• Parabaas
    Parabaas : পরবাস : বাংলা ভাষা, সাহিত্য ও সংস্কৃতি
  • পরবাস | সংখ্যা ৩৯ | আগস্ট ২০০৭ | প্রবন্ধ
    Share
  • বিষন্নতার বাজার-দর : কৌশিক সেন

    জীবনানন্দ বেশ প্রাঞ্জল করেই বর্ণনাটা দিয়েছিলেন । নারী, শিশু, সংসার, যৌনতা, স্বাচ্ছল্য বা স্বীকৃতি - কোন কিছুতেই মানুষের রক্তের ভিতরে জমাট বাঁধা ক্লান্তিটাকে কায়দা করতে পারে না । তাই একগাছা দড়ি হাতে চুপি চুপি গাছতলায় যাবার ইচ্ছেটা প্রায়ই মগ্নচেতনায় মাথা চাড়া দেয় । আমাদের অভ্যস্ত দুনিয়ায় হিসেবটা কিছু বদলেছে, এখানে দড়ির বদলে মানুষ বড়ির শরণাপন্ন হয় । পরিসংখ্যান বলছে কুড়ি মিলিয়ন আমেরিকান নিয়মিতভাবে অ্যান্টিডিপ্রেস্যান্ট ওষুধ (বাংলায় দু:খহরণ বটিকা) খেয়ে থাকেন । ঘণচ বলছে সংখ্যাটা দাঁড়াবে সারা পৃথিবীতে ৩৪০ মিলিয়ন । এইসব ওষুধ এবং তাদের পিলে চমকানো দামের একটা মোটামুটি হিসাব এইরকম (১)






    কিছুদিন আগে ভার্জিনিয়ায় এক কোরিয়ান ছাত্র ক্লাসঘরে পাইকারি খুনখারাপি করার বিশ্বরেকর্ড ভেঙেছে, সে খবর আপনারা সবাই রাখেন । তার একলা মনের অন্ধকারে চেপে রাখা বিষন্নতা থেকেই নাকি চোলাই হয়েছে অমানুষিক আক্রোশ আর ঘৃণার বিষ । এরকম আরো কতজন যে বিভিন্ন স্কুলে টাইম বোমা হয়ে বিরাজ করছে যীশু খ্রিস্টই জানেন । আমেরিকায় সবরকম সংকটের জন্য একটা করে সমাধান ঠিক করা থাকে । অল্পবয়েসী ছেলেপুলের বিষন্নতা রোগ নিয়ে বহু হাজার পৃষ্ঠা গবেষণা হয়ে গেছে, বহু প্রকল্প নেওয়া হয়েছে । এদিকে বাচ্চারা ডাক্তারখানায় নিজে থেকে হাজিরা দেবে এমন সম্ভাবনা কম, এবং বাবা-মা (যদি বা একসঙ্গে থাকেন) সাধারণত কাজের চাপে এবং সামাজিকতায় গলা অব্দি । এখন দেখা যাচ্ছে স্কুলে স্কুলে গোলাবাজি বন্ধ করার একমাত্র রাস্তা হল জলের ট্যাঙ্কে বস্তাভর্তি দু:খহরণ বটিকা গুলে দেওয়া । তবে তাতেও শাণাবে কিনা সন্দেহ ? এমনও মনে করা হচ্ছে যে এতসংখ্যক লোক এইসব ওষুধপত্র নিয়মিত ব্যবহার করে চলেছে যে আমাদের চারপাশের বাস্তবতাই আস্তে আস্তে কখন গেছে বদলে । যে `ভারচুয়াল' পৃথিবীর সঙ্গে আমরা পরিচিত হতে চলেছি তার স্মৃতি সত্ত্বা ভবিষ্যৎ আমাদের অপরিচিত । কিন্তু কিভাবে কাজ করে এই অ্যান্টিডিপ্রেস্যান্ট যে সব পেয়েছির পশ্চিম দুনিয়ায় অর্ধেক লোক এইসব ওষুধ খেয়ে আর বাকি অর্ধেক না খেয়ে পস্তায় ? একটা ছবি দিয়ে ব্যাপারটা বোঝান যাক ।






