• Parabaas
    Parabaas : পরবাস : বাংলা ভাষা, সাহিত্য ও সংস্কৃতি
  • পরবাস | সংখ্যা ৪২ | ডিসেম্বর ২০০৮ | চিঠি
    Share
  • নিউ ইয়র্ক ফিল্ম উত্সব ২০০৮ : প্রদীপ্ত মিত্র

    সেপ্টেম্বর মাসের ২৬ তারিখ থেকে দুসপ্তাহের মত চলল নিউ ইয়র্ক ফিল্ম উত্সব । এই উত্সবে আমার দেখা বেশ কিছু ছবি নিয়ে অল্প অল্প আলোচনা করা গেল । উত্সবের দ্বিতীয় দিন একটি আলোচনা সভা হয়েছিল, সেটি নিয়েও কিছু লিখলাম ।

    প্রথম দিন

    উত্সবের প্রতিটি ছবি শুরু হওয়ার আগে মিনিট খানেকের একটা সূচনা-ভিডিও দেখানো হচ্ছিল । ফিল্ম বিষয়ে পর পর বেশ কয়েকটি উদ্ধৃতির পর "নিউ ইয়র্ক চলচ্চিত্র উত্সবে আপনাকে স্বাগতম" -- এই বলে ভিডিওটি শেষ । উদ্ধৃতিগুলো বিখ্যাত ক'জন পরিচালকের, তাঁরা হলেন : স্টীভেন স্পীলবার্গ, চার্লি চ্যাপলিন, ডেভিড লীন, স্ট্যানলি কুব্রিক, ফ্রাসোঁয়া ত্রক্রুফো, জাঁ ককতো এবং জাঁ লুক গদার (গদারের দুটি উদ্ধৃতি -- প্রথমটি ও শেষটি) । প্রথম চারজন মার্কিন । সেটা বিস্ময়কর নয়, যেহেতু উত্সবটি হচ্ছেই সেখানে । বাকি তিনজনই কিন্তু ফরাসী ।

    উত্সবের উদ্বোধন হল যে ছবিটি দেখিয়ে, সেটিও ফরাসী । সূচনা ভিডিওর ফরাসী সুবাস যে কাকতালীয় নয়, পুরো উত্সবেই তার প্রমাণ মিলেছে । ফ্রান্সের একাধিক ছবি ছিলই, তাছাড়াও অন্যদেশের ছবিগুলোরও কয়েকটি ফরাসী প্রযোজনায় তৈরি (যেমন, শ্যোগা), অন্য কিছু ফিল্মের কাহিনির অংশবিশেষ ফ্রান্সের পটভূমিকায় (যেমন রাত্রি ও দিন নামে হং-সাং সু-র বিরক্তিকর কোরীয় ছবিটির প্রায় পুরোটা) ।

    ফিল্মটির প্রসঙ্গে ফিরে আসা যাক । দ্য ক্লাস নামে ছবিটির কাহিনি এরকম । ফ্রাঁসোয়া মারিন প্যারিসের একটি স্কুলে ফরাসী ভাষা পড়ান । ক্লাসের অনেক ছাত্র-ছাত্রীই অন্য দেশে থাকা অভিবাসী, বা তাঁদের সন্তান-সন্ততি । কেউ আরব, কেউ আফ্রিকান, কেউ বা উভয়ই (যেমন মিশর থেকে আসা একটি ছেলে), কেউ চীনের । মারিনের ক্লাসে তাদের প্রতিদিনের অভিজ্ঞতা, ছেলেমেয়েদের মধ্যে বন্ধুত্ব, তুচ্ছ ঝগড়া, মারিনের সাথে কখনও তাদের ভাল বোঝাপড়া, কখনও চাপা টেনশন -- এই প্রায় পুরো ছবিটা জুড়ে । গল্প বলার দিকে পরিচালক কান্তেত-এর তেমন আগ্রহ নেই, কিন্তু যেটাতে তাঁর আগ্রহ, ক্লাসের অভিজ্ঞতার সমস্তটা তুলে ধরা, তাতে সফল হয়েছেন । যেমন, মারিনের প্রতি খুমবা নামের একটি মেয়ের চাপা ক্ষোভ এক পর্যায়ে বিক্ষোভে পরিণত হয়, কিন্তু এই ঘটনাটি নিয়ে পরিচালক কচলা-কচলি করেননি । ১৩-১৪ বছর বয়সী ছেলেমেয়েদের মধ্যে তীব্র আবেগ কিছুটা অকারণেই যেভাবে আসে-যায়, সেভাবেই ঘটনাটিকে বয়ে যেতে দিয়েছেন । আবার ছাত্র-ছাত্রীদের সব ঝগড়াই তুচ্ছ নয়, যেমন মিশরের ছেলেটির সাথে মালির একটি ছেলের তর্কে আফ্রিকার আরব এবং আরব-নয় দেশগুলির মধ্যে একটা দ্বন্দ্বের আভাস পাওয়া গেল, অন্যদিকে ছোট ছোট বেশ কিছু ঘটনায় এও বোঝা গেল যে ফরাসী সংস্কৃতির সাথে অনেক অভিবাসী ছাত্র-ছাত্রীর সম্পর্কটি সমস্যাসংকুল ।

