তখন সারা বাংলা সুমন-জ্বরে আক্রান্ত, আমিও যে আপ্লুত হব তাতে আর আশ্চর্য কী ? কিন্তু তাতে করে আমার ওস্তাদের তানা-দেরের আসলিয়ত নিয়ে প্রশ্ন উঠবে কেন ? বন্ধুকে মৃদু প্রতিবাদ জানাতেই সে বললো - বলিস কি রে ? এ তো একদম আমাদের রোজকার জীবন নিয়ে গান । এভাবে আমাদের জীবনের কথা, এই রাস্তা, ভিড়, ট্রাফিক জ্যাম আমাদের রোজকার জীবন নিয়ে কথা কেউ এমন করে বলতে পেরেছে ? আমি বললাম সঙ্গীত যাতে আমাদের এই প্রাত্যহিকতার ভার বহন করতে পারে তার জন্য দরসপিয়া কি তানসেনের জমানার বিশেষ হেলদোল ছিল না, নইলে মিনিবাস না হোক, ল্যাণ্ডো কি ফিটন গাড়ি নিয়ে তাঁদের মধ্যে কেউ-কেউ এক-আধ পিস গান লিখে ফেলতে পারতেন বলেই আমার বিশ্বাস । বাউল গান শোননি ? ও মন, যদি চড়বি রে সাইকেল ।
তাছাড়া সঙ্গীতের ধারা বহতা নদীর মতো, প্রবাহই জীবন । থেমে গেলেই তা বদ্ধ ডোবা । ভারতীয় সঙ্গীতের এই বহতা ধারায় নায়ক গোপাল, আমীর খসরু, হুসেন শাহ (সর্কী), তানসেন, বাংলা গানে রবীন্দ্রনাথ কি রজনীকান্ত এমনকি আজকের এই কনটেম্পোরারি মিউজিক (তখনও জীবনমুখী কথাটা চালু হয়নি । যেমন আধুনিক গানকে আধুনিক উপাধি পাবার জন্য প্রায় তিরিশ বছর অপেক্ষা করতে হয়েছিল, ততটা না হলেও, জীবনমুখী কথাটা ১৯৯৬-এর আগে আমি দেখিনি ।) কেউই বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয় । প্রতিভা ও আন্দোলন অনেকাংশে কালনির্ভর । তাছাড়া, কবির সঙ্গীতচিন্তা খুলে দেখ - কবি নিজে বারবার বলছেন পুরাতন শিল্পকীর্তির ওপর দাগা বুলিয়ে যাওয়ার মতো, পুনরাবৃত্তি শিল্পকলাই নয় - শিল্পের অপমৃত্যু, ধযযঠীঠবছঞঠধত্র ।
আমার বন্ধুটি খাপ্পা হয়ে বলল, হয়েছে, হয়েছে । বাঙালির ছেলে সব সব কথায়
রবিঠাকুরকে টেনে আনে । আমি বললাম কি করব বল, শঙ্খ ঘোষের লেখার সেই কবিদের আড্ডার গল্পটা মনে আছে তো ? লোডশেডিং হল, আলোচনা, কবিতা নিয়ে গরম আলাপচারি থামিয়ে দিয়ে কোনো এক কবির গলায় উঠে এল গান - তাঁরই গান, যার বিরোধিতা এতক্ষণ চলছিল । তাহলেই দেখ, তাঁকে বাদ দিয়ে বাংলা গানের আলোচনা কিভাবে সম্ভব ?
