• Parabaas
    Parabaas : পরবাস : বাংলা ভাষা, সাহিত্য ও সংস্কৃতি
  • পরবাস | সংখ্যা ৪৬ | সেপ্টেম্বর ২০১০ | গল্প
    Share
  • হারাণ-প্রাপ্তি-নিরুদ্দেশ : অঞ্জন নাথ



    নদীর ধারের গ্রাম - সমুদ্র থেকে অনেক দূরে হলেও জোয়ার ভাটা ব্যাপারটা বেশ ভালোই বোঝা যায় আর জোয়ার এলেই গ্রামের বাচ্চাদের একটা মজার খেলা হলো জোয়ারের জল কতটা উঠবে সেই নিয়ে বাজি ধরা । নদীর ঢালু পাড়ে প্যাঁকাটি গুঁজে গুঁজে একেক জন ঠিক করে আজ জোয়ারের জল ওর প্যাঁকাটি অবধিই উঠবে - হার জিতের ব্যাপারে হাত বদল হয় ওদের নিজস্ব সামান্য সম্পত্তি বলতে মার্বেলের গুলি, চকমকি পাথর নয় তো আম কাটার ঝিনুক এই সব । আজও তাই জোয়ার আসতেই বাচ্চারা সব নদীর পাড়ে হাজির - যারা বাজি রেখেছে তারা পাড়ে দাঁড়িয়ে নজর রেখেছে জল কতটা উঠলো আর বাকিরা জলে নেমে পড়েছে হুটোপাটি করতে - এরা সব জলের পোকা - মায়ের পেট থেকে বেরিয়েই সাঁতার শিখে যায় তাই জলে ওদের কোন ভয় নেই তবে জোয়ারের সময় ঘাটের বড়রা নজর রাখে পুঁচকেগুলো যেন অতি উত্সাহে নদীর বেশি গভীরে না চলে যায় । এখন ভরা দুপুর তাই নদীর ঘাটে স্নানের লোকেরও ভিড় - আজ জোয়ারের টানটা একটু বেশিই মনে হচ্ছে - বড়রা যারা স্নান করছিলো বাচ্চাদের বার বার সাবধান করছে কিন্তু কে শোনে কার কথা । মাঝ নদীতে একটা বড় মহাজনি নৌকা যাবার সময় মাঝি হাঁক পাড়লো,

    `সাবধান - জলের টান বেশি-ই-ই -- ভরা জোয়ার আসে-এ-এ'

    এই নদী গ্রামের লোকের জীবন - ভোরে সূর্য ওঠার আগে ধার্মিকরা আসেন কোমর জলে দাঁড়িয়ে সূর্য নমস্কার করতে, মাছ ধরার নৌকাগুলো ফিরতে শুরু করে সকালের বাজারে মাছ পৌঁছে দেবার জন্য, তারপর আসতে শুরু করে গ্রামের বৌ-ঝিরা স্নান করে কলসি ভরে খাবার জল নিয়ে যেতে, ধীরে ধীরে ব্যাটা ছেলেদের ভিড় বাড়ে আর তার সাথে বাচ্চাদের - সারাদিনই চলতে থাকে নদীর ঘাটে গ্রামের লোকেরা আনাগোনা - তাই সবাই জানে ভরা জোয়ার ব্যাপারটা কি । তাড়াতাড়ি স্নানার্থীদের একজন বাচ্চাদের তাড়া দিল,

    `এই ব্যাটারা, ওঠ তাড়াতাড়ি - শুনলি না মাঝি কি বলে গেলো - ভরা জোয়ার আসছে -- আরে; কথা শুনিস না ক্যান রে তোরা - বলি পোঁয়ে বড় তেল হয়েছে না - দাঁড়া মজা দেখাচ্ছি ।' পাড়ের একজনকে ডেকে বললো,

    `এই নবা, একটা ছপটি দেতো - হারামজাদাদের পোঁয়ের তেল বার করি - এত করে বলছি তবু ওঠার নাম নাই -'

    ছপটি দিয়ে জলে ছপাং ছপাং করে মারতেই বাচ্চারা হুড়মুড় করে ঘাটে উঠে পড়লো । ওদিকে পাড়ের এক বয়স্ক লোক হাঁক পাড়লেন,

    `ওরে, কে আছিস, নৌকা গুলা দ্যাখ রে - খুঁটি ঠিক আছে কিনা - ভালো করে কাছি বাঁধ নইলে ভরা জোয়ারে নৌকা গুলান কোথায় ভেসে যাবে ।'

    নবা সহ তিন চার জন নৌকা বাঁধার খুঁটিগুলো কাদা থেকে তুলে আরও ওপরে মাটিতে ভালো করে পুঁতে তাতে শক্ত করে কাছি বাঁধলো । নবা হঠাৎ চেঁচিয়ে উঠল,

    `ও অপু জেঠা, তাড়াতাড়ি আসো - এই নৌকার ধারে একটা লোক যে হাবুডুবু খায় ।' অপু জেঠা মানে অপূর্ব নস্করই নৌকা বাঁধার হাঁক দিয়েছিলেন - গ্রামের মান্যগণ্য লোক - পঞ্চায়েতের সদস্য - তাড়াতাড়ি আরও কয়েকজনের সাথে নদীর পাড় দিয়ে নেমে এলেন,

    `ভালো করে দ্যাখ - মড়া হলে ভাসায়ে দে ।'

    `দেখে তো মনে হয় না - এখনো ফুলে নাই - তুলবো নাকি ?'