    চমত্কার এই ছবিটিতে মারিনের ভূমিকায় অভিনয় করেছেন ফ্রাঁসোয়া বেগাদু, যার লেখা একটি উপন্যাস থেকে ছবিটি তৈরি । বেগাদু নিজে শিক্ষক, ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা থেকে উপন্যাসটি লিখেছিলেন । ছাত্র-ছাত্রীরাও সব প্যারিসের সত্যিকারের একটি স্কুলের শিক্ষার্থী, তাদের অনেকে যখন মঞ্চে উঠে এল ছবি শুরুর ঠিক আগে, তখন হাততালির অভাব হয়নি ।

    ব্লগ বিভ্রাট ও অন্যান্য আলোচনা

    ফিল্ম দেখানোর ফাঁকে ফাঁকে আলোচনাসভা-টভা হচ্ছিল, তার মধ্যে প্রথমটি হল উত্সব শুরুর পর প্রথম শনিবারে । জাঁদরেল সব আলোচক -- কাইয়েহ দু সিনেমার লেখক এমানুয়েল বোরদু, ফিল্ম কমেন্ট পত্রিকার কেন্ট জোনস, গ্রীন সিনে ওয়েবাঙ্গনের ডেভিড হাডসন, এরকম আরো অনেকে । আমি অবশ্য সবচেয়ে আগ্রহী ছিলাম দুজনকে দেখতে । প্রথম জন জোনাথান রোসেনবাউম, শিরোমনি সিনেমা সমালোচক ও লেখক, ঋত্বিক এবং সত্যজিতের সিনেমার ভক্ত । দ্বিতীয় জনের আসল নাম প্যাকাল এসপিরিতু, কিন্তু অ্যাকোয়ারেলো ছদ্মনামেই পরিচিত । এই ছদ্মনামে তিনি একটি চমত্কার ফিল্ম ব্লগ লিখে থাকেন (ব্লগাঙ্গনটির নাম স্ট্রিক্টলি ফিল্ম স্কুল) । এই দ্বিতীয়জনকে শুধু ইন্টারনেট মারফতই চিনতাম বলে তাঁকে কখনো হেঁটে চলে বেড়াতে দেখব, এটা ভাবতেই কেমন অবাক লাগছিল ।

    আলোচনার বিষয়বস্তু ছিল "ফিল্ম সমালোচনা কি সংকটে ?", এবং মূলত ফিল্ম সমালোচনার উপর ইন্টারনেটের প্রভাব শুভ কিনা -- এই ব্যাপারটি । এ জাতীয় বিষয়ে দীর্ঘ আলোচনা যতটা বিরক্তিকর হওয়ার কথা, এ সভাটিও ততটাই ছিল, যদিও ফাঁকে ফাঁকে কিছু গুরুত্বপূর্ণ কথা শোনা গেছে । আমার মতে, আলোচকরা নিজেরাই ছিলেন সবচেয়ে আকর্ষণীয় । মানবচরিত্র যে সর্বকালে এবং সর্বদেশে এক, এই আশংকাজনক সত্য এমানুয়েল বোরদু প্রমাণ করলেন । বাঙালিদের প্রায় যেকোন সভায় এক জন থাকবেনই যিনি অন্তবিহীন বক্তৃতার ফাঁকে ফাঁকে "আমি আর বেশি সময় নেব না" বলে শ্রোতাদের আশ্বস্ত করার চেষ্টা করেন । নিউইয়র্কের এই সভায় একাজটির দায়িত্বটি বোরদু বিশ্বস্ততার সাথে পালন করে গেলেন । তবে বোরদু একজন ফরাসী ইন্টেলেকচুয়াল, এটাও বেশ বোঝা গেল । প্রায় প্রতিটি বাক্য শুরু করবার পর তাঁর মনে হচ্ছে বিষয়টি আরো কয়েকটি দৃষ্টিকোণ থেকে দেখা সম্ভব, যুক্তি হতে পারে আরো সূক্ষ্ম, বহুমাত্রিক -- ফলে বাক্যটি পরিণত হচ্ছে মেগাবাক্যে । বোরদু কাইয়েহ দু সিনেমার অর্থনৈতিক সংকট এবং সমালোচকদের উপর তার প্রভাব নিয়ে আলোচনা করলেন, তবে ইন্টারনেটের ব্যাপারে তাঁকে মোটের উপর বেশ উত্সাহী মনে হল । রোসেনবাউমের সাথে তার বাক্য বিনিময় হল কয়েকবার, তাঁর বয়স নিয়ে রসিকতা করে বোরদু দর্শকদের হাসালেনও একবার । রোসেনবাউম মনে হল ফিল্ম সমালোচনার জগতে ইন্টারনেটকে প্রায় পুরোপুরি শুভ মনে করেন । তাঁর মতে ইন্টারনেট সিনেমা উত্সাহীদের মধ্যে যোগাযোগের চমত্কার মাধ্যম, আর সময়ের বাধাও ইন্টারনেট কিছুটা দূর করেছে, সিনেমা হলে বাঁধাধরা নতুন ছবির বদলে সিনেমাপ্রেমিক চাইলে ইন্টারনেটে অতীতের না-জানা, কম-জানা পরিচালকের ছবি খুঁজে নিতে পারেন । ইন্টারনেট বিরোধী কথাবার্তা সরাসরি না বললেও কেউ কেউ মনে হল প্রাক ইন্টারনেটের যুগের ব্যাপারে একটু নস্টালজিক । কেন্ট জোন্স উথ্থাপন করলেন, প্রায় অবধারিত ভাবে, পাউলিন ক্যেল-এর নাম । জোনস বললেন, পাউলিন ক্যেল যেভাবে একাধিক প্রজন্মের জন্য ফিল্ম সমালোচনার কাঠামোটি তৈরি করেছিলেন, তেমন আজকাল আর দেখা যায় না । মনে হল, ইন্টারনেটের ফলে সমালোচনার কোন স্পষ্ট কেন্দ্র বা নেতৃত্ব না থাকার ব্যাপারটিতে জোনস সহ অনেক আলোচক বিব্রত । এও মনে হল যে এই আলোচকদের অনেকে ফিল্ম সমালোচনাকে অতি সিরিয়াস সাংস্কৃতিক কর্ম বল মনে করতেই অভ্যস্ত । অ্যাকোয়ারেলো যখন স্পষ্টই স্বীকার করলেন যে তাঁর ব্লগ শুরু হয়েছিল ফিল্ম সম্বন্ধে সম্পূর্ণ ব্যক্তিগত মতামত প্রকাশের জন্য, এবং এও স্পষ্ট হল ফিল্ম আলোচনার তাত্ত্বিক স্কুলগুলির ব্যাপারে তাঁর আগ্রহ বেশ কম, তখন সভার মডারেটর গ্যাভিন স্মিথ যেন একটু চমকেই উঠলেন । তবে ইন্টারনেটের উদ্ভবের ফলে প্রিন্ট মাধ্যম যে একটা চরম অর্থনৈতিক সংকটে পড়ে গেছে, এবং এর ফলে পেশাদার ফিল্ম সমালোচকদের রুজি-রুটি নিয়ে টান পড়েছে, এটিতে সবাই সঙ্গত দুশ্চিন্তা ব্যক্ত করলেন ।