    কবিরা যাই বলুন অনুভূতির বাসা হৃদয়ে নয় মগজে । আমাদের মস্তিষ্কে কোটিসংখ্যক স্নায়ুকোষের কাজ বিবর্তনের নিয়ম অনুযায়ী বিভিন্ন স্তরে ভাগ করা । একদলের দায়িত্ব শুধু আমাদের দেহযন্ত্রটাকে চালানো, সে হিসাবে আমার-আপনার সঙ্গে কুকুর-বেড়ালের পার্থক্য সামান্যই । অন্যদিকে আছে বিশেষ ধরনের স্নায়ুরা, যাদের কাজ বাইরের জগত্টাকে অনুভব করা, তথ্যগুলো অভিজ্ঞতার সঙ্গে মিলিয়ে দেখা এবং সৃষ্টি করা সেই প্রতিফলন যাকে আমরা নাম দিয়েছি চেতনা । চেতনার যে অংশটা বোধগম্য সেটা পরিস্থিতির সঙ্গে পরিবর্তনশীল । সুখানুভূতি, উত্তেজনা, একঘেয়েমি, বিরক্তি বা বিষন্নতা - আমরা এগুলোকে বলি মেজাজ বা মুড কিন্তু স্নায়ুদের কাছে সেগুলো স্রেফ রাসায়নিক বিক্রিয়া । স্নায়ুরা নিজেদের মধ্যে সংকেত পাঠায় একধরনের সূক্ষতম ক্ষরণের মাধ্যমে । এদের সাধারণ নাম নিউরোট্রানসমিটার, এক স্নায়ুর প্রবাহ অন্য স্নায়ুতে পৌঁছে দেওয়া এদের কাজ । এদের মধ্যে কয়েকটি যেমন সেরোটনিন এবং নরএপিনেফ্রিনের পরিমান কম হলেই বাস্তবের ছবিটা ধূসর মনে হয়, বেশি হলেই রং ধরে । মেজাজ বদলায় বটে কিন্তু বাস্তব তো বদলায় না । স্নায়ুর সংযোগস্থলগুলিতে যদি কোন প্রকারে অতিরিক্ত পরিমান সেরোটনিন বা নরএপিনেফ্রিনের আমদানি করা যায় তাহলেই হয়ত অফিসের একঘেয়েমি, গিন্নির হাঁড়িমুখ বা প্রতিবেশীর নতুন গাড়ি অতটা আর অসহ্য লাগবে না । তার বদলে হয়ত মনে পড়বে নতুন কোনো সম্ভাবনা, ছেলেমেয়েদের নিয়ে কোথাও বেড়াতে যাবার প্ল্যান বা অফিসের নতুন পরিচিত কোনো বন্ধুর কথা । মানুষ হয়ে উঠবে আশাবাদী, আশঙ্কা ও সাবধানতার জায়গা নেবে দু:সাহস, কাজে উত্সাহ আসবে, বাড়বে উত্পাদনশীলতা । এই ছবিটা অসত্য নয় কিন্তু অর্ধসত্য । আমাদের মধ্যে যে স্বল্পসংখ্যক লোক সত্যিসত্যিই কারনহীনভাবে অবসাদগ্রস্ত (এন্ডোজেনাস ডিপ্রেশন) অথবা যেসব মহিলার প্রসব-পরবর্তী অবসাদের (পোস্টপার্টাম ডিপ্রেশন) শিকার তাদের কাছে এইধরনের চিকিত্সার সুফল সত্যিই অসাধারন । যদি নিউরোট্রানসমিটার ভারসাম্য উলটে যাওয়াই অবসাদের প্রধান কারণ হয় তবে ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে ওষুধ নিশ্চয় খাওয়া উচিৎ । তাই বলে ব্যর্থ প্রেমে, কাজের হাঙ্গামায় বা ছেলেমেয়েরা বখে গেলে যে স্বাভাবিক মন খারাপ (রিয়াক্টিভ ডিপ্রেশন) তার চিকিত্সায় ওষুধের চেয়ে বেশি দরকার সহৃদয়তা বা স্রেফ সময় । কিন্তু ওগুলো যদি দুস্প্রাপ্য হয়ে দাঁড়ায় আর জীবনযুদ্ধে যাবতীয় চোট-আঘাতের জন্য সবাই নিউরোট্রানসমিটারের ঘাড়ে দোষ চাপিয়ে ডাক্তারের শরণাপন্ন হয় তাহলে ? অথবা যদি প্রচারমাধ্যমে এসব ওষুধকে দেখানো হয় যেন হতাশার অ্যান্টিডোট, ব্যক্তিত্ব পালটে দেওয়ার মন্ত্র বা সব-পেয়েছির দেশের ওয়ান-ওয়ে টিকিট তাহলেই ব্যাপারটা ঠিক বৈজ্ঞানিক থাকে কি ?