    `সাবধানে লগি দিয়া কাছে টান - আঘাটায় জলে বেশি নামিস না - জলের টান বড্ড বেশি ।' চারপাঁচ জন মিলে নদীর ঢালে শরীরটা তুলতে হিমসিম খেয়ে গেলো -চিৎ করে শোয়াতে দেখে বছর তিরিশেকের কাছাকাছি এক জোয়ান মরদ - অনেকক্ষণ জলে থাকার জন্য শরীর প্রায় সাদা হয়ে গিয়েছে, হাতে পায়ের চামড়া কুঁচকে গিয়েছে । অপূর্ব বুকে হাত দিয়ে কিছু বুঝতে না পেরে ভুরু কুঁচকে বুকের ওপর কান লাগিয়ে শোনার চেষ্টা করলেন,

    `ওরে, মনে হয় প্রাণ আছে রে - বুকে একটু ধুকপুক করে । তোরা একে পাড়ে নিয়ে উপুড় করে শোয়া - পেট থেকে জল বার করতে হবে । আর কেউ সাইকেলে কবরেজ মশাইরে নিয়া আয় - সাইকেলে বসাইয়াই আনবি - একদম দেরি না - চটপট একটা কম্বলও চাই ।'

    অপূর্বর কথামতো লোকটাকে পাড়ে তুলে উপুড় করে শোয়াতে অপূর্ব ওর পিঠের দুদিকে দুই হাতে আস্তে আস্তে তালে তালে চাপ দিতে শুরু করলেন - চাপ দেন আর ছাড়েন - তিন চার বারের পরেই লোকটার মুখ দিয়ে হড় হড় করে জল বেরুতে শুরু করেছে - বেশ কিছু সময় পর জল বেরুনো বন্ধ হলে অপূর্ব আবার পিঠে কান লাগিয়ে শুনলেন,

    `ধুকপুকানি মনে হয় একটু বেড়েছে - একে বট তলায় শোয়া আর আগুন জ্বালা - হাতে পায়ে গরম সেঁক দিতে হবে - শরীর তো বরফের মতো ঠাণ্ডা - কত সময় জলে ছিল কে জানে ।'

    এর মধ্যে খবর পেয়ে নদীর ঘাটে গ্রামের লোক ভেঙে পড়েছে । একটু পরেই সাইকেলের ক্যারিয়ারে চেপে কবিরাজ মশাই হাজির - লোকটাকে ভালো করে কম্বল দিয়ে জড়িয়ে বট তলাতে শুইয়ে দু-তিন জন মিলে নিজেদের গায়ের গামছ কাঠ কুটোর আগুনে গরম করে হাতে পায়ে সেঁক দিতে শুরু করেছে । কবিরাজ মশাই নাড়ি ধরে বসে রইলেন কিছু সময়,

    `নাড়ির জোর খুব কম - এক বাটি গরম দুধ নিয়া আয় তো - ওষুধটা গরম দুধে দিয়া খাওয়াতে হবে ।'

    কবিরাজ মশাই ওষুধ গরম দুধে মিশিয়ে চামচ করে লোকটার মুখে ঢাললেন কিন্তু সেটা ঠোঁটের পাশ দিয়ে গড়িয়ে গেলো । আবার নাড়ি দেখে আস্তে করে মুখ হাঁ করিয়ে মুখের মধ্যে আঙুল ঢুকিয়ে একটু নেড়ে চেড়ে একটা ছোট কচুরি পানার টুকরো বের করে আনলেন ।

    `ভাগ্যিস, ফুসফুসে যায় নি - তাহলে হয়েছিলো আর কি ।'

    এরপর লোকটার মাথা কোলের ওপর নিয়ে আস্তে করে মুখে এক চামচ দুধ ঢাললেন - গলা দিয়ে ঘড় ঘড় আওয়াজের সাথে মনে হল দুধটা পেটে গেল - ধীরে ধীরে এক চামচ দুধ একটু অপেক্ষা করে করে মুখে দিতে লাগলেন । হাতে পায়ে গরম সেঁক দেওয়াতে আর ওষুধে মনে হয় কাজ দিয়েছে - মুখের রং একটু একটু করে ফিরে আসছে । কবিরাজ মশাই আস্তে করে বললেন,

    `অপু, এত বড় জোয়ান লোক তো এমনি এমনি জলে ভেসে আসতে পারে না - খুন টুনের ব্যাপার নয় তো ? গায়ে কি চোট ফোট দেখেছিস ?'