আর তুমি যে নবীনতার প্রশংসায় পঞ্চমুখ - সে নবীনতাও তো একদিন পুরাতন হয়ে যাবে, নবীন কথাটাই খুব আপেক্ষিক । যখন লোকে ছন্দ-প্রবন্ধ কি তারও আগে সামগানকে ধ্রুব-পদ্ধতি বলে জেনে এসেছে তখন ধ্রুপদ ছিল গতানুগতিকতার বিরুদ্ধে প্রথম পদক্ষেপ । আচার্য ক্ষিতিমোহন সেনের লেখায় দেখেছি - ধ্রুপদের আদি পর্বে তাকে মেয়েদের গান বলে যথেচ্ছ হ্যাটা করা হয়েছে ।
পরে সপ্তদশ শতকে যখন ধ্রুপদ হিন্দুস্তানি সঙ্গীতের সম্রাটের আসনে আসীন, তখন খেয়াল-রীতি এসে সেই একাধিপত্যে থাবা বসাল । ব্যাপারটা তখনও সহজ হয়নি । আমাদের দেশে সঙ্গীতকে জাতিচ্যুত করতে হলেই তাকে বাঈজিদের গান বলে চালিয়ে দেবার রেয়াজ আছে, সে অপবাদ প্রথমে ধ্রুপদের পরে খেয়ালের আরো পরে টপ্পা-ঠুংরির ভাগ্যে জুটেছে । গায়ক ওস্তাদরা কিছু সকলেই মহানুভব হন না । একে অন্যের গানকে সুযোগ পেলেই দুয়ো দিয়েছেন । কিন্তু এই সব মুভমেন্ট যুগে যুগে সময় তার নিজের প্রয়োজনে সৃষ্টি করেছে । ধ্রুপদের ভারি চাল জায়গা করে দিয়েছে খেয়ালকে, খেয়াল জায়গা দিতে বাধ্য হয়েছে ঠুংরিকে । রবিঠাকুরকে আবার উদ্ধৃত করতে হয়, আসিবে ফাল্গুন পুন, তখন আবার শুন, নব পথিকেরই গানে, নূতনেরি বাণী । এ জিনিষ ঘটবেই, ঘটতেই থাকবে ।
বন্ধুটি বলল - কিন্তু রবীন্দ্রনাথের গানে তাঁর সময়ের কি প্রতিফলন ঘটেছে ?
আমি বললাম - সবচেয়ে বড় ঘটনা, এই উপমহাদেশের স্বাধীনতা আন্দোলন, তার ছাপ ফেলে গেছে - স্বদেশ নামে তাঁর একটি পর্যায় এর রচনায় । একই কবির রচনা করা দুটি গান দুটি প্রতিবেশী স্বাধীন রাষ্ট্রের জাতীয় সঙ্গীত, প্রাসঙ্গিকতার এর চেয়ে বড় উদাহরণ আর কি দেব, তাও, জানো তো, দুর্জনে বলত, উনি সবকিছুতেই গান ফেঁদে ফেলতে পারেন, টিপকল বসানো থেকে, চা-এর আসরের উদ্বোধন, কিংবা গার্লস গাইডদের জন্য প্রার্থনা সঙ্গীত । তাছাড়া ছয়রাগ-ছত্রিশ রাগিণী, বাইশ শ্রুতির পরম্পরা থেকে কেউ একলাফে মিনিবাসে ওঠে ? রবীন্দ্রনাথ তো এই দুয়ের মধ্যে সেতু । তাঁর সবল সমর্থনে ভাবের রাগিণীর, যাকে বলে ডকুমেন্টেড পদক্ষেপ সঙ্গীতসভায় । যদি মধ্যমের স্থলে পঞ্চম বহাল রাখিলে গানের ভাব রক্ষা পায় তবে মালকোষ মরুন বা বাঁচুন আমি পঞ্চমকেই বহাল রাখিব - কথাটা ঠিক এইরকমের না হলেও কাছাকাছি বটে । তা তুমিও তো এককালে সঙ্গীত বৈতরণীতে সাঁতার দিয়েছ । শীতের সকালে রোদে পিঠ দিয়ে শম্ভুনাথ ঘোষের বই থেকে ঝেড়ে টুকেছে - রবীন্দ্রসঙ্গীতে কথা ও সুরের হরগৌরীমিলন, মনে নেই ?
- এই হরগৌরীমিলনটা ঠিক কি বস্তু আমি এখনও বুঝি নি । তুমি বোঝো ?
আমি ভাবলাম, বুঝেছি কি বুঝি নাই, সে তর্কে কাজ নাই, ভালো আমার লেগেছে যে রইল সেই কথাই, বলে ল্যাঠা চুকিয়ে দিলে বেশ হয় । কিন্তু আমাকে বোধহয় একটু বক্তৃতার নেশায় পেয়েছিল সেদিন । বললাম - বুঝি, এককথায় বলি এরকম হিম্মত নেই, কিন্তু এতদিন ধরে যে গানের প্রেমে মজে আছি তাকে কি একেবারেই জানিনে হে বলে নস্যাৎ করতে পারি ?
- আহা, তা নয়, কথা অনুযায়ী সুর ও সুর অনুযায়ী কথা, এতো যেকোনো ভালো গানেরই মর্মকথা । আলাদা করে রবীন্দ্রনাথের কথা কেন বলতে হবে ?
