• Parabaas
    Parabaas : পরবাস : বাংলা ভাষা, সাহিত্য ও সংস্কৃতি
  • পরবাস | সংখ্যা ৪৬ | সেপ্টেম্বর ২০১০ | ছোটদের পরবাস | গল্প
    Share
  • টুকি ও রঙচোর কসমো : অনন্যা দাশ

    মাঝরাতে হঠাৎ গলা শুকিয়ে গিয়ে ভীষণ জলতেষ্টা পেযে ঘুমটা ভেঙে গেল টুকির । পাশে কুকি অঘোরে ঘুমোচ্ছে । নি:শব্দে খাট থেকে নেমে পা টিপে টিপে রান্নাঘরের দিকে চললো টুকি । অন্ধকারটা চোখসয়া হয়ে গেছে । বাইরের ঘরের পাশ দিয়ে জেতে গিয়ে হঠাৎ মনে হলো সেন্টার টেবিলটার পাশে কি যেন একটা ছায়া মতন ! চমকে উঠলো টুকি । ওমা ভূত নাকি ? কিছুদিন আগে মাসির কাছে ভূতের গল্প শুনে কুকি খুব ভয় পেয়েছিলো । কিছুতেই রাতে ঘুমোবার সময় শোওয়ার ঘরের আলো নিবোতে দিত না ! কুকি আসলে বয়সে অনেকটাই ছোট তো তাই ! টুকি কিন্তু ভয় পায় না । ভাল করে তাকিয়ে দেখলো ... না কিছুই তো নেই । রান্নাঘরে গিয়ে জল খেল ঢক ঢক করে । ফেরার সময়ে কি মনে হল পর্দার আড়ালে দাঁড়িয়ে রইলো মিনিট দু-এক... ওমা সে ভুল দেখেনি ! কোথা থেকে একটা ছোটখাটো প্যাঙলা ফ্যাকাশে সাদাটে মতন একটা কি বেরিয়ে এসে টেবিলের রাখা মা-বাবার অ্যানিভার্সারিতে পাওয়া লাল গোলাপের তোড়াটার গায়ে হাত বোলাচ্ছে ! কি উদ্ভট ব্যাপার রে বাবা ! ভূত আবার ফুল ভালোবাসে নাকি ? কোনদিন তো শোনেনি সেইরকম কথা... পর্দার পিছন থেকে ছুটে এসে আলোটা জ্বালিয়ে খপ্‌ করে ফ্যাকাশে হাতটা চেপে ধরলো টুকি !

    "এই কে তুমি ? কি করছো এখানে ?"

    অদ্ভুত জিবটা সাদা ঘোলাটে চোখ দিয়ে ওর দিকে তাকিয়ে দেখলো কিন্তু কিছুই বললো না ।

    "তুমি কি ভূত ?"

    এবার হি হি করে হেসে ফেলল জিবটা, "ধ্যাৎ ! এত বড় হয়ে গেছো এখনো ভূতে ভয় পাও ! না আমি ভূত নই !"

    "আমি মোটেই ভূতে ভয় পাইনা, কুকি পায় । আমি যদি ভয় পেতাম তাহলে এখানে এসে তোমার হাত ধরতে পারতাম ? ওই পর্দার আড়ালেই তো মূর্ছা যেতাম !"

    "ও তুমি বুঝি পর্দার আড়াল থেকে আমাকে দেখছিলে ! ১সি বলেছিল বটে ছোট মানুষদের থেকে সাবধানে থাকতে, ওদের নাকি খুব কৌতূহল !"

    "১সি আবার কে ?"

    "১সি হল কসমো-দের মধ্যে সবচেয়ে বড়, সবাই তার কথা শোনে । কি বলে তাকে ?"

    "রাজা ? প্রধানমন্ত্রী ?"

    "হ্যাঁ প্রধান-ই বলতে পারো ।"

    "তোমার নাম কি ?" "তুমি এখানে আমাদের বাড়িতে এসেছো কেন ?"

    "আমার নাম কসমো । আমাদের গ্রহে আমরা সবাই কসমো ।"

    তারপর খুব লজ্জা লজ্জা মুখ করে বললো "এই ফুলগুলো আমার খুব পছন্দ তাই হাত দিচ্ছিলাম । তোমাদের গ্রহে কত রঙ । আমাদের গ্রহটা এমনিতে খুব সুন্দর । আমাদের সব কিছুই আছে কিন্তু সূর্যের আলো নেই বলে কোন রঙ নেই... আমাদের সব কিছুই ফ্যাকাশে সাদা বা কালো । এই রঙটা আমার খুব ভালো লাগছে ।" বলে কসমো আবার ফুলগুলোতে হাত বুলোতে লাগলো । টুকি আশ্চর্য হয়ে দেখলো গোলাপগুলো ধীরে ধীরে সাদা হয়ে যাচ্ছে আর কসমোর ফ্যাকাশে হাতটা লালচে !

    "রঙটা শুষে নিলাম বলে কিছু মনে করোনা । আমার ছোট মেয়েটাকে দেবো সে ভারি খুশি হবে । সে তো ছোট তাই তাকে নিয়ে আসতে পারিনি যদি বিপদটিপদ ঘটে..."

