• Parabaas
    Parabaas : পরবাস : বাংলা ভাষা, সাহিত্য ও সংস্কৃতি
  • পরবাস | সংখ্যা ৫১ | জুন ২০১২ | প্রবন্ধ
    Share
  • অমিয় চক্রবর্তীর তৃতীয় রাশিয়া ভ্রমণ : সুমিতা চক্রবর্তী


    অমিয় চক্রবর্তীর তৃতীয় রাশিয়া ভ্রমণ - সংগ্রহ ও পরিচিতি : সুমিতা চক্রবর্তী

    রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ১৯৩০ খ্রীষ্টাব্দে রাশিয়া ভ্রমণ করেছিলেন। সেই ভ্রমণ বৃত্তান্ত লিপি-লিখনে স্থায়িত্ব পেয়েছে 'রাশিয়ার চিঠি' নামে পত্র সংকলনে (প্রকাশ ১৯৩১)। অমিয় চক্রবর্তী ছিলেন তাঁর যাত্রা-সঙ্গী। তিনিও এই ভ্রমণের একটি নিজস্ব লিপি-চিত্র রচনা করেছিলেন—সেকথা আমরা প্রায় বিস্মৃত হয়েছি।

    অমিয় চক্রবর্তীর লেখা 'মস্কৌর চিঠি' [১] প্রকাশিত হয়েছিল 'বিচিত্রা' পত্রিকায় ১৩৩৮ বঙ্গাব্দের মাঘ ও ফাল্গুন (জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারি এবং ফেব্রুয়ারি-মার্চ, ১৯৩২) — এই দুই সংখ্যায়।

    লেখাটি পত্রাকারে রচিত। কিন্তু ঠিক কাকে অমিয় চক্রবর্তী 'প্রিয়বরেষু' সম্বোধন করেছেন তা নিশ্চিত করে বলা যায় না। 'বিচিত্রা' সম্পাদক উপেন্দ্রনাথ গঙ্গোপাধ্যায় হবার সম্ভাবনা আছে। অথবা কোনো কাল্পনিক বন্ধুকে উদ্দেশ করেও লেখা হতে পারে। রচনাটি পত্রের ভঙ্গিতে লেখা হলেও চিঠি নয়—ভ্রমণ-নিবন্ধ।

    এই রচনাটিকে রবীন্দ্রনাথের 'রাশিয়ার চিঠি'-র পরিপূরক বলা যেতে পারে। অমিয় চক্রবর্তী নিজের মতো করে নবীন সমাজতন্ত্রী রাশিয়াকে দেখেছিলেন। কমিউনিজ্‌ম্‌ সম্পর্কে সরাসরি নিজের মনোভাব ব্যক্ত করেছিলেন। রাশিয়ার এমন কোনো কোনো জায়গায় তিনি গিয়েছিলেন যেখানে রবীন্দ্রনাথ যাননি। কাজেই ১৯৩০-৩১ সালের রাশিয়ার আরো একটি চিত্র আমরা অমিয় চক্রবর্তীর লেখায় পাই যা রবীন্দ্রনাথের বীক্ষণ-কোণ থেকে কিছুটা পৃথক।

    অমিয় চক্রবর্তী দ্বিতীয়বার রাশিয়ায় গিয়েছিলেন ১৯৩৬ খ্রীষ্টাব্দে। অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে তাঁর গবেষণার কাজ যখন শেষ হয়ে এসেছে তখন তিনি নিছক কৌতূহল বশতই আর একবার রাশিয়া গেলেন। ১৯৩৬ খ্রিষ্টাব্দের আগস্ট মাসে। এই কয়েক বছরে সোভিয়েত সাধারণতন্ত্রের কতখানি পরিবর্তন ঘটেছে তা দেখাই তাঁর উদ্দেশ্য ছিল। কিন্তু এ বিষয়ে কোনো বিস্তৃত বিবরণ তিনি দেননি। রবীন্দ্রনাথকে লেখা তাঁর একটি মাত্র চিঠি থেকে আমরা তাঁর মনোভাবের সামান্য ইঙ্গিত লাভ করি। চিঠির তারিখ ১৬ আগস্ট ১৯৩৬; চিঠি ডাকে দেওয়া হয়েছিল 'গাল্‌ফ্‌ অভ্‌ ফিন্‌ল্যাণ্ড' থেকে। —