    `না কাকা, গায়ে হাতে পায়ে তো কিছু দেখি নাই - মাথায় চোট লাগেনি তো ?'

    কবিরাজ মশাই আস্তে করে মাথার চুলে হাত বুলিয়ে সামনে থেকে পেছনে যেতেই বললেন, `মাথাতেই লেগেছে রে - পেছন দিকে অনেকটা জায়গা ছেঁচে গিয়ে ফুলে আছে - জলের জন্য রক্তের দাগ নেই - মনে হয় মাথার পেছনে চ্যাপ্টা কিছুর আঘাত লেগেছে - বৈঠার মারও হতে পারে - হয়তো মেরে জলে ফেলে দিয়েছে - বেঁচে হয়তো যাবে তবে মাথার আঘাত তো - জ্ঞান না হলে কিছু বলা যাচ্ছে না - আমি ওষুধের পুলটিস দিয়ে এখন বেঁধে দিচ্ছি । আপাতত এতেই হবে - এরপর চণ্ডী মণ্ডপে নিয়ে মায়ের সামনে শুইয়ে দে - বাকিটা মায়ের দয়া । দু'এক জনকে রেখে দিস পাহারা দিতে - জ্ঞান ফিরলে যেন খবর দেয় ।'

    লোকটাকে চণ্ডী মণ্ডপে এনে শুইয়ে দেবার পর লোকের ভিড় কমে গেল - সবার বাড়িতেই মেলাই কাজ পড়ে আছে - শুধু নবা আর একটা ছেলে বসে রইল - ওরাই লোকটাকে দেখতে পেয়ে জল থেকে তুলেছিল তাই ওর বেঁচে ওঠার ব্যাপারে ওদের চিন্তাই বেশি ।

    প্রায় তিন চার ঘন্টা পর বিকেলের দিকে লোকটার চোখ পিট পিট করে নড়ে উঠলো - নবারা ঠায় বসে বসে ঝিমাচ্ছিলো - হঠাৎ নজরে পড়তে নবা অন্য ছেলেটাকে তাড়াতাড়ি পাঠাল কবিরাজ মশাই আর অপু জ্যাঠাকে খবর দিতে । মিনিট পাঁচেক পর মনে হল লোকটা একটু চোখ খুলল - নবা আস্তে করে জিজ্ঞেস করল ।

    `তোমার নাম কি ?'

    লোকটা নবার দিকে কেমন একটা ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে রইল - আবার জিজ্ঞেস করাতে একটু মাথা নাড়তে গিয়ে যন্ত্রণায় কঁকিয়ে উঠে আবার চোখ বুজলো - খুব ধীরে ধীরে শ্বাস পড়ছে । এরমধ্যে কবিরাজ মশাই ও অপূর্ব এসে হাজির । কবিরাজ মশাই নাড়ি ধরতে লোকটা চোখ খুলে তাকালো - বেচারির চোখের কোনা দিয়ে জল পড়ছে । অপূর্ব আস্তে করে কপালে হাত বুলিয়ে বললেন,

    `তোমার চোটটা খুব গুরুতর - কথা বোলো না - মা চণ্ডীর দয়াতে সব ঠিক হয়ে যাবে ।' কবিরাজ মশাই অপূর্বকে বললেন, `অপু, একে তো রাত্রে এখানে রাখা যাবে না - খুব বিশ্রামের দরকার - আজ রাত্রে দুধ খেয়েই থাক কাল থেকে পাতলা খিচুড়ি দেওয়া যেতে পারে । তা কার বাড়িতে থাকবে ?' অপূর্ব একটু চিন্তা করলেন, `আমার বাড়িতেই নিয়া যাই - বাইরের ঘরটা তো খালি আছে - ওখানেই থাকুক, পরে ওর খবরাখবর নিয়ে ব্যবস্থা করা যাবে না হয় । কিরে নবা কিছু বলেছে কি ?'

    `জ্যাঠা, নাম জিজ্ঞেস করেছিলাম - কোনো উত্তর দেয় নাই - কেমন একটা ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে ছিল ।'

    কবিরাজ মশাই আস্তে করে মাথা নাড়লেন,

    `মাথায় গুরুতর চোট লেগেছে - অন্য কেউ হলে ওতেই মরে যেত - তাগড়া জোয়ান বলে বেঁচে গিয়েছে তবে দিন দুয়েক না গেলে কিছুই বোঝা যাবে না । অপু তুই না হলে ওকে তোর বাড়িতেই নিয়ে যা । আমি কাল সকালে আসব দেখতে ।'

    লোকটাকে অপূর্ব নিজের বাড়িতে নিয়ে গিয়ে পাশের ঘরটাতে শুইয়ে দিয়ে রান্নাঘরে খবর দিলে স্ত্রী সৌদামিনী বা সদু ঠোঁট ব্যাঁকালেন,

    `কোথাকার কে হিন্দু না মুছলমান জানা নাই তারে তুমি একেবারে ঘরে এনে তুললে ?'