    উত্সবের দ্বিতীয় সপ্তাহটি স্মরণীয় ছিল বশিরের সাথে ওয়াল্টজ এবং গ্রীষ্মের প্রহর, এদুটি ছবির জন্যে । প্রথম ছবিটি নিয়েই আলোচনা করব ।

    বশিরের সাথে ওয়াল্টজ

    বুধবারের এক সন্ধ্যায় দেখলাম বশিরের সাথে ওয়াল্টজ । ছবিটি এনিমেটেড, আবার প্রামাণ্যধর্মী । ডকুমেন্টারী -- তেলের সাথে এনিমেশন-জল সফল ভাবে মেশাতে পারাই দারুণ, কিন্তু এই ফিল্মের অনেক গুণের এটা একটা মাত্র । ছবি শুরু হচ্ছে দু:স্বপ্নের দৃশ্য দিয়ে -- রাস্তা দিয়ে অজানা-ভয়ংকর উদ্দেশ্যে ছুটে চলেছে এক দল হিংস্র কুকুর । পরিচালক আরি ফোলমান এই সিকুয়েন্সে কুকুরদের ছুটে চলার ছন্দের সাথে অসাধারণ মিশিয়েছেন সম্পাদনার গতি আর সংগীতের লয় । পুরো ছবিতেই আসলে একটা ছন্দ-সামঞ্জস্য রয়েছে । ছবিতে পশ্চিমা ধ্রুপদী সংগীত থেকে শুরু করে রক গান পর্যন্ত সব কিছু ব্যবহার করেছেন পরিচালক, কিন্তু কখনো মনে হয়নি অপ্রয়োজনীয় কালোয়াতি করছেন, সবকিছুকেই সুপ্রযুক্ত মনে হয়েছে ।

    দু:স্বপ্নটা শেষ হলে জানা যায়, স্বপ্নটার কথা এক বন্ধু জানাচ্ছেন ফোলমানকে । ইসরায়েলের একটি বারে বসে আছেন দুই বন্ধু, দুজনেই একসময় ইসরায়েলী সেনাবাহিনীতে সৈনিক ছিলেন, যুদ্ধে গেছেন । একজনের ক্ষেত্রে যুদ্ধের অভিজ্ঞতার ফল হচ্ছে পৌন:পুনিক সেই শ্বাপদ-স্বপ্ন । কিন্তু ফোলমান বিশ বছর আগে ১৯৮২ সালের লেবানন অভিযানে তাঁর অভিজ্ঞতার কথা কিছুই মনে করতে পারছেন না । সন্দেহ হতে থাকে ফোলমানের, এবং আমাদেরও, ভয়ানক কিছু ঘটেছে লেবাননে যা থেকে মস্তিষ্ক তাঁকে রক্ষা করার চেষ্টা করছে । আবছা এক স্মৃতি ছাড়া তাঁর আর কিছুই মনে পড়েনা -- এই স্মৃতিতে ফোলমান এবং তার কয়েকজন সৈনিক বন্ধু এক অদ্ভুত সমুদ্র থেকে উঠে আসছেন বৈরুতের উপকূলে । বাকি ছবিটা ফোলমানের স্মৃতি উদ্ধারের কাহিনি । ফোলমান ওই যুদ্ধে তাঁর সহযোদ্ধাদের খুঁজে বের করেন, তাঁদের স্মৃতির সূত্র ধরে এগোতে-পেছোতে থাকেন, আস্তে আস্তে যুদ্ধের স্মৃতি তাঁর মনে পড়তে থাকে, যার অধিকাংশই নির্মম । ফিল্মের একদিন শেষ মুহূর্তে ফোলমানের সাথে আমরা মুখোমুখি হই সাবরা ও শাতিলার হত্যাযজ্ঞের, এই ভয়ংকর অভিজ্ঞতার ফলেই ফোলমান স্মৃতিভ্রষ্ট হয়েছিল ।