    দু:খের কথাটা এই যে বিজ্ঞানের পতাকায় সর্বদাই বেনের দাঁড়িপাল্লা আঁকা থাকে । প্রধানত: আমেরিকান কয়েকটি ফার্মাসিউটিক্যাল সংস্থা ১৯৮৭ থেকে ১৯৯০ সালের মধ্যে পর পর অনেকগুলো এস এস আর আই (সিলেক্টিভ সেরোটনিন রিআপটেক ইনহিবিটর) ওষুধ বাজারে চালু করল । বলা হল এরা নাকি একেবারে নিরাপদ, এতে ঘুম পায়না, দিনে একবার খেলেই চলে, অন্যান্য পার্শ্বক্রিয়াও নাকি কম । ১৯৮৯ সালে নিউজউইক ম্যাগাজিনের মলাটে দেখা গেল প্রকান্ড এক প্রোজ্যাক ক্যাপসুলের ছবি, ১৯৯৩ সালে এক বেস্টসেলার বইতে লেখক কল্পনা করলেন ভবিষ্যতে `কসমেটিক ফার্মাকোলজি' চালু হবে, মানুষ খাবে নিজেকে নিখুঁত করে তোলার জন্য, শুধু রোগের চিকিত্সার জন্য নয় । ১৯৯৭ সালে বহুকালের নিয়ম বদলে ওষুধপত্রের সরাসরি বিজ্ঞাপন শুরু হল, কলপ, টুথপেস্ট ও হেয়ার রিমুভারের পাশাপাশি । ওষুধ কোম্পানিরা যা শুরু করলেন তার নাম দেওয়া চলে `বিজ্ঞাপনে আম' (কোতলে আম অনুসরনে) বা `লে অ্যাডভার্টাইজমেন্ট' । টেলিভিশনের পর্দা জুড়ে ঘন্টায় ঘন্টায় দেখা যেতে লাগলো গোমড়ামুখো লোকজন কেমন বড়ি খাচ্ছে আর হাসিতে ঝলমল করে উঠছে । ফিরে আসছে বিগড়ানো প্রেমিক প্রেমিকারা, গোটা পরিবার ভাসছে সুখস্বাচ্ছন্দ্যের স্রোতে । ইন্টারনেটে ওষুধ পাওয়া যেতে লাগলো, `ভারচুয়াল' ডাক্তারবাবুরা পরামর্শ দেবার জন্য হাজির হলেন । বছরখানেকের মধ্যেই দেখা গেল পাগল এবং বোবাকালাদের বাদ দিয়ে পশ্চিম দুনিয়ায় সক্কলে দু:খহরন বটিকার সঙ্গে পরিচিত । যেহেতু সাদা মানুষের স্বাভাবিক প্রবৃত্তিই হল প্রতিটি সমস্যার জন্য অ্যালগোরিদম বা নিয়মমাফিক সমাধান খোঁজা, তারা মনখারাপ বিদায় করার এই মোক্ষম মওকা পেয়ে বর্তে গেল । সরকারি সংস্থা, ডাক্তার এবং পাবলিক- বিভিন্ন উপায়ে সক্কলের মগজ ধোলাই করে দেওয়া হল । আমি তাদের মধ্যে একজনকে প্রভু বুদ্ধের জন্য দু:খ করতে শুনেছিলাম । রাজকুমার সিদ্ধার্থের কেসটা নাকি পাক্কা অ্যাডোলেসেন্ট ডিপ্রেশন, সে আমলে প্রোজ্যাক পাওয়া গেলে বেচারাকে এত কষ্ট করে দু:খের কারন ও দু:খমোচনের উপায় খুঁজে বেড়াতে হতনা । ওইরকম জিনিয়াস রাজনৈতিক দিকে বিকশিত হলে নাকি ভারতবর্ষের চেহারাই যেত বদলে । ভদ্রলোক ইয়ার্কি মারছিলেন না ।

