাইরে এসে ঘরে তালা লাগিয়ে]
ডাক্তার, আপনার ভাই এত লজ্জিত
সে বাইরে আসতেও ভীত !
সে চায় শুধু আপনার সামনে
ঘরেতে ক্ষমা চাইবে গোপনে
প্লীজ, এই আমার শেষ দাবি,
না করবেন না ... এই নিন চাবি ।
রাজা : যা করছি সব আপনার জন্য, আপনি যা চান ...
তাহলে আপনি এখানে চুপটি করে দাঁড়ান,
দেখি ও বদমাশকে কী করা যায় -
কান্তি : মাথা গরম করবেন না ডাক্তার রায় -
[ রাজা ঘরে ঢোকে । তাকে জানালায় দেখা যায়, কান্তি ঘরের দরজায় আড়ি পাতে । এই সময়ে মীরা আবার ভেতর থেকে ঢোকে এবং ঘটনা বুঝতে চেষ্টা করে । রাজা গলা পাল্টে ডাক্তার ও তার ভাইয়ের ভূমিকায় অভিনয় করতে থাকে ।]
রাজা : তুই এখানেও এসে জুটেছিস, শয়তান !
- আমায় ক্ষমা করো দাদা, আমি তোমার অবোধ সন্তান ...
- চোপ্, মদ খেয়ে মাতলামি !
- বিশ্বাস করো দাদা, করিনি মাতলামি ।
- আবার মিথ্যে কথা, মদ খাসনি তুই ?
- হ্যাঁ দাদা, মদ খেয়েছি, কিন্তু মদের দিব্যি - মাতাল তো নই
- চুপ, ব্যাটা অকালকুষ্মাণ্ড
- দাও দাদা, যা চাও দাও দণ্ড
- আবার নাটক ! একটা নেশাখোর বদ !
- মদের দিব্যি দাদা, আর ছোঁব না মদ ।
মীরা : কাকাবাবু, ঠিক কি হচ্ছে বলুন তো ও ঘরে ?
কান্তি : ওরে -
ডাক্তার আর তার ভাইয়েতে হয়েছিল ঝগড়া
আজ স্রেফ আমার জন্যেই মিলে যাচ্ছে তারা ।
মীরা : ডাক্তার আর তার ভাই ?
কিন্তু ঘরে তো শুধু ডাক্তারকেই দেখতে পাই !
ডাক্তারের ভাই রয়েছে তো গেল কোথায় সে ?
বলুন তো কাকাবাবু, একবার যেন ভাই জানলায় আসে !
কান্তি : আচ্ছা-আচ্ছা, বলছি তাই -
ডাক্তার রায়, যদি বাদশাকে একবার দেখতে পাই ...
রাজা : ভদ্র সমাজে মুখ দেখাবার যোগ্যতা নেই ওর !
তার ওপর -
আপনার মতো ভদ্রলোকের মুখোমুখি ...
আমি কী করে নেব এতটা ঝুঁকি !
কান্তি : প্লীজ, ডাক্তার রায় ...
রাজা : হায়,
আপনাকে না বলতে মন দেয় না সায় !
আমি কিন্তু পাশাপাশি দাঁড়াবো না ওর ...
আয় নর্দমার কীট, মুখ দেখা তোর !
[ রাজা জানালায় আসে বাদশা হয়ে, বত্ধছূ ছাড়া ।]
স্যার আপনি মহান,
আপনি দয়াবান -
[ রাজা জানালায় ফিরে আসে ডাক্তারের বেশে ।]
দেখে নিলেন তো ভালো করে
কেমন জানলা আলো করে
ঘাটের মড়াটি দাঁড়ালো বেঁকে চুরে -
মীরা : [ কান্তিকে ফিসফিসিয়ে ]
একটা লোক কাকাবাবু, আমি প্রমাণ দিতে পারি,
বলুন তো ওদের একসঙ্গে দাঁড়াতে তাড়াতাড়ি !