    `লোকটা হিন্দুই সদু - মুছলমান নয় - জল থেকে তোলার পরই দেখেছি - ছুন্নত করা নাই -'

    `তোমার না মুখের কোনো রাখ ঢাক নাই - মেয়ে বড় হয়েছে - শুনতে পাবে না ?'

    `লোকটার মাথায় ভালো চোট লেগেছে - কবিরাজ কাকার কথায় বৈঠার মারও হতে পারে - খুন করার চেষ্টা কিনা জানি না তবে মনে হয় কাছাকাছি গ্রামের নয় - জলে অনেকক্ষণ ভাসতে ভাসতে এসেছে । এখনও কথা বলে নাই - পারবে কিনা কে জানে - কথা বললেই সব বোঝা যাবে । আমি পঞ্চায়েতের মিটিং-এ খবরটা দিয়া আসি যে আমার বাড়িতে আছে - হাজার হোক বাইরের লোক তো । তুমি এক ঘন্টা পরে এক গ্লাস গরম দুধ দিও ।'

    রাত্রে অপূর্ব গরম দুধে একটু হলুদ বাটা মিশিয়ে ধীরে ধীরে লোকটাকে চামচে করে খাইয়ে দিলেন - চোটের জন্য লোকটা একেবারে ঝিমিয়ে আছে - খুব দুর্বল - চোখ খুলতে পারছে না যেন । পরদিন সকালে দুধ নিয়ে গিয়ে দেখেন লোকটা চোখ খুলে তাকিয়ে আছে - চোখ মুখের ভাবও অনেকটা ভালো । অপূর্ব আস্তে করে জিজ্ঞেস করলেন, `তোমার নাম কি ? কোথায় থাক ? মাথায় কে মেরে জলে ফেলে দিয়েছিল ?

    লোকটা কিছু সময় ঘরের চালের দিকে তাকিয়ে খুব আস্তে বলল, `কিছু মনে নাই ।' বলেই খুব করুন চোখে অপূর্বর দিকে তাকালো ।

    `ঠিক আছে পরে কথা হবে - দুধটা আস্তে আস্তে খাও ।' বলে পিঠে হাত দিয়ে উঁচু করে তুলে দুধের গ্লাসটা লোকটার হাতে দিলে দেখলেন এখনও হাত কাঁপছে । এর মধ্যে কবিরাজ মশাই এসে হাজির - নাড়ি দেখে বললেন, `ঠিক আছে তবে খুব দুর্বল - এখন শুয়েই থাক আর এই ওষুধটা দিনে তিনবার অল্প জলের সাথে মিশিয়ে খাইয়ে দিস । চার পাঁচ দিন তো লাগবেই হাঁটাচলা করতে ।'

    দিন চারেক ধরে অপূর্ব ও সৌদামিনীর যত্নে লোকটা একটু সুস্থ হয়েছে - উঠে বসতে পারে তবে হাঁটতে গেলে এখনও টলমল করে । তবে ওর কোনো কথাই মনে নেই - কবিরাজ মশাই বললেন, `মাথার চোটের জন্যই ওর স্মৃতিভ্রংশ হয়েছে - দ্যাখো সময়ে যদি কিছু হয় - তবে মা চণ্ডীর দয়া যে কথা বলতে পারছে । এখন তো ওর একটা পরিচয়ের দরকার - ওকে না হয় হারান বলেই ডাকো - ওতো সব কিছুই হারিয়েছে ।'

    আরো সপ্তাহখানেক পর হারান মোটামুটি হাঁটাচলা করতে শুরু করল । বেশিরভাগ সময় চুপ করে ঘরের দাওয়ায় বসে থাকে । নবারা এসে খোঁজখবর নেয় অবশ্য কথাবার্তা বেশি জমে না কারণ হারাণের বলার মত কিছুই তো মনে নেই - তবে মোটামুটি এই গ্রামের খবরাখবর ওর জানা হয়ে গিয়েছে । নবাদের সাথে দু-এক দিন নদী অবধি ঘুরেও এসেছে - ওরাই ওকে নদীতে স্নান করাতে নিয়ে গিয়েছিল । একদিন তেলেভাজার খবরের কাগজের একটা ঠোঙা হাতে পেয়ে সেটার দিকে অনেকক্ষণ হারাণ তাকিয়ে রইল - কিন্তু অক্ষরগুলো যেন লুকোচুরি খেলছে - বেশ কিছুক্ষণ চেষ্টা করে দুত্তোর বলে ঠোঙাটাকে পোঁটলা পাকিয়ে ছুঁড়ে ফেলে দিয়ে হারাণ দীর্ঘশ্বাস ফেললো ।

