"প্রান্তর ও মনের মাঝে হয়তো অতিদ্রুত ও পৃথকপরের দিন বসন্ত উত্সবের সকাল । মেয়েরা দলবেঁধে নাচতে নাচতে পার হয়ে যাচ্ছে আম্রকুঞ্জ । বাতাস রঙিন হ'য়ে উঠছে আবিরে । আমি আর গৌতম খুঁজে বেড়াচ্ছি শক্তিদাকে । শোনা গেল এখানে । ছুটলাম । নেই । শোনা গেল ওখানে । ছুটলাম । নেই । প্রাঙ্গণ ছেড়ে বেরিয়ে অত:পর দুপুর অবধি এ'ঠেক - ও'ঠেক... এ'রাস্তা - ও'রাস্তা । সেদিন না-পাওয়াই ছিলো আমাদের ভবিতব্য । বাড়ি ফিরে ক'দিন পরে সকালে রেডিয়োতে সেই ভয়ংকর খবর - `শক্তিদা নেই ।' আবির আর কোনদিন দেওয়া হবে না । ভাঁটুইফুল ছিঁড়ে এনে সাজিয়ে দিলাম শক্তিদার ছবি । নন্দনে যাইনি । একফোঁটা কাঁদিওনি । এই লোকটা তাঁর জীবন আর কবিতার স্পর্শে আমার বাইরের জীবনটা ধ্বংস ক'রে দিয়েছে, আর ভেতরের জীবনে এনে দিয়েছে এমন সংকেত `মনে হয়, ওষ্ঠ শুধু চুম্বনের নিষিদ্ধতা জানে' ।
একটি ফাটল আছে, যার প্রতিবিম্বও পড়ে না
একটি দুর্ঘটনা আছে, যার ফলে মৃত্যুও সরল
একটি পালের গায়ে হাওয়া লাগা - সহসা ওপারে"
(চতুর্দশপদী কবিতাবলী - ৩২)
এরপর কী লেখা যায় ? ৪৭ সংখ্যক সনেটটা তুলে দিচ্ছি । মনে হবে যেন এই মুহূর্তে আমিই লিখছি শক্তিদাকে -
"তোমার সংকেত শুধু তুমি জানো, হে অনন্যমনাআমরা, তরুণ কবিরা, সেই `আততায়ী শিশু' আগ্লে পথ চ'লছি । তোমার শব্দের বিদ্যুতে মাঝে-মাঝে পথ আলো হয় । আমরা হাঁটি । মনে পড়ে তোমার মৃত্যূত্সব । সেখানেও, অকস্মাত্, মহিমামন্ডিত, কখন যেন সত্যি হ'য়ে গেল তোমার পংক্তিই - `কুচকাওয়াজ-অন্তে গাইলো পুলিশেও রবীন্দ্রসংগীত !'
জাহাজে এসেছে শিশু, জাহাজেই ফিরে চলে যাবে
বাকি শুধু বাজা বাঁশি, অমরসংগীত বারংবার
তারপর স্তব্ধতায় ত্রক্রমাগত দিবস ফুরাবে ।
আমি জানিব না প্রিয়, আমি দেখিব না শিশুটিরে
শুধাবো না, অতগুলি ময়ূরের মাঝে পরাক্রম
তোমার কি অবিনাশী ? শুধাবো না, যাবে না সমীরে ?
শুধাবো, হে শিশু তুমি কার প্রিয়, কার বা সন্ন্যাস !
তোমার সংকেত শুধু তুমি জানো, হে অনন্যমনা
আমিও জানি না । জানি কায়মনোবাক্যের বিচ্যুত
কয়েকটি নির্দেশ, সুধাসমর্পণ, কিছু বা করুণা
আর কিছু জানি না হে, কিছু আর জানিতে চাহি না
কে ডাকে প্রিয়ের প্রিয়, অতিনব, মম ওতপ্রোত ?
আততায়ী শিশু তুমি রেখে গেছো আমারই সকাশে !"