    নব্বইয়ের দশকের প্রথম দিকে যখন দেশের এক চতুর্থাংশ লোক নিয়মিতভাবে `হ্যাপি পিল' ব্যবহার রপ্ত করেছে, শেয়ার বাজারে যেন নতুন উত্সাহের জোয়ার দেখা দিল । দেখা গেল বিষন্নতা বেশ চড়া দামে বিকোচ্ছে । তথ্যপ্রযুক্তির ঘোড়ায় সওয়ার হয়ে মানুষ অর্থনৈতিক ঝুঁকি নিয়েই চলেছে, বাজারের আত্মবিশ্বাসেরও কোন সীমা পরিসীমা নেই । ঢালাও ঋণের ব্যবস্থা আছে, সাধারণ মানুষেরও নাগালে এসেছে সেইসব বিলাস যা দুদিন আগেও রাজা-জমিদারদের একচেটিয়া ছিল । এসব করতে গিয়ে সময় কমছে কিন্তু বাড়ছে পরিচিতির ব্যাপ্তি - অনেকেই চেনা কিন্তু কেউই ঠিক জানা নয় । মোবাইলে, ইটারনেটে এসেছে নতুন এক আবিষ্কারের যুগ, সাইবারস্পেসে যতটা সময় কাটছে, মুখোমুখি তার শতাংশও নয় । এক দশকের মধ্যে আমাদের চেনা বাস্তবতার খোল-নলচে পুরোপুরি বদলে গেল । এর সঙ্গে দু:খহরন বটিকার কোনো সোজাসুজি সম্পর্ক দেখানো মুশকিল হলেও পরিসংখ্যান বলছে গরীবগুর্বোরা নয় শিক্ষিত, পেশাদার, প্রকৌশলী এবং বুদ্ধিজীবীরা, যারা কিনা কর্পোরেট দুনিয়ার কর্ণধার- তারাই এসব ওষুধ ব্যবহার করে সবচেয়ে বেশি । অবসাদ চেপে ধরার আগেই তাকে যে কোনো উপায়ে নির্মূল করতে চায় । যেখানে উত্তেজনা এবং দুশ্চিন্তা সবচেয়ে বেশি, যেমন কিনা ওয়াল স্ট্রিট, সেখানে লগ্নিকারী, বিশ্লেষক ও দালালদের পক্ষে এই ওষুধ অমৃততুল্য । বেলুনটা যখন ফাটবে তখন দেখা যাবে, আপাতত: যতক্ষন ফোলে, ফুলিয়ে যাও- এই নব চার্বাকপন্থায় এখন সবার অটল বিশ্বাস । স্কুলকলেজে বাচ্চারা একটু বিগড়োতে শুরু করল কি কাউনসেলরের ডাক পড়ল আর ওষুধপত্র চালু হল । আমরা যারা বয়:সন্ধির সেইসব যন্ত্রণামেদুর দিনগুলোর কথা মনে করতে পারি, তার ওষুধ ছিল বইয়ের পাতায়, বন্ধুর সান্নিধ্যে, মায়ের ভালোবাসায় আর বাবার ধমকানিতে । ওইসব সাবেক দাওয়াই এখন দুস্প্রাপ্য, তার উপর ভরসা না করে এরা মগজের কেমিস্ট্রি বদলাতে লেগে গেল । স্বাভাবিক ভীতি ও আশঙ্কা যা এই কিনা জুয়াড়ি দুনিয়ায় আমাদের অত্যধিক ঝুঁকি নিতে বাধা দেয়, সেটাকে এরা ওষুধ খেয়ে সামলাতে চাইল । শুধু রোগের চিকিত্সা নয় এভাবে বুঝি বদলানো যায় জীবনযাপনের ছন্দ, বাড়িয়ে তোলা যায় বৈভব আর সাফল্য । কেননা বিজ্ঞান নাকি তাই বলছে ।