    "এ চিঠি ইচ্ছে করেই রাশিয়ায় পোস্ট না করে এখান থেকে পাঠাচ্ছি।

    "মস্কৌ আবার দেখে এলাম। এই ছয় বৎসরে যে কী পরিবর্তন ঘটেছে তা বিশ্বাস করাই শক্ত। অথচ বুঝতে পারি না বিরাট সঙ্ঘ চেতনায় চালিত মানুষের জীবন ধ্রুব কেন্দ্রের বাইরে ধূমকেতুর মতো কোথায় গিয়ে পৌঁছবে। মানব সেবার এত বড়ো ধ্যান শক্তি আর কোথাও তো কখন এমনভাবে দেখা দেয়নি। —কী প্রচণ্ড এই কল্যাণ কর্মের ব্যবস্থা, কত ত্যাগ কত বীর্য, জ্ঞান-বুদ্ধির কী তপস্যা। সার্থক সাধনার ফল চতুর্দিকে। কিন্তু মানুষের চেয়ে বড় কিছুকে মানবে না, ব্যক্তি বিশেষত্বকে কোথাও নিভৃত অবসর দেবে না। অন্তরের যেখানে সার্থকতার মূল তা উচ্ছেদ করে ঐক্যের মঙ্গল আয়োজন। হয়তো প্রতিক্রিয়ার এই পর্ব আরও কিছুকাল চলবে—এর ঐতিহাসিক তাৎপর্য বোঝা শক্ত নয়। বহু অনুষ্ঠান বিশেষভাবে দেখেচি—Collective Farm এবং Culture Communal-ই সবচেয়ে দ্রুত এগিয়েছে মনে হল।" (শান্তিনিকেতনের রবীন্দ্রভবনে রক্ষিত চিঠি; নরেশ গুহ সম্পাদিত 'কবির চিঠি কবিকে' গ্রন্থে সংকলিত, প্যাপিরাস, ১৯৯৫, পৃ. ১৬৫)। চিঠিতে রাশিয়ার প্রশাসন ও সামাজিক অগ্রগতির প্রশংসা যেমন পাই, তেমনি কিছুটা সংশয়ের সুরও রয়েছে। বিশেষত 'ইচ্ছে করে' রাশিয়ার বাইরে থেকে চিঠি ডাকে ফেলার স্বীকারোক্তি লক্ষণীয়।

    অমিয় চক্রবর্তী আরও একবার রাশিয়া গিয়েছিলেন ১৯৫৯ সালে প্রধানত সাহিত্যিক বোরিস পাস্তেরনাক (Boris Leonidovich Pasternak, 1890-1960)-এর সঙ্গে দেখা করবার জন্য। সৌভাগ্যবশত এই যাত্রার ইংরেজিতে লেখা কিছু বিবরণ রক্ষা পেয়েছে সম্পূর্ণ ব্যক্তিগত উদ্যোগে আয়োজিত একটি কার্যক্রমের নিজস্ব লিখন সংকলনে। লেখাটি পাস্তেরনাক সম্পর্কিত, রাশিয়া সম্পর্কিত নয়। তবু সেখানে ছায়া ফেলেছে পাস্তেরনাক-এর রাশিয়া সম্পর্কে অমিয় চক্রবর্তীর উপলব্ধি।

    বিত্তবানের দেশ আমেরিকা। ধনী নাগরিকেরা সেখানে অনেক সময়েই শিল্প-সাহিত্যের পোষকতা করে থাকেন নিজস্ব মেজাজে এবং পদ্ধতিতে। তেমনই এক ধনবান দম্পতি রবার্ট উইলিয়াম্‌স্‌ ও মার্গারেট উইলিয়াম্‌স্‌। তাঁরা ম্যাসাচুসেট্‌স্‌-এ একটি সুপরিসর ভূ-সম্পত্তির মালিক ছিলেন বিংশ শতাব্দীর সপ্তম দশকে—১৯৬০-এর সংলগ্ন কয়েক বছর। সেই অঞ্চলটির তাঁরা নাম দিয়েছিলেন 'দ্য রক' (The Rock)। সেখানে তাঁরা মাঝে মাঝেই শিল্পী, সাহিত্যিক, সঙ্গীতজ্ঞ, চিন্তাবিদ্‌দের সমাবেশ ঘটাতেন। বেশ কয়েকদিন—অন্তত পাঁচ থেকে সাতদিন অনেকেই সেখানে একসঙ্গে কাটাতেন। খাওয়া-দাওয়া, খেলাধুলো, প্রমোদভ্রমণের সঙ্গে নিয়মিত আয়োজিত হত আলোচনা-চক্র, বক্তৃতা, সাহিত্যপাঠ, মত-বিনিময়ের আসর। যদিও কাউকেই জোর করা হত না, তবু সকলকেই কিছু-না-কিছু লিখতে উৎসাহিত করা হত। প্রতিভাবান বহুজনের সম্মিলনে গড়ে উঠত এক মেধাদীপ্ত সাংস্কৃতিক কর্মশালা-শিবির।