    টুকি অবাক হয়ে সব শুনছিল, আহারে ওদের গ্রহে রঙ নেই, কি দু:খ ! হঠাৎ ওর একটা কথা মনে পড়লো... কসমোকে বললো, "তুমি দাঁড়াও আমি এখুনি আসছি ! ভয় পেয়ো না, তোমাকে ধরিয়ে দেবোনা ।"

    টুকি ছবি আঁকতে ভালোবাসে বলে এই বারের জন্মদিনে অনেকেই তাকে জলরঙের বাক্স আর স্কেচপেন উপহার দিয়েছে । ওর কাছে পাঁচখানা পেন্টবক্স আর অনেক সেট স্কেচপেন হয়ে গেছে । ছুটে গিয়ে সেগুলো আর একটা রঙ করার বই নিয়ে এল টুকি ।

    "এই নাও !" বলে স্কেচপেন আর রঙ বার করে ওকে দেখিয়ে দিল কিভাবে রঙ করতে হয়, "তুমি তোমাদের গ্রহে অনেক কিছু রঙ করতে পারবে এগুলো দিয়ে... তাহলে তোমাকে আর এদিক ওদিক গিয়ে রঙ চুরি করতে হবেনা !"

    কসমো তো উপহার পেয়ে ভারী খুশি । টুকিকে বললো ভাগ্যিস তোমাদের বাড়িতে এসেছিলাম ! বলে সব রঙের জিনিস বগলদাবা করে নিয়ে জানালার কাঁচ ভেদ করে বেরিয়ে গেল ! টুকি জানালা দিয়ে উঁকি মেরে দেখল বাইরে একটা সাদা ক্যাপসুলের মতন কি দাঁড়িয়ে রয়েছে ! কসমো তাতে গিয়ে ঢুকলো । আলো নিবিয়ে শুয়ে পড়ল টুকি । কালকে আবার স্কুল আছে সকালে না উঠতে পারলে মা বকবে ।

    পরদিন সকালে উঠে মা-বাবা আর কুকিকে ঘটনাটা বললো টুকি । মা তো শুনেই ভীষণ রেগে গেল, "টুকি তোমাকে কতবার বলেছি ওই সব হাবিজাবি মিথ্যে কথা বানিয়ে বানিয়ে বলবেনা ! তোমার দেখাদেখি কুকিও ওই সব শিখবে ! রঙের বাক্সগুলো হারিয়ে এখন ওই সব গল্প বানানো হচ্ছে না ? নাও চুপচাপ খেয়ে নাও, এখুনি স্কুলবাস এসে পড়বে !"

    মন খারাপ হয়ে গেল টুকির । বকুনির ভয়ে শুপ করে গেল সে । কিন্তু স্কুলে ওর হঠাৎ মনে পড়লো `আরে ওই লাল গোলাপগুলো তো মাকে দেখালে হত ! লাল গোলাপ থেকে রঙ নিয়ে তো সেগুলোকে সাদা করে দিয়ে গেছে কসমো !'

    বারি ফিরে ছুটে গেল ফুলগুলো দেখতে । গিয়ে দেখল ফুলদানিতে একটাও ফুল নেই !

    "মা গোলাপফুল গুলো কি হল ? ওগুলো থেকে তো রঙ চুরি করেছিল কসমো !"

    মা বললো "ওগুলো শুকিয়ে গিয়েছিল তাই ওগুলো ফেলে দিয়েছি । আর তোমার কি হয়েছেটা কি শুনি ? স্কুল থেকে এসে জামাকাপড় ছাড়া নেই কিছুনা আবার ওই সব উটকো কারবার নিয়ে পড়েছো ! জাও জামাকাপড় ছেড়ে হাত মুখ ধুয়ে খেতে বসো !"

    টুকি আর ব্যাপারটা নিয়ে কাউকে কিছু বলেনি ।

    মাস দুয়েক বাদে ঘটনাটা প্রায় ভুলেই গিয়েছিল টুকি এমন সময়ে পাড়ার জয়ন্ত কাকুর রঙের দোকানে বেশ আশ্চর্যভাবে বেশ কিছু রঙ চুরি হল । দোকানের তালা ভাঙা না কিছুনা শুধু বেশ কিছু রঙের টিন হাওয়া ! পুলিশও ভ্যাবাচ্যাকা । শুধু কুকি ফিসফিস করে টুকিকে বলল "দিদিভাই, এটা মনে হচ্ছে তোর বন্ধু কসমোদের কাজ তাই না ? তোর ওই কটা রঙ আর কতদিন চলবে ওদের !"

    ওর কথাটা শুনে টুকির মনে ভারি শান্তি হল । আর কেউ বিশ্বাস করুক না করুক কুকি ওর কথা বিশ্বাস করেছে !

    (পরবাস - ৪৬, সেপ্টেম্বর, ২০১০ )

  • এই লেখাটি পুরোনো ফরম্যাটে দেখুন
  • মন্তব্য জমা দিন / Make a comment
  • (?)
  • মন্তব্য পড়ুন / Read comments