    মুশকিল এই যে বিজ্ঞান তা বলছে না কিন্তু বিজ্ঞানের সঙ্গে মানুষের একমাত্র যোগসূত্র এখন এক আগ্রাসী ও সর্বময় প্রচারমাধ্যম যাদের প্রেম স্পনসরশিপে, বিজ্ঞানে নয় । সত্যি কথাটা এই যে ডাক্তারি পত্রিকাগুলোয় গত কয়েক বছর যাবৎ এই জাতের ওষুধ নিয়ে নানা বেয়াড়া খবর আসছে তো আসছেই । দেখা যাচ্ছে যে এইধরনের ওষুধের নানারকম বিদঘুটে পার্শ্বক্রিয়া আছে, বিশেষত: ওষুধ খাওয়া বন্ধ করলে । সবচেয়ে সাংঘাতিক কথা অল্পবয়সীদের উপর এর বিপরীত প্রতিক্রিয়া হতে পারে, বিশেষত: চিকিত্সা শুরুর প্রথম দিকে । মার্চ ২০০৪, এফ-ডি-এ এক সাধারন সতর্কবার্তায় জানালেন যে এই জাতীয় ওষুধ কারো কারো ক্ষেত্রে কমানোর বদলে বাড়িয়ে দিতে পারে অবসাদ ও আত্মহত্যার প্রবণতা । ওষুধ বন্ধ করার সাথে সাথে দেখা দিতে পারে নানা উদ্ভট উপসর্গ । অবসাদের জায়গা নিতে পারে অকারন ক্রোধ বা হিংস্রতা, যার পরিচয় আমরা পাচ্ছি স্কুলকলেজে গুলি চালানোর ঘটনাগুলোয় । দেখা গেল যেসব গবেষনার উপর ভিত্তি করে অর্ধেক দুনিয়াকে দু:খহরন বটিকা ধরিয়ে দেওয়া হয়েছে সেগুলোয় নানারকম চালাকি আছে, তারা বৈজ্ঞানিকভাবে প্রথম শ্রেনীর নয় । আর সবচেয়ে বড়ো কথা এইসব গবেষণার সুবিধাজনক অংশগুলো ফেনিয়ে তোলা হয়েছে, আশঙ্কাজনক অংশগুলো দেওয়া হয়েছে ধামাচাপা । এতদিন বাদে তাই হাওয়া ঘুরেছে, উকিল, মোক্তাররা ঝাঁপিয়ে পড়েছেন, ইন্টারনেটে গালাগালির ঝড় বইছে । এই জাতীয় ওষুধের পৌষমাস বোধহয় খতম কিন্তু মানসিকতায় কোনো স্থায়ী পরিবর্তন এসেছে বলে মনে হয়না । বিজ্ঞান নয়, বিজ্ঞানের রাংতা মোড়া নতুন কোনো বাণিজ্যিক ভেল্কির অপেক্ষায় আছে মানুষ ।