কান্তি : ডাক্তার রায়, একটি শেষ অনুরোধ, তাহলেই মনটা ভরে -
যদি দেখি ভাই ভাইকে একবার, শুধু একবার জড়িয়ে ধরে ।
রাজা : যদি সারা বিশ্ব যায় একদিকে, অন্যদিকে আপনি ...
তবুও অসহায় আমি মনেপ্রাণে মানি -
আপনাকেই আমি সঁপেছি প্রাণ ...
হায় জানিনা, জেনেশুনে এ অমৃত না বিষ-পান !
আজ আপনাকে সাক্ষী রেখে ভাইকে করলাম ক্ষমা -
আয় ভাই বুকে আয়, আর কোনো রাগ নেই জমা ।
[ রাজা খুব দ্রুত বত্ধছূ -এর হাতা গুটিয়ে নিজের হাতদুটো নিজের পিঠে ও কোমরে দিয়ে উল্টে পড়ার ভান করে ।]
আরে আরে আরে ... টানিস্ না আর ...
ওরে বাবারে ... মাতাল কোথাকার !
কান্তি : ওই তো ওরা একসঙ্গে দুজনে -
মীরা : লোকটা কী ম্যাজিক জানে !
[ মীরা লুকিয়ে পড়ে ।]
[ রাজা ঘর থেকে বেরিয়ে আসে ঘরে তালা দিয়ে, ডাক্তার-বেশে ।]
রাজা : এই নিন আপনার চাবি, ভাই রয়েছে ঘরে ।
আমি চাই না ... একটা মাতাল আমার ভাই ... এটা জানুক শহরে
এটা সম্মানের প্রশ্ন ... কি ঘরে কি বাইরে ...
তাই আমি চলে যাচ্ছি আগে, ও বেরোক পরে ।
[ রাজা এগোতে থাকে । যেইমাত্র কান্তি দরজার দিকে এগোয়, রাজা ঘুরে বত্ধছূ খুলে ঘরের একপাশে লুকিয়ে দ্রুত জানালা বেয়ে ঘরে ঢোকে ।]
[ কান্তি ও রাজাকে জানালায় দেখা যায় ।]
কান্তি : এই যে বাদশা -
তুমি এখন স্বাধীন বত্স ...
রাজা : স্যার, যদি অনুমতি পাই ...
যাবার আগে শেষ একটা কোশ্চেন পুট করতে চাই -
কান্তি : বল-বল, কোনো লজ্জা নেই -
রাজা : আসছে জন্মে আমার বাবা হবেন কাকাভাই ?
[ রাজা মাতালকন্ঠে কেঁদে কান্তির পা জড়িয়ে ধরে ।]
কান্তি : এতো বড়ো. বালাই -
ঠিক আছে, ঠিক আছে ... বড়ো. খুশি হলাম ভাইয়ে-ভাইয়ে মিলন ***
এখন আশীর্বাদ করি - বাকী জীবন কাটুক ভালো ।
[ কান্তি ও রাজা ঘরের বাইরে আসে । দেখা যায় মীরা সেখানে ডাক্তারের বত্ধছূ হাতে ওদের জন্য অপেক্ষা করছে ]
মীরা : তা কাকাবাবু, ডাক্তার এখন কোথায় তা-হলে ?
কান্তি : সেতো চলে গেল - এ কী বলে !
মীরা : আজ্ঞে না - ডাক্তার এখন আমার বগলে !
আর একটা কথা ...
জানি মনে লাগবে ব্যথা -
স্টেশানে যাবার পথে
ও বাড়ির ইন্দ্রদার সাথে
দিদিমণি গিয়েছে পালিয়ে
হরিদা জানালো, ফিরছে একেবারে বিয়েটা সেরে নিয়ে ।
কান্তি : কী ! সর্বনাশ হয়ে গেল আমার ... হা ঈশ্বর ...