    দিনকয়েক পর অপূর্ব ও সৌদামিনী ওদের ঘরের দাওয়ায় বসে কথা বলছিলেন - হারাণ এসে মাটিতে গড় করে প্রণাম করল, `কর্তামশাই, মা ঠাকুরান - আপনারাই আমার মা বাবা - আমারে নতুন জীবন দিছেন । আমার তো আর কোনো পরিচয় নাই - আপনাদের পায়ে থাকতে দ্যান - আপনাদের পরিচয়ই আমার একমাত্র পরিচয় - আমি জান দিয়া আপনাদের সেবা করব ।'

    সৌদামিনী আঁচল দিয়ে চোখ পুঁছলেন আর অপূর্ব উঠে এসে হারাণকে মাটি থেকে টেনে তুললেন, `দ্যাখো হারাণ, তোমার সম্বন্ধেই কথা হচ্ছিল - তুমি আমাদের বাড়ির লোকের মতই থাকবে - আমি পঞ্চায়েতেও তাই বলে দিয়েছি । শরীর সুস্থ হলে না হয় আমাদের বাড়ির কাজে যখন যা মন চায় সাহায্য কর । পরে ধীরে ধীরে যদি পুরাতন কথা মনে পড়ে তখন দেখা যাবে ।'

    সৌদামিনী মেয়ে মিনু বা মৃন্ময়ীকে ডাকলেন, `হারাণ, এ আমাদের মেয়ে মিনু - স্কুলে নবম শ্রেণীতে পড়ে ।'

    হারাণ অবশ্য এই কদিনে মিনুকে দেখেছে অনেক বারই, মাথায় দুই বেণী ঝুলিয়ে স্কুলে যেতে তবে কখনই মাথা তুলে তাকায়নি । আজ পরিচয় করিয়ে দেবার পর মাথা নিচু করেই ধীরে ধীরে বলল, `মা ঠাকুরান, যদি কিছু মনে না করেন তা হলে আপনার মেয়ের পুরাতন বই দিলে আমি বাংলা অক্ষরগুলা আবার চেনার চেষ্টা করব - বড় কষ্ট হয় পড়তে না পারলে ।'

    `এটা তো খুব ভালো কথা হারাণ, মিনু বাংলা বর্ণপরিচয়ও তোমাকে দেখিয়ে দেবে । আর হ্যাঁ, এখন থেকে তুমি আমাদের সাথেই রান্নাঘরে খাবে ।'

    তারপর দিনই মিনু ওর পুরাতন ক্লাসের বই হারাণকে দিয়ে একটা কাগজে বাংলা অক্ষরগুলো লিখে চিনিয়ে দিল - নতুন ছাত্র হারাণদাকে পড়াতে ওর উত্সাহ প্রচুর । আস্তে আস্তে হারাণের মনে হল অক্ষরগুলো ওর কাছে ধরা দিচ্ছে - ও বাংলা পড়তেও পারছে ।

    পরদিন থেকে হারাণ বাড়ির কাজে লেগে গেল - উঠানের কোনার আগাছা পরিষ্কার, গোয়ালের গরুদের দেখাশোনা, ওদের জাবনা দেওয়া, দুধ দোয়ানো, সব কিছু - সূর্য ওঠার আগে থেকেই ওর কাজ শুরু হয়ে যায় । কয়েকদিন পর কোথা থেকে একটা লাউ আর শশার চারা এনে গোয়ালের পাশে লাগিয়ে মাচা করে দিল । সৌদামিনীকে বলল, `মা ঠাকুরান, এ দুটাই ভাল জাতের - দেখবেন কত লাউ আর শশা ধরে । আপনাদের বাড়ির পেছনের জমিটা তো এমনিই পড়ে আছে - কর্তামশাইকে বলেন না কিছু ভাল বীজ আনতে - জমিতে সব্জি বাগান হবে - কাল থেকে আমি না হয় জমিটা তৈরি করে নিই ।'

    দিন পনেরোর মধ্যে পেছনের জমি সাফসুরত করে মাটি কুপিয়ে, গোবর দিয়ে কপি, ঢ্যাঁড়োস আর শাকের বাগান করে ফেললো । এর মধ্যে একদিন নবাদের সাথে গ্রামের রাস্তায় ঘুরতে ঘুরতে একটা বাঁশঝাড় দেখে বলল, `এই বাঁশগুলান খুব ভাল জাতের আর খুব শক্ত - নৌকার লগি, লাঠি খুব ভাল হয় ।'

    মালিককে জিজ্ঞেস করে ফুট ছয়েক লম্বা একটা বাঁশের টুকরো বাড়িতে এনে চেঁছে পরিষ্কার করে দিনদশেক ধরে তেল মাখিয়ে রোদে শুকিয়ে নিল । এক ভোরে ঠকাস ঠকাস আওয়াজ শুনে অপূর্ব বেরিয়ে দেখেন হারাণ ওই লাঠিটা নিয়ে মাথার চারদিকে নানাভাবে ঘোরাচ্ছে অনেকটা পাকা লেঠেলদের মতো - লাঠি ঘোরানো শেষ হলে জিজ্ঞেস করলেন, `কি হারান, তুমি কি লাঠি খেলতে নাকি ?'

