• Parabaas
    Parabaas : পরবাস : বাংলা ভাষা, সাহিত্য ও সংস্কৃতি
  • পরবাস | সংখ্যা ৭৯ | জুলাই ২০২০ | কবিতা
    Share
  • তিনটি কবিতা : দত্তাত্রেয় দত্ত


    Que Sera Sera

    প্রমোদ উদ্যান এই ধাঁধাঁলো জটিল ভুলভুলি।
    যে পথে যেতেই হবে, সেই পথ নিজে বেছে নিয়ে
    নিয়তিঘটেতে আয়ু ঢেলে নিজে পূর্ণ করে তুলি।

    সামনে গভীর দহ, পিছনে উড়ছে মরুধূলি
    আঁধারে আঁধির ঝাপ্‌টা, জানিনা দুচোখে পড়ে কী এ
    প্রমোদ উদ্যান এই ধাঁধাঁলো জটিল ভুলভুলি।

    হাতছানি দেয় চোখ খুললেই সে-প্রমাদগুলি
    জলার ভূতেরা, যারা খালি ডাকে আলেয়া জ্বালিয়ে,
    নিয়তিঘটেতে আয়ু ঢেলে নিজে পূর্ণ করে তুলি।

    পায়েতে ঠোকর মারে অস্থি, গড়িয়ে যায় খুলি
    কোটর ভর্ৎসনা করে স্থিরদৃষ্টে দুচোখে তাকিয়ে
    প্রমোদ উদ্যান এই ধাঁধাঁলো জটিল ভুলভুলি।

    তমিস্রায় কার নাম লিখেছে ও কার নখগুলি?
    নাকি সে আমারই কোষ্ঠী আঁকা আছে হাওয়া আঁচড়িয়ে?
    নিয়তিঘটেতে আয়ু ঢেলে নিজে পূর্ণ করে তুলি।

    যত না অচেনা হোক, পথ যেন কিছুতে না ভুলি
    আঁধারে ঝল্‌সে দেহ মাস মজ্জা যাক না শুকিয়ে
    প্রমোদ উদ্যান এই ধাঁধাঁলো জটিল ভুলভুলি।
    নিয়তিঘটেতে আয়ু ঢেলে নিজে পূর্ণ করে তুলি।

    Totentanz

    সে শুধু তাকিয়ে দেখে, বিগলিত মুখে মাখা হাসি,
    ছোঁয়া দিলে গায়ে ঢলে; তবে সে হিসেব রাখে মনে
    কে আসে কে যায় আর ক'টা হয় স্থায়ী অনাবাসী।

    আনন্দে বাজার হল সহৃদয়-- এত ঘেঁষাঘেঁষি
    এ যেন স্বর্গের টান-- দ্বিধা নেই ঘন আলাপনে
    সে শুধু তাকিয়ে দেখে, বিগলিত মুখে মাখা হাসি।

    হারানো দুচোখ তার অতল কোটরে পরবাসী
    ঠোঁট খসা দন্তপাঁতি মেলে গোনে অপাঙ্গ গণনে
    কে আসে কে যায় আর ক'টা হয় স্থায়ী অনাবাসী।

    ইভেন্ট ম্যানেজমেন্টে হোক্‌ না খানিক ঠাসাঠাসি,
    ডেকেছে মন্‌সব্‌দার তিনহাজারির জন্মদিনে
    সে শুধু তাকিয়ে দেখে, বিগলিত মুখে মাখা হাসি।

    এ-মিলন উৎসবে সেও কিছু প্রাপ্তির প্রত্যাশী।
    শীর্ণ ঘাড়ে গজদন্ত মাথা নাড়ে, আঙুলেতে গোনে
    কে আসে কে যায় আর ক'টা হয় স্থায়ী অনাবাসী।

    কুরুক্ষেত্রে বাজালে হে বংশীধারী হ্যাম্‌লিনের বাঁশি,
    উদ্দাম নৃত্যয় ছুটি মৃত্যুভয়ে মৃত্যুর পিছনে--
    সে শুধু তাকিয়ে দেখে, বিগলিত মুখে মাখা হাসি--
    কে আসে কে যায় আর ক'টা হয় স্থায়ী অনাবাসী।



    স্মৃতিতে পোল্যান্ড

    বারবার ফেরে সে তো, আমি ফিরে আসি বারবার
    নিসর্গের কাছে; তার স্মরণপ্রতিমে দেখা যায়
    প্রকৃতি ইশারা করে : ঢেউতোলা দেহদোলা তার।

    ভবিষ্যৎ স্থায়ী নয় সাময়িক দৃশ্যতে আমার
    ঠাঁই নেই বারবার গাড়ি তাকে ছেড়ে চলে যায়,
    বারবার ফেরে সে তো, আমি ফিরে আসি বারবার।

    হিমেল কুয়াশামাঠে পাই যদি তাহাকে আবার
    কুড়ি বছরের নদী নরম-হলুদ কেন হয়?
    প্রকৃতি ইশারা করে : ঢেউতোলা দেহদোলা তার।

    দহন জুড়িয়ে ডাকে সবুজের ছায়াময়ী, যার
    শান্তিতে দিয়েছি ডুব, সে কি নেয় অন্তিম বিদায়?
    বারবার ফেরে সে তো, আমি ফিরে আসি বারবার।

    কখন বসন্ত যায়, স্মৃতি ভাসে সুগন্ধ হাওয়ার
    মিশে থাকা অবয়ব খুঁজে মরি দিগন্তরেখায়
    প্রকৃতি ইশারা করে : ঢেউতোলা দেহদোলা তার।

    এভাবেই রূপ ফোটে পুষে রাখা যত শূন্যতার,
    আলস্যে শ্রান্তিতে বাঁধা থাকে প্রত্যাগমনের লয়
    বারবার ফেরে সে তো, আমি ফিরে আসি বারবার
    প্রকৃতি ইশারা করে : ঢেউতোলা দেহদোলা তার।



    অলংকরণ (Artwork) : অলংকরণঃ অনন্যা দাশ
  • এই লেখাটি পুরোনো ফরম্যাটে দেখুন
  • মন্তব্য জমা দিন / Make a comment
  • (?)
  • মন্তব্য পড়ুন / Read comments