    আসল কথাটা কারো মনে নেই । আমাদের যতটা আনন্দের দরকার ততটাই বিষন্নতার । যন্ত্রনা ছাড়া যে সৃষ্টি হয় না আর সৃষ্টির আকুতিই আমাদের রক্তের ভিতরকার সেই বিপন্ন বিস্ময় । সেই আমাদের ক্লান্ত করে, ক্লান্ত করেই চলে । আমি যদি বিল গেটস হতাম তবে কাগজে, টিভিতে ইন্টারনেটে সারাদিন প্রচার করতাম- ওহে ঘানিতে জোতা মানুষেরা শোনো, বড়ি খাবার আগে তাকাও কবিদের দিকে, শিল্পীদের দিকে । ওদের কথা কি একেবারে ভুলে গেছো ? জানি কবিতার স্টক ওঠেনামে না, নিটোল শিশিরকণার মত ছোটোগল্প সুদে বাড়ে না, কিন্তু দোহাই তোমাদের, মগজধোলাই করাবার আগে ওদের একটা সুযোগ দিয়ে দেখোই না । দস্তয়েভস্কি থেকে কাফকা, চ্যাপলিন থেকে ঋত্বিক, গ্যঁগা থেকে রামকিংকর, রবীন্দ্রনাথ থেকে জীবনানন্দ- দেখো এইসব দু:খী মানুষেরা তাঁদের অতল গহীন বিষন্নতাকে বড়ি খেয়ে সামাল দেননি বরং অন্ধকারের উত্স থেকে উত্সারিত আলোর খোঁজ করেছেন । আমাদের সুখ আর দু:খের মাঝে যে আলো-আঁধারি সেইখানেই গুণীরা রেখে গেছেন আমাদের ধাঁধার জবাব, লোহার খাঁচার চাবি, ভূতের ঘানি অচল করার জাদুমন্ত্র । সেই মন্ত্রের নাম সৃজনশীলতা, যা কিনা এখনো মুক্ত, এখনো দুর্বার, ওয়াল স্ট্রিটের নিলামের তালিকায় এখনো তার নাম ওঠেনি । মগজের কেমিস্ট্রি পালটে আর ভারচুয়াল দুনিয়ার ভুয়ো উত্তেজনায় মনটাকে চুবিয়ে রেখে তুমি হারিয়ে ফেলোনা তোমার সেই একান্ত সম্পদ । এই বেলা সাবধান হও, তোমার অবহেলিত বন্ধুর হাত ধরো । বড়ি তো আছেই, বহুরূপে দড়িও মাথার উপর ঝুলছে, আধ্যাত্মিক মুষ্ঠিযোগেও আর শানাচ্ছে না । হয়ত একটু কবিতা, একটুখানি সৎ সাহিত্য অনায়াসে তোমার মন রাঙিয়ে দেবে- নিখরচায়, নিবিড় আত্মবীক্ষণে ।


    তথ্যসূত্র :

    (1) বিবংযয ছত্ররু লঞঠত্ঠজ়্ছঞঠধত্র ধী ব্‌ংগ ত্রিঞঠরুংংঋশংযযছত্রঞ ছত্ররু ত্রিঞঠৃযষ্বচ্ধঞঠব ংঔংরুঠবছঞঠধত্রয: ঙচ্ছৃঞংশ ফ্ঝ. ছৈঞঞংশত্রয ধী ত্রিঞঠৃযষ্বচ্ধঞঠব ছত্ররু ত্রিঞঠরুংংঋশংযযছত্রঞ লঞঠত্ঠজ়্ছঞঠধত্র ঠত্র ংঔংরুঠবছঠরু, ১৯৯৫-১৯৯৮

    (পরবাস ৩৯, জুন, ২০০৭)

  • এই লেখাটি পুরোনো ফরম্যাটে দেখুন
  • মন্তব্য জমা দিন / Make a comment
  • (?)
  • মন্তব্য পড়ুন / Read comments