- আচ্ছা তোমার কবির সেই গানটির কথা মনে আছে ? আজি ঝরোঝর মুখর বাদর দিনে ? একবার সুরটি শোনাও তো ।
বন্ধুটি যে সুর গুনগুন করল তা বহুশ্রুত ২/২ ছন্দের ।
আমি বললাম, এই গানে যে বৃষ্টির দিনের ছবি আঁকা তার একটা বর্ণনা দাও তো ।
আমার বন্ধু কথার আঁচড়ে, একটি খ্যাপা, ঝোড়ো মেঘের আনাগোনায় বিপর্যস্ত দিনের ছবি আঁকলো । অবশ্যই, সেই চঞ্চল, সজল পবন ও উদভ্রান্ত মেঘের কথাটি বলতে ভুলল না সে ।
আমি বললাম এবার এর সুরান্তরটি মনে কর । ২/৪/২/৪ ছন্দের, অনেক ধীরলয়ে গেয় সেই সুরটি মীড়ের ব্যবহারে, লয়ের অলস-মন্থর চলনে আরেকটি অন্যরকম বর্ষার দিনের ছবি আঁকে । এইদিনে মেঘ উদভ্রান্ত নয়, উদাস । এই শব্দ পরিবর্তনটি আমাকে প্রথমে চমক লাগিয়েছিল যখন আমি ক্লাস এইটের ছাত্র ।
আমার বন্ধু বলল - তা সে এরকম এক-আধটা সুন্দর প্রয়োগ সব গীতিকার ও সুরকার করে থাকেন । তার জন্য হরগৌরীমিলনের মতো এরকম ভারি তত্ত্বের অবতারণা করতে হবে কেন ?
আমি বললাম তত্ত্ব তো একটা আছেই । আমাকে বিস্মিত করে কিছু কিছু গানে তার সার্থক প্রয়োগ । যেমন শ্যামল ছায়া, নাইবা গেলে-র সেই আকুতি, যেন গান থামিয়ে দিয়ে স্রেফ এসরাজ বাজিয়ে গেলেও শোনা যাবে । দাও হে, হৃদয় ভরে দাও গানে ভরে কথাটিতে খেয়ালের পরম্পরার প্রত্যাশা অনুযায়ী সম-এ আসে না, আসে ফাঁকে । এতো আর দাও বলে ইউনিয়নের ডিমাণ্ড নয়, ভক্তের ভিক্ষা । আমার বিশ্বাস রবীন্দ্রনাথের সর রচনায় এই ভাবের আবহ-নির্মাণের পিছনে একটি সুচিন্তিত প্রক্রিয়া আছে - ইট, সিমেন্ট, বালি, লোহা দিয়ে যেমন বাড়ি তৈরি হয়, শুধু এক খেয়ালি শিল্পীর হৃদয় নয়, মস্তিষ্কও সমধিক ক্রিয়াশীল এইসব সৃষ্টিতে ।
আমার বন্ধুটি বলল, কিন্তু ভাবের রাগিণীর এই প্রক্রিয়া তো আমাদের ঐতিহ্যের অন্তর্গত । বিলাসখানি টোড়ির বিষাদ, বসন্ত কি বাহারের উল্লাস এতো আর কবির আবিষ্কার নয়, যেমন নয় ভৈরবের প্রভাতী আলাপ । আমি বললাম ভৈরবের কোমল স্বরগুলি যে প্রকৃতির প্রভাতী আলোর সাঙ্গীতিক প্রতিরূপ সেটাও কবির নজর এড়ায় নি । তাছাড়া এই টাইম-স্কেল থিয়োরিকে তো তিনি অস্বীকার করেননি । তাঁর গানে সন্ধ্যার আবহ সৃষ্টিতে পূরবী, শ্রী, ইমন-কল্যাণ এইসব রাগের ব্যবহারই তার প্রমাণ । তেমনি সকালের আবহে ললিত, রামকেলি, বিভাস, কালাংড়া- কত বলব । ভৈরবীর কথা না-হয় বাদই দিলাম ।