যেন আমারই মুখের অনুকৃতি বড়ো ব্যক্তিগতভাবে মনে হয়, শক্তি কবিতা লেখার চেষ্টা ক'রতেন না, শব্দ নিয়ে যে কোনো রকমের অবতরণ ছিলো তাঁর `রিফ্লেক্স' । এখানে এই বিদেশী শব্দটার এক প্রকার বাংলা কি `জাগরণ' লেখা যায় ? যাক্ আর না যাক্, আমি স্বভাবটার কথা বলছি । তাঁর শব্দ ছিলো একই স্বভাবী । জীবন থেকে যা নেমে আসতো জ্যান্ত । মানে, শক্তি ব্যক্তিজীবনে আর কবিজীবনে দূরত্ব রাখেননি । যে কোনো মহাপ্রতিভার মতো তাঁরও ছিলো অনন্ত একাকিত্ব, ভয়াবহ অস্থিরতা । সুউচ্চ শিখরের নিয়তি ছিলো তাঁর অহংকার । লিখেছিলেন - `আমার বিশ্বাস, আমি একা থাকবো - উত্তরাধিকৃত / কিছুতে হবো না...।' হওয়া উচিত ছিলো । কিন্তু হ'লো কি ? আমি আমার সময়ে দেখতে পাই, যারা কবি ব'লে পরিচিত, বেশীরভাগ ছাপোষা কেরানির মতো আপোসী নিরীহ । দাপট নেই । ধ্যানও নেই । শক্তির একটি কবিতার টুকরো - `শব্দ কত আদর্শনির্ভর' - সেই আদর্শও নেই । আদর্শ অর্থাৎ কবিতার কাল্পনিক বা স্বপ্নগত গতিপথ । আদর্শ অর্থাৎ কবিতার নিয়তি, যা কবির প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ অভিজ্ঞতার মধ্যে নিহিত থাকে । যা কবির মেধায় `সোনালী সুতোর ঋণবোধ ।' তাহ'লে কবিতার জন্যে এতোসব ? হ্যাঁ, কবিজীবনের জন্যে এতোসব । আমি যে-সময়ে জন্মেছি, তখন প্রচুর বেশ-ভালো কবিতা, কিন্তু `শক্তি' প্রজাতির কবিজীবন দু'চারজন ছাড়া কেউই যাপন করে না । হয়তো আজকের `সময়' দায়ী । কমপক্ষে পেটপুরে দু'টো খাওয়ার জন্যে এতো পরিশ্রম ক'রতে হ'চ্ছে যেকোনো মানুষের, শুধু `কবিতা' বা `শিল্প'-এর জন্যে সর্বস্ব দিতে পারছে না কবিতালেখক বা শিল্পচর্চাকারী মানুষ । এই সত্য মর্মের মধ্যে এসে বিঁধে যায় । কিন্তু, কিছুদিন হ'লো শক্তি চট্টোপাধ্যায়ের ১০০টা চতুর্দশপদী কবিতার মধ্যে বাস ক'রছি, তারই দু'একটা প্রসঙ্গ এই গদ্যে আমার অবলম্বন, সেইসব `শক্তি'মান অক্ষর একথাও ব'লতে হবে - কবিতা কিন্তু প্রতিশোধ নিচ্ছে ! আমাদের অক্ষরে সে ততোটা ধরা দিচ্ছে না । যে কোনো প্রেমের এমনই নিয়ম । দু'জনেই চায় দু'জনের মনোযোগ... `অবলম্বনের ঘোর' ।
আর, সবরকম প্রস্তুতি থাকা সত্ত্বেও কতো কবিতা ঝ'রে গেল অকালে, আমাদের । পুরোনো কাটাকুটি দেখতে দেখতে মন ভার হয় । এক-একটা কবিতার আয়ু একুশ দিনও পার হয়নি বোধহয় । তার মধ্যেই তার আলো ফুরিয়ে গেছে । হয়তো আলো ছিলোই না, ভেবেছি নক্ষত্র আয়ত্ত ক'রতে পেরেছি পংক্তিতে-পংক্তিতে । হায়, তবু তাকে মনে পড়ে ! ওই অসম্পূর্ণ শরীরে আমার কতো কল্পনা ছিলো !