    ছবিটির যেটা সবচেয়ে উল্লেখ্য গুণ, সেটা হল পরিচালক কতটা সততার, এবং কতটা ব্যক্তিত্বের সাথে বলেছেন তাঁর গল্প । যুদ্ধের ব্যক্তিগত কাহিনি বলতে গিয়ে অনেক শিল্পীই রাজনৈতিক দ্বন্দ্বে পড়ে যান, এক ধরনের নৈতিক দাঁড়িপাল্লাগিরিতে পর্যবসিত হয় পুরো ব্যাপারটা । ফোলমান পাত্তাই দেননি এরকম দুর্বলতাকে, সমূহ সাহসের সাথে তাঁর নিজের গল্পটি বলে গেছেন । ব্যক্তির অভিজ্ঞতা থেকেই উঠে আসে নৈতিক এবং রাজনৈতিক সত্য, উল্টোটা নয় -- একথা ভুলে যাওয়া কঠিন নয়, এই ফিল্ম মনে করিয়ে দিল ।

    অক্টোবরের ১১ ছিল উত্সবে আমার সবচেয়ে আনন্দময় দিনগুলির একটি । সেদিন দেখা তিনটি ছবিই উল্লেখযোগ্য ।

    নূতন, পুরাতন

    মেঘনার জেলেদের নিয়ে ১৯৫৮ সালে একটি ছবি বানিয়েছিলেন এ জে কারদার নামে এক পশ্চিম পাকিস্তানী পরিচালক । ছবিটি পরে একরকম হারিয়ে যায়, নাম অনেকে জানলেও দেখেছেন এমন লোক কম । ফরাসী এক চলচ্চিত্র সংগ্রাহকের কাছ থেকে একটি কপি অনেকদিন পরে এই গত বছর আবিষ্কার হওয়ার পরে বেশ একটু সাড়া পড়ে গিয়েছে, বিভিন্ন চলচ্চিত্র উত্সবে দেখানো হচ্ছে হারিয়ে পাওয়া এই চলচ্চিত্র । ছবিটির নাম দ্য ডো শ্যেল ডন/জাগো হুয়া সভেরা (অনুমান করেছিলাম, এবং পরে নিশ্চিত হলাম, দ্বিতীয় নামটি উর্দু) । এটুকুই জানতাম নিউ ইয়র্ক চলচ্চিত্র উত্সবে ছবিটি দেখবার আগে ।

    ছবিটি শুরু হচ্ছে এমন এক শটে, যাকে মহাকাব্যিক না বলে কোন উপায় নেই -- মেঘনার সমুদ্রসম জলে ভেসে আছে অসংখ্য সাদা পাল-তোলা নৌকা । অসাধারণ এই শটের পাশাপাশি ধীরে ধীরে গান ভেসে আসল এবং সেই গানে অত্যন্ত অবাক হয়ে যা বোঝার চেষ্টা করছি কিছুক্ষণ পরে ছবির চরিত্রগুলির মধ্যে কথাবার্তা শুরু হলে সেটি স্পষ্ট হল । মেঘনার হতদরিদ্র, অশিক্ষিত জেলেদের নিয়ে এই ছবিটি, বললে বিশ্বাস করা শক্ত, বাংলায় নয় ! বাংলার বহুভাষাবিদ জেলে কাসেম, গঞ্জু প্রভৃতিকে নিজেদের মধ্যে রীতিরকম উর্দুতে কথাবার্তা বলতে দেখে চমত্কৃত হলাম । বহুভাষাবিদ বলার কারণ আছে, কারণ উর্দু এদের প্রধান ভাষা হলেও মুড়ির মধ্যে কাঁকরের মত মাঝে "বাবা দুটো পয়সা দাও" ইত্যাদি কিছু বাংলা বাক্যও পাওয়া গেল তাদের আলাপচারিতার মধ্যে । কেয়া বাৎ !