কিন্তু শুধু সময়ের ভিত্তিতে নয়, মানবহৃদয়ে নানা দিনে, নানা ঋতুতে, জীবনের নানা সুখে-দু:খে, উথ্থান পতনে, মিলন-বিচ্ছেদে নানা বিচিত্র ভাবের লীলা চলে যা সাদা-কালোর মধ্যবর্তী নানা রঙের আভাস দিয়ে যায়- তাকে সুরের মাধুরীতে ধরবার একটা সুন্দর ও সার্থক প্রচেষ্টা আমি তাঁর গানে পেয়েছি বার বার । ভারতীয় সঙ্গীতের প্রচলিত বর্ণালির মিশ্রণ ও পুন:প্রয়োগেই তিনি তাঁর গানের ভাবের রাগিণীর ঠাট তৈরি করেছেন । অল্পবয়সে, যে সব গানে নাটকীয়তার এলিমেন্ট ছিল সেগুলি ধরতে পারতাম, আবার অনেক গানে তার অনুপস্থিতিবশত: আমার চোখ এড়িয়ে গিয়ে থাকবে । পরে বয়স ও অভিজ্ঞতা অনেক গানেই সেইসব না-দেখা ঝরোখা খুলে দিয়েছে । এসেছিলে তবু আস নাই - গানটির সঞ্চারিতে যে পাতায় পাতায় টুপটাপ বৃষ্টিবিন্দুর পতনের শব্দ শোনা যায় আবিষ্কার করে কৈশোরে পুলকিত বোধ করেছিলাম, পরে দেখলাম অন্তরার, সেই উদাসীনতা সত্য কিনা - এই সংশয়ের দোলা এসে গিয়েছে সুরের চলনেও । আর সবশেষে এক শরৎ এর সকালে রোদ্দুরে দাঁড়িয়ে, পিছনে নীপবীথিকায় রৌদ্রছায়া যায় খেলে, গাইতে গাইতে অনুভব করলাম অণুকোমল ঋষভের লীলা - যা কিনা শরত্কালের আলোর মতোই মিঠেকড়া, বৈশাখ আর আষাঢ়ের মাঝখানে কোথাও । শুদ্ধ রে-র থেকে নিচু, অথচ, কোমল রে-র থেকে উঁচুতে । এইটুকু বুঝতে আমায় এতদিন অপেক্ষা করতে হল । এর পরে এই গান গাইবার আর সাহস হচ্ছে না - এটাই যা দু:খ । অতিকোমল, অণুকোমল কি আমার বশ ?
এখন কথা হল, বাইশ শ্রুতির পরম্পরা আমাদের ঐতিহ্যের অংশ কবির জন্মের অনেক আগে থেকে । কবিও কিছু তেইশ তম শ্রুতির অবতারণা করেন নি । কিন্তু দিনান্তবেলায় শেষের ফসল - গানের অণুকোমল রে একটি সুগভীর নির্লিপ্তির ভাব নিয়ে আসে - একথা বুঝতে হয়ত আমাদের সেই বয়স অবধি অপেক্ষা করতে হবে ।
কথাকে যাতে পদে পদে তালের প্রতি আনুগত্য রাখতে গিয়ে ভাবের রাশ টেনে রাখতে না হয় তার জন্য মুক্তছন্দের গান (ও দেখা দিয়ে যে চলে গেল), আবার তেওড়া তাল কেটে ঝম্পক (এই লভিনু সঙ্গ তব), কিংবা তাতে ২।২ করে মাত্রা জুড়ে নবতাল, একাদশী তাল, আবার চেনা তালের দায়রার মধ্যে অনেকটা বোল বানানোর শৈলীতে কথার তান, সব প্রকরণের প্রয়োগ দেখা যাবে তাঁর সুর সৃষ্টিতে ।
আজকের কায়দায় যদি কেউ আমাকে রবিঠাকুরের টপ টেন বাছতে বলে তাহলে সেই সঙ্কলনে তোমারে জানিনে হে, তবু মন তোমাতে ধায় - গানটি স্থান পাবে । ঝাঁপতালে নিবদ্ধ এই গানের অন্তরায় কবি বলেছেন --
দুটি ভিন্নসুর দিয়ে যেন ঈশ্বরের চিরনব মাধুরীর কথাই বলা হচ্ছে । এই চিরনব মাধূরীর নব নব প্রকাশ এখানেই শেষ হল না, পরের পদাংশে, আমি না জেনে প্রাণ সঁপেছি তোমায় - এখানে, আমি না জেনে - অংশটির দুবার দুভাবে গেয়ে যেতে হয়, প্রাণ সঁপেছি তোমায়, এই অন্তিম পদাংশে ।
এর পরের তুকে
গাইবার সময় তুমি জ্যোতির জ্যোতি পদাংশটি মধ্য ষড়জ থেকে মধ্যম অবধি উঠে যায় - যেন সেই উদিত জ্যোতির আভাস । আমি অন্ধ আঁধারে - বলতে বলতে সুর আবার নেমে আসে মধ্য ষড়জে - এ যেন আমার হৃদয়ের জমাট বাঁধা অন্ধকার ।