    `ঠিক মনে নাই কর্তামশাই, তবে ওই বাঁশঝাড় দেখে কি জানি মনে হল ওই জাতের বাঁশের লাঠি ভাল হয় আর এখন লাঠি হাতে নিতেই মনে হল এর অনেক কৌশল আমার জানা । সেটাই মনে করার চেষ্টা করছি ।'

    সৌদামিনী দাওয়ায় দাঁড়িয়ে দেখছিলেন, পরে অপূর্বকে বললেন, `দ্যাখো বাবা, আবার লেঠেল ছিল নাতো - নিজেদের রেসারেসিতে মাথায় মেরে জলে ফেলে দিয়েছিল হয়ত ।'

    `ব্যবহার দেখে তো ওই ধরনের মারকুটে মনে হয় না - যাই হোক, এই করে ওর যদি পুরাতন কথা মনে পড়ে তা হলে ভালই - তাছাড়া মিনুর একটু সাহায্যেই তো বাংলা লিখতে পড়তেও শিখে গিয়েছে - মনে হয় লোকটা লেখাপড়া জানতো ।'

    এখানে এসে অবধি হারাণ চুল দাড়ি কাটেনি তাই বেশ লম্বা দাড়ি গোঁফ হয়েছে আর সেই সাথে মাথার চুল প্রায় ঘাড় ছোঁয় ছোঁয় অবস্থা । একদিন মিনু খেতে বসে হাসতে হাসতে বলল, `হারাণদা, তোমার দাড়ি তো থালার ভাতের সাথে মাখা হয়ে যাচ্ছে যে আর মাথার চুল তো নয় যেন দাঁড়কাকের বাসা ।'

    তারপর দিন হারাণ দাড়িটা একটু ছেঁটে নিল আর মাথার চুল ভাল করে আঁচড়ে কাপড়ের ফেট্টি দিয়ে বাঁধলো - এখন লাঠি হাতে বেরুলে অনেকটা রঘু ডাকাতের মতো মনে হয় ।

    মাস চারেকের মধ্যে গোয়ালের পাশের মাচানে কচি কচি শশা আর নধর লাউ ঝুলতে শুরু করেছে - পেছনের বাগানেও তিন চার ধরণের শাক, কপি আর কচি কচি ঢ্যাঁড়োস খাবার জন্য তৈরি । সৌদামিনী খুব খুশি - বাড়ির বাগানের তরকারির স্বাদই আলাদা । বাগানের কাজের এত উত্সাহ দেখে অপূর্ব একদিন হারাণকে ডাকলেন, `বুঝলে হারাণ, আমাদের বিঘা চারেক জমি আছে তবে আমি তো চাষবাস করি না তাই ভাগচাষে দেওয়া আছে - জমিতে বোধহয় গোবর টোবর অনেকদিন পড়েনি তাই হয়তো ভাগের ধানও কমে গিয়েছে । আমি তো ওতো বুঝি না - তুমি দেখবে নাকি একবার ?'

    পরের দিনই হারাণ জমি দেখতে চলে এল - অনেকক্ষণ জমিতে ঘুরে যারা কাজ করছিল তাদের সাথে কথা বলে হারাণ সন্ধ্যেবেলা অপূর্বকে বলল, `কর্তামশাই, ভাগচাষের লোকগুলা অকম্মার ঢেঁকি - আপনার জমি তো দু'ফসলা - দরকার ভাল করে হাল দিয়ে জমি ওলটপালট করে গোবর দিয়ে জমিকে খুব ভাল করে জল খাওয়াতে হবে - দেখবেন আপনার ফসল দুগুনা হবে । কিছু লোকজন পেলে আমি নিজেই জমিটা সামলাতে পারি ।'

    অপূর্ব একটু সময় ভাবলেন, `ভাগচাষের লোকগুলো অনেক বছর ধরে আমার জমিতে চাষ করে - ওদের ভাত মারতে আমি চাই না । বরং ওদের কাজের দেখাশুনাটা তুমিই করলে - জমিতে ফসল বেশি হলে ওদেরই তো লাভ । আমি সেইভাবে বলে দেবো ।'