    এই ব্যাপারটায় আমি এতটা বিরক্ত হতাম না, যদি ছবিটা অন্যান্য অনেক দিক থেকে সত্যিই অসাধারণ না হত । এই এক জায়গায় এমন গুবলেট পাকিয়েছেন কারদার ও তার দল যে ছবিটির পর আলোচনা-পর্বে এক দর্শকের "মাস্টারপিস, মাস্টারপিস" চিত্কার সত্ত্বেও এছবি তা নয় । বাস্তবধর্মী ধারার ছবিতে এই ভুল ক্ষমাহীন । যাহোক, ফিল্মটির প্রাপ্য প্রশংসা দেয়া দরকার । চাঁদপুরের এক গ্রামে ছবিটি তোলা হয়েছে, এবং ডকুমেন্টারী সততায় বাংলার গ্রামের (এবং গঞ্জেরও) পরিচয় তুলে ধরা হয়েছে । ডিটেইলের সমৃদ্ধি অসামান্য -- ছেঁড়া গেঞ্জি পরা জেলে, ধুতি পরা হিন্দু, টুপি পরা মুসলমান, দড়ি ছেঁড়া গরু, ঘেয়ো কুকুর, তদ্রুপ বিড়াল, ন্যাংটা বালক, ভাঙা সানকি, মাছের বাজারের পাইকার, জোঁকের-তেল-গণ্ডারের-দাঁত বিক্রেতা, কি নেই ! গল্পটিও শক্তিশালী । মেঘনার তুলনাহীন রূপের পটভূমিকায় গ্রামের ক্ষমাহীন দারিদ্রের কাহিনি --মেঘনা এবং মেঘনার ইজারা নেয়া লাল মিঞা, এই দুই প্রতিবন্ধকতার সাথে যুদ্ধ করে জেলেদের বেঁচে থাকা-না-থাকার গল্প । বিস্তারিত জানতে চাইলে পদ্মা নদীর মাঝি পড়ে নেয়া যেতে পারে । সত্যি ! মানিকের উপন্যাস থেকেই কাহিনির প্রায় পুরোটা নেয়া হয়েছে, যদিও সেটা স্বীকার করা হয়নি । কেন, সংগত এই প্রশ্নটি সিনেমার পরে এক দর্শক উথ্থাপনও করলেন । এ ব্যাপারে কয়েকটি মন্তব্য । এক, আমার ধারণা এটা ঠিক অসততা নয়, ওই আমলে "মানিক বন্দো[পাধ্যায়" নামক ভারতীয় (এবং কম্যুনিস্ট) লেখকের নামটি ফিল্ম-বানিয়েরা আনতে চাচ্ছিলেন না । দুই, গল্পটি পদ্মা নদীর মাঝি থেকে আসলেও কারদারের মনোভঙ্গি ঠিক মানিক-সুলভ নয় -- বরং, সত্যজিৎ এবং মানিকের মাঝামাঝি কোথাও দাঁড়িয়ে এই ছবির সংবেদনশীলতা । তিন, কাহিনিতে যেসব পরিবর্তন আনা হয়েছে সেগুলি সবই উল্লেখযোগ্য, পরিচালকের মনোভঙ্গি এবং পাকিস্তানের তখনকার রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক বাস্তবতা প্রতিফলিত প্রায় প্রতিটিতেই, তবে একটা স্রেফ হাস্যকর । পদ্মা নদীর মাঝিতে কুবেরের স্ত্রীর নাম মালা, আর শালীর নাম কপিলা । জাগো হুয়া সাভেরাতে সব চরিত্রের নামই পরিবর্তন করা হয়েছে (চরিত্রেরা বেশির ভাগই মুসলিম), শুধু শালীর নাম -- মালা ! হাহাহা । কাহিনির যেসব পরিবর্তন করা হয়েছে তার প্রেক্ষিতে এর একটা পীড়াদায়ক ব্যাখ্যা দেয়া হয়ত সম্ভব, কিন্তু সেটা সময়ের অপচয় হবে ।

    জাগো হুয়া সভেরাই ছিল ওদিন দেখা শ্রেষ্ঠ ছবি, একথা বলতে পারতাম, যদি না রাতে টোকিও সোনাটা দেখার সৌভাগ্য না হত । তবে তার আগে দিনের প্রথম ছবিটার কথা বলি ।

    শ্যোগা

    শ্যোগা হচ্ছে কাজাখ পরিচালক দারেজান ওমিরবায়েভের নতুন ছবি । এর আগে আমি কাজাখস্তানের কোন ছবি দেখিনি, এবং দেশটি সম্বন্ধে তেমন কিছু জানতামও না । কাজাখস্তানের লোকজন দেখতে কেমন, কি ভাষায় কথা বলে, কি খায়, কেমন বাড়িতে থাকে -- কিছুই না । একটা ছবি দেখে এসব ব্যাপারে দিব্যদৃষ্টি অর্জন করা সম্ভব নয়, তবে একটা ধারণা পাওয়া গেল । দেশটিতে অনেক নব্য ধনী, মূলত পেট্রোলিয়াম-সম্পদের বদান্যে, এবং সর্বকালেই উঠতি ধনিক শ্রেণীর মধ্যে যে সাংস্কৃতিক ছ্যাবলামি দেখা যায় এদেশটিতেও তা ঘটেছে -- এই তথ্যটুকুও ছবিটি থেকে মিলল । কাহিনিটি প্রেম ও তার ব্যর্থতার (শ্যোগা নামে একটি মেয়ের), এবং এ গল্প বলা হয়েছে কাজাখস্তানের নতুন সামাজিক প্রেক্ষাপটে । আইডিয়া খারাপ নয়, কিন্তু ছবিটা তত সুবিধার নয়, বিশেষত শেষাংশটা যাচ্ছেতাই । গল্পের কাঠামোটা তলস্তয়ের আন্না কারেনিনা থেকে নেয়া, কিন্তু ওমিরবায়েভের মধ্যে না আছে তলস্তয়-সুলভ নৈতিক তীব্রতা, আবার না পেরেছেন কাহিনিটাকে নিজের মনোভঙ্গির সাথে পুরোপুরি মিলিয়ে নিতে ।

