অজৈব ও জৈব রসায়নের পার্থক্য
তেজালো আয়ন পেশির জোরে আণবিক জুটি ভাঙে; ছিঁড়ে আনে
বিপরীত আয়নকে। সে-ও দুর্বল সঙ্গীর হাত ছেড়ে অনায়াসে শক্তির
গললগ্ন হয় (প্রতিস্থাপন)। অম্ল-ক্ষারের আমরণ দ্বন্দ্বে উভয়ের বিলয়,
পড়ে থাকে নিরুত্তাপ পাতাল-গঙ্গার ধারা (প্রশমন)। মিলনে বিচ্ছেদে
বিদ্যুৎ ঝলক, দাহ্য বাতাসে বারুদের গন্ধ (সংযোগ/বিয়োজন)।
অজৈব অণুরা এজন্যেই বহরে বাড়ে না বেশি। অথচ জৈব রসায়নে
হাতে হাত ধরে গড়ে ওঠে সুদীর্ঘ শৃঙ্খল, অঙ্গার, উদযান বন্ধনে
নতুন অণুকে সহজেই টেনে নেয় আপন পরিবারে। দহনের লকলকে
শিখা, শক্তির গর্জন নেই, নিঃশব্দে লেখা হতে থাকে অ্যামিনো এসিডের
পাতাজোড়া ফরমুলা। জিনের জটিল সোপান। আলো ফোটে কোষের গহীনে।
বেহাগ সকাল
বলা নেই, কওয়া নেই, হঠাৎ এমন
বেহাগ সকাল হয়ে বেজে উঠলে
আর কি শুয়ে থাকা যায়!
ছুটির ঘুমের দফারফা
মানছি, দোষটা আমারই
মাঝরাতে ঠেলে তুলে গানটা তোর
কানে না ঢুকিয়ে দিলেও হতো
কী যে ঝাঁপতালের চক্করে পড়ে গেলাম
শুনশান শীতের আকাশ
অখণ্ড অনুনাদী স্তম্ভের মতো
কম্বু-মধুর স্বরে বেজে উঠলো,
বাজতেই লাগলো
গানের একেকটা ঘাটে
আমাদের গলা আর আঙুল আছড়ে পড়ছিলো আর
আমরা কখনো মেঘ কখনো বাতাস
কখনো ভরা পূর্ণিমার জোয়ার হতে হতে
রাতের অপার শরীরে ভেসে যাচ্ছিলাম
নিশির ডাকের মতো এইসব মায়া
রোদ ফুটলে সচরাচর উবে যায়
আজ দেখছি তোর পেছন ছাড়ে নি
আমাকেও টেনে তুললি
ওদিকে একটু বাদেই হাজার কাজের ডাক
দমাদ্দম ডোরবেল বাজাতে থাকবে
বেহাগ থেকে টেনে হিঁচড়ে তোকে
বাড়ির কোণে কোণে গুঁজে দেবে
রান্নাঘর থেকে ওয়াশিং মেশিনে
.... কী যে করি,
আজ সব অন্যরকম
যদি আয়নায় হাত ছোঁয়ালেই
একটা আশ্চর্য গোপন দরজা খুলে যায়
তোর ছায়াকে দশহাতে দশটা কাজ ধরিয়ে
আমরা দিব্যি একের পর এক
মাত্রা পার হয়ে
মিশে যাই অফুরন্ত বেহাগ-সকালে
মাসিকে : রোগশয্যায়ভীষ্ম বললেন, ``বৎস্যগণ, আমি মানুষের ভোগ্যবস্তু নিতে পারি না।" তারপর তিনি অর্জুনকে বললেন,
``...তুমি আমাকে বিধিসম্মত জল দাও।" ...অর্জুন ... পর্জন্য অস্ত্রে বাণ সন্ধান করে ভীষ্মের দক্ষিণ পার্শ্বের
ভূমি বিদ্ধ করলেন। সেখান থেকে অমৃততুল্য দিব্যগন্ধ স্বাদু নির্মল শীতল জলধারা উত্থিত হল।মহাভারত, ভীষ্মপর্ব (রাজশেখর বসু অনূদিত সারসংক্ষেপ)
এখন উদ্ভিদ-শরীর। জল মাটি হাওয়া হয়ে
যেতে যেতে, মাঝে মাঝে স্নায়ুপ্রান্তে ফেলে-যাওয়া
চেতনার মৃদু টানে চোখ মেলছ। নলপথে
শরীরে যে অন্নজল অনুপান সেসবই
বাহুল্য মাত্র। আসলে ভালোবাসা ছাড়া কোনো
ওষধি তরল নামবে না গলা দিয়ে।
স্বার্থের জটিল ত্বক ফুঁড়ে গভীর খননে
হৃদয়ের উৎস থেকে যদি কেউ আনে
সুপেয় সুগন্ধী ধারা, হয়তো শুষ্ক তালু
ঈষৎ ভিজবে। পিপাসা যেটুকু আসলে তো
অনাবিল অশ্রুর জন্যেই। শিথিল পাণ্ডুর
ত্বকে অন্তরের শিশির ছাড়া আর্দ্রতার কোনো
বাসনা নেই আর। যদিও জানা নেই কতটুকু
পাবে, কম কালো জমা তো হলো না
চারপাশে, কিমাকার নীচতার বিষ অন্ধকার
তবু তুমি, গোধূলির আলোর বিভ্রম যেমন
লেগে থাকে ছায়ার সীমানায়
দেখে নিতে নিতে কতটুকু চায়
তাকে পৃথিবী এখনো
জাগতিক অম্লজান ফুসফুসে প্রয়োজন
নেই আর, শিয়রে স্বজন
যদি কেউ থাকে, আকুল নিঃশ্বাসে
নিখাদ ভালোবাসা মেশায় বাতাসে
সেইটুকু বুক ভরে একবার
টেনে নেবে বলে
এখনো আলগোছে ইন্দ্রিয়ের দ্বার
খোলা, তারপর চলে
যাবে। আবির ছড়ানো পথে।
কৃষ্ণচূড়া মাথা তোলে
ইতস্তত আকাশের ফাঁকে
চেনা কণ্ঠের ডাকে
শেষবার সাড়া দেবে, তারপর
মিশে যাবে জল মাটি হাওয়া
হয়ে জড় পৃথিবীতে।