"ঠিক কী কারণে গেলো বোঝা ভার, কিন্তু গিয়েছে সেচতুর্দশপদী কবিতার ৯৬ সংখ্যক সনেট । অদ্ভুত একটি তথ্য পেয়েছি `পদ্যসমগ্র' প্রথম খন্ডের `গ্রন্থপরিচয়' অংশে । কবিতাটি শক্তি লিখেছিলেন নিজের নষ্টজাত সন্তানের উদ্দেশে `এলিজি' হিসেবে । ভাবা যায়, কবিতাকে শক্তি কীভাবে নিয়েছিলেন ! জীবনের যে কোনো অংশেই তিনি `পদ্য'কে পেয়েছেন । `কবিজীবন' একেই বলে । তাঁর কবিতা প্রকৃতপক্ষে তাঁর জীবনের আগ্রাসী উপমা । আমরা যে প্রচুর নষ্টজাত কবিতা লিখলাম `যেন আমারই মুখের অনুকৃতি' নিয়ে, তারা স্বপ্নে হানা দেয়... যন্ত্রণা দেয়... তাদের ভুলেও যাই আমরা অনেক সময় ।
জলের সাঁতারে তেল কিংবা বলা ভালো সে গন্ধের
ভিতরের তীব্র, তাই বয়ে গেছে হাওয়ার উদ্দেশে
ঠিক কী কারণে গেলো বোঝা ভার, কিন্তু গিয়েছে সে
। তাকে তো চিনতো না কেউ, আমরাও অস্পষ্টভাবে জানি
তবু তারই জন্য সব অগোছালো গুচ্ছে সাবধানী
মায়ার অঞ্জনকাঠি, কাঁথা ও কল্পনা ত্রক্রমে মেশে
- ঠিক কী কারণে গেলো বোঝা ভার, কিন্তু গিয়েছে সে ।
একমুঠি স্পষ্ট মাংস, ঠান্ডা-হিম যেমন প্রকৃতি
পাংশু ও নিশ্চেতন, তেমনি সে, মৃত্যুর লাঙ্ছিত
সদাগর কিংবা যেন আমারই মুখের অনুকৃতি !"
"ভুলে যাবো, ভাড়াটে যেমন ভোলে পরাশ্রয়, পেলেনিদ্রাতুর, বিষণ্ণ করুণ `অসম্পূর্ণ সন্তান'-এর ছবি আমাদের আজকের কবিতাভাগ্যের সংগে কতোদূর থেকে এসে মিশে গেল !
অবশ্য নতুন, শুধু মাঝে মাঝে অযুক্তি-কল্লোলে
ভেসে উঠবে মাংস, মুখ নিদ্রাতুর, বিষণ্ণ, করুণ !"
(৯৬ সংখ্যক সনেটের শেষ অংশ)
প্লাতেরোঘুম হয় না আমার । জীবন আমাকে এফোঁড়-ওফোঁড় করছে । আমি আর আমার বান্ধবী সেসব ঝড়-ঝাপটা সামলাতে সামলাতে এক্কেবারে খাদের ধারে । ঘরে শিশু এসেছে । আর আমি অক্ষর আগ্লাতে আগ্লাতে ক্ষতবিক্ষত, ব্যর্থ, অথচ সীমাহীন স্বপ্নপিয়াসী । তবু আজও আমার হাতে শব্দসার্থকতা এলো না । দু'কূল চ'লে গেল, হায়-হায় ! অথচ সব সময় আত্মার ভেতরে টের-পাওয়া সেই প্রতিবেশী, সে দিব্যি ঘুমোচ্ছে । ঘুম ভেঙে উঠে খিদেয় নির্বিকার পেট পুরে খাচ্ছে গোলাপ, কবিতা । এদিকে যে আমার বাগান ফাঁক হয়ে যাচ্ছে, কবিতার খাতা মিশে যাচ্ছে মহাশূন্যের নীলে । সেদিকে তার কোনো হুঁশ নেই । তাকে বারণ ক'রবো, তাও পারি না । অত:পর নিজেই নিজের অভিভাবক হ'য়ে নিজেকে বকাবকি ক'রি - অনেক হ'য়েছে বাবাজীবন, তোমার হবে না । অন্য রাস্তা দেখে নাও সময় থাকতে থাকতে ।"প্লাতেরো, তোমারে প্রিয় ঈর্ষা করি, তুমি বহুদিন
আমার বুকের পাশে ঘুমায়েছো, পিঠের উপরে ।
আমার গোলাপগুলি খেয়ে গেছো, ভবিষ্যত্-ভরা
কবিতার খাতাগুলি - স্মরণীয় রুমালের ঝাঁক ।
তবুও তোমারে কিছু বলি নাই, আত্মসাবধান
করেছি বাবার মতো ।..."