    টোকিও সোনাটা

    কিয়োশি কুরোসাওয়ার ছবি একটা আগেও দেখেছিলাম, কিউর নামের একটি হরর ফিল্ম, এবং সেটা নিয়ে একটা ব্লগও লিখেছিলাম । নিউ ইয়র্ক ফিল্ম ফেস্টিভালে তাঁর ছবি টোকিও সোনাটা দেখার ফল হল দুটি । এক -- কুরোসাওয়া আমার প্রিয় পরিচালকদের তালিকায় ঢুকে গেলেন । এবং দুই -- মার্কিন, ফরাসী এবং ইতালীয় সিনেমার কথা ভুলে না গিয়েও আমার এখন ধারণা -- আকিরা কুরোসাওয়া, ওজু, মিজোগুচি, সুজুকি, ওশিমা, কিতানো এবং কিরোশি কুরোসাওয়ার জাপানই চলচ্চিত্র শিল্পের রাজধানী ।

    জাপানী একটি পরিবার কিভাবে ধাপে ধাপে ধ্বসে পড়ছে পরিবারের কর্তা চাকরি হারাবার পরে, তার মর্মান্তিক, কবিতাভ, সাংগীতিক কাহিনি বলেছেন কুরোসাওয়া । কিউরের তীব্র ভয়ের আবহাটা এখানেও আছে, কিন্তু তার সাথে যোগ হয়েছে অসাধারণ রসবোধ এবং পর্যবেক্ষণ শক্তি । এবং, ছবির শেষের দিকে, অবিরাম হতাশাবোধের পরে, একটু আশার ছোঁয়া । এই অন্তিমাংশটিই হয়ত ছবির দুর্বলতম অংশ, কিন্তু তারপরও স্মরণীয় । ছবির একদম শেষে পরিবারটির ছোট ছেলে বাজাচ্ছে চন্দ্রিমা নামে ক্লদ দেবুসির বিখ্যাত সোনাটা । এই সোনাটার পরই ছবিটি শেষ করতে পারতেন কুরোসাওয়া, কিন্তু অপেক্ষা করলেন বাবার এগিয়ে এসে ছেলের মাথায় হাত রাখবার জন্য, এবং তাঁর সঙ্গে অপেক্ষা করে ঠিক তখনই দর্শকেরা ফেটে পড়লেন করতালিতে । খেলা ড্র, ক্লদ দেবুসি ১ : কিরোশি কুরোসাওয়া ১ ।

    নাগিসা ওশিমার সিনেমা

    নিউ ইয়র্ক ফিল্ম উত্সবে নতুন ছবির পাশাপাশি একটি রেট্রোস্পেকটিভ চলছিল । জাপানী পরিচালক নাগিসা ওশিমার এই রেট্রোস্পেকটিভের নাম ছিল ইন দ্য রেল্ম অভ ওশিমা -- বেশ কিছু ছবি দুসপ্তাহের বেশি ধরে দেখানো হল । আমি দেখলাম :

    জাপানে রাত্রি ও কুয়াশা

    য়ুনবোগির ডায়েরি

    মধ্যাহ্নে হিংস্রতা

    আশা-ভালবাসার শহর

    ম্যাক্স, আমার ভালবাসা

    আবেগের সাম্রাজ্য

    তিন মাতালের কাহিনি

    এই ফিল্মগুলি নিয়ে অল্প-বিস্তর আলোচনা করার আগে আরেকটা জিনিস উল্লেখ করি । তালিকাটি তৈরি করতে গিয়ে বুঝলাম কিছু ছবির নাম ভুলে গেছি, মনে করবার জন্য আই. এম. ডি. বি-র ওয়েব-পাতায় গিয়ে লক্ষ করলাম, বাংলাদেশ নিয়ে ওশিমা তিন-তিনটি টেলি-ডকুমেন্টারী বানিয়েছিলেন -- জয় বাংলা (১৯৭২), সোনার বাংলা (১৯৭৬) এবং তৃতীয়টার ইংরেজী নাম পেলাম না -- বেঙ্গল নো চিচি লামান (১৯৭৩) । এর কোনটাই রেট্রোস্পেকটিভে দেখানো হয়নি । অবাক হচ্ছি, কোনদিন শুনিনি এরকম কিছু, গুগল খোঁজ দিয়ে বাংলাদেশ বিষয়ক একটি ওয়েব-পাতা অবশ্য পেলাম যেখানে ছবি তিনটির উল্লেখ আছে ।