    উইলিয়াম্‌স্‌ দম্পতির আমন্ত্রণে সস্ত্রীক অমিয় চক্রবর্তী ১৯৬১ খ্রিস্টাব্দে সেই সমাবেশে উপস্থিত হয়েছিলেন। সেখানে একটি আসরে তিনি সদ্যপ্রয়াত বোরিস পাস্তেরনাক (১৮৯০-১৯৬০) সম্পর্কে আলোচনা করেছিলেন এবং বিবৃত করেছিলেন তাঁর সদ্য ঘুরে আসা রাশিয়া ভ্রমণের অভিজ্ঞতা, যেখানে তিনি দেখতে গিয়েছিলেন পাস্তেরনাক-কে। অমিয় চক্রবর্তীর কথা টেপ-রেকর্ডার-এ ধরে রাখা হয়েছিল এবং প্রকাশিত হয়েছিল 'দ্য রক'-এর নিজস্ব ষাণ্মাসিক বুলেটিন 'রকোলগ্‌' (Rockolog)-এ।[২] 'রকোলগ্‌'-এর সেই সংখ্যাটি থেকে আমরা অমিয় চক্রবর্তী সম্পর্কিত প্রাসঙ্গিক তথ্য এবং অমিয় চক্রবর্তীর আলোচনার অনুলিখন উদ্ধৃত করে দিলাম। —

    Dr. Amiya Chakravarty came on Tuesday afternoon and stayed until Friday. He is at present Professor of Comparative Oriental Religions and Literature at Boston University, and contrariwise, in India he was Professor of Engilsh Literature at Calcutta University. He has worked for the Indian Government and the United Nations and is a frequent lecturer and conference leader. From 1926 to 1933 he was Tagore's literary secretary. He was a friend of Mahatma Gandhi and more recently visited Albert Schweitzer in Africa and Boris Pasternak in Moscow. Early in 1961 Macmillan published his new book, 'A Tagore Reader.'

    On the first night of Dr. Chakravarty's arrival, we were showing an Indian movie on Buddhism. This stimulated our guest to give an impromptu and remarkably inspiring talk on the subject of the movie and the philosophy of the East generally. We were prompted by this to make use of the tape recorder on succeeding days to record his talks on Schweitzer and Pasternak. His last talk on Tagore was given on the lawn and therefore was not recorded. Elsewhere in this issue a transcription of parts of the Pasternak discourse is printed.

    Each of these talks was extensive and covered a panorama of cultural and historical background. Thus for three days we lived with great men and great ideas, and the experience was such that we dare to say it will, in one way or another, last many of us a life-time.

    With Amiya Chakravarty came his wife, Haimanti, who expressed a warmth of affection toward the campers, and their five year old grand-daughter, Mita, with and effervescent stream of Bengali and a sprite like predisposition to dance.



    (The following article is a transcription from a tape-recorded talk that was given without notes. Due to space limitations only about half of the discourse is printed.)

    INTERVIEW WITH PASTERNAK
    Dr. Amiya Chakravarty


    [১] অমিয় চক্রবর্তী, 'মস্কৌর চিঠি', পশ্চিমবঙ্গ বাংলা আকাদেমি পত্রিকা, ডিসেম্বর ২০১১, ত্রিংশতিতম সংখ্যা। সংকলন, সম্পাদনা ও টীকা : সুমিতা চক্রবর্তী।

    [২] Rockolog, Writer 1961-62; Volume IV, No. 1; Editor & Publisher Robert Williams & Margaret Williams, The Rock, Williamsburg, RFD, Massachussetts, U.S.A



  • এই লেখাটি পুরোনো ফরম্যাটে দেখুন
  • মন্তব্য জমা দিন / Make a comment
  • (?)