(১১ সংখ্যক রচনা - চতুর্দশপদী কবিতা)
ঠিক আছে । সবই তো হ'লো । কিন্তু `প্লাতেরো' কে ? যে আত্মাসহচর, বিপন্ন মুহূর্তে যাকে সম্বোধন ? যাকে নিয়ে শক্তি এরকমই আরো কয়েকটি সনেট লিখেছেন ? লিখেছেন `গাধা ও জঙ্গলের মধ্যে চাঁদ' কবিতাটি ? হ্যাঁ, `প্লাতেরো' একটি `গাধা' । হুয়ান রামন হিমেনেথ (১৮৮১-১৯৫৮) তাঁর কাব্যে `প্লাতেরো' নামক একটি গাধাকে প্রথম আনেন । ১৯৫৬ সালে হিমেনেথ নোবেল পুরস্কার পান, সেবছরেই প্রকাশিত হয় তাঁর `প্লাতেরো এবং আমি' গ্রন্থ । বইটি প'ড়ে মুগ্ধ শক্তি ভীষণ প্রভাবিত হন । হিমেনেথ তাঁর তখনকার কবিতাপ্রবাহের প্রেরণা হয়ে দাঁড়ায় । `প্লাতেরো' একটি ছোটো গাধা । সে কবির বন্ধু । কবি তাকে ঘনিষ্ঠ আত্মীয়ের মতো কতো কথা বলেন । প্লাতেরো, প্রকৃতি, কবির নিভঋত উচ্চারণ কখন যেন মিলেমিশে একাকার । তাহ'লে কি প্লাতেরো কবির `অল্টার ইগো'? এক কবির প্রতিআত্মা অন্য কবিতেও এমনভাবে পৌঁছায় ? শক্তি লিখছেন -
"প্লাতেরো আমারে ভালোবাসিয়াছে, আমি বাসিয়াছিকেন এই ভয় ? কেন এই রহস্য ? কবি অ্যাতো একা, যেন তাঁর ছায়াও নেই ? কিংবা ছায়াই প্লাতেরো ? কিংবা প্রতিটি স্রষ্টার যন্ত্রনাময় সত্তার পাশে দাঁড়িয়ে থাকে আর একটি সত্তা, যে নির্বিকার-ভাবলেশহীন-নিরপেক্ষ একটি অংশ ? তবে তাকেও বুঝি আমাদের জীবনে দরকার বন্ধু-র মতো ? একটি ভোলেভালা বন্ধু কবির দরকার । ঘাড় গুঁজে লিখতে লিখতে, কাটতে-কাটতে, নিরন্তর খ্যাতি বা অসহ্য অখ্যাতি থেকে মাঝে মাঝে মুখ তুলে যে, বন্ধুর দিকে ভারহীন, দায়হীন তাকানো যায় । যাকে অনায়াসে বলা যায় `ভালোবাসা ছাড়া কোনো যোগ্যতাই নাই এ-দীনের' (৯ সংখ্যক সনেট)। হঠাত্-হঠাৎ যার সঙ্গে দেখা হ'য়ে গেলে যে বলে - `কী লিখিস্, কিছুই বুঝি না ।' যে এসে বাগান দেখে `বা:' বলে, আর একটা সুন্দর গোলাপ টপ্ করে ছিঁড়ে নেয় - কিছুই বলতে পারি না আমি । তুমিই তবে সেই, প্লাতেরো ? তোমাকে আমি চিনতে পেরেছি আজ এক্ষুনি । মাঝে-মাঝে দেখা কোরো । ব'লবো - প্লাতেরো, জানিস্ ? আর পারি না । `ভয় হয় যেতে, তবু না যেতেও ভয়ের অধিক / ভয়...'।
আমাদের দিনগুলি রাত্রি নয়, রাত্রি নয় দিন
যথাযথভাবে সূর্য পূর্ব হতে পশ্চিমে গড়ান
তাঁর লাল বল হাতে আলতা ও পায়ের মতো ঝরে
আমাদের--- প্লাতেরোর, আমার, নি:শব্দ ভালোবাসা ।