    মূল প্রসঙ্গে ফিরে আসা যাক । মোটের উপর, ওশিমার ছবি তত ভাল লাগেনি, হয়ত জাপানী ফিল্মের কাছে প্রত্যাশা খুব বেশি বলেই । কুরোসাওয়া বা মিজোগুচির কথা বাদই দিলাম, সেইজুন সুজুকি বা তাকেশি কিতানো-র ছবির আমি বেশি ভক্ত ওশিমার তুলনায় । যেসব ছবি দেখলাম ওশিমার, তার মধ্যে আবেগের সাম্রাজ্যই একমাত্র দুর্দান্ত -- সত্যি দেখবার মত ।

    "য়ুনবোগির ডায়েরি" তীক্ষণ শর্ট-ফিল্ম । স্বল্প দৈর্ঘ্যের বলেই বোধহয় য়ুনবোগির ডায়েরি বেশ ভাল লাগল, কারণ বড় ফিল্ম অকারণেই আরো বড় করবার প্রবণতা ওশিমার রয়েছে । ৬০-এর দশকের কোরিয়ার দারিদ্র্রের ছবি য়ুনবোগি নামের একটি ছোট ছেলের দৃষ্টিকোণ থেকে দেখানো হয়েছে । কোরিয়ার ব্যাপারে ওশিমার বিশেষ আগ্রহ, "তিন মাতালের কাহিনি"-র ঘটনাটি এরকম -- জাপানী তিন ছাত্র তাদের পরিচয়-পত্র হারিয়ে ফেলার পরে তাদেরকে কোরীয় অনুপ্রবেশকারী বলে সন্দেহ করতে থাকে পুলিশ । স্যাটায়ার এটা, ফিল্মটি কাঠামোর দিক থেকেও বেশ উল্লেখযোগ্য । একেবারেই ফার্স হচ্ছে "ম্যাক্স মন আমর" । ব্রিটিশ এক কূটনীতিক সন্দেহ করতে থাকে তার স্ত্রী প্রেম করে বেড়াচ্ছে অন্য কারো সাথে, দেখা গেল তার সন্দেহ সত্যি, তবে প্রেমিকটি ম্যাক্স নামক এক শিম্পাঞ্জী । উদ্ভট কাহিনি ।

    আগে যেসব ছবির উল্লেখ আছে সেগুলোতে ওশিমার বামপন্থী মতাদর্শের প্রভাব আছে কম-বেশি, কিন্তু "আশা-ভালবাসার শহর" আর "জাপানে রাত ও কুয়াশা" -- এই দুই ছবি প্রকাশ্যতই রাজনৈতিক । কোন ক্ষেত্রেই ফল তেমন সুখকর হয়নি । জাপানে রাত ও কুয়াশা তো মহা বিরক্তিকর, দুই ঘন্টা ধরে কিছু আণ্ডারগ্রাউণ্ড বামপন্থীর অবান্তর চুলোচুলি, এবং পরস্পরকে দোষারোপ তাদের আন্দোলনের ব্যর্থতার জন্য । আশা-ভালবাসার শহর তুলনায় ভাল, বলতে কি, ছবির প্রথম তিন-চতুর্থাংশ অসামান্য । দরিদ্র একটি ছেলে তার অসুস্থ মা আর বোকাটে বোনের সাথে বাস করছে -- টাকার জন্যে স্কুল ফাঁকি দিয়ে কখনো করছে জুতো পালিশ, কখনো পোষা পায়রাটি বিক্রী করছে এই আশায় যে পাখিটি সুযোগ পেলেই ফিরে আসবে । এই পায়রা বিক্রি করতে গিয়েই এক শিল্পপতির মেয়ের সাথে ছেলেটির পরিচয়, এ পরিচয় কিছুটা রোমান্সের দিকেও গড়ানো শুরু করেছিল ফিল্মের মাঝামাঝি এসে । কিন্তু শেষের দিকে, হা হতোস্মি, মনে হল কমিউনিস্ট ইশতেহার থেকে নামতা পড়ার মত ওশিমা রিডিং পড়ছেন ।