    ভাগচাষিদের সাথে হারাণও লেগে পড়ল জমির কাজে - প্রথম দিকে ফাঁকি দিলেও হারানকে অসুরের মতো খাটতে দেখে ওরাও কাজ শুরু করল ফলে সে বছর ফসল বেশ ভালই উঠল আর এতে সবাই খুশি । এখানে হারাণের প্রায় বছর আড়াই এর ওপরই হয়ে গিয়েছে - গ্রামে এক ডাকে সবাই ওকে চেনে - কারো কোনো অসুবিধা হলে হারাণ সাহায্যের জন্য হাজির । একদিন অপূর্ব হারাণকে বললেন, `বুঝলে হারাণ, তোমার চেষ্টাতেই জমিতে ফসল এতো বেড়েছে - আমাদের খোরাকি আর বীজ ধান রেখেও অনেকটা বেশি আছে - মড়াইতেও জায়গা হচ্ছে না । গঞ্জের ধানকলে নিয়ে বিক্রি করলে ভালই টাকা পাওয়া যাবে - কাল সকালে একটা বড় নৌকা ভাড়া করেছি ধান নিয়ে যাওয়ার জন্য । তুমি গেলে সুবিধাই হয় আর তাছাড়া অনেকদিন তো এই গ্রামেই আটকে আছো - বাইরে বেরুলে ভালও লাগবে ।'

    পরদিন ভোরের দিকে দু'জনে বেরিয়ে পড়লেন - গঞ্জ নদীর নিচের দিকে প্রায় মাইল চল্লিশেক দূরে - স্রোতের টানে যেতে ঘন্টা দুই-আড়াই লাগে তবে ফেরার সময় জোয়ার ধরতে না পারলে উজানে বৈঠা মেরে অনেক বেশি সময় লাগবে । ওখানকার কাজকর্ম সেরে অপূর্ব অন্য একটা ছোটো নৌকা ভাড়া নিলেন তাড়াতাড়ি ফেরার জন্য তাছাড়া সঙ্গে ধান বিক্রির টাকাও আছে - সন্ধ্যে হয়ে গেলে কিছু বলা যায় না কোন মাঝি কি করবে - সেই জন্যই বিশেষ করে হারাণকে নেওয়া - ওর ঘন দাড়ি, বাবরি চুল আর হাতের লাঠি অনেককেই ভয় খাওয়াবে । দুপুরের খাওয়া দাওয়া করেই রওনা দিলেন জোয়ারের একটু আগেই যাতে মাঝ রাস্তাতে জোয়ারটা পাওয়া যায় । মাঝিদের সাথে মাঝে মাঝে হারাণও বৈঠা টানছে । নদীর দুদিকেই একটু পরে পরেই গ্রাম - লোকবসতিও বেশ ঘন । হারানের খালি মনে হচ্ছিল নদীর দুদিকের দৃশ্য ওর অনেক দিনের চেনা যেন স্বপ্নে দেখেছে - তাই বৈঠা ছেড়ে চুপ করে নৌকার গলুইতে গিয়ে বসল । প্রায় আধঘন্টা খানেক পর মনে হল নদীর ধারের ওই ভাঙা ইটের পাঁজা, তার একটু পরই একটা বিরাট বট গাছ যার ঝুরি নদীর জলে মিশেছে - শেকড়ের আদ্ধেক জলে ধুয়ে মাকড়সার জালের মতো বেরিয়ে আছে, ছোট্ট শিবের মন্দির সবই যেন ওর রক্তের সাথে মিশে আছে । দূরে গ্রামের ঘাট দেখা যেতেই অপূর্বকে বলল, `কর্তামশাই, এই ঘাটে নৌকা একটু বাঁধলে একটুকুন চা খেয়ে নিতাম - জোয়ার আসার তো দেরি আছে - মাঝিদেরও একটু বিশ্রাম হত ।'

    অপূর্ব ভাবছিলেন নদী থেকে কোনো চায়ের দোকান তো দেখা যায়নি তাহলে হারাণ জানলো কি করে এখানে চায়ের দোকান আছে - ও কি আগে এখানে এসেছিল ? তাই হয়তো মনে পড়েছে - দেখা যাক আর কি মনে পড়ে । ঘাটে নেমে দু'পা এগোতেই সামনের অশ্বথ্থ গাছের তলায় ছোট্ট একটা চায়ের দোকান - নদী থেকে চোখে পড়ে না - হারাণ যেন কত চেনা লোকের মতো ওই দোকানের কাঠের পাটাতনে বসল । একজন বুড়ো মতো লোক চায়ের গ্লাস দিতে এসে হারাণের মুখের দিকে থমকে তাকালো - তারপর আস্তে আস্তে মাথা নেড়ে চা দিয়ে চলে গেল । অপূর্ব দেখলেন হারাণ যেন উত্তেজনাতে ছটফট করছে - চা শেষ করেই বলল, `কর্তামশাই, একটু বসলে আমি গ্রামটা এক চক্কর দেখে আসি - বেশি দেরি হবে না ।'