প্লাতেরো তুমিও চলো সঙ্গে, আমি একাকী প্রস্রাব
ফিরিতে পারি না, কারা ভয় দেখায়, রহস্যও করে ।"
(৪১ সংখ্যক সনেট)
লন্ঠনরহস্য আর ছিলো লন্ঠন, আমাদের, আমাদের গাঁ-গঞ্জে, রাত্তিরে কুপির আলোয় একটু দূরে গোল হ'য়ে ঝুঁকে থাকতো অন্ধকার । রহস্য হ'তো খুব । ভূত-প্রেত-ভগবান-রাক্ষস-শিবঠাকুর-নেতাজী-গাছগাছালির ঘন মাথা । মাথার ভেতর কীসের যেন শিখা দুলে দুলে উঠতো । রোম উঠলে টের পেয়েছি ওই সবই ছিলো কবিজন্ম । রোমে হর্ষ এলে একদিন বোঝা গেল, প্রভু, নষ্ট হতে হবে । গ্রাম্যতাকে ঝেড়ে ফেলে ঢুকতে হবে শহর-প্রভাবিত বাংলা কবিতায় । অপরাধবোধ হ'লে মাঝে মাঝে শহুরে `ক্ষিপ্রতা'য় ঢুকিয়ে দিতে হবে গ্রামের শ্লথ শব্দশামুক । এভাবেই `ভয়ের অধিক ভয়'-এ যাচ্ছি । শহরের বাতাসের কালি লেপ্টে যাচ্ছে সারা গায়ে । বাড়ি এসে শিশুকে ছুঁতে ভয় করছে । এভাবেই আজকের নতুন কবি কুঁড়ি থেকে ফুলের মহিমায় মন্ডিত ! আর আমার কবিতা ? লন্ঠনের কী হ'লো ?
-
"লন্ঠনরহস্য থেকে কবিতাকে মুক্তি দেবো বলেএই এত দিন কবিতা লেখার পর মেধা ভ'রে গেছে ব্যথায় ব্যথায় । গ্রামের শাকওয়ালি মাসিরা যেমন হ্যালেঞ্চা, কল্মি, নটেশাক নিয়ে শহরের ফুটপাথে রোজ যায়; আমিও ঝোলায় কবিতা নিয়ে ছুটে ছুটে যাই শহরে কবিতাসভায় । কেউ কেউ ব'লছে, আমার মধ্যে অবশেষে প্রতিভার চিহ্ন পাওয়া যাচ্ছে । কিন্তু কবিতার চিহ্ন পাওয়া যাচ্ছে কি ? আমার যে আর কোনো উপায় নেই, হে সনেট - ৯৭, এসো, বরং তোমার বাকি শরীরে মিশে যাই এইবেলা ।
এসেছি সদর স্ট্রিট-এ গাড়িবারান্দার নিচে নীল
সাঁতারু মাছের মধ্যে খেলা করে অবাধ কিশোর
ভিখিরির, তারো নিচে কলকাতার হাঁ-করা পাতাল
শুয়ে আছে, ভাঙা ডিম, হলুদ কুসুমে পরিপ্লুত
যেন আধুনিক কবি বিষাদের, না-কাঁড়া শাঁখের
শুয়ে আছে, বুঝি কোন্ সিন্ধুজলে ধুয়ে-মুছে স্মৃতি,
নিবন্ত লন্ঠন, ফাটা কাচ পল্তে, আমারই কবিতা !"
(৯৭ সংখ্যক সনেট)
-
-
"কবিতাকে গ্রাম্য ক্লেদ, পচা পিছুটান থেকে যতশুধু কাছে যাই, কাছে যেতে থাকি...
তুখোড় শহরে আনি, ব্যথা পায়, সবজির মতন--
- লুপ্ত হতে থাকে আর ক্লোরোফিল বিশুদ্ধ প্রতীকে
অনূদিত হতে থাকে : অমন আলেখ্য তার অপ্সরার
কিম্ভুতকিমায় হয় বদখত্, তারই হাতছানি
পারি না এড়াতে, শুধু কাছে যাই, কাছে যেতে থাকি ॥"
-
(পরবাস-৪১, মে, ২০০৮)