    অন্যদিকে, ওশিমা যৌনতা এবং হিংস্রতার সম্পর্ক ও সীমারেখা নিয়ে বেশ কিছু ছবি বানিয়েছেন । এগুলির মধ্যে সবচেয়ে বিখ্যাত যে ছবি -- সেই ইন্দ্রিয়-রাজ্য আমি দেখতে পারিনি । দেখা ছবিগুলির মধ্যে "মধ্যাহ্নে হিংস্রতা" এবং "আবেগের সাম্রাজ্য" এই ধারার মধ্যে পড়ে । মধ্যাহ্নে হিংস্রতা এইজুকে নামক এক বহু-খুনীর কাহিনি, তবে কাহিনিটি কি তা খুব স্পষ্ট নয়, কারণ উদ্দেশ্যমূলকভাবে গল্প পেঁচিয়েছেন ওশিমা, আর খুব লম্বাও মনে হল ছবিটাকে । আবেগের সাম্রাজ্য কিন্তু অসাধারণ । জাপানের এক গ্রামে প্রেমে পড়ে তরুণ তয়োজি আর সেকি । সেকি বিবাহিত, তার স্বামী গিসাবুরো নামের এক প্রৌঢ় রিকশাচালক (এই রিকশা কলকাতার হাতে টানা রিকশা), তাদের দুটি বাচ্চাও আছে । প্রেমিকযুগল শেষ পর্যন্ত গিসাবুরোকে খুনই করে ফেলে শ্বাসরোধ করে -- কিন্তু এরপর গিসাবুরোর ভূত দেখা শুরু করে গ্রামশুদ্ধ সবাই, বিশেষত সেকি আর তয়োজি । এই ফিল্মে ওশিমা তৈরি করেছেন বর্ষাঘন, তুষারমলিন রহস্যের পরিবেশ, পরিবেশ তৈরির ক্ষমতায় এই ছবির ওশিমা কেবল আকিরা কুরোসাওয়া এবং কেনজি মিজোগুচির সাথেই তুলনীয় । এই তুলনা করতে গিসাবুরোর-ভূত প্রসঙ্গ সত্বেও হেসে ফেলছি, কারণ এই দুই পরিচালককেই নাকি অত্যন্ত অপছন্দ করেন ওশিমা । না করলেই বোধহয় ভাল করতেন ।

    খুব কম কথায় আরো কিছু ছবির কথা

    "মাথা কাটা নারী" নামের আর্জেন্টাইন একটা ছবি দেখব কি দেখব না করতে করতে ঢুকে পড়ে দেখি পরিচালক লুক্রেশিয়া মার্তেলকে বহু-প্রসংশায় সিক্ত করে দর্শকদের সাথে পরিচয় করিয়ে দিচ্ছেন অতুলনীয় পেদ্রো আলমোদোভার । ছবিটি দেখার সিদ্ধান্ত নেয়ায় নিজের পিঠ চাপড়ে দেখা শুরু করে দেখি মোটেই ভাল লাগছে না । একেবারেই না । ভেরো নামের এক মহিলা গাড়ি চালাতে গিয়ে কোন কিছুকে চাপা দিয়েছেন -- সেটা একটা কুকুরও হতে পারে, বা হতে পারে রাস্তায় খেলতে থাকা একটি ছেলে । কিন্তু পরিচালক মার্তেল এরপর দর্শককেই চাপা দিলেন অসংখ্য সূক্ষ্ম-কিন্তু-শীতল ফ্রেমের তলায়, দম বন্ধ হয়ে মরার জোগাড় । অন্য দিকে ফিলিপিনো পরিচালক ব্রিলিয়ান্ত মেন্দোজা-র "সারভিস" এর কাহিনি একটি পরিবারকে নিয়ে, যারা একটি পর্নো ছবির সিনেমা হল চালায়, এবং সেই একই দালানে বসবাসও করে । সারভিস একটু বেশি রকম বাস্তবধর্মী -- বেশ কিছু গা রিরি করা দৃশ্য আছে ছবিটিতে । তবে পরিচালক শক্তিশালী । শেষ যে চলচ্চিত্রের কথা বলব সেটির নাম "আন্নার সাথে চার রাত" । পোলিশ পরিচালক স্কোলিমোস্কির নতুন ছবি এটি, সতেরো বছর পর এই প্রথম তিনি ফিল্ম বানিয়েছেন । এই ব্যাপারটাকে খুব গুরুত্ব দেয়া হল, ভাবটা এমন যে সতেরো বছর ধরে এই মাস্টারপিসকে ডিমের মত তা দিয়েছেন পরিচালক । স্কোলিমোস্কি নিজেও ফিল্ম দেখানোর আগে চোখ পাকিয়ে দর্শকদের প্রস্তুত হতে বললেন, কারণ এরকম কোন কিছু দর্শকরা নাকি কস্মিনকালেও দেখেননি । এরপর ফিল্মটি দেখে একেবারে আত্মহারা হওয়ার মত কারণ না ঘটলেও, লেওন নামের কিছুটা অপ্রকৃতিস্থ লোকটির জীবনকাহিনিকে যথেষ্ট আকর্ষণীয়ই মনে হল । বাঁচা গেছে, কারণ আমি একেবারে মূষিক প্রসবেরই ভয় করছিলাম ।



    (পরবাস-৪২, ডিসেম্বর, ২০০৮)

  • এই লেখাটি পুরোনো ফরম্যাটে দেখুন
  • মন্তব্য জমা দিন / Make a comment
  • (?)
  • মন্তব্য পড়ুন / Read comments
    • কীভাবে লেখা পাঠাবেন তা জানতে এখানে ক্লিক করুন | "পরবাস"-এ প্রকাশিত রচনার দায়িত্ব সংশ্লিষ্ট রচনাকারের/রচনাকারদের। "পরবাস"-এ বেরোনো কোনো লেখার মধ্যে দিয়ে যে মত প্রকাশ করা হয়েছে তা লেখকের/লেখকদের নিজস্ব। তজ্জনিত কোন ক্ষয়ক্ষতির জন্য "পরবাস"-এর প্রকাশক ও সম্পাদকরা দায়ী নন। | Email: parabaas@parabaas.com | Sign up for Parabaas updates | © 1997-2024 Parabaas Inc. All rights reserved. | About Us