তুমি এভাবে ভাঙলে আমার ঘর ...
না-না ঈশ্বর নয়, ব্যাটা তুইই করেছিস শুরু
ব্যাটা নাটের গুরু
ব্যাটা মিথ্যুক, ব্যাটা জানোয়ার -
তোকে জ্যান্ত রাখব না আর
তেরেকো ... তেরেকো আজ ইতনা মারে গা
কিলায়কে কাঁঠাল পাকায় দে গা ...
ব্যাটা মাতাল, ব্যাটা বদ ... ঠিকই বলেছিল তোর দাদা ...
দূর ছাই ... কে দাদা কে ভাই - আমিই বনেছি হাঁদা !
[ কান্তি রাজার পেছনে ঘরময় দৌড়োতে দৌড়োতে মাথায় হাত দিয়ে বসে পড়ে ।]
রাজা : এক সেকেনড... মুখ বুজে মেনে নেব যেকোনো শাস্তি ...
শুধু তার আগে যদি একটা বোঝাতে পারি তবেই আমার স্বস্তি ।
দিন পাল্টেছে, পাল্টেছে সময় ...
আপনি চান বিয়ে করে প্রেম, কিন্তু কি ক্ষতি হয় -
যদি প্রেম করে বিয়ে হয় !
আপনার মেয়ে, ইন্দ্রদা - দুজনেই প্রাপ্তবয়স্ক মানুষ ...
এটা তো মানেন - দুজনেরই আছে মান, আছে হুঁশ ।
ওনারা বিয়ে করেছেন নিজেদের মতে ...
এ বিয়ে যদি ব্যর্থ হয়, ভেঙ্গে যায় ... তাতে
দায়ী তারা দুজন ... আপনি নয় ...
আপনার খারাপ লাগবে, দু:খ হবে ... কিন্তু মেয়ের অভিশাপের ভয়
তা তো নেই !
আর আজ যদি আপনার চাপে হওয়া বিয়েটাই
প্রেমের অভাবে ভেঙ্গে যায় ...
সে অপরাধের বোঝা লুকোবেন কোথায় !
এগিয়ে চলুন এই সত্যিটা মেনে নিয়ে -
আলাদা সত্তা আপনি ও আপনার মেয়ে ...
ভুল করুক, ঠিক করুক ... হোক্ স্বাধীন ...
রাখবেন না বাঙালী করে ... মানুষ হতে দিন ।
ছোটো মুখে বল্লাম অনেক কথা ... তবু বলব না ক্ষমা করুন ...
যা ইচ্ছে হয় শাস্তি দিন - পুলিশে দিন ... মারুন-ধরুন -
[ কান্তির মেয়ে ও ইন্দ্র ঢোকে ।]
ওই তো ওনারা এসে গেছেন ... আর কোনো কষ্ট নেই ...
আমার চেষ্টা সফল ... এখন জেলে যাই আর মার খাই ।
ইন্দ্র : আমাদের ক্ষমা করুন, ভেবে পাইনি অন্য কোনো উপায় ...
[ ইন্দ্র কান্তির পা ধরতে যায় ]
কান্তি : না বাবা, একদম নয় ... তোমার কৈফিয়ৎ কে চায় !
ভুল তো আমার হয়েছিল, আর ভুল ভাঙিয়েছে তোমারই লোক ...
[ মনপ্রাণ দিয়ে আশীর্বাদ করি - তোমাদের মঙ্গল হোক ।]
[ হরি ঢোকে । হাতে ফুলের সাজি । রাজা, হরি, মীরা নবদম্পতির দিকে ফুল ছুঁড়তে থাকে । জছবূভশধণ্ণত্ররু -এ বিয়ের মন্ত্র । ত্রক্রমশ: চাপা পড়ে যায় বিয়ের সানাইয়ের শব্দে । পর্দা ধীরে ধীরে পড়ে যায় ।]