    হারাণের মনে হল রাস্তা চেনার কোনো দরকার নেই - চোখ বুজে থাকলেও পা দুটো ঠিক রাস্তা চিনিয়ে নিয়ে যাবে - চারদিকের গাছপালা বাড়ি যেন ওর মনের কোনো গভীর থেকে উঠে আসছে না হলে ও হয়তো জেগে জেগেই স্বপ্ন দেখছে । মিনিট চারেক পরেই একটা বাড়ির সামনে এসে পা দুটো দাঁড়িয়ে পড়ল - এই তো সেই স্বপ্নের বাড়ি - সামনের দুটো টিনের চালার ঘর আর তার পাশে রান্না ও গোয়াল ঘর খড়ের ছাউনির - তারপরেই ধানের মড়াই । সুন্দর ঝকঝকে নিকানো উঠান - এক পাশে একটা কাঁঠাল আর পেয়ারা গাছ আর সামনের বাখারির গেটের কাছে একটা কদম গাছ । গেটের সামনের রাস্তায় একটা ফুটফুটে বছর পাঁচেকের মেয়ে এক্কা দোক্কা খেলছিল - মুখটা যেন কত চেনা - বুকের মধ্যে গাঁথা হয়ে আছে । হারান মেয়েটার সামনে হাঁটু গেড়ে বসল, `খুকি, তোমার নাম কি ?'

    মেয়েটা ওর দাড়িগোঁফ ভরা মুখ আর লাঠি দেখে প্রথমে ঘাবড়ে গেলেও মিষ্টি হেসে উত্তর দিল, `আমার নাম তো মহুয়া - মা ডাকে মৌ আর নতুন বাবা ডাকে প্রজাপতি । তুমি কে গো ? তুমি কি ডাকাত যে হাতে লাঠি নিয়ে এসেছো ?'

    একটা গভীর দীর্ঘশ্বাস চেপে জোর করে মুখে হাসি ফুটিয়ে তুললো হারাণ - মেয়েটাকে দুহাতে বুকে জড়িয়ে ধরার অদম্য ইচ্ছেটা কোনোরকমে আটকে নিল ।

    `তোমার বাবার নাম কি ?'

    `আমার বাবার নাম স্বর্গীয় নারায়ণ মণ্ডল আর নতুন বাবার নাম ....' কথা শেষ হবার আগেই হারানের মুখ দিয়ে আপনা থেকে বেরিয়ে এলো ।

    `যাদব মণ্ডল' ।

    চোখের সামনে দিয়ে হু হু করে হাজারো ছবি খুব দ্রুত ভেসে চলে গেল -- আমি জানতাম এরকমই হবে ।

    `তোমাকে তোমার নতুন বাবা ভালবাসে ?'

    `আমাকে না নতুন বাবা খুউব ভালবাসে - কত্তো পুতুল কিনে দেয় - কত্তো আদর করে - তুমি নতুন বাবাকে চেনো ?'

    হারাণ আস্তে করে মাথা নাড়লো তারপর দুই হাতে চোখের জল মুছে ধরা গলায় বলল, `মৌ সোনা, আমাকে এক গ্লাস জল খাওয়াতে পারবে ?'

    হ্যাঁ বলে মৌ দৌড় দিল বাড়িতে - একটু পরে মাথায় অল্প ঘোমটা দেওয়া একটা বৌ জলের গ্লাস আর রেকাবিতে দুটো বাতাসা নিয়ে এসে মাথা নিচু করে খুব আস্তে বলল, `শুধু জল খেতে নেই ।'

    হাত বাড়িয়ে জলের গ্লাস নিতে গিয়ে বোধহয় আঙুলে ছোঁয়া লেগে গিয়েছিল - বৌটা মুখ তুলে তাকিয়েই কেমন যেন অবাক হয়ে হারানের দাড়ি গোঁফের আড়ালের মুখে কি যেন খোঁজার চেষ্টা করল । হারান আস্তে করে বলল, `আমি তো বাতাসা খাই না রাধা - শুধু জলেই হবে ।'

    বৌটার দু চোখ ভয়ে ও বিস্ময়ে কেমন বড় বড় হয়ে গেল, মাথা থেকে ঘোমটা খসে পড়েছে - যেন শ্বাস ফেলতেও ভুলে গিয়েছে - জায়গা থেকে নড়বার ক্ষমতাও নেই । হারান জল খেয়ে গ্লাসটা মৌর হাতে দিয়ে খুব দ্রুত ফেরার পথ ধরল - বৌটা মুখ ফেরাবার আগেই রাস্তার বাঁকে হারান বরাবরের জন্য হারিয়ে গেল । ও তো এখানে স্বর্গীয় - বৌ আর মেয়ে তো সুখেই আছে - তাহলেই হল । তাড়াতাড়ি যাই - নৌকায় আমার কর্তামশাই যে অপেক্ষা করে আর গ্রামে মা ঠাকুরান, নবা আর তার বন্ধুরা - আর - আর -মিনু । আমি যে হারিয়ে যাওয়া হারান - ওই গ্রামেই তো আমার স্থান ।

    ( পরবাস ৪৬, সেপ্টেম্বর, ২০১০)

  • এই লেখাটি পুরোনো ফরম্যাটে দেখুন
  • মন্তব্য জমা দিন / Make a comment
  • (?)
  • মন্তব্য পড়ুন / Read comments