আবার - তুমি মুক্ত মহীয়ান-গাইতে গাইতে সুরের নিরিখে ষড়জ থেকে ধৈবতের একটি উদার মীড় যেন সেই মুক্ত-মহীয়ান সত্ত্বার উদার বিস্তৃতির কথা আমাদের মনে করিয়ে দেয় ।
আমি মগ্ন পাথারে - অংশে পাথার শব্দের সুর যোজনায় পধা মপা জ্ঞা ঋ সা জাতীয় সুরসঙ্গতিতে আক্ষরিক অর্থে পাথারের ঘূর্ণিস্রোতের চোরা টান । তারও পরে,
তুমি অন্তহীন- কোমল ধৈবত থেকে তার সপ্তকের কোমল ঋষভ হয়ে তারার সা-এ স্থিত হয়, যেন গায়ককে মাথা উঁচু করে দেখতেই হবে সেই অন্তহীন, মহিমাময় প্রকাশ ।
আবার আমি ক্ষুদ্র দীন-অংশে সুর নেমে আসে দীন এই আমির মাপে, তোমার ও আমার তফাৎ এক সপ্তকের তফাতে সুপ্রতিষ্ঠিত হল, কিন্তু এহ বাহ্য, তুমি যে প্রেমের প্রবল আকর্ষণে আমাকে তোমার দিকে টানছ তা আমাদের এক অপূর্ব মিলনের বাঁধনে বেঁধেছে - দীন ও হীন (অন্তহীনের - শব্দাংশ) একধরনের সমতা আছে চলনে, এই চমক কাটতে না দিয়েই পরের পঙ্ক্তি তে কবি বলছেন - কি অপূর্ব মিলন তোমায় আমায় ।
বন্ধু এবার কিছুক্ষণ চুপ করে থাকে । পরে আস্তে আস্তে বলে, মনে হয় তোমার কথাই ঠিক । আমারও, মহারাজ, এ কী সাজে -গানটায় এরকম মনে হয়েছিল । আমাদের যেন ওপরে তাকিয়ে দেখতে হয়, মহারাজের সেই মহিমা । তারায় গাইতে গেলে মাথা একটু উঁচু করতেই হয় । আবার সেই মহারাজই যেন নেমে আসেন আমাদের হৃদয়ে - গা থেকে সা -এ নেমে আসেন, যেন উদ্ভাসিত করে তোলেন হৃদয় ।
অন্তরায় - সকল মম দেহ-মন-তারার গা থেকে পা এর মধ্যে আন্দোলন যেন ঈশ্বর-সান্নিধ্যের তীব্র আনন্দ, এরকম আমারও মনে হয়েছে ।
বন্ধুকে বললাম -দূর ছাই, আসলে আর কিছুই বললাম না । এই ছায়াবাজি আর চালানো যাচ্ছে না । আপনারা সর্তক পাঠক, আপনাদের চোখে ধূলো দেওয়া অত সহজ নয়, আপনারা নিশ্চয় এতক্ষণে ধরে ফেলেছেন আমার এই পরম তার্কিক ও আজন্ম ছায়াসঙ্গী বন্ধুটি কে ।
আমি গোলা লোক । বিশেষজ্ঞের মতো মতামত দেওয়া আমার কর্ম নয় । কিন্তু তাঁর গান গাইবার একটা চর্চা করেছি অনেকদিন । ভাল গান চিনতে খুব একটা ভুল করব না বলেই আমার বিশ্বাস । আমি তাঁর গানে যা পেয়েছি, যেভাবে বুঝেছি তা একদম আমার মতো করে । অন্য কেউ হয়ত অন্যভাবে তাঁকে আবিষ্কার করবে, আনন্দ পাবে । আমার এই নিভৃত আনন্দ আমি আপনাদের সঙ্গে ভাগ করে নিলাম । যদি ভুল করে থাকি তার দায় আমার । কিন্তু আমার এই অক্ষম প্রচেষ্টায় বিরক্ত হয়ে যদি কেউ কোনোদিন তাঁর গানের ইন্দ্রজালের সঠিক পাঠোদ্ধারে উদ্বুদ্ধ হন তাহলেই আমার প্রচেষ্টা সার্থক বলে জানব ।
(পরবাস ৩৯, জুন, ২০০৭)
অসীম সৌন্দর্য তব
সেই মাধুরী চির নব - অংশটি পুনরাবর্তনের সময় অন্যভাবে গাওয়া হয় ।
            
কে করেছে অনুভব
সেই মাধুরী চির নব । ২
            
তুমি জ্যোতির জ্যোতি
            
            
আমি অন্